রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭

সত্য ভালোবাসা

-কিরে একা একা বসে আছিস এখানে। নিলয় কই? ( আবির)
( তৃনা আবিরের দিকে তাকিয়ে।)
- আসবে বলল কিন্তু এখন ও আসছে না। ( তৃনা)
- ও থাক। তাইলে যাই।
- কই যাবি?
- এই সামনে। হাটবো একটু ।
- আমার ভালো লাগছে না একটু বস এখানে।
- নিলয় আসবে তো ওয়েট কর।
- তুই বসবি কি না তাই বল?
( তৃনা ধমক দিয়ে কথাটি বলল আবির কে। আসলে আবির আবার তৃনাকে দেখে ভয় পায়।)
- আচ্ছা বসতেছি। রেগে যাস কেন?
( আবির অনেক দিন ধরে সুমিকে ভালোবাসে । সেই ইন্টারমিডিয়েট এ যখন ভর্তি হয়। তখন আবির প্রথম দেখেই তৃনাকে ভালো বেসে ফেলেছে। কিন্তু তৃনার পেছনে অনেক ঘুরে ঘুরে কেবল বন্ধুত্ব টা শুধু করতে পেরেছে।
সেই থেকে তারা আজ অব্দি পর্যন্ত বন্ধু। ইন্টারমিডিয়েট পার হয়ে আজ তারা এক ই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর নতুন এক ছেলের সাথে পরিচয় হয় তৃনার। ছেলেটা সেকেন্ড ইয়ারে পরে। একসময় ঐ ছেলেটার সাথে তৃনা সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। আর এখন পর্যন্ত ও তাদের সম্পর্ক রয়েছে। তৃনার মুখে সেই ছেলেটার যেন প্রশংসার শেষ নেই। তাদের সম্পর্কের ৪ মাস হয়েছে মাত্র। তাদের সম্পর্কের তৃতীয় কেউ একজন হলো আবির। তাদের যতটুকু হেল্প করতো হতো তার সব টুকুই প্রায় আবির করতো। এদিকে তৃনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হলো আবির। আবির যে তৃনাকে ভালোবাসে সেটা তৃনাও অনেকটা বুঝতে পারে।...
,
,,,,
তৃনা বলে উঠলো.. )
- রেগে যাবো না তো কি। আমি এখানে একা একা বসে আছি আর তুই আমাকে রেখে চলে যাচ্ছিস।
- নিলয় কখন আসবে?
- বিকেল ৫ টায় ই তো আসার কথা ছিলো। কিন্তু কেন যে এত দেরি করছে বুঝতে পারছি না। ফোন দিলাম ফোন তো রিসিভ করছে না।
- ওও ভালো।
- জানিস!!!!! নিলয় না এখন কেমন যেন হয়ে গেছে। তোকে তো কিছুই বলিনি এখন ও।
- কেন কি হয়েছে বলতো!
- আসলে কেমনে বলি তোরে বল।
- এত্ত তালবাহানা করতেছিস যেন আমি দুরের কেউ। বল?
- না রে। আসলে কথাটা টা বলতেই লজ্জা করতেছে।
- তুই বলবি না কি। নাকি আমি উঠে যাবো এখান থেকে।
- নিলয় না আর আগের মতো নেই। কাল রাতে অনেকবার ফোন দিলাম ওর ফোন শুধু ওয়েটিং। এর আগেও অনেক দিন রাতে ফোন ওয়েটিং পেয়েছি। আমি যদি বলি যে তুমি কার সাথে কথা বলো। বলে তার এক বন্ধুদের সাথে।
( এমন সময় নিলয় এসে পরলো)
- কি নিয়ে কথা হচ্ছে তোমাদের। (নিলয়)
- কিছুনা ভাইয়া। আপনারা কথা বলেন। আমি একটু ওদিক থেকে হেটে আসি।
( এই বলেই আবির উঠে চলে গেল।)
,
- তোমাদের কি কথা হচ্ছিলো? ( নিলয় তৃনাকে)
- কিছুনা। ( তৃনা)
-তাই। তাহলে ও এভাবে উঠে গেল কেন?
- ওর নাকি একটু কাজ আছে ওদিকে।
- ও এতক্ষন কাজ ছিলো না। আমি জানি তুমি ওর সাথে প্রেম করো।
- কি বলতেছ এগুলা।
- হু আমাকে বোকা পাইছো। তোমরা চুপি চুপি প্রেম করো। আর আমার কাছে এসে বলো আমাকে ভালোবাসো নাহ?
- নিলয় তুমি ভুল বুঝতেছ। ও আমার বন্ধু। শুধুই বন্ধু।
- ও আচ্ছা বন্ধু। তোর বন্ধু কে তুই থাক।
- আচ্ছা নিলয় তোমার কি হইছে বলতো। তুমি আমার সাথে এরকম কেন করতেছ। ( একটু কান্নার স্বরে তৃনা নিলয় কে কথাগুলো বলছে)
- হু । তুই থাক তোর ফ্রেন্ড
কে নিয়ে। তুই আর আমাকে ফোন দিবি না। ( এই বলে নিলয় উঠে যেতে লাগলো। কিন্তু তৃনা নিলয়ের হাত ধরে উঠে দাড়ালো। তৃনা এবার কাদছে আর বলছে...)
- তুমি কেন আমার সাথে এরকম করছো।
আমি কি দোষ করেছি। বলো?
- তোর কোন দোষ নাই থাক তুই।
( এমন সময় কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে হাজির , নিলয়ের সামনে। এসেই নিলয়ের সাথে কথা বলতে শুরু করলো ।)
- কি নিলয় তুমি এখানে? ( মেয়েটি)
- না কিছুনা এমনি তেই ঘুরতে এসে ছিলাম। কিন্তু তুমি?
( নিলয়)
- আমি আব্বু আম্মুর সাথে ঘুরতে এসেছি!
- ওও ও ও।
- এই মেয়েটা কে?
- আমার ছোট বোন এটা।
( এই কথা বলাতেই তৃনা অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে খুব চাপা স্বরে কাদতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর মেয়েটি কথা বলতে বলতে ওর আব্বু আম্মুর কাছে চলে গেল। আবার হঠাৎ করেই মেয়েটি আবার ফিরে আসলো তখনি ....)
- নিলয় চলো তোমাকে আমি আমার আব্বু আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।
( মেয়েটি)
-এখন?
( নিলয়)
- হুম কোন সমস্যা । আমি তোমার কথা অনেক আগেই আব্বুকে বলেছি। চলো তো।
- আচ্ছা চলো।
- তোমার বোন যাবে না?
- না ও থাক।
- কেন নিয়ে চলো! তো।
- ও থাক না।
- আচ্ছা চলো।
( এই বলে নিলয় আর মেয়েটি চলে গেল।
এদিকে তৃনার সামনে এগুলো কি ঘটছে কিছু বুঝতে পারছে না তৃনা। সব যেন অবিশ্বাস্য বেপার। তৃনা শুধু কাঁদছে আর কাঁদছে । মনে হয় অজানা কোন গভীর সমুদ্রের মাঝে পড়ে গেছে তৃনা। কুল পাচ্ছে না কোন। সে ভাবছে তার নিজের সাথে এগুলো কি হচ্ছে। কান্নার শব্দ টা আরো জোরে করছে এবার। তৃনা কাদতে কাদতে বসে পরলো। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তৃনা ভাবছে সে আর বাড়ি ফিরে যাবে না।
শেষ পর্যন্ত নিলয় তাকে বোন বানালো।
কি আজব দুনিয়ার মানুষ। নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে। তার কান্নার শব্দ টা চেপে গেছে কিছুটা। শুধু ফোপাচ্ছে। তার নিঃশ্বাস নিতেই খুব কষ্ট হচ্ছে। এমন সময় আবির চলে আসলো। আবির তৃনার পাশে বসতেই তৃনা টের পেয়ে তার চোখের জল তারাতারি মুছে ফেলল। )
- কখন আসলি? ( তৃনা)
- এখন। তোর কন্ঠ এমন কেন?
আর নিলয় কই।
( আবির)
- নিলয় চলে গেছে রে।
- তুই যাস নাই কেন?
- এমনি।
- এদিকে তাকা তো?
- কেন?
( তৃনা এ কথা বলাতেই আবির তৃনার সামনে গিয়ে দাড়ালো। আবির দেখলো তৃনা কাদছে। )
- ঐ কি হয়েছে বলতো। নিলয় সাথে কিছু হইছে?
- না। তার আগে তুই বল। তুই প্রেম করিস না কেন?
(আবির চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো।)।
-কি বল তুই প্রেম করিস না কেন?
( একটু কান্নার মাঝেই রাগের কন্ঠে কথাটি বলল।)।
- জানিস নিলয় আমাকে ভালোবাসে না। নিলয় অন্য একজন কে ভালোবাসে।
( একটু নিরব হয়ে কথাগুলো বলছে। আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।)
- কেন তোর সাথে এরকম করলো কেন?
( আবির)
- তার আমি কি জানি। আমার কথার উত্তর দে আগে। তুই প্রেম করিস না কেন?
- আমার কথা বাদ দে তো।
- চল নিলয়ের কাছে যাই। গিয়ে দেখি কি হয়েছে তোদের।
( এই বলে নিলয় সামনের দিকে পা বাড়াতেই তৃনা আবিরের হাত ধরে ফেলল।)
- আমার প্রশ্নের উত্তর দে আগে।
- বললাম না বাদ দে আমার কথা।
- না। আজ বলতে হবে তোকে।
( আবির তৃনার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে এবার। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর)
- তুই চল তো রাত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
- ঐ । আর কতদিন এভাবে হুম?
- কি কতদিন এভাবে।
- তুই আমার সাথে কি সারাজীবন এভাবে ডায়লগ বাজি করবি। এত অভিনয়. করতে ভালোলাগে তোর।
( আবির তবুও তৃনাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।)
- কিসের অভিনয় । চলতো।
( আবির এ কথা বলাতেই তৃনা তার দু হাত দিয়ে আবিরের শার্টের কলার চেপে ধরল। )
- নিজের ভালোবাসাকে এভাবে লুকিয়ে রেখে। নিজেকে এত কষ্ট দিস কেন?
আমি জানি তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস। কিন্তু বলিস না !!! কেন?
( তবুও আবির তৃনাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।)
- কি সব বলছিস। চল তো?
- অভিনয় আর কতো হুম?
- অভিনয় এর জন্যই হয়তো আল্লাহ আমাকে তোর কাছে পাঠিয়েছে।
- নিজেকে কষ্ট দিতে খুব ভাল্লাগে নাহ?
- অভ্যাস হয়ে গেছে রে।
( তৃনা হঠাৎ আবিরের বুকে একটা কিল দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আবির কে। জড়িয়ে ধরে বলছে।)
- ভালোবাসি তোরে। আগে কখনো বোঝার চেষ্টা করিনি। ক্ষমা কর আমায়।
( তৃনা আবির কে জড়িয়ে ধরাতেই। আবির আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু তৃনা বলে উঠলো। )
- তুই ছাড়া আমার জীবন টা অন্ধ রে। আমি ভুল করেছি ক্ষমা কর আমায়।
( আবার কেদে কেদে কথাগুলো বলছে।)
- তোরে খুব ভালোবাসি রে। কিন্তু বলিনি। বললে যদি কখন ও দুরে হারিয়ে যাস তুই।
( আবির ও কাদছে আর বলছে)
---
- তাই আমি বুঝিনি তোকে। সরি!
- হইছে আর কাদিস না।
- হু। তুই কাদিস কেন?
আর এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে।
( ধমক দিয়ে কথাটি বলল তৃনা)
- পারি না তো। শিখিয়ে দে।
- ভালোই তো ঢং ধরছিস।
- হুম লাভ উ।
- এই তো।
- এই তো কি।
- লাভ উ টু।
-
---------
--------------------------------------
( কখন ও সত্যি ভালোবাসা আপনার খুব নিকটে থাকে। আপনি বুঝেও সেই ভালোবাসাকে দুরে সরিয়ে দেন। কারন তখন আপনি হয়তো অন্য ভুল ভালোবাসায় অন্ধ। যখন সেই ভুল ভালোবাসা আপনার থেকে দুরে সরে যায়।
তখন আপনি নিজের ভুল কে বুঝতে পারেন। আর তখন অনেকেই তার সেই সত্যি ভালোবাসাকে খুজে নেয়। কিন্তু অনেকেই তার সেই সত্যি ভালোবাসাকে আবার চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলে।...
.........
.........
কারন সময়ের কোন বিরতি নেই।
তেমনি হয়তো সেই ভালোলাসা তখন আপনার থেকে অনেক দূরে।)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন