মো ফারাহ ৫ এবং ১০ কিলোমিটার এর অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী। তার সাথে পাল্লা দেওয়ার মতো মনে হয় আমরা একজনকে পেয়ে গেছি। পারভেজ নামের ছেলেটি অনেকক্ষণ ধরে দৌড়তাছে কোন বিরামছাড়া। তার গন্তব্য নতুন ভর্তি হওয়া কলেজ। তার বাসা থাইকা কলেজের দূরত্ব প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার। এই দূরত্ব টা সে দৌড়েই অতিক্রম করে ফেল্লো। কলেজ গেটের সামনে এসে সে হাপাতে লাগলো। গেটে দাঁড়ানো দায়িত্বরত ব্যক্তি তাকে তার আইডি কার্ড দিতে বল্লো। সে মনে করছিলো কোন আইডি কার্ড লাগবে না কারণ কলেজে ডুকতে আবার আইডি কার্ড কিসের!!! সে হাপাতে হাপাতেই আইডি কার্ড দেখিয়ে কলেজে প্রবেশ করলো। কলেজে প্রবেশ করে তো সে হতবাক কারণ কলেজে কোন লোকজন নাই। আজকে তাদের কলেজ জীবনের প্রথম দিন অর্থাৎ তাদের অরিয়েন্টেশন ক্লাস আর কোন মানুষ নাই কলেজে!! তার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে নিজেই হতবাক হয়ে গেলো কারণ ক্লাস ৯.৪৫ এ আর কলেজে আসছে ১০.৫৭ তে। সে কোন রুমে যাবে? কোনদিকে যাবে কিছুই বুঝতেছিলো না। সে হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে ছিলো আর তার শার্ট প্রায় সম্পূর্ণ টাই ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিলো। হঠাৎ একটা কন্ঠস্বর তার কানে আসে। -এই ছেলে এই জায়গায় এখন কি করতাছো?
সে পিছনে ঘুরে বুঝতে পারে উনি নিশ্চয় তাদের শিক্ষক হবেন।
-স্যার,আমার আসতে দেরি হইয়া গেছে। এখন কোন রুমে যাবো বুঝতাছি না।
-আজকে কলেজের প্রথমদিন আর আজকেই দেরি করে আসছো! তোমাদের দিয়ে কি যে হবে? এইটা বুঝতে পারতেছি না। কোন গ্রুপ?
-স্যার, সাইন্স। আর এইরকম হবে না স্যার।
-আচ্ছা ঠিক আছে। দ্রুত ১১৯ নম্বর রুমে যাও। সামনের বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলার ৩য় রুম। দৌড় দেও!!
-ধন্যবাদ স্যার।
স্যারকে ধন্যবাদ দিয়েই সে তার কাঙ্ক্ষিত রুমের দিকে দৌড় দিলো। এতটা রাস্তা দৌড়ে আসার পরোও তার যেন কোন ক্লান্তিবোধ নেই। সে আরামছে দৌড়ে তার নির্দিষ্ট রুমে চলে গেলো।
.
যে রুমে তাদের ওরিয়েন্টশন ক্লাস হচ্ছিলো সেই রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। ক্লাসরুম ছেলে মেয়েতে ঠাসা এবং সামনে স্যার এবং ম্যামরা দাঁড়িয়ে আছেন। সে একটু ইতস্তত করে ভিতরে আসার অনুমতি চাইলো।
-স্যার, আসতে পারি?
-আরে এত দেরি করছো কেন তুমি!! তাড়াতাড়ি আসো।
সে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে দেখে কোন বেঞ্চই খালি নেই। বেঞ্চের তিনটা সারি এরমধ্যে বামের এবং মাঝের টাতে ছেলেরা বসছে। আর ডানপাশের টাতে মেয়েরা বসছে। সে মাঝের সারির একদম পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসল। রুমটা মোটামুটি বড়ই ছিলো কিন্তু সে তুলনায় বেঞ্চ কয়েকটা কম ছিলো। যাইহোক, আজকে তার যেহেতু কলেজের প্রথম দিন তাই সে স্বাভাবিকভাবেই খুব উল্লসিত ছিলো। এত স্বাদের কলেজে আসতে পেরে সে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করতেছিলো। তার পাশের বেঞ্চে যে মেয়েগুলো বসছিলো তারা সবাই আগে থেকেই কথাবার্তা, হাসাহাসি করতেছিলো। তার বুঝার বাকি রইলো না যে তারা পূর্বপরিচিত। ঐ বেঞ্চের একটা মেয়ে তাকে তার নাম জিজ্ঞাস করলো।
-এই ছেলে তোমার নাম কি?
সে কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ রইলো। ঐ মেয়েটা, অন্যদেরকে তখন বলতে লাগলো
-কিরে! বয়রা না বোবা। কথা বলে না কেন?
সে আবারো যখন জিজ্ঞাস করলো তখন পারভেজ জবাব দিলো।
-জ্বি, আমি পারভেজ। আমাকে কিছু বলছিলেন নাকি?
-না এখনো তো কিছু বলি নাই।
-না, বয়রা! বোবা! এই শব্দগুলো শুনলাম তো তাই জিজ্ঞাস করলাম।
-ওহ, আচ্ছা। আপনাকে দুইবার প্রশ্ন করতে হইছে তো তাই!!
-তারমানে কি আমি বয়রা!! দুইবার করতে কে বলছিলো?
-বয়রা রা তো কানে শুনে না কিন্তু আপনি তো সব শুনতে পান। তাই আপনি বয়রা না। বলে নাই কেউ তবে প্রথমবারই তো উত্তর টা দেওয়া যাইতো!!
-হুম্ম,যাইতো। আমার ইচ্ছা হইছে তাই দেই নাই।
-আপনার ইচ্ছা তো খুবই উন্নত। আপনি কি ভাব নিতাছেন নাকি?
-ভাব নেওয়ার কি আছে! আপনি কে যে আপনার সাথে ভাব নিতে হইবো?
-সমস্যা কি আপনার? আপনি গায়ে পইরা ঝগড়া করবেন নাকি!!
-আমি আবার গায়ে পড়লাম কিভাবে? আমাদের মধ্যে এখনও প্রায় ২ফুট দূরত্ব। তাছাড়া আপনিই প্রথম কথাবলা শুরু করছিলেন।
মেয়েটা কিছু বলতে যাবে কিন্তু তখনই মাইক থেকে আওয়াজ আসা শুরু হইলো। তাই সে আর কিছু বলতে পারে নাই। কিন্তু রাগে তার মুখ লাল হয়ে গেছিলোএবং সে গজগজ করতেছিলো। পারভেজ মনে হয় এইবারের মতো বেচে গেছে। সে মনে মনে নিজেকে বীরপুরুষ মনে করতেছিলো।
.
স্যার এবং ম্যাম রা তখন রীতিনুযায়ী তাদের কথাবার্তা শুরু করেন। কলেজের অধ্যক্ষ স্যার,উপাধ্যক্ষ স্যার, তাদের ক্লাস টিচারগণ,তাদের গাইড টিচার,অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকগণ এবং তাদের কলেজ পরিচালনা কমিঠির সদস্যগণ নিজ নিজ আসন নিয়ে বসলেন। উনারা তাদের উদ্দেশ্য করে খুবই চমৎকার কথা বল্লেন। তাদেরকে অনেক দিকনির্দেশনা দিলেন ভবিষ্যৎ এর জন্য। তারা কিভাবে কলেজ জীবনে উন্নতি করতে পারবে, কলেজ জীবনে করণীয় বিভিন্ন জিনিস ইত্যাদি নিয়ে তারা সবাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করলেন। ঐদিনের মতো সে কলেজ থেকে বাসায় ফিরে আসে।
.
পারভেজ প্রতিদিনই কলেজে যায়। কলেজের প্রথম বেঞ্চমটা তার জন্য একদম নির্ধারিত মনে হয়। কলেজের ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্তই সেই একমাত্র প্রাণী যে টানা ফার্স্ট বেঞ্চে বসছে। স্যার-ম্যাম দের সাথেও তার সম্পর্ক ভালো। তারা প্রশ্ন করার সাথে সাথেই উত্তর দিয়ে দেয়। কলেজের পরীক্ষাগুলোতেও সে ভালো নাম্বার পায়। তাছাড়া, সে দেখতেও খারাপ না। স্বাভাবিকভাবেই এইজন্য প্রত্যেকটা মেয়েই তার সাথে কথা বলতে চায়। তার সাথে ভাব জমাতে চায় কিন্তু সে মেয়েদেরকে তেমন পাত্তা দেয় না। ওরিয়েন্টশন ক্লাসের সেই মেয়েটাও এখন পারভেজের সাথে কথা বলে। তারা দুজনই রসায়ন এবং ম্যাথ প্রাইভেট একসাথে পড়ে। এইকারণে কলেজের ছুটি হইলে স্যারের বাসা পর্যন্ত তারা একসাথেই যায়। যদিও তখন তাদের সাথে আরো অনেকেই থাকে। কিন্তু ঐ মেয়েটা পারভেজের প্রতি তার দূর্বলতা দেখায়। মেয়েটা প্রথম প্রথম কলেজে তেমন আসতো না কিন্তু এখন নিয়মিতই আসে। রসায়ন এবং ম্যাথ প্রাইভেট শুরু করার পর আর কলেজ মিস দেয় নাই। কারণ এইদুইটা প্রাইভেটে যে তারসাথে পারভেজ থাকে। যাইহোক, পারভেজ তার সাথে এখন স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে। এখন তাদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়েই কথা হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তারা দেশ-আন্তর্জাতিক এর বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আলাপ করে। মেয়েটা যদিও পরীক্ষায় বা ক্লাসে তেমন ভালো ছাত্রী না তবুও সে অনেক কিছুই জানে।
.
ঐদিন রসায়ন প্রাইভেটে স্যার জৈব যৌগ পড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ স্যার প্রশ্ন করে বসলেন
-এই সাথী। আমি কি বল্লাম একটু আগে?
-স্যার,স্টেরিও সমাণুতা কি এবং তা কয়প্রকার?
-স্টেরিও সমাণুতা সম্বন্ধে কি বল্লাম বলো তো?
-(আমতা আমতা করে) যে সমাণুতা স্টেরল জাতীয় কণার মধ্যে প্রকটভাবে দেখা যায় তাকেই স্টেরিও সমাণুতা বলে।
-সুন্দর উত্তর। এইবার বলো স্টেরিও সমাণুতা কয়প্রকার?
-৩ প্রকার।
-কি কি বলো?
-টটোমারিজম, মেটামারিজম, অবস্থান সমাণুতা।
-তা তুমি যে সংজ্ঞা দিলে এবং কয় প্রকার বল্লে তা বইয়ের কোথায় আছে তা বের করে দেখাও!!
সাথী অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার দেওয়া সংজ্ঞাটা বইয়ে ফেলো না। আর প্রকারভেদও ভুল বলেছিলো।
-কি হলো!! বইয়ের কোন পৃষ্ঠায় আছে তা আমাদের সবাইকে দেখাও।
-সরি স্যার। আমি ভুল বলছি। এইটা বইয়ের কোথাও নেই।
-ভুল বলো কেন!! লেকচার দেওয়ার সময় কোথায় থাকো?? আর এইগুলো তো গত লেকচারের পড়া। তবুও ভুল বলছো কেন?
-স্যার। ঐদিনের পড়াগুলো ভালোভাবে বুঝছিলাম না তাই ভুলে গেছি।
-বুঝছো না। তাইলে আজকে আইসা বল্লা না কেন?
-ভুল হইয়া গেছে স্যার।
-এইরকম ভুল হইলে পড়ালেখা বাদ দিয়া দেও। বাসায় থেকে তোমার মাকে কাজে সহায়তা করলেই পারো।
-আর এইরকম হবে না স্যার।
-না হলেই ভালো। হইলে বাসায় আমি জানাবো। আচ্ছা বসো।
যে মেয়েটার কথা এতক্ষণ বলতেছিলাম তার নামই সাথী। স্যারের লেকচারের সময় সে পারভেজ কে নিয়ে চিন্তামগ্ন ছিলো। তাই সে স্যারের লেকচার এর প্রতি মনোযোগ দিতে পারতেছিলো না।
.
প্রাইভেট শেষ হওয়ার পরে পারভেজ ও সাথী যখন বাসার দিকে ফিরতে ছিলো। পারভেজ তার এই অন্যমনস্কতা সম্বন্ধে জানতে চাইলো
- প্রাইভেটে কই আছিলি? স্যার পড়াইলো একটা আর বল্লি আরেকটা!!!
-না একটা বিষয় নিয়ে চিন্তায় আছিলাম।
-কি বিষয়?
- তেমন কিছু না।
-দুইদিন পরে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা আর এখন কিসব চিন্তা করস পড়ালেখা বাদ দিয়া??
-আরে বাদ দে তো।
-বাদ দিবো কেন? তুই সমাণুতা বুঝস নাই এইটা আমাকে বল্লেই হইতো। আমি বুঝাইয়া দিতাম।
-তোর কি মাস্টার হওয়ার খুব ইচ্ছা নাকি?
-মাস্টার হওয়ার কি আছে! আজকে যে আ্যারোম্যাটিসিটি পড়াইলো স্যার। এইটাও তো মনে হয় কিছুই বুঝস নাই।
-না বুঝার কি আছে। স্যার বাংলায় বলছে, বইয়ের বাংলা লিখা এবং আমিও বাঙ্গালী।
-তাইলে আমারে বুঝাইয়া দে। আমি আবার বাংলা কম পাড়ি।
-তাহলে বুঝানো যাবে না।
-বুঝস নাই এইটা বল। প্রাইভেটে যখন থাকস তখন তোর মনোযোগ কই থাকে?
-জানি না।
-জানবা কি কইরা!!যাইহোক, কালকে আমি বুঝাইয়া দিমু নে। এখন বাসায় গিয়ে পড়তে বসগা।
-এখন তো বাসাতেই যামু।
-হুম্ম আমি তাই বল্লাম। তবে পড়তে বসার জন্যও বলছি।
পারভেজ ও সাথী নিজ নিজ বাসায় চলে যায়।
.
পারভেজ তার কঠোর পরিশ্রম, মেধা,ভাগ্যের সহায়তা সবকিছুর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইন্টারমিডিয়েট এ গোল্ডেন পায়। তার বাঁধভাঙা উল্লাস দেখে কে!! কিন্তু সামনে এডমিশন এই নিয়ে সে চিন্তায় পড়ে যায়। অন্যদিকে, সাথী নরমাল প্লাস পায়। এইটা নিয়েই সে খুব খুশি কারণ তার তো প্লাস পাওয়ারই কথা ছিলো না। তার রিজাল্ট দেখার আগেই সে পারভেজের রিজাল্ট দেখে। এবং পারভেজকে রিজাল্ট প্রকাশের পরে সেই প্রথম ফোন দেয়। যাইহোক, তারা দুইজন দুই জায়গায় কোচিং করে। পারভেজ মেডিকেলের কোচিং করে। আর সাথী পদার্থ অনেক ভালো পারে তাই সে ভার্সিটি কোচিং করে। পারভেজ তার পড়ার এত চাপ থাকা সত্ত্বেও সাথীর পড়ালেখার খোঁজখবর নেয়। তারা সপ্তাহে একদিন দেখা করে অল্প কিছুক্ষণের জন্য। দেখা করেই পারভেজ, সাথীকে পড়ালেখা সম্বন্ধে বিভিন্ন কথা বলে। যদিও সাথীর এইগুলো ভালো লাগে না। তবুও পারভেজ এর কথা শুনার জন্যই সে শুধু কিছু বলে না। দেখতে দেখতে তাদের এডমিশন টেস্ট এসে পড়ে। পারভেজ যথারীতি মেডিকেলে চান্স পায়। তার এই চান্সে মনে হয় তার থেকেও সাথী বেশি খুশি হয়। অন্যদিকে, সাথী হাবিপ্রবি তে পর্দাথ তে চান্স পায়। যেহেতু সাথী দিনাজপুর থাকবে তাই পারভেজ ও কিভাবে জানি দিনাজপুর মেডিকেলে চলে গেলো। তারা দুইজন দুই জায়গায় থাকলেও সপ্তাহে ২ বা ৩ দেখা করতো তারা।
.
পারভেজ প্রতিদিন কি কি করলো তার সবকিছুই সাথীকে বলতো। সাথীও তার সবকিছুই বলতো। কেউই কারো কাছেই কিছু গোপন রাখতো না। সাথীর একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ছিলো। তাই কলেজ জীবন থেকেই একটা অঘোষিত নিয়ম ছিলো, যে পারভেজ তাকে প্রতিদিন সকালে কল দিয়ে Good Morning বলবে। অন্যদিকে সাথী প্রতিদিন রাত ১২.০১ বাজার সাথেই পারভেজকে কল দিয়ে Good Night বলতো। যদিও তখন তারা ফেসুবকে চ্যাটিংরত থাকতো তবুও কল দিতেই হবে। তাদের এই নিয়ম ভার্সিটি জীবনেও চলমান ছিলো। সাথী যদিও পারভেজকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলো। তবুও সে পারভেজকে এই বিষয়ে কিছুই বলে নাই কোনদিন। অন্যদিকে, পারভেজ সারাদিন পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত। এইসব প্রেম-ভালোবাসার প্রতি তার কোন অনুভূতিই ছিলো না। ভার্সিটি লাইফে একটা মেয়ের সিঙ্গেল থাকা মোটামুটি যুদ্ধ করার মতো। চারপাশ থেকে কত অফার আসে। কিন্তু সাথী এইসব অফার উপেক্ষা করেই চলতো সবসময় কারণ পারভেজকে সে অনেক ভালোবাসতো। দেখতে দেখতে পারভেজ ও সাথী দুইজনেরই পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়। পারভেজ যথারীতি বিসিএসেও চান্স পেয়ে যায়। অন্যদিকে সাথী বিসিএসের ভাইভাতে বাদ পড়ে যায়। পারভেজের পোস্টিং হয় সিলেটে অন্যদিকে সাথী তখন তার বাসায় চলে আসে। পারভেজের পীড়াপীড়ি তে সে আবারো বই নিয়ে বসে বিসিএসের জন্য।
.
পারভেজ তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে সাথীকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানায়। সে সাথীকে একটা সারপ্রাইজ দিবে বলে। সাথী সারপ্রাইজের কথা শুনে অধীর আগ্রহ নিয়ে থাকে। সে মনে করে আজকে নিশ্চয়ই পারভেজ তাকে ভালোবাসার কথা বলবে।
যথাসময়ে সাথী উপস্থিত হয় এবং দেখে পারভেজ বসে রইছে। পারভেজ তাকে দেখেই কফির অর্ডার দেয়। সাথী ঘুরেফিরে বারবার সারপ্রাইজের প্রসঙ্গটা টেনে নিয়ে আসে। পারভেজ তাকে আশ্বস্ত করে যে সারপ্রাইজের জন্য আর অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। ঐদিনের সন্ধ্যা ৭.৩৩ ছিলো সাথীর জীবনের সবচেয়ে বাজে সময়। কারণ পারভেজ তার হবু বউ তুলির সাথে সাথীর পরিচয় করিয়ে দেয়। তুলি রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করা মাত্রই পারভেজ বলে উঠে
-এইযে আমার সেই কাঙ্ক্ষিত সারপ্রাইজ। যারজন্য তোকে আধ ঘন্টা ধরে বসিয়ে রেখেছি।
-কই কিসের সারপ্রাইজ। আমি তো কিছুই দেখতে পাইতেছি না।
ততক্ষণে তুলি তাদের টেবিলের সামনে এসে দাড়ায়। পারভেজ তাকে বসতে বলেই সাথীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠে
-তুই কানা হইছস কবে থাইকা! দেখি তোর চোখ দেখি। সামনে একটা আস্ত জ্বলজ্যান্ত মানুষ দেখে তুই বলতাছস তুই কিছুই দেখতাছস না!!!
-কি দেখবো? আমার সামনে তো তুই আর তুলি। তোরা সারপ্রাইজ হইলি কেমনে??
তখন তুলি পারভেজের কাধে মাথা রেখে বলে উঠলো।
-আমি বিষয়টা ক্লিয়ার করতেছি। পারভেজের আব্বা-আম্মা এবং আমার আব্বু-আম্মু আমাদের বিয়ে ঠিক করছেন।
-তোদের বিয়া আর আমি কিছুই জানলাম না। (সাথী)
-আরে বিয়ের আলাপই তো হইছে ৩দিন আগে। তোকে বলবো কোনসময়?? (পারভেজ)
-ওহ,আমাকে বলবা কেন। আমি কোথাকার কে? (সাথী)
-আরে রাগ করিস না। সারপ্রাইজ দিবো বলেই তো ঐদিন বলি নাই। (পারভেজ)
-হুম্ম,, তুই তো আমাকে কলেজ লাইফ থেকেই একেরপর এক সারপ্রাইজ দিয়া আসতাছস। তোরজন্যই তো আমার এই পর্যন্ত আসা। তা কিভাবে তোরা দুইজন জোড়া বাধলি তা কিন্তু বল্লে না। (সাথী)
-আর বলিস না। তুলিকে আমার আগে থেকেই ভালো লাগতো কিন্তু বলার সাহস পাইতাম না। কিনা কি মনে করে!! আর,লজ্জায় তোকেও বলতে পারি নাই। (পারভেজ)
-তাইলে বিয়ে পাকাপাকি কিভাবে হলো? (সাথী)
-আর বলিস না। তুলির আব্বু আর আমার আব্বা পূর্বপরিচিত ছিলো ঐসুবাধে!! (পারভেজ)
-ওহ তাই বল। আমিও তো বলি, আমি কিছুই জানি না তবুও কিভাবে এতকিছু। যাইহোক,, তোদের আগত জীবন সুখের হোক আমি এই দু'আ করি। আর, তোরে শায়েস্তা করার টিপস আমি তুলিরে দিয়া দিবো কেমন? (সাথী)
-তুই আর আমারে শান্তিতে থাকতে দিবি না। (পারভেজ)
-দেরি করতাছস কেন? এখনই শিখাইয়া দে। বিয়ের কথাবার্তার পর থাইকা আমারে জ্বালাইয়া মারতাছে। একটু পরে পরে কল দেয়। সারাদিন আলাপ করতে হবে তার। ঐদিকে রোগী কে দেখবে? (তুলি)
-এখনই এইসব!! বিয়ের পরে তো বউয়ের আচল ছাড়া কিছুই চিনবি না। (সাথী)
-বাদ দে এইসব। সারপ্রাইজ কেমন লাগলো। (পারভেজ)
-দোস্ত,একেবারে পাঠাইয়া দিসস। (সাথী)
আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে তারা চলে গেলো। তুলি,তাদের সাথেই কলেজে পড়তো। সাথীর ধৈর্যের প্রশংসা করতে হয়। সে বুঝতেই দিলো না যে পারভেজকে কত ভালোবাসতো সে। কি স্বাভাবিকভাবে সে কথা বল্লো তাদের সাথে!! তার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও বের হলো না। ঐদিন সাথী রাতে আর ঘুমাইতে পারলো না। সারারাত পারভেজের সাথে তার করা চ্যাটিংগুলো দেখলো। তাকে দেওয়া পারভেজের গিফটগুলো দেখলো।
.
দেখতে দেখতে পারভেজের বিয়ের দিন উপস্থিত হয়ে গেলো এবং বিয়েও হয়ে গেলো। সাথী স্বাভাবিকভাবেই বিয়েতে অনেক আনন্দমজা করলো। যা দেখে কেউই বুঝতে পারবে না যে তার মনের ভিতরে কি চলছিলো!!! নিউটনের সূত্রের বাস্তব ব্যাখ্যা সে নিজেই হয়ে গেছিলো। তার নিউরনগুলো কি পরিমাণ এনজাইম নিঃসরণ করছিলো। তার হৃৎপিন্ডে কি সঠিকভাবে অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর আদানপ্রদান হচ্ছিলো কিনা!!! এইসব বিষয় সম্বন্ধে কেউই কিছু জানতে পারলো না। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে সাথী বাস্তবায় ফিরে আসলো। সে যে পারভেজকে ভালোবাসতো তা মনে করতে লাগলো। সে ঐদিন রুমের দরজা বন্ধ করে অনবরত কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাও টের পেলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আবারো পারভেজের বিয়ের কথা মনে পড়লো তার। তাকে পারভেজ অনেক বই উপহার হিসাবে দিতো। শেক্সপিয়রের সেই বিখ্যাত "হেমলেট" নাটক টাও সে উপহার হিসাবে পেয়েছিলো। সে এই বইটা বের করে তা দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ একটা অস্ফুট চিৎকার দিয়ে নিচে ঢলে পড়ে সে। তার এই চিৎকার সে ছাড়া আর কেউই শুনতে পেলো না। সকাল শেষ হয়ে সূর্য মধ্যগগনে নাচানাচি করছিলো। কিন্তু সাথী এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই। তাই তার আম্মু কয়েকবার তাকে ডাকলো। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তার মোবাইলে কল দিলো। কিন্তু ফোন অফ পেয়ে তার আম্মা,আব্বা,ভাই,বোন সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো। আরেকদফা তারা সবাই ডাকাডাকি করলো কিন্তু কাজ হলো না। পরে তারা দরজা ভেঙ্গে দেখতে পেলো সাথী ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তার আম্মা তখনই পারভেজকে কল দিয়ে সব বল্লো। পারভেজ দ্রুত তাদের বাসায় এসে উপস্থিত হলো। পারভেজও অনেকবার ট্রাই করছিলো কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিলো।
তারা দ্রুত সাথীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
কর্তব্যরত ডাক্তার অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করে বল্লো তার মস্তিষ্ক কোন এক অজানা কারণে অচল হয়ে পড়েছে। পারভেজ একজন সাইক্রিয়াটিস্ট হিসাবে পরীক্ষা করার সময় সাথীর পাশেই ছিলো। সে কোনভাবেই বুঝতে পারলো না, সাথীর এই অবস্থা কেন হলো? সাথীর সাথে কি এমন হইছিলো যে হঠাৎ করে সে মস্তিষ্কে এতবড় আঘাত ফেলো!! পারভেজ, সাথীর পরিবারের সবার সাথেই কথা বল্লো কিন্তু উপযুক্ত কোন কারণ খুঁজে ফেলো না। সাথীর ল্যারিঞ্জিয়াল,স্পাইনাল আ্যাক্সেসরী স্নায়ুগুলো কেন হঠাৎ করে অসাড় হয়ে পড়লো। তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলো না পারভেজ!! সাথীর থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালাস কেন স্তব্ধ হয়ে গেলো!!! সাথী এখন কোন কথা বলতে পারে না। শুধু চেয়ে থাকে!!!
পারভেজ এইসব রহস্যের সমাধান খুঁজার জন্য সাথীর রুমে প্রবেশ করলো। সম্পূর্ণ রুম তন্নতন্ন করে খুঁজাখুঁজির পরেও কোন তথ্য বের করতে পারলো না।
সে জানতেই পারলো না, তারজন্য সাথী আজ নির্বাক হয়ে গেছে। চলচ্চিত্র ইতিহাসের প্রথমযুগের মতো এখন সাথী একটা নির্বাক প্রাণী বৈ অন্যকিছুই না।
যদিও সাথীর মস্তিষ্কে ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানার কারণে তার সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেলো। কিন্তু এই প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস পারভেজের নাগাল ফেলো না।
সে পিছনে ঘুরে বুঝতে পারে উনি নিশ্চয় তাদের শিক্ষক হবেন।
-স্যার,আমার আসতে দেরি হইয়া গেছে। এখন কোন রুমে যাবো বুঝতাছি না।
-আজকে কলেজের প্রথমদিন আর আজকেই দেরি করে আসছো! তোমাদের দিয়ে কি যে হবে? এইটা বুঝতে পারতেছি না। কোন গ্রুপ?
-স্যার, সাইন্স। আর এইরকম হবে না স্যার।
-আচ্ছা ঠিক আছে। দ্রুত ১১৯ নম্বর রুমে যাও। সামনের বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলার ৩য় রুম। দৌড় দেও!!
-ধন্যবাদ স্যার।
স্যারকে ধন্যবাদ দিয়েই সে তার কাঙ্ক্ষিত রুমের দিকে দৌড় দিলো। এতটা রাস্তা দৌড়ে আসার পরোও তার যেন কোন ক্লান্তিবোধ নেই। সে আরামছে দৌড়ে তার নির্দিষ্ট রুমে চলে গেলো।
.
যে রুমে তাদের ওরিয়েন্টশন ক্লাস হচ্ছিলো সেই রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। ক্লাসরুম ছেলে মেয়েতে ঠাসা এবং সামনে স্যার এবং ম্যামরা দাঁড়িয়ে আছেন। সে একটু ইতস্তত করে ভিতরে আসার অনুমতি চাইলো।
-স্যার, আসতে পারি?
-আরে এত দেরি করছো কেন তুমি!! তাড়াতাড়ি আসো।
সে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে দেখে কোন বেঞ্চই খালি নেই। বেঞ্চের তিনটা সারি এরমধ্যে বামের এবং মাঝের টাতে ছেলেরা বসছে। আর ডানপাশের টাতে মেয়েরা বসছে। সে মাঝের সারির একদম পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসল। রুমটা মোটামুটি বড়ই ছিলো কিন্তু সে তুলনায় বেঞ্চ কয়েকটা কম ছিলো। যাইহোক, আজকে তার যেহেতু কলেজের প্রথম দিন তাই সে স্বাভাবিকভাবেই খুব উল্লসিত ছিলো। এত স্বাদের কলেজে আসতে পেরে সে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করতেছিলো। তার পাশের বেঞ্চে যে মেয়েগুলো বসছিলো তারা সবাই আগে থেকেই কথাবার্তা, হাসাহাসি করতেছিলো। তার বুঝার বাকি রইলো না যে তারা পূর্বপরিচিত। ঐ বেঞ্চের একটা মেয়ে তাকে তার নাম জিজ্ঞাস করলো।
-এই ছেলে তোমার নাম কি?
সে কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ রইলো। ঐ মেয়েটা, অন্যদেরকে তখন বলতে লাগলো
-কিরে! বয়রা না বোবা। কথা বলে না কেন?
সে আবারো যখন জিজ্ঞাস করলো তখন পারভেজ জবাব দিলো।
-জ্বি, আমি পারভেজ। আমাকে কিছু বলছিলেন নাকি?
-না এখনো তো কিছু বলি নাই।
-না, বয়রা! বোবা! এই শব্দগুলো শুনলাম তো তাই জিজ্ঞাস করলাম।
-ওহ, আচ্ছা। আপনাকে দুইবার প্রশ্ন করতে হইছে তো তাই!!
-তারমানে কি আমি বয়রা!! দুইবার করতে কে বলছিলো?
-বয়রা রা তো কানে শুনে না কিন্তু আপনি তো সব শুনতে পান। তাই আপনি বয়রা না। বলে নাই কেউ তবে প্রথমবারই তো উত্তর টা দেওয়া যাইতো!!
-হুম্ম,যাইতো। আমার ইচ্ছা হইছে তাই দেই নাই।
-আপনার ইচ্ছা তো খুবই উন্নত। আপনি কি ভাব নিতাছেন নাকি?
-ভাব নেওয়ার কি আছে! আপনি কে যে আপনার সাথে ভাব নিতে হইবো?
-সমস্যা কি আপনার? আপনি গায়ে পইরা ঝগড়া করবেন নাকি!!
-আমি আবার গায়ে পড়লাম কিভাবে? আমাদের মধ্যে এখনও প্রায় ২ফুট দূরত্ব। তাছাড়া আপনিই প্রথম কথাবলা শুরু করছিলেন।
মেয়েটা কিছু বলতে যাবে কিন্তু তখনই মাইক থেকে আওয়াজ আসা শুরু হইলো। তাই সে আর কিছু বলতে পারে নাই। কিন্তু রাগে তার মুখ লাল হয়ে গেছিলোএবং সে গজগজ করতেছিলো। পারভেজ মনে হয় এইবারের মতো বেচে গেছে। সে মনে মনে নিজেকে বীরপুরুষ মনে করতেছিলো।
.
স্যার এবং ম্যাম রা তখন রীতিনুযায়ী তাদের কথাবার্তা শুরু করেন। কলেজের অধ্যক্ষ স্যার,উপাধ্যক্ষ স্যার, তাদের ক্লাস টিচারগণ,তাদের গাইড টিচার,অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকগণ এবং তাদের কলেজ পরিচালনা কমিঠির সদস্যগণ নিজ নিজ আসন নিয়ে বসলেন। উনারা তাদের উদ্দেশ্য করে খুবই চমৎকার কথা বল্লেন। তাদেরকে অনেক দিকনির্দেশনা দিলেন ভবিষ্যৎ এর জন্য। তারা কিভাবে কলেজ জীবনে উন্নতি করতে পারবে, কলেজ জীবনে করণীয় বিভিন্ন জিনিস ইত্যাদি নিয়ে তারা সবাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করলেন। ঐদিনের মতো সে কলেজ থেকে বাসায় ফিরে আসে।
.
পারভেজ প্রতিদিনই কলেজে যায়। কলেজের প্রথম বেঞ্চমটা তার জন্য একদম নির্ধারিত মনে হয়। কলেজের ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্তই সেই একমাত্র প্রাণী যে টানা ফার্স্ট বেঞ্চে বসছে। স্যার-ম্যাম দের সাথেও তার সম্পর্ক ভালো। তারা প্রশ্ন করার সাথে সাথেই উত্তর দিয়ে দেয়। কলেজের পরীক্ষাগুলোতেও সে ভালো নাম্বার পায়। তাছাড়া, সে দেখতেও খারাপ না। স্বাভাবিকভাবেই এইজন্য প্রত্যেকটা মেয়েই তার সাথে কথা বলতে চায়। তার সাথে ভাব জমাতে চায় কিন্তু সে মেয়েদেরকে তেমন পাত্তা দেয় না। ওরিয়েন্টশন ক্লাসের সেই মেয়েটাও এখন পারভেজের সাথে কথা বলে। তারা দুজনই রসায়ন এবং ম্যাথ প্রাইভেট একসাথে পড়ে। এইকারণে কলেজের ছুটি হইলে স্যারের বাসা পর্যন্ত তারা একসাথেই যায়। যদিও তখন তাদের সাথে আরো অনেকেই থাকে। কিন্তু ঐ মেয়েটা পারভেজের প্রতি তার দূর্বলতা দেখায়। মেয়েটা প্রথম প্রথম কলেজে তেমন আসতো না কিন্তু এখন নিয়মিতই আসে। রসায়ন এবং ম্যাথ প্রাইভেট শুরু করার পর আর কলেজ মিস দেয় নাই। কারণ এইদুইটা প্রাইভেটে যে তারসাথে পারভেজ থাকে। যাইহোক, পারভেজ তার সাথে এখন স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে। এখন তাদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়েই কথা হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তারা দেশ-আন্তর্জাতিক এর বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আলাপ করে। মেয়েটা যদিও পরীক্ষায় বা ক্লাসে তেমন ভালো ছাত্রী না তবুও সে অনেক কিছুই জানে।
.
ঐদিন রসায়ন প্রাইভেটে স্যার জৈব যৌগ পড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ স্যার প্রশ্ন করে বসলেন
-এই সাথী। আমি কি বল্লাম একটু আগে?
-স্যার,স্টেরিও সমাণুতা কি এবং তা কয়প্রকার?
-স্টেরিও সমাণুতা সম্বন্ধে কি বল্লাম বলো তো?
-(আমতা আমতা করে) যে সমাণুতা স্টেরল জাতীয় কণার মধ্যে প্রকটভাবে দেখা যায় তাকেই স্টেরিও সমাণুতা বলে।
-সুন্দর উত্তর। এইবার বলো স্টেরিও সমাণুতা কয়প্রকার?
-৩ প্রকার।
-কি কি বলো?
-টটোমারিজম, মেটামারিজম, অবস্থান সমাণুতা।
-তা তুমি যে সংজ্ঞা দিলে এবং কয় প্রকার বল্লে তা বইয়ের কোথায় আছে তা বের করে দেখাও!!
সাথী অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার দেওয়া সংজ্ঞাটা বইয়ে ফেলো না। আর প্রকারভেদও ভুল বলেছিলো।
-কি হলো!! বইয়ের কোন পৃষ্ঠায় আছে তা আমাদের সবাইকে দেখাও।
-সরি স্যার। আমি ভুল বলছি। এইটা বইয়ের কোথাও নেই।
-ভুল বলো কেন!! লেকচার দেওয়ার সময় কোথায় থাকো?? আর এইগুলো তো গত লেকচারের পড়া। তবুও ভুল বলছো কেন?
-স্যার। ঐদিনের পড়াগুলো ভালোভাবে বুঝছিলাম না তাই ভুলে গেছি।
-বুঝছো না। তাইলে আজকে আইসা বল্লা না কেন?
-ভুল হইয়া গেছে স্যার।
-এইরকম ভুল হইলে পড়ালেখা বাদ দিয়া দেও। বাসায় থেকে তোমার মাকে কাজে সহায়তা করলেই পারো।
-আর এইরকম হবে না স্যার।
-না হলেই ভালো। হইলে বাসায় আমি জানাবো। আচ্ছা বসো।
যে মেয়েটার কথা এতক্ষণ বলতেছিলাম তার নামই সাথী। স্যারের লেকচারের সময় সে পারভেজ কে নিয়ে চিন্তামগ্ন ছিলো। তাই সে স্যারের লেকচার এর প্রতি মনোযোগ দিতে পারতেছিলো না।
.
প্রাইভেট শেষ হওয়ার পরে পারভেজ ও সাথী যখন বাসার দিকে ফিরতে ছিলো। পারভেজ তার এই অন্যমনস্কতা সম্বন্ধে জানতে চাইলো
- প্রাইভেটে কই আছিলি? স্যার পড়াইলো একটা আর বল্লি আরেকটা!!!
-না একটা বিষয় নিয়ে চিন্তায় আছিলাম।
-কি বিষয়?
- তেমন কিছু না।
-দুইদিন পরে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা আর এখন কিসব চিন্তা করস পড়ালেখা বাদ দিয়া??
-আরে বাদ দে তো।
-বাদ দিবো কেন? তুই সমাণুতা বুঝস নাই এইটা আমাকে বল্লেই হইতো। আমি বুঝাইয়া দিতাম।
-তোর কি মাস্টার হওয়ার খুব ইচ্ছা নাকি?
-মাস্টার হওয়ার কি আছে! আজকে যে আ্যারোম্যাটিসিটি পড়াইলো স্যার। এইটাও তো মনে হয় কিছুই বুঝস নাই।
-না বুঝার কি আছে। স্যার বাংলায় বলছে, বইয়ের বাংলা লিখা এবং আমিও বাঙ্গালী।
-তাইলে আমারে বুঝাইয়া দে। আমি আবার বাংলা কম পাড়ি।
-তাহলে বুঝানো যাবে না।
-বুঝস নাই এইটা বল। প্রাইভেটে যখন থাকস তখন তোর মনোযোগ কই থাকে?
-জানি না।
-জানবা কি কইরা!!যাইহোক, কালকে আমি বুঝাইয়া দিমু নে। এখন বাসায় গিয়ে পড়তে বসগা।
-এখন তো বাসাতেই যামু।
-হুম্ম আমি তাই বল্লাম। তবে পড়তে বসার জন্যও বলছি।
পারভেজ ও সাথী নিজ নিজ বাসায় চলে যায়।
.
পারভেজ তার কঠোর পরিশ্রম, মেধা,ভাগ্যের সহায়তা সবকিছুর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইন্টারমিডিয়েট এ গোল্ডেন পায়। তার বাঁধভাঙা উল্লাস দেখে কে!! কিন্তু সামনে এডমিশন এই নিয়ে সে চিন্তায় পড়ে যায়। অন্যদিকে, সাথী নরমাল প্লাস পায়। এইটা নিয়েই সে খুব খুশি কারণ তার তো প্লাস পাওয়ারই কথা ছিলো না। তার রিজাল্ট দেখার আগেই সে পারভেজের রিজাল্ট দেখে। এবং পারভেজকে রিজাল্ট প্রকাশের পরে সেই প্রথম ফোন দেয়। যাইহোক, তারা দুইজন দুই জায়গায় কোচিং করে। পারভেজ মেডিকেলের কোচিং করে। আর সাথী পদার্থ অনেক ভালো পারে তাই সে ভার্সিটি কোচিং করে। পারভেজ তার পড়ার এত চাপ থাকা সত্ত্বেও সাথীর পড়ালেখার খোঁজখবর নেয়। তারা সপ্তাহে একদিন দেখা করে অল্প কিছুক্ষণের জন্য। দেখা করেই পারভেজ, সাথীকে পড়ালেখা সম্বন্ধে বিভিন্ন কথা বলে। যদিও সাথীর এইগুলো ভালো লাগে না। তবুও পারভেজ এর কথা শুনার জন্যই সে শুধু কিছু বলে না। দেখতে দেখতে তাদের এডমিশন টেস্ট এসে পড়ে। পারভেজ যথারীতি মেডিকেলে চান্স পায়। তার এই চান্সে মনে হয় তার থেকেও সাথী বেশি খুশি হয়। অন্যদিকে, সাথী হাবিপ্রবি তে পর্দাথ তে চান্স পায়। যেহেতু সাথী দিনাজপুর থাকবে তাই পারভেজ ও কিভাবে জানি দিনাজপুর মেডিকেলে চলে গেলো। তারা দুইজন দুই জায়গায় থাকলেও সপ্তাহে ২ বা ৩ দেখা করতো তারা।
.
পারভেজ প্রতিদিন কি কি করলো তার সবকিছুই সাথীকে বলতো। সাথীও তার সবকিছুই বলতো। কেউই কারো কাছেই কিছু গোপন রাখতো না। সাথীর একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ছিলো। তাই কলেজ জীবন থেকেই একটা অঘোষিত নিয়ম ছিলো, যে পারভেজ তাকে প্রতিদিন সকালে কল দিয়ে Good Morning বলবে। অন্যদিকে সাথী প্রতিদিন রাত ১২.০১ বাজার সাথেই পারভেজকে কল দিয়ে Good Night বলতো। যদিও তখন তারা ফেসুবকে চ্যাটিংরত থাকতো তবুও কল দিতেই হবে। তাদের এই নিয়ম ভার্সিটি জীবনেও চলমান ছিলো। সাথী যদিও পারভেজকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলো। তবুও সে পারভেজকে এই বিষয়ে কিছুই বলে নাই কোনদিন। অন্যদিকে, পারভেজ সারাদিন পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত। এইসব প্রেম-ভালোবাসার প্রতি তার কোন অনুভূতিই ছিলো না। ভার্সিটি লাইফে একটা মেয়ের সিঙ্গেল থাকা মোটামুটি যুদ্ধ করার মতো। চারপাশ থেকে কত অফার আসে। কিন্তু সাথী এইসব অফার উপেক্ষা করেই চলতো সবসময় কারণ পারভেজকে সে অনেক ভালোবাসতো। দেখতে দেখতে পারভেজ ও সাথী দুইজনেরই পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়। পারভেজ যথারীতি বিসিএসেও চান্স পেয়ে যায়। অন্যদিকে সাথী বিসিএসের ভাইভাতে বাদ পড়ে যায়। পারভেজের পোস্টিং হয় সিলেটে অন্যদিকে সাথী তখন তার বাসায় চলে আসে। পারভেজের পীড়াপীড়ি তে সে আবারো বই নিয়ে বসে বিসিএসের জন্য।
.
পারভেজ তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে সাথীকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানায়। সে সাথীকে একটা সারপ্রাইজ দিবে বলে। সাথী সারপ্রাইজের কথা শুনে অধীর আগ্রহ নিয়ে থাকে। সে মনে করে আজকে নিশ্চয়ই পারভেজ তাকে ভালোবাসার কথা বলবে।
যথাসময়ে সাথী উপস্থিত হয় এবং দেখে পারভেজ বসে রইছে। পারভেজ তাকে দেখেই কফির অর্ডার দেয়। সাথী ঘুরেফিরে বারবার সারপ্রাইজের প্রসঙ্গটা টেনে নিয়ে আসে। পারভেজ তাকে আশ্বস্ত করে যে সারপ্রাইজের জন্য আর অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। ঐদিনের সন্ধ্যা ৭.৩৩ ছিলো সাথীর জীবনের সবচেয়ে বাজে সময়। কারণ পারভেজ তার হবু বউ তুলির সাথে সাথীর পরিচয় করিয়ে দেয়। তুলি রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করা মাত্রই পারভেজ বলে উঠে
-এইযে আমার সেই কাঙ্ক্ষিত সারপ্রাইজ। যারজন্য তোকে আধ ঘন্টা ধরে বসিয়ে রেখেছি।
-কই কিসের সারপ্রাইজ। আমি তো কিছুই দেখতে পাইতেছি না।
ততক্ষণে তুলি তাদের টেবিলের সামনে এসে দাড়ায়। পারভেজ তাকে বসতে বলেই সাথীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠে
-তুই কানা হইছস কবে থাইকা! দেখি তোর চোখ দেখি। সামনে একটা আস্ত জ্বলজ্যান্ত মানুষ দেখে তুই বলতাছস তুই কিছুই দেখতাছস না!!!
-কি দেখবো? আমার সামনে তো তুই আর তুলি। তোরা সারপ্রাইজ হইলি কেমনে??
তখন তুলি পারভেজের কাধে মাথা রেখে বলে উঠলো।
-আমি বিষয়টা ক্লিয়ার করতেছি। পারভেজের আব্বা-আম্মা এবং আমার আব্বু-আম্মু আমাদের বিয়ে ঠিক করছেন।
-তোদের বিয়া আর আমি কিছুই জানলাম না। (সাথী)
-আরে বিয়ের আলাপই তো হইছে ৩দিন আগে। তোকে বলবো কোনসময়?? (পারভেজ)
-ওহ,আমাকে বলবা কেন। আমি কোথাকার কে? (সাথী)
-আরে রাগ করিস না। সারপ্রাইজ দিবো বলেই তো ঐদিন বলি নাই। (পারভেজ)
-হুম্ম,, তুই তো আমাকে কলেজ লাইফ থেকেই একেরপর এক সারপ্রাইজ দিয়া আসতাছস। তোরজন্যই তো আমার এই পর্যন্ত আসা। তা কিভাবে তোরা দুইজন জোড়া বাধলি তা কিন্তু বল্লে না। (সাথী)
-আর বলিস না। তুলিকে আমার আগে থেকেই ভালো লাগতো কিন্তু বলার সাহস পাইতাম না। কিনা কি মনে করে!! আর,লজ্জায় তোকেও বলতে পারি নাই। (পারভেজ)
-তাইলে বিয়ে পাকাপাকি কিভাবে হলো? (সাথী)
-আর বলিস না। তুলির আব্বু আর আমার আব্বা পূর্বপরিচিত ছিলো ঐসুবাধে!! (পারভেজ)
-ওহ তাই বল। আমিও তো বলি, আমি কিছুই জানি না তবুও কিভাবে এতকিছু। যাইহোক,, তোদের আগত জীবন সুখের হোক আমি এই দু'আ করি। আর, তোরে শায়েস্তা করার টিপস আমি তুলিরে দিয়া দিবো কেমন? (সাথী)
-তুই আর আমারে শান্তিতে থাকতে দিবি না। (পারভেজ)
-দেরি করতাছস কেন? এখনই শিখাইয়া দে। বিয়ের কথাবার্তার পর থাইকা আমারে জ্বালাইয়া মারতাছে। একটু পরে পরে কল দেয়। সারাদিন আলাপ করতে হবে তার। ঐদিকে রোগী কে দেখবে? (তুলি)
-এখনই এইসব!! বিয়ের পরে তো বউয়ের আচল ছাড়া কিছুই চিনবি না। (সাথী)
-বাদ দে এইসব। সারপ্রাইজ কেমন লাগলো। (পারভেজ)
-দোস্ত,একেবারে পাঠাইয়া দিসস। (সাথী)
আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে তারা চলে গেলো। তুলি,তাদের সাথেই কলেজে পড়তো। সাথীর ধৈর্যের প্রশংসা করতে হয়। সে বুঝতেই দিলো না যে পারভেজকে কত ভালোবাসতো সে। কি স্বাভাবিকভাবে সে কথা বল্লো তাদের সাথে!! তার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও বের হলো না। ঐদিন সাথী রাতে আর ঘুমাইতে পারলো না। সারারাত পারভেজের সাথে তার করা চ্যাটিংগুলো দেখলো। তাকে দেওয়া পারভেজের গিফটগুলো দেখলো।
.
দেখতে দেখতে পারভেজের বিয়ের দিন উপস্থিত হয়ে গেলো এবং বিয়েও হয়ে গেলো। সাথী স্বাভাবিকভাবেই বিয়েতে অনেক আনন্দমজা করলো। যা দেখে কেউই বুঝতে পারবে না যে তার মনের ভিতরে কি চলছিলো!!! নিউটনের সূত্রের বাস্তব ব্যাখ্যা সে নিজেই হয়ে গেছিলো। তার নিউরনগুলো কি পরিমাণ এনজাইম নিঃসরণ করছিলো। তার হৃৎপিন্ডে কি সঠিকভাবে অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর আদানপ্রদান হচ্ছিলো কিনা!!! এইসব বিষয় সম্বন্ধে কেউই কিছু জানতে পারলো না। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে সাথী বাস্তবায় ফিরে আসলো। সে যে পারভেজকে ভালোবাসতো তা মনে করতে লাগলো। সে ঐদিন রুমের দরজা বন্ধ করে অনবরত কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাও টের পেলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আবারো পারভেজের বিয়ের কথা মনে পড়লো তার। তাকে পারভেজ অনেক বই উপহার হিসাবে দিতো। শেক্সপিয়রের সেই বিখ্যাত "হেমলেট" নাটক টাও সে উপহার হিসাবে পেয়েছিলো। সে এই বইটা বের করে তা দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ একটা অস্ফুট চিৎকার দিয়ে নিচে ঢলে পড়ে সে। তার এই চিৎকার সে ছাড়া আর কেউই শুনতে পেলো না। সকাল শেষ হয়ে সূর্য মধ্যগগনে নাচানাচি করছিলো। কিন্তু সাথী এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই। তাই তার আম্মু কয়েকবার তাকে ডাকলো। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তার মোবাইলে কল দিলো। কিন্তু ফোন অফ পেয়ে তার আম্মা,আব্বা,ভাই,বোন সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো। আরেকদফা তারা সবাই ডাকাডাকি করলো কিন্তু কাজ হলো না। পরে তারা দরজা ভেঙ্গে দেখতে পেলো সাথী ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তার আম্মা তখনই পারভেজকে কল দিয়ে সব বল্লো। পারভেজ দ্রুত তাদের বাসায় এসে উপস্থিত হলো। পারভেজও অনেকবার ট্রাই করছিলো কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিলো।
তারা দ্রুত সাথীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
কর্তব্যরত ডাক্তার অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করে বল্লো তার মস্তিষ্ক কোন এক অজানা কারণে অচল হয়ে পড়েছে। পারভেজ একজন সাইক্রিয়াটিস্ট হিসাবে পরীক্ষা করার সময় সাথীর পাশেই ছিলো। সে কোনভাবেই বুঝতে পারলো না, সাথীর এই অবস্থা কেন হলো? সাথীর সাথে কি এমন হইছিলো যে হঠাৎ করে সে মস্তিষ্কে এতবড় আঘাত ফেলো!! পারভেজ, সাথীর পরিবারের সবার সাথেই কথা বল্লো কিন্তু উপযুক্ত কোন কারণ খুঁজে ফেলো না। সাথীর ল্যারিঞ্জিয়াল,স্পাইনাল আ্যাক্সেসরী স্নায়ুগুলো কেন হঠাৎ করে অসাড় হয়ে পড়লো। তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলো না পারভেজ!! সাথীর থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালাস কেন স্তব্ধ হয়ে গেলো!!! সাথী এখন কোন কথা বলতে পারে না। শুধু চেয়ে থাকে!!!
পারভেজ এইসব রহস্যের সমাধান খুঁজার জন্য সাথীর রুমে প্রবেশ করলো। সম্পূর্ণ রুম তন্নতন্ন করে খুঁজাখুঁজির পরেও কোন তথ্য বের করতে পারলো না।
সে জানতেই পারলো না, তারজন্য সাথী আজ নির্বাক হয়ে গেছে। চলচ্চিত্র ইতিহাসের প্রথমযুগের মতো এখন সাথী একটা নির্বাক প্রাণী বৈ অন্যকিছুই না।
যদিও সাথীর মস্তিষ্কে ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানার কারণে তার সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেলো। কিন্তু এই প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাস পারভেজের নাগাল ফেলো না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন