রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭

'স্বপ্ন'

৪ঠা অক্টোবর তাদের দুজনের প্রথম দেখা হলো, তখন বিকেল ঘনিয়ে অাসছে, বাতাসে শীতের আমেজ।
১০ই অক্টোবর তাদের দীর্ঘক্ষণ কথা হলো টেলিফোনে, সেদিন ছেলেটি নতুন কেনা টবে গোলাপের চারা লাগালো।
...
৩০শে অক্টোবর রেস্টুরেন্টের নিরালা কেবিনে ছেলেটি মেয়েটিকে বললো, তোমাকে আমি ভালোবাসি। মেয়েটি লজ্জায় মাথা নিছু করে টেবিলে আঁকিবুকি কাটলো।
১২ই ডিসেম্বর গোলাপ গাছে কুঁড়ি ধরলো, সেদিন মেয়েটি রেস্টুরেন্টে ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলো, কেনো ভালোবাসো আমায়..?!
...
__আমি সুন্দরী তাই..?
__তোমার চেয়েও সুন্দরী কত আছে..!
__আমার বাবার প্রচুর অর্থ তাই..?
__তোমার বাবার চেয়েও ধনীলোক কম আছে..?
__তাহলে..?
__ভালোবাসি ভালোবাসি, তার আবার কারণ হয় নাকি..?
...
মেয়েটি বাড়ি ফিরে বন্ধুদের সঙ্গে টেলিফোনে অনেক অালোচনা করলো, সবাই একবাক্যে বুঝিয়ে দিলো, ভালো যখন বাসে, তখন কারণ তো একটা অাছে বটেই, সেটা না বুঝে বেশী এগোস না।
৩রা জানুয়ারি মেয়েটি ছেলেটিকে বললো, তুমি আমার কাছে কি চাও..?
...
__কই চাইনি তো কিছু!
__ভালোবাসো অথচ চাওনা! তাহলে..?
__না চাহিলে যারে পাওয়া যায়...
__এতো গান!
__শুধুই গান..?
__তাছাড়া কি..? কিছুই যদি না চাও তবে ভালোবাসো কেনো..?
__ভালোবাসি, তাই ভালোবাসা দিতে চাই, চাইবো কেনো..?
__তুমি সত্যিই অদ্ভুত!
...
১০ই ফেব্রুয়ারি দুজনের দেখা হলো মেট্রো স্টেশনে, পাতালে।
__ছেলেটি মেয়েটিকে বললো, আমি কাল সারারাত বাঁশি বাজিয়েছি, সারারাত সেই সুরের মায়াবি অালোয় তুমি নাচছিলে, অসামান্য, অনন্য সে নাচ।
__ধ্যাৎ! কাল সারারাত আমি ঘুমিয়েছি।
__আমি কিন্তু তোমার নাচই দেখে গেছি সারারাত।
__তোমার বাঁশি বাজানো একদিন শুনতে হবে।
...
১২ই মার্চ ছেলেটি বাঁশি বাজালো। মেয়েটি শুনলো, সময় থমকে থেমে রইলো অনেকক্ষণ। বাঁশি যখন থামলো মেয়েটি দুচোখ ভরা জলে বললো...বাঁশি শুনতে শুনতে আমার ঘুম এলো অাবেশে! আমি দেখলাম আমি নাচছি, মেঘের মাঝখানে, তারাদের পাশে, আমি নাচছি, আকাশে ফুলের গন্ধ।
...
__ডাক্তার আমাকে বাঁশি বাজাতে নিষেধ করেছে!
__সে কি! কেনো..?
__বাঁশি আমাকে টেনে নিয়ে যায় স্বপ্নে, ডাক্তার বলেছে স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমার মস্তিস্কের শীরা-উপশীরায় জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
__তাহলে..?
__ভাবছি!
...
১৬ই এপ্রিল মেয়েটি ছেলেটিকে বললো, আমার বন্ধুরা বলেছে তুমি খুব ভালো, অসাধারণ, কিন্তু সৃষ্টিছাড়া, তোমার স্বপ্ন সব অর্থহীন।
__আমি জানি...
__স্বপ্ন টপ্ন ছেড়ে দিতে পারো না তুমি..?
__না...!
__তাহলে, তাহলে তুমি তো আমাকে হারাবে।
__তোমায় পাইনি তো কখনো!
...
৫ই মে ছেলেটির মস্তিস্কে অপারেশন হলো। একটু সুস্থ হতেই মেয়েটি এসে বললো...
__ভালো আছো তো..? এখন আর স্বপ্ন দেখছো না তো..?
__দেখছি, আরো সুন্দর সব স্বপ্ন!
__তাহলে তো দেখছি, অপারেশনটা অাদৌ সফল হয়নি।
...
বাড়ি ফিরে বন্ধুদের ফোন করলো মেয়েটি, বন্ধুরা একবাক্যে বললো, বাঁশি বাজানো স্বপ্ন দেখা সবই কাল্পনিক-সৃষ্টিছাড়া, তুই আর লোক পেলি না!
তুই এতো সুন্দরী, এতো মেধাবী, ভালো যদি চাস তাহলে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেল, তোর ভাইয়ের বন্ধুকে। উনি তো শুনলাম ইংল্যান্ডে থাকবেন।
...
৭ই জুলাই মেয়েটি ছেলেটিকে আবার জিজ্ঞাসা করলো, তুমি সত্যি কি চাও বলো তো..?
__তুমি আরো স্বার্থক আরো সুন্দর হয়ে ওঠো...
__ব্যাস, আর কিছু না..?
__আর! আর চাই স্বপ্ন দেখতে।
__ও, তাহলে স্বপ্ন তুমি ছাড়তে পারবে না..?
__না...
__তাহলে থাকো তুমি তোমার স্বপ্ন নিয়ে।
...
১২ই আগষ্ট গোলাপ গাছে ফুল ফুটলো অনেক। সেদিন দুপুরে ছেলেটির মস্তিস্কে আবার অপারেশন হলো।
১৩ই আগষ্ট ছেলেটি মারা গেলো!
১৪ই সেপ্টেম্বর মেয়েটির শুভবিবাহ সুসম্পন্ন হলো, ইংল্যান্ডগামী পাত্রের সঙ্গে।
২০শে সেপ্টেম্বর গোলাপ গাছটি হঠাৎ ঝড়ে উপড়ে গেলো।
সেদিন সন্ধ্যের বিমানে মেয়েটি হানিমুনে গেলো। যাবার আগে বন্ধুদের বলে গেলো, স্বপ্নের চেয়ে বাস্তব অনেক ভালোরে, অনেক মধুর। স্বপ্ন দেখে কেবল বোকারা!
...
৪ঠা অক্টোবর ছেলেটির মা ঝরে পড়া গোলাপ গাছটিকে সযত্নে তুলে ফেলে দিলেন।
শূন্য টবে তখন কয়েকটা পোঁকা, কয়েকটা মাছি।
আমি ঠিক জানি না, ওগুলো পোঁকা-মাছি, নাকি ছেলেটির স্বপ্ন!
আমি ঠিক জানি না!
ঠিক জানি না........

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন