পার্কে বসে কিছু সময়ের জন্য সতেজতা অনুভব করছি । পাশ ফিরে দেখি এক দাড়ি,গোঁফ ওয়ালা মানুষ বসে অাছে । ভাবলাম তার সাথে কথা বলে কিছুটা সময় ব্যয় করা যায় ।
তার দিকে তাকিয়ে বললাম ,
-ভাই কি করছেন ? কেমন অাছেন ?
- অালহামদুলিল্লাহ ঠিক ঠাক। অাপনি ?
অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম মানুষটা পুরোপুরি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছে। মানুষ টি শিক্ষিত বলে মনে হল । শিক্ষিত একজন মানুষ এই অবস্থায় অাছে ভাবতেই খারাপ লাগছে।
অামি তার দিকে তাকিয়ে বললাম ,
- অামিও ভালো । তা ভাই অাপনি তো অনেক শিক্ষিত । এই অবস্থা কেন?
- গল্পটা শুনবেন ? অামি একজন সাবেক লেখক । মজা পাবেন ।
- বলুন শুনি ।
- সময়টা তখন ও প্রাপ্তিত কিছুর অানন্দে মুখরিত। প্রাপ্তি টি অপ্রকাশিত। নতুন করে স্বপ্নের বুননে সে নিজেকে ব্যাকুল করে তুলেছে। কারন স্বপ্ন বুননের ই সময় সেটি। নিজেকে অপ্রকাশিত রেখে স্বপ্নের প্রকাশনায় তার ব্যস্ততা। এমন ই একজন স্বপ্ন বুনক তার জীবনের অপ্রত্যাশিত কাহিনি শুনাবে।
বিকেল বেলা ফেসবুকে লগ ইন করে দেখি একটি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট । সাধারনতই অামি কোনো অাইডি ঝুলিয়ে রাখিনা । হয়ত confirm করি নয়ত not now করে দেই। পরিচিত ছাড়া একসেপ্ট করিনা , অার কিছু গ্রুপের সদস্য ছাড়া এড দেইনা ।
অাইডি টি অামি খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পারি অাইডি টি অামার পরিচিত একটি গ্রুপের। তাই একসেপ্ট করি। কিছুক্ষন পরেই মেসেজ দিয়ে কথা শুরু হয় । কথাগুলো এমন ছিল যেন খুব পরিচিত একজন কথা বলছে। সাধারনত মেয়েরা এত ফ্রি ভাবে কখনও কথা বলেনা। কিন্তু সে এরকম না।
মেয়েটির নাম শর্মি ।
অামি গল্প লিখি । অার সে অামার গল্প পড়ে। বলতে গেলে বলা যায় , ভার্চুয়াল পাঠক । ফেসবুকে কনভারসেশনে অামি তাকে জিঞ্জেস করি যে, “ সে কেন অামাকে এড দিয়েছে? ”
সে বলল, “ অামার লেখা গল্প তার ভালো লাগে। ”
এভাবেই কথা বলার সূচনা।
তখন তার সাথে কথা বলা শুধু গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । তার নিজস্ব বিষয়গুলো সম্পর্কেও ধারনা নেওয়া হয়েছে । সে এতদিন কে ছিল , কি ছিল , কেন ছিল ! সবকিছুই জানা হয়েছে। শুধু তাই নয় দুজনের সুখের-দুঃখের সময়গুলো সম্পর্কেও পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ ও সম্পন্ন।
তার সাথে পরিচয় হওয়ার পর বুঝলাম। সে অামার মনের মতো একজন। তখন অার কারও সাথে কথা ও বলতাম না। সারাদিন শুধু শর্মির সাথে কথা হত। প্রথম পর্যায়ে শুধু ফেসবুকে কথা হলেও মাঝের একটা সময়ে ফোন নাম্বার অাদান প্রদানেও কথা হতে শুরু করে। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে কখনও কথা হয়নি।
শর্মির অাচার-ব্যবহার ছিল কিছুটা পাগলি টাইপের। নিজেকে সে সবসময় একজন চঞ্চলা রুপে তুলে ধরত। তার চঞ্চলতা যে কারও মনে দাগ কেটে দিবে।
অামি অামার বন্ধু হিসেবে কিংবা মনের মানুষ হিসেবে যেমন একজন মানুষ খুঁজতাম , শর্মি ঠিক সেরকম ই। কয়েকদিনের মধ্যেই তার অার অামার মাঝে একধরনের বন্ধন সৃষ্টি হয়ে যায় । বন্ধনটির কথা শুধু অামিই জানতাম। ব্যাপারটি পুরোপুরি অদৃশ্য এবং অপর পক্ষের কাছে অনুভবহীন ছিল ।
অামি নিজেকে যেভাবে অানন্দ দিতে চাই , মনের কিছু সুখ-দুঃখের কথা প্রকাশ করতে চাই , ঠিক সেভাবে শর্মি ও চায় । তার চাওয়া পাওয়ার গ্রাফ টুকু সম্পর্কে বিশদ ধারনা না থাকলেও এতটুকু বুঝতে পারি যে, দুঃখের রেখাটির উচ্চতা বেশি ছিল । অামার গ্রাফ সে লক্ষ্য করেছে কি না কখনও তা ঠিক জানিনা। হয়ত লক্ষ্য করলে বুঝতে পারত অামার ও গ্রাফ তার গ্রাফের মতোই। স্বল্প সময়ের গল্পের মাঝে সে অামাকে কতটুকু বুঝেছে শুধুমাত্র সে ই জানে।
শর্মি অামার থেকে এক বছরের বড় ছিল । অামি তখন অনার্স ১ম বর্ষে এবং সে ২য় বর্ষে । যদিও অামাদের মাঝে বয়সের পার্থক্য ছিল তবুও অামরা অামাদের মেন্টালিটির গভীর কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করিনি।
একটা সময়ে অামি ভার্সিটির কিছু কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যার কারনে ফেসবুকে অাসা হত না। ফোন নাম্বার থাকলেও ফোন দিতাম না। কারন শর্মির সাথে কথা বলতে শুরু করলে অামি কথা হারিয়ে ফেলি । যেন অামার কাছে কোনো টপিক নাই তার সাথে কথা বলার। সব শেষ করে ফেলেছি। তার ব্যাপারে সবকিছুই জানি। অথচ তাকে প্রতিটা মুহূর্তে অনুভব করার চেষ্টা করি । অবসর সময় গুলোতে তাকে নিয়ে সারাক্ষন ভাবতে থাকি।
সবসময়ের জন্য মনে হত শর্মি শুধু অামার জন্যই জন্মেছে। তার প্রতিটা সুখের কারন যদি নিজে হতে পারতাম নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবান বলে মনে হত।
শর্মি তার সব ব্যাপার অামাকে নির্দ্বিধায় বলেছিল । সে ধুমপান করত, সে ড্রিংকস করত, সে খুব চঞ্চল, সে কাউকে মারতে ও দ্বিধাবোধ করত না , তার অাগে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল । তার সবগুলো বৈশিষ্টের বিপরীত চরিত্রের মানুষ অামি । তবে সে নিজেকে মজা দেওয়ার জন্য যা যা করে অামিও ঠিক সেভাবেই দিতে চাই । কিন্ত অামি কারও কখনও সাহায্য পাইনি কিংবা এমন কোনো মানুষ কে দেখিনি।
শর্মি ছিল এমন ই একজন । অামার বিষাদময় মুহূর্তগুলো সে কিভাবে অানন্দে মুখরিত করে তুলত কখনও বুঝতে পারিনি । বুঝতে চাই ও না। শুধু সেভাবেই তাকে সারাজীবন পেতে চাই ।
অামি বুঝতে পারি অামি ধীরে ধীরে শর্মির উপর দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে সংযত রাখা দরকার। কারন তার সাথে সম্পর্কটি শেষ কখনও ভালো হবে না । সমাজ অামাদের মেনে নিবে না ।
শর্মিও হয়ত কখনও অামাকে মেনে নিবে না। এমন ও হতে পারে সে অাগে ই কাউকে মন দিয়ে বসে অাছে। অামি তাকে বললে সে খুব রাগ করতে পারে, কথা বলা বন্ধ করে দিতে পারে , অামাকে সে কখনও ই অার মন থেকে গ্রহন করতে পারবেনা।
তাই তাকে নিজের মনের অনুভূতি গুলো অনেকদিন ধরে বলতে চেয়েও বলতে পারিনা। সকল কষ্ট বুকে পাথর চাপা দিয়ে ঢেকে রেখেছি শুধু তাকে হারানোর ভয়ে। নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করি, “ শ্রাবন , তুমি শর্মির জন্য নও। নিজেকে গুটিয়ে রাখো । নিজেকে সুপ্ত রাখলেই কষ্টটা একদিন কমে যাবে। প্রকাশ করলে সেটি ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকবে। ”
অামি ফেসবুকে প্রবেশ করা বাদ দিয়ে দিলাম। তার সাথে কথা যেন না বলতে পারি ! স্বল্প মুহূর্তের জন্য ঢুকে অাবার বের হয়ে যাই। তাকে ভুলে থাকার কঠিন প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু তবুও নিজেকে অার কতটুকু ধৈর্য্য ধারন করে রাখা যায় ! পারিনি ধৈর্য্যের মূল্য রাখতে ।
অামি নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারিনি।
রাতে বেলকুনিতে বসে জোৎস্না দেখছিলাম। কাজটা অামি নিয়মিত ই করি। নিজেকে ফ্রেশ রাখার একটা মাধ্যম বলা যায় । সেই রাতে অামি নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে ফেলি তার কাছে।
খুব ভয় লাগছিল সে কি করবে না করবে, সে কি ভাববে না ভাববে , কি বুঝবে না বুঝবে ভেবে। মনে হচ্ছিল খুব বড় অপরাধ করছি ।
সে মেসেজ মেসেজ পেয়ে বলে, “ সত্যিই ? ”
অামি মেসেজ দেই , “ হ্যাঁ সত্যি । ”
সে মেসেজ দিয়ে অামাকে বুঝিয়ে বলে, “ এমনটা হয় । কাউকে ভালো লাগার বিষয়টা খুব অপরাধের কিছু না । ভালো লাগতেই পারে । তবে কিছু দিন দেখবে তোমার উপন্যাসের অাদিবার মতো এমন কাউকে পেয়ে অামায় ভুলে গেছ। ”
অামি অার নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। তার মেসেজ দেখে অামার চোখের অশ্রু ঝর ঝর করে বইতে শুরু করে নিরবে। একটা মানুষ কতটুকু অনুভূতি নিয়ে কাউকে ভালোবাসলে এভাবে অশ্রুধারা বইতে পারে সেটা অামার জানা নেই।
অামি তাকে মেসেজ দিয়ে বলি, “ অামি জানি অামাদের মাঝে সেরকম সম্পর্ক কখনও গড়ে উঠা সম্ভবনা । না তুমি অামাকে মেনে নিবে , না সমাজ অামাদের মেনে নিবে। তাই এর চেয়ে বরং তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে নিজেকে গুটিয়ে রাখাই ভালো । কিন্তু অামি তোমাকে প্রচন্ড পছন্দ করি এবং ভালোবাসি। সেটা হয়ত কখনও ভুলে যাওয়া সম্ভব না। কারন , অন্য কারও মতো অামি মন নিয়ে খেলা করিনা। ”
সে মেসেজ দেখে প্রচন্ড রাগ করে বলে,
“ তুমি কখনও কথা বলা বাদ দিবে না। যদি দাও তোমাকে অামি মেরে ফেলবো বলে দিলাম । তুমি একক ভাবেই অামাকে ভালোবাসবে। কোনো সমস্যা? ”
অামি কাদব না হাসব বুঝতে পারছিনা।
তবে ক্ষানিকটুকু না হেসে পারলাম না । তবে অামি জানি যে সে অামার জীবনে এলে, অামার অানন্দের সীমা থাকবেনা। তার চঞ্চলতা , পাগলামি সব কিছুই অামাকে মুগ্ধ করেছে।
অামি অাবারও মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে বলি,
“ একক ভালোবাসায় কোনো সমস্যা নেই । তবে সারাজীবন এক ধরনের অাকাঙ্খা থেকে যায় । ”
.
অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল কথার মাঝে । বুঝতেই পারিনি। শর্মির সাথে কথা বললে মনে হয় সময় অালোর গতিতে চলে । পরের দিন ক্লাস ছিল দুজনের ই তাই অার কথা না বাড়িয়ে ঘুমোতে যাই। তবে সারারাত ঘুম হয়নি। একধরনের অাহাকার সৃষ্টি হয়েছিল মনে।
.
পরের দিন ঠিক করে ফেলি একটা গল্প লিখব অামাদের ঘটনাগুলো নিয়ে । সারাদিন তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম এমনকি ক্লাসেও মনযোগ দিতে পারছিলাম না। তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ক্লাসের সময় কেটে যায় ।
বাসায় ফিরে তাকে মেসেজ দিয়ে বলি, “ তোমাকে নিয়ে গল্প লিখব । বাস্তব কাহিনি নিয়ে । ”
সে রিপ্লাই দিয়ে বলে, “ সত্যি নাকি? তাহলে তুমি নায়ক হবে অবশ্যই । অার গল্পের শেষ যেন অানন্দের হয় । অার গল্পে অামাকে পারলে মেরে ফেলিও । ”
তার কথা শুনে অামার বুকে ব্যাপক অাহাকারের সৃষ্টি হয় । মনে হয় চরম খরায় মাটি ফেটে চির চির হয়ে গেছে। কিছু সময়ের জন্য কল্পনা করলাম , “ যদি সত্যিই এমন হয় তাহলে অামার কি হবে? কিভাবে বাচবো অামি ? তার অাশায় তো বেচে থাকা । তাকে হারিয়ে সকল অাশা, স্বপ্ন , অনুভূতির মৃত্যু ঘটবে। তাহলে অামিই বা বাচব কিভাবে ? ”
এত কিছুর চিন্তার পর তার মেসেজের রিপ্লাই দিতে অনেক দেরি হল।
অামি তাকে বুঝিয়ে বললাম ,“ তুমি কি পাগল হইছ ! তোমাকে মারবো কেন ! অামার কি হবে তখন? ? অার গল্প লিখার অাগে সব কিছু সাজানো থাকে। এখন চেঞ্জ করলে সব কিছু চেঞ্জ হয়ে যাবে । ”
সে বাধ্য মেয়ের মতো বলল, “ অাচ্ছা গল্প লেখা শেষ হলে পড়তে দিও । ”
গল্প লিখা শেষ করে তাকে পড়তে দিলাম । সে পড়ল । কিছুটা তারিফ করল এবং সাথে দুঃখ প্রকাশ করল । কারন গল্পের শেষ দুঃখের ছিল। কি জানি গল্পটি পড়ে হয়ত সে কেঁদেছিল। কিন্তু সেটি লুকিয়ে রেখেছিল । উল্টোটাও হতে পারে।
সেদিন গল্প নিয়ে কিছু কথা বলে বিদায় নিলাম তার কাছে । কারন অামার পরের দিন ক্লাস ছিল সকাল ৮ টায় । ব্যাচেলর দের জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠা খুব কষ্টকর একটা ব্যাপার।
সকালে উঠে অামি ফেসবুক অাইডি ডিএক্টিভেট করে, ফোন থেকে সিম কার্ড খুলে ভেঙ্গে ফেলি । অামি জানি শর্মি অামাকে কিছু বলতে পারছেনা। নিজেকে সে অালাদা প্রমান করতে চাইছে। কিন্তু সেটা তার জন্য কষ্টকর হচ্ছে। যাকে ভালোবাসি , তাকে কিভাবে কষ্ট দেই! তাই তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই ।
তবে অামি তাকে না দেখে থাকতে পারব না। তাই ঠিক করলাম ঢাকায় চলে যাবো, গিয়ে অামি তার কলেজের ভিক্ষা করব । সে কলেজ থেকে বের হলে প্রতিদিন দুবার অন্তত দেখা হবে সেটাই বা কম কিসে !
শর্মি সিদ্ধশ্বরী গার্লস কলেজে পড়ত ।
অামি সেদিন রাতেই চলে অাসি তার কলেজের সামনে । প্রথম কয়েকদিন তার সামনে যাইনি । দূর থেকে চেয়ে দেখেছি তাকে । শুধু দর্শনেই মনে খুশির ঢেউ বইয়ে গিয়েছিল।
কয়েকদিন কলেজের অাসে পাশের কয়েকটি হোটেলে কাজ করে নিজের চেহারার পরিবর্তন নিয়ে অাসি । ততদিনে মুখে দাড়ি , গোঁফ দিয়ে ভরে গেছে। কেউ চিনতে পারবে না ।
অামি অামার পরিবার থেকে পুরোপুরি বাইরে। হয়ত তারা অনেক খোঁজ করেছে । ভার্সিটি থেকেও হয়ত নাম কেটে গেছে।
অামি জানি তাকে অামি কখনও পাবোনা । কিন্তু তাকে ছাড়া অামিও সুখ নিয়ে বাঁচব না । তাই এভাবেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে কষ্ট হবেনা।
এভাবেই চলতে চলতে অামি তার বাসা ও চিনে ফেলি। নিয়মিত তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখতাম।
তিন বছর পরে,
শুনতে পাই , তার বিয়ে । ছেলের বাসা মানিকগঞ্জ । ছেলে পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার । শর্মির জীবন এখন সুখ অার সুখ । অামি কে ছিলাম সেটা হয়ত মনেও থাকবে না। সুন্দর এক সংসার হবে । কিছুদিন পরে ফুটফুটে দুটি বাচ্চা হবে।
অামি তখন শর্মিদের বাসার অাশেপাশে থাকা শুরু করি। সেখানেই ছোটখাটো এক ওয়ার্কশপের দোকানে কাজ করি। অার বেলকুনির দিকে তাকিয়ে থাকি কখন সে বের হবে । মায়াবী মুখ খানি একটু দেখতে পারব ।
কিছুদিন পরে শর্মির বিয়ে হয়ে যায় । অামিও তার শশুড় বাড়ির এলাকায় থাকা শুরু করি ।
অামি বুঝতে পারিনি সে অামাকে প্রতিটি জায়গায় লক্ষ্য করেছে কিন্তু কিছু বলেনি ।
.
.
একদিন ভোরে অামি ঘুমোচ্ছিলাম হোটেলের একটা বেঞ্চে । সে ডেকে তুলে অামাকে।
অামি হকচকিয়ে উঠে বসে বলি,
- কে অাপনি ?
সে রাগান্বিত চোখ নিয়ে বলল,
- কি মনে হয়? কিছু বুঝিনা অামি?
- কি বুঝেন ?
- তুমি শ্রাবন ।
অামি অাবার ও অবাক হলাম । কিছু বললাম না।
শর্মি অাবারও বলল,
- তুমি এখান থেকে চলে যাবে । তোমাকে যেন অার এই এলাকায় নি দেখি । এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে অামার । অার দেখতে হবে না। তুমি একটা কাপুরুষ । I hate you so much.
অামি অাবারও কিছু বললাম না । শুধু ক্ষানিক ক্ষন চেয়ে রইলাম তার মুখের দিকে । এতদিনের ক্রন্দনে চোখের অশ্রু হয়ত শুকিয়ে গিয়েছে । তাই অার চোখের অশ্রু দেখা গেল না।
অামি নিরবে বাধ্য ছেলের মতো সব ছেড়ে চলে অাসি ঢাকায় । অনেক অাত্নীয় থাকার পর ও কারও বাসায় যাই নি। এভাবেই পার্কে বসে, শুয়ে দিন কেটে যায় ।
.
অামি অার কিছু বলতে পারিনি । দেখছি শ্রাবন নামের ভিক্ষুক টা কাঁদছে । তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ছে, তাকিয়ে অাছে অদৃশ্য কোনো দিকে। অামি তাকে কিছু টাকা দিলাম । সে নির্দ্বিধায় হাত বাড়িয়ে টাকা নিল ।
জড়িয়ে ধরে বললাম, “ ভালো থাকবেন ভাই। অাপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি । ”
চলে অাসছি অামি । মানুষটি হয়ত অাবারও কাঁদছে। তার বুকে হয়ত অসীম কষ্ট বিদ্যমান । সুখে থাক সে এই কামনা ই করি ।
তার দিকে তাকিয়ে বললাম ,
-ভাই কি করছেন ? কেমন অাছেন ?
- অালহামদুলিল্লাহ ঠিক ঠাক। অাপনি ?
অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম মানুষটা পুরোপুরি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছে। মানুষ টি শিক্ষিত বলে মনে হল । শিক্ষিত একজন মানুষ এই অবস্থায় অাছে ভাবতেই খারাপ লাগছে।
অামি তার দিকে তাকিয়ে বললাম ,
- অামিও ভালো । তা ভাই অাপনি তো অনেক শিক্ষিত । এই অবস্থা কেন?
- গল্পটা শুনবেন ? অামি একজন সাবেক লেখক । মজা পাবেন ।
- বলুন শুনি ।
- সময়টা তখন ও প্রাপ্তিত কিছুর অানন্দে মুখরিত। প্রাপ্তি টি অপ্রকাশিত। নতুন করে স্বপ্নের বুননে সে নিজেকে ব্যাকুল করে তুলেছে। কারন স্বপ্ন বুননের ই সময় সেটি। নিজেকে অপ্রকাশিত রেখে স্বপ্নের প্রকাশনায় তার ব্যস্ততা। এমন ই একজন স্বপ্ন বুনক তার জীবনের অপ্রত্যাশিত কাহিনি শুনাবে।
বিকেল বেলা ফেসবুকে লগ ইন করে দেখি একটি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট । সাধারনতই অামি কোনো অাইডি ঝুলিয়ে রাখিনা । হয়ত confirm করি নয়ত not now করে দেই। পরিচিত ছাড়া একসেপ্ট করিনা , অার কিছু গ্রুপের সদস্য ছাড়া এড দেইনা ।
অাইডি টি অামি খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করে বুঝতে পারি অাইডি টি অামার পরিচিত একটি গ্রুপের। তাই একসেপ্ট করি। কিছুক্ষন পরেই মেসেজ দিয়ে কথা শুরু হয় । কথাগুলো এমন ছিল যেন খুব পরিচিত একজন কথা বলছে। সাধারনত মেয়েরা এত ফ্রি ভাবে কখনও কথা বলেনা। কিন্তু সে এরকম না।
মেয়েটির নাম শর্মি ।
অামি গল্প লিখি । অার সে অামার গল্প পড়ে। বলতে গেলে বলা যায় , ভার্চুয়াল পাঠক । ফেসবুকে কনভারসেশনে অামি তাকে জিঞ্জেস করি যে, “ সে কেন অামাকে এড দিয়েছে? ”
সে বলল, “ অামার লেখা গল্প তার ভালো লাগে। ”
এভাবেই কথা বলার সূচনা।
তখন তার সাথে কথা বলা শুধু গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । তার নিজস্ব বিষয়গুলো সম্পর্কেও ধারনা নেওয়া হয়েছে । সে এতদিন কে ছিল , কি ছিল , কেন ছিল ! সবকিছুই জানা হয়েছে। শুধু তাই নয় দুজনের সুখের-দুঃখের সময়গুলো সম্পর্কেও পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ ও সম্পন্ন।
তার সাথে পরিচয় হওয়ার পর বুঝলাম। সে অামার মনের মতো একজন। তখন অার কারও সাথে কথা ও বলতাম না। সারাদিন শুধু শর্মির সাথে কথা হত। প্রথম পর্যায়ে শুধু ফেসবুকে কথা হলেও মাঝের একটা সময়ে ফোন নাম্বার অাদান প্রদানেও কথা হতে শুরু করে। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে কখনও কথা হয়নি।
শর্মির অাচার-ব্যবহার ছিল কিছুটা পাগলি টাইপের। নিজেকে সে সবসময় একজন চঞ্চলা রুপে তুলে ধরত। তার চঞ্চলতা যে কারও মনে দাগ কেটে দিবে।
অামি অামার বন্ধু হিসেবে কিংবা মনের মানুষ হিসেবে যেমন একজন মানুষ খুঁজতাম , শর্মি ঠিক সেরকম ই। কয়েকদিনের মধ্যেই তার অার অামার মাঝে একধরনের বন্ধন সৃষ্টি হয়ে যায় । বন্ধনটির কথা শুধু অামিই জানতাম। ব্যাপারটি পুরোপুরি অদৃশ্য এবং অপর পক্ষের কাছে অনুভবহীন ছিল ।
অামি নিজেকে যেভাবে অানন্দ দিতে চাই , মনের কিছু সুখ-দুঃখের কথা প্রকাশ করতে চাই , ঠিক সেভাবে শর্মি ও চায় । তার চাওয়া পাওয়ার গ্রাফ টুকু সম্পর্কে বিশদ ধারনা না থাকলেও এতটুকু বুঝতে পারি যে, দুঃখের রেখাটির উচ্চতা বেশি ছিল । অামার গ্রাফ সে লক্ষ্য করেছে কি না কখনও তা ঠিক জানিনা। হয়ত লক্ষ্য করলে বুঝতে পারত অামার ও গ্রাফ তার গ্রাফের মতোই। স্বল্প সময়ের গল্পের মাঝে সে অামাকে কতটুকু বুঝেছে শুধুমাত্র সে ই জানে।
শর্মি অামার থেকে এক বছরের বড় ছিল । অামি তখন অনার্স ১ম বর্ষে এবং সে ২য় বর্ষে । যদিও অামাদের মাঝে বয়সের পার্থক্য ছিল তবুও অামরা অামাদের মেন্টালিটির গভীর কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করিনি।
একটা সময়ে অামি ভার্সিটির কিছু কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। যার কারনে ফেসবুকে অাসা হত না। ফোন নাম্বার থাকলেও ফোন দিতাম না। কারন শর্মির সাথে কথা বলতে শুরু করলে অামি কথা হারিয়ে ফেলি । যেন অামার কাছে কোনো টপিক নাই তার সাথে কথা বলার। সব শেষ করে ফেলেছি। তার ব্যাপারে সবকিছুই জানি। অথচ তাকে প্রতিটা মুহূর্তে অনুভব করার চেষ্টা করি । অবসর সময় গুলোতে তাকে নিয়ে সারাক্ষন ভাবতে থাকি।
সবসময়ের জন্য মনে হত শর্মি শুধু অামার জন্যই জন্মেছে। তার প্রতিটা সুখের কারন যদি নিজে হতে পারতাম নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবান বলে মনে হত।
শর্মি তার সব ব্যাপার অামাকে নির্দ্বিধায় বলেছিল । সে ধুমপান করত, সে ড্রিংকস করত, সে খুব চঞ্চল, সে কাউকে মারতে ও দ্বিধাবোধ করত না , তার অাগে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল । তার সবগুলো বৈশিষ্টের বিপরীত চরিত্রের মানুষ অামি । তবে সে নিজেকে মজা দেওয়ার জন্য যা যা করে অামিও ঠিক সেভাবেই দিতে চাই । কিন্ত অামি কারও কখনও সাহায্য পাইনি কিংবা এমন কোনো মানুষ কে দেখিনি।
শর্মি ছিল এমন ই একজন । অামার বিষাদময় মুহূর্তগুলো সে কিভাবে অানন্দে মুখরিত করে তুলত কখনও বুঝতে পারিনি । বুঝতে চাই ও না। শুধু সেভাবেই তাকে সারাজীবন পেতে চাই ।
অামি বুঝতে পারি অামি ধীরে ধীরে শর্মির উপর দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে সংযত রাখা দরকার। কারন তার সাথে সম্পর্কটি শেষ কখনও ভালো হবে না । সমাজ অামাদের মেনে নিবে না ।
শর্মিও হয়ত কখনও অামাকে মেনে নিবে না। এমন ও হতে পারে সে অাগে ই কাউকে মন দিয়ে বসে অাছে। অামি তাকে বললে সে খুব রাগ করতে পারে, কথা বলা বন্ধ করে দিতে পারে , অামাকে সে কখনও ই অার মন থেকে গ্রহন করতে পারবেনা।
তাই তাকে নিজের মনের অনুভূতি গুলো অনেকদিন ধরে বলতে চেয়েও বলতে পারিনা। সকল কষ্ট বুকে পাথর চাপা দিয়ে ঢেকে রেখেছি শুধু তাকে হারানোর ভয়ে। নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করি, “ শ্রাবন , তুমি শর্মির জন্য নও। নিজেকে গুটিয়ে রাখো । নিজেকে সুপ্ত রাখলেই কষ্টটা একদিন কমে যাবে। প্রকাশ করলে সেটি ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকবে। ”
অামি ফেসবুকে প্রবেশ করা বাদ দিয়ে দিলাম। তার সাথে কথা যেন না বলতে পারি ! স্বল্প মুহূর্তের জন্য ঢুকে অাবার বের হয়ে যাই। তাকে ভুলে থাকার কঠিন প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু তবুও নিজেকে অার কতটুকু ধৈর্য্য ধারন করে রাখা যায় ! পারিনি ধৈর্য্যের মূল্য রাখতে ।
অামি নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারিনি।
রাতে বেলকুনিতে বসে জোৎস্না দেখছিলাম। কাজটা অামি নিয়মিত ই করি। নিজেকে ফ্রেশ রাখার একটা মাধ্যম বলা যায় । সেই রাতে অামি নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে ফেলি তার কাছে।
খুব ভয় লাগছিল সে কি করবে না করবে, সে কি ভাববে না ভাববে , কি বুঝবে না বুঝবে ভেবে। মনে হচ্ছিল খুব বড় অপরাধ করছি ।
সে মেসেজ মেসেজ পেয়ে বলে, “ সত্যিই ? ”
অামি মেসেজ দেই , “ হ্যাঁ সত্যি । ”
সে মেসেজ দিয়ে অামাকে বুঝিয়ে বলে, “ এমনটা হয় । কাউকে ভালো লাগার বিষয়টা খুব অপরাধের কিছু না । ভালো লাগতেই পারে । তবে কিছু দিন দেখবে তোমার উপন্যাসের অাদিবার মতো এমন কাউকে পেয়ে অামায় ভুলে গেছ। ”
অামি অার নিজেকে সামলে রাখতে পারিনি। তার মেসেজ দেখে অামার চোখের অশ্রু ঝর ঝর করে বইতে শুরু করে নিরবে। একটা মানুষ কতটুকু অনুভূতি নিয়ে কাউকে ভালোবাসলে এভাবে অশ্রুধারা বইতে পারে সেটা অামার জানা নেই।
অামি তাকে মেসেজ দিয়ে বলি, “ অামি জানি অামাদের মাঝে সেরকম সম্পর্ক কখনও গড়ে উঠা সম্ভবনা । না তুমি অামাকে মেনে নিবে , না সমাজ অামাদের মেনে নিবে। তাই এর চেয়ে বরং তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে নিজেকে গুটিয়ে রাখাই ভালো । কিন্তু অামি তোমাকে প্রচন্ড পছন্দ করি এবং ভালোবাসি। সেটা হয়ত কখনও ভুলে যাওয়া সম্ভব না। কারন , অন্য কারও মতো অামি মন নিয়ে খেলা করিনা। ”
সে মেসেজ দেখে প্রচন্ড রাগ করে বলে,
“ তুমি কখনও কথা বলা বাদ দিবে না। যদি দাও তোমাকে অামি মেরে ফেলবো বলে দিলাম । তুমি একক ভাবেই অামাকে ভালোবাসবে। কোনো সমস্যা? ”
অামি কাদব না হাসব বুঝতে পারছিনা।
তবে ক্ষানিকটুকু না হেসে পারলাম না । তবে অামি জানি যে সে অামার জীবনে এলে, অামার অানন্দের সীমা থাকবেনা। তার চঞ্চলতা , পাগলামি সব কিছুই অামাকে মুগ্ধ করেছে।
অামি অাবারও মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে বলি,
“ একক ভালোবাসায় কোনো সমস্যা নেই । তবে সারাজীবন এক ধরনের অাকাঙ্খা থেকে যায় । ”
.
অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল কথার মাঝে । বুঝতেই পারিনি। শর্মির সাথে কথা বললে মনে হয় সময় অালোর গতিতে চলে । পরের দিন ক্লাস ছিল দুজনের ই তাই অার কথা না বাড়িয়ে ঘুমোতে যাই। তবে সারারাত ঘুম হয়নি। একধরনের অাহাকার সৃষ্টি হয়েছিল মনে।
.
পরের দিন ঠিক করে ফেলি একটা গল্প লিখব অামাদের ঘটনাগুলো নিয়ে । সারাদিন তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম এমনকি ক্লাসেও মনযোগ দিতে পারছিলাম না। তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ক্লাসের সময় কেটে যায় ।
বাসায় ফিরে তাকে মেসেজ দিয়ে বলি, “ তোমাকে নিয়ে গল্প লিখব । বাস্তব কাহিনি নিয়ে । ”
সে রিপ্লাই দিয়ে বলে, “ সত্যি নাকি? তাহলে তুমি নায়ক হবে অবশ্যই । অার গল্পের শেষ যেন অানন্দের হয় । অার গল্পে অামাকে পারলে মেরে ফেলিও । ”
তার কথা শুনে অামার বুকে ব্যাপক অাহাকারের সৃষ্টি হয় । মনে হয় চরম খরায় মাটি ফেটে চির চির হয়ে গেছে। কিছু সময়ের জন্য কল্পনা করলাম , “ যদি সত্যিই এমন হয় তাহলে অামার কি হবে? কিভাবে বাচবো অামি ? তার অাশায় তো বেচে থাকা । তাকে হারিয়ে সকল অাশা, স্বপ্ন , অনুভূতির মৃত্যু ঘটবে। তাহলে অামিই বা বাচব কিভাবে ? ”
এত কিছুর চিন্তার পর তার মেসেজের রিপ্লাই দিতে অনেক দেরি হল।
অামি তাকে বুঝিয়ে বললাম ,“ তুমি কি পাগল হইছ ! তোমাকে মারবো কেন ! অামার কি হবে তখন? ? অার গল্প লিখার অাগে সব কিছু সাজানো থাকে। এখন চেঞ্জ করলে সব কিছু চেঞ্জ হয়ে যাবে । ”
সে বাধ্য মেয়ের মতো বলল, “ অাচ্ছা গল্প লেখা শেষ হলে পড়তে দিও । ”
গল্প লিখা শেষ করে তাকে পড়তে দিলাম । সে পড়ল । কিছুটা তারিফ করল এবং সাথে দুঃখ প্রকাশ করল । কারন গল্পের শেষ দুঃখের ছিল। কি জানি গল্পটি পড়ে হয়ত সে কেঁদেছিল। কিন্তু সেটি লুকিয়ে রেখেছিল । উল্টোটাও হতে পারে।
সেদিন গল্প নিয়ে কিছু কথা বলে বিদায় নিলাম তার কাছে । কারন অামার পরের দিন ক্লাস ছিল সকাল ৮ টায় । ব্যাচেলর দের জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠা খুব কষ্টকর একটা ব্যাপার।
সকালে উঠে অামি ফেসবুক অাইডি ডিএক্টিভেট করে, ফোন থেকে সিম কার্ড খুলে ভেঙ্গে ফেলি । অামি জানি শর্মি অামাকে কিছু বলতে পারছেনা। নিজেকে সে অালাদা প্রমান করতে চাইছে। কিন্তু সেটা তার জন্য কষ্টকর হচ্ছে। যাকে ভালোবাসি , তাকে কিভাবে কষ্ট দেই! তাই তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই ।
তবে অামি তাকে না দেখে থাকতে পারব না। তাই ঠিক করলাম ঢাকায় চলে যাবো, গিয়ে অামি তার কলেজের ভিক্ষা করব । সে কলেজ থেকে বের হলে প্রতিদিন দুবার অন্তত দেখা হবে সেটাই বা কম কিসে !
শর্মি সিদ্ধশ্বরী গার্লস কলেজে পড়ত ।
অামি সেদিন রাতেই চলে অাসি তার কলেজের সামনে । প্রথম কয়েকদিন তার সামনে যাইনি । দূর থেকে চেয়ে দেখেছি তাকে । শুধু দর্শনেই মনে খুশির ঢেউ বইয়ে গিয়েছিল।
কয়েকদিন কলেজের অাসে পাশের কয়েকটি হোটেলে কাজ করে নিজের চেহারার পরিবর্তন নিয়ে অাসি । ততদিনে মুখে দাড়ি , গোঁফ দিয়ে ভরে গেছে। কেউ চিনতে পারবে না ।
অামি অামার পরিবার থেকে পুরোপুরি বাইরে। হয়ত তারা অনেক খোঁজ করেছে । ভার্সিটি থেকেও হয়ত নাম কেটে গেছে।
অামি জানি তাকে অামি কখনও পাবোনা । কিন্তু তাকে ছাড়া অামিও সুখ নিয়ে বাঁচব না । তাই এভাবেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে কষ্ট হবেনা।
এভাবেই চলতে চলতে অামি তার বাসা ও চিনে ফেলি। নিয়মিত তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখতাম।
তিন বছর পরে,
শুনতে পাই , তার বিয়ে । ছেলের বাসা মানিকগঞ্জ । ছেলে পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার । শর্মির জীবন এখন সুখ অার সুখ । অামি কে ছিলাম সেটা হয়ত মনেও থাকবে না। সুন্দর এক সংসার হবে । কিছুদিন পরে ফুটফুটে দুটি বাচ্চা হবে।
অামি তখন শর্মিদের বাসার অাশেপাশে থাকা শুরু করি। সেখানেই ছোটখাটো এক ওয়ার্কশপের দোকানে কাজ করি। অার বেলকুনির দিকে তাকিয়ে থাকি কখন সে বের হবে । মায়াবী মুখ খানি একটু দেখতে পারব ।
কিছুদিন পরে শর্মির বিয়ে হয়ে যায় । অামিও তার শশুড় বাড়ির এলাকায় থাকা শুরু করি ।
অামি বুঝতে পারিনি সে অামাকে প্রতিটি জায়গায় লক্ষ্য করেছে কিন্তু কিছু বলেনি ।
.
.
একদিন ভোরে অামি ঘুমোচ্ছিলাম হোটেলের একটা বেঞ্চে । সে ডেকে তুলে অামাকে।
অামি হকচকিয়ে উঠে বসে বলি,
- কে অাপনি ?
সে রাগান্বিত চোখ নিয়ে বলল,
- কি মনে হয়? কিছু বুঝিনা অামি?
- কি বুঝেন ?
- তুমি শ্রাবন ।
অামি অাবার ও অবাক হলাম । কিছু বললাম না।
শর্মি অাবারও বলল,
- তুমি এখান থেকে চলে যাবে । তোমাকে যেন অার এই এলাকায় নি দেখি । এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে অামার । অার দেখতে হবে না। তুমি একটা কাপুরুষ । I hate you so much.
অামি অাবারও কিছু বললাম না । শুধু ক্ষানিক ক্ষন চেয়ে রইলাম তার মুখের দিকে । এতদিনের ক্রন্দনে চোখের অশ্রু হয়ত শুকিয়ে গিয়েছে । তাই অার চোখের অশ্রু দেখা গেল না।
অামি নিরবে বাধ্য ছেলের মতো সব ছেড়ে চলে অাসি ঢাকায় । অনেক অাত্নীয় থাকার পর ও কারও বাসায় যাই নি। এভাবেই পার্কে বসে, শুয়ে দিন কেটে যায় ।
.
অামি অার কিছু বলতে পারিনি । দেখছি শ্রাবন নামের ভিক্ষুক টা কাঁদছে । তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ছে, তাকিয়ে অাছে অদৃশ্য কোনো দিকে। অামি তাকে কিছু টাকা দিলাম । সে নির্দ্বিধায় হাত বাড়িয়ে টাকা নিল ।
জড়িয়ে ধরে বললাম, “ ভালো থাকবেন ভাই। অাপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি । ”
চলে অাসছি অামি । মানুষটি হয়ত অাবারও কাঁদছে। তার বুকে হয়ত অসীম কষ্ট বিদ্যমান । সুখে থাক সে এই কামনা ই করি ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন