কয়েক বছর আগের কথা। আমি ক্লাস নাইনে। আমি আর সুরভী ছিলাম বেস্ট ফ্রেন্ড। আমাদের এলাকায় ওরস শরীফ( গান বাজনা, মিলাদ মাহ্ফিল)।
আমার স্কুলের বান্ধবীদের দাওয়াত করি। শুধু মেঘলা বেড়াতে আসে।
.
সুরভীর এক মামা বাড়ির উঠানে অনুষ্ঠানের অনেক দোকান পাঠ বসে। আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে। রাতে আমি মেঘলা, সুরভী, সুরভীর বাবা মার সাথে ওর মামা বাড়ি যাই।
.
তো আমারা সুরভীর মামা বাড়ি গিয়ে দেখি বাড়ি আত্নীয় সজন ভর্তি।
সুরভীর একটা মামাতো ভাই আছে সোহাগ। সোহাগ ও আমাদের সাথে এবং একই স্কুলে পড়ে। ও ওর বন্ধুদের দাওয়াত করেছে, অনেক বন্ধুরা আসছে।
.
আমারা তিন বান্ধবী সোহাগের রুম দখল করে ফেলি। সোহাগ মাঝে মাঝে এসে আমাদের সাথে গল্প করে যায়। ওরস থেকে অনেক খাবার জিনিস নিয়ে আসে। সোহাগ আর সুরভী মামাতো ভাই বোন হলে ও আগে তেমন কথা হত না।
.
কয়েক দিন পর নাইনে বার্ষিক পরীক্ষা। সবাই পড়াশুনা নিয়ে আলোচনা করছি। আবার গল্প ও করছি। পরিবেশ যা বুঝতে পারছি সারা রাত ঘুম হবে না। রুম এর সাথে চারটা মাইক বাজছে। সোহাগ সবার সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ সুরভীর সাথে অন্যরকম কথা বলা শুরু করলো।
সুরভীর প্রতি সোহাগের দুর্বলতা খেয়াল করলাম। চোখে মুখে অন্য রকম একটা ভাব। একটু পর সোহাগ রুম থেকে বেড়িয়ে যায় ওর বন্ধুরা ডাকলে। আমি তখন সুরভীকে বলি_
- কিরে সুরভী, সোহাগ ভাইকে তো সুবিধার মনে হলো না।
- নারে.... এমনি মজা করছে মনে হয়।
- কি জানি, আমার তো অন্য রকম লাগলো।
.
অনেক ক্ষণ পর সোহাগ আবার রুমে আসে। গল্প করা শুরু করে। এদিকে আমার ঘুম ধরে কানা হয়ে যাচ্ছিলাম। এবার সোহাগ সুরভীর সাথে আরো বেশি প্রেমময় কথা শুরু করলো। আর সুরভী ও তাল মেলালো। আমি আর মেঘলা ওদের গল্প শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খাই। তখন রাত একটা হবে। সোহাগের বন্ধুরা আবার ডাকতে আসে। সোহাগ আমাদের শিখায় দেয় বলো নাই। আমি বলি মিথ্যা বলবো কেন?
- প্লিজ বলো নাই।
সুরভী বলে, সোহাগ নাই চলে গেছে। কিন্ত ওর বন্ধুরা তবু রুম দেখতে চায়। তখন সোহাগ খাটের নিচে লুকায়!! তখন ওর বন্ধুরা সোহাগকে পায় না চলে যায়।
.
সোহাগ খাটের নিচ থেকে বের হয়ে আবার কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়। আর সাথে সাথে আবার সোহাগের বন্ধুরা এসে হাজির। বলে দরজা খুলো, আমরা আবার রুম চেক করব সোহাগ রুমেই আছে। আমারা নেই বললে ও ওরা শোনে না শেষে বাধ্য হয়ে দরজা খুলি। এবার সবাই মিলে সোজা খাটের নিচে খুজতে যায় কিন্ত পায় না।
.
সারা রাত অনুষ্ঠান হয় তিন দিন ব্যাপি। বাড়িতে মানুষ জন সব সময় চলা ফেরা করছে। সোহাগে মা রুমে এসে আমাদের তিন জনের খবর নিয়ে গেলেন কোন অসুবিধা হচ্ছে নাকি, কিছু লাগবে কি না। মনে মনে বললাম কি করে বলি আপনার ছেলে তো যত অসুবিধা করছে। এর মাঝে সুরভীকে ও কেমন যেন পরিবর্তন খেয়াল করলাম। ও যেন সোহাগকে মিস করছে।
.
.
সোহাগ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আবার রুমে আসে। তখন রাত তিনটা বাজবে হয়তো। মেঘলা আমাকে বলে রুপা চল হাত মুখ ধুয়ে আসি। আমি বলি সোহাগ আর সুরভীর ভাব সুবিধার না ওদের একা রেখে যাওয়া যাবে না। সুরভীকে বাহিরে যাবার কথা বললে, ও বলে তোরা যা আমি গল্প করছি। আমি যেন নতুন সুরভীকে দেখলাম। আমার চিরচেনা সেই সুরভী আর নেই। এ দিকে মেঘলা ও ফ্রেস হবার জন্য বাহিরে যাবেই, ওর নাকি খারাপ লাগছে তাই হাত মুখ ধুবে। আমি আর মেঘলা ওদের একা রেখে বাহিরে গেলাম।
.
.
ফিরে এসে যা দেখি!!!! আমাদের চোখ কপালে উঠে গেল।
কোন যেন মনীষী বলছেন, দুজন যুবক যুবতীকে এক রুমে রাখলে তারা দুজন দুজনের শরীরী উষন্ন করা ছাড়া বেশি কিছু করতে পারে না। সোহাগ সুরভী ও তাই.......। আমি রুমে গিয়ে সুরভীকে ঠাস করে একটা চড় দেই। সোহাগ রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
.
আসলে ওরা যেটাকে ভালোবাসা বলছে তার মাঝে ভালোবাসার ( ভ ) ও নাই সব আবেগ। কাঁচা বয়স, কাঁচা মন আবেগের শেষ নেই।
আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। বিবেক দিয়ে চলতে হয় তাহলে জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায়।
.
আমি সুরভীকে কি বলবো কিছু বুঝতে পারি না। আমি সুরভীর মাঝে কোন দিন খারাপ কিছু দেখি নাই। কখনো প্রেম করে নাই। ও যথেষ্ঠ সুন্দরী কত ছেলে প্রোপোজ করে কিন্ত রাজি হয় নাই। আর আজ সেই সুরভী................, আমি ভাবতে পারি না। সুরভী আমার বান্ধবী।
.
আমাদের কাছে সুরভী সরি বলে। কিন্ত সরি দিয়ে তো সব ভুল সমাধান হয় না।
.
ভোর হলে তারাতারি বাড়ি চলে আসি। সারা রাত ঘুম নাই বাড়ি এসে খেয়ে ঘুমাই। আর মেঘলা ও বাড়ি চলে যায়। বিকালে সুরভী আমার কাছে আসে।
- রুপা আমি সোহাগকে ভালোবাসি।
- সুরভী তুই এ সব কী বলছিস!? তুই সোহাগকে ভালোবাসিস না এটা একটা ভুল।
তুই আবেগে এ সব বলছিস।
- ভুল না, আমি যা বলছি তাই সত্যি।
আর সোহাগ ও আমাকে খুব ভালেবাসে।
.
.
আমি সুরভীকে সব রকম বুঝাই। সোহাগ তোর যোগ্য না। ওর সাথে তোকে মানায় না। তোর বাড়িতে ও মানবে না। আমি আমার মত করে যতটুক পারি বুঝানোর চেস্টা করি, কিন্ত সুরভী যেন শিশু আমার কথা কিছুই বুঝলো না।
.
এর মাঝে আমাদের নাইনে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলো। পরীক্ষা শেষ হলে পর দিনই আমি বেড়াতে যাই। আর সুরভীর প্রেম চলতে থাকে। দুজন চিঠি আদানপ্রদান করে। সোহাগে এক বন্ধু পিওন। এক দিন সব চিঠিপত্র সুরভীর মা দেখে ফেলে। ওর মার হাতে পায়ে ধরে চিঠি গুলো উদ্ধার করে।
বাড়ি ফিরে জানতে পারি দু এক দিন মাইর ও খেয়েছে।
.
.
জানুয়ারি মাসে ক্লাস টেন এ ভর্তি হলাম। প্রতিদিন স্কুল যাওয়া আসা শুরু হলো, সুরভী আর সোহাগের প্রেম ও জমতে লাগলো। প্রতিদিন দেখা+কথা হত। আর চিঠি তো আছেই।
.
সুরভী বাবা এ সব জানতে পারায় ওর স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বাড়ি থেকে বের হওয়া ও বন্ধ।
এ ভাবে কিছু দিন যাবার পর আবার স্কুলে যেতে দেয় কিন্ত ওর ভাই রেখে আসতো আর নিয়ে আসতো।
কয় দিন আর এত গার্ড দেয়া যায় তাই আবার আমাদের সবার সাথে স্কুলে যাওয়া আসার অনুমতি দিল। আর সুরভীর বিয়ে অন্য জায়গা দেখা শুরু করল। সোহাগের সাথে বিয়ে দিতে রাজী নয়।
.
সুরভী ঠিক করল ও সোহাগের সাথে পালায় যাবে। সব বান্ধবী মিলে বুঝাই কোন কাজ হয় না। সোহাগ প্রথমে রাজি না হলে ও পরে হয়। পালাতে গেলেতো টাকা লাগবে। সুরভী বাড়ি থেকে ওর দাদির শেষ স্মৃতি হাতের বালা চুরি করে, আর ওর নপুর বিক্রি করে।
.
ক্লাস টেনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ডেট হয়। পরীক্ষার ফি আর মাসের বেতন দেয়ার টাকা ও মেরে দেয়। সব টাকা জমা করে। এত কিছু হবার পর ও বান্ধবীরা বুঝানো বাদ দেই না। কিন্ত সুরভী কারো কথা শোনে না।
আমি ওর পরিবারকে জানানোর সিন্ধান্ত নেই। তখন সুরভী বলে আমি সোহাগকে না পেলে সুইসাইড করব, তাই আমি আর কিছু বলি না।
অবশেষে পালানোর দিন ও ঠিক হলো।
.
.
প্রতিদিনের মত সব বান্ধবী আমাদের বাড়ি এসে হাজির তারপর সবাই এক সাথে স্কুলে যাব। সুরভী স্কুল ব্যাগ ভর্তি জামা কাপড়। আমার মা বলেই উঠলো_
- সুরভী তোমার ব্যাগ আজ এত মোটা কেন?
- আন্টি পরীক্ষা বই দাগাবো তাই সব বই নিয়েছি।
- ওহ।
আমার মা আর কিছু বলেন না।
বাড়ি থেকে সবাই বেড়িয়ে পরলাম।
.
.
সোহাগ রাস্তায় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আর হ্যা পালায় কোথায় যাবে,কার কাছে যাবে সব কিছু সোহাগ ঠিক করে রাখে। সবাই স্কুলে না গিয়ে সোহাগের X গাল ফ্রেন্ড তুলির বাসায় যাই। তারপর সুরভীকে তুলির বোরকা পড়ায় রেডি করি। এবং সবাই মিলে ওদের রেল ষ্টেশন পর্যন্ত পৌঁছায় দিয়ে আসি।
.
স্কুলে কিছু সময় কাটায় সবাই বাড়ি চলে আসি। বাড়ি আসার কিছুক্ষণ পর সুরভীর মা হাজির।
- রূপা সুরভী কই?
- আন্টি ও তো আজ স্কুলেই যায় নাই। রাস্তায় বলল ওর খুব পেট ব্যাথা স্কুলে যাবে না। রাস্তার মাঝ থেকে বাড়ি চলে আসছে। কেন আন্টি ও এখনও বাড়ি আসে নাই?
- আসলে কি আর তোমার কাছে জিজ্ঞাস করি.......
.
কিছুক্ষণ পর সুরভীর মা চলে যায়।
সব বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে একই কথা শোনে। কারণ সব বান্ধবী আগেই ঠিক করি সুরভীর বাবা মা কে কি বলবো। তাই কারো কথার নরচর না হওয়ায় আমাদের দোষ হয় না। আর সুরভী বাবা মার ও বুঝতে বাকি রইল না মেয়ে কোথায়। সোহাগের খবর নিয়ে দেখে সোহাগ ও সকাল থেকে স্কুলে গিয়ে নিখোঁজ। ইতি মধ্যে সারা গ্রাম কথাটা ছড়িয়ে পড়ে।
সুরভী পরিবার লজ্জায় সমাজে ছোট হয়ে যায়। সুরভীর বাবা গ্রামে একজন সম্মানী ব্যাক্তি ছিলেন সব যেন নিমিষেই শেষ করে দেয় সুরভী।
.
.
এদিকে সোহাগ আর সুরভী, সোহাগের প্লান করা জায়গায় পৌঁছায় যায়। রাতে বিয়ে পড়ায়। কাবিন করে ছয় লক্ষ টাকা।
.
সোহাগের পরিবার সাত দিন পর মেনে নেয়। ওরা বাড়ি ফিরে আসে। কিন্ত সুরভীর পরিবার মেনে নেয় না।
দুজনের পড়া শুনা এখানেই শেষ।
আমরা সব বান্ধবীরা মিলে যখন সুরভীর শশুর বাড়ির সামনে দিয়ে স্কুলে যেতাম ওর সাথে দেখা হতো। ও খুব মন খারাপ করে থাকতো আর বলতো আমার ও স্কুলে যেতে ইচ্ছা করছে। মাঝে মাঝে আমাদর সাথে একটু আগায় গিয়ে চোখে জল নিয়ে ফিরে আসতো। সুরভী নাকি মাঝে মাঝে রাতে স্কুল ড্রেস পড়ত। ও স্কুলের ড্রেস পড়াটা খুব মিস করত।
রূপা তোরা ভালো করে পড়াশুনা কর আমি খুব ভুল করে ফেলছি বিয়ে করে।
.
.
এক দিন বিকালে সুরভীকে দেখতে যাই। কিছুক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁন্না শুরু করে। আর বলে রূপা আমাকে মাপ করে দিস তোর কথা না শুনে ভুল করেছি। পড়াশুনা করা অনেক ভালো ছিলো। ওর কাঁন্না দেখে সে দিন আমি ও কেঁদেছিলাম।
.
সুরভী বিয়ে পর কিছু দিন আনন্দে থাকলে ও পরে ওর ভুল বঝতে পারে। পাঁচ মাসের আবেগের বসে প্রেম/ভালোবাসা নামক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে যাওয়া ভুলটা বুঝতে পারে বিয়ের পর।
আসলে এই বয়সে শুধু সুরভী নয় দেশে এরকম অনেক সুরভী সোহাগ আছে যারা আবেগের বসে কঠিন সিন্ধান্ত নিয়ে ভুল করে আর ভুলের পরে পশ্চতায়। যখন আর কিছু করার থাকে না।
আর সেই ভুলের মাসুল চোখের জলে দিতে হয়।
.
.
বিয়ের দু বছর পর সুরভীর পরিবার মেনে নেয়। সুরভীর একটা ছেলে হয়। ছেলের নাম রাখে সিহাব। সুরভীর দুক্ষ যেন তখন বাড়তে থাকে। সিহাবের ১ বছর বয়সে কিডনিতে পানি লাগে। চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগে। এ দিকে সোহাগ এক জন দিন মুজুর। অনেক কষ্ট করে চিকিৎসা করে ছেলেকে সুস্থ করে। ওদের সংসার চালাতে বেশি হিমশিম খেয়ে কি করবে বুঝতে পারে না। অবশেষে ছেলেকে গ্রামে রেখে দুজন গার্মেন্টস চাকরী নেয়।
.
যে সময় একটা শিশুর মা কে বেশি প্রয়োজন সেই সময় মা ছেলে থেকে যোযন যোযন দূরে। গ্রামেতো চার দিক পুকুর থাকে। একদিন সিহাব খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। ভাগ্য ভালো হওয়ায় সে যাত্রা বেঁচে যায়। ছেলের পানিতে পড়া খবর শুনে সোহাগ সুরভী দুজনেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এখন আরার দিন মুজরের কাজ করে।
.
সুরভী আর আগের সুরভী নেই। চেহারা দেখলে অনেক বয়স্ক মহিলা মনে হয়। আগের মত প্রাণ খুলে হাসতে দেখিনা। অভাবী সংসার সামলাতে সারা দিন কেটে যায়। আর সোহাগ রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করে।
.
ওরা দুজন যদি মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করত তাহলে আজ এই পরিণতি হত না।
সুন্দর একটা জীনব গড়তে পারত।
.
সবাই ওদের ( সোহাগ, সুরভী, সিহাব ) জন্য দোয়া করবেন। ওরা যেন সুখে থাকে।
আমার স্কুলের বান্ধবীদের দাওয়াত করি। শুধু মেঘলা বেড়াতে আসে।
.
সুরভীর এক মামা বাড়ির উঠানে অনুষ্ঠানের অনেক দোকান পাঠ বসে। আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে। রাতে আমি মেঘলা, সুরভী, সুরভীর বাবা মার সাথে ওর মামা বাড়ি যাই।
.
তো আমারা সুরভীর মামা বাড়ি গিয়ে দেখি বাড়ি আত্নীয় সজন ভর্তি।
সুরভীর একটা মামাতো ভাই আছে সোহাগ। সোহাগ ও আমাদের সাথে এবং একই স্কুলে পড়ে। ও ওর বন্ধুদের দাওয়াত করেছে, অনেক বন্ধুরা আসছে।
.
আমারা তিন বান্ধবী সোহাগের রুম দখল করে ফেলি। সোহাগ মাঝে মাঝে এসে আমাদের সাথে গল্প করে যায়। ওরস থেকে অনেক খাবার জিনিস নিয়ে আসে। সোহাগ আর সুরভী মামাতো ভাই বোন হলে ও আগে তেমন কথা হত না।
.
কয়েক দিন পর নাইনে বার্ষিক পরীক্ষা। সবাই পড়াশুনা নিয়ে আলোচনা করছি। আবার গল্প ও করছি। পরিবেশ যা বুঝতে পারছি সারা রাত ঘুম হবে না। রুম এর সাথে চারটা মাইক বাজছে। সোহাগ সবার সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ সুরভীর সাথে অন্যরকম কথা বলা শুরু করলো।
সুরভীর প্রতি সোহাগের দুর্বলতা খেয়াল করলাম। চোখে মুখে অন্য রকম একটা ভাব। একটু পর সোহাগ রুম থেকে বেড়িয়ে যায় ওর বন্ধুরা ডাকলে। আমি তখন সুরভীকে বলি_
- কিরে সুরভী, সোহাগ ভাইকে তো সুবিধার মনে হলো না।
- নারে.... এমনি মজা করছে মনে হয়।
- কি জানি, আমার তো অন্য রকম লাগলো।
.
অনেক ক্ষণ পর সোহাগ আবার রুমে আসে। গল্প করা শুরু করে। এদিকে আমার ঘুম ধরে কানা হয়ে যাচ্ছিলাম। এবার সোহাগ সুরভীর সাথে আরো বেশি প্রেমময় কথা শুরু করলো। আর সুরভী ও তাল মেলালো। আমি আর মেঘলা ওদের গল্প শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খাই। তখন রাত একটা হবে। সোহাগের বন্ধুরা আবার ডাকতে আসে। সোহাগ আমাদের শিখায় দেয় বলো নাই। আমি বলি মিথ্যা বলবো কেন?
- প্লিজ বলো নাই।
সুরভী বলে, সোহাগ নাই চলে গেছে। কিন্ত ওর বন্ধুরা তবু রুম দেখতে চায়। তখন সোহাগ খাটের নিচে লুকায়!! তখন ওর বন্ধুরা সোহাগকে পায় না চলে যায়।
.
সোহাগ খাটের নিচ থেকে বের হয়ে আবার কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়। আর সাথে সাথে আবার সোহাগের বন্ধুরা এসে হাজির। বলে দরজা খুলো, আমরা আবার রুম চেক করব সোহাগ রুমেই আছে। আমারা নেই বললে ও ওরা শোনে না শেষে বাধ্য হয়ে দরজা খুলি। এবার সবাই মিলে সোজা খাটের নিচে খুজতে যায় কিন্ত পায় না।
.
সারা রাত অনুষ্ঠান হয় তিন দিন ব্যাপি। বাড়িতে মানুষ জন সব সময় চলা ফেরা করছে। সোহাগে মা রুমে এসে আমাদের তিন জনের খবর নিয়ে গেলেন কোন অসুবিধা হচ্ছে নাকি, কিছু লাগবে কি না। মনে মনে বললাম কি করে বলি আপনার ছেলে তো যত অসুবিধা করছে। এর মাঝে সুরভীকে ও কেমন যেন পরিবর্তন খেয়াল করলাম। ও যেন সোহাগকে মিস করছে।
.
.
সোহাগ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আবার রুমে আসে। তখন রাত তিনটা বাজবে হয়তো। মেঘলা আমাকে বলে রুপা চল হাত মুখ ধুয়ে আসি। আমি বলি সোহাগ আর সুরভীর ভাব সুবিধার না ওদের একা রেখে যাওয়া যাবে না। সুরভীকে বাহিরে যাবার কথা বললে, ও বলে তোরা যা আমি গল্প করছি। আমি যেন নতুন সুরভীকে দেখলাম। আমার চিরচেনা সেই সুরভী আর নেই। এ দিকে মেঘলা ও ফ্রেস হবার জন্য বাহিরে যাবেই, ওর নাকি খারাপ লাগছে তাই হাত মুখ ধুবে। আমি আর মেঘলা ওদের একা রেখে বাহিরে গেলাম।
.
.
ফিরে এসে যা দেখি!!!! আমাদের চোখ কপালে উঠে গেল।
কোন যেন মনীষী বলছেন, দুজন যুবক যুবতীকে এক রুমে রাখলে তারা দুজন দুজনের শরীরী উষন্ন করা ছাড়া বেশি কিছু করতে পারে না। সোহাগ সুরভী ও তাই.......। আমি রুমে গিয়ে সুরভীকে ঠাস করে একটা চড় দেই। সোহাগ রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
.
আসলে ওরা যেটাকে ভালোবাসা বলছে তার মাঝে ভালোবাসার ( ভ ) ও নাই সব আবেগ। কাঁচা বয়স, কাঁচা মন আবেগের শেষ নেই।
আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। বিবেক দিয়ে চলতে হয় তাহলে জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায়।
.
আমি সুরভীকে কি বলবো কিছু বুঝতে পারি না। আমি সুরভীর মাঝে কোন দিন খারাপ কিছু দেখি নাই। কখনো প্রেম করে নাই। ও যথেষ্ঠ সুন্দরী কত ছেলে প্রোপোজ করে কিন্ত রাজি হয় নাই। আর আজ সেই সুরভী................, আমি ভাবতে পারি না। সুরভী আমার বান্ধবী।
.
আমাদের কাছে সুরভী সরি বলে। কিন্ত সরি দিয়ে তো সব ভুল সমাধান হয় না।
.
ভোর হলে তারাতারি বাড়ি চলে আসি। সারা রাত ঘুম নাই বাড়ি এসে খেয়ে ঘুমাই। আর মেঘলা ও বাড়ি চলে যায়। বিকালে সুরভী আমার কাছে আসে।
- রুপা আমি সোহাগকে ভালোবাসি।
- সুরভী তুই এ সব কী বলছিস!? তুই সোহাগকে ভালোবাসিস না এটা একটা ভুল।
তুই আবেগে এ সব বলছিস।
- ভুল না, আমি যা বলছি তাই সত্যি।
আর সোহাগ ও আমাকে খুব ভালেবাসে।
.
.
আমি সুরভীকে সব রকম বুঝাই। সোহাগ তোর যোগ্য না। ওর সাথে তোকে মানায় না। তোর বাড়িতে ও মানবে না। আমি আমার মত করে যতটুক পারি বুঝানোর চেস্টা করি, কিন্ত সুরভী যেন শিশু আমার কথা কিছুই বুঝলো না।
.
এর মাঝে আমাদের নাইনে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলো। পরীক্ষা শেষ হলে পর দিনই আমি বেড়াতে যাই। আর সুরভীর প্রেম চলতে থাকে। দুজন চিঠি আদানপ্রদান করে। সোহাগে এক বন্ধু পিওন। এক দিন সব চিঠিপত্র সুরভীর মা দেখে ফেলে। ওর মার হাতে পায়ে ধরে চিঠি গুলো উদ্ধার করে।
বাড়ি ফিরে জানতে পারি দু এক দিন মাইর ও খেয়েছে।
.
.
জানুয়ারি মাসে ক্লাস টেন এ ভর্তি হলাম। প্রতিদিন স্কুল যাওয়া আসা শুরু হলো, সুরভী আর সোহাগের প্রেম ও জমতে লাগলো। প্রতিদিন দেখা+কথা হত। আর চিঠি তো আছেই।
.
সুরভী বাবা এ সব জানতে পারায় ওর স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বাড়ি থেকে বের হওয়া ও বন্ধ।
এ ভাবে কিছু দিন যাবার পর আবার স্কুলে যেতে দেয় কিন্ত ওর ভাই রেখে আসতো আর নিয়ে আসতো।
কয় দিন আর এত গার্ড দেয়া যায় তাই আবার আমাদের সবার সাথে স্কুলে যাওয়া আসার অনুমতি দিল। আর সুরভীর বিয়ে অন্য জায়গা দেখা শুরু করল। সোহাগের সাথে বিয়ে দিতে রাজী নয়।
.
সুরভী ঠিক করল ও সোহাগের সাথে পালায় যাবে। সব বান্ধবী মিলে বুঝাই কোন কাজ হয় না। সোহাগ প্রথমে রাজি না হলে ও পরে হয়। পালাতে গেলেতো টাকা লাগবে। সুরভী বাড়ি থেকে ওর দাদির শেষ স্মৃতি হাতের বালা চুরি করে, আর ওর নপুর বিক্রি করে।
.
ক্লাস টেনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ডেট হয়। পরীক্ষার ফি আর মাসের বেতন দেয়ার টাকা ও মেরে দেয়। সব টাকা জমা করে। এত কিছু হবার পর ও বান্ধবীরা বুঝানো বাদ দেই না। কিন্ত সুরভী কারো কথা শোনে না।
আমি ওর পরিবারকে জানানোর সিন্ধান্ত নেই। তখন সুরভী বলে আমি সোহাগকে না পেলে সুইসাইড করব, তাই আমি আর কিছু বলি না।
অবশেষে পালানোর দিন ও ঠিক হলো।
.
.
প্রতিদিনের মত সব বান্ধবী আমাদের বাড়ি এসে হাজির তারপর সবাই এক সাথে স্কুলে যাব। সুরভী স্কুল ব্যাগ ভর্তি জামা কাপড়। আমার মা বলেই উঠলো_
- সুরভী তোমার ব্যাগ আজ এত মোটা কেন?
- আন্টি পরীক্ষা বই দাগাবো তাই সব বই নিয়েছি।
- ওহ।
আমার মা আর কিছু বলেন না।
বাড়ি থেকে সবাই বেড়িয়ে পরলাম।
.
.
সোহাগ রাস্তায় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আর হ্যা পালায় কোথায় যাবে,কার কাছে যাবে সব কিছু সোহাগ ঠিক করে রাখে। সবাই স্কুলে না গিয়ে সোহাগের X গাল ফ্রেন্ড তুলির বাসায় যাই। তারপর সুরভীকে তুলির বোরকা পড়ায় রেডি করি। এবং সবাই মিলে ওদের রেল ষ্টেশন পর্যন্ত পৌঁছায় দিয়ে আসি।
.
স্কুলে কিছু সময় কাটায় সবাই বাড়ি চলে আসি। বাড়ি আসার কিছুক্ষণ পর সুরভীর মা হাজির।
- রূপা সুরভী কই?
- আন্টি ও তো আজ স্কুলেই যায় নাই। রাস্তায় বলল ওর খুব পেট ব্যাথা স্কুলে যাবে না। রাস্তার মাঝ থেকে বাড়ি চলে আসছে। কেন আন্টি ও এখনও বাড়ি আসে নাই?
- আসলে কি আর তোমার কাছে জিজ্ঞাস করি.......
.
কিছুক্ষণ পর সুরভীর মা চলে যায়।
সব বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে একই কথা শোনে। কারণ সব বান্ধবী আগেই ঠিক করি সুরভীর বাবা মা কে কি বলবো। তাই কারো কথার নরচর না হওয়ায় আমাদের দোষ হয় না। আর সুরভী বাবা মার ও বুঝতে বাকি রইল না মেয়ে কোথায়। সোহাগের খবর নিয়ে দেখে সোহাগ ও সকাল থেকে স্কুলে গিয়ে নিখোঁজ। ইতি মধ্যে সারা গ্রাম কথাটা ছড়িয়ে পড়ে।
সুরভী পরিবার লজ্জায় সমাজে ছোট হয়ে যায়। সুরভীর বাবা গ্রামে একজন সম্মানী ব্যাক্তি ছিলেন সব যেন নিমিষেই শেষ করে দেয় সুরভী।
.
.
এদিকে সোহাগ আর সুরভী, সোহাগের প্লান করা জায়গায় পৌঁছায় যায়। রাতে বিয়ে পড়ায়। কাবিন করে ছয় লক্ষ টাকা।
.
সোহাগের পরিবার সাত দিন পর মেনে নেয়। ওরা বাড়ি ফিরে আসে। কিন্ত সুরভীর পরিবার মেনে নেয় না।
দুজনের পড়া শুনা এখানেই শেষ।
আমরা সব বান্ধবীরা মিলে যখন সুরভীর শশুর বাড়ির সামনে দিয়ে স্কুলে যেতাম ওর সাথে দেখা হতো। ও খুব মন খারাপ করে থাকতো আর বলতো আমার ও স্কুলে যেতে ইচ্ছা করছে। মাঝে মাঝে আমাদর সাথে একটু আগায় গিয়ে চোখে জল নিয়ে ফিরে আসতো। সুরভী নাকি মাঝে মাঝে রাতে স্কুল ড্রেস পড়ত। ও স্কুলের ড্রেস পড়াটা খুব মিস করত।
রূপা তোরা ভালো করে পড়াশুনা কর আমি খুব ভুল করে ফেলছি বিয়ে করে।
.
.
এক দিন বিকালে সুরভীকে দেখতে যাই। কিছুক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁন্না শুরু করে। আর বলে রূপা আমাকে মাপ করে দিস তোর কথা না শুনে ভুল করেছি। পড়াশুনা করা অনেক ভালো ছিলো। ওর কাঁন্না দেখে সে দিন আমি ও কেঁদেছিলাম।
.
সুরভী বিয়ে পর কিছু দিন আনন্দে থাকলে ও পরে ওর ভুল বঝতে পারে। পাঁচ মাসের আবেগের বসে প্রেম/ভালোবাসা নামক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে যাওয়া ভুলটা বুঝতে পারে বিয়ের পর।
আসলে এই বয়সে শুধু সুরভী নয় দেশে এরকম অনেক সুরভী সোহাগ আছে যারা আবেগের বসে কঠিন সিন্ধান্ত নিয়ে ভুল করে আর ভুলের পরে পশ্চতায়। যখন আর কিছু করার থাকে না।
আর সেই ভুলের মাসুল চোখের জলে দিতে হয়।
.
.
বিয়ের দু বছর পর সুরভীর পরিবার মেনে নেয়। সুরভীর একটা ছেলে হয়। ছেলের নাম রাখে সিহাব। সুরভীর দুক্ষ যেন তখন বাড়তে থাকে। সিহাবের ১ বছর বয়সে কিডনিতে পানি লাগে। চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগে। এ দিকে সোহাগ এক জন দিন মুজুর। অনেক কষ্ট করে চিকিৎসা করে ছেলেকে সুস্থ করে। ওদের সংসার চালাতে বেশি হিমশিম খেয়ে কি করবে বুঝতে পারে না। অবশেষে ছেলেকে গ্রামে রেখে দুজন গার্মেন্টস চাকরী নেয়।
.
যে সময় একটা শিশুর মা কে বেশি প্রয়োজন সেই সময় মা ছেলে থেকে যোযন যোযন দূরে। গ্রামেতো চার দিক পুকুর থাকে। একদিন সিহাব খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। ভাগ্য ভালো হওয়ায় সে যাত্রা বেঁচে যায়। ছেলের পানিতে পড়া খবর শুনে সোহাগ সুরভী দুজনেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এখন আরার দিন মুজরের কাজ করে।
.
সুরভী আর আগের সুরভী নেই। চেহারা দেখলে অনেক বয়স্ক মহিলা মনে হয়। আগের মত প্রাণ খুলে হাসতে দেখিনা। অভাবী সংসার সামলাতে সারা দিন কেটে যায়। আর সোহাগ রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করে।
.
ওরা দুজন যদি মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করত তাহলে আজ এই পরিণতি হত না।
সুন্দর একটা জীনব গড়তে পারত।
.
সবাই ওদের ( সোহাগ, সুরভী, সিহাব ) জন্য দোয়া করবেন। ওরা যেন সুখে থাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন