দুপুর ২.৩০মিঃ
এই সময়ে আমি সাধারণত দুপুরে খেয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি। আর মোবাইল টিপাটিপি করি। তো এখন যথারীতি আমি তাই করছি, এমন সময় আব্বু এসে বলল,
-মেঘ কাল সকালে কি তোমার কোন কাজ আছে??(আব্বু)
-না আব্বু তেমন কোন কাজ নেই। কাল তো শুক্রবার তাই ঘুমাব ভেবেছি।(আমি)
-আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে কাল বাসায় থেকো। একটু দরকার আছে।
-ঠিক আছে আব্বু।
.
আব্বু চলে যাওয়ার পর ভাবতে লাগলাম ঘটনা কি? এমন করে তো আব্বু কখনো কিছু বলে নি। আমি ভাবলাম হয়তো আব্বুর সাথে বাজারে যেতে বলবে। আমার একটা সমস্যা আছে, আমি এতো বড় হয়েও এখন পর্যন্ত বাজার করতে পারি না। এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো আমি চিনিই না। আব্বু প্রায়ই আমাকে সাথে নিয়ে বাজারে যেতে চায় কিন্তু আমি কোন না কোন বাহানা দেখিয়ে কেটে পরি।
.
পরেরদিন সকাল ৭টার দিকে ফোন বাজতেছে। মেজাজটা গরম করে দিল। শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলাম। অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর দেখলাম ফাহিম ফোন দিছে। ফাহিম হচ্ছে আমার একমাত্র বেষ্ট ফ্রেন্ড। ফাহিম ফোন দিছে দেখে রিসিভ না করে পাওয়ার বাটনে চাপ দিয়ে সাইলেন্ট করে রাখলাম। আবার ফোন দিছে এবারো একই কাজ করলাম। এরপর যখন আবার ফোন দিল রাগে রিসিভ করে,
-ওই সালা!!! এতো সকালে ফোন দিছস কেন?? তুই নিজে কখনো এতো সকালে ঘুম থেকে উঠছস??(আমি)
-দোস্ত কই তুই? তাড়াতাড়ি জিরো পয়েন্টে আয় একটা ঝামেলা হইছে।(ফাহিম)
-কি?? আচ্ছা থাক তুই আমি ২ মিনিটের মধ্যে আসতেছি।
-ওকে দোস্ত তাড়াতাড়ি আয়।
.
লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে কোন রকম ফ্রেস হয়েই বের হয়ে পরলাম। আমাদের বাসা থেকে জিরো পয়েন্টে যেতে ৫ মিনিট লাগে। গিয়ে দেখি ফাহিম ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতেছে। আমি যাওয়ার সাথে সাথেই ফোন কেটে দিল। আমি বললাম,
-কি হইছে এতো সকালে এইভাবে ডেকে নিয়ে আসলি??(আমি)
-দোস্ত কোন কথা বলিস না চল।(ফাহিম)
.
আমাকে নিয়ে কাছেই একটা হোটেলে গেল। তারপর ফাহিম বলল,
-খাওয়া দাওয়া তো কইরা আসস নাই। আগে খাওয়া শুরু কর বলতেছি।(ফাহিম)
-তরে মনে হইতেছে কাচা চাবাইয়া খাইয়া ফালাই। এতো সকালে ফোন দিয়ে নিয়ে আসলি হোটেলে এতো সুন্দর একটা ঘুম দিছিলাম।(আমি)
-আসলে দোস্ত আমি জানি তুই এতো সকালে কোন ভাবেই আসবি না তাই এইভাবে বলছি। যাতে তাড়াতাড়ি আসস।
-তো কি জন্য এতো সকালে বের হইছিস সেটা বল।
-আসলে দোস্ত জুঁই এর সাথে দেখা করতে যাব এখন। অনেকদিন ধরে মেয়েটার সাথে দেখা করি না। আসলে একা যেতে ভাল লাগবে না তাই তোকে ফোন দিছি। প্লিজ দোস্ত রাগ করিস না।
-সালা!! তুই জুঁই এর সাথে দেখা করতে যাবি তো আমি ওইখানে গিয়ে কি করব??
-দোস্ত জুঁই বলছে বেশিক্ষণ সময় দিতে পারবে না। কিছু সময়ের জন্য আসবে তারপর চলে যাবে। বেশি দেড়ি হবে না। তাছাড়া এখান থেকে যেতেও তো প্রায় ২ ঘন্টার বেশি লাগবে। আজকের দিনটা প্লিজ একটু কষ্ট কর। মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু আমি ওকে তেমন সময় দিতে পারি না। আর না করিস না।
-কি আর করার চল যাই।
.
কিছুটা বাধ্য হয়েই যেতে হল। জুঁই এর সাথে দেখা করে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেছে। এর মধ্যে আব্বু অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু আমি ফোন রিসিভ করি নি। কারণ সকালে আব্বু আমাকে বাসায় থাকতে বলেছিলেন আর আমি এখন পর্যন্ত বাইরে। তাই ফোন রিসিভ করার সাহস পাই নি। বাসায় গেলে যে আজ কি হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। ফাহিমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাসার পথ ধরলাম। কিভাবে আব্বুকে মেনেজ করা যায় সেটা চিন্তা করতে করতে বাসায় ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলাম আচমকা এক সুন্দরীর সাথে ধাক্কা লাগলো। এর আগে অবশ্য দেখি নি। তবে তাকে দেখে এতক্ষণ যা চিন্তা করেছিলাম সব গুলিয়ে ফেলেছি। মেয়েটির কথায় ঘোর কাটল।
-এই যে মিঃ ধাক্কা লেগেছে কোথায় সরি বলবেন তা না করে হা করে তাকিয়ে আছেন।(মেয়েটি)
-না মানে.....(আমি)
-কি না মানে?? এর আগে কখনো মেয়ে দেখেন নি??
-দেখেছি তবে আপনার মত সুন্দরী মেয়ে দেখি নি।
-এইতো শুরু হয়ে গেল। থামলেন কেন?? বলেন আপনার মোবাইল নম্বরটা দেয়া যাবে?? আপনার ফেসবুক আইডির নামটা বলবেন?? যত্তসব!!!!
.
এতটুকু বলেই নিচের দিকে চলে গেল। আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে উপরে চলে গেলাম। দরজায় নক করতেই আব্বু এসে খুলে দিয়ে আমাকে দেখে বললেন,
-তোর কি কোন দিনই সময় জ্ঞান হবে না?? কোথায় ছিলি সারাদিন??(আব্বু)
-আব্বু আসলে...(আমি)
-হইছে, এখন আর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলতে হবে না। তোকে সকালে বাসায় থাকতে বলেছিলাম আজ বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া উঠেছে। তাদের কাজে একটু হেল্প করার জন্য তোকে থাকতে বলেছিলাম। আর তুই এখন বাসায় আসলি।
.
আমি তখন মনে মনে ভাবলাম মেয়েটি হয়তো নতুন ভাড়াটিয়া হবে।
.
-কিরে চুপ করে আছিস কেন?? শোন যিনি উঠেছেন উনি তোর আম্মুর বান্ধবী। তোকে অনেক ছোট দেখেছে। উনার সাথে দেখা করে আসিস।(আব্বু)
-ঠিক আছে আব্বু।(আমি)
.
যাক বেশি কিছু না বলেই ছেড়ে দিল। আমি ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়েছিলাম ভাবলাম আন্টির সাথে একটু দেখা করে আসি। আমরা তিনতলাতে থাকি আর আন্টিরা দোতলাতে উঠেছেন। আমি নিচে গিয়ে দরজায় নক করলাম। সিঁড়িতে ধাক্কা খাওয়া সেই মেয়েটি দরজা খুলে দিল। আমাকে দেখে বলল,
-আজব লোক তো আপনি!! একটু কথা বলেছি বলে বাসা পর্যন্ত চলে এসেছেন??(মেয়েটি)
-আসলে তখন আপনার মোবাইল নম্বরটা নেয়া হয় নি তো তাই নিতে চলে আসলাম।(আমি)
-আপনার সাহস তো কম নয়? আপনি বাসায় এসে আমার নম্বর চাচ্ছেন।
-বুঝেছি আপনি দিবেন না, আপনার আম্মু বাসায় আছেন??
-কেন?? তাকে কি দরকার??
-দরকার আছে আপনি বুঝবেন না।
-কোন দরকার নেই যান।।
.
বলেই দরজাটা সজোরে লাগিয়ে দিল। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে আবার নক করলাম। এবার একটু দেরি হল খুলতে। দরজা খুলতেই দেখলাম একজন ভদ্রমহিলা। আমি বললাম,
-আসসালামু আলাইকুম, আন্টি। আমি মেঘ।(আমি)
-ওয়ালাইকুম সালাম, মেঘ বাবা আসো ভেতরে আসো, কেমন আছো তুমি??(আন্টি)
-জ্বি আন্টি ভাল, আপনি কেমন আছেন??
-ভাল। কত বড় হয়ে গেছ তুমি!! তোমাকে অনেক ছোট দেখেছিলাম। তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?
-জ্বি আন্টি ভাল।
.
এতক্ষনে মেয়েটি এসে পরেছে। আমাকে দেখেই,
-আপনি ভেতরে আসলেন কিভাবে??(মেয়েটি)
-আরে তুই ওর সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন?(আন্টি)
-মা তুমি জানো না ছেলেটা কত্ত পাজি। আমাকে ফলো করতে করতে বাসা পর্যন্ত চলে এসেছে।
-কাকে কি বলছিস?? ও তোর আন্টির ছেলে মেঘ। কত ভাল একটা ছেলে।
মেয়েটি কিছুটা লজ্জা পেয়ে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-মেঘ, তুমি একটু বস আমি আসছি।(আন্টি)
-জ্বি আন্টি।(আমি)
আন্টি অন্য রুমে চলে গেলেন। আর এদিকে মেয়েটি এখনো আমার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে আমি বললাম,
-এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি বসবেন??(আমি)
-না আমি ঠিক আছি। আসলে সরি আমি আপনাকে চিনতে পারি নি।(মেয়েটি)
-চিনলে কি করতেন, ধরে বাসায় নিয়ে আসতেন নাকি??
-আপনি তো আসলেই ফাজিল।
-হা হা হা,, আপনার নামটাই তো জানা হল না।
-আমি পৃথ্বী।
-কিসে পড়ছেন?
-এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আপনি?
-আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিব। আর এতো আপনি আপনি করে বলতে ভাল লাগে না। পরিচয় তো হয়েই গেল, এখন তো সব সময়ই দেখা হবেই।
-আমারও আপনি করে বলতে ভাল লাগে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখন যাই পরে আবার আসব।
আন্টির সাথে দুই একটা কথা বলে উপরে চলে আসলাম। রাতে ফাহিমকে ফোন করে বললাম,
-দোস্ত আজকে একটা মেয়েকে দেখে ভাল লেগে গেছে।(আমি)
-কস কি মামা!!! নাম কি?? কোথায় থাকে?? মামা ট্রিট দিবি না??(ফাহিম)
-কিছু হলই না তার আগেই তুই ট্রিট চেয়ে বসে আছিস। শোন, মেয়েটির নাম পৃথ্বী। আমাদের বাসার দোতলায় নতুন এসেছে। মেয়েটির মা আবার আমার আম্মুর বান্ধবী।
-সব তো একদম রেডিমেড। এখন তো তাহলে বাসা থেকে বেরই হবি না। মামা আমারে আবার ভুলিস না।
-আরে ধুর!! কি যে আজে বাজে কথা বলিস তুই।
-আচ্ছা বাদ দে। মেয়েটার ফোন নম্বর বা ফেসবুক আইডি কোন কিছু নিয়েছিস??
-আরে না। মাত্রই তো পরিচয় হল। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয় নাকি??
-আচ্ছা মামা চালাইয়া যাও।। বেস্ট অফ লাক।
.
পরেরদিন বিকেলবেলা ছাদে বসে গান শুনছিলাম এমন সময় পৃথ্বী ছাদে আসল। ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
-কেমন আছো??(আমি)
-ভাল। তুমি??(পৃথ্বী)
-হুম ভাল। তো কেমন লাগছে নতুন বাড়ি, নতুন পরিবেশ??
-খারাপ না মোটামুটি ভালই। এখানে বসে কি করছিলে??
-এইতো গান শুনছিলাম। তুমি??
-রুমে খুব বোরিং লাগছিল তাই ছাদে আসলাম।
.
আস্তে আস্তে অনেক কথা হল। কথার ফাকে ফোন নম্বর আদান প্রদানও হয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই কথা হয়। খুব সহজেই দুজন দুজনের খুব কাছে চলে আসি। আমাদের মাঝে সম্পর্কটা শুধুমাত্র বন্ধু নয় তার চেয়েও বেশি হয়ে গেছে।
.
তার কয়েকদিন পর রাতে পড়ছিলাম এমন সময় পৃথ্বীর কল।
-হ্যালো, মেঘ কি কর??(পৃথ্বী)
-এইতো পড়ছি। তুমি??(আমি)
-পড়ছো?? আচ্ছা তাহলে পরে কল করব রাখি।
-না ঠিক আছে বল। সমস্যা নেই।
-এমনি ভাল লাগছিল না তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু কথা বলি।
-আমার সাথে কথা বললে ভাল লাগে??
-না ঠিক তা না।
-কি?? তাহলে কেন কল করছ?? রাখ।
-আরে বাবা রাগ করছ কেন?? আমি তো সেটা বলি নি।
-তো কি বলছ??
-ধ্যাত!!! আচ্ছা শোন আমি একটা জিনিস চিন্তা করেছি।
-কি??
-তোমাকে এখন থেকে আমি রোদ বলে ডাকব।
-রোদ??
-হুম। আসলে মেঘ নামটা কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকার লাগে। কেন তোমার এই নামটা পছন্দ হয় নি??
-পছন্দ হয়েছে তো। অনেক ভাল নামটা।
-তাহলে একটু হাসো।।
-হাসব মানে??
-ভাল লেগেছে তো হাসবা না??
-ভাল লেগেছে তাই হাসতে হবে??
-হুম।
-কেন?
-এমনি?
-এমনি এমনি কেউ হাসে??
-আমি হাসতে বলছি হাসো। না হলে কিন্তু আর কথা বলব না।
-না বললে আমার কি??
-তোমার কিছুই না??
-না।
-সত্যি তো??
-হুম সত্যি।(মজা করে)
-আচ্ছা ঠিক আছে।
.
বলেই ফোনটা কেটে দিছে। আমি আর কিছুই বলতে পারি নি। এরপর আমি কল করলাম বন্ধ। পাগলীটা রেগে গেছে অনেক। খারাপ লাগছে খুব। কেন যে বলতে গেলাম?? ভাবলাম সকালে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, সকালে সিঁড়িতে দেখা হয়েছিলো। আমি ডাক দিলাম, কোন কথা না বলে চলে গেল। একটু পর কল করলাম, এখনো ফোন বন্ধ। কি যে করি!!! ধুর কিছুই ভাল লাগছে না। বিকেলবেলা ছাদে বসে আছি আর অপেক্ষা করছি পৃথ্বী কখন ছাদে আসবে। একটুপর দেখি পৃথ্বী ছাদে এসেছে কাপড় নেয়ার জন্য। আমি আবার ডাক দিলাম। কোন কথা বলল না। এবার ওর সামনে গিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে বললাম,
-ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন হবে না।(আমি)
-ভুলের কি আছে?? আমার সাথে কথা না বললে তার কি যায় আসে?(পৃথ্বী)
-সরি বললাম তো। তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারব না।
-কেন থাকতে পারবে না?? কি হই আমি তোমার??
-সব। আমার জান, আমার প্রাণ।। পৃথ্বী আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
-হইছে ঢং বাদ দাও।
-সত্যি বলছি। আমি তোমাকে ভালবাসি।
-আমি বাসি না।
-তাহলে কি আর করার কাল থেকে অন্য মেয়ের পেছনে ঘুরতে হবে।
-কি??? ঠ্যাং ভেঙে ফেলব একেবারে।
-কেন??
-অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকালে তোমার চোখদুটোই তুলে নেব।
-ভালবাস বুঝি আমায়?
-হুম অনেক।
-কখনো ছেড়ে যাবে না তো??
-তুমি ছেড়ে গেলেও তোমাকে ছাড়ব না।
-আই লাভ ইউ বাবু...
-আই লাভ ইউ টু...
.
.
প্রেমের সূচনাটা একটু মিষ্টিই হয়।
এই সময়ে আমি সাধারণত দুপুরে খেয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি। আর মোবাইল টিপাটিপি করি। তো এখন যথারীতি আমি তাই করছি, এমন সময় আব্বু এসে বলল,
-মেঘ কাল সকালে কি তোমার কোন কাজ আছে??(আব্বু)
-না আব্বু তেমন কোন কাজ নেই। কাল তো শুক্রবার তাই ঘুমাব ভেবেছি।(আমি)
-আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে কাল বাসায় থেকো। একটু দরকার আছে।
-ঠিক আছে আব্বু।
.
আব্বু চলে যাওয়ার পর ভাবতে লাগলাম ঘটনা কি? এমন করে তো আব্বু কখনো কিছু বলে নি। আমি ভাবলাম হয়তো আব্বুর সাথে বাজারে যেতে বলবে। আমার একটা সমস্যা আছে, আমি এতো বড় হয়েও এখন পর্যন্ত বাজার করতে পারি না। এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো আমি চিনিই না। আব্বু প্রায়ই আমাকে সাথে নিয়ে বাজারে যেতে চায় কিন্তু আমি কোন না কোন বাহানা দেখিয়ে কেটে পরি।
.
পরেরদিন সকাল ৭টার দিকে ফোন বাজতেছে। মেজাজটা গরম করে দিল। শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলাম। অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর দেখলাম ফাহিম ফোন দিছে। ফাহিম হচ্ছে আমার একমাত্র বেষ্ট ফ্রেন্ড। ফাহিম ফোন দিছে দেখে রিসিভ না করে পাওয়ার বাটনে চাপ দিয়ে সাইলেন্ট করে রাখলাম। আবার ফোন দিছে এবারো একই কাজ করলাম। এরপর যখন আবার ফোন দিল রাগে রিসিভ করে,
-ওই সালা!!! এতো সকালে ফোন দিছস কেন?? তুই নিজে কখনো এতো সকালে ঘুম থেকে উঠছস??(আমি)
-দোস্ত কই তুই? তাড়াতাড়ি জিরো পয়েন্টে আয় একটা ঝামেলা হইছে।(ফাহিম)
-কি?? আচ্ছা থাক তুই আমি ২ মিনিটের মধ্যে আসতেছি।
-ওকে দোস্ত তাড়াতাড়ি আয়।
.
লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে কোন রকম ফ্রেস হয়েই বের হয়ে পরলাম। আমাদের বাসা থেকে জিরো পয়েন্টে যেতে ৫ মিনিট লাগে। গিয়ে দেখি ফাহিম ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতেছে। আমি যাওয়ার সাথে সাথেই ফোন কেটে দিল। আমি বললাম,
-কি হইছে এতো সকালে এইভাবে ডেকে নিয়ে আসলি??(আমি)
-দোস্ত কোন কথা বলিস না চল।(ফাহিম)
.
আমাকে নিয়ে কাছেই একটা হোটেলে গেল। তারপর ফাহিম বলল,
-খাওয়া দাওয়া তো কইরা আসস নাই। আগে খাওয়া শুরু কর বলতেছি।(ফাহিম)
-তরে মনে হইতেছে কাচা চাবাইয়া খাইয়া ফালাই। এতো সকালে ফোন দিয়ে নিয়ে আসলি হোটেলে এতো সুন্দর একটা ঘুম দিছিলাম।(আমি)
-আসলে দোস্ত আমি জানি তুই এতো সকালে কোন ভাবেই আসবি না তাই এইভাবে বলছি। যাতে তাড়াতাড়ি আসস।
-তো কি জন্য এতো সকালে বের হইছিস সেটা বল।
-আসলে দোস্ত জুঁই এর সাথে দেখা করতে যাব এখন। অনেকদিন ধরে মেয়েটার সাথে দেখা করি না। আসলে একা যেতে ভাল লাগবে না তাই তোকে ফোন দিছি। প্লিজ দোস্ত রাগ করিস না।
-সালা!! তুই জুঁই এর সাথে দেখা করতে যাবি তো আমি ওইখানে গিয়ে কি করব??
-দোস্ত জুঁই বলছে বেশিক্ষণ সময় দিতে পারবে না। কিছু সময়ের জন্য আসবে তারপর চলে যাবে। বেশি দেড়ি হবে না। তাছাড়া এখান থেকে যেতেও তো প্রায় ২ ঘন্টার বেশি লাগবে। আজকের দিনটা প্লিজ একটু কষ্ট কর। মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু আমি ওকে তেমন সময় দিতে পারি না। আর না করিস না।
-কি আর করার চল যাই।
.
কিছুটা বাধ্য হয়েই যেতে হল। জুঁই এর সাথে দেখা করে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেছে। এর মধ্যে আব্বু অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু আমি ফোন রিসিভ করি নি। কারণ সকালে আব্বু আমাকে বাসায় থাকতে বলেছিলেন আর আমি এখন পর্যন্ত বাইরে। তাই ফোন রিসিভ করার সাহস পাই নি। বাসায় গেলে যে আজ কি হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। ফাহিমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাসার পথ ধরলাম। কিভাবে আব্বুকে মেনেজ করা যায় সেটা চিন্তা করতে করতে বাসায় ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিলাম আচমকা এক সুন্দরীর সাথে ধাক্কা লাগলো। এর আগে অবশ্য দেখি নি। তবে তাকে দেখে এতক্ষণ যা চিন্তা করেছিলাম সব গুলিয়ে ফেলেছি। মেয়েটির কথায় ঘোর কাটল।
-এই যে মিঃ ধাক্কা লেগেছে কোথায় সরি বলবেন তা না করে হা করে তাকিয়ে আছেন।(মেয়েটি)
-না মানে.....(আমি)
-কি না মানে?? এর আগে কখনো মেয়ে দেখেন নি??
-দেখেছি তবে আপনার মত সুন্দরী মেয়ে দেখি নি।
-এইতো শুরু হয়ে গেল। থামলেন কেন?? বলেন আপনার মোবাইল নম্বরটা দেয়া যাবে?? আপনার ফেসবুক আইডির নামটা বলবেন?? যত্তসব!!!!
.
এতটুকু বলেই নিচের দিকে চলে গেল। আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে উপরে চলে গেলাম। দরজায় নক করতেই আব্বু এসে খুলে দিয়ে আমাকে দেখে বললেন,
-তোর কি কোন দিনই সময় জ্ঞান হবে না?? কোথায় ছিলি সারাদিন??(আব্বু)
-আব্বু আসলে...(আমি)
-হইছে, এখন আর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলতে হবে না। তোকে সকালে বাসায় থাকতে বলেছিলাম আজ বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া উঠেছে। তাদের কাজে একটু হেল্প করার জন্য তোকে থাকতে বলেছিলাম। আর তুই এখন বাসায় আসলি।
.
আমি তখন মনে মনে ভাবলাম মেয়েটি হয়তো নতুন ভাড়াটিয়া হবে।
.
-কিরে চুপ করে আছিস কেন?? শোন যিনি উঠেছেন উনি তোর আম্মুর বান্ধবী। তোকে অনেক ছোট দেখেছে। উনার সাথে দেখা করে আসিস।(আব্বু)
-ঠিক আছে আব্বু।(আমি)
.
যাক বেশি কিছু না বলেই ছেড়ে দিল। আমি ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়েছিলাম ভাবলাম আন্টির সাথে একটু দেখা করে আসি। আমরা তিনতলাতে থাকি আর আন্টিরা দোতলাতে উঠেছেন। আমি নিচে গিয়ে দরজায় নক করলাম। সিঁড়িতে ধাক্কা খাওয়া সেই মেয়েটি দরজা খুলে দিল। আমাকে দেখে বলল,
-আজব লোক তো আপনি!! একটু কথা বলেছি বলে বাসা পর্যন্ত চলে এসেছেন??(মেয়েটি)
-আসলে তখন আপনার মোবাইল নম্বরটা নেয়া হয় নি তো তাই নিতে চলে আসলাম।(আমি)
-আপনার সাহস তো কম নয়? আপনি বাসায় এসে আমার নম্বর চাচ্ছেন।
-বুঝেছি আপনি দিবেন না, আপনার আম্মু বাসায় আছেন??
-কেন?? তাকে কি দরকার??
-দরকার আছে আপনি বুঝবেন না।
-কোন দরকার নেই যান।।
.
বলেই দরজাটা সজোরে লাগিয়ে দিল। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে আবার নক করলাম। এবার একটু দেরি হল খুলতে। দরজা খুলতেই দেখলাম একজন ভদ্রমহিলা। আমি বললাম,
-আসসালামু আলাইকুম, আন্টি। আমি মেঘ।(আমি)
-ওয়ালাইকুম সালাম, মেঘ বাবা আসো ভেতরে আসো, কেমন আছো তুমি??(আন্টি)
-জ্বি আন্টি ভাল, আপনি কেমন আছেন??
-ভাল। কত বড় হয়ে গেছ তুমি!! তোমাকে অনেক ছোট দেখেছিলাম। তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?
-জ্বি আন্টি ভাল।
.
এতক্ষনে মেয়েটি এসে পরেছে। আমাকে দেখেই,
-আপনি ভেতরে আসলেন কিভাবে??(মেয়েটি)
-আরে তুই ওর সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন?(আন্টি)
-মা তুমি জানো না ছেলেটা কত্ত পাজি। আমাকে ফলো করতে করতে বাসা পর্যন্ত চলে এসেছে।
-কাকে কি বলছিস?? ও তোর আন্টির ছেলে মেঘ। কত ভাল একটা ছেলে।
মেয়েটি কিছুটা লজ্জা পেয়ে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-মেঘ, তুমি একটু বস আমি আসছি।(আন্টি)
-জ্বি আন্টি।(আমি)
আন্টি অন্য রুমে চলে গেলেন। আর এদিকে মেয়েটি এখনো আমার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে আমি বললাম,
-এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি বসবেন??(আমি)
-না আমি ঠিক আছি। আসলে সরি আমি আপনাকে চিনতে পারি নি।(মেয়েটি)
-চিনলে কি করতেন, ধরে বাসায় নিয়ে আসতেন নাকি??
-আপনি তো আসলেই ফাজিল।
-হা হা হা,, আপনার নামটাই তো জানা হল না।
-আমি পৃথ্বী।
-কিসে পড়ছেন?
-এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আপনি?
-আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিব। আর এতো আপনি আপনি করে বলতে ভাল লাগে না। পরিচয় তো হয়েই গেল, এখন তো সব সময়ই দেখা হবেই।
-আমারও আপনি করে বলতে ভাল লাগে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখন যাই পরে আবার আসব।
আন্টির সাথে দুই একটা কথা বলে উপরে চলে আসলাম। রাতে ফাহিমকে ফোন করে বললাম,
-দোস্ত আজকে একটা মেয়েকে দেখে ভাল লেগে গেছে।(আমি)
-কস কি মামা!!! নাম কি?? কোথায় থাকে?? মামা ট্রিট দিবি না??(ফাহিম)
-কিছু হলই না তার আগেই তুই ট্রিট চেয়ে বসে আছিস। শোন, মেয়েটির নাম পৃথ্বী। আমাদের বাসার দোতলায় নতুন এসেছে। মেয়েটির মা আবার আমার আম্মুর বান্ধবী।
-সব তো একদম রেডিমেড। এখন তো তাহলে বাসা থেকে বেরই হবি না। মামা আমারে আবার ভুলিস না।
-আরে ধুর!! কি যে আজে বাজে কথা বলিস তুই।
-আচ্ছা বাদ দে। মেয়েটার ফোন নম্বর বা ফেসবুক আইডি কোন কিছু নিয়েছিস??
-আরে না। মাত্রই তো পরিচয় হল। সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয় নাকি??
-আচ্ছা মামা চালাইয়া যাও।। বেস্ট অফ লাক।
.
পরেরদিন বিকেলবেলা ছাদে বসে গান শুনছিলাম এমন সময় পৃথ্বী ছাদে আসল। ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
-কেমন আছো??(আমি)
-ভাল। তুমি??(পৃথ্বী)
-হুম ভাল। তো কেমন লাগছে নতুন বাড়ি, নতুন পরিবেশ??
-খারাপ না মোটামুটি ভালই। এখানে বসে কি করছিলে??
-এইতো গান শুনছিলাম। তুমি??
-রুমে খুব বোরিং লাগছিল তাই ছাদে আসলাম।
.
আস্তে আস্তে অনেক কথা হল। কথার ফাকে ফোন নম্বর আদান প্রদানও হয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই কথা হয়। খুব সহজেই দুজন দুজনের খুব কাছে চলে আসি। আমাদের মাঝে সম্পর্কটা শুধুমাত্র বন্ধু নয় তার চেয়েও বেশি হয়ে গেছে।
.
তার কয়েকদিন পর রাতে পড়ছিলাম এমন সময় পৃথ্বীর কল।
-হ্যালো, মেঘ কি কর??(পৃথ্বী)
-এইতো পড়ছি। তুমি??(আমি)
-পড়ছো?? আচ্ছা তাহলে পরে কল করব রাখি।
-না ঠিক আছে বল। সমস্যা নেই।
-এমনি ভাল লাগছিল না তাই ভাবলাম তোমার সাথে একটু কথা বলি।
-আমার সাথে কথা বললে ভাল লাগে??
-না ঠিক তা না।
-কি?? তাহলে কেন কল করছ?? রাখ।
-আরে বাবা রাগ করছ কেন?? আমি তো সেটা বলি নি।
-তো কি বলছ??
-ধ্যাত!!! আচ্ছা শোন আমি একটা জিনিস চিন্তা করেছি।
-কি??
-তোমাকে এখন থেকে আমি রোদ বলে ডাকব।
-রোদ??
-হুম। আসলে মেঘ নামটা কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকার লাগে। কেন তোমার এই নামটা পছন্দ হয় নি??
-পছন্দ হয়েছে তো। অনেক ভাল নামটা।
-তাহলে একটু হাসো।।
-হাসব মানে??
-ভাল লেগেছে তো হাসবা না??
-ভাল লেগেছে তাই হাসতে হবে??
-হুম।
-কেন?
-এমনি?
-এমনি এমনি কেউ হাসে??
-আমি হাসতে বলছি হাসো। না হলে কিন্তু আর কথা বলব না।
-না বললে আমার কি??
-তোমার কিছুই না??
-না।
-সত্যি তো??
-হুম সত্যি।(মজা করে)
-আচ্ছা ঠিক আছে।
.
বলেই ফোনটা কেটে দিছে। আমি আর কিছুই বলতে পারি নি। এরপর আমি কল করলাম বন্ধ। পাগলীটা রেগে গেছে অনেক। খারাপ লাগছে খুব। কেন যে বলতে গেলাম?? ভাবলাম সকালে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, সকালে সিঁড়িতে দেখা হয়েছিলো। আমি ডাক দিলাম, কোন কথা না বলে চলে গেল। একটু পর কল করলাম, এখনো ফোন বন্ধ। কি যে করি!!! ধুর কিছুই ভাল লাগছে না। বিকেলবেলা ছাদে বসে আছি আর অপেক্ষা করছি পৃথ্বী কখন ছাদে আসবে। একটুপর দেখি পৃথ্বী ছাদে এসেছে কাপড় নেয়ার জন্য। আমি আবার ডাক দিলাম। কোন কথা বলল না। এবার ওর সামনে গিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে বললাম,
-ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন হবে না।(আমি)
-ভুলের কি আছে?? আমার সাথে কথা না বললে তার কি যায় আসে?(পৃথ্বী)
-সরি বললাম তো। তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারব না।
-কেন থাকতে পারবে না?? কি হই আমি তোমার??
-সব। আমার জান, আমার প্রাণ।। পৃথ্বী আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
-হইছে ঢং বাদ দাও।
-সত্যি বলছি। আমি তোমাকে ভালবাসি।
-আমি বাসি না।
-তাহলে কি আর করার কাল থেকে অন্য মেয়ের পেছনে ঘুরতে হবে।
-কি??? ঠ্যাং ভেঙে ফেলব একেবারে।
-কেন??
-অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকালে তোমার চোখদুটোই তুলে নেব।
-ভালবাস বুঝি আমায়?
-হুম অনেক।
-কখনো ছেড়ে যাবে না তো??
-তুমি ছেড়ে গেলেও তোমাকে ছাড়ব না।
-আই লাভ ইউ বাবু...
-আই লাভ ইউ টু...
.
.
প্রেমের সূচনাটা একটু মিষ্টিই হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন