শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭

বন্ধুর জন্য সব পারা যায়

শুয়ে রইলাম আনমনে, হাতে মোবাইল নামক যন্ত্রটা।কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। হঠাৎ কার যেন মোবাইল নামক যন্ত্রটা বেজে উটলো। কার আবার কল আসলো? আরে আমারই কল আসলো।কোনো খেয়াল নেই।স্কিনে তাকিয়ে দেখি হৃদয়ের কল। কল রিছিব করতেই.........
.
>>হ্যালো রাকিব কই তুই? (হৃদয়)
-- আরে আমিতো ঘোড়ার ঘাস কাটি।তোরা কই?(ফাইজলামি করে....)
>>দুর বেটা ফাইজলামি করিস না।কই তুই ঠিক করে বল?( হৃদয়)
--আরে বেটা এই সময় কই থাকার কথা।আমি বাড়িতে।(আমি)
>>ভাই আমরা কলেজ মাঠে আছি। তুই আয়তো।
--এতো তাড়াতাড়ি!!কিছু হইছে নাকি?
>>আসলে বলব নি। তাড়াতাড়ি আয়।
--দুর বেটা ভালো লাগতেছে না।আসতে অনেক দেরি হবে।
>>ভাই আস না।তোর জন্য আমরা অনেক্ষন
দরে ওয়েট করতেছি।
-- ওকে আসতাছি।
.
.
কিছুক্ষণ পর মাঠে গেলাম।
কই হৃদুইয়া আর আন্নার(আনোয়ার) কোনো নাম গন্ধ নাই।
কই হারামিরা?
কল দিলাম। হৃদুইয়াতো কল ধরে না।
১০-১৫ টা কল করলাম।
কল রিছিব করে না।
কিরকম টা লাগে আপনারই বলেন?
অতঃপর হ্লা কল ধরলো।
--কিরে কই তোরা?
>>...... (চুপ)
--কিরে কথা বলস না কেন?
>>ভাই তুই কই?
--কই মানে?আমি ১৫ মিনিট দাড়াই আছি মাঠে।আর তোরা কই?(দমক শুরে)
>>আরে তুই মাঠে গেলি কেন?
আমরা তো কাচারিত, তোরে মাঠে যেতে কে বলছে?
--রাখ বেটা।কল রাখ।
>>আরে ভা......
---টুট টূট টুট।
কিরকম টা লাগে?
একবার মাঠে,একবার কাচারিতে।আমি যেগুলো করি অন্যদের সাথে।আর ফইন্নিরা সেগুলো করলো আমার সাথে।১৫ মিনিটের জন্য ইয়া বড় বাশ দিলো।আমিও কিন্তু সুযোগ পেলে তাদের ইয়া ইয়া বড় বাশ দিতে ভুলি না।
হৃদুয়িরে আর কল দিলাম না।
কল দিলাম আন্নারে(আনোয়ার এ)___
কল রিছিব করতেই...
--কিরে তোরা কই?
>>আরে আমরা কাচারিত।
--এভাবে বাশ দেওয়ার মানে কি?আর আজকে এতো তাড়াতাড়ি বাইর হইলি কেন?
>>আচ্ছা তুই কাচারিত আস।আসলে বলবো নি।
--আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি যাইতেছি কাচারির দিকে।
আচ্ছা এই পাকে আপনাদের পরিচিত হই নি।
.
.
আমি রাকিব উল হাসান। আবার অনেকের মতে-
রাইক্কা, হারামি,কিলার,আরটিভি আরো অনেক কিছু বলে ডাকে।যা আমার মনে রাখা কষ্টসাধ্য।আমি ছিলাম সেই মাপের গাঁদা।কিছুই মনে রাখতে পারি না।আমরা তিনজন লেংটা কালের বন্ধু।
থুক্কু আমি আর আনোয়ার ছিলাম লেংটা কালের বন্ধু।কিন্তু আমরা ক্লাস ৮ থাকাকালে হৃদয় হারামি কই থেকে ফয়দা হয়ে আমদের সাথে যোগ দিলো।সেই থেকে হইলাম দুইজন থেকে তিজন ।আমি ইন্টারমিডিয়েট ফাইনাল দিয়ে এখন টো টো করি।আনোয়ার আর হৃদয় একটা পাবলিক ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে।আগেই বলছিলাম আমি সেই মাপের গাঁদা। যার জন্য এক ক্লাস পেল করে এখন তাদের পিছিয়ে। বেশি বকর বকর করে ফেললাম এখন গল্পে যাই......
কাচারিতে গিয়ে দেখি হারামিরা বসে আছে আর মনের সুখে বাদাম খাচ্ছে।আমিও গিয়ে বাদামের ভাগ নিলাম।
--এমনটা না করলে ও পারতি তোরা।এতো তাড়াতাড়ি বের হইলে যে??(আমি)
>>আজকে বেশি করে ঘুরবো তাই।(আনোয়ার)
>>তুই সারাদিন ঘরে কি করিস? (হৃদয়)
-- দুম্ করিয়া দিলাম এক কিল।তুই কথা বলবি না।(আমি হৃদয়কে)
আসলে বিকালে হাটা আমাদের তিন বন্ধুর অন্যতম কাজ।প্রত্যেক দিন বিকালে হাটি।এই হাটার থাকে না কোনো উদ্দেশ্য। থাকে না কোনো গন্তব্য। চলতে থাকি এক অজানা গন্তবব্যে। প্রত্যেক দিন টঙ্গে বসে চা আর টিভি না দেখলে আমদের দিন যেন কাটেই না।আমি আর আনোয়ার ছিলাম চা খোর।অন্য দিকে হৃদয় ছিল হালিম খোর। যা আমাদের দুজনেরই ছিল অপছন্দ।

যাই হোক আজকেও ঘুরাঘুরি করিতে কখন যে রাত ১১:৩৩ টা বেজে গেল আমরা খেয়ালি করি নাই।
.
--১১:৩৩ টা বেজে গেল চল এবার বাড়ি যাই।(আমি)
>>হুম চল। আচ্ছা চা খাইবি?চা খেয়ে তারপর বাড়ি যাবো।(আনোয়ার)
--হুম খাবো, চল।(আমি)
>>আমি চা খাবো না,হালিম খাবো।(হৃদয়)
--চা না খেলে মুড়ি খাইয়েন, চল।(আনোয়ার)
অতঃপর আমরা চা খেয়ে যে যার বাড়িতে চলে গেলাম।
.
.
বাড়ি গিয়ে ফেসবুক লগ ইন করে ঢুকে দেখি "স্পর্শিয়া জান্নাত" নামক আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো। আইডিতে ঢুকে চেনার কিছু পাইলাম না।আরে একটা ম্যাছেস ও দিলো খেয়াল করি নাই।
ম্যাছেসটা ছিল-
>>আচ্ছা আপনি এরকম বাইরে থাকেন কেনো??
.
.
কে হতে পারে?সাত-আট করে দিলাম রিপ্লে
-
--আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
.
ফেসবুক লগ আউট করে ঘুমিয়ে গেলাম


সকাল না হতে "মা" ডাকা-ডাকি শুরু করলো, ঘুম থেকে উটতে। আসলে ঘুম থেকে উটতে মোবাইল নামক যন্ত্রটায় এ্যালার্ণ দেওয়া লাগে না আমার। মা ঠিক সময়ে উঠিয়ে দেয়।
>>আমি আপনার মা না।তাড়াতাড়ি উঠুন।
.
চোখ খোলে তো আমি ৫০০ ভোল্টেজর একটা শক্ খেলাম।
-- আরে তু তু তুমি এখানে?(আমি
>>কেনো অন্য কাউকে আসা করছিলেন নাকি?
--না ঠিক তা নয়।(আমি)
>>আচ্ছা আপনি এরকম বাইরে বাইরে টো টো করেন কেনো?
-- তার মানে কাল রাতে তুমিই আমাকে ম্যাছেস দিয়েছো?
কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।
.
এতক্ষণ যে আমার আরামের ঘুমটা হারাম করে দিলো।সে আর কেউ নয় আমাদের পাশের বাসায় আন্টির মেয়ে।নাম তার জান্নাত।তারা এখানে নতুন এসেছে।জান্নাত ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে, আমাদের কলেজেই পড়ে।
এই মুচকি হাসি দিয়ে চলে যাওয়ার রহস্যটা কিছু বুঝতে পেরেছি।কিন্তু এখন পুরাপুরি বুঝে গেছি।
.
আমার প্রেম-ট্রেম নিয়ে চুলকানি ছিল।কিন্তু জান্নাতের প্রতি আমি আগে থেকেই দুর্বল হয়ে আছি।দেখতে বেসম্ভব সুন্দরী।মুখে যেন এক ধরনের মায়া কাজ করে।তা দেখে আমিতো ফিদা।যতবারি দেখি ততবারি ক্রাশ খাই।
.
.
বিকালে না হতেই আনোয়ারের কল।
>>হ্যালো রাকিব কই তুই?আমরা মাঠে আছি তুই তারাতারি আস।
--আচ্ছা ঠিক আছে তোরা দারা।আমি আসতেছি।
.
.
গিয়ে দেখি আনোয়ার আর হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে।
>>আরে রাকিব! আনোয়ার তো মারাত্মক ক্রাশ খাইছে।(হৃদয়)
-- ও তাই নাকি? তাহলে তো এখন আন্না(আনোয়ার) আমাদের মিষ্টি খাওয়াবে।
কি বলস হৃদয়?(আমি)<
>>হুম।ওই চল মিষ্টি খামু!!(হৃদয়)
>>আরে খাওয়াবো।আগে তোদের আমাকে হেল্প করতে হবে।(আনোয়ার)
-- হেল্প তো অবশ্যইই করবো।এই রাকিব ও এখন একজনের উপর ক্রাশ খাইলো।(আমি)
>>তাই নাকি।তো কে সেই হতোভাগী??(হৃদয়)
-- হতোভাগী হবে কেনো,বল ভাগ্যবতী। আচ্ছা আনোয়ার কে সে তোর প্রথম
এবং শেষ ক্রশ?(আমি)
>>ঐ দেখ রাস্তায় হেটে যাইতেছে।(আনোয়ার)
.
ঐ দিকে তাকিয়ে দেখি জান্নাত।সাথে সাথেইই বুকের বাম পাশে চিনচিন ব্যাথ অনুভব করলাম।
যাকে আমি মনে মনে ভালোবাসি।তাকেই আনোয়ারের পছন্দ হইলো। কি করুম এখন আমি?
এতো দিনের বন্ধুত্ব নাকি ভালোবাসা? দুটানা পরে গেলাম।পরক্ষণে ভাবলাম না, আমার বন্ধুর খুশির জন্য আমি সব করতে পারি।যাবে যাক ভালোবাসা।আমার বন্ধু তো খুশি থাকবে।
>>কিরে কি ভাবস এতো?মেয়েটা দেখতে অনেক মায়াবী না?(আনোয়ার)
--হুম।ওকে আমি চিনি। নাম জান্নাত।ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে। আমাদের পাশের বাসায় নতুন উঠেছে।(আমি)
>>তাহলে তো ভালই হলো।তুই এখন কিছু কর।(হৃদয়)
--হুম।(আমি)
কিছুক্ষণ বসে থেকে যে যার বাড়িতে চলে গেলাম।
ভাবতে লাগলাম কি থেকে কি হইয়ে গেল।বসে রইলাম আমার রুমে। দেখি জান্নাত আসলো-
--তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। (আমি
>>হুম বলেন। কলেজ থেকে আসার সময় আপনার ফ্রেন্ড দের সাথে আপনাকে দেখলাম।(জান্নাত)
-- আসলে একটা কথা বলবো তুমি কিছু মনে করবে না তো?(আমি)
>>না,বলতে পারেন।(জান্নাত)
-- আমার ফ্রেন্ড আনোয়ার তোমাকে অনেক পছন্দ করে। প্লিজ তুমি তাকে মেনে নাও।(আমি)
কিছু না বলেই চলে গেল।বুঝলাম কিছু।
.
.
যাক কয়েক দিন পর বিকালে আমরা তিনজন দাঁড়িয়ে ছিলাম কলেজ মাঠে। দেখলাম জান্নাত কলেজ থেকে বেরিয়ে আসিতেছে। আমাদের সামনে আসতেই আমি জান্নাতকে বললাম ও(আনোয়ারকে দিকে দেখিয়ে) তোমাকে কিছু বলবে।
>>কি বলবেন? তারাতারি বলেন।(জান্নাত)
.
.
আমরা আনোয়ারকে বললাম যা প্রপোজ কর।
>>মামা কি করব?(আনোয়ার)
>>কি আবার প্রপোজ করবি।(হৃদয়)
>>আমি?(আনোয়ার)
--না আমিইইই (আমি)
>>আমার হয়ে তুই বলে দে।(আনোয়ার)
--হ্লা প্রেম করবা তুমি আর প্রপোজ করবো আমি!!
>>আচ্ছ যাইতেছি।(আনোয়ার)
.
.
দেখলাম আনোয়ার নার্ভাস ফিল করতেছে।
আনোয়ার জান্নাতের সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে----জান্নাত আমি তোমাকে প্রথম যেদিন দেখি সেদিন থেকেই ভালোবেসে পেলেছি।
তুমি কি পারবে প্রতিটি সূর্য অস্ত আমার সাথে কাটাতে।তুমি কি হবে রাতের বেলা এক সাথে চাঁদ দেখার সঙ্গী?
দুর থেকে আমরা দুইজন দেখলাম জান্নাত মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।
.
দিবে না বা কেনো আমাদের বন্ধু বলে কথা।
হাজারে একজন। সবক্ষেত্রেই ছিল অনেক এগিয়ে।
মেয়েরা তো তার মতই মনে মনে একজনকে আশা করে।
.
.
>>কিরে তোর না কাকে পছন্দ হলো?(হৃদয়)
-- আরে দুর বেটা। আমার আবার পছন্দ।তোদের সাথে ফাইজলামি করলাম আর কি।(আমি)
>>ও তাই বল!!!
.
আমরা চলে যাচ্ছি দুরে.....
.
.
-- এই শুনো না?(আনোয়ার)
>> হুম বলেন।(জান্নাত)
--না বলবো না।
>>কেনো?
-- তুমি আমাকে আপনি বলেছো তাই।
>>আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে তুমি,,খুশি?
--হুম।এই শুনো আমি তোমার হাতটা দরি?
>>কেউ দেখে ফেললে?
-- দেখলে তাতে কি?
>> আচ্চা ঠিক আছে দরো।
আনোয়ার জান্নাতের হাত দরে চলে অনেক দুরে।
বুকের বাম পাশটা কেমন জানি করতেছে।
সুখী থাকুক তারা।সুন্দর হোক তাদের আগামী পথ চলা। আমার বন্ধুর খুশি তো আমারও খুশি।হোক যত কষ্ট , আপত্তি নাই তাতে।আসলে বন্ধুর জন্য সব পারা যায়। যদি হয় সেই বন্ধু মনের মতো।
বন্ধুই তো বেঁচে থাকার অন্যতম আধার।আর সেই বন্ধুকে কষ্ট দেই কি করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন