মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭

প্লিজ মায়া আমার শেষ অনুরোধটা তুমি রাখ....
হা হা হা তোমাকেই যখন জীবন থেকে মুছে ফেলতে যাচ্ছি, সেখানে তোমার অনুরোধ কিভাবে রাখব।তারপরও এমন একটা অনুরোধ করছ তুমি যেটা আমার পক্ষে মোটেই রাখা সম্ভব নয়।
নিতু আমার প্রান মায়া...
আর নিতু আমার প্রান নয় কি।ওকে ছাড়া আমি একমূহুর্তও কাটাতে পারবনা।তবুও মায়া তুমি একটু বুঝতে চেষ্টা কর, তুমি ছিলে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল,তারপর আমাদের মাঝে আসল নিতু।আমি জানি নিতুকে ছাড়া আমি যেমন থাকতে পারবনা,তুমিও তেমন থাকতে পারবেনা।একবার অন্তত আমার কথাটা একটু ভেবে দেখ।প্রতিমাসে একবার অন্তত আমার কাছে আসতে দিও।
বলেছি তো নিতু আমার মেয়ে শুধুই আমার মেয়ে।ও শুধু ওর মাতৃপরিচয় নিয়েই বেড়ে উঠবে।আমি চাইনা তোমার মত একটা জঘন্য পাপীর ছায়া আমার মেয়ের উপর পড়ুক।
দেখ শুভ্র আমি আর কথা বাড়াতে চাইছিনা।এতদিন অনেক কিছুই সহ্য করেছি তোমার, আজ থেকে আমি কিন্তু তোমার বাধ্যকতা নেই।তাই অহেতুক সময় নষ্ট করা আমার রুচিতে বাধে।
কিন্তু মায়া আমি বলবনা তোমাকে আমাদের অতীতের সম্পর্কটা নিয়ে এক সেকেন্ড ভাবতে,শুধু বলব একটিবার শুধু একটিবার আমার কথাটা ভাব।তোমাকে হারিয়ে আমার হৃদয়ের অর্ধেক ভেঙে গেছে।বাকি অর্ধেক জুড়ে নিতু আছে।ওকে কেড়ে নিলে আমি বাঁচব কিভাবে।
তোমার মত পাপীর বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল।
হ্যা আমার মরনই ভাল।তবু মরতে ইচ্ছে করেনা,কেন জান?নিতুর জন্য।
থাক এখন অত বাহানা করতে হবে না।আমার খুব ভালভাবেই চেনা হয়ে গেছে তোমার মত মুখোশধারী শয়তানকে।মিথ্যে কথার জালে ফেলে আমার জীবনটা তো নষ্ট করেছ সেই সাথে আমার মেয়ের জীবনটাও....
মায়া এভাবে বলনা,আমি তোমাদের ভালবাসি এটাই সত্যি,জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসি...
এটাই সব থেকে বড় মিথ্যে শুভ্র।আমি তোমাকে চিনে ফেলেছি শুভ্র। মিথ্যের আড়ালে আর কতদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখবে।প্লিজ সাক্ষরটা করে আমাকে মুক্তি দিও।যদি এতটুকুও ভালবেসে থাক, বিনিময়ে আমার এই উপকারটুকু কর...
মায়া, এই মায়া শোন,একটিবার শোন..(নিতুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সঙ্গে জামাকাপড়ের ব্যাগ)
.
চলে যাচ্ছে ও।আমার স্ত্রী,আমার প্রানপ্রিয় বউ।যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি।আর আমার কলিজার টুকরা আমার একমাত্র রাজকন্যা নিতু।যার মুখ না দেখে,যার মুখে আব্বু ডাক না শুনে আমার সকালে ঘুমই ভাঙেনা।
আমার সামনে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে গেছে মায়া।শুধু আমি সাইনটা করলে চিরজীবনের মত মুক্তি পাবে সে।একটাবার ভাবলনা সে তাকে ছাড়া আমার যে কোন অস্তিত্ব নেই...
এই কি সেই মায়া..যে ছিল ক্লাসের সবথেকে বদমেজাজি মেয়ে,যাকে হাসানোর জন্য বাজি ধরে জিতেছি।যাকে ভালবাসার কথা বলতে শতবার হেরে গেছি।যাকে ভালবাসি কতটুকু তা জানানোর জন্য প্রতিদিন ওর বাসার সামনে বসে থেকেছি।যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছি,যার হাতে হাত রেখে সারাটাজীবন পার করে দেব বলে ভেবেছি,এই কি সেই মায়া?উহু এই যদি সেই মায়া হত তবে কিছুতেই দূরে যেত পারতনা....
সামান্য কারনে ভুল বোঝাবুঝি।বিশ্বাস কর ভালবাসার কোন ঘাটতি ছিলনা আমাদের মাঝে
যদিও ওকে অনেক কষ্টে পেয়েছি, তারপরেও ও আমাকে বুঝত আমি ওকে বুঝতাম।
আমি জানিনা কেন এমন হল..আমি জানিনা কোন পিতা তার তিন বছরের নাদুস নাদুস বাচ্চাকে ছেড়ে একা থাকতে পারে কিনা।আমি জানিনা আমি কাঁদব কিনা।কাঁদলে যদি মনে একটুও শান্তি আসত তবে আমি কাঁদতাম....
.
ওরা ছেড়ে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর....
আজকে মায়ার উপর ভীষন রাগ হচ্ছিল আমার।আমি বুঝিনা ওর যত রাগ আমার উপর মেনে নিলাম।কিন্তু বাচ্চা মেয়েটাকি তার বাবার কাছে কোন আব্দার করতে পারেনা।আজ রাস্তায় ওদের সাথে দেখা হয়েছিল।মায়া আমার আমার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে এমনভাবে চোখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল মনে হচ্ছিল শত জন্মের ঘৃনা আমার উপর।উহু তাতে আমার কোন দুঃখ নেই।কারন আমি যদি তার যোগ্য না হই তবে তাকে জোর করার কোন অধিকারই আমার নেই।কিন্তু নিতু আমার মেয়ে,আমাকে দেখে আব্বু আব্বু বলছিল,আর আইস্ক্রিম খেতে চাইছিল।দিয়েছিলাম আইসক্রিম কিনে।কিন্তু মায়া ওকে খেতে দেয়নি ফেলে দিয়েছে।নিতু কাঁদছিল খুব আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছিল....তবুও কিছু বলতে পারিনি আমি নিরুপায়....
.
কিছুদিন পর...
আজও আমার ভীষন রাগ হচ্ছিল।মায়ার বাসার গেটের আড়ালে দাড়িয়ে ছিলাম একটা টেডি নিয়ে।আমার মামমনির পছন্দের টেডি।চুপি চুপি ওকে কাছে টেডিটা হাতে দিতে।খুশিতে ওইটুকু মেয়ের চোখে পানি জমে উঠেছে।বলছে আমাকে আব্বু আমি তোমাকে ভীষন ভালবাসি, তুমি কেন আমাকে আদর করতে আসনা...।মেয়েটার কথা শেষ হতে না হতেই মায়া এসে ওর হাতের টেডিটা কেড়ে নিয়ে বাইরে ছুড়ে দিয়ে নিতুকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল , তোমাকে না বলেছি অচেনা মানুষ কিছু দিলে নিতে নেই...।আম্মু উনি তো আমার আব্বু অচেনা কেউ নয়।চুপ বড়দের মুখের ওপর কথা বল কেন যাও ভিতরে যাও....
.
কিছুদিন পর...
আজকের দিনটা শুরু হওয়ার আগে আমার মৃত্যু হওয়াটাও সুখকর ছিল।সত্যি বলছিরে মায়া।পৃথিবীতে আমার মত ভাল কেউই তোকে বাসতে পারবেনা।সেই আমাকেই ও না চেনার ভান করল।আমাকে শাষিয়েও দিল,ভুলে যদি আমি আর তাদের সামনে যাই বা যোগাযোগ করি তবে ফল ভাল হবেনা...
.
কিছুদিন পর...
আজ সকালবেলা মায়ার বোন ফোন করে বলল নিতু খেলতে গিয়ে ফ্লোরের উপর পড়ে কপালে আঘাত পেয়ে ফেঁটে গিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরন হয়েছে।এখন হাসপাতালে ভর্তি।দৌড়ে গিয়েছিলাম সেখানে।আমার মেয়ে আমার গায়ের রক্তই তো বইছে ওর শরীরে।আমি নিশ্চিত তখন যদি ইমারজেন্সি রক্তের প্রয়োজন না হত তবে আমাকে কিছুতেই রক্ত দিতে দিতনা মায়া।রক্ত দিয়ে আমি বেরিয়ে পড়েছি এক অজানা গন্তব্যে,আজ থেকে আমার ছুটি। মায়ার জন্য রেখে এসেছি ছোট্ট একটা চিরকুট আর খাম....
.
চিরকুটে লেখা ছিল...
মায়া, তুমি আমাকে যতই অস্বীকার কর, তবু আমি তোমাকে আমৃত্যু স্ত্রী হিসেবেই মেনে যাব।ভালবাসায় ভুল বোঝাবুঝি হবে।তবে আমি ভাবি তোমার আমার ভালবাসা এতটা ঠুনকো হবে।যার ফলাফল আমাদের সম্পর্কের একেবারে শেষ পর্যায়ে টেনে আনবে।বিশ্বাস কর আমি তোমাকে এখনও ভীষন ভালবাসি,এবং ভালবেসে যাব।নিতু পাগলীটাকে বড্ড বেশি মনে পড়ে আজকাল।ওইটুকু মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে তুমি কি সুখ পাও বলতো।আমি ইচ্ছা করলে জোর করতে পারতাম।কিন্তু আমি জানি নিতু তোমার কাছেই সবথেকে বেশি খুশি থাকবে।আর হ্যা আমাকে তুমি এতটা ঘৃনা কর যে আমার দেওয়া প্রতিটা জিনিসই তুমি ফেলে দিয়েছ।কিন্তু এবারের রক্তটা যেন ফেলে দিওনা।ওটা আমার স্মৃতি হিসেবেই রেখ দিও।বলতে পার এটাই আমার শেষ অনুরোধ...।
আমি জানিনা তুমি আমাকে কোনদিন খুঁজবে কিনা?মিস করবে কিনা?ভালবাসবে কিনা?তবু যদি তুমি এই চিরকুটটা পেয়ে থাক তবে অন্তত একবার মনে মনে বলে ফেল ভালবাসি...
আর হ্যা শোন,তুমি মুক্তি চাইছিলে না?তোমাকে মুক্তি দিয়েছি।খামের ভিতর ডিভোর্স পেপার আছে।তবু বিশ্বাস কর সাইন করতে গিয়ে প্রতিবার হাত আটকে গিয়েছে।তবে এতটুকু বিশ্বাস রেখ আমি কখনও আর আসবনা কোন অধিকার বা দাবি নিয়ে..
.
পাঁচদিন পর....
মায়া আর নিতুকে ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি।বোঝাতে পারবনা কাউকে কতটা কষ্ট বুকে জমানো আছে।আচ্ছা আমার চিঠিঠা কি মায়া পড়েছে।যদি পড়ে থাকে তবে তবুও কি তার রাগ কমেনি এখনও।ও কেন বোঝে না আমি ওদের ছাড়া একেবারেই অপরিপূর্ন...
বিকেলবেলা....
একটা হলুদ শাড়ি পড়া,চোখে কাজল লেপ্টে আছে,চুলগুলো এলেমেলো,একটা নারী দৌড়ে এসে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়েছে।কোন কথা বের হচ্ছেনা শুধু ফোপানোর আওয়াজ হচ্ছে...
তুমি এমন কেন শুভ্র।আমাকে তুমি একটা থাপ্পড় দিয়ে কেন বললেনা এই মায়া এত বেশি বুঝনা।বল কেন আমার দেওয়া কষ্টগুলো তুমি মাথা পেতে নিলে।তুমি কি ভেবেছে আমি সুখে থাকব।শুভ্র ছাড়া মায়া কখনও বাঁচতে পারে।কেন বল কেন তুমি আমাকে বাধা দিলেনা...
ধুর পাগলী আমি জানি তো, আমি ছাড়া তোর যাওয়ার জায়গা নেই...কোথায় যাবি?কতদূর যাবি শুনি আমায় ছেড়ে?পারবি একা থাকতে?একা বাঁচতে?
উহু কখনও না।ভালবাসি ভীষন শুভ্র...
ভালবাসিরে পাগলী।
নিতু এসে গলা জড়িয়ে ধরে বলল আমিও ভালবাসি...
.
ভালবাসি, ভালবাসি
সেই সুরে, কাছে দূরে
জলেস্থলে,বাঁজায় বাঁশি
ভালবাসি,ভালবাসি...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন