তোমার কি মনে হয় আমার কি কোন জীবন নেই?সেই কোন অচেনা ছিলে।ভুল তো আমারই... নিজের ইচ্ছায় তোমার কাছে গেছি।কে জানতো তুমি এতটা খারাপ,এত স্বার্থপর?আমার জীবনটাকে নরক করে দিবে তুমি?কি করেছি আমি?আগে না আমি তোমাকে চিনতাম,না তুমি আমাকে,তাহলে কেন এমন করলে?তোমার আর খুশির মাঝে ঝামেলা করেছিলাম তাই এমন করেছ?একটা সত্যি কথা কি জানো?তুমি আমার জীবনের সব কিছু নষ্ট করে দিছ...আমাকে শেষ করে দিছ।সবাই জানে প্রানন্তী প্রান্তকে ভালবাসে আর অন্যদিকে প্রান্ত প্রানন্তীকে ব্যবহার করে আর খুশিকে ভালবাসে।আমাকে ছেড়ে দিলে তো তোমার কোন সমস্যা নেই।কেন এমন খেলা খেলছ আমাকে বলে দাও?আমি দূরে চলে যাচ্ছি একমাত্র তোমার কারনে....তোমার থেকে বাঁচতে...
.
প্রান্তনি,মাত্র ক্লাস নাইন এ পড়া একটা মেয়ে।লিখেছে এরকম ই।ডাইরির পাতা উল্টালেই ভেসে ওঠে আর্ত চিৎকার।
তার আজকের এই অনুভূতির পিছনের গল্পটাতে যেতে চাই।
কেন অসংখ্য প্রশ্ন রেখে প্রানন্তীর দূরে চলে যাওয়া??
...........
আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ি।একদিন রিফাত মামা আমাকে বললো তিনি এক ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক করিয়ে দিবে।ছেলেটি তার বন্ধু প্রান্ত।রিফাত মামা প্রান্তের অনেক প্রশংসা করে আমার কাছে।আমাকে ওইদিন প্রান্তের ফোন নাম্বার দিয়ে যায় মামা।প্রান্ত ছিল হিন্দু। আমি ভেবেছিলাম ও আমার সাথে বেশিদিন সম্পর্ক করবে না তাই এমনি এমনি আমি কথা বলতে চেয়েছিলাম।
একদিন আমি ওর নাম্বারে কল দিই।
.
প্রান্তনি,মাত্র ক্লাস নাইন এ পড়া একটা মেয়ে।লিখেছে এরকম ই।ডাইরির পাতা উল্টালেই ভেসে ওঠে আর্ত চিৎকার।
তার আজকের এই অনুভূতির পিছনের গল্পটাতে যেতে চাই।
কেন অসংখ্য প্রশ্ন রেখে প্রানন্তীর দূরে চলে যাওয়া??
...........
আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ি।একদিন রিফাত মামা আমাকে বললো তিনি এক ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক করিয়ে দিবে।ছেলেটি তার বন্ধু প্রান্ত।রিফাত মামা প্রান্তের অনেক প্রশংসা করে আমার কাছে।আমাকে ওইদিন প্রান্তের ফোন নাম্বার দিয়ে যায় মামা।প্রান্ত ছিল হিন্দু। আমি ভেবেছিলাম ও আমার সাথে বেশিদিন সম্পর্ক করবে না তাই এমনি এমনি আমি কথা বলতে চেয়েছিলাম।
একদিন আমি ওর নাম্বারে কল দিই।
ওপাশ থেকে কেও একজন হ্যালো বলে উঠলো।
আমি এই প্রথম কোনো অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলতেছি।আমি কথা বলার সাহস পাচ্ছিলাম না।চুপ করে ছিলাম।
ও এরকম কয়েকবার হ্যালো বলার পর আবার বললো
কে আপনি?কথা না বলে এভাবে চুপ করে আছেন কেনো?
তখন আমি বলি,
আমি একটা মেয়ে,,এমনি আপনাকে কল করেছি..
এতটুকু বলেই আমি কল কেটে দি।খুব ভয় ভয় হচ্ছিল।ওইদিন এর বেশি আর কথা হয়নি।
এরপর কিছুদিন পর আবার ওর নাম্বার থেকে কল আসে।দিনটি ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর।
প্রান্ত আমাকে বলে ও আমার সাথে সম্পর্ক করতে চাই।
তখন আমার রিফাত মামার কথা মনে পড়ছিল।রিফাত মামা মনে হয় প্রান্তকে সবকিছু বলেছে।
ওর কথাগুলা আমার কাছে অনেক সুন্দর লাগতেছিল।কি সুন্দর করে কথা বলে।আমি চুপ করে শুধু ওর কথা শুনতেছিলাম।কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
আমি তখন ওকে বলি আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।প্রান্ত ও রাজি হয়ে যায়।
পরের দিন আমি স্কুল এর টাইম এ ওর সাথে দেখা করতে যায় নদীর পাড়ে।
সেইদিন ও আমাকে ভালবাসার কথা বলে আর সেদিন থেকেই আমাদের সম্পর্কের শুরু হয়।আমি নতুন পথ চলা শুরু করি।
নিজের মধ্যে খুব ভাল লাগতেছিল।প্রান্ত আমাকে নাকি পাগলের মত ভালবাসে।আমার অনেক যত্ন নেওয়া শুরু করে।এরকম আমি কারো থেকে এর আগে পায়নি।তার আমার এগুলা অনেক ভাল লাগতে শুরু করে।
.
একদিন প্রান্ত আমাকে বলে ও নাকি আগে একটা মেয়েকে ভালবাসতো।তার সাথে ওর ব্রেকাপ হয়েগেছে।কিন্তু ও এখন আমাকে অনেক ভালবাসে।আমাকে হারাতে চাইনা।ও সেদিন কান্না করে।ওর কথা শুনে আমারও খুব কষ্ট হয় সেদিন।
.
এভাবে একমাস চলে যায়।হঠাৎ আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে যায়।এদিকে আমার ফ্যামিলিতে তখন কিছু প্রবলেম সৃষ্টি হয়।সব মিলিয়ে প্রান্তর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়না।
কিছুদিন পর আবার নতুন একটা ফোন কিনি।এতদিন যে ফোন ছিল সেটা বাসার।এবার আমার নিজের ফোন হয়।আমি তখন খুব বেশি খুশি ছিলাম।কারন প্রান্তর সাথে আমি সবসময় কথা বলতে পারতাম।
.
বার্ষিক পরীক্ষার আগে আমি আমার ফোন ভেঙে ফেলি।এরপর থেকে আগের মত বেশি কথা বলা হত না।সেই বাসার ফোন দিয়ে মাঝে মাঝে কথা হয় আমাদের।প্রান্ত আমাকে তখন ফেসবুকে আইডি খুলে দেই।এরপর থেকে ফেসবুকে কথা বলতাম।
.
আমি ক্লাস সেভেনে উঠি আর প্রান্ত এস.এস.এসি পরীক্ষার্থী।ওর পরীক্ষার জন্য তখন আমাদের যোগাযোগ বন্ধ ছিল।অনেকদিন পর পর কিছু সময় ওর সাথে কথা বলতে পারতাম।আমার একটুও ভাল লাগতো না। কিন্তু কিছু করার ছিল না।এভাবে চলতে থাকে আর দেখতে দেখতে ওর পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়।এতদিনে আমার ফোনও ঠিক করে ফেলি।
তখন ও ফ্রি।আমাকে আবার আগের মত সময় দেওয়া শুরু করে।সারাদিন আমি ওর সাথে কথা বলতাম।রাতে আর ঘুম আসত না।সারারাত ওর সাথে পার করে দিতাম।তখন আমার সবকিছুতে শুধুই প্রান্ত।
.
আমার আর প্রান্তর ব্যাপারটা বাসা থেকে জেনে যায়।সেদিন ছিল আমার গনিত পরিক্ষা।সকালে আম্মু আমাকে খুব মেরেছিল।অনেক বাজে কথা বলেছিল।
তারপর থেকে ওর সাথে আমার কথা হয়না।
আমার পরীক্ষা শুরু হত দশটাই।প্রান্ত নয়টার দিকে আমার স্কুলের সামনে এসে বসে থাকত প্রতিদিন।আমার দেখে খুব খারাপ লাগতো।ভাবতাম ও আমাকে কত ভালবাসে।
আমার পরীক্ষা শেষ হয়ে যায় এভাবেই।বাসায় সবকিছু আগের মত।আমিও আবার ফোন নিয়ে নি আমার কাছে।প্রান্তকে খুব বেশি মিস করতাম।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারলাম না।আবার শুরু হলো ওর সাথে কথা বলা।
১৫ মে আমি প্রান্তর সাথে ঘুরতে যায়।স্কুল বাদ দিয়ে সারাদিন আমি ওর সাথে ছিলাম।আম্মু এটা জেনে যায় কোনোভাবে।বাসায় আসার পর আম্মু আমাকে আবারো খুব মারছিল।আমার ফোনও ভেঙে ফেলছিল।আমি আত্মহত্যা করতে যায় কিন্তু পারলাম না।এভাবে অনেক কষ্টে দিন কাটতে থাকে।
এদিকে প্রান্তও কেমন হয়ে যায়।আমার প্রতি ওর আগ্রহ কমতে থাকে।আগের মত পাগলামি করে না।আমার খোজ খবর ও ন্যায় না।আমি কথা বলতে গেলে ও এড়িয়ে চলতে থাকে।আমার এগুলা সহ্য হয়না।কি করবো আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা।
একদিন প্রান্তর এক বন্ধু আমাকে জানায় ওর আগের গার্লফ্রেন্ডের সাথে আবার সম্পর্ক শুরু হয়েছে।আমি পুরো ভেঙে পড়ছিলাম।সেদিন ঘুমের ওষুধ অনেকগুলা খেয়েছিলাম।দিন যায় প্রান্ত আমার সাথে আরও খারাপ ব্যবহার করে।আমি খুব কষ্ট পেতাম আর বার বার ওর কাছে ছুটে যেতাম।কারন আমি ওকে অনেক ভালবাসতাম।নিজের করে চাইতাম। ও আমাকে সব দিক দিয়ে ব্যাবহার করতো আর ভালবাসতো ওই মেয়েকে।
এজন্য আমার ওর প্রতি ভালবাসা কমে গেল।আমি তখন চাইছিলাম ও আমাকে কষ্ট দিছে আমিও ওকে খুব কষ্ট দিব।
.
এসবের মধ্যে দিয়ে একটি বছর কেটে গেল।প্রান্তর ফেসবুক আইডিতে ওর আগের গার্লফ্রেন্ড অনেক কমেন্ট করে।ওর সবকিছুতে মনের খুশিতে যা ইচ্ছা লিখে।এসব দেখে আমি আর থাকতে পারলাম না।ওই মেয়ের নাম্বার আমার কাছে ছিল।আমি তাকে কল করি।আমার সাথে প্রান্তর সবকিছু বলে দিই।এতে প্রান্ত আমার উপর খুব রেগে যায়।আমার বাসায় এসে ঝামেলা করে।আমি প্রান্তকে অনেক ভালবাসতাম।ওর দেওয়া কষ্ট সহ্য করতে পারতাম না।আমি আমার হাত কাটলাম।অনেক হাত কেটেছিলাম সেদিন।
.
একদিন শুনতে পাই প্রান্ত পুলিশের কাছে ধরা পড়ছে।ও নেশা করতো।সেজন্য পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।যখন পুলিশ ওকে ছেড়ে দেই ও আমার কাছে আসে আর ওর জীবনের সব দুঃখের কথা বলে।ওই মেয়ের সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই।ও ভুল করছে।ও নাকি আমাকে অনেক ভালবাসে হ্যা ও তখন আমাকে ভালবাসতো।আমি ওর কষ্টের কথা শুনে থাকতে পারলাম না।বুকে জড়িয়ে নিলাম প্রান্তকে।আমার ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।
সবকিছু আবার আগের মত চলতে শুরু করলো।আমি আমার প্রান্তকে ফিরে পেলাম আবার।
বেশ কিছুদিন আগে দেখি ওর আগের গার্লফ্রেন্ড ফেসবুকে আবারো অনেক কমেন্ট করেছি। এই নিয়ে প্রান্তর সাথে আমি বেশ কথা কাটাকাটি করি।
প্রান্ত বলে ও নাকি ওই মেয়েকে ভালবাসে না।
আমিই নাকি এখন ওকে ভালবাসি না।ওর সাথে ব্রেক আপ করতে চাচ্ছি কারন আমাদের ধর্ম আলাদা।তাই এসব নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি করতেছি।কিন্তু আমি তো প্রান্তকে অনেক ভালবাসি।
.
প্রান্ত আমার জীবনকে নষ্ট করে দিয়েছ,শেষ করে দিয়েছে।তাই আমি আজ অনেক দূরে চলে যাচ্ছি........
..........................
আমাদের নিউ জেনারেশন এর ছেলে মেয়েরা প্রেম-ভালবাসাতে একটু বেশি এগিয়ে।আজ তোমাকে বলতে চাই,
যে সম্পর্কের সূচনা তুমি নিজেই সৎ উদ্দেশ্যে করনি তার সুন্দর সমাপ্তি কিভাবে সম্ভব?ষষ্ট শ্রেনীতে পড়া একটা মেয়ে কি বুঝে ভালবাসা কি।তখন তার মাঝে এই অনুভুতি তো আসে না।
যে সময়টা বন্ধুদের সাথে হাসি,আনন্দে কাটানোর কথা সেই সময়ে এত কষ্টের অনুভূতি কেন হবে?তুমি শুধুমাত্র খেয়ালের বসে সম্পর্কের সূচনা করেছিলে। আজ প্রান্ত তোমার কাছে অনেক খারাপ তোমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে।সেই সুযোগ তুমি তাকে দিয়েছ বার বার।তোমার জীবনের আজকের পরিনতির জন্য প্রান্তর দায়বদ্ধতা কতটা সেটা বলার আগে তোমার নিজের দায়বদ্ধতা যে শতভাগ এটাই বলব।
.
সেই সব অভিবাবক দের উদ্দেশ্যে বলতে চাই.. যারা এই বয়সে সন্তানের হাতে কলম,বই তুলে দেওয়ার পরিবর্তে ফোন তুলে দেন। ষষ্ঠ শ্রেনিতে পড়া ছেলে,মেয়ের কি প্রয়োজন থাকতে পারে ফোনের?নিতান্তই যদি শখের বসে দিয়ে থাকলে বলব আপানার সন্তানের ভাল মন্দের বোধ হয়নি, কিন্তু আপনার তো সেই বোধ আছে তাহলে সব বুঝে এমন ভুল করার পর তাকে শাসন করাটা আগুনে ঘি ঢালার মত। আপনি নিজেই তাকে ধংসের পথের প্রথম ধাপ পার করে দিয়েছেন।তাই অাজ তার জীবনের এমন অস্বাভাবিক পরিনতির দায়টা আপনারও।আপনার সন্তান যদি এরকম কোনো কিছু করে থাকে তাহলে সেখানে সবথেকে বেশি দ্বায়ী হচ্ছেন আপনি নিজেই।এজন্য নিজে সচেতন হোন।আপনার অজান্তেই ঘটে যাচ্ছে আপনার সন্তানের সাথে এরকম অনেক ঘটনা।
.
সেই মহান ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে ...যারা সম্পর্কের মধ্যস্ততাকারী আপনার নিজের জীবন নিয়ে যা খুশি করুন না।অন্যের জীবন নিয়ে এত চিন্তা কেন?সময়টা অনেক এগিয়ে গেছে এখন সবাই নিজের স্বার্থে ব্যস্ত ,আপনি কেন নিঃস্বার্থ ভাবে অন্যের জীবনকে ধংসের পথে এগিয়ে দিচ্ছেন?এই ধংসের দ্বায় আপনারও।
.
এমন অসংখ্য প্রান্ত,প্রান্তনীর গল্প আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটছে।যে কিশোর বয়স হাসি আর অানন্দে কাটবে সেই বয়স টাই ছেয়ে যাচ্ছে বিষাদ এর কালো ছায়ায়।যেই পবিত্র মুখের হাসিতে মুখরিত হবে আকাশ,বাতাস সেই হাসি ম্লান হয়ে যাচ্ছে মানসিক যন্ত্রনায়,কুলষিত হচ্ছে অপবিত্রতায় মুখ লুকাতে হচ্ছে বদ্ধ ঘরে।অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ এর অসংখ্য আলোকিত মুখ।।
আমি এই প্রথম কোনো অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলতেছি।আমি কথা বলার সাহস পাচ্ছিলাম না।চুপ করে ছিলাম।
ও এরকম কয়েকবার হ্যালো বলার পর আবার বললো
কে আপনি?কথা না বলে এভাবে চুপ করে আছেন কেনো?
তখন আমি বলি,
আমি একটা মেয়ে,,এমনি আপনাকে কল করেছি..
এতটুকু বলেই আমি কল কেটে দি।খুব ভয় ভয় হচ্ছিল।ওইদিন এর বেশি আর কথা হয়নি।
এরপর কিছুদিন পর আবার ওর নাম্বার থেকে কল আসে।দিনটি ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর।
প্রান্ত আমাকে বলে ও আমার সাথে সম্পর্ক করতে চাই।
তখন আমার রিফাত মামার কথা মনে পড়ছিল।রিফাত মামা মনে হয় প্রান্তকে সবকিছু বলেছে।
ওর কথাগুলা আমার কাছে অনেক সুন্দর লাগতেছিল।কি সুন্দর করে কথা বলে।আমি চুপ করে শুধু ওর কথা শুনতেছিলাম।কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
আমি তখন ওকে বলি আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।প্রান্ত ও রাজি হয়ে যায়।
পরের দিন আমি স্কুল এর টাইম এ ওর সাথে দেখা করতে যায় নদীর পাড়ে।
সেইদিন ও আমাকে ভালবাসার কথা বলে আর সেদিন থেকেই আমাদের সম্পর্কের শুরু হয়।আমি নতুন পথ চলা শুরু করি।
নিজের মধ্যে খুব ভাল লাগতেছিল।প্রান্ত আমাকে নাকি পাগলের মত ভালবাসে।আমার অনেক যত্ন নেওয়া শুরু করে।এরকম আমি কারো থেকে এর আগে পায়নি।তার আমার এগুলা অনেক ভাল লাগতে শুরু করে।
.
একদিন প্রান্ত আমাকে বলে ও নাকি আগে একটা মেয়েকে ভালবাসতো।তার সাথে ওর ব্রেকাপ হয়েগেছে।কিন্তু ও এখন আমাকে অনেক ভালবাসে।আমাকে হারাতে চাইনা।ও সেদিন কান্না করে।ওর কথা শুনে আমারও খুব কষ্ট হয় সেদিন।
.
এভাবে একমাস চলে যায়।হঠাৎ আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে যায়।এদিকে আমার ফ্যামিলিতে তখন কিছু প্রবলেম সৃষ্টি হয়।সব মিলিয়ে প্রান্তর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়না।
কিছুদিন পর আবার নতুন একটা ফোন কিনি।এতদিন যে ফোন ছিল সেটা বাসার।এবার আমার নিজের ফোন হয়।আমি তখন খুব বেশি খুশি ছিলাম।কারন প্রান্তর সাথে আমি সবসময় কথা বলতে পারতাম।
.
বার্ষিক পরীক্ষার আগে আমি আমার ফোন ভেঙে ফেলি।এরপর থেকে আগের মত বেশি কথা বলা হত না।সেই বাসার ফোন দিয়ে মাঝে মাঝে কথা হয় আমাদের।প্রান্ত আমাকে তখন ফেসবুকে আইডি খুলে দেই।এরপর থেকে ফেসবুকে কথা বলতাম।
.
আমি ক্লাস সেভেনে উঠি আর প্রান্ত এস.এস.এসি পরীক্ষার্থী।ওর পরীক্ষার জন্য তখন আমাদের যোগাযোগ বন্ধ ছিল।অনেকদিন পর পর কিছু সময় ওর সাথে কথা বলতে পারতাম।আমার একটুও ভাল লাগতো না। কিন্তু কিছু করার ছিল না।এভাবে চলতে থাকে আর দেখতে দেখতে ওর পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়।এতদিনে আমার ফোনও ঠিক করে ফেলি।
তখন ও ফ্রি।আমাকে আবার আগের মত সময় দেওয়া শুরু করে।সারাদিন আমি ওর সাথে কথা বলতাম।রাতে আর ঘুম আসত না।সারারাত ওর সাথে পার করে দিতাম।তখন আমার সবকিছুতে শুধুই প্রান্ত।
.
আমার আর প্রান্তর ব্যাপারটা বাসা থেকে জেনে যায়।সেদিন ছিল আমার গনিত পরিক্ষা।সকালে আম্মু আমাকে খুব মেরেছিল।অনেক বাজে কথা বলেছিল।
তারপর থেকে ওর সাথে আমার কথা হয়না।
আমার পরীক্ষা শুরু হত দশটাই।প্রান্ত নয়টার দিকে আমার স্কুলের সামনে এসে বসে থাকত প্রতিদিন।আমার দেখে খুব খারাপ লাগতো।ভাবতাম ও আমাকে কত ভালবাসে।
আমার পরীক্ষা শেষ হয়ে যায় এভাবেই।বাসায় সবকিছু আগের মত।আমিও আবার ফোন নিয়ে নি আমার কাছে।প্রান্তকে খুব বেশি মিস করতাম।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারলাম না।আবার শুরু হলো ওর সাথে কথা বলা।
১৫ মে আমি প্রান্তর সাথে ঘুরতে যায়।স্কুল বাদ দিয়ে সারাদিন আমি ওর সাথে ছিলাম।আম্মু এটা জেনে যায় কোনোভাবে।বাসায় আসার পর আম্মু আমাকে আবারো খুব মারছিল।আমার ফোনও ভেঙে ফেলছিল।আমি আত্মহত্যা করতে যায় কিন্তু পারলাম না।এভাবে অনেক কষ্টে দিন কাটতে থাকে।
এদিকে প্রান্তও কেমন হয়ে যায়।আমার প্রতি ওর আগ্রহ কমতে থাকে।আগের মত পাগলামি করে না।আমার খোজ খবর ও ন্যায় না।আমি কথা বলতে গেলে ও এড়িয়ে চলতে থাকে।আমার এগুলা সহ্য হয়না।কি করবো আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা।
একদিন প্রান্তর এক বন্ধু আমাকে জানায় ওর আগের গার্লফ্রেন্ডের সাথে আবার সম্পর্ক শুরু হয়েছে।আমি পুরো ভেঙে পড়ছিলাম।সেদিন ঘুমের ওষুধ অনেকগুলা খেয়েছিলাম।দিন যায় প্রান্ত আমার সাথে আরও খারাপ ব্যবহার করে।আমি খুব কষ্ট পেতাম আর বার বার ওর কাছে ছুটে যেতাম।কারন আমি ওকে অনেক ভালবাসতাম।নিজের করে চাইতাম। ও আমাকে সব দিক দিয়ে ব্যাবহার করতো আর ভালবাসতো ওই মেয়েকে।
এজন্য আমার ওর প্রতি ভালবাসা কমে গেল।আমি তখন চাইছিলাম ও আমাকে কষ্ট দিছে আমিও ওকে খুব কষ্ট দিব।
.
এসবের মধ্যে দিয়ে একটি বছর কেটে গেল।প্রান্তর ফেসবুক আইডিতে ওর আগের গার্লফ্রেন্ড অনেক কমেন্ট করে।ওর সবকিছুতে মনের খুশিতে যা ইচ্ছা লিখে।এসব দেখে আমি আর থাকতে পারলাম না।ওই মেয়ের নাম্বার আমার কাছে ছিল।আমি তাকে কল করি।আমার সাথে প্রান্তর সবকিছু বলে দিই।এতে প্রান্ত আমার উপর খুব রেগে যায়।আমার বাসায় এসে ঝামেলা করে।আমি প্রান্তকে অনেক ভালবাসতাম।ওর দেওয়া কষ্ট সহ্য করতে পারতাম না।আমি আমার হাত কাটলাম।অনেক হাত কেটেছিলাম সেদিন।
.
একদিন শুনতে পাই প্রান্ত পুলিশের কাছে ধরা পড়ছে।ও নেশা করতো।সেজন্য পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।যখন পুলিশ ওকে ছেড়ে দেই ও আমার কাছে আসে আর ওর জীবনের সব দুঃখের কথা বলে।ওই মেয়ের সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই।ও ভুল করছে।ও নাকি আমাকে অনেক ভালবাসে হ্যা ও তখন আমাকে ভালবাসতো।আমি ওর কষ্টের কথা শুনে থাকতে পারলাম না।বুকে জড়িয়ে নিলাম প্রান্তকে।আমার ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।
সবকিছু আবার আগের মত চলতে শুরু করলো।আমি আমার প্রান্তকে ফিরে পেলাম আবার।
বেশ কিছুদিন আগে দেখি ওর আগের গার্লফ্রেন্ড ফেসবুকে আবারো অনেক কমেন্ট করেছি। এই নিয়ে প্রান্তর সাথে আমি বেশ কথা কাটাকাটি করি।
প্রান্ত বলে ও নাকি ওই মেয়েকে ভালবাসে না।
আমিই নাকি এখন ওকে ভালবাসি না।ওর সাথে ব্রেক আপ করতে চাচ্ছি কারন আমাদের ধর্ম আলাদা।তাই এসব নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি করতেছি।কিন্তু আমি তো প্রান্তকে অনেক ভালবাসি।
.
প্রান্ত আমার জীবনকে নষ্ট করে দিয়েছ,শেষ করে দিয়েছে।তাই আমি আজ অনেক দূরে চলে যাচ্ছি........
..........................
আমাদের নিউ জেনারেশন এর ছেলে মেয়েরা প্রেম-ভালবাসাতে একটু বেশি এগিয়ে।আজ তোমাকে বলতে চাই,
যে সম্পর্কের সূচনা তুমি নিজেই সৎ উদ্দেশ্যে করনি তার সুন্দর সমাপ্তি কিভাবে সম্ভব?ষষ্ট শ্রেনীতে পড়া একটা মেয়ে কি বুঝে ভালবাসা কি।তখন তার মাঝে এই অনুভুতি তো আসে না।
যে সময়টা বন্ধুদের সাথে হাসি,আনন্দে কাটানোর কথা সেই সময়ে এত কষ্টের অনুভূতি কেন হবে?তুমি শুধুমাত্র খেয়ালের বসে সম্পর্কের সূচনা করেছিলে। আজ প্রান্ত তোমার কাছে অনেক খারাপ তোমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে।সেই সুযোগ তুমি তাকে দিয়েছ বার বার।তোমার জীবনের আজকের পরিনতির জন্য প্রান্তর দায়বদ্ধতা কতটা সেটা বলার আগে তোমার নিজের দায়বদ্ধতা যে শতভাগ এটাই বলব।
.
সেই সব অভিবাবক দের উদ্দেশ্যে বলতে চাই.. যারা এই বয়সে সন্তানের হাতে কলম,বই তুলে দেওয়ার পরিবর্তে ফোন তুলে দেন। ষষ্ঠ শ্রেনিতে পড়া ছেলে,মেয়ের কি প্রয়োজন থাকতে পারে ফোনের?নিতান্তই যদি শখের বসে দিয়ে থাকলে বলব আপানার সন্তানের ভাল মন্দের বোধ হয়নি, কিন্তু আপনার তো সেই বোধ আছে তাহলে সব বুঝে এমন ভুল করার পর তাকে শাসন করাটা আগুনে ঘি ঢালার মত। আপনি নিজেই তাকে ধংসের পথের প্রথম ধাপ পার করে দিয়েছেন।তাই অাজ তার জীবনের এমন অস্বাভাবিক পরিনতির দায়টা আপনারও।আপনার সন্তান যদি এরকম কোনো কিছু করে থাকে তাহলে সেখানে সবথেকে বেশি দ্বায়ী হচ্ছেন আপনি নিজেই।এজন্য নিজে সচেতন হোন।আপনার অজান্তেই ঘটে যাচ্ছে আপনার সন্তানের সাথে এরকম অনেক ঘটনা।
.
সেই মহান ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে ...যারা সম্পর্কের মধ্যস্ততাকারী আপনার নিজের জীবন নিয়ে যা খুশি করুন না।অন্যের জীবন নিয়ে এত চিন্তা কেন?সময়টা অনেক এগিয়ে গেছে এখন সবাই নিজের স্বার্থে ব্যস্ত ,আপনি কেন নিঃস্বার্থ ভাবে অন্যের জীবনকে ধংসের পথে এগিয়ে দিচ্ছেন?এই ধংসের দ্বায় আপনারও।
.
এমন অসংখ্য প্রান্ত,প্রান্তনীর গল্প আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটছে।যে কিশোর বয়স হাসি আর অানন্দে কাটবে সেই বয়স টাই ছেয়ে যাচ্ছে বিষাদ এর কালো ছায়ায়।যেই পবিত্র মুখের হাসিতে মুখরিত হবে আকাশ,বাতাস সেই হাসি ম্লান হয়ে যাচ্ছে মানসিক যন্ত্রনায়,কুলষিত হচ্ছে অপবিত্রতায় মুখ লুকাতে হচ্ছে বদ্ধ ঘরে।অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ এর অসংখ্য আলোকিত মুখ।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন