মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৭

"অতঃপর ভালো থাকিস "

আকাশে অনেক সুন্দর চাঁদ ওঠেছে। ছাদের উপর দাঁড়িয়ে জ্যোৎস্নার আলোয় শহরটাকে দেখছি। রাতটা একটু তীব্র মায়াময়ই। ঝিরঝির হাওয়া, বাতাসে অদ্ভুত একটা সুন্দর
গন্ধ। কিসের গন্ধ সেটা আমি জানি না। কিন্তু
বাতাসটা কেমন জানি। এমন অদ্ভুত বাতাস আমি কখনও পাইনি। চিরপরিচিত ছাদ কিন্তুু অচেনা পরিবেশ। ছাদের রেলিং ধরে মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছি। কি মনে করে যেন হঠাৎ অরিনকে একটা ফোন দিতে ইচ্ছে হল। অরিন আমার বান্ধুবী। আমরা এক সাথে পড়ি। পড়ি বললে ভুল হবে? পড়তাম। সে যাই হোক,
অরিনকে প্রথমবারের মত ফোন দিলাম।
সত্যি কথা বলতে কোন কারণ ছাড়া কোন
মেয়েকে জীবনে প্রথমবারের মতো ফোন
দিলাম। কি এক অদ্ভুত অপেক্ষাময় সময় ছিল। মাএ দুইবার রিং হতেই তুই ফোনটা ধরলি। যখন ফোনটা ধরলি কি যে এক অদ্ভুত শিহরণ। বোঝাতে পারব না। সে যাই হোক, এক কথা দুই কথা বলতে বলতে ঠিক তিন মিনিট একুশ সেকেন্ড কথা হলো। যখন ফোনটা ছাড়লি গায়ে যেন পুরো কাটা দিয়ে উঠছিল। ঠিক তারপরেও অনেকটা সময় ফোন কানে নিয়ে বসে ছিলাম। জ্যোৎস্না মাখা আলো আধারে ঘেরা পরিবেশটাকে কিরকম যেন লাগছিল। মনে হচ্ছিল সব কিছুই তোর জন্য সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বাস কর, চোখ বন্ধ করলে আমি এখনও সেই সময়টাকে স্পষ্ট দেখতে পাই। এক সাথে ক্লাস করলে অনেক সময়ই অনেক কথা হয় বা হওয়াটা স্বাভাবিক। তুই জানতিস আমি মেয়েদের সাথে খুব কম কথা বলি। তাই তোর সাথেও কম কথাই বলা হয়েছিল। আর তাছাড়া তুই সবার মধ্যমণি ছিলি বলে সব সময় তোর বান্ধুবী দ্বারাই পরিবেষ্টিত থাকতি। তাই হয়ত তোর সামনে গিয়ে তোর সাথে কথা হতো না। তুই যখন কাছে এসে কথা বলতি কিংবা যখন ফ্রি থাকতি কেবল মাত্র তখনি আমাদের কথা বার্তা হতো। একেবারেই বন্ধু সুলভ কথা। বন্ধুর বাইরে তো একটা কথাও না। জানিস, তুই
যেদিন আমার কাছে প্রথম কোন গল্পের বই
পড়তে চেয়েছিলি কি ভালোটাই না লেগেছিলি সেদিন। একসময় মনে হতো বাসার সব গল্পের বই এনে তোকে পড়তে দিই। হয়ত দিয়েছিও অনেক। চোখ বন্ধ করলে আমি সব কিছু স্পষ্ট দেখতে পাই। তুই আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছিস আর আমি তোকে গল্পের বই দিচ্ছি। আমি জানি, তুই আমাকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কোনদিন কিছু ভাবিস নি। আমার মত অতি তুচ্ছ একটা মানুষকে কেউ কিছু ভাববে না, সেটা আমিও ভাবি না। কিন্তু কে জানে তোর প্রতি আমার অন্য রকম একটা ভালোবাসা ছিল বোধ হয়। আমার মত তুচ্ছ একটা জীবকে তুই তুচ্ছ ভাববি না। হয়ত আপন করে নিবি তোর ভালোবাসা দিয়ে। এত কিছু যে কেন ভেবেছিলাম কে জানে। কি হাস্যকর চিন্তা ভাবনা বল। যাই হোক, মনে আছে প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দেরী করে এক্সাম হলে এসেছিলাম। এক্সাম শেষ হয়ে বের হতে না হতেই তুই এসে কি ঝাড়ি দিয়েই না বললি, কেন এক্সাম হলে দেরীতে এসেছি। সারাটা জীবন যদি এমন করে ঝাড়ি দিতি খুব কি কষ্ট হতো??? হা হা.... কি হাস্যকর পাগলামী চিন্তা ভাবনা আমার। আচ্ছা অরিন বল তো, তোর সাথে আমার কোনদিন হাতে হাত রেখে ঘোরা হয় নি। একই রিকশাতেও চড়া হয় নি। রাত জাগা জোনাক পোকার মত আমাদের মোবাইল ফোনে গল্পও করা হয় নি। তাও তোর প্রতি আমার এত মায়া কোথা থেকে আসল বল তো? চোখ বন্ধ করলে তোর মুখের হাসি দেখতে পেতাম। তোর ঘাড় বেয়ে নেমে আসা খোলা চুলের অরণ্যে কতবার যে হারিয়েছি সে খবর আমার আল্লাহ্ জানেন। ক্লাসের ফাঁকে কতবার তোর দিকে চেয়েছিলাম সেটা আর নাই বা বলি। চোখ বন্ধ করলে তোর আধো আধো পাগলামী গুলোই চোখে ভেসে উঠত। অরিন, তুই কি জানিস তোর জন্য ফেসবুকে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতাম। কখন আসবি সেটার জন্য কি অপেক্ষা। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ কথাই হয়েছিল ফেবুর ম্যাসেজে। কি হাস্যকর কথা, বাস্তবের
সবচেয়ে পরিচিত মানুষের সাথে ভার্চুয়েল
জগতে কথা। সব কিছুর ডেফিনেশন আছে কিন্তু এগুলা কি হাস্যকরই না ছিল!!! অরিন নামের মেয়েটা ক্লাসের সবচেয়ে প্রথম বেঞ্চে বসত আর আমি ক্লাসের সবচেয়ে পিছনের বেঞ্চে। ক্লাস লেকচার তোলার ফাঁকে ফাঁকে
কতবারই না তোর মুখের দিক তাকিয়ে থাকা হত। ভাগ্যিস, আমি সেমিস্টার ড্রপ খেয়েছিলাম। এখন আর তোর সাথে ক্লাস করতে হয় না। তুইও বেঁচে গেছিস। তোর অগোচরে কেউ আর তোর দিকে তাকায়
না। কিংবা ঢাকা শহরের সেই বাসগুলোর দিকেও গভীর আশা নিয়ে তাকায় না যে বাসে করে তুই ভার্সিটি যাতায়াত করতি। জানিস, ক্লাস শেষ করে বাসায় ফেরার সময় রাস্তায় যতগুলো বাস দেখতাম হা করে তাকিয়ে থাকতাম। যদি অনেকগুলো বাসের কোনো একটিতে করে তুই বাসায় যাস তাহলেই তো তোকে দেখতে পাবো। কি পাগলামিই না ছিল বল। ও ভাল কথা, কোন এক ভয়ঙ্কর মন খারাপ করা বিকেলে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। আকাশ ডেকে যাচ্ছিল তারস্বরে। কি নিঃসঙ্গটাই না লাগছিল তখন। আমার ছোট্ট মন খারাপ করা ঝুলবারান্দাটায় দাঁড়িয়ে যখন আকাশে ভেসে বেড়ানো নিকষ কালো মেঘদল
গুলোকে দেখছিলাম মনে হচ্ছিল আমি বুঝি তোর সাথে ঝুম বৃষ্টিতে হেটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হল কিছু লিখে ফেলি। সাথে সাথে বসে একটা গল্প লিখে ফেললাম। বিশ্বাস কর, সেদিনের আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না আমি
কিছু লিখতে পারি। একদিন ফেসবুকের পেজে একটা গল্প লিখে দিয়ে ছিলাম "অন্ধকার"। অবশ্যই অনেক মানুষ গল্প পড়ল। কেউ কেউ
ভালো বলল, কেউ বা বলল ফালতু। আমার কিছু যায় আসে না। আমি কি লেখক নাকি! কিন্তু সেই লেখায় যখন তুই কমেন্ট করলি তখন আমার আর খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতে ইচ্ছে করল। যাকে নিয়ে লেখা লিখেছি সে পড়েছে। জানিস, সেদিনের মত আনন্দ আমি কখনোই পাই নি। তারপর থেকে যখনই তোর কথা মনে হতো তখনি গল্প লিখে ফেলতাম। কিছু দিতাম ফেবুর পেজে আর আমার ডায়েরিতে। আমি লেখক না কাজেই আমার লেখা তেমন ভালো কিছুও না। হয়ত কেউ কেউ ভুলে পড়ে ফেলত। আবার হয়তবা
মনের অজান্তে ভালো বলত। আমার কোন বন্ধু
ছিল না, এখনও নেই। একটা চরম নিঃসঙ্গ
মানুষের বন্ধু হতে পারে তার লেখা গল্পের
চরিত্রগুলো। আমার পরিচিত মানুষের কেউই
জানে না আমি লিখালিখি করতাম। কেউ না।
হয়ত দুই একটা ছাইপাশ গল্প আমার নামে
পেজে দেখে জানত আমি লিখি। অরিন জানিস, এক সময় প্রচন্ড একাকীত্ব নিয়ে
তোকে মিস করে গল্প লিখে যেতাম আর
ভাবতাম জীবনে যখন একদিন ম্যাচিউরিটি
আসবে তখন তোকে আমার ভালোবাসার কথা
বলব। তুই আমাকে ফিরিয়ে দিবি না। দেখতে দেখতে দুইটা বছর কেটে গেল। সেকেন্ড ইয়ার সেমিস্টার ফাইনাল দিয়ে কেন যেন মনে হল রেজাল্ট খুব খারাপ হবে। আমি হয়ত সেমিস্টার ড্রপ খাব। ভালোলাগত না বলে বাসায়ই থাকতাম। তুই জানিস আমি তোর পুরো উল্টো ক্যারেক্টার। আমি একদমই ইন্ট্রোভার্ট। হয়ত সেই সময় হলে থাকলে এক্সামে পাশ করে যেতাম। যাই হোক, একদম ভালো লাগত না বাবা মাকে ছাড়া তাই হলে আসা হয় নি। সেই সময় মনে হল আমার
লাইফের একটা খুঁটি থাকা দরকার। যাকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকতে পারব। যে আমাকে
পৃথিবীর সব হতাশা থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। যদি সত্যিই সত্যিই সেমিস্টার ড্রপ করি তাহলে তো লজ্জাতেই আর বাসায় থাকতে পারব না। আর যেই মা আমাকে প্রতিদিন মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দিত, ভার্সিটি যাওয়ার আগে ড্রেস গুছিয়ে দিত হয়ত বা তাকে ছাড়াই আমার থাকতে হবে। কাপড় ধুয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সব সব কিছুই মা করে দিত। যদি পরীক্ষায় খারাপ করি তাহলে সব কিছু ছেড়ে দূরে চলে যেতে হবে। তখন আমি থাকব কিভাবে? আমি পারব না একটা দিনও বেঁচে থাকতে। অরিন জানিস, ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় আমার আব্বু আমাকে সব সময় বাসে তুলে দিত। কি হাস্যকর না বল? এসব কিছু থেকে দূরে সরে গিয়ে বেঁচে থাকা একটা মুহুর্ত আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ঠিক সেই সময় মনে হল তুই আমার পাশে থাকলে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তাই স্বার্থপরের মতো তখন তোর হাত ধরতে চেয়েছিলাম। একেবারে স্বার্থপরের মতো। অরিন, আমি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সেলফিশ। যদিও আমি জানতাম তুই আমার চেয়ে সহস্রগুণ ভাল ছেলে ডিসার্ভ করিস তাও। একেবারে সেলফিশের মতো তোর হাত ধরতে চেয়েছিলাম শুধু মাত্র বেঁচে থাকার
জন্য। অরিন তুই যখন আমাকে ফিরিয়ে দিলি প্রথমে আমার মনে হয়েছিল এটাই স্বাভাবিক। আমার মতো একটা চূড়ান্ত মাত্রার বেকুব, গাধা বা ইমম্যাচিউরড ছেলেকে তুই কেন ভালোবাসবি? তাও কেন যেন মনে হচ্ছিল তুই হয়ত আমাকে সামনাসামনি ফিরিয়ে দিতে পারবি না। কি ভুল ধারণাটাই না ছিল বল। তোর সাথে সামনাসামনি সব কথা ফাইনাল করার জন্য কতটা দীর্ঘ সময়ই না অপেক্ষা করেছি। চেয়েছিলাম তুই আমাকে ভালবাসিস না, একবার আমার সামনে এসে বলিস। ফোনে না, ফেসবুকেও না। জাস্ট একবার ক্লাসের ফাঁকে কিংবা তোর কোন অবসর সময়ে। শুধু সামনে দাঁড়িয়ে একবার বলিস তুই আমাকে ভালোবাসিস না। জাস্ট এই কথাটা শোনার জন্য তোর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। অরিন, জীবনে কারও জন্য এতটা অপেক্ষা করি নি। আমি তুচ্ছ আমি জানি। তাই বলে এত তুচ্ছ??? যার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করব সে আমাকে এসে জাস্ট সামনাসামনি বলতে পারবে না? এমন তো না যে তোকে আমি হঠাৎ করে দেখেছি কিংবা ব্লা ব্লা ব্লা! দুই বছর একসাথে পড়ার পরও কি তুই আমাকে একটুও চিনতে পারিস নি? দুইটা বছর ধরে মনে মনে আমি এটাই জানতাম আমি পাগল হলেও, বদ্ধু উম্মাদ হলেও, পৃথিবীর সবার কাছে সবচেয়ে অবহেলার পাত্র হলেও, সবচেয়ে আনস্মার্ট ছেলে হলেও, টাকা-পয়সা না থাকলেও, খুব খারাপ ছাত্র হলেও তুই আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবি না। কারণ আমি তোকে পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়ে ভালোবেসেছিলাম। তুই আমাকে
ফিরিয়ে দিবি এটা মানতে পারি নি। কিংবা কে জানে এখনও মেনে নিতে পারিনি। আরেকটা ইন্টারেস্টিং জিনিস কি জানিস? আমি জীবনে দুইটা জিনিসই চেয়েছিলাম। প্রথমটা হল সারাটা জীবন যেন বাবা মার সাথে থাকতে পারি। দ্বিতীয়টা হলো তুই। এখন না আমি মা-বাবাকে ছাড়া থাকতেও শিখে গেছি। কিংবা কে জানে আমার আল্লাহ্ আমাকে থাকতে শিখিয়েছেন। অরিন, আমি তোর জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতাম। তুই ফিরিয়ে দিলেও তোর থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করতাম। কিন্তু তুই আমার সামনে আমাকে উপেক্ষা করে অন্য কোন ছেলের সাথে ঘু়রবি এটা আমার সহ্য হত না, হোক সে তোর ফ্রেন্ড। তুই আমাকে ছোট ভাবতে পারিস অথবা ভাবতে পারিস আমাকে ভালো না বেসে ভালো করেছিস। যা খুশি ভেবে নিস। আমার কিছু যায় আসে না। ওটা আমার সহ্য হবে না। কোনদিনও না। তাই আমি তোর থেকে দূরে চলে গেছি। তুই যদি ভাবিস আমি তোকে কোনদিনও ভালবাসি নি তা ভেবে নিস। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। জানিস, তুই যেদিন আমার সামনে তোর সবচেয়ে ভালো ছেলেবন্ধুর মোবাইল নিয়ে গেমস খেলতি তখন খুব খারাপ লাগত। তখন ভাবতাম আমার যদি একটা মোবাইল থাকত,,, তুই বুঝি আমার মোবাইল নিয়েই খেলতি। যাই হোক, আমি বেশ কিছুদিন আগে একটা আন্ড্রোয়েড মোবাইল কিনেছি। ইদানিং কখন দিন যায় রাত আসে জানিই না। সময় কোন দিক দিয়ে কেমনে যায় বলতে পারি না। কিভাবে যে সময় কাটছে সেটাও জানি না। ও ভালো কথা, এরই মধ্যে একটা মেয়ের সাথে রিলেশন হয়েছে। পরিচয়ের ঘটনা শুনবি? তোকে নিয়ে যে গল্প গুলো লিখেছি সেটার মাধ্যমে। ভালো তো ভালো না? আমি তো পরিচিত মানুষদের সাথেই কথা কম বলি আর অপরিচিত কারও সাথে কেমনে কথা হলো কে জানে! হয়ত তোর মত কাউকেই খুঁজে গেছি মনের অজান্তে।জানিস, মেয়েটা না হুবহু তোর মতো। তোর মত রাগী, তোর মতো জেদি, তোর মতো হাসিখুশী। যেন তোর একটা ডুপ্লিকেট ভার্সন। তোর সাথে ওর একটাই অমিল সেটা হলো ও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। জানিস রাতে ওকে ফোনে ঘুম না পাড়িয়ে দিলে ওর ঘুম আসে না। একদিন রাতে আমি ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে গেছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি একশ নয়টার বেশী মিস কল। আরেকদিন আমি ওর সাথে কি কারণে যেন একটু খারাপ ব্যবহার করেছিলাম প্রায় চারটার মতো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিল। এত ভালোবাসা মানুষ কেমনে বাসতে পারে রে? শুনলাম বাসা থেকে ওর বিয়ের কথা চলছে। এত আগেই কেন বিয়ে দিবে বুঝতে পারছি না। সমস্যা নেই। ও আমাকে অনেক ভালবাসে। হয়ত বিয়েটা ও দুই এক বছর পেছাতে পারবে। আর সব কিছু ঠিক থাকলে দুই বছর পর আমার পড়ালেখা শেষ হলে আমরা বিয়ে করব। যদি ও রাজী থাকে আর কি। ও চাইলে আমরা এখনি বিয়ে করে সংসার করতে পারি। আব্বু আম্মুর টাকায় না। আমার চাকরীর টাকায়। ও আমি এখন পড়ালেখার পাশাপাশি একটা জবও করছি। মোটামোটিবেশ ভালই চলবে আমাদের সংসার। ওর ফ্যামিলি থেকে যেই ছেলে ঠিক করা হয়েছে সে অবশ্য ইন্জিনিয়ার। ভাবসাবই আলাদা। হয়ত ও বিয়ে আটকাতে পারবে। আর না আটকাতে পারলে বুঝে নেব আমার সব কিছুই ভুল ছিল। ভুলের স্রোতে আমি সব কিছু ভুলে যাব, সব কিছু,,,
ভালো কথা, তোর চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়ার
জন্য চাকরী বাকরি করছিলাম। এখন টাকা
পয়সা কেমন জানি নেশা হয়ে যাচ্ছে। মাসে
মাত্র বিশ পচিঁশ হাজার টাকা পাই। সব
টাকা উড়াই। টাকা উড়াতে খারাপ লাগে না।
যদি জীবনে অনেক টাকা হয় সেগুলোও উড়াব। টাকা উড়ানোর মজাই আলাদা। ঠিক নিকোটিনের ধোঁয়া উড়ানোর মতই মজা। আগে জ্বর আসলে ঘোরের মধ্যে বিড়বিড় করে
অরিন অরিন করতাম। আর এখন জ্বরই আসার সময় নেই!! ঘোর তো অনেক পরের কথা। নিকোটিন টানলে মাথাটা একটু ঘুড়ে, কিংবা মাঝে মাঝে কোকেইন হাফ লিটারের একটা ক্যান খেলে একটু ঝিমানো লাগে। তোর কথা মনে হয় না। কারণ তুই আমার কেউ না। কেউ না। তোর জন্য কেনা সব গল্পের বই পুড়িয়ে ফেলেছি। কিচ্ছু নেই, কিচ্ছু নাহ। জানিস আমার যখন একটু মন খারাপ হত আমি আজাইড়া হিজিবিজি লেখালেখি করতাম। ঠিক এক বছর আগে তুই যখন আমাকে ফিরিয়ে দিলি তখন থেকে আর লিখতেও ভালো লাগে না। আমার প্রচন্ড মন খারাপ গুলো আমার কাছে থাকে। ঠিক এক বছরের পর যখন তোকে নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে করল কিন্তু আমি কিছু লিখতে পারিনি। সত্যিই লেখালেখি ভুলে গেছি রে,,,
জানিস অরিন, জীবনে এত্ত অবাক হয়েছি, এখন অবাক হওয়ার ক্ষমতাই কেন যেন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এত এত অবাককৃত ঘটনা গত বছরের অলমোষ্ট এই সময়ে ঘটেছে, আমি পুরাই নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। চরমভাবে অবাক হওয়ার মত ঘটনা একটা ঘটলে মানা যায়, দুইটা ঘটলেও হয়ত মেনে নেওয়া যায়। কিন্তুু যখন সিরিয়ালি ঘটতে থাকে তখন আর মেনে নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। সেমিস্টার ড্রপ, তোর চলে যাওয়া, সাধের একমাত্র ল্যাপটপ নষ্ট হওয়া, একটা মাত্র চাইনীজ মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলা। ঘটনা ঘটতে থাকুক, আমি চুপচাপ উপভোগ করি। এটাই মজা,,,
অরিন তুই ভালো থাক। অনেক ভালো, পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন