শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

আশ্চর্যজনক বিয়ে

 বাড়িতে কি কেউ আছেন? [সাগর ]
এভাবে কয়েকটা ডাক দেয়ার পর ভিতর থেকে উত্তর আসলো।
- কে আপনি, কি চান? [অর্শা]
- বাহিরে'ত অনেক বৃষ্টি হচ্ছে, একটু ভিতরে এসে বলি? 
- আচ্ছা আসেন। 
.
বিতরে আসা মাত্রই চমকে গেলাম, এতো সুন্দর একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। 
.
- আচ্ছা আপনি বললেন না'ত, কে আপনি?এসেছেন কোথা থেকে? [অর্শা]
- আমি সাগর, ঢাকা থেকে এসেছি।[সাগর]
- কার বাড়ি যাবেন? 
- এই গ্রামের রহমান মাস্টারকে চিনেন?
- উনি আপনার কি হয়? 
- আমার দাদু হয়।
- অহ্ আপনি আসাদ চাচার ছেলে।
- বাহিরে'ত অনেক বৃষ্টি হচ্ছে,আমি কি আপনাদের বাড়িতে একটু বসতে পারি। বৃষ্টি থামলেই আমি চলে যাবো।
- না বসতে পারবেন না।
- কেনো বসতে পারবোনা? 
- দেখেন মা বাবা কেউ বাড়িতে নেই, এখন আপনাকে গ্রামের কেউ যদি দেখে ফেলে। তাহলে কি ভাববে?।
- কি ভাববে? কিছু হবে না।
- আপনি বুঝতে পারছেন না,এটা আপনার শহর নয়, এটা গ্রাম। 
 - অহ্ আমার'ত মনেই ছিলো না এটা গ্রাম, এখানে কেউ বিপদে পরলে বুঝি সাহায্য করেনা? 
- আরে আপনার সাথে আমার কথা বলাটাই ভুল ছিল,যত্তসব [রাগান্নিত কন্ঠে ] বলে চলে গেলো।
.
আমি বাড়ির উঠানে বসে ভাবতে লাগলাম, মেয়েটাকে এভাবে রাগিয়ে দেওয়াটা আমার ঠিক হয় নি।
দরজায় নক করতেই সে দরজা খোলে বললো।
.
- আচ্ছা বলেন'ত আপনার সমস্যাটা কি? আপনি কি - আমকে একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দিবেন না।[অর্শা ]
- না মানে আপনি এতো রাগি আমি আগে যানতাম না।[সাগর]
- আমি রাগি না? 
- ও ইয়ে মানে আপনি'ত শুধু রাগি না আপনি ঝগড়াটেও।[এতক্ষণে রাগে সে ফুলে লাল হয়ে গেছে]
- আমি ঝগড়াটে তাহলে, আমার সাথে কথা বলতে আসছেন কেনো?
- আপনি রাগ করলে কিন্তু ভালোই লাগে।
- কি বললেন?
.
দুজনের ঝগড়ার ফাঁকে কখন যে বৃষ্টি থেমে গেলো।কেউ বুঝতেই পারলোনা। 
.
- অনেক্ষণ যাবত আপনার সাথে ঝগড়া করে ভালোই লাগলো, শুভরাত্রি ভালো থাকবেন।[সাগর]
- ধুর মিয়া রাখেন আপনার শুভরাত্রি। শুভরাত্রি আপনার গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকেন, যান। [অর্শা ]
.
কথাটা বলার সাথে সাথেই মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দিলো। আমিও চলে আসলাম দাদুর বাড়ি। রাতে ঘুমাতে পারছিনা শুধু মেয়েটির কথাই মাথায় আসছে। কি যে হলো কে যানে। আবার নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলাম, আমি কি মেয়েটিকে দেখে ক্রাশ খেয়ে গেছি ? না এটা হতে পারে না। আমি' ত শুধু মেয়ে টা কে রাগাতে ভালো লাগেছিলো তাই রাগাচ্ছিলাম। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম মেয়েটার সাথে আরেক বার দেখা হলে সরি বলে নেবো। পর দিন সকাল বেলা ঘুমথেকে উঠে দেখি দাদু হাতে চায়ের কাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
.
- দাদু ভাই চা টা খেয়ে দেখ'ত কেমন হয়েছে?[দাদু]
- দাদু তুমি আবার এসব করতে গেলে কেনো? [সাগর]
- আরে বোকা কয়েক দিন পর থেকে'ত তোমার বউ চা করে দিবে তখন কি আমার হাতের চা তুমি খাবে না তাই।
- তুমিও না, আমার আবার কয়েক দিন পর বউ আসবে কই থেকে। 
- দাদু ভাই তুমি কি জানো তোমার বাবা তোমাকে কেনো আগে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে?
- না'ত, কেনো তুমি জানো?
- তোমার বিয়ের জন্য হা হা হা।
- সত্যি দাদু [ আশ্চর্য হয়ে ]
- হে দাদু ভাই।
- মেয়েটা কে 
- এটাইতো সারপ্রাইজ আগামি রবিবার তোমার বিয়ে।
- দাদু বলনা মেয়েটা কে[ ইমুশনাল কন্ঠে ] 
- বলবো না হে হে হে।
- ধুর ভালো লাগেনা।
.
বলে চলে গেলাম পুকরপাড়ে এক একা বসে একটা সিগারেট টানতে টানতে ভাবতে লাগলাম এখন কি করা যায়। যার সাথে বাবা বিয়ে ঠিক করেছে মেয়েটাকে চিনিনা জানিনা থাকে কি করে আমি বিয়ে করি। আবার ভাবলাম যেই বাবা আমাকে এত ভালোবাসে আমি তার কথা কি ভাবে অমান্য করি? আমার বয়স যখন চার তখনি আমার মা মারা যায়।তার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাকে কতো কষ্ট করে বড় করেছে। যেই বাবা আমার জন্য এত কষ্ট করেছে আমি তার জন্য এই কাজটা করতে পারবো না। দরকার হলে আমি বাবার পছন্দের মেয়ে টাকেই বিয়ে করবো তার পরেও, আমি বাবার মনে কষ্ট দিবোনা। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সিগারেটের আগুন এসে হাতে লাগলো।
এমন সময় পিছনে থাকাতেই দেখি সেই রাতের মেয়েটি।
এই একটা সময় থাকে সরি বলে ফেলি।
.
- এই যে আপনার নামটা?[সাগর]
- আপনাকে বলবো কেনো? [অর্শা ]
- না মানে কালকে আপনার রাতে ঘুম কেমন হয়েছে?
- মানে কি?
- মানে আমার কথা কি আপনার মনে হয়েছিলো।
- আপনার কথা আমার মনে হবে কেনো।
- না মানে ইয়ে কিছু না যাই আমি।
- যাবেন যান সেটা আমাকে বলতে হবে কেনো?
সেই দিনো সাগর অর্শাকে সরি বলতে পারলোনা। সে সরি না বলে অর্শাকে অহেতুক প্রশ্ন করলো।আর এই প্রশ্ন শুনে অর্শা আরো রেগে গেলো। সাগর ভাবতেছিলো কেনো এমনটি হচ্ছে। যখনি অর্শার সামনে যাচ্ছে তখনি সব গুলিয়ে যাচ্ছে। তাহলে কি অর্শাকে ভালোবেসে ফেলেছে? না এটা হতে পারেনা সে'ত বাবাকে কথা দিয়েছে বাবার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবে। তাহলে কেনো তার সাথে এমন টা হচ্ছে। না সেটা হতে পারে না সে কোনো ভাবে বাবার কথার অমান্য হতে পারে না। তাই সেদিন দাদুর কাছে যেয়ে সব বললো।
.
- তুমি তো গেলে দাদু ভাই।[সাগরের দাদু]
- না কি যে বলনা, এসব কিছুনা। [সাগর]
- না কেনো জানি আমার মনে হচ্ছে তুমি মেয়েটির প্রেমে পরে গেছো।
- আরে না মেয়েটাকে আমার ভালো লাগে এতটুকুই। - আচ্ছা তাই নাকি, শুধুই ভালো লাগা?
- আচ্ছা দাদু বলনা বাবা কোন মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
- না দাদু ভাই আমিত সেটা বলবো না তোমার বাবার সারপ্রাইজ এইটা।
- ধুর ভাল্লাগেনা।
- কই যাও, আরে এদিকে আসো না।
.
সেদিন সাগর কিছুটা আনমনা হয়ে দাদুর কাছ থেকে চলে গেলো। সাগর রাতে একা একা পুকরপাড়ে বসে আছে এমন সময় তার কাঁধে একটা হাত রাখলো এমন সময় সাগর চমকে উঠলো।
.
- কে কে এখানে? [সাগর]
- বাবা আমি। [সাগরের বাবা]
- বাবা তুমি কখন আসলে?
- এই'ত এখনি।
- বাবা কেমন আছো? 
- আমি ভালো, তুই কেমন আছিস?
- ভালো, আচ্ছা ভাবা চলো রুমে যাই।
.
সেদিন রাতে সাগর ভাবতে লাগলো কে এই মেয়ে যে আর মাত্র একদিন পর তার জীবনসঙ্গিনী হতে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটির সাথে সাগরের কোনো পরিচয় নেই।কেমন করে তার জীবনের বাকি দিন গুলি পার করবে অচেনা একজন মেয়েকে নিয়ে। আরো অনেক কিছু সাগরের মাথায় ঘুরতে লাগলো। আর এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যে রাত শেষ হয়ে গেলো সাগরতা বুঝতেই পারলোনা। 
 হঠাৎ সাগর শুনতে ফেলো দাদু ডাকছে ফজরের নামাজ পড়তে। সাগরের আর ঘুম হলো না। সাগর নামাজ পড়তে চলে গেলো। 
 .
- দাদু ভাই কি খবর মনে হচ্ছে আজ রাতে ঘুমাও নি?
- না ঘুমিয়েছি ত, কেনো?
- না তোমার চোখ কিন্তু বলছে তুমি ঘুমাও নি।
- না এ কিছু না দাদু চোখে কি যেনো পরছিলো তাই মনে হয় লাল হয়ে আছে।
- আমি কিন্তু জানি দাদু ভাই।
- আচ্ছা দাদু ভাই তুমি রেডি হয়ে যাও তাড়াতাড়ি।
- আচ্ছা আমি রেডি হচ্ছি। 
.
সাগর রেডি হলো আস্তে আস্তে তার সব বন্ধুরাও চলে আসলো। এমন সময় সাগরের বাবা এসে বললো তাড়াতাড়ি রেডি হতে তাদের। মেয়ের বাড়ি এখনি যাবে। 
- আচ্ছা বাবা আমি আসছি।[ সাগর]
- হুম তাড়াতাড়ি আসো।[ বাবা ]
সাগর বিয়ের বাড়িতে চলে গেলো। 
- দাদু আমরা এই বাড়ি যাচ্ছি কেনো।[সাগর]
- আরে বোকা এই বাড়ির মেয়ের সাথেই তোর বিয়ে আর বেশি কিছু জানতে চেয়ো না।[দাদু]
- আচ্ছা আর কিছু জিজ্ঞাসা করবো না।
বিয়ে শেষে সেদিন রাতে সাগর রুমে গেলো। দেখলো খাটের উপরে একটা লাল শাড়ি পরে মেয়ে বসে আছে। সাগর মেয়েটিকে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিলো না এমন সময়। মেয়েটির পাশে গিয়ে বসে বললো আচ্ছা আপনার নামটা কি?। আপনার শাড়ির আচল টা সরাবেন একটু, আপনি কি আপনার মুখটা দেখতে পারি। এমন সময় পাশ থেকে উত্তর আসলো আরে থামেন থামেন এত প্রশ্ন একবারে করলে উত্তর দিমু কেমনে?। আস্তে আস্তে বলেন।সাগর কথা শুনে টাস্কি খেয়ে গেলো। আচল টা মুখের উপর থেকে সরাতেই সাগর চমকে গেলো এ কি করে সম্ভব এযে সেই মেয়েটি,এই মেয়েটিকেই ত ভালোবাসতো সাগর কিন্তু বলতে পারতো না। আচ্ছা যাই হোক ভালোই হয়েছে।
.
-আচ্ছা আপনি আমার দিকে এমনি ডেপ ডেপ করে থাকিয়ে আছেন কেনো? [অর্শা ]
- না কিছুনা এমনি আপনাকে দেখছিলাম। [সাগর ]
- আমাকে কি আগে কখনো দেখেন নি?
- না,মানে আসলে আপনাকে দেখছি বলেই চেয়ে আছি।
- আচ্ছা আপনি এত না মানে, না মানে, ইয়ে এসব করেন কেনো? 
- আপনার ভয়ে।
- কি আমাকে দেখতে কি ভুতের মত লাগে না ডাইনির মত যে আমাকে আপনি ভয় পাবেন?
- না সেরকম কিছু না।
আচ্ছা আপনার নাম টাই'ত জানা হলো না।
- দাড়ান, দাড়ান আপনি এহনো আমার নামটাই জানেন না। অহ্ জানার কথাও না।
- মানে বুঝলাম না?
- মানে হচ্ছে আপনার বাবা আমার শশুর আমাকে বলছিলো আমি যাথে আপনাকে না বলি আমাদের বিয়ের কথা। 
- অহ্ বুঝেছি ছেলের বউকে নিয়ে প্ল্যান করে এইসব করা।
- না আমি এসব প্ল্যান ট্যান জানি না। শুধু আমাকে বলতে না করছিলো তাই বলি নাই। 
-আচ্ছা আমি আপনাকে একটা কথা বলি? 
-হুম বলতে পারেন? আর আমার নাম মিতিলা জাহান অর্শা। 
.
- আমি আপনাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু বলতে পারি নি।
- হইছে হইছে আর ঢং করতে হবে না সরেন আমি জানি ।
- মানে কি আপনে কি করে জানলেন?
- আচ্ছা বলতেছি আগে আপনি করে বলাটা রাখেন ত?
- আচ্ছা তাহলে তুমিও তুমি করে বলবা?
- হুম, দাদু আমারে বলছিলো তুমি আমারে ভালোবাসো কিন্তু বলতে পারোনা।
- অরে আল্লাহ্‌ আর কি জানো তুমি আমার সম্পর্কে।
- জানি অনেক কিছুই কিন্তু বলবো না।
- এখন বললে কি হয়।
- পরে বলবো 
- আচ্ছা, আমি কিন্তু তোমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি তুমি কি আমায় ভালোবাসো।
- হুম বাসতে পারি যদি প্রতিদিন অফিসে যাবার সময় একটা করে চুমু দাও। 
- আচ্ছা শুধু অফিসে যাবার সময় না এসেও দিবো।
- অয়েট অয়েট তোমাকে কিন্তু আমার সাথে মাঝে ঝগড়া করতে হবে।
- আচ্ছা সেটা তুমি করলেই হবে।
- সন্ধি হয়ে গেলো দুজনের একে অপরে সাথে তাহলে চলো না আজকের বাসর রাতের বিড়াল টা মেরে ফেলি দুজনে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন