শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

হটাৎ দেখা! অতঃপর সঙ্গী

এই এই তেজপিচ্চি,,,
>>
পেছন থেকে কোনো এক মেয়ের কন্ঠে ডাক শুনেও শুনার ভুল ভেবে ডাকটা এড়িয়ে গেল তানভির,,
কিন্তু না,,,আবার ভিন্ন ডাক,,
>এই প্রেমকবি,,শুনেন,,,
.
,
.
এবার থমকে দাড়াতেই হলো তানভিরকে,,,
কারন যে নামে ডাকা হইছে সেটা অন্য কারো কাছে হয়ত জাস্ট নিকনেম কিন্তু তানভিরের কাছে অনেক বড় কিছু এটা,
,
পিছনে ফিরে তাকাল তানভির,,,
কিন্তু মেয়েটা তার অচেনা, সামনে এসে বলল
-এই মিস্টার,,শুনেননা নাকি? আপনিতো এত ভাব মারা হতে পারেন তা অবিশ্বাস্য মনে হলো,, (মেয়ে)
>-খারান বস্তাটা বের করি,,যেই হারে তেল মারতেছেন তা আমার পরান জুড়িয়ে বেয়ে বেয়ে পরবে তাই বস্তায় ভরে রাখব,,বাসায় গিয়া এই তেল দিয়া বেগুন আর ডিম ভেজে খাব। (তানভির)
>কি বলেন!! আপনে দুস্টামি করতে পারেন ব্যাপক, তাও জানি,,,তবে ভালই লাগল,,আজকে সামনে পেয়ে ভালই হইল,
>কিন্তু কে ভাই আপনি? আর আমার নিকনেমই জানেন কিভাবে চিনেন কিভাবে?
> দেখুন,,আরো অনেক কিছুই জানি,, বলব তবে চলেন কিছু কথা বলি মাঠে বসে,
>আরে,,আমি বসব কেন,,মানুষ কি বলবে?
>আরে কার কথায় কি আসে যায়,,চলেন বসি,>>>>>
,
,
,
হাটতে হাটতে মাঠের এক কোনে বসতেই তানভির শুরু করল,
>কে আপনি? নাম কি? কি করেন কই থাকেন? আমার এই নিকনেম কেবল ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া,কিভাবে জানলেন আপনি? নিজ এলাকার যারা আছে তারা আমার নাম ধরেই ডাকে আর আমরা পরিচিত,,কিন্তু আপনি এভাবে ডাকলেন,,আর কেনো? (তানভির)
>-আপনিতো কেউনা তা আমি জানি।
আসলে আমি আপনার হবু ফেসবুক বন্ধু কারন এখনও ঝুলিয়ে রাখছেন,,,আপনাদের কলেজেই আমার এক বান্ধবি স্টাডি করে তার মাধ্যমে আপনার খোজ পেলাম,,, আজ সকালেই আপনার এবাউট দেখছি তাই নিকনেম দেয়া আছে,,ঘুরে দেখলাম আপনি কয়েকটা পেজের রাইটার, টাইমলাইনে ঘুরে বেশ কিছু গল্প পরলাম,,ভালই লাগল,
কিছুখন আগে কলেজে যাবার সময় আপনাকে দেখে আপনার প্রোফাইল পিকচারের সাথে মিল লাগল তাই ডাকলাম।
,
>- হুম,,,আমিতো কেউনা,,কিন্তু আইডিতো আমার নামেই,,তো সেই নামেই ডাকতেন,,
তো যাই হোক,,ডেকে আনার কারনটা বলবেন??
,
>-হুম আমার নাম নীলিমা,,
,ফেসবুক আইডি স্বপ্ন* রা** নী**, আর আপনি রিকুয়েস্ট ঝুলান কেন হ্যা??
মেয়েদের ওত অবহেলা করেন কেন? মেয়েরা মা বোন জাতি,জানেননা? (কিঞ্চিৎ অভিমানে নীলিমা)
,
>-আরে আল্লাহ,,,হ্যা মনে পরছে,,মেয়েরাতো মা বোন বউ জাতি,,আর হ্যা আপনি এমন রিএক্ট করেন কেন? ঘরে বাবা ভাই নাই নাকি হু??
,
>-আছে বাপ ভাই ব্রাদার,,কিন্তু ছেলে বন্ধু নাই,,হবেন নাকি বন্ধু??
>-হুহ,,যাই,,ভেবে নেই।
>>>
সপ্তাহখানেক পর ফ্রি সময়ে ম্যাসেজ বক্স চেক করতে গিয়ে ফিল্টার ম্যাসেজে দেখল তানভির ২'টা ম্যাসেজ,,,একটা আইডি চেনা মনে হইল,,,ওপেন করতেই ম্যাসেজ পেল তানভির,,
লাস্ট ম্যাসেজ ছিল এমন> কয়েকদিন হয়ে গেল আপনাকে দেখতে পাচ্ছিনা,,আমার উত্তরটা পাওয়া হইল না,তবুও অপেক্ষায় আছি যে তেজপিচ্চি আসবে,
>>>
একটু আগ্রহ নিয়েই প্রোফাইল ঘুরে দেখল,,,আইডির নিকনেম ছিল নীলিমা,,
তানভির সহজেই চিনে নিল সেদিন কলেজ রোডে ডাক দেয়া মেয়েটিকে,,
এক্সেপ্ট করে ম্যাসেজ রিপ্লাই দিল,>> আজ বিকালে যদি সম্ভব হয় পরিষদ মাঠের পাশের শিশু বিনোদন পার্কে দেখা করা যাবে??
ম্যাসেজটার সিন হইল,,,রিপ্লাই আসল আসরের সময়,৪'টা নাগাদ ম্যাসেঞ্জারে ঢুকতেই নীলিমার নক,,
>০৪:৩০'এ মাঠে থাকবেন,,আসব আমি
>>
রেডি হয়ে তানভির নির্দিষ্ট প্লেসে এসে দেখে নীলিমা দাড়ানো,,নামের সাথে মিল রেখে ড্রেসও মিলিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়েছে নীলিমা নিজেকে,,
চোখ যেনো সরছিল না তানভিরের,,
কাছে আসতেই মন মাতানো হাসি দিয়ে বলল> কি ব্যাপার স্যার,,এখানে ডেকে আনা হলো কেন? প্রোপজ করা হবে নাকি?
>-হুম তাতো করবই,তবে বউ হলে আপত্তি কি??(বিরবির করে আবার সামলিয়ে নিয়ে বলল> না ম্যাডাম,, আপনার উত্তর দিতে আসলাম,,
>*তো ফোনে বললেই পারতেন,,
>-নাম্বার নাইতো,,,আচ্ছা আপনের মোবাইল দেন,,,
>-হুহ,,,নিন
আচ্ছা তো ফ্রেন্ডস?
>-না,,লাভ,,,
>-ওকে,,,
>>
এক বছর পর,,
বন্ধুত্যের বসর পুর্তিতে সেই একই জায়গায় আবার নীলিমা আর তানভির,,,
তবে এখন বন্ধু নয়,,মাস চারেক আগে তাদের বন্ধুত্য টপকে প্রেমে পরিনত হয়,,
আজ বর্ষপূর্তি পালন নয়,
ভালবাসার শিকল নিয়ে পরিবারে যেতে চায় বলে এই দেখা হচ্ছে,,
বেশ কিছুক্ষন আলাপচারী হওয়ার পর তানভির তার বাবাকে বলে,,
কাকতালীয় ভাবে তানভিরের বাবা মনে মনে এমনটাই চাইছিলেন,,,
কারন নীলিমার বাবা আর তানভিরের বাবা ২ জনই বন্ধু,,,আর তাদের মাঝে গোপনে এই জুটির বন্ধন নিয়েই কথা চলছিল কিছুদিন ধরে,,,
বেশ ধুমধাম করেই বিয়েটা হচ্ছে নীলিমা আর তানভিরের,,
তানভির নীলিমা,,২ পরিবারেরই একমাত্র সন্তান,,,তাই একমাত্র অনুষ্ঠান ছোট না করে ঘটা করেই করা,,
ভালবাসা শান্তি আনন্দ মিলেই এক ভাল সংসার চলছিল ২ জনের,,
>>বসরখানেক পর তাদের কোলজুড়ানো এক সন্তান এলো,,
নাম রাখা হলো অহনা,,,দেখতেও নীলিমার মত খুব সুইট,,,
>>
কিন্তু
কয়েকদিন পর নীলিমার হটাৎ করেই মাথা ব্যাথা শুরু হয়,,প্রায় রাতেই অসুস্থতার তীব্রতায় কাহিল ক্লান্ত হয়ে পরত নীলিমা।
>
প্রায় এক মাস হসপিটালে রাখা হলো নীলিমাকে,,,
কিন্তু আর পাওয়া হলোনা তাকে,,
শেষমুহুর্ত এসে তানভিরের কাছে আর ফ্যামিলির কাছে খবর যায় মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়ে নীলিমা আর বেচে নাই,,,
>>
সেদিন তানভির একটুও কাঁদছে না,,,নির্বাক পাথরমুর্তী হয়ে পরেছিল শোকে,,
নীলিমার রেখে যাওয়া বাবু অহনার কথা ভেবে আর ভালবাসাকে বাঁচাতে তানভির আর বিয়ে করার বা নীলিমার জায়গায় কাউকে বসানোর কথা চিন্তাও করতে বা ভাবতেও পারেনি,,,
একাই থেকে গেলো অহনার মাঝে নীলিমাকে নিয়ে
>>>
>>>
এমন করেই পার হলো আজ ১০ বছর,,,,
সেই নীলিমা আজ নেই,,আছে তার দুনিয়ায় রেখে যাওয়া স্বৃতি,,
আর তার কোল জুড়ে আসা একমাত্র মেয়ে অহনা,,,
পরপারে ভাল থাকুক নীলিমা,,,
তানভিরও ভাল আছে মেয়ে অহনাকে আকড়ে ধরে!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন