শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

চুড়ি

আজ সকাল থেকেই বাসায়
সবাই কেন জানি নিরবতা পালন করতেছে।
আমি অবশ্য বাসায় রাত্রি বেলা থাকিনা।
যদিও জায়গার অভাব নাই।
ছোট থেকে এখন পর্যন্ত
দাদুর কাছে থাকতেই
পছন্দ করি।
তাই বুঝতে পারছিনা
বিষয় টা কি হয়েছে।
.
তো মাকে বললাম কি
হয়েছে আব্বুকে দেখিয়ে দিল।
আব্বুর দিকে এগিয়ে
যেতেই বলল
উপমাকে নিয়া মেলা থেকে
ঘুরে আয়।
আমি তো চুপ।
কারন মেয়ে মানুষ কে
সাথে নিয়া মেলায় গেলে
ফ্রেন্ডগুলা জ্বালিয়ে
মারবে।
গফ হলে ভাবি ডাকবে।
আর বোন হলে
শালাবাবু।
.
এইটা বুঝেছিলাম একটা আন্টি কে রাত্রিবেলা
কোচিং থেকে বাসায় পৌছাই দিতে গিয়ে |
উনি আমায় বলল একা যেতে একটু ভয় করতেছে।
আজ বাসা থেকেও কেউ আসে নাই তাই পৌছাই
দিতে।
রাস্তায়
বন্ধু নামের শত্রু গুলোর দেখা
দেখেই বলে দোস্ত ভাবি নিয়া রাত্রি বেলা ঘুরতেছ
অথচ পার্টি দাও নাই মিয়া ভাবিকে বাসায় রেখে
আস।
তারপর দেখাচ্ছি কত ধানে কত চাল।
আমি তো বোল্ট।
আন্টি তো মনে হয় লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
আরে আপনারা কি ভাবছেন।
আরে ভাই সর্বপ্রথম তারে
কেউ ভাবি বললো তো তাই আরকি বললাম।
যেই মুখটা তুললো দেখি রিনা খান লুক।
আমি আর আছি মার দৌড়।
সাথে ফ্রেন্ড|
পরে অবশ্য বলেছিলাম ওদের যে এনি আমার সম্পর্কে
আন্টি হয়|
.
তাই মেয়ে মানুষ নিয়া কোথাও যাইনা ঘুরতে।
-যাও ওকে নিয়া ঘুরে আসো মেলা থেকে।
এই নাও চাবি।
বাইক স্টার্ট দিয়ে বললাম পিচ্ছি উঠে বস।
(যদিও পিচ্ছিনা তবুও এই ডাকটা আদর করে দিতে
ভালই লাগে)
কিছুদুর যাওয়ার পর ওর বকবকানি শুরু হয়ে গেল।
.
-এই ভাইয়া
-বল
-ভাবিরে দেখাবিনা প্লিজ।
-কিরে এখনো বিয়া করলাম না ভাবি কোথায় পেলি।
-মিথ্যা বলবিনা কিন্তু বল দেখাবি কিনা।
-আর একটা এই বিষয়ে কথা বললে কাঁন ধরে নামাই
দিব।
-ওহ আচ্ছা তার মানে তুই দেখাবিনা।
-মানে...!
-কাল বিকালে ছাদে বসে জাদু,সোনা বলছিলি
দাঁড়া বাসায় গিয়া আব্বুকে বলি।
-আপু কিছু বলিস না।
তুই না আমার কিউট আপু।
-আচ্ছা যা বলবো না।
ভাবিকে মেলায় ডাক দে।
-এ রে আজ আমার মানি ব্যাগ ঘুরে আসবে কিন্তু
মানি আসবেনা।
আল্লাহ আমাকে বাঁচাও।
-কি বললি?
-নাতো কিছু বলি নাই।
-আচ্ছা চল।
.
অনেক আগেই ওর ভাবিকে ফোন দিয়া ডেকেছি।
ওকে চমকে দিব ভেবেছিলাম কিন্তু পরে
নিজে নিজে বলল।
গিয়া গেটেই দেখি মায়াবিনী দাড়িয়ে আছে।
পিচ্ছিতো দেখেই ভাবি আর নিজে একটা আমি
একাই একটা।
.
আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে মায়াবিনী হচ্ছে
আমার সিনিয়র।
আহ ভবিষৎতে সিনিয়র বউ পেতে যাচ্ছি।
হাত ধরে হাঁটতেছে
আমি যে পিছনে আছি
তার কোন খেয়াল নাই।
মনে মনে বলতেছি কোথাও যাবা যাও টাকা তো
আমার কাছে।
অনেক ঘুরলাম তিন জন মিলে।
.
এখন এরা বলল একটু কসমেটিক্স নিবে তাই গেলাম
পিছু পিছু।
দুঁল নিল।
এখন নিবে হাতের চুড়ি।
-দেখত ননদ তোমার এই নীল চুড়ি গুলা পছন্দ হয়কি না।
-ওয়াও ভাবি তোমার পছন্দ আছে দেখতেছি।
-তাহলে 4 সেট নাও।
-এই ভাইয়া টাকা দে।
-যা ভাগ নীল চুড়ি তোর নেওয়া হবে না।
এই মায়াবিনী তুমি 4 সেট নাও ওকে নীল চুড়ি নিয়ে
দিব না।
(সাথে সাথে ওকে একটু চোখ টিপ দিলাম যেন কিছু না
বলে)
না হয়তো আমার সাথেই ঝগড়া বাজিয়ে দিত এর
জন্য।
পাগলিটা আমার থেকেও মনে হয় আমার মা,বাবা
এবং পিচ্ছি টাকে ভালবাসে।তবুও নিয়ে দিতে বলল।
কিন্তু আমি দিলাম না।
.
-আচ্ছা আমার লাগবে না তোর টাকা এবং তোর নীল
চুড়ি।
তুই শুধু বাড়ি চল।
(সেই রাগ হয়েছে কারন ওর খুব পছন্দ নীল চুড়ি)
-এই চল বাসা যাই।
-আচ্ছা চলো।
আমাদের বাসার সামনে মায়াবিনী দের বাসা
পড়ে।
ওখানে নামাই দিলাম।
.
বাসায় আসার পর শুধু কিছু ভাঙ্গার আওয়াজ পাচ্ছি
আর কে জানি আমায় খুব বকতেছে।
গিয়ে দেখি পিচ্ছি টা
বলতেছে আমার আব্বু আম্মুর টাকা,তাদের বাড়ি
গাড়ি সব আর আমাকেই ভাব দেখায়।
দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
এখনো বেকার
একটা চাকুরি করে না এতো বড় হয়েছে।
আর আমাকে নীল চুড়ি নিয়া দেয়না।
(আজ বেকার বলে বকা খাই)
এই বলে হাতের কাছে যা ছিল তাই ছুড়ে মারতেছে
আমার পাশে।
.
পরক্ষনে মা এসে থামালো ওকে।
ওর রুমে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
সারাটা বিকেল আর দেখা পেলাম না।
নিজেকে খুব খারাপ লাগতেছে।
শেষ বিকালের দিকে ছাদে গেলাম গিয়ে দেখি
পিচ্ছিটা দাড়িয়ে আছে।
গিয়েই চোখ 2টা ধরলাম।
আর সাথে সাথে বলল শয়তান তুই আমারে পিচ্ছি
বলে ডাকবিনা।
আর আমায় ধরবিওনা কখনও।
কিছুক্ষন পর পিছন থেকে 2 সেট নীল চুড়ি ওর পাশে
বের করে দিলম।
তখন ওর আনন্দ টা দেখার মত ছিল।
বললাম তোর ভাবি দিয়েছে।
কারন কিছু কিছু মানুষের মাঝে ভালবাসা কখনও কমে
না।
আরও বৃদ্ধি পায়।
তেমনি ভাই বোনের ভালবাসা হাজার ঝগড়া হলেও
এটা অটুট থাকবে।
তাই ওকে বললাম মায়াবিনী দিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন