সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭

রং

বহুদিন ক্ষয় করে মেয়েটির পিছে বহু সময় নষ্ট করছি,আজ তার শেষ দেখার সময় এসে গেছে।আজ ওকে বলতেই হবে, আমি ওকে ভালবাসি বড্ড বেশি,অনেক বেশি।
.
ঐ তো মেয়েটি আসছে।বলব আমি, বলতেই হবে আমাকে।বুক দুর দুর কাপুনি,একরাশ আশা নিয়ে...
.
আমি:এই যে মিস, শুনুন..
মেয়েটি:জ্বী বলুন..
- আই লাভ ইউ..
- ওয়াট!!!
- ভালবাসি আপনাকে..
- মানে কি?
- যা বলছি তাই।এটাই সত্য..
- আপনি আমায় চিনেন?
- হুম..
- বলুন,আমার নাম কি?
- ইয়ে মানে!!!
- হা হা, নাম জানেনা।ভালবাসতে আসছে।কি আজব!!(হেসে)..
- আমি কিন্তু সত্যিই ভালবাসি..
- বুঝতে পারছি,কতটুকু ভালবাসেন..
- নিশ্চুপ...
.
মেয়েটি চলে যাচ্ছে,অবাকতার মাঝে খানিকটা হাসতে হাসতে।আমি টাসকি খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবতাছি,
আজবের মত ভালবাসলাম,গজবের মত ঠাডা পড়লো..
নাম ঠিকানা না জেনে,মেয়েটি আমায় রাম বলদ বানালো..
.
কেমন প্রেমিক আমি!ভালবাসি কিন্তু নাম জানিনা।কি আজব!!
আসলে,মেয়েটিকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ছিলাম।
.
প্রায় দুই মাস আগে,
রাস্তার মাঝে বিড়ি টানছিলাম আর হাঁটছিলাম।কি মজা হয়!!এমনকরে চলতে।
সে যাই হোক,ভার্সিটির সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে।দুর থেকে বেশ ভালই লাগছে।দেখি একটু সামনে গিয়ে।অতপর ভার্সিটির সামনে পদার্পন,সাথে সাথে চোখ কপালে।কি করে, এত সুন্দর হয়!!কি করে তার থেকে চোখ নামাই!!
কি মিষ্টি চেহারা!দেখতে যেন অস্পর্সা।
.
আচ্ছা, আমি কি বিভোর হলাম!মনেহয়,হয়ে গেছি।প্রথম দেখাতেই আমি যে..
তার মাঝে হয়েছি বিভোর,
রুপের ঝলকে কাটে না এ ঘোড়,
সে যে প্রথম দেখা রাজকণ্যা,
আমার গগণে সেই অস্পর্সা।
.
হায় হায়!কবিতা বানালাম নাকি কবি হলাম!!ধুর,আমি যে কি?নিজেও জানিনা।
বলতে পারো,প্রেমে পড়লে মানুষ কবি হয়, এটা কি সত্যি?
সত্যি হোক বা মিথ্যা,প্রথম দেখাতেই চোখ কপালে,মুড়তে চাই তার ভালবাসার আদলে।
.
শুরু হল আমার দেখা,প্রতিটা দিন ভার্সিটির সামনে তার অপেক্ষা।কখন দেখতে পাব!কখন তার পিছে একটু হাঁটবো!
প্রতিটা দিন কেঁটে যায়, এমন করে।ভালই লাগছে।কিন্তু বেশ কদিন হল, মেয়েটি আমার দিকে আড় চোখে দেখতে থাকে।তবে কিছু বলেনা।অথচ খানিকটা দিন পেরিয়ে গেছে তার নামটাও জানা হয় নি।
যাই হোক, আমি তার প্রেমে পড়েছি।রাত দিন একাকার,সে কি হবে আমার!!
হবে কিনা জানিনা,তবে তাকে আমার চাই।সে যে মনের অন্তরায়।
.
আজকাল সিগারেটও তেমন মজা পাইনা,মেয়েটিকে না দেখলে আমার দিন যেন কাটে না।
কি করে কাটবে?মেয়েটি বাস্তবতা,কল্পনা সব জায়গাতেই আমার মনে থাই করছে।তবে কি করে কাটবে!!
এই মেয়েটি আমার নেশা,দেখার নেশা,চাওয়ার নেশা।
.
আজ প্রায় দুই মাস পর প্রপোজ করলাম,কিন্তু এটা কি হল!!এবার আমায় জানতে হবে তার নাম,তার সবকিছুই।তারপর আবার প্রপোজ করব।যেহেতু মেয়েটি আমার দিকে তাকায়,সেহেতু আমায় ভালবাসে হয়ত।সে যাই হোক, এবার ডিটেইলস্ নেবার পালা।
.
এলাকার ছোটভাই আর ভার্সিটির কিছু ছেলেকে কাজে লাগিয়ে,তার সব ডিটেইলস্ বর্তমানে মাথার মাঝে ঘুর ঘুর করছে।যা নিতে মাএ তিন দিন ক্ষয় করতে হয়েছে।
আজও আসছে,যাই এবার সব প্রস্তুতি নিয়ে প্রপোজ করি..
.
আমি:হ্যালো,একটু কথা ছিল।সময় হবে? 
মেয়ে:আজ আবার কি বলবেন?
-ওই যে,ওটাই..
-মানে?
-সেদিন যা বলছি,তবে আজ আপনার সম্পর্কে সব জেনে আসছি।
-হা হা,কি কি জানলেন?
-আপনার নাম "জান্নাতুল ইসলাম রুবি"।ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি,বেশ ভাল ছাএী।জায়গাতে নতুন আর আপনার বাবা একজন বড় বিজন্যাস ম্যান।
-তারমানে সব জানেন?
-হয়ত..
-তো কতদিন যাবত দেখছেন আমায়?
-দুই মাসের মত হবে..
-তবে,আমার নামটাও জানতে চাননি কেন?
-জানিনা..
-হা হা,ভাল..
-হুম।
-আজ তো সব জানেন,তবে প্রপোজ করছেন না কেন?
-তার মানে, আপনিও?
-না হলে, দেখতাম কি এমনিতে?
-হা হা..
-এবার তো করবেন!
-হুম,আই লাভ ইউ..
-লাভ ইউ টু..
.
শুরু হল প্রেমবন্ধন।আরেক চাওয়ার দিক,এদিক যে সারাজীবন পাশে থাকার।সেজন্যই হয়ত তার হাত ধরা।প্রায়দিনই তার সাথে আমার দেখা আর কথা হয়, মাঝে মাঝে বেরিয়ে পরা, সাথে খানিকটা আড্ডা দেওয়ার মাঝে দিনশেষ।এমন করেই চলতে,তবে সেই যে আঁকরে ধরা হাত আজও ছাড়ে নি।এ যেন..
.
রুবির হাতে আমার হাত,
স্বপ্ন গড়ায় প্রতি রাত,
রুবি যে আমার জীবনের চাওয়ায়,
ফুরাবেনা এ আশা জীবনের ধরায়।
.
"হ্যা"দিনগুলাে সব স্বপ্নের মত পার হয়ে যাচ্ছে।বেশ ভালই লাগছে,সিগারেটও ছারতে হয়েছে রুবির জন্য।আমার কোন খারাপ দিক রুবি সহ্য করতে পারে না।সহ্য করতে পারে না,আমার অঘটন।বাস্তবতায় এমন কাওকে পাওয়া হয়ত ভাগ্যের ব্যাপার।আমার মত একটা ছেলের জন্য,
ও আমার পরিচয়ই তো জানানো হয় নি।সরি সরি,বলতাছি।
আমি নাজিম,মধ্যবিও পরিবারের একজন ছেলে,এ এলাকাতেই অবস্থান।লিখাপড়া শেষ করে,বেকার হয়ে পড়ে আছি।
.
এমন একটাে ছেলের সাথে রুবির ভালবাসা।এটা কি অবাক করার মত নয়!হুম,এটা সত্যিই অবাক করার মত।যদি না হত,তবে আজ কাল রুবির ঘৃণায় সিক্ত হতাম না।বেশ কদিন যাবত বড্ড বেশি অবহেলায় দিন কাটছে আমার।খুব অবহেলা গো, খুব।
ডাকলে সারা পাইনা,ফোন দিলে কেটে দেয়।আবার ঝারিও খেতে হয়।
আচ্ছা,ধনীদের সাথে প্রেম করা যায় না, নাকি তাদের যোগ্যতা আমাদের নেই!!
ধনীরা র সাথে প্রেম করা যায় না, নাকি তাদের যোগ্যতা আমাদের নেই!!
ধনীরা কি শুধু ব্যবহার করতে জানে,নাকি আবেগের ছাপ তাদের বিষমাখা একেকটা ছুরি।
.
কিছু জানিনা আমি, আমার রুবিকে চাই।ভালবাসার সে রুবিকে চাই।খানিকটা দিন পেরিয়েছে,ঘৃণারা অতিমাএায় এড়িয়ে গেছে আজ রুবির সামনে দাঁড়াতেই হবে।যে করেই হোক,
.
আমি যে থাকতে পারিনা রুবি ছাড়া,
রুবির ভালবাসায় জীবন যে আজ গড়া,
তবে কেন সে রুবি আজ ছন্নছাড়া!
রুবির সামনে দাঁড়িয়ে আছি,কারো কোন কথা নেই।নিরবতা গ্রাস করে আমি নিজেই...
.
আমি:রুবি,আগের মত কি আছ!
রুবি:এটা কেমন কথা?
-চিন্তাধারা পাল্টে গেছে তাইনা?
-মানে???
-আমি খুব বিরক্তিকর তাইনা রুবি?
-বুঝতাছি না কিছু।
-ভালবাসা কি গো রুবি?
-ভালবাস আমায়?
-জীবনের চেয়েও বেশি।
-তবে এসব প্রশ্নের মানে কি?
-জানিনা,আচ্ছা বলতে পার,জীবনটা ভালবাসায় অস্ফুট কেন?
-নাজিম।
-হুম বলো।
-থামবা?
-কি করে?
-কি করছি আমি?
-কি করনি বলো?
-তুমি বলো কি করছি?
-আচ্ছা বাদ দাও,আমি হয়ত তোমার যোগ্য ছিলাম না।এটা বুঝতে পারি নি।
-নাজিম।
-হুম।
-সব খুলে বলো।
-কি বলব!কি বলার আছে আমার!!সব জান তুমি,সব সব।
-কিছু জানিনা আমি।
-ওহ,তাইনা।আমায় ঘৃণা করতে শিখে গেছ,সবাইকে আমার নামে কটুকথা বলতে পারো,ভার্সিটিতে আমি কে?তা বলতে দ্বিধা বোধ করো,আজকাল নবপ্রেমে ভেসে গেছ।আমার একচিমটি গুরুত্বও নেই তোমার কাছে।তবে কি???
-ও,বেশি বুঝছো।
-সঠিক বুঝছি।
-কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
-তোমার ভালবাসা কি মিথ্যা?
-তারপর?
-আমি কি তোমার যোগ্য নই?
-তারপর?
-আমার চোখে কি মায়া পাওনি?
-অতপর?
-উওর দাও সবকিছুর,উওর দাও।
-"হ্যা"আমার ভালবাসা মিথ্যা।তুমি আমার যোগ্য না,কি করে যোগ্যতা পাবে?তুমি তো ফকিরের বাচ্চা।আর মায়া!!হা হা,ফকিরদের চোখে মায়া থাকে।তোমায় আমি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছি,ভালবাসতে নয়।মনে রেখো,নিজ কালচারের ছাড়া ভালবাসা আসে না।
-নিশ্চুপ আমি।
-আচ্ছা বাই,ভাল থেকো।
-নিশ্চুপ।
.
রুবি চলে যাচ্ছে উওরে,আমার বুকটাকে বিষমাখা ছুরি দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে।আমি তাকাতে পারছিনা তার দিকে,তার দিকে দেখব কি করে?সে যে অধরার বেশি,তার জন্য যোগ্যতার দরকার।পিছন তাকিয়েছে কি না জানিনা,তবে সে যে আমায় শেষ করছে তাতেই হয়ত খুশি।
.
জানিনা,আমি কি অবাক!নাকি হতবাক!!
গলা এটে আসছে কেন?পানি চাই,একটু পানি চাই।কষ্টে বুকটা ফেটে গেছে হয়ত।বুকটা কাতর আমার,দাও প্লীজজ আমায় পানি দাও।
কেউ বলেছিল,কষ্টের রং নীল।তবে বর্ণহীন পানিতে কি তৃষ্ণা মিটবে?না,মিটবে না।এ যে কষ্টের ছায়া।খুব কষ্ট হচ্ছে গো!!খুব খুববব।নিচের দিকে চেয়ে আছি,জলকণা চোখের পর্দা ভেদ করে ঝরে যাচ্ছে,
একেক পর একফোঁটা,
বুকটা যেন কষ্টে গাঁথা,
রুবি দিল বিষমাখা ছুরি,
সে বিষেতে শেষ,জীবনের তরী।
.
আচ্ছা আমার জীবন কি শেষ?
মনেহয়, আমি যে বেঁচে আছি অধরায়,না পাওয়ায়।
.
বলতে পারো?টাকার কাছে কি ভালবাসা অসহায়!না পারবে না,উওর যে দুদিকেই বাঁকানো যায়।
টাকা গরীবকে গড়তে শেখায়, আবার টাকাই ধ্বংস করে একেকটা দিক।নষ্ট করে মানুষত্ব।হয়ত আমার রুবিও তার বিপরীত ছিল না।
.
রংতুলি দিয়ে রং ঠিকই আঁকা যায়।রং তুলীতে নীল রঙ্গের ছাপও কাটা যায়, তবে নীল ছাপ কি মনে কাটা যায়,সা যায় না।যদি একবার এ ছাপ পড়ে তবে জীবনের ধার হয়ত পরিবর্তন হয়।
.
আজ আমি ধনী,বিশাল ধনী।শহরের তালিকাভুক্ত ধনীদের মাঝে একজন।রুবির বাবা আমার কম্পানির কর্মচারী,তাও আবার সামান্য কিছু টাকার জন্য।
সেদিনের পর থেকে স্বপ্ন ছিল আমি বড় হবো,অনেক বড় হবো।টাকাতে ভাসবো,রুবিকে দেখাবো।আমিও পারি,ফরিরের বাচ্চারাও পারে কিছু করতে, কিছু গড়তে।আমিও সফল, আমার জীবনে।যার পিছে অবহেলা আর ঘৃণায় যথেষ্ট ছিল।
এদিকে রুবির বাবা,ব্যাংক লোন শোধ না করতে পারায় আজ পথের ফকির, আমার কর্মচারী।যা বলবো তাই করতে বাধ্য।
.
নিত্যদিনের মত আজও অফিসে পদার্পন,খানিকটা সময় পর রুবির বাবা এসে..
.
-স্যার, আমায় কিছু টাকা দিতে পারবেন?
-"হ্যা"তবে কি করবেন?
-মেয়েটা খুব অসুস্থ, তার ঔষধ নিতে হবে।
-ও,কি হয়েছে তার?
-ব্রেইন টিউমার।
-মানে!!
-"হ্যা"।
-চলুন,আমি দেখতে যাব।
.
মাথা কেমন জানি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
রুবি আজও বিয়ে করেনি কেন?
তবে কি সে আমায় আজও ভালবাসে?
তার এ মরণ রোগই কি আমাদের ছেদ?
জানিনা, কিচ্ছু জানিনা আমি।আমার রুবিকে চাই,একবার দেখতে হবে।
.
"রুবি"ঘুমোচ্ছে।কথা বলা যাবে না।যে কারণে রুবির বাবার সাথে খানিকটা কথা..
আমি:আঙ্কেল,রুরির অসুখটা কতদিনের?
রুবির বাবা:অনেকদিনের,ভার্সিটি জীবনেই শুরু হয়।
-ওহ্,তবে ভাল করা হয়নি কেন?
-তুমি তো জান সবকিছু।
-হয়ত।আচ্ছা আমি আসি তাহলে?
.
বলেই বেরিয়ে পড়লাম,আজও আমি অবাক।অনেক অনেক অবাক।চিৎকার করে কাঁদছি আমি।সবাই দেখছে,হয়ত আমায় পাগল ভাবছে।
"হ্যা"আমি পাগল।বুঝতে পারিনি রুবির ভালবাসা।বুঝতে পারিনি তার কথার বুঝতে পারিনি তার চাওয়া, তার চাহনির বেশ।
বুঝতে পারিনি কিছু,আমি পাগল।অনেক বড় পাগল।
যে আমায় গড়িয়েছে,সে আজ মৃত্যর সাথে খেলছে।তবে কি পাগল নই?
.
আমার শান্তি চাই,আমি রুবির হতে চাই।এ নীল স্রোতের মাঝ থেকে বের হতে চাই।
এ যে ভালবাসার লাল নয় গো,
এ জীবন কষ্টের নীলে আচ্ছাদিত গো,
আমি যে এ নীলের মাঝে হারিয়েছি গো,
নীল যে আমায় নিঃশেষ করলো গো।
.
হায় রে ভালবাসার লাল,শান্তির সাদা,সৌন্দর্যের সবুজ তোরা কই?থাকিস কোথায় দেখিস না আমায়?বারবার নীলের মাঝে কেন হারাই??
.
দেখ না আমায়,দেখবি না জানি,
এ জীবন যে রঙ্গের ঢেউ।
নীল রং,নীলের ঢেউ।
.
রং..

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন