শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭

ফিরে পাওয়া সেই মেয়ে

আজ আকাশ টা কেমন মেঘলা মেঘলা মনে হচ্ছে। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
বাসের জন্য এসে দাঁড়াতেই একটি বাস পেয়ে গেলাম। তাই আর দেরি না করে সাথে সাথে উঠে পরলাম।
.
ওহ্ আপনাদের তো আমার পরিচয়ই দেয়া হয়নি। আমি জাহিরুল ইসলাম তারেক।১০ম শ্রেনীতে পড়ি। দরিদ্র পরিবারে জন্মানো এক সাধারন ছেলে। বাবা মারা গেছেন জন্মের আগেই। তাই বাবার ছবি দেখা ছাড়া আর কোন কিছু দেখবার মত ছিল না । আমার মা মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। তার রোজগারে যা ইনকাম হয় তা দিয়েই আমাদের মা ছেলের কোনোরকম দু'বেলা খেয়ে না খেয়ে চলে যায়। সাথে আমার পড়া লেখার খরচ ও। আমি নিজেও মাঝে মাঝে রিকশা চালাই। তাতে যা পাই তা জমিয়ে বাসার কিছু টুকটাক জিনিস কিনি।এভাবেই চলছে আমাদের মা ছেলের দিনগুলো।
.
বাসে উঠে পরলাম। বসার জন্য বেছে নিলাম জানালার পাশের সিটটি। ঠিক তখনি আমার পাশে একটি সুন্দরী মেয়ে এসে বসল। কেমন ইতস্তবোধ করছিলাম। তাই তার থেকে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে সরে বসলাম। মেয়েটি আমার এমন ইতস্ততভাব দেখে বলল; ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি কোনো পকেটমার না।
.
আমি:- না তেমন কিছু না। আসলে মেয়ে দেখলে আমার গায়ে এলার্জি চলে আসে।
.
মেয়ে:- কিহ্!! মেয়েরা কি এলার্জি? যে আপনার পাশে বসলেই আপনার এলার্জি চলে আসবে?
.
আমি:- আজিব তো! আপনি দেখছি আমার সাথে তর্ক করছেন। বললাম না মেয়েদের সাথে আমার এলার্জি আছে।
.
মেয়ে:- দেখুন আপনার যদি মেয়ে দেখলে এলার্জি চলে আসে তবে আপনি অন্য জায়গায় গিয়ে বসুন।
.
আমি:- ওকে।
.
মেয়ে:- আরে!!!! কোথায় যাচ্ছেন?? বসুন। আমিই সরে বসছি।
.
মেয়েটি কিছুটা দূরত্ব নিয়ে সরে বসল। তারপর বেশ কিছুক্ষন নিরবতা। পরক্ষণেই বৃষ্টি শুরু হল। আহ্ কি ভাল লাগছে বলে বোঝাতে পারব না।
.
মেয়ে:- হু আমারো।
আমি:- ওহহ্ তাই! তো ম্যাম আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
.
মেয়ে:- গাবতলি বাস স্ট্যান্ড। আপনি?
.
আমি:- হুম আমিও(একটু চমকে গেলাম)।
.
মেয়ে:- তো জনাব আপনার নাম কি?
.
আমি:- আমি তারেক। আপনি?
.
মেয়ে:- আমি এমি।
.
আমি:- বাহ্ সুন্দর নাম তো!
.
মেয়ে:- ধন্যবাদ।
.
দুজনে মিলে গল্প গুজব করছিলাম হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকানো আর বজ্রপাতের কারণে সাথে সাথে মেয়েটি আমাকে জরিয়ে ধরল।
.
আমি:- আরে ছাড়ুন ছাড়ুন!! ছাড়ুন বলছি।
.
এমি:- আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে আমার খুব ভয় লাগে।
.
আমি:- ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি আছি তো।
.
এমি আবার সরে বসল আর ঠিক তখনি আমি বললাম,,
.
আমি:- চলে এসেছি। নামবেন না?
.
এমি:- হুম চলুন।
.
এক সাথে বাস থেকে নামলাম। হঠাৎ কেমন জানি বুকের বাম পাশটায় একটা চিন চিন করে ব্যথা উঠল। কেন জানি এমিকে যেতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। দুইজন দুইদিকে যাব আর ঠিক তখনি,,
.
মেয়ে:- কিছু মনে না করলে আপনার ফোন নাম্বার টা দেওয়া যাবে?
.
আমি:- মনে মনে ভাবলাম কই ছেলেরা নাম্বার খুঁজে আর এইখানে দেখি উল্টাটা। তবে যাই হোক মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলাম। আমি বললাম অবশ্যই ০১৭.......
.
মেয়ে:- এবার আসি তাহলে। ভাল থাকবেন। আল্লাহ হাফিজ।
.
আমি:- আল্লাহ হাফিজ।
.
ঠিক তার ২ দিন পরে আমার ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। ফোনটা রিসিভ করতেই,,
.
অপরিচিত মেয়ে:- আসসালামু আলাইকুম। তারেক? আমি এমি।
.
আমি:- ওয়ালাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আরে তুমি?(নাম শুনেই টাশকি খেয়ে গেলাম)।
.
এমি: হুম আমি। কেমন আছেন?
.
আমি:- আলহামদুলিল্লাহ চরম। তুমি? (কথায় কথায় তুমিতে চলে গেলাম)।
.
এমি:- হুম আমিওভালো।
.
এভাবে আমাদের কথা শুরু হল। দিনে দু'বার কথা হত আমাদের। একবার সকালে আর একবার রাতে। যদিও এমিই প্রায় কল দিতো।
এমি ছিল ধনী বাবা'র একমাত্র মেয়ে।
.
এক সময় এমিকে প্রোপোজ করি আর ও রাজি ও হয়।দীর্ঘ ৩ বছর পর যখন আমি ভার্সিটি তে পা দিলাম তখন এমি কেমন পরিবর্তন হতে শুরু করল। আমি কল দিলে ফোন রিসিভ করতো না। যখনই কল দিতাম শুধু ওয়েটিং এ থাকতো। মনে মনে ভাবতাম কিসের এত বিজি থাকে? কার সাথে এত কথা বলে? একদিন কল রিসিভ করতেই,,,
.
আমি:- কি ব্যাপার? তোমাকে শুধু কল ওয়েটিং পাই কেন?
.
এমি:- আজিব তো! কল করার জন্য আমার ফ্রেন্ড আর আত্বীয় থাকতেই পারে।তাদের সাথে কথা বললে তো ফোন ওয়েটিং থাকবেই।
.
আমি:- তাই বলে এভাবে দিনের পর দিন ওয়েটিং!!! আর তুমি এমন হচ্ছো কেন? আমার কোনো খোঁজ খবর নাও না। কি হইছে তোমার?
.
এমি:- দেখো তারেক তোমাকে আমার আর ভাল লাগে না।
.
আমি:- মানে টা কি?
.
এমি:- মানে খুব সিম্পল আমি আরেকজন কে লাভ করি।
.
আমি:- মানে?এইসব কি বলছো?
.
এমি:- হ্যাঁ আমি যা বলছি ঠিক বলছি। তোমার আর্থিক অবস্থাও ভালো না। তোমার মা অন্যের বাসায় কাজ করে। তুমি রিকশা চালাও। তোমার সাথে আমার যায়না। আজকের পর থেকে আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেস্টা করবে না তুমি। ভালো থাকো। এই বলে ফোন টা কেটে দিয়ে আমার নাম্বার টা ব্ল্যাক লিস্ট করে দিল। অনেক কষ্ট পেলাম কথাগুলো শুনে। আল্লাহ কে বললাম; হে আল্লাহ এত দিন আমি কাকে লাভ করতাম! আজ তোমার নামে প্রতিজ্ঞা করলাম একদিন আমি খুব বড় মেজিস্ট্রেট হব।
.
তারপর কেটে গেলো দীর্ঘ অনেকটা বছর। এতদিনের কষ্টের বিনিময়ে আমার পরিশ্রম সার্থক হলো। হ্যাঁ আজ আমি সত্যি একজন খুব বড় মেজিস্ট্রেট হতে পেরেছি। ৩-৪ টা পোশাক শিল্প আছে আমার। নানান জায়গায় বাড়ি আছে। এখন আমি আর রিক্সা চালাই না। আমার নিজের অনেক গুলো গাড়ি আছে। তার মধ্য থেকে এখন একটা গাড়িতে চড়ে বাম পাশের সিটে আমার মা কে নিয়ে মায়ের আদেশে মেয়ে দেখতে যাচ্ছি বিয়ে করব বলে।
.
মেয়ের বাবাও আমাদের ঘর বাড়ি দেখে গেছে আমাকেও বেশ পছন্দ হয়েছে।
মেয়ের বাসায় যাবার পর মেয়ের বাবা মেয়েকে নিয়ে আসার জন্য বলল। মেয়েকে নিয়ে আসা হলো। ঘোমটা টা একটু উচু করতেই একি!!!
.
এ তো দেখছি এমি! ফারজানা আক্তার এমি।
আমি মেয়ের বাবাকে বলে অন্য একটি রুম এ গেলাম এমি কে নিয়ে। দুইজন কিছুক্ষন নিরবতার পর আমি বললাম
.
আমি:- এই যে চিনছো?
.
এমি:- উহুম।
.
আমি:- পছন্দ হয়েছে?
.
এমি:- তা কি আর বলতে হয়? আপনি হলেন একজন নামকরা মেজিস্ট্রেট।
.
আমি:- হুম। আমি সেই রিক্সা চালক তারেক। জাহিরুল ইসলাম তারেক। এইবার চিনছো?
.
এমি:- আরে তুমি? তুমি আজ.......
.
আমি:- হ্যাঁ আমি তারেক আজ একজন নামকরা মেজিস্ট্রেট।
.
এমি:- সরি তারেক আমাকে মাফ করে দাও।তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে আমি ভূল করে ছিলাম।
.
আমি:- না ভূল করোনি। সত্যিই তো আমি ছোটলোক। একজন রিকশাচালক। যে নিজেই তার ভরণ পোষণ চালাতে পারেনা অন্যের দায়িত্ব কি করে নিবে? তাই না? তা তোমার সেই আরেক প্রেমিক কোথায়? যার জন্য আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে?
.
এমি:- ও আমাকে ধোকা দিছে। ও আরেকটা মেয়েকে ভালোবাসে। ও একটা প্রতারক।
.
আমি:- দেখছো কি দূর্দশা আজ তোমার?
.
এমি:- প্লিজ তারেক আমাকে মাফ করে দাও(আমার হাত ধরে)।
.
আমি:- এ কি করছো? ছাড়ো আমাকে। তোমার মত মেয়ে কে আমি বিয়ে করতে চাই না।
.
এমি:- প্লিজ তারেক আমাকে মাফ করে দাও। আমি আমার ভূল স্বীকার করছি। তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে আমি ভূল করেছি। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।
আমাদের প্রিয়নবী (সাঃ) বলেছেন যে ব্যাক্তি তার ভুল বুঝতে পেরে মাফ চায় তখন তাকে মাফ করে দেওয়া উচিত। আমাকেও একবার সুযোগ দাও।
.
আমি:- মনে মনে ভাবলাম আসলেই তো সত্যি কথাটা।
তখন আমি আর দেরি না করে এমি কে বুকে জরিয়ে ধরে বললাম হুম হইছে এইবার বল,
.
আমি:- আর যাবা না তো আমাকে ছেড়ে?
.
এমি:- একদমই না।
.
আমি: পাশে থাকবে তো সারাজীবন ?
এমি: নিশ্চয়ই থাকব। আমি শুধু তোমার। এই বলে মেয়ে টা আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
.
আর কিছুদিন পর ই আমাদের বিয়ে হল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন