বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৭

শুরুতেই সমাপ্তি

আগে একটা সময় ছিল যখন পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙত।সকালে কুয়াশার অন্তরালে যখন সূর্যের রশ্মি আড়াল থেকে বের হত তখন মনে হতো এই সকালটাই সবচেয়ে সেরা সকাল। এর থেকে বেশি সুন্দর কোন সকাল হতে পারে না। কিন্তু এখন যান্ত্রিক সভ্যতার কষাঘাতে এসব ম্লান হয়ে গেছে। সকালে ঘুম ভাঙে এলার্মের কর্কশ শব্দে। বিরক্তিকর শব্দটা না চাইতেও শুনতে হয় প্রতিদিন।
.
তেমনি এক সকালে এলার্মের কর্কশ ধ্বনিতে ঘুম ভাঙ্গে রবিনের । ঘুমন্ত চোখে এলার্ম বন্ধ করে আবার শুতে চায় সে। কিন্তু এবার বেজে ওঠে অন্যরকম একটা ধ্বনি, বিরক্তিকর ভাব নিয়ে মোবাইল হাতে নে সে।
.
ঘুমেচোখে কলটা রিসিভ করেই কানের কাছে ফোন নিতেই ওপাশ থেকে তরাঙ্গারে ভেসে আসে এক পরিচিত বালিকার মধুমাখা কন্ঠস্বর,,,
.
-- বাহ্ নবাব এখন পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিস? (অহনা) 
-- হুম। তা এত সকাল সকাল কি মনে করে? (রবিন)
-- আগে বল কেমন আছিস্? 
-- খুব ভালো, তুই?
-- ভালো, তোকে একটা কথা বলার জন্য কল দিছি।
-- জানি তো, দরকার ছাড়ি কল দিবি কেন?
-- তোর না আমি টুট্টি ভেঙে দিমু।
-- টুট্টি কি?
-- টুট্টি ইজ সামথিং লাইক Leg।
-- তাই নাকি?
-- হুম
-- কি বলবি বল?
-- আগামী রবিবার আপুর বিয়ে তোকে আসতে হবে।
-- ওকে আসব। 
-- শনিবারে আসবি।
-- হুম 
-- এখন রাখছি।
-- ওকে
.
কথা হচ্ছিল অহনা আর রবিন এর মাঝে। খুব ভালো বন্ধু দুজনের। বন্ধু মহলের সবাই বলে অহনা মেয়েটা যতটা চঞ্চল রবিন ছেলেটা ততটাই বোকা। এরা যেন একে অন্যের পরিপূরক। বলা যায় একে অপরের ভারসাম্যের প্রতীক এরা দুজন। দুজনে একইসাথে অনার্স ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিছে ক'দিন হলো। সত্যিই বলতে অহনা মেয়েটা বেশ চঞ্চল। কিছুটা রাগি স্বভাবের। যার কারণে অহনাকে বেশ ভয় পায় রবিন।
.
নির্ধারিত দিনে হলুদ সন্ধ্যার আগে অহনাদের বাড়ি পৌঁছে যায় রবিন। সুন্দরী ললনা আর অচেনা একটা পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল রবিনের। হলুদ সন্ধ্যা শুরু হতে বেশ সময় বাকি।
.
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। কোন এক কারণে অহনাকে খুজতে ছাদে যায় রবিন। ছাদে এসে কয়েকটা মেয়েকে দেখতে পায় রবিন। তার মধ্যে একটা মেয়ের চেহারা অনেক মায়াবী। লাল রঙের ড্রেস পড়ে আছে মেয়েটা। লাল রংটা রবিনের খুব খারাপ লাগে। কিন্তু এখন এই রংটার প্রতি যেন শ্রদ্বাবোধ জেগে গেছে তার মাঝে।
.
অহনাকে ছাদে না পেয়ে নিচে নেমে আসে রবিন।কিন্তু কেন যেন লাল ড্রেস পড়া মেয়েটার চেহারা রবিনের চোখের সামনে ভাসতে থাকে। বলতে থাকে" সত্যিই মেয়েটা মায়াবী, মায়াপরী সে "।
.
হলুদ সন্ধ্যা অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। সবাই যার যার মতো করে সেজেছে। কিন্তু মেয়েটি সাজে নি। আগের ড্রেসটাই পরনে আছে।এতেই বেশ লাগছে মেয়েটিকে। রবিনের চোখ দুটো বার বার ছুটে চলেছে সেই মায়া পরীর পানে। বার বার চোখ ফিরিয়ে আনলেও চোখ দুটো চুম্বকের মতো আকর্ষন করছে মেয়েটির দিকে ।
.
হলুদ সন্ধ্যা শেষে মেয়েটিকে একটা জয়গায় একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে রবিন।তার মন চাইছে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটার সাথে কথা বলুক। বুকে সাহস নিয়ে মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় রবিন।মেয়েটা টের পেয়ে পাশে তাকালে রবিনকে দেখতে পায়। কিছু বলতে চাইছে রবিন, কিন্তু পারছে না। তাকে কেমন যেন বিচলিত দেখাচ্ছে। রবিনের এই অবস্থা দেখে মেয়েটা নিজে থেকেই কথা বলে রবিনের সাথে,,,
.
-- হাই? (মেয়েটা)
-- হুম, আপনি অহনার কে হোন? (রবিন)
-- আমি অহনার ফ্রেন্ড।
-- ওহ্ 
.
এমন সময় অর্নিলা নাম ধরে ডেকে অহনা এসে উপস্থিত হয়। রবিন মেয়েটার নামটা শুনে বেশ খুশি হয়। রবিন আর অর্নিলাকে একসাথে দেখে বেশ অবাক হয় অহনা। কোন মেয়ের সাথে কথা বলার মতো ছেলে না রবিন। মেয়েদের থেকে দূরে থাকাটা রবিনের পছন্দের। অথচ সে কি না অর্নিলার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সাতপাঁচ না ভেবে অহনা,,
.
-- ও আমার বন্ধু শাহরিয়ার আহনাফ রবিন (অহনা)
-- হাই (অর্নিলা)
-- হ্যালো (রবিন)
-- আর ও আমার বন্ধু অর্নিলা, অর্নিলা সেন (অহনা)
.
নামটা শুনেই এবার রবিন কিছু না বলেই চলে আসে ওখান থেকে। রবিনের হাঁসিমাখা মুখটা মুহূর্তের মধ্যে ফ্যাকাসে হয়ে যায় । রবিনের মাঝে জন্ম নেয়া সদ্য একটা ভালোবাসার ফুলকুঁড়ি নেতিয়ে পড়ে মাটিতে। অদৃশ্য একটা দেয়াল বাঁধা দেয় রবিনকে। যতক্ষন অহনাদের বাড়িতে ছিল একবারের জন্যও তাকায়নি আর মেয়েটির দিকে। কেননা, এ সমাজ তাদের মানবে না, মানবে না তাদের পরিবার। ধর্মের অদৃশ্য দেয়ালটার জন্য বিসর্জন দিতে হয় সদ্য জন্ম নেয়া ভালোবাসাকে। শুরুতেই সমাপ্তি ঘটে যায় রবিনেরর বুকে জন্ম নেয়া ভালোবাসার।
বুকের কোনে অপ্রকাশিত থেকে যায় একটি বালকের একরাশ ভালোবাসা। বালক কি পারবে সেই ভালোবাসা চেপে রাখতে? তাকে পারতেই হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন