বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

When you are with me....i fell perfect

"কি করিস দোস্ত?
"কিছুনা
"রাতে খাইছস?
"হুমম
"ঔষধ খাইছস?
"হুম
"এখন ব্যাথা নাইতো চোখে?
"এই চুপ করতো, খালি আজাইরা প্যাচাল, আমার এতো কেয়ার করা লাগবেনা তোর
"তোর কি মন খারাপ দোস্ত?
"উফফফ...অসহ্য, বারবার এসব আন্দাজি কথা বলিসনাতো, শুনতে বিরক্ত লাগে...
কথাটা শুনেই রাফির মনটা খারাপ হয়ে যায়, আমার কেয়ার গুলো ওর কাছে বিরক্ত লাগে!!!! ধ্যাত আগে জানলে এতো বেশি বিরক্ত করতাম না.....
.
প্রায় ২বছর হয়েছে রাফির আর রিহার ফ্রেন্ডশিপ, রিহা আগে একদম ই এমন ছিলনা কিন্তু ইদানিং অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। একটুতেই রেগে যায়, সবসময় এড়িয়ে চলে রাফিকে, কোন কথাই বলেনা ওর সাথে শুধু রাফি প্রশ্ন করলে হু..হুমম করে, খুব কাছের বন্ধুর এমন পরিবর্তন রাফিকে অনেক বেশি কষ্ট দেয়। কিন্তু তার কিছুই করার নেই...... রাফি আবার রিহাকে SMS পাঠাল....
"কি করিস?
"কিছুনা
"তোদের বাসায় সবাই কেমন আছে?
"ভালো
"তোর পড়ালেখার কি খবর?
"হুম ভালো, আচ্ছা আমি এখন ঘুমাবো গুড নাইট....
"ঠিকাছে দোস্ত, কিন্তু প্লিজ টেক কেয়ার... ( এই ম্যাসেজ টা রিহা সিন ই করেনা )
.
কিছুসময় পর রাফি অনুভব করলো তার চোখ থেকে পানি পরছে, খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে তার, ইচ্ছে হচ্ছে জোরে জোরে কান্না করতে কিন্তু সেটাত আর সম্ভব না। রাফি মনে মনে ভাবে, আমাকে জানতেই হবে রিহার কি হয়েছে, নিশ্চয়ই হয়তো ওর কোন সমস্যা হয়েছে। না হলেতো রিহা তার সাথে এমন করতো না। সকাল বেলা...
"গুড মর্নিং দোস্ত
প্রায় ৩ঘন্টা পর রিপ্লাই আসে, হুম, শুন আমার এখন কাজ আছে পরে কথা হবে...
রাফি নিশ্চুপ, তার কিছুই করার নেই, সে সাথে সাথে রিহার ফ্রেন্ড সামিয়াকে কল দেয়....
"এটা কি সামিয়া?
"জ্বি কে বলছেন?
"আমি রাফি, কেমন আছো?
"জ্বি ভাইয়া ভালো, আপনি?
"হুম ভালো, আচ্ছা তুমি কি আমাকে একটা কথা জানাতে পারো??
"অবশ্যই, বলেন...
"রিহার কি হয়েছে? ও এমন পরিবর্তন হয়ে গেছে কেন??
সামিয়া নিশ্চুপ। হঠাৎ করে লাইনটা কেটে দেয়..... রাফি এরপর অনেকবার চেষ্টা করলো কিন্তু মোবাইল অফ....
কিছু না পেয়ে রাফি সামিয়াকে একটা টেক্সট পাঠায়....
----সামিয়া, খুব কাছের বন্ধুর এমন পরিবর্তন আমাকে অনেক বেশি কষ্ট দেয়, আমি জানি রিহা আমাকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে, আমি জানতে চাই কেন এমন করছে? আসলে আমার জীবনটাই এমন, যেই মানুষগুলোকে আপন ভাবি তারাই দুরে ঠেলে দেয়----
-
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে রাফি দেখল তার মোবাইলে ১৯টা মিসড কল। ওর চোখতো কপালে, কে দিল এতগুলো কল? নাম্বারটা দেখেই ও একটা শক খায় কারন এটা সামিয়ার নাম্বার..... কোন কিছু না ভেবেই ও সামিয়াকে কল দেয়..
"হায় সরি, কল রিসিভ করতে পারিনি
"আপনি ঠিক আছেনতো??
"একদম ঠিক আছি, কেন কল দিয়েছিলে??
"আসলে আপনি জানতে চেয়েছিলেন রিহা কেন এমন হয়ে গেছে ওটা জানানোর জন্যই
"রাফিতো অবাক, হুম বলো জলদি..
"আসলে ভাইয়া রিহার একটা ছেলের সাথে রিলেশন হয়ে গেছে, কিন্তু ছেলেটা রিহার পাশে আপনাকে একদম ই সহ্য করেনা। অনেক ঝগড়া হয় এটা নিয়ে ওদের মাঝে। পরে রিহা মেনে নেয় যে, আপনার সাথে আর যোগাযোগ রাখবেনা, কিন্তু সেটা হঠাৎ করেই সম্ভব হচ্ছেনা। তাই আস্তে আস্তে আপনার সাথে কন্টাক্ট অফ করে দিচ্ছে....
"কথাটা শুনে রাফির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, ওর পায়ের নিচের মাটি যেন সরে গেল, কিছু না বলে রাফি লাইনটা কেটে দেয়, এরপর বাধ্য হয়েই রিহাকে কল দেয়...৭টা কল দেওয়ার পর রিহা ফোন রিসিভ করে...
"উফ এতো সকালে কল দিয়ে ডিস্ট্রাব করছিস কেন?
"সরি দোস্ত তোকে ডিস্ট্রাব করার জন্য, কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ন কথা আছে তোর সাথে
"হুম বল
"আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা আজকে কতবছর দোস্ত?
"এটা তোর গুরুত্বপূর্ন কথা?? আমি রাখছি বাই...
"আরে শুন না প্লিজ....
---আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা আজকে প্রায় ২বছর দোস্ত, এই ২বছরের মাঝে আমাদের মাঝে অনেক কিছুই হয়েছে, দুজন দুজনের কথা শেয়ার করতাম। তোর কি মনে পড়ে দোস্ত? একটা সময় আমরা সারারাত জেগে জেগে কথা বলতাম...হাঠতে বের হলে তুই জোর করে আমার হাতটা ধরে হাঠতি.....সপ্তাহে একবার তোকে অবশ্যই রিকশা দিয়ে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া লাগতো তোর মনে পড়েনা ওইগুলো?
"হুম পড়ে, তো?
"কিছুই নারে, তোদের মাঝে আমি তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে গেছি এটা একবার বললেই পারতি, দেখতিস কখনো আর তোদের মাঝে আসি কিনা। কিন্তু শুধু শুধু আমার সাথে এমন ব্যবহার করছিস কেন?
-
যাইহোক দোয়া করি ভালো থাক, আর কখনও তোদের মাঝে আসবোনা। আর হ্যা, নিজের খেয়াল রাখবি, টাইম মতো ঔষধ খাবি, ভালো করে স্টাডি করিস, বাই.....
-
"রিহা নিজ দায়িত্বে রাফির নাম্বারটা ব্লক লিস্টে নিয়ে যায়। তারপর একটা সময় তাদের মাঝে একদম ই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়.......
"এখন আর রাফি আগের রাফির মতো নেই, অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। চুলগুলো অনেক বড় হয়ে আছে, সেদিকে কোন খেয়াল নেই। শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গেছে, রিহার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হবার পর ও এমন হয়ে যায়। এখন আর তেমন কথাও বলেনা কারো সাথে, কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেছে....
.
হঠাৎ একদিন রাফির মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে....রিসিভ করার পর
"কেমন আছেন?
"কে বলছেন?
"আমি সামিয়া, আজকে দুর থেকে আপনাকে দেখলাম, আপনাকেত চিনাই যায়না, এমন হয়ে গেছেন কেন??
"কই?? আমিতো ঠিকাছি
"আমি জানি ভাইয়া আপনি কতটা কষ্টে আছেন, কিন্তু এখন আর কষ্ট পেয়ে কি করবেন? তাছাড়া ওতো আপনার শুধু বন্ধুই ছিল তো ওর জন্য এমন করবেন কেন?
"হুম আমার বন্ধু ছিল কিন্তু ভালোবাসার মানুষের চেয়েও অনেক অনেক বেশি আপন ছিল.....
-
এমন ভাবেই তাদের মাঝে একটু কথা হয়, একসময় তাদের মাঝেও আস্তে আস্তে কথার মাত্রাটা বাড়তে থাকে। সামিয়া রাফির অনেক কেয়ার করে। সবসময় হাসি খুশিতে রাখে, এরই মাঝে রাফি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। অন্যদিকে সামিয়া এখন রাফিকে অনুভব করতে শুরু করেছে। রাফির কষ্টটা দেখে ও নিজের অজান্তেই ওকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু বলতে পারছেনা, অনেক চেষ্টা করে কিন্তু সাহস হচ্ছেনা, আগামি সোমবার রাফির জন্মদিন। তাই সামিয়া সিদ্বান্ত নিয়েছে সোমবারে সে তার মনের কথা রাফিকে বলবে.....
-
"আজকে রবিবার, এখন সময় ১১.৩০ মিনিট, সামিয়া রাফিকে কল দিয়ে বলে যে, ভাইয়া একটু জলদি আমাদের বাসায় আসেন, আম্মুকে হাসপাতালে নিতে হবে। রাফি কোন কিছু না ভেবেই দৌড় শুরু করে, যখন ও সামিয়াদের বাড়িতো পৌছে তখন ঘড়ির সময় রাত ১২টা ছুই ছুই। রাফি বাড়িতো ঢুকেই অন্য কিছু একটা ফিল করলো, পুরো বাড়ি অন্ধকার, চারদিকে শুনশান নিরবতা। কোথাও কোন আলোর ছায়া নেই। রাফি আস্তে আস্তে সামিয়াদের বাসায় যায়। মোবাইলের আলোর সাহায্যো রুমে ঢুকেই সে একটা বড় শক খায়। রুম একদম অন্ধকার। কোন মানুষের ছায়াও নেই। তাহলে সামিয়া আমাকে মিথ্যা বললো? নাকি এটা অন্য কেউ ছিল?? নাহ সামিয়া এমন করবে ক্যান!! ও এমন করার মতো মানুষ না। এমন কথাগুলো ভাবার সময়ই হঠাৎ করেই পুরো ঘর আলোকিত হয়ে উঠে। লাল নীল বাতির আলো রাফির চোখে মুখে লাগছে। চারদিক ঝিকিমিকি করছে, পুরো ঘর বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।, একটু পরই আলোর মাঝ থেকেই সামিয়া হ্যাপি বার্থডে ট্যু ইয়্যু বলতে বলতে রাফির সামনে আসে। রাফি অবাক হয়ে যায় পুরো। আজকে ওর জন্মদিন কিন্তু ওর নিজেরই মনে ছিলনা...
"Thanks Samia. আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম যে, আজকে আমার জন্মদিন।
"হুম কিন্তু আমি ভুলিনি, কারন আমিতো আর রিহা না, আমি সামিয়া...
---কথাটা শুনেই রাফির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, চোখদুটু টলমল করে উঠে। যেই পানি পড়বে চোখ থেকে, তখনি সামিয়া তার হাত দিয়ে পানির ফোটাগুলো ধরে ফেলে...
"অনেক হয়েছে, আর না, এতো কাদেন কেন আপনি?? হুম?
"ভালো লাগে
"হুম, কিন্তু অন্যজনের যে প্রচন্ড কষ্ট হয় সেদিকে খেয়াল আছে??
রাফি আকাশ থেকে পড়ে যেন কথাটা শুনে.....
"তোমার কথার কিছুই বুঝলাম না আমি....
"বুঝতে হবেনা আপনাকে, শুধু আপনি কান্না করবেন না প্লিজ। সহ্য হয়না আমার, একদম না...
রাফি বুজতে পারে সামিয়া কি বুজাতে চেয়েছে। সে চেয়ে দেখলো যে, ওকে কান্না করতে নিষেধ করে দিয়ে ও নিজেই কান্না করছে.....
"
রাফি কিছু না ভেবেই সামিয়ার গালে হাত রাখে, "কি ব্যাপার এভাবে কান্না কেন? আমারোতো কষ্ট হয় তোমার জন্য.....
"মানে?
"মানে কষ্ট হয় তোমার কান্না দেখলে..
"কেন?
"ভালোবাসি যে...
কথাটা শুনেই সামিয়া রাফির বুকে চলে আসে এবং হু হু করে কেদে দেয়....
রাফি শুধু ওকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে, ওর কান্না থামানোর কোন ইচ্ছেই হচ্ছেনা ওর, কারন এটা ভালোবাসার কান্না, কাছে পাওয়ার কান্না। কান্না করতে চায় তো করুক...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন