বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে অনিলা বললো," তারপর কেমন আছো? "
আমি পথের পাঁচালীর শেষ পরিচ্ছদটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম, বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে অন্যমনস্ক হয়ে ঘাড়টা ঘুরিয়ে বললাম, " এইতো আছি বেশ। "
অনিলার মুখে বোধহয় রাগের ছাপ পড়েছিলো। অবশ্য আমি খেয়াল করে দেখিনি। তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো, " উপন্যাসটা বোধহয় তোমার খুব প্রিয়?
আমি একগাল হেসে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললাম, " হুম..ভালোই তো লাগছে।, কেন তুমি কি এটা আগে পড়েছ.? "
অনিলার কপালের ভাঁজটা এবার মিলিয়ে গেল। মুখে একটা আদুরে ভাব এনে বলল, " পড়েছি বৈকি। উপন্যাসটা দারুন, আবার সেই ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়।" তারপর অনিলার কপালে আবার সেই ভাঁজ পড়লো। তারপর বললো, "তবে দূর্গা মারা যাওয়াতে মনে খুব কষ্ট পেয়েছি। "
আমি শুধু বললাম, "হুম "
অনিলা হঠাৎ আমার উপরে চটে গিয়ে বললো, " এই ছেলে তোমার কি কোনও কান্ডজ্ঞান নেই? এখানে একটা মেয়ে বসে আছে আর তুমি সমান তালে সিগারেট ফুকে যাচ্ছ.?"
আমি এবার লজ্জিত হয়ে বললাম, "ওহ সরি আমি তো খেয়ালই করিনি।"
-- ইটস ওকে! আমার ধোঁয়ার গন্ধে কিছু মনে হয়না, তবে আগুনের শিখা বড় অসহ্য লাগে।
-- ওহহ...তাই বুঝি?
যাক সে কথা প্রায় পাঁচ বছর পরে মামার বাড়িতে যাচ্ছি। পড়াশোনা শেষে চাকরি বাকরির ব্যাস্ততার কারনে এতদিন সময় হয়ে ওঠেনি। অনেকদিন পর সপ্তাহ খানেকের অবকাশ মিলেছে তাই আজ সকালে ট্রেনে চেপে বসলাম। ট্রেনের ঘটরঘটর শব্দ আর যাত্রীদের চেচামেচিতে মেজাজ বিগরে যায়, সেজন্য একটা ফার্স্ট ক্লাস কামরায় উঠে বসলাম। অন্তত যাত্রীদের অযাচিত চেচামেচি আর হকারদের হাঁকডাক থেকে বাঁচা যাবে। ট্রেনের দরজা ভিতর থেকে আটকানো। অন্তত হকারেরা ঢুকতে পারবেনা। সাথে করে পথের পাঁচালী উপন্যাসটা নিয়ে এসেছিলাম। সেটাতেই চোখ বুলাচ্ছিলাম আপন মনে। অপু দূর্গার দুরন্তপনা ছেলেবেলাটা বেশ ভালোই লাগছে। বনে বাদারে ঘুরে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনাগুলো আমার ছেলেবেলাকার কথা জাগিয়ে তুলছে। হ্যাঁ হঠাৎ অনিলার কথা মনে পড়ে গেল। যাকে আমি অনি বলে ডাকতাম। মামা বাড়িতে গিয়ে যে কয়দিন থাকতাম সবসময় অনির সাথেই খেলা করতাম। সারা দুপুরে দুজনে বনে বাদারে ঘুরে ঘুরে বুনো বরই আর বৈচি ফল কুড়িয়ে বেড়াতাম। বিকেল হলেই প্রতিদিন বসতো চড়ুইভাতির আড্ডা।
শৈশবকে নেড়েচেড়ে দেখছিলাম হঠাৎ বাইরে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনলাম। কে যেন বাইরে থেকে দারজা খোলার আকুতি জানাচ্ছে। আমি কোনও হকার ভেবে দরজা না খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম। পরে খেয়াল করে দেখলাম একটা মেয়েলি কন্ঠে কে যেন আমার নাম ধরেই ডাকছে। কে হতে পারে? কে এই অচেনা জায়গায় আমার নাম ধরে ডাকছে? আমার মনে কৌতুহল জেগে উঠলো। এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। প্রথমে ঠাহর করতে পারিনি, পরে যখন চিনতে পারলাম তারপর বিস্ময়ের ভিতরে পরে গেলাম। এতে দেখছি অনিলা। আমার ছেলেবেলার সেই অনি। আমি দরজা ছেড়ে একপাশে সরে দাড়ালাম। অনি এক ঠোঙা চিনে বাদাম হাতে, হাসতে হাসতে ভিতরে ঢুকলো। আমি দরজা এটে অনির সামনের ছিটে এসে বসে বললাম, "তুমি?"
অনি একগাল হেসে বললো," চিনতে পেরেছ তাহলে? "
আমি বইটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতে উল্টালে বললাম, " না চেনার কি আছে? তবে হঠাৎ এভাবে আগমন? আর আমি যে এই কামরাতে আছি সেটাই জানলে কিভাবে? "
অনিলা বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো, "তুমি যখন টিকিট কিনছিলে তখনই তোমাকে দেখেছি। "
আমি একগাল হেসে দিলাম।
•
সিগারেটটা নিভিয়ে বললাম, " এদিকে কোথায় গিয়েছিলে? "
অনিলা অন্যমনস্ক হয়ে বাদাম চিবুচ্ছিলো, আমার দিকে মুখ তুলে বললো, " যাব আর কোথায়, আমার কাজই এখন সারাদেশে বিচরন করে বেড়ানো "
-- মানে? তোমরা কথা ঠিক বুঝলাম না।
আমি পথের পাঁচালীর শেষ পরিচ্ছদটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম, বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে অন্যমনস্ক হয়ে ঘাড়টা ঘুরিয়ে বললাম, " এইতো আছি বেশ। "
অনিলার মুখে বোধহয় রাগের ছাপ পড়েছিলো। অবশ্য আমি খেয়াল করে দেখিনি। তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো, " উপন্যাসটা বোধহয় তোমার খুব প্রিয়?
আমি একগাল হেসে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললাম, " হুম..ভালোই তো লাগছে।, কেন তুমি কি এটা আগে পড়েছ.? "
অনিলার কপালের ভাঁজটা এবার মিলিয়ে গেল। মুখে একটা আদুরে ভাব এনে বলল, " পড়েছি বৈকি। উপন্যাসটা দারুন, আবার সেই ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়।" তারপর অনিলার কপালে আবার সেই ভাঁজ পড়লো। তারপর বললো, "তবে দূর্গা মারা যাওয়াতে মনে খুব কষ্ট পেয়েছি। "
আমি শুধু বললাম, "হুম "
অনিলা হঠাৎ আমার উপরে চটে গিয়ে বললো, " এই ছেলে তোমার কি কোনও কান্ডজ্ঞান নেই? এখানে একটা মেয়ে বসে আছে আর তুমি সমান তালে সিগারেট ফুকে যাচ্ছ.?"
আমি এবার লজ্জিত হয়ে বললাম, "ওহ সরি আমি তো খেয়ালই করিনি।"
-- ইটস ওকে! আমার ধোঁয়ার গন্ধে কিছু মনে হয়না, তবে আগুনের শিখা বড় অসহ্য লাগে।
-- ওহহ...তাই বুঝি?
যাক সে কথা প্রায় পাঁচ বছর পরে মামার বাড়িতে যাচ্ছি। পড়াশোনা শেষে চাকরি বাকরির ব্যাস্ততার কারনে এতদিন সময় হয়ে ওঠেনি। অনেকদিন পর সপ্তাহ খানেকের অবকাশ মিলেছে তাই আজ সকালে ট্রেনে চেপে বসলাম। ট্রেনের ঘটরঘটর শব্দ আর যাত্রীদের চেচামেচিতে মেজাজ বিগরে যায়, সেজন্য একটা ফার্স্ট ক্লাস কামরায় উঠে বসলাম। অন্তত যাত্রীদের অযাচিত চেচামেচি আর হকারদের হাঁকডাক থেকে বাঁচা যাবে। ট্রেনের দরজা ভিতর থেকে আটকানো। অন্তত হকারেরা ঢুকতে পারবেনা। সাথে করে পথের পাঁচালী উপন্যাসটা নিয়ে এসেছিলাম। সেটাতেই চোখ বুলাচ্ছিলাম আপন মনে। অপু দূর্গার দুরন্তপনা ছেলেবেলাটা বেশ ভালোই লাগছে। বনে বাদারে ঘুরে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনাগুলো আমার ছেলেবেলাকার কথা জাগিয়ে তুলছে। হ্যাঁ হঠাৎ অনিলার কথা মনে পড়ে গেল। যাকে আমি অনি বলে ডাকতাম। মামা বাড়িতে গিয়ে যে কয়দিন থাকতাম সবসময় অনির সাথেই খেলা করতাম। সারা দুপুরে দুজনে বনে বাদারে ঘুরে ঘুরে বুনো বরই আর বৈচি ফল কুড়িয়ে বেড়াতাম। বিকেল হলেই প্রতিদিন বসতো চড়ুইভাতির আড্ডা।
শৈশবকে নেড়েচেড়ে দেখছিলাম হঠাৎ বাইরে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনলাম। কে যেন বাইরে থেকে দারজা খোলার আকুতি জানাচ্ছে। আমি কোনও হকার ভেবে দরজা না খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম। পরে খেয়াল করে দেখলাম একটা মেয়েলি কন্ঠে কে যেন আমার নাম ধরেই ডাকছে। কে হতে পারে? কে এই অচেনা জায়গায় আমার নাম ধরে ডাকছে? আমার মনে কৌতুহল জেগে উঠলো। এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। প্রথমে ঠাহর করতে পারিনি, পরে যখন চিনতে পারলাম তারপর বিস্ময়ের ভিতরে পরে গেলাম। এতে দেখছি অনিলা। আমার ছেলেবেলার সেই অনি। আমি দরজা ছেড়ে একপাশে সরে দাড়ালাম। অনি এক ঠোঙা চিনে বাদাম হাতে, হাসতে হাসতে ভিতরে ঢুকলো। আমি দরজা এটে অনির সামনের ছিটে এসে বসে বললাম, "তুমি?"
অনি একগাল হেসে বললো," চিনতে পেরেছ তাহলে? "
আমি বইটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতে উল্টালে বললাম, " না চেনার কি আছে? তবে হঠাৎ এভাবে আগমন? আর আমি যে এই কামরাতে আছি সেটাই জানলে কিভাবে? "
অনিলা বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো, "তুমি যখন টিকিট কিনছিলে তখনই তোমাকে দেখেছি। "
আমি একগাল হেসে দিলাম।
•
সিগারেটটা নিভিয়ে বললাম, " এদিকে কোথায় গিয়েছিলে? "
অনিলা অন্যমনস্ক হয়ে বাদাম চিবুচ্ছিলো, আমার দিকে মুখ তুলে বললো, " যাব আর কোথায়, আমার কাজই এখন সারাদেশে বিচরন করে বেড়ানো "
-- মানে? তোমরা কথা ঠিক বুঝলাম না।
-- থাক বোঝার প্রয়োজন নেই। না বোঝাটাই উত্তম।
এই বলে বাদামের ঠোঙাটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, " নাও বাদাম খাও। "
-- নাহ খাব না তুমিই খাও।
এই বলে বাদামের ঠোঙাটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, " নাও বাদাম খাও। "
-- নাহ খাব না তুমিই খাও।
--হুম.!! তুমি বোধহয় আমাদের ওখানেই যাচ্ছ.?
--হুম!!
-- এতদিন পরে আমাদের কথা মনে পড়ল? এই পাঁচ বছরে কি একবারও এই অনির কথা মনে পড়েনি?
আমি ইতস্তত হয়ে বললাম আসলে পড়াশোনা শেষে চাকরির ঝামেলায় এদিকে আর আসা হয়নি। তাছাড়া গত ৪ বছরে পড়াশোনার কারনে সিংগাপুরে থাকার কারণে তেমন একটা খোঁজখবর নেওয়া হয়নি।
অনিলার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। একদৃষ্টে চেয়ে আছে আমার দিকে। যে চোখে শুধুই মায়া। শুধুই ভীরুতা ভরা। যে মায়ার আর ভীরুতা আমাকে প্রেমে আটকে ফেলেছিলো। যার রেশ এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে সমস্ত মনপ্রান জুড়ে। তবে আমি আজীবনই অভাগা। আজীবনই মুখচোরা। যার খেসারত আমাকে বারবার দিতে হয়েছে। কেন সেদিন মুখ ফুটে অনিলাকে বলতে পারিনি ভালোবাসি কথাটা। অবশ্য অনিলাই ছেলেবেলায় আমাকে বলেছিলো আমরা বড় হলে প্রেম করবো। একথা শোনার পর থেকে লজ্জায় আমি আর অনিলাদের বাড়িতে যেতাম না। অনিলাকে দেখলেই লজ্জায় গাল লাল হয়ে যেত, আর এই অবস্থা দেখে অনিলা শুধু মুখ টিপে হাসতো।
অনিলা আমার কল্পনায় ভাটা ফেলে বললো, " কি মশাই জেগে জেগে ঘুমাচ্ছ নাকি? "
আমি একগাল হেসে বললাম, " বলো তোমার কি অবস্থা? এখন কি করছ? "
অনিলার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। একদৃষ্টে চেয়ে আছে আমার দিকে। যে চোখে শুধুই মায়া। শুধুই ভীরুতা ভরা। যে মায়ার আর ভীরুতা আমাকে প্রেমে আটকে ফেলেছিলো। যার রেশ এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে সমস্ত মনপ্রান জুড়ে। তবে আমি আজীবনই অভাগা। আজীবনই মুখচোরা। যার খেসারত আমাকে বারবার দিতে হয়েছে। কেন সেদিন মুখ ফুটে অনিলাকে বলতে পারিনি ভালোবাসি কথাটা। অবশ্য অনিলাই ছেলেবেলায় আমাকে বলেছিলো আমরা বড় হলে প্রেম করবো। একথা শোনার পর থেকে লজ্জায় আমি আর অনিলাদের বাড়িতে যেতাম না। অনিলাকে দেখলেই লজ্জায় গাল লাল হয়ে যেত, আর এই অবস্থা দেখে অনিলা শুধু মুখ টিপে হাসতো।
অনিলা আমার কল্পনায় ভাটা ফেলে বললো, " কি মশাই জেগে জেগে ঘুমাচ্ছ নাকি? "
আমি একগাল হেসে বললাম, " বলো তোমার কি অবস্থা? এখন কি করছ? "
-- এইতো আছি। একাএকা ঘুরছি ফিরছি।
-- তোমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝছিনা, একটু খুলে বলো।
-- বাদ দাও আমার কথা। বলো তোমার কি অবস্থা?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম," এইতো পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি করছি।"
অনিলার কপালে একটা চিন্তার বলিরেখা টের পেলাম। বাদামের ঠোঙাটা জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো, " বিয়ে করনি? "
অনিলার কপালে একটা চিন্তার বলিরেখা টের পেলাম। বাদামের ঠোঙাটা জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো, " বিয়ে করনি? "
-- নাহ।
-- ওহহ।
ট্রেন আপন গতিতে ছুটে চলছে। জয়দেবপুরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছে সুন্দরপুরের দিকে। জানালা ভেদ করে হুহুহু করে বাতাস ঢুকছে। শরীরে একটা মাতলা ভাব জেগে উঠেছে। বেলা গড়িয়ে দুপুরের পথে। মাঠের চাষারা ক্লান্তির রেশ কাটাতে গাছের ছায়ায় গামছা বিছিয়ে বসে আছে। পক্ষিকুলেরা গাছের শাখায় বসে কলকাকলিতে মুখর।
নিদ্রা দেবী আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। ঘুমের মাতাল ভাব ক্রমেই আমাকে বশীভুত করে তুলছে।
.
ঘুম যখন ভাঙ্গলো বেলা তখন পশ্চিমে গড়িয়েছে। সমস্ত গা জুড়ে ঘুমকাতুরে অবশ ভাব জুড়ে আছে। চোখ কচলে দেখি অনিলা নেই। সামনের সিটে কয়েকটা বাদাম খোসা এলোমেলোভাবে ছড়ানো। বাতাসের ঝাপটায় খোসাগুলো এলোপাতাড়ি দুলছে। মনে হচ্ছে ক্ষনকাল আগেও কেউ এখানে বসে ছিলো। তবে অনিলা হঠাৎ করে কোথায় গেল? নাকি কোনও স্টেশনে নেমে পড়েছে? নাকি এতক্ষণ ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখেছিলাম?
হঠাৎ করে বাদামের খোসার ভীড়ে একটা কানের দুল আমার দৃষ্টিটাকে আটকে দিলো। নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলাম দুলটাকে। অনেকটা চেনাচেনা লাগছে। হ্যাঁ কোনও এক বৈশাখী মেলায় ঠিক এই রকমই একজোড়া দুল কিনে দিয়েছিলাম অনিলাকে। তাহলে সত্যিই কি অনিলা এসেছিল?
আমি দুলটাকে বুক পকেটে রেখে দিলাম।
ট্রেন থেমে গেছে। বাইরে কুলির হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে। বোধহয় গন্তব্যে এসে গেছি।
•
সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মামাবাড়িতে পৌছালাম। হাতমুখ ধুয়ে মামাতো ভাই সুমনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ অনিলার কথা মনে পড়লো। সুমনকে জিজ্ঞাসা করলাম, " আচ্ছা অনিলার খবরাখবর কি রে? এখন কি করে?
আমার কথায় সুমন রিতিমত ভড়কে গেল। খানিকক্ষন হাঁ করে থেকে বললো, "অনিলা মানে? কোন অনিলা? "
আমি একগাল হেসে বললাম, " আরে আমজাদ মামার মেয়ে অনিলা। একসাথে ট্রেনে আসলাম অনেকপথ, কিন্তু আমাকে না বলে যে কোথায় নেমে গেছে বুঝতে পারিনি। "
সুমনের চোখদুটো বড় হয়ে গেছে। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো, " বলো কি? অনিলাতো সেই ৫ বছর আগে মারা গেছে। "
এবার আমি ভড়কে গেলাম। বিস্ময়ের বলিরেখা এখন আমার সমস্ত কপাল জুড়ে। আমি অনেকটা চেঁচিয়ে বলে উঠলাম, মানে?
নিদ্রা দেবী আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। ঘুমের মাতাল ভাব ক্রমেই আমাকে বশীভুত করে তুলছে।
.
ঘুম যখন ভাঙ্গলো বেলা তখন পশ্চিমে গড়িয়েছে। সমস্ত গা জুড়ে ঘুমকাতুরে অবশ ভাব জুড়ে আছে। চোখ কচলে দেখি অনিলা নেই। সামনের সিটে কয়েকটা বাদাম খোসা এলোমেলোভাবে ছড়ানো। বাতাসের ঝাপটায় খোসাগুলো এলোপাতাড়ি দুলছে। মনে হচ্ছে ক্ষনকাল আগেও কেউ এখানে বসে ছিলো। তবে অনিলা হঠাৎ করে কোথায় গেল? নাকি কোনও স্টেশনে নেমে পড়েছে? নাকি এতক্ষণ ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখেছিলাম?
হঠাৎ করে বাদামের খোসার ভীড়ে একটা কানের দুল আমার দৃষ্টিটাকে আটকে দিলো। নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলাম দুলটাকে। অনেকটা চেনাচেনা লাগছে। হ্যাঁ কোনও এক বৈশাখী মেলায় ঠিক এই রকমই একজোড়া দুল কিনে দিয়েছিলাম অনিলাকে। তাহলে সত্যিই কি অনিলা এসেছিল?
আমি দুলটাকে বুক পকেটে রেখে দিলাম।
ট্রেন থেমে গেছে। বাইরে কুলির হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে। বোধহয় গন্তব্যে এসে গেছি।
•
সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মামাবাড়িতে পৌছালাম। হাতমুখ ধুয়ে মামাতো ভাই সুমনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ অনিলার কথা মনে পড়লো। সুমনকে জিজ্ঞাসা করলাম, " আচ্ছা অনিলার খবরাখবর কি রে? এখন কি করে?
আমার কথায় সুমন রিতিমত ভড়কে গেল। খানিকক্ষন হাঁ করে থেকে বললো, "অনিলা মানে? কোন অনিলা? "
আমি একগাল হেসে বললাম, " আরে আমজাদ মামার মেয়ে অনিলা। একসাথে ট্রেনে আসলাম অনেকপথ, কিন্তু আমাকে না বলে যে কোথায় নেমে গেছে বুঝতে পারিনি। "
সুমনের চোখদুটো বড় হয়ে গেছে। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো, " বলো কি? অনিলাতো সেই ৫ বছর আগে মারা গেছে। "
এবার আমি ভড়কে গেলাম। বিস্ময়ের বলিরেখা এখন আমার সমস্ত কপাল জুড়ে। আমি অনেকটা চেঁচিয়ে বলে উঠলাম, মানে?
-- হ্যাঁ। ৫বছর আগে সখিপুরে এক বনেদি পরিবারে বিয়ে হয়েছিল অনিলার। কিন্তু বিয়ে দুদিনও টিকেনি। অনিলা বিয়ের পরেরদিন পালিয়ে এসে পদ্মপুকুরে গলায় কলসি বেধেঁ ডুবে মরেছিলো।
আমি চুপসে গেলাম। উফ তাহলে কি সারাপথ আমি....????
মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুড়ছে। যন্ত্রণায় কপালটা টনটন করছে। পকেট থেকে দুলটা বের করে একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম দুলটার দিকে।
মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুড়ছে। যন্ত্রণায় কপালটা টনটন করছে। পকেট থেকে দুলটা বের করে একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম দুলটার দিকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন