অনিকের সাথে বিয়ে হওয়ার আজ ৫ বছরে
পদার্পণ করলাম। বিয়ের পর থেকে আজ অবদী
একটা দিন ও আমায় ছেড়ে থাকেনি। সব সময় ও
আমার পাশে ছিল। সব সময় ও আমাকে
সাপোর্ট করছে এমনকি আমার জন্য নিজের
পরিবারকে ছাড়তেও একটাবার ভাবেনি।
.
অনিকের সাথে আমার বিয়েটা প্রেম করেই
হয়। সে স্কুল লাইফ থেকে আমাদের সম্পর্ক।
কলেজে উঠার পর পরিবার একটু একটু জানতো।
দু'জনে অনেক, ঝড়, তুফান পার করে অনেক
প্রতিকুলতা পার করে সম্পর্কটা আগলে
রেখেছি। অনিক আমার ৩ বছরের সিনিয়র ছিল।
যখন ভার্সিটিতে এডমিশন হলাম তখন আমাদের
প্রেম যেন আরো গভীর হতে লাগলো।
স্বাভাবিক ভাবেই পরিবার থেকে একটা
স্বাধীনতা ছিল কারন তখন আমি উপযুক্ত একটা
বয়সে পা দিয়েছি এদিকে অনিকের বাসা
থেকে পুরা স্বাধীনতা পেয়েছে একে
ভার্সিটি লাইফ তারউপর ছেলে মানুষ।
যথারীতি ছেলেরা পরিবারে একটু বেশি ছাড়
পেয়ে থাকে যা মেয়েদের ক্ষেএে হয়না।
সবাই জানতো আমাদের রিলেশন ব্রেকআপ
কিন্তু আমরা সেটা কখনো হতে দেইনি। আর
যাই হয়ে যাক সম্পর্কটা ধরে রেখেছি।
.
অনিকের পড়াশুনা কমপ্লিট এখন শুধু একটা ভাল
চাকুরীর অপেক্ষা। ওর চাকুরীটা হলেই
পরিবারে আমাদের কথা জানায় দিব। আমি
তখন পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। বাসায় বিয়ের
জন্য তাড়া দিতে থাকে। যেভাবে পারছি
বিয়ে আটকিয়ে রাখছি কিন্তু এভাবে কতদিন
পারবো উপরআলা জানে। টেনশনে আমি শেষ
কিন্তু অনিক আমাকে আগলে রেখেছে। আমি
জানতাম ও কখনো অন্যকারো হতে দিবেনা।
আমাকে শুধু ধৈর্য ধরতে হবে ওর চাকুরীর জন্য।
অনিকের জন্য আমি সব করতে পারবো তাই সব
টেনশন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।
.
বেশ কিছুদিনের মধ্যে অনিকের একটা
ছোটখাটো চাকরী হল। যদিও এ চাকুরীর টাকা
দিয়ে নুতুন বিয়ে করে সংসার সামলানো কঠিন
তারপরও আমরা বিয়ে করবো কেননা আর যাই
হোক দু'জন একসাথে থাকতে পারবো
পাশাপাশি এটায় আমাদের সবথেকে বড়
পাওয়া। অনিক অন্য আরো ভাল চাকুরীর জন্য
আবেদন করেছে কিন্তু এখনো কিছু হয়নি। আজ
ওর চাকরী পাওয়াতে আমার মাথার উপর দিয়ে
বড় ধরনের একটা ঝড় নেমে গেল কি যে
টেনশনে ছিলাম বুঝে বলতে পারবো না। রাতে
অনিকের সাথে ফোনে কথা হল। আর প্রেম নই
অনেক প্রেম করেছি এবার নাহয় বিয়ের পর
প্রেম করা যাবে। জানিনা পরিবার কতটা
সাপোর্ট করবে তবে যাই হোক আমরা কেউ
কাউকে ছেড়ে যাবোনা।
.
পরের দিন অনিক ওর পরিবারকে আমার কথা
জানায়। ওর পরিবার প্রথমে না করলেও পরে
রাজি হয়ে যায় কারন আমার পারিবারিক
অবস্থা খুব একটা খারাপ ছিল না। ওদের
পরিবারের সাথে মানিয়ে নেয়ার মতো কিন্তু
বাঁধা যা আসলো তা আমার পরিবার থেকে।
কিছুতেই মা-বাবা ঐ পরিবারে আমাকে বিয়ে
দিবে না। আমি ছিলাম আমার মা-বাবার
একমাএ মেয়ে। তারা কোনভাবেই এত কম
সেলারি পাওয়া ছেলের সাথে আমার বিয়ে
দিবে না। অনিকের পরিবার অনেক রিকুয়েস্ট
করছে তাতেও কোন লাভ হয়নি। অবশেষে বাধ্য
হলাম পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার জন্য।
চেয়েছিলাম সবার মতামতে হাসি আনন্দে
বিয়ে করবো। দু পরিবারে এক আত্নীয়তা
বন্ধনে বাঁধবো। মা-বাবা কে ছাড়তে পারছি
না আবার অনিককে ছাড়তে পারছিনা। যে
মানুষটা আমার পাশে আমাকে ভালবেসে এক
সাথে সব প্রতিকুলতা পাড়ি দিয়েছে তাকে
একলা করবো কোন অধিকারে। সব ভেবে
চিন্তে ডিসিশন নিলাম পালিয়ে বিয়ে
করবো। জানি মা-বাবা বিয়ের পর ঠিকে
মেনে নিবে।
.
আজ অনিকের আর আমার কোর্ট ম্যারেজ করে
বিয়ে হয়েছে। সরাসরি অনিকের বাড়িতে
উঠেছি। ওর বাসার সবাই আমাকে মেনে
নিয়েছে। অনিকের পরিবারে অনিক একায় আর
ওর ৩ বোন। সুখি পরিবার। আমার শশুড়-
শাশুড়িমা অনেক ভাল। অনেক স্নেহ করে
আমায় কিন্তু জীবনে প্রথম ধাক্কা খেয়েছি
আমার পরিবার থেকে। অনিককে পরিবারের
অমতে বিয়ে করায় মা-বাবা আমাকে ত্যাজ্য
করেছে। অনেক কান্না করেছি পায়ে পড়েছি
এমনকি অনিকটাও মা-বাবার পায়ে পড়ে
ক্ষামা চেয়েছে তবুও মেনে নেই নি। খুব কষ্ট
হতো ভিষন মনে পড়তো তাদের। ফোন করলে
কেটে দিত কখনো রিসিভ করতো না। তবে
একদিক থেকে সুখে ছিলাম যে অনিকের মা-
বাবা আমাকে খুব ভালবাসে নিজের মেয়ের
মতই দেখে। অনিকের বাবা মোটামুটি
প্রভাবশালী ছিলেন।
.
আজ বিয়ের ১ বছর পূর্ণ হলো তবুও মা-বাবা
আমার একটা বার খোঁজ নেই নি। আমি মা হতে
চলেছি শুনেও একবারো খবর নিল না। এদিকে
অনিকের এখনো ভাল কোন চাকরী হয়নি। তবে
আশাকরি ও একদিন ভাল কিছু করবেই।
.
আমাকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে
আসা হয়েছে। অনিক তো আনন্দে আধখানা ও
বাবা হয়েছে তাতে আবার মেয়ে। ওর মেয়ে
বাচ্চা ভীষণ পছন্দ। কিন্তু হসপিটাল থেকে
আসার পর থেকে দেখছি আমার শাশুড়িমা
আমার উপর প্রচুর রেগে আছেন সাথে শশুড়
ননদরাও। বুঝে উঠতে পারছি না কি এমন পাপ
করলাম যে ওরা সবাই আমার সাথে এরকম
আচরন করছে। একি সেই পরিবার যারা
আমাকে ভালবাসতো স্নেহ করতো। মা-বাবা
ত্যাজ্য করার পর এরাই তো আমাকে আগলে
রেখেছে কাল অবদী তো আমাকে নিয়ে
মেতে ছিল আজ হঠাৎ কি এমন হলো সবার
চোখে বিষ হয়ে গেলাম।কিছু বুঝতে না পেরে
অনিককে বললাম। অনিক কিছু বুঝছে না ও
অবাক হয়ে গেছে সবার এরম বিহেভ দেখে।
কিছুক্ষণ বাদে দেখি শাশুড়িমা আমার রুমে
আসলেন। ভাবলাম মা বুঝি এই আমাকে বৌ মা
বলে ডাকদিবে কিন্তু না আমার ধারনা ভূল সে
আমায় বললো আজকেই যেন আমি আমার
মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।
সে চেয়েছিল আমার যেন আমার যেন একটা
পুত্র সন্তান হয় কিন্তু তা তো হয়নি। এবার
বুঝতে পারলাম আমার পাপটা কোথায়। আমি
মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছি তাই আমার
সবথেকে বড় অপরাধ। এতক্ষণ অনিক সব কথা
শুনলো। অনিক আমার শাশুড়িমাকে বুঝানোর
চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই সে বুঝলো না।
উলটো বলছে অনিকের নাকি আবার বিয়ে
দিবে। তাদের ছেলেকে তারা আমার মত
অপয়া মেয়ের সাথে কিছুতেই থাকতে দিবে
না। এ কথা শুনে আমি আর নিজেকে আটকাতে
পারলাম না খুব করে কাঁদতে লাগলাম
আমার কান্না দেখে অনিক কেঁদে ফেললো। ও
আমাকে বুঝাতে লাগলো কখনো কোনদিন
আমাকে ছেড়ে যাবেনা। এদিকে অনিক আমার
পাশে থাকায় শাশুড়িমা অত্যাচার শুরু হলো
দিনকে দিন। নানা ভাবে আমাকে কথা
শুনাতো। বাড়ির সমস্ত কাজ আমাকে দিয়ে
করাত আমি নিরবে সব সহ্য করতাম কারন
অনিকের তখন পর্যন্ত ভাল চাকরী হয় নি। শুধু
যে আমাকে কথা শুনতে হতো তা নই অনিকেও
ছাড় দেইনি অকথ্য ভাষায় ওকে গালিগালাজ
করতো। আমার জন্য সব সহ্য করেছে সব। নিজের
মা-বাবার থেকেও অপমানিত হয়েছে।
আমার মেয়ের বয়স এখন ৬ মাস একটা বার
আমার
শাশুড়িমা ওকে কোলে নেই নি। আমার সাথে
সাথে আমার ছোট মেয়েটাকেও কথা শুনাত।
.
সন্ধ্যায় রুমে বসে খুব কাঁদছিলাম। মেয়েটা যে
কখন আমার সাথে তাল মিলিয়ে কান্না শুরু
করেছে বুঝতেই পারিনি। অনিক এসে মা-
মেয়ের এ অবস্থা দেখে মেয়েকে এক হাতে
কোলে নিয়ে অন্য হাতে আমার চোখের জল
মুছতে লাগলো আর চুপি চুপি আমার কানে
বলছে,
→শুনো আমার মেয়ে আমার লক্ষী তার
থেকেও
লক্ষী আমার বৌ।
→ ইয়ারকি করার সময় এটা নই অনিক
→ উহু মোটেই ফান করছি না সত্যি বলছি
তোমরা তো আমার পৃথিবী আর এ পৃথিবীর জন্য
একটা ভাল খবর আছে।
→ কি খবর
→ আমার জবটা হয়ে গেছে অনু। আজ চিঠি
এসেছে ওরা আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে এ
সপ্তাহে চলে যেতে বলছে।
→ চলে যেতে বলছে মানে কই যাবো আমরা এ
তোমার কি মাথাটা ঠিক আছে।
→ হ্যা অনু আমার মাথা একদম ঠিক আছে। আমি
যে জবটার জন্য আবেদন করেছিলাম ঐ টা
বাহিরের দেশে আইমিন কানাডায়। ওরা
আমাকে সিলেক্ট করেছে ওদের কোম্পানির
জন্য।
আমি অনিকের কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছি।
কিছুদিন
আগে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে
দিয়েছে কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ার অপরাধে।
খুব টানাটানি
করে চলেছি এ দিনগুলি। আগে তো বাড়িভাড়া
দেয়া
লাগতো না কিন্তু এখন বাড়িভাড়া, মেয়ের
খরচ,সংসারের
যাবতীয় খরচ সহ অন্যান্য সবদিকে সামাল
দিতে
হতো অনিককে ঐ কম বেতনের টাকায়। তবুও
একটাবার কেউ খোঁজ নেইনি। আমার
পরিবারের কথা
তো বাদ দিলাম তারা তো আমাকে ত্যাজ্য
করেছে।
যাক এতদিন পরে আল্লাহ্ মুখ তুলে চেয়েছে।
.
আজ কানাডায় ৩ বছর যাবত আছি। জীবনে যে
প্রতিকুলতাগুলি পারি দিয়েছি তা কখনো
ভুলার না। অনিকটার
জন্য আমি কিছু করতে পারিনি শুধু নিয়ে
গেছি। আমার
জন্য ওর পুরা পরিবার থেকে আজ ও আলাদা।
আমার
আর আমার মেয়েকে ভালবেসে ও ওর মা-বাবা
পরিবারকে ত্যাগ করেছে শুধুমাএ আমাদের
ভালবেসে । এদিকে আমার মেয়েটা কথা
বলতে
শিখে গেছে। খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারে
এমন সব কথা বলে যে মাঝে মাঝে মনে হয়
দেশে ফিরে গিয়ে বলি কি দোষ ছিল এ
নিষ্পাপ
শিশুটার যার জন্য ওকে ওর পরিবার থেকে এত
দূরে
থাকতে হচ্ছে। আজ যদি ওর দাদুর পাশে বসে
দুষ্টমি
করতো ওর দাদির পিছনে পিছনে যদি ছুটে
বেড়াত
কাজ করার জন্য যদি ওর ছোট ছোট দুষ্টমি গুলি
ওর
দাদা-দাদীর সাথে করতো তাহলে কি খুব
ক্ষতি
হতো। আমি সে দিনটার অপেক্ষায় আছি
যেদিন
দেশে ফিরে যাবো এবং আমার শাশুড়িমা আর
শশুড়
আমার মেয়ে আর অনিক তাদের কাছে টেনে
নিবে ভালবেসে। মূল্য দিবে অনিকের এ
ত্যাগের
------------
.
আমাদের সমাজে এখনো কন্যা সন্তান
জন্মদিয়ার
অপরাধে অনেক সুন্দর পরিবার ধংস্ব হয়ে
যাচ্ছে।যা
দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত না হলে
সমাজে
মেয়েরা আরো অবহেলিত হবে।
পদার্পণ করলাম। বিয়ের পর থেকে আজ অবদী
একটা দিন ও আমায় ছেড়ে থাকেনি। সব সময় ও
আমার পাশে ছিল। সব সময় ও আমাকে
সাপোর্ট করছে এমনকি আমার জন্য নিজের
পরিবারকে ছাড়তেও একটাবার ভাবেনি।
.
অনিকের সাথে আমার বিয়েটা প্রেম করেই
হয়। সে স্কুল লাইফ থেকে আমাদের সম্পর্ক।
কলেজে উঠার পর পরিবার একটু একটু জানতো।
দু'জনে অনেক, ঝড়, তুফান পার করে অনেক
প্রতিকুলতা পার করে সম্পর্কটা আগলে
রেখেছি। অনিক আমার ৩ বছরের সিনিয়র ছিল।
যখন ভার্সিটিতে এডমিশন হলাম তখন আমাদের
প্রেম যেন আরো গভীর হতে লাগলো।
স্বাভাবিক ভাবেই পরিবার থেকে একটা
স্বাধীনতা ছিল কারন তখন আমি উপযুক্ত একটা
বয়সে পা দিয়েছি এদিকে অনিকের বাসা
থেকে পুরা স্বাধীনতা পেয়েছে একে
ভার্সিটি লাইফ তারউপর ছেলে মানুষ।
যথারীতি ছেলেরা পরিবারে একটু বেশি ছাড়
পেয়ে থাকে যা মেয়েদের ক্ষেএে হয়না।
সবাই জানতো আমাদের রিলেশন ব্রেকআপ
কিন্তু আমরা সেটা কখনো হতে দেইনি। আর
যাই হয়ে যাক সম্পর্কটা ধরে রেখেছি।
.
অনিকের পড়াশুনা কমপ্লিট এখন শুধু একটা ভাল
চাকুরীর অপেক্ষা। ওর চাকুরীটা হলেই
পরিবারে আমাদের কথা জানায় দিব। আমি
তখন পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। বাসায় বিয়ের
জন্য তাড়া দিতে থাকে। যেভাবে পারছি
বিয়ে আটকিয়ে রাখছি কিন্তু এভাবে কতদিন
পারবো উপরআলা জানে। টেনশনে আমি শেষ
কিন্তু অনিক আমাকে আগলে রেখেছে। আমি
জানতাম ও কখনো অন্যকারো হতে দিবেনা।
আমাকে শুধু ধৈর্য ধরতে হবে ওর চাকুরীর জন্য।
অনিকের জন্য আমি সব করতে পারবো তাই সব
টেনশন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।
.
বেশ কিছুদিনের মধ্যে অনিকের একটা
ছোটখাটো চাকরী হল। যদিও এ চাকুরীর টাকা
দিয়ে নুতুন বিয়ে করে সংসার সামলানো কঠিন
তারপরও আমরা বিয়ে করবো কেননা আর যাই
হোক দু'জন একসাথে থাকতে পারবো
পাশাপাশি এটায় আমাদের সবথেকে বড়
পাওয়া। অনিক অন্য আরো ভাল চাকুরীর জন্য
আবেদন করেছে কিন্তু এখনো কিছু হয়নি। আজ
ওর চাকরী পাওয়াতে আমার মাথার উপর দিয়ে
বড় ধরনের একটা ঝড় নেমে গেল কি যে
টেনশনে ছিলাম বুঝে বলতে পারবো না। রাতে
অনিকের সাথে ফোনে কথা হল। আর প্রেম নই
অনেক প্রেম করেছি এবার নাহয় বিয়ের পর
প্রেম করা যাবে। জানিনা পরিবার কতটা
সাপোর্ট করবে তবে যাই হোক আমরা কেউ
কাউকে ছেড়ে যাবোনা।
.
পরের দিন অনিক ওর পরিবারকে আমার কথা
জানায়। ওর পরিবার প্রথমে না করলেও পরে
রাজি হয়ে যায় কারন আমার পারিবারিক
অবস্থা খুব একটা খারাপ ছিল না। ওদের
পরিবারের সাথে মানিয়ে নেয়ার মতো কিন্তু
বাঁধা যা আসলো তা আমার পরিবার থেকে।
কিছুতেই মা-বাবা ঐ পরিবারে আমাকে বিয়ে
দিবে না। আমি ছিলাম আমার মা-বাবার
একমাএ মেয়ে। তারা কোনভাবেই এত কম
সেলারি পাওয়া ছেলের সাথে আমার বিয়ে
দিবে না। অনিকের পরিবার অনেক রিকুয়েস্ট
করছে তাতেও কোন লাভ হয়নি। অবশেষে বাধ্য
হলাম পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার জন্য।
চেয়েছিলাম সবার মতামতে হাসি আনন্দে
বিয়ে করবো। দু পরিবারে এক আত্নীয়তা
বন্ধনে বাঁধবো। মা-বাবা কে ছাড়তে পারছি
না আবার অনিককে ছাড়তে পারছিনা। যে
মানুষটা আমার পাশে আমাকে ভালবেসে এক
সাথে সব প্রতিকুলতা পাড়ি দিয়েছে তাকে
একলা করবো কোন অধিকারে। সব ভেবে
চিন্তে ডিসিশন নিলাম পালিয়ে বিয়ে
করবো। জানি মা-বাবা বিয়ের পর ঠিকে
মেনে নিবে।
.
আজ অনিকের আর আমার কোর্ট ম্যারেজ করে
বিয়ে হয়েছে। সরাসরি অনিকের বাড়িতে
উঠেছি। ওর বাসার সবাই আমাকে মেনে
নিয়েছে। অনিকের পরিবারে অনিক একায় আর
ওর ৩ বোন। সুখি পরিবার। আমার শশুড়-
শাশুড়িমা অনেক ভাল। অনেক স্নেহ করে
আমায় কিন্তু জীবনে প্রথম ধাক্কা খেয়েছি
আমার পরিবার থেকে। অনিককে পরিবারের
অমতে বিয়ে করায় মা-বাবা আমাকে ত্যাজ্য
করেছে। অনেক কান্না করেছি পায়ে পড়েছি
এমনকি অনিকটাও মা-বাবার পায়ে পড়ে
ক্ষামা চেয়েছে তবুও মেনে নেই নি। খুব কষ্ট
হতো ভিষন মনে পড়তো তাদের। ফোন করলে
কেটে দিত কখনো রিসিভ করতো না। তবে
একদিক থেকে সুখে ছিলাম যে অনিকের মা-
বাবা আমাকে খুব ভালবাসে নিজের মেয়ের
মতই দেখে। অনিকের বাবা মোটামুটি
প্রভাবশালী ছিলেন।
.
আজ বিয়ের ১ বছর পূর্ণ হলো তবুও মা-বাবা
আমার একটা বার খোঁজ নেই নি। আমি মা হতে
চলেছি শুনেও একবারো খবর নিল না। এদিকে
অনিকের এখনো ভাল কোন চাকরী হয়নি। তবে
আশাকরি ও একদিন ভাল কিছু করবেই।
.
আমাকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে
আসা হয়েছে। অনিক তো আনন্দে আধখানা ও
বাবা হয়েছে তাতে আবার মেয়ে। ওর মেয়ে
বাচ্চা ভীষণ পছন্দ। কিন্তু হসপিটাল থেকে
আসার পর থেকে দেখছি আমার শাশুড়িমা
আমার উপর প্রচুর রেগে আছেন সাথে শশুড়
ননদরাও। বুঝে উঠতে পারছি না কি এমন পাপ
করলাম যে ওরা সবাই আমার সাথে এরকম
আচরন করছে। একি সেই পরিবার যারা
আমাকে ভালবাসতো স্নেহ করতো। মা-বাবা
ত্যাজ্য করার পর এরাই তো আমাকে আগলে
রেখেছে কাল অবদী তো আমাকে নিয়ে
মেতে ছিল আজ হঠাৎ কি এমন হলো সবার
চোখে বিষ হয়ে গেলাম।কিছু বুঝতে না পেরে
অনিককে বললাম। অনিক কিছু বুঝছে না ও
অবাক হয়ে গেছে সবার এরম বিহেভ দেখে।
কিছুক্ষণ বাদে দেখি শাশুড়িমা আমার রুমে
আসলেন। ভাবলাম মা বুঝি এই আমাকে বৌ মা
বলে ডাকদিবে কিন্তু না আমার ধারনা ভূল সে
আমায় বললো আজকেই যেন আমি আমার
মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।
সে চেয়েছিল আমার যেন আমার যেন একটা
পুত্র সন্তান হয় কিন্তু তা তো হয়নি। এবার
বুঝতে পারলাম আমার পাপটা কোথায়। আমি
মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছি তাই আমার
সবথেকে বড় অপরাধ। এতক্ষণ অনিক সব কথা
শুনলো। অনিক আমার শাশুড়িমাকে বুঝানোর
চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই সে বুঝলো না।
উলটো বলছে অনিকের নাকি আবার বিয়ে
দিবে। তাদের ছেলেকে তারা আমার মত
অপয়া মেয়ের সাথে কিছুতেই থাকতে দিবে
না। এ কথা শুনে আমি আর নিজেকে আটকাতে
পারলাম না খুব করে কাঁদতে লাগলাম
আমার কান্না দেখে অনিক কেঁদে ফেললো। ও
আমাকে বুঝাতে লাগলো কখনো কোনদিন
আমাকে ছেড়ে যাবেনা। এদিকে অনিক আমার
পাশে থাকায় শাশুড়িমা অত্যাচার শুরু হলো
দিনকে দিন। নানা ভাবে আমাকে কথা
শুনাতো। বাড়ির সমস্ত কাজ আমাকে দিয়ে
করাত আমি নিরবে সব সহ্য করতাম কারন
অনিকের তখন পর্যন্ত ভাল চাকরী হয় নি। শুধু
যে আমাকে কথা শুনতে হতো তা নই অনিকেও
ছাড় দেইনি অকথ্য ভাষায় ওকে গালিগালাজ
করতো। আমার জন্য সব সহ্য করেছে সব। নিজের
মা-বাবার থেকেও অপমানিত হয়েছে।
আমার মেয়ের বয়স এখন ৬ মাস একটা বার
আমার
শাশুড়িমা ওকে কোলে নেই নি। আমার সাথে
সাথে আমার ছোট মেয়েটাকেও কথা শুনাত।
.
সন্ধ্যায় রুমে বসে খুব কাঁদছিলাম। মেয়েটা যে
কখন আমার সাথে তাল মিলিয়ে কান্না শুরু
করেছে বুঝতেই পারিনি। অনিক এসে মা-
মেয়ের এ অবস্থা দেখে মেয়েকে এক হাতে
কোলে নিয়ে অন্য হাতে আমার চোখের জল
মুছতে লাগলো আর চুপি চুপি আমার কানে
বলছে,
→শুনো আমার মেয়ে আমার লক্ষী তার
থেকেও
লক্ষী আমার বৌ।
→ ইয়ারকি করার সময় এটা নই অনিক
→ উহু মোটেই ফান করছি না সত্যি বলছি
তোমরা তো আমার পৃথিবী আর এ পৃথিবীর জন্য
একটা ভাল খবর আছে।
→ কি খবর
→ আমার জবটা হয়ে গেছে অনু। আজ চিঠি
এসেছে ওরা আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে এ
সপ্তাহে চলে যেতে বলছে।
→ চলে যেতে বলছে মানে কই যাবো আমরা এ
তোমার কি মাথাটা ঠিক আছে।
→ হ্যা অনু আমার মাথা একদম ঠিক আছে। আমি
যে জবটার জন্য আবেদন করেছিলাম ঐ টা
বাহিরের দেশে আইমিন কানাডায়। ওরা
আমাকে সিলেক্ট করেছে ওদের কোম্পানির
জন্য।
আমি অনিকের কথা শুনে অনেক খুশি হয়েছি।
কিছুদিন
আগে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে
দিয়েছে কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ার অপরাধে।
খুব টানাটানি
করে চলেছি এ দিনগুলি। আগে তো বাড়িভাড়া
দেয়া
লাগতো না কিন্তু এখন বাড়িভাড়া, মেয়ের
খরচ,সংসারের
যাবতীয় খরচ সহ অন্যান্য সবদিকে সামাল
দিতে
হতো অনিককে ঐ কম বেতনের টাকায়। তবুও
একটাবার কেউ খোঁজ নেইনি। আমার
পরিবারের কথা
তো বাদ দিলাম তারা তো আমাকে ত্যাজ্য
করেছে।
যাক এতদিন পরে আল্লাহ্ মুখ তুলে চেয়েছে।
.
আজ কানাডায় ৩ বছর যাবত আছি। জীবনে যে
প্রতিকুলতাগুলি পারি দিয়েছি তা কখনো
ভুলার না। অনিকটার
জন্য আমি কিছু করতে পারিনি শুধু নিয়ে
গেছি। আমার
জন্য ওর পুরা পরিবার থেকে আজ ও আলাদা।
আমার
আর আমার মেয়েকে ভালবেসে ও ওর মা-বাবা
পরিবারকে ত্যাগ করেছে শুধুমাএ আমাদের
ভালবেসে । এদিকে আমার মেয়েটা কথা
বলতে
শিখে গেছে। খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারে
এমন সব কথা বলে যে মাঝে মাঝে মনে হয়
দেশে ফিরে গিয়ে বলি কি দোষ ছিল এ
নিষ্পাপ
শিশুটার যার জন্য ওকে ওর পরিবার থেকে এত
দূরে
থাকতে হচ্ছে। আজ যদি ওর দাদুর পাশে বসে
দুষ্টমি
করতো ওর দাদির পিছনে পিছনে যদি ছুটে
বেড়াত
কাজ করার জন্য যদি ওর ছোট ছোট দুষ্টমি গুলি
ওর
দাদা-দাদীর সাথে করতো তাহলে কি খুব
ক্ষতি
হতো। আমি সে দিনটার অপেক্ষায় আছি
যেদিন
দেশে ফিরে যাবো এবং আমার শাশুড়িমা আর
শশুড়
আমার মেয়ে আর অনিক তাদের কাছে টেনে
নিবে ভালবেসে। মূল্য দিবে অনিকের এ
ত্যাগের
------------
.
আমাদের সমাজে এখনো কন্যা সন্তান
জন্মদিয়ার
অপরাধে অনেক সুন্দর পরিবার ধংস্ব হয়ে
যাচ্ছে।যা
দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত না হলে
সমাজে
মেয়েরা আরো অবহেলিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন