শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

তোমার জন্য অপেক্ষা

আজ শুক্রবার তাই স্কুল বন্ধ।
রুম থেকে বাহিরে ঘুরার জন্য বেড় হতেই রাজ দেখল কালো মেঘে পুরোটা আকাশ ঢেকে আছে...
যখন তখন ঝুম করে বৃষ্টি নামতে পারে, একবার সে ভাবল বাড়ি চলে যাবে।
পরে কি মনে করে নদীর দিকেই রওনা হল। প্রতিদিন বিকেলে ক্লাশ শেষ করে নদীর ধারে বসে থাকাটা রাজের প্রতিদিনের রূটিনের মধ্যে পরে গেছে...
.
কুড়াইল শেরে-ই বাংলা হাই স্কুল এ রাজ চাকরি নিয়েছে প্রায় দু’বছর হল।
.
পাশ করে রাজ আর কোন কিছুরই চেষ্টা করেনি যেন সে ঠিকই করে রেখেছিল এখানেই সে শিক্ষকতা করবে।
আসলে পাশকরার পরপরই কাছের মানুষ গুলোর কাছ থেকে দ্রুত দূরে সরে আসতে চেয়েছে সে। তাই আজ এই কুড়াইল এ...
.
.
.
রেশমার কথা আজ খুব মনে পড়ছে রাজের, রেশমার সাথে দেখা হয়না অনেকদিন।
তবু চোখ বন্ধ করলে এখনো রাজের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই স্নিগ্ধ মুখ।
রেশমার মাঝে অন্যরকম এক সারল্য ছিল, যেরকম সারল্য সচরাচর দেখা যায় না । সেকারনেই বোধহয় রাজ রেশমাকে ভালবেসেছিল।
.
কিন্তু রেশমার স্বপ্নে যে রাজকুমার বাস করত সেই রাজকুমার রাজ ছিল না, ছিল অন্য কেউ...
এতকিছু জানার পরও রাজ নিজেকে বেধে রাখতে পারেনি, তাই একদিন সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে রেশমাকে সবকিছু বলে সে!
রেশমা রাজকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে, রাজ কিছুতেই তা বোঝার চেষ্টা করে না।
রেশমা বলে ভুলে যাবার চেষ্টা করতে, কিন্তু রাজ ভুলে যেতে চায় না, সে এই ভালোবাসার অনুভুতি নিয়েই বেঁচে থাকতে চায় সারাটা জীবন।
.
রেশমাকে ভালোবাসার মাঝেই জীবনের সবটুকু পূর্নতা খুজে পায় রাজ, অন্যকিছু সে চায় না।
রাজের ভাবনায় ছেদ পড়ে বৃষ্টির ফোটায়, টুপ টাপ করে বৃষ্টির ফোটা পড়তে থাকে রাজের গায়ে। রাজের উঠে যেতে ইচ্ছে করে না, সে বসে বসে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে, মিশে যেতে থাকে অতীতের সাথে...
.
রাজ প্রায়ই রেশমা কে চিঠি লেখে, কিন্তু সেই চিঠি কখনো সে পোস্ট করে না....................................
..............................
প্রিয় রেশমা,
তোমাকে অনেকদিন পর লিখছি, আসলে স্কুলের অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষার জন্য বেশ কিছুদিন ব্যস্ত ছিলাম, ছুটির পর এখন আবার ক্লাশ শুরু হয়েছে, সাথে সাথে শুরু হয়েছে বর্ষাকাল ।
কুড়াইল এর বর্ষাকাল দেখার মত, পুরো সবুজ একটা গ্রাম তার মাঝে অঝোর বৃষ্টি।
তুমি চিন্তাও করতে পারবে না কতটা সুন্দর !
.
আমার টিনের ঘরে ঝুম ঝুম শব্দে বৃষ্টির ঢল নামে, আমি বৃষ্টির শব্দ শুনি আর জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখি।
তখন তোমার কথা খুব বেশি মনে পড়ে-
তোমার হাত ধরে তখন খুব বসে থাকতে ইচ্ছে করে, তোমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে।
.
মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো, এই যে তোমাকে নিয়ে ভাবছি, এটা কি ঠিক হচ্ছে?
তোমাকে নিয়ে ভাবার অধিকার কি আমার আছে? তুমি তো আমাকে কখনো সে অধিকার দাওনি।
তারপরও আমি আমার ভাবনা থেকে তোমাকে সরাতে পারি না ।
মা চিঠিতে গ্রীষ্মের ছুটিতে ঢাকা যেতে বলেছিলেন, আমার এই গ্রাম ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করেনি।
ঢাকায় গেলেই তো সেই চেনা মানুষের ভিড়, আর যাই হোক কাছের মানুষের চোখে করুণা দেখার চেয়ে দূরে থাকাই ভাল, মা চিঠিতে খুব রাগ করেন, আমি মোবাইল ব্যবহার করছি না কেন, বিয়ে করছি না কেন আরও কত কি?
.
মা’কে আমি বলতে পারি না, আমি সবার থেকে দূরে থাকতে চাই, একা থাকতে চাই।
আমার আকাঙ্ক্ষাহীন জীবনের দিনগুলো খারাপ যায় না, ভালভাবেই কেটে যায়...
তবু মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে, তুমি ভাল আছ তো? কিন্তু জানা হয় না।
***
চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে থাকে রাজ, বৃষ্টির বেগ আরও বাড়তে থাকে।
সবকিছু ঝাপসা থেকে আরও বেশি ঝাপসা হতে থাকে-
তার মাঝেও রাজ দেখতে পায় নদীর পাড় দিয়ে একটি মেয়ে তার দিকে হেঁটে আসছে ।
শ্রাবণের অঝোর বর্ষায় বোঝা যায় না মেয়েটি কে ।
রাজের মনে হয়, এই মেয়েটিই রেশমা...
কেন মনে হয় তা রাজ জানে না ।
সে শুধু মেয়েটির কাছে আসার অপেক্ষায় বসে থাকে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন