শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

মৃত ভালবাসার গল্প

আমি আকাশ। আমি এখন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করি। তা ছাড়াও ফেসবুকে সামান্য লেখালেখি করি। আজ আমি আপনাদেরকে আমার জীবনের একটি মৃত ভালবাসার গল্প বলব।
.
ছোটবেলায় আমার ২ বছর বয়সে আমার মা বাবা গ্রামে এসে থাকতে শুরু করে। ছোটবেলায় আমার খেলার সঙ্গি ছিলো আমার এক দূর সম্পর্কের এক ভাগ্নি।তার নাম দিয়া। আসলে আমার দূর সম্পর্কের বোন প্রায় আমার মায়ের সমান বয়স ছিল। বলতে গেলে বোনটি ছিল আমার চাচাতো বোন। বিধায় আমার ভাগ্নিটি আমার সামান্য ছোট ছিল। মাত্র ১ বছর এর ছোট বড় ছিলাম আমরা। তাই আমরা ছিলাম ছোটবেলার খেলার সাথি। আমরা একসঙ্গেই বড় হয়েছি। তারপর আমার আমার ৫ বছর বয়সে আমার বাবা মা শহরে চলে আসেন আমার লেখা পরার সুবিদার্থে। 

তারপর আমরা প্রায় বেরাতে যেতাম গ্রামের বাড়ি। আবার ১২ বছর বয়সে আমার দাদির শেষ ইচ্ছা হিসেবে আমার বাবা আবার গ্রামে এসে থাকতে শুরু করে। আমার বাবা শহরেই আমার লেখা পড়া চালিয়ে যেতে বলেন। তাই আমি প্রতিদিন শহরেই স্কুলে যেতাম। আর গ্রামে আসার কারনে আবার দিয়ার সাথে দিন কাটাতে লাগলাম। 
.
সেই থেকে দিয়াকে আমার কিছুটা ভালো লাগতে শুরু করে। তখন ভালবাসা কি অতটা বুজতে পারতাম না। বিধায় ভালবাসা কি জানতাম না। কিন্তু তার প্রতি কিছু একটা ফিলিংস কাজ করতো তা বুজতে পারতাম। এটা আরো প্রকট হলো ক্লাস ৯ এ পড়ার সময়। এই সময় আমি বুজতে পারি আমি তাকে ভালবাসি। আমি তাকে বলতে পারিনি যদি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ঠ হয়ে যায়। কিন্তু আর বেশি দিন চেপে রাখতে পারিনি ব্যাপারটা। ক্লাস ১০ এ পড়ার সময় আমি তাকে আমার ভালবাসার কথাটি জানিয়ে দিই। আমি ভেবেছিলাম সে রাজি হবে না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে রাজি হয়ে যায়। সেই থেকে আমারা ভালভাবেই দিন কাটাচ্ছিলাম। এর মধ্যে আমাকে রাজশাহী যেতে হয় কলেজ এ পড়ার জন্য। 

আমরা একে অন্যের উপর খুব বিশ্বাস করতাম কারন আমরা একে অপরকে খুব ভালোবাসি। এর মধ্যে আমি ভার্সিটি ভর্তি হই। আর ও ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা দেয়। তারপর ওকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়া হয়। ও তখন বিয়ের জন্য রাজি ছিল না। এদিকে আমিও কিছু করতে পারছিলামনা। কারন তখনো পড়া শুনা করতাম। তা সত্বেও আমি আমার পরিবার ও তাদের পরিবার জানিয়ে দেয়। কোনো পরিবারই আমাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। বরং তারা আমাকে বলেছে দিয়াকে ভুলে যেতে।
.
এহেন ঘটনার আকস্মিকতায় আমি সাময়িক বোবা হয়ে যাই। ভেবেছিলাম আর যাই হোক তারা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবে। কিন্তু আমার সব ভাবনা ভুল প্রমানিত হলো। আমার আর কিছু করার থাকলো না। পালানো সম্ভব ছিলো না কারন আমি তখন তাকে খাওয়াতাম। এই মধ্যে তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। সেই থেকে তিন দিন নিজের মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাকে ডেকে আমাকে ভুলে যেতে বলি আর আমার সাথে যোগাযোগ করতে না করি। অনেক কষ্ঠে কথা গুলো বলে ঘুরে চলে আসলাম। পিছনে ঘুরে দেখতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো। কিন্তু সেই ইচ্ছেকে দমন করে চলে আসি।
.
বাড়িতে এসে চিরদিনের মতো ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসি। আসার আগে বাবা মাকে আমার সাথে যোগাযোগ না করতে বলে চলে আসি। তাদের শত বাধা উপেক্ষা করে চলে আসি। তারা আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনেক টাকা ব্যাংকে জমিয়ে রেখে দিয়ে ছিলেন। সেই টাকা থেকে বাসা ভাড়া, খাওয়া দাওয়া আর ভার্সিটি লাইফ শেষ করি। তার পর কোম্পানিতে জব করতে শুরু করি। এর মধ্যে গ্রামের বাড়িতে কারও সাথে যোগাযোগ রাখিনি। 
.
একদিন ইচ্ছা হলো বাবা মাকে দেখার। আর দিয়া কেমন আছে সে জানার। তাই একদিন রওনা দিলাম গ্রামের বাড়ি। বাড়ি এসে দেখি বাবা মায়ের অবস্থা তেমন ভালো নয়। তারা আমায় দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে বসে গেলো। আমি তাদের অনেক কষ্টে শান্ত করলাম। তখন আমি দিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলাম। তারা যা বলল তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তারা বলল বিয়ের আগের দিন রাতে গলায় দরি দিয়ে নাকি আত্মহত্যা করে। আমার বুকে প্রচন্ড একটা ধাক্কা লাগলো। অনেক কষ্ট হলো নিজেকে সামলাতে। সব কিছুর জন্য নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলাম। কিছুটা অস্বাভাবিক হয়ে যাই আমি। আনেক দিন লেগেছিলো আমার আবার আগের মতো স্বাভাবিক হতে। কিন্তু আমি মন থেকে দিয়াকে মুছে ফেলতে পারিনি। 
.
এই ছিলো আমার মৃত ভালবাসার গল্প।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন