সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭

সেই মেয়েটি

আজ কেনো যেন তিথির কথা খুব বেশি মনে পরছে। অন্য দিন যে পড়ে তা না আজকে একটু অন্যদিনের তুলনায় বেশি মনে পরছে। পাগলী একটা মেয়ে সব সময় আমাকে আগলিয়ে রাখত। বালিশের নিচ থেকে ডায়েরী টা বের করে প্রথম পৃষ্টা উল্টানোরর সাথে সাথে তার ছবি দেখতে পেলাম। কি সুন্দর তার মায়াবি চোখ যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম
,
-এই যে ভাইয়া দাঁড়ান
-হ্যা বলুন
-আপনার আইডি কার্ড পরে গেছে।
,
নিছে তাকিয়ে দেখি আসলেই আমার আইডি কার্ড পরে আছে। কার্ড টা মাটি থেকে তুলে দিলাম ভোঁ দৌড়, এক্সামের সময় ১০ মিনিট পেরিয়ে গেছে। রাস্তায় জ্যাম থাকায় আসতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তারা হুরা করে রিক্সা ভাড়া দিতে গিয়া আইডি কার্ড টাও ফেলে দিছিলাম, মেয়েটা না বললে দিললে আজকে এক্সাম দেয়াই হত না। অবশেষে এক্সাম নামক প্যারা টা শেষ করলাম। কিন্তু যার জন্যে আজকে এক্সাম টা দিতে পারলাম তাকে ধন্যবাদ টাও দিতে পারলাম না এই অনুসুচনায় নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। অবশ্যয় তারাহুরা না থাকলে ধন্যবাদ টা দিতাম। যাই হোক এখন তো ওনাকে কোথাও পাব না। যদি কখনো পাই তাহলে ধন্যবাদটা দিয়ে দিব।
,
প্রায় সাপ্তাহ খানিক পর ক্যাম্পাসে আসছি। ক্যান্টিনে একা একা বসে আছি। বন্ধুবান্ধব কেউ আসে নি এখনো। তাই কানে হেড ফোন দিয়ে গান শুনছি আর কোক খাচ্ছি।
,
-আমি কি এখানে একটু বসতে পারি।
-হ্যা বসুন।
-আমাকে চিনতে পারছেন।
-এর আগে কখনো দেখা বা কথা হইছে বলে আমার মনে হয় না।
-আরে সেদিন গেটের বাইরে আপনার আইডি কার্ড.....
-আরে হ্যা হ্যা আপনি সেই, আসলে আমি দুঃখিত সেই দিনের জন্যে এক্সাম থাকার কারনে তারাহুরা করে চলে গেছি।।
-ইটস ওকে!
-আমি শিহাব। আপনি
-আমি তিথি। সেকেন্ড ইয়ার ইংলিশ
-আমি ফাইনাল ইয়ার।
-ও আচ্ছা।
-কফি
-হুম
,
মেয়েটার কাজল কালো চোখে ভালই লাগছে। শ্যামলা বর্নের মেয়েদের চোখ গুলা মনে হয় সুন্দর হয় সেটা তিথিকে দেখে বুঝলাম। মেয়েটার চোখে মনে হয় এক ধরনের যাদু আছে, সেই যাদুর মায়া দিয়ে আমাকে ঘায়েল করে ফেলছে। সেদিনের মত বাসায় চলে আসি। খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাত যাব তখন তিথির কথা মনে পড়ল।
,
-এই শুন না (তিথি)
-হ্যা বল (আমি)
-খুব বেশি ভালোবাসি।
-আমিও ইত্তুগুলা ভালোবাসি।
-এই শুন না।
-আবার কি
-একটা দিবা
-কি
-তোমার ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া
ক্রিং ক্রিং ক্রিং.....
যা এলার্মের শব্দে কত সুন্দর স্বপ্ন টা,ভেঙে গেলো। বিচানা থেকে ফোন টা খুজে সময় দেখি ৬ টা বাজে । বিচানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিলাম। ৮ টায় ক্লাস শুরু হবে। ক্যাম্পাসে এসে কিসের ক্লাস। চার দিকে তিথিকে খুজা শুরু করলাম। চার দিকে খোঁজাখুঁজি করে হতাশ হয়ে মাঠের এক কোনে বসে আছি। মনটা ভিষন খারাপ। বসে বসে ঘাসের সাথে রাগ কমাচ্ছি। হঠ্যাৎ তিথির কন্ঠ ভেসে আসল
-ভাইয়া একা একা কি করছেন (তিথি)
-আপনাকেই খুঁজতেছিলাম (আমি)
-কেনো?
 -জানি না,
-এই নিন নাম্বার, দরকার হলে ফোন দিয়েন।
,
এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। মন টা বলতেছে ওখানে ধরে একটা চুম্মা দেয় কিন্তু না এইডা করা যাবে না তাহলে প্রেম শুরু হয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। যাই হোক বাসায় এসে মনের আনন্দে একটা দিলাম ঘুম। এক ঘুমে সন্ধ্যা সাতটা। উঠে ফ্রেশ হয়ে ফোন দিব দিব ভাবতে ভাবতে রাত ১০ টা বেজে গেছে। তাই আর দেরি না করে ফোন দিলাম...
-হ্যালো (তিথি)
-নিশ্চুপ (আমি)
-আজব তো কথা বলছেন না কেনো (তিথি)
-নিশ্চুপ (আমি)
-আরে কথা তো বলবেন (তিথি)
-হ্যা হ্যালো, আমি শিহাব।
-হ্যা জানি
-কি করেন।
-কিছু না। আপনি।
-এই তো কথা বলছি।
,
অল্প অল্প কথা বলা, মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে আড্ডা। এভাবে কখন যে মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছি বুঝতেই পারি। তবে কেমন যেন একটা ভয় হচ্ছে যদি মেয়েটা না করে দেয় তাহলে কি করব। আর সামনা সামনি বলতে পারব বলে মনে হয় না। কি করব কিছুই বুঝতেছি না। চিঠি লিখব নাকি সরাসরি বলেই দিব। না না মুঠোফোনের যুগো চিঠি কেমন দেখায় না, তাহলে কি করব। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। আজ ক্যাম্পাস বন্ধ তাই দেখাও হবে না সারাদিন প্রোপোজ করার রাস্তা খুজলাম। অবশেষে একটা রাস্তা বের করলাম। যখন মুঠোফোন ছিল না তখন চিঠির মাধ্যমে সবাই প্রেম করেছে কিন্তু আমি তা করব না, তবে তার মতই বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করে মুঠোফোনের মাধ্যমে ম্যাসেজ করে আমার মনে কথাটা বলে দিব। যে ভাবনা সেই কাজ
,
তিথি....
তুমি কি জানো, তুমি আমার রাত জেগে থাকার একমাত্র কারন,
তুমি কি জানো পরন্ত বিকালে আনমনে আকাশের পানে তাকিয়ে তোমাকে নিয়ে ভাবি,
তুমি কি জানো বইয়ের প্র‍্যত্যেক টা পৃষ্টার,প্রত্যেক্টা লাইনের, প্রত্যেকটা শব্দে তোমার বিচারন,
তুমি কি জানো, আমার সকল কবিতার বিষয় তোমাকে ঘিরে,
তুমি কি জানো আনমনে ডায়েরীর প্রত্যেক টা পাতায় শুধু তুমি আর তুমি,
তুমি কি জানো আমার প্রত্যেকটা স্বপ্ন তোমাকে ঘিরে,
তুমি কি আমার জীবন সজ্ঞী হবা??
,
ম্যাসেজ টা সেন্ট করে। চুপচাপ বসে আছি। খুব টেনশন হচ্ছে, যদি তিথির আর কথা না বলে।
১ম ঘন্ট....
একটা ম্যাসেজ এসেছে, তাই তারাতারি ওপেন করে দেখি Gp offer এর ম্যাসেজ। মনে মনে Gp রে দিলাম বকা।
,
২য় ঘন্টা ......
আবার ম্যাসেজ এসেছে। দিলাম এক ভো দৌড়, গিয়া দেখে বন্ধুর ম্যাসেজ, শা*রে দিলাম বকা
ওই হ্রামি তুই আর জীবনে ম্যাসেজ দিবি না। হ্রামি অসময়ে ডিস্টার্ব করিস।
,
৩য় ঘন্ট...........
আবার ম্যাসেজ আসছে ভাবলাম দুই বার যেহেতু মিস হইছে এবার নিশ্চয় হবে না। কিন্তু আমার ধারনা ভুল, আবার ও Gp offer..
,
মোবাইল ঢিলা মেরে রেখে টিভি দেখা শুরু করলাম। পর পর দুইটা ম্যাসেজ আসার পরেও দেখতে গেলাম না। ভাবলাম নিশ্চয় হ্রামি টা আর জিপি অফার থেকে ম্যাসেজ দিছে। আমি আমার মত করে টিভি দেখতেছি। প্রায় ১ ঘন্টা পর ফোন আসল,,, ফোন হাতে নিয়ে দেখি তিথির ফোন, রিসিভ করতে খুব ভয় লাগছিল তাও রিসিচ করলাম
,
-ওই তোমার ফোন রিসিভ করতে এত দেরি হল কেনো? (তিথি)
-না মানে (আমি)
-সেই কখন ম্যাসেজ দিছি রিপ্লে দাও নি কেনো?
 ,
কথা শুনার সাথে সাথে ফোন কেটে দিলাম। তারপর ম্যাসেজ ওপেন করলাম
হ্যা হতে পারি..
যদি হাত ভর্তি কাচের চুড়ি কিনে দাও।
যদি নীল শাড়ি পড়ে বিকাল বেলা রিক্সা করে ঘুরতে নিয়ে যাও।
যদি রোজ ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাও।
যদি আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজো।
যদি জোৎস্না রাতে ছাদে আমার কোলা মাথা রেখে শুয়ে থাকো।
আর যদি আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও না যাও।
ম্যাসেজটা দেখে খুশিতে চোখের কোনে পানি চলে আসল।
,
আজ আমাদের সম্পর্কের ৩ বছর পুর্ন হয়েছে। সেই সাথে আমাদের বিয়েও হয়েছে। তিথি বাসর ঘরে বসে আছে। আমি বন্ধুদের সাথে বাইরে কথা বলছি।
-দোস্ত তুই অনেক লাকি রে। তোর মনের মানুষকে জীবন সঙ্গি করে পেয়েছিস। (ইবু)
-দোস্ত বিড়াল টা কিন্তু আজকেই মারিস। (শহিদুল)
-ওই চল তোরা ভাবি রুমে একা বসে আছে। (নাঈম)
,
ওরা আমাকে রেখে চলে গেলো। খুব হাসি পাচ্ছিলো হ্রামি গুলার কথা শুনে। চলে গেলাম বউয়ের কাছে, বউ দেখি বসে আছে। দরজা লাগিয়ে বউয়ের পাশে বসলাম।
-কি মহারাজ আপনাদের গল্প শেষ (তিথি)
-হ্যা আপাতত শেষ। (আমি)
-তাহলে চল নামায পড়ব। তুমি চেঞ্জ করে আসো আমি ওযু করে আসি।
,
বউয়ের কথা মত কাপড় চেঞ্জ করে আসলাম। জামাই বউ নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর...... (জানতে চাহিয়া লজ্জা দিবেন না)
,
খুব ভালই যাচ্ছে আমার আর তিথির বিবাহিত জীবন। মেয়েটা সংসার টাকে আগলিয়ে রেখেছে। খুব সুন্দর করে সংসারটা দেখাশুনা করে। একদম অবচয় পছন্দ করে না। প্রয়োজনের ছাড়া একদম বাজে খরচ পছন্দ করে না। দেখতে দেখতে বিবাহিত জীবনের দুটি বছর অতিবাহিত করলাম।
,
আজকে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী, সে কাল রাতে আবদার করছে, আমরা যেন এক সাথে ফুচকা খেতে যাই, তার কথা মত গাড়ি নিয়ে বের হলাম। তিথি আমার পাশের সিটে বসে আছে, নীল শাড়ি পড়ে, চোখে কাজল দিয়ে, হাত ভর্তী নীল কাচের চুড়ি পড়ছে। তার থেকে যেন চোখ ফিরিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
- এই সামনে দেখে গাড়ি চালাও। (তিথি)
-তাই তো করছি (আমি)
-তুমি তো আমার দিকে তাকিয়ে আছো।
-হ্যা,
-আমাকে দেখার কি আছে।
-আজ আবার তোমার চোখের প্রেমে পড়ে গেলাম।
-সে তো তুমি প্রত্যেক দিন আমার প্রেমে পড়ে যাও।
,
গাড়ি সাইডে রেখে রাস্তার পাশে বসে থাকা দোকান থেকে ফুচকা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা গাড়ি নিজের কনট্রোল হারিয়ে আমাদের গাড়ি এবং ফুচকার দোকানটাকে চুরমার করে দেয়। ভাগ্য ক্রমে বেঁচে ফিরেছি আমি কিন্তু বাঁচাতে পারি নি তিথিকে। হাসপাতালে নিতে নিতে সে আমাকে একা রেখে চলে যায় পরপারে।

1 টি মন্তব্য: