শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

রুপান্তর

এক...
মানুষ এত কম কথা বলে তাকে না দেখলে
কখনো
জানতামই না ।এত গম্ভীর টাইপের মানুষ আমি
আগে
কখনো দেখিনি ।
.
আমি সাবিহা ।খুব দুষ্টু আর ফাজিল মেয়ে বলে
জানত
সকলেই ।কিন্তু বিয়ে হওয়ার পরই সব হয়ে গেছে
উল্টো ।এখন আমি শান্ত-শিষ্ট , ভদ্র একটা
মেয়ে ।
.
আর উপরে যায় কথা বললাম সে হচ্ছে আমার
স্বামী মি.গম্ভীর বাবু ।প্রয়োজন ছাড়াতো
কথাই
বলে না আবার সবসময় গম্ভীর ভাবে থাকে তাই
তার
এই নাম দেওয়া ।তবে উনার একটা ভালো নাম
আছে-
রিহাদ রহমান কাব্য ।
.
দুই...
বেলকনিতে দাড়িয়ে দূরের আকাশটা
দেখতেছিলাম তখন মা এসে বলল-রেডি হয়ে
নে ।ছেলে পক্ষ এসে পড়ল বলে ।আমি ছিলাম
খুব দুষ্টু আর ফাজিল ।
.
এ নিয়ে প্রায় ১৩টা ছেলে দেখতে আসলো
আমাকে ।আমার কাছে ভালোই লাগে ছেলে
পক্ষ আমাকে দেখতে এসে টাকা দিয়ে যায় ।
আর
আমি এই টাকায় বন্ধুদের সাথে পার্টি
করি ।আর দিন শেষে ছেলে পক্ষকে এটা-ওটা
বলে না করে দেই ।
.
স্বাভাবিক ভাবেই গিয়ে বসলাম ।ছেলে পক্ষ
থেকে কিছু প্রশ্ন করলো আমাকে আমি উওর
দিলাম ।মাথা নিচু করে ছিলাম এতক্ষণ ।যখন
কেউ বলল-
কাব্য তুমি কিছু বলবে না ।তখন আমি মাথা
তুলে তাকালাম ।
সে আমার দিকে না তাকিয়েই বলল -নাহ্ ।
আমি
অপলোক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে ,কি
মায়াময় চেহারা ,মোটা ফ্রেমের চশমা নিচে
ওই চোঁখদুটো যে কি আছে যা দেখে আমি
কিছু বলতে পাচ্ছিলাম না।ছেলে পক্ষ চলে
গেল ।আমি আর না করতে পারিনি ।অবশেষে
,বিয়েটা হয়েই গেল ।
.
তিন...
বাসর ঘরে অনেক্ষণ ধরে বসে আছি কিন্তু
উনার আসার নাম নেই ।অতঃপর আসলো সে ।
আমি বিছানা ছেড়ে সালাম করতে যাব এমন
সময় উনি বললেন - তুমি তোমার মতো থাকবে,
আমি আমার মতো । আমার কাছে আসার
চেষ্টা করবে না ।
.
আমার তখন খুব রাগ হয়েছিল ।উনার কলার ধরে
বলতে ইচ্ছা করছিল -তাহলে আমাকে বিয়ে
করেছেন কেন ? বিয়ে না করলেই পারত ।অবশ্য
এইরকম একটা প্লান আমার মাথার ছিল তাকে
বোকা বানানোর জন্য ।কিছু সব হয়ে গেল
উল্টা ।আমার মনে আছে আমি সেদিন খুব
কেঁদে ছিলাম ।
.
অনেক বেলা পযর্ন্ত ঘুমানোর অভ্যাস আমার ।
যখন চোঁখ খুলে তাকালাম -দেখি উনি আমার
দিকে তাকিয়ে আছেন । মুহুর্তেই আমার
রাতের সেই রাগ হারিয়ে গেল ।আমি একমনে
তার দিকে তাকিয়ে আছি ।তখন সে বলল-
আমাদের মধ্যে যা হয়েছে বাহিরের মানুষ
যাতে না জানে ।আমি যেন বোবা হয়েগেছি ।
কিছুই বলতে পারলাম না ।উনি এইটুকুই বলে
চলে গেলেন ।
.
চার...
বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল ।মি.গম্ভীর বাবুর
কোন পরিবর্তন হয়নি ।কিন্তু মাঝে মাঝে মাঝ
রাতে তাকে বিছানায় দেখতে পাই না ।তাকে
দেখা যায় জানালার পাশে । মাঝে মাঝে
তার চোখের জলও দেখি । খুব অবাক লাগে
আমার ।উনার অবস্থা দেখে কখনো নিঃশব্দে
কেঁদেও ফেলি ।
.
হয়তোবা ,মা বুঝতে পেরেছিলেন যে
,আমাদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কটা নেই ।
সবই লোক দেখানো ।পরে মা যা বললেন তা
শুনে আমার চোঁখ দিয়ে পানি চলে এসেছিল
...।
.
সংক্ষিপ্ত ভাবে এইটুকুই বলা যায় -উনি প্রেম
করেছিলেন ,বিয়েও ঠিক হয়েছিল ।হঠাৎ
এক্সিডেন্টে প্রেমিকা ও তার মা আর ভাই
মারা যায় শুধু বেঁচে যায় উনি আর প্রেমিকার
বাবা ।
.
রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে আমি । দুষ্টু আর
ভীষণ রাগী হওয়ার কারনে প্রেম করা হয়ে
ওঠেনি । ভেবেছিলাম বিয়ের পরেই না হয়
প্রেম করব । মানুষটিও পেরেছিলাম মনের
মতোই ।মনের অজানতেই তাকে ভালোবেসে
ফেলেছি ।মি.গম্ভীর বাবু কষ্ট পাবেন আর
আমি তা চেয়ে চেয়ে দেখবো তা হতে পারে
না ।
.
পাঁচ...
অতঃপর ,আমার মিশন শুরু হলো ।মার কাছ
থেকে সবই জেনে নিলাম তার ভালো লাগা
আর মন্দ লাগা ।উনার প্রেমিকার নাম ছিল-
জেরিন ।তিনি নাকি বাসার আসতেন মাঝে
মাঝেই ।জেরিন যেভাবে সাজতো সেইভাবেই
আমি
সাজতে চেষ্টা করতাম ।মি.গম্ভীর বাবু মাঝে
মাঝে একমনে চেয়ে থাকত আমার দিকে ।খুব
লজ্জা লাগত তখন ।
.
আমি দুষ্টু প্রকৃতির হওয়ার ঘুমের ভান করে তার
উপর পা তুলে দিতাম ।আর উনি খুব আস্তে
আস্তে পা নামিয়ে দিত ।মাঝখানে
কোলবালিশ থাকলেও তা সরিয়ে দিয়ে ঘুমের
ভান করে জড়িয়ে ধরতাম ।সে আলতো করে
তাকে ছাড়িয়ে নিত ।তখন খুব রাগ হত আমার ।
আমাকে একটু জড়িয়ে ধরলে কি এমন ক্ষতি হয়
তার ।
.
অফিসে যাওয়ার আগে হাত ঘড়িটা আর টাইটা
লোকিয়ে রাখতাম ।উনি যখন মাকে বলেও
খুজে পায়না তখন আমার কাছে বাধ্য হয়েই
বলতো-টাই আর ঘড়িটা পাচ্ছি না ।খুজে দিলে
ভালো হয় ।কথাটা শুনে আমি একমনে চেয়ে
থাকতাম । কি এক অনুভূতি হত তা বলে বুঝানোর
নয় ।
.
ছয়...
হয়তোবা জেরিনের জায়গাটা খানিকটা
হলেও নিতে পারছি ।বুঝতেই পারতাম না যদি
এই ঘটনাটি না ঘটত -
ছোট বেলা থেকেই বৃষ্টি দেখলেই ভিজতে
ইচ্ছা করে ।সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে
মি.গম্ভীর বাবুকে গিয়ে বললাম -চলুন বৃষ্টিতে
ভিজি ।সে আমার দিকে কেমন করে তাকালো
।যেন বুঝাতে চাইছে ,ভিজা যাবে না ,শরীর
খারাপ করবে।আমি কিছু না বলে বিছানার
এসে শুয়ে পরলাম ।যখন সে ঘুমিয়ে পড়ল তখন
আস্তে আস্তে ওঠে বারান্দায় ছিটকে আসা
বৃষ্টির জলে ভিজতে থাকলাম ।অনেকক্ষণ পড়ে
দরজার দিকে তাকালাম ।দেখি উনি দাঁড়িয়ে
আছেন ।আমি মাথা নিচু করে তার সামনে
গেলাম ।উনি খুব কড়া কড়া কথা বললেন ।যা
শুনে আমি চোঁখে পানি চলে আসলো ।
কথাগুলো ছিল-আমি নাকি তার কোন কথা শুনি
না ।কাল রেডি হয়ে থাকতে আমার বাবার
বাড়ি দিয়ে আসবে ৫-১০দিনের জন্য।অফিস
টাইম টুকু উনাকে না দেখলেই কেমন লাগে আর
তো ১০দিন ভাবতেই কান্না করে দিলাম ।তখন
উনি বললেন -হুম ,আর কাদঁতে হবে না যাও
কাপড় পাল্টে শুয়ে পড় ।
.
সাত...
শেষ রাতের দিকেই বুঝতে পারলাম আমার খুব
জ্বর এসেছে ।আমি তার শরীরে হাত দিলাম ।
আমার হাতের স্পর্শেই বুঝতে পারল আমার খুব
জ্বর এসেছে ।সে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আমাকে
নিয়ে । তারপর আর কিছু মনে নেই । যতবারই
চোঁখদুটো খুলেছি তত বারি উনার মুখখানা
দেখতে পেয়েছি ।তার উনি উচ্ছুক দৃষ্টি নিয়ে
তাকিয়ে আছে ।তার সেবার আর আল্লাহ
রহমতে কিছু
দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠলাম ।
.
আট...
এভাবেই কেটে গেল কিছুদিন ।একদিন দুপুর
বেলা কাজ করতে ছিলাম বাসার এমন সময়
কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলে দিলাম ।যা
দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত
ছিলাম না ।উনার পায়ে আর ডান হাতে
ব্যান্টেজ করা
।অফিসের এক কলিক তাকে বাসার দিয়ে
গেল ।
এতটাই ম্নান হয়েছিলাম যে ,তাকে
বিছানার শুয়ে দেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পযর্ন্ত আমি
ওই দরজার পাশেই দাড়িয়ে ছিলাম ।কলিক
বলল-অফিসের
কাজে গিয়ে বাইক নিয়ে ফেরার পথে
একটা এক্সিডেন্ট হয় । তার পায়ে আর ডান
হাতের কুনুই অংশে কিছুটা ছুলে যায় । আর
যায় ফলে প্রচুর রক্ত বের হয় ।পরে ব্যান্টেজ
করা হয় ।তিনি আর চোঁখ খুলে রাখতে
পারলো না মনে হয় ।সে চোঁখ বুজে ঘুমিয়ে
পড়ল ।
.
নয়...
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল তার ।আমি তখনো
তার বুকের উপর শুয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না
করছিলাম ।আর
বলছিলাম ,আপনার কিছু হয়ে গেলে আমার কি
হত ।কি নিয়ে বাচঁতাম আমি । আমার আর কে
আছে আপনি ছাড়া । একটু দেখে শুনে চলা
যায় না ।
তখন কারো স্পর্শে কেঁপে ওঠি ।তিনি তার
বাম হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।তিনি বললেন-
তোমার ছেড়ে
কি আমি কোথাও যেতে পারি । আমৃত্যু
পযর্ন্ত থাকব তোমার পাশে ।
.
দশ...
অতঃপর ,
আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরি
যেন, তাকে কোথাও যেতে দেবে না ।
যেন আমি বুকের উপরই যেন থাকতে চায় আমৃত্যু
পযর্ন্ত ।নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে ।জেরিন
নামটি
যেন
আমার আমিতেই রুপান্তরিত ।আমি যেন
মিশে যাচ্ছি জেরিন নামের সেই নামধারী
মানুষটাকে নতুন করে রুপান্তর করে ।শুরু হল
আরেকটি প্রেম আর গল্পের সূচনা ।সব
পুরোনো স্মৃতি মুছে যাক ।শুধু
ভালোবাসাটুকুই বেঁচে থাক আজীবন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন