সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭

অভিমানী ছেলে

 ওই
- কি ?
- চলো।
- কোথায় ?
- বাসায় যাবো না ?
- আরেকটু থাকো না আমার সাথে।
- না গো, অনেক দেরি হয়ে গেছে, আর দেরি করলে বাসায় বকা শুনতে হবে।
- আরেকটু থাকো না, প্লিজ।
- নাহ…. চলো তো।
কথাটা বলেই রাজের হাত ধরে টান দিলো রেশমা। গোমরা মুখ করে রেশমার পিছু পিছু হাটতে শুরু করল রাজ।
রেশমাকে পাগলের মত ভালোবাসে রাজ, রেশমাকে এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন ১৬ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে যায়।
আর রাজশাহী শহরের ১৬ কি.মি. রিক্সাতে এবং বাসে যাতায়াত করা খুব কষ্টকর।
কিন্তু তবুও রাজ রেশমাকে একটু দেখার জন্য রিক্সাতে কষ্ট করে রেশমার কোচিং এর সামনে যায়।
কখনো কোচিং এর সামনে ২ মিনিট এর জন্য দেখা, কখনো বা কোচিং থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রেশমার পিছু পিছু হাটা, কখনো বা রেশমার জানালার সামনে গিয়ে ঘুর ঘুর করা, কখনো বা রেশমাকে দেখতে গিয়ে ছোট বোনকে দেখে চলে আসা, আবার কখনো বা রেশমার আন্টির দৌড়ানি খেয়ে পথ হারিয়ে ফেলা।
এভাবে চলত রাজের প্রত্যেকটা দিন কিন্তু রেশমাকে বড়জোর এক নজর দেখা ছাড়া কোন কথাই হতো না তাদের, তবুও রাজ প্রতিদিন যেত একটি বার রেশমাকে দেখতে।
.
সপ্তাহের একটা দিনই তাদের এক সাথে ঘুরা হয় কিন্তু আজ মাএ এক ঘন্টা সময় দেওয়ায় রাজ মুখটা ভার করে রাখল।
হঠাৎ পিছন থেকে রাজ,
- ওহ
- কি হলো ?
- এতো তাড়াতাড়ি হাটছো কেন ? বাসায় কি তোমার ছেলেমেয়ে রেখে আসছো নাকি ?
- দেখো অনেক দেরি হয়ে গেছে, যেতে হবে।
- আমার পা ব্যাথা করছে, আমি হাটতে পারছি না। একটু আসতে হাটো না, প্লিজ।
- তোমার পা ব্যাথা করছে না এটা আমি ভালো করেই জানি।
এটা তোমার পুরানো অজুহাত আমাকে দেরিতে বাসায় পাঠানোর জন্য।
- জানো যেহেতু আরেকটু থাকলেই পারো ?
- দেখো বুঝতে চেষ্টা করো, দেরী করলে আম্মু বকা দিবে।
- আম্মুর কি তোমার পিছনে লাগা ছাড়া আর কোন কাজ নাই ?
- দেখো আম্মুর নামে কিছু বলবা না কিন্তু।
- আচ্ছা বলব না, চলো ফুসকা খাই। কতো দিন একসাথে ফুসকা খাই না।
- চলো!
.
কথাগুলো বলে রেশমাকে কিছু না বলতে দিয়েই ফুসকার দোকানের দিকে দৌড় দিলো রাজ।
রাজ জানে রেশমাকে কথা বলার সুযোগ দিলে “না” ছাড়া কিছুই বলবে না, পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করল রাজ।
মানিব্যাগে মাএ ১১৫ টাকা আছে, দুই প্লেট ফুসকার অর্ডার দিলে রিক্সা আর বাসের ভাড়া আর হবে না।
তাই রাজ এক প্লেট ফুসকার অর্ডার দিয়ে টেবিলে এসে বসে পড়ল, রেশমা এসে রাজের পাসে বসল, একটু পরে এক প্লেট ফুসকা দিয়ে গেল মামা।
- কি ব্যাপার এক প্লেট কেন ?
- তোমার জন্য।
- তোমার টা ?
- ও আসলে ফুসকা খেলে আমার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। তাই আমি এই সব খাই না।
- ফুসকা খেলে তোমার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় ???
- তেল দিয়ে ফুসকা বানায় তো। আর তেলের কিছু আমি খেতে পারি না।
- তাহলে অন্য কিছু নেও !
- আরে না আমার তেমন একটা খিদা নাই, তুমি খাও তো।
- তাহলে বলছো কেন একসাথে খাবো ?
- এই যে একসাথে বসে আছি, কথা বলছি, এই তো অনেক।
আমার আব্বু বলে খাওয়ার সময় কথা বলতে নাই, খাও তো তুমি।
.
তারপর তাদের মাঝে কিছুক্ষণ কথা চলতে থাকল। রেশমা রাজকে ফুসকা খাইয়ে দিতে চাইল কিন্তু রাজ ফুসকা খেল না, রাজ শুধু রেশমার একটা হাত ওর হাতের মাঝে রেখে রেশমাকে অনুভব করতে লাগল আর রেশমার কথা শুনতে লাগল।
একটু পরে রাজ ফুসকার বিল (৪০টাকা) দিয়ে রেশমার হাতে হাত রেখে ষ্টান্ডের দিকে গেল। ষ্টান্ডে গিয়ে রাজ একটা রিক্সা নিল এবং দুজনে উঠে বসল।
- কি ব্যাপার তুমি উঠস কেন ?
- তোমার সাথে যাব বলে।
- আমার সাথে যেতে হবে না, তুমি এখান থেকে বাসে উঠে বাসায় চলে যাও নাহলে তোমার বাসায় যেতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
- হলে হোক, চলো তো।
ওই মামা, আপনি চালান (রিকসাওয়ালাকে বলল রাজ)
- তুমি আমার সাথে আমার বাসা পযর্ন্ত যাবা আবার ব্যাক করে বাসষ্টান্ড আসবা!!
কেন এত কষ্ট করবা ??
- দূর কিসের কষ্ট, তুমি আমার হাতটা ধরো আর আমার কাধে মাথা রাখো দেখো আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
আর তাছাড়া জীবনের শেষ মুহূর্ত পযর্ন্ত আমি তোমার পাশে থাকতে চাই আর তোমাকে অনুভব করতে চাই।
- তুমি এত পাগল কেন ?
- আমার পাগলির জন্য।
- সবসময় এই ভাবে ভালোবাসবে তো ?
- সারাজীবন…..!!!!
- তিন সত্যি (প্রমিস)
- তিন সত্যি (প্রমিস)
.
সারাটা পথ রাজ রেশমার হাত ধরে রাখল আর রেশমা রাজের কাধে মাথা দিয়ে রাখল।
রেশমার কাছে রাজের শুধু এই চাওয়া,
“রাজের হাতটা ধরবে আর কাধে মাথা রাখবে”
দেখতে দেখতে রেশমার বাসা চলে আসল,
- আচ্ছা আমি তাহলে যাই ?
- যাও।
- তুমি এই রিক্সা করেই চলে যাও।
মামা ওরে আবার বাসষ্টান্ডে নামিয়ে দিয়েন। (রিকসাওয়ালাকে বলল রেশমা)
- আচ্ছা আমি যাব, তুমি যাও।
- ওকে।
- কাল দেখা হবে।
- আবার ?
- কোচিংয়ের সামনে !!
- তুমি পারও বটে। পাগল একটা।
- Yes I’M.....
- বাই
- বাই...
রেশমা বাসায় ঢুকা পযর্ন্ত রাজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।
তারপর মামাকে বলল,
- মামা কত হয়েছে ?
- ৫০ টাকা।
- (মানিব্যাগটা বের করে) এই নেন।
- কেন আপনী যাবেন না ?
- না মামা, আমার একটু কাজ আছে।
রিকসাওয়ালা চলে গেল।
রাজ মানিব্যাগটার দিকে একবার তাকালো,
মানিব্যাগে মাএ ২৫ টাকা আছে।
হাফ পাস দিয়ে যদি বাসে করে বাসায় যেতে হয় তাহলেও মিনিমাম ২০ টাকা লাগবে,,, তাহলে কি আর রিক্সায় উঠার টাকা থাকে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রাজ একটু সামনে থেকে ৫ টাকার বাদাম কিনল।
তারপর কানে একটা ইয়ারফোন লাগিয়ে উল্টো পথ ধরে বাসষ্টান্ডের দিকে হাটতে শুরু করল...
.
.
কিছু কথা : অনেকেই বলে থাকে ছেলেরা ভালোবাসতে পারে না, আসলে কিছু কিছু ছেলেদের ভালোবাসা খুব কমই প্রকাশ প্রায়। ছেলেদের ভালোবাসা খুজে পাওয়া যায় তাদের কাজ-কর্মে, কথা-বার্তায়।
কিন্তু যা আজকাল অনেক মেয়েই খুজে পায় না...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন