এইচএসসি পরীক্ষা চলমান আর এই নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কত উৎকন্ঠা কাজ করে। পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হলো, আরেকটু সহজ হলে ভালো হইতো। আমি মনে হয় প্লাস পাবো না আবার কেউ চিন্তা করে পাশ নিয়ে। একেকটা পরীক্ষা শেষ হয় আর পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই শিক্ষার্থীদের মুখে এইসব কথা শোনা যায়। তেমনিভাবে পর্দাথ ১ম পত্র পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে মান্না,জয় এবং রাহাত আলাপ করতেছিলো।
-তোরা তো সেই লেভেলের পরীক্ষা দিসস? (মান্না)
-হো, একেবারে ডাবল প্লাস পামু। (রাহাত)
-হো, কততাই কইবি! আমার প্লাস নিয়া টানাটানি লাগছে। (জয়)
-তোর প্লাস নিয়া টানাটানি লাগলে আমার কি অবস্থা হইবো ক?? (মান্না)
-আর কইস না। তুই আইনস্টাইনের সাথে পদার্থ নিয়া আলাপ করস!! তুই তো সাইন্সের উপযুক্ত না। (রাহাত)
-আর কইস না। আমি তো ভুইল্লাই গেছিলাম আমাদের সাথে নতুন আইনস্টাইন জয় আছে। (মান্না)
তাদের এইসব কথাবার্তা চলাকালীন সময়ে তাদের মাঝে এক মেয়ের আগমন ঘটে। মেয়েটাকে মান্না যদিও চিনে না তবে রাহাত এবং জয় চিনে।
.
-কি খবর জয় ভাই? (মেয়ে)
-ভালোই। পরীক্ষা কেমন দিছো!! (জয়)
-হইছে ভালোই। রাহাত ভাই তো প্লাস পাবে। (মেয়ে)
-আমি প্লাস না পাইলে পাইবো কেলা? (রাহাত)
-হুম্ম,তুমি তো পাবেই। আজকের প্রশ্ন তো মনে হয় সহজ হইছে!! (মেয়ে)
প্রশ্ন সহজ হইছে শুইন্না মান্নার রাগত স্বরে বল্লো
-আপনি কি পদার্থের শিক্ষক?? (মান্না)
-ওমা, আমি পদার্থের শিক্ষক হতে যাবো কেন!! (মেয়ে)
-শিক্ষক তাইলে বুঝলেন কিভাবে প্রশ্ন সহজ হইছে? (মান্না)
-প্রশ্ন সহজ হইছে এইটা বুঝার জন্য কি শিক্ষক হইতে হয়!! (মেয়ে)
-তা হইতে হয় না। তবে যেভাবে বলতাছেন মনে হয় তো আপনি পদার্থে এম.ফিল করে ফেলছেন। (মান্না)
-ভাই, আমার কাছে সহজ মনে হইছে তাই কইলাম। আপনার কাছে যে সহজ মনে হবে তার তো কোন নিশ্চয়তা নাই। (মেয়ে)
-হুম্ম,ভালো কথা। আপনার সহজ নিয়ে আপনি বসে থাকলেই পারেন। এইটা এইভাবে বইল্লা বেড়াইতাছেন কেন? (মান্না)
-আরে ভাই,আপনার সমস্যা কি? আপনি কি আপনার সাথে কথা বলতাছি নাকি!! (মেয়ে)
-সরাসরি না বল্লেও বলা হয়। কারণ আমি এখানে উপস্থিত। আর কথাবার্তা শুইন্না তো মনে হইতাছে প্রশ্ন পাইয়া পরীক্ষা দিছেন। (মান্না)
-আপনি এইরকম ব্যবহার করতাছেন কেন? আপনি তো দেখি মহাঝামেলার মানুষ। (মেয়ে)
মান্না কিছু বলতে যাবে তখনই জয় এবং রাহাত তাকে ঐ জায়গা থেকে টেনে নিয়ে আসলো।
.
-কিরে ভাই, একটা অপিরিচিত মেয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে!! (জয়)
-কি করতাম কো দেহি?? প্রশ্ন সহজ হইছে এইডা এমনে বলার কি আছে!! (মান্না)
-আচ্ছা যা হইছে বাদ দে!! তার কাছে সহজ মনে হইছে তাই কইছে হয়তো। (রাহাত)
-হো মিয়া তোমরাও দেহি মাইয়ার পক্ষে। আমার পরীক্ষা তো গেছে। (মান্না)
-দুর বেডা, চিন্তা করিস না। পরীক্ষা তো ভালোই দিসস। (জয়)
-আমি কেমন দিছি এইডা আমি জানি। আগে পাশ কইরা লই। (মান্না)
-যাইহোক, এইরকম না করলেও পারতি। এখন কি ভাববো কো তো দেহি!! (রাহাত)
-তোর কি এই মেয়ের সাথে প্রেম-পীরিতি আছে নাকি? এত দরস দেহাইতাছস কেরে? (মান্না)
-আমার প্রেম থাকতো কেরে? এখানে প্রেমের প্রশ্ন না, মেয়েটা সাথে ভালোভাবেও তো কথা কইতে পারতি!! (রাহাত)
-আমার ইচ্ছা হইছে খারাপভাবে কইছি। তোরে তো আর এরজন্য জরিমানা দিতে হইবো না। জরিমানা দিতে হইলে জানাইস পরে দেইক্ষালমু সব। (মান্না)
-তোরসাথে কথা কইয়া লাভ নাই ভাই। এইসব বাদ দে এহন চলো বিদায় লই। (রাহাত)
তারা ঐদিনের মতো বিদায় নিয়ে যার যার বাসায় চলে গেলো।
.
রাতে মান্নার কথাগুলো নিয়ে জয়ের সাথে মেয়েটার কথা হলো। মেয়েটার নামই তো বলা হলো না!!! মেয়েটার নাম জান্নাত।
-hi, জয় ভাই। কি করো?? (জান্নাত)
-করি না কিছু। তবে যেহেতু পরীক্ষা তাই পড়তে বসার চিন্তাভাবনা চলতাছে। (জয়)
-তাই! ভালো। এখনোই তো পড়াশোনা করার সময়। ভালো কইরা পড়ালেখা করো। (জান্নাত)
-হুম,চেস্টায় আছি। তুমিও করো। (জয়)
-আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-করো।
-তোমাদের সাথে যে ছেলেটা আছিলো ঐটা কে?
-কার কথা বলতাছো?
-ঐযে তুমি আর রাহাত দাঁড়িয়ে আছিলা তখন আমার সাথে যে তর্ক করলো।
-ওহ, মান্নার কথা বলতাছো। আসলে ছেলেটা একটু এইরকমই।
-না, এইরকম ব্যবহার করলো কেন? আমি তো তাকে চিনি না তবুও গায়ে পড়ে ঝগড়া করে!
-আরে বাদ দেও। তার পরীক্ষা খারাপ হইছে তো তাই এইরকম করছে তবে ছেলেটা এমনিতে ভালো।
-ভালো না ঘোড়ার ডিম। একটা নিম্নমানের মানুষ।
-এইসব কি বলো? আসলেই ওহ ভালো কিন্তু তুমি চিনো না তাই এইরকম বলতাছো। তারসাথে কথা বল্লেই বুঝতে পারতা।
-ভাই, আমার কথা বলার ইচ্ছা নাই। আজকে যা দেখাইছে!! কথা বল্লে পরে হয়তো দেখা যাবে দুইতলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে।
-এইসব কি বলো? আমরা তো সেই স্কুল থাইকা একসাথে পড়তাছি। কই আমাদের তো ধাক্কা দিয়ে ফালায় নাই।
-তোমাদের হিসাব আলাদা। নাইলে কেও এমনে কথা বলে।
-আরে বাদ দেও। পদার্থ ২য় পত্র ভালো কইরা পড়। আর সামনের পরীক্ষার পরে তার সাথে কথা বলাইয়া দিবো।
-আচ্ছা আমি যাই এখন। তুমিও পড়তে থাকো।
.
পদার্থ ২য় পত্র পরীক্ষার পরে যথারীতি মান্না, জয় এবং রাহাত কথা বলতেছিলো। তখন আবারো তাদের মধ্যে জান্নাতের আগমন ঘটলো। এইবার অবশ্য জয় এবং রাহাত বলে দিছিলো যেন সে জান্নাতের সাথে কোনরূপ তর্ক না করে, তাই সে চুপ ছিলো।
-কি খবর জয় এবং রাহাত ভাই?(জান্নাত)
-ভালো তোমার। পরীক্ষা কেমন দিলা? (জয়)
-আরে কারে তুই কি জিগাস! জান্নাতের পরীক্ষা কি কোনদিন খারাপ হইছিলো নাকি? (রাহাত)
-তা তুই ঠিকই বলছস। (জয়)
-রসিকতা কইরো না।পরীক্ষা হইছে মোটামুটি তবে প্রশ্ন...। আচ্ছা এই বিষয় বাদ। (জান্নাত)
-প্রশ্ন কি হইছে? সম্পূর্ণ করো বাক্যটা। (রাহাত)
-না কিছু না। (জান্নাত)
-আরে আজকে সমস্যা নাই। মান্না কিছু কইবো না কারণ তার পরীক্ষা ভালো হইছে। (জয়)
-ও,তাইলেও সমস্যা। কারণ আজকের প্রশ্ন আমার কাছে কঠিন মনে হইছে। তা তোমাদের ফ্রেন্ড কি বৈজ্ঞানিক মানুষ নাকি?(জান্নাত)
-না, বৈজ্ঞানিক হইতে যাবে কেন? আচ্ছা যাইহোক তোমাদের দুইজনের পরিচয় তো এখনো হলো না। তার নাম মান্না আর কি বলবো! (রাহাত)
-আর বলতে হবে না কিছু। মান্না ভাই তো দেখি আজকে চুপচাপ। (জান্নাত)
-আমি তোমার ভাই আছিলাম কবে? চুপচাপ থাকলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কম নির্গত হয়। (মান্না)
-না এইটা তো কথার কথা। পরিবেশ নিয়া অনেক চিন্তা আপনার? (জান্নাত)
-হুম্ম, আমি না করলে কে করবে!! সবাই তো নিজেরে নিয়াই ব্যস্ত। কিন্তু এই যে পরিবেশে থাকতে হয় সেই পরিবেশ নিয়ে কারো কোন চিন্তাই নাই। (মান্না)
এনির কয়েকজন ফ্রেন্ড এসে পড়ে তাই সে বিদায় নিয়ে চলে আসে ঐদিনের মতো।
-নাম কিরে মেয়েটার? (মান্না)
-জান্নাত। কেন নাম দিয়া কি করবি? (রাহাত)
-জিগাইলে দোষ আছে কোন!! নাম ভিজাইয়া শরবত খাইয়াম। জানোস না পেটে অসুখ আমার। (মান্না)
.
যথারীতি তাদের পরীক্ষা চলছিলো। এবং মাঝেমধ্যে তাদের আলোচনার মধ্যে জান্নাত এসে যোগ দিতো। বর্তমান যুগ হলো তথ্যপ্রযুক্তি র যুগ। এখন আর কেউ আগের মতো প্রেমপত্র লিখে তা দেওয়ার জন্য কষ্ট করে না। এখন প্রেমপত্রটাকে হয় স্ট্যাটাস আকারে দেয় আর না হয় ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে রাহাত আবার একটু উচ্চমানের লেখক। উনি গবেষণাধর্মী অনেক লিখালিখি করেন ফেসবুকে। তার একটা স্ট্যাটাসে মান্না কমেন্ট করলো। এবং তাদের মধ্যে এই স্ট্যাটাস নিয়ে তারা কমেন্ট পাল্টা কমেন্ট করা শুরু করলো। তাদের কমেন্টের মধ্যেই তখন একটা আইডি এসে কমেন্ট করলো। মান্না তো রাগে আইডিটাকে অনেক কিছু বল্লো। সে কেন কমেন্ট করলো ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ঐ আইডি থেকেও অনেক যুক্তিযুক্ত মত উঠে আসলো। তাই মান্না আর বেশিকিছু বলতে পারলো না। তারপর দিন ঐ আইডি থেকে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো। মান্না আইডিটা চেক করে দেখতে পারলো যে জয় এবং রাহাত মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। কিন্তু সে একসেপ্ট করলো না। দুইদিন পরে সে রিকুয়েস্ট টা একসেপ্ট করলো। রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার কিছুক্ষণ পর একটা ম্যাসেজ আসলো ঐ আইডি থেকে।
-hi, কেমন আছেন?
-ভালো থাকার চেস্টায় আছি। কিন্তু আপনি কে?
-আমাকে চিনবেন না আপনি?
-চিনবো না তাইলে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিছেন কেন?
-না, এমনিই দিলাম।
-এমনিই বলতে কোন শব্দ নাই। হয় পরিচয় দেন আর না হয় টুট টুট।
-টুট টুট কি?
-আরে ভাই এত কথা কইয়া লাভ নাই। আপনার পরিচয় দেন?
-আমি জান্নাত।এখন চিনছেন?
-হুম্ম, চিনছি। তা এইটা বলতে এত ভণিতা করতে হয়!
-ভণিতা কই করলাম?
-কি জানি!!
-ওহ, কি করতাছো?
-কিছু না। গণিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
-হুম্ম, নিবেই ভালো ছাত্র।
-ভালো কথা বলছো। যাই পড়তে বসি।
-হুম্ম,,ভালো করে পড়ো।
মান্না তার ম্যাসেজ সিন না করেই ফেসবুক থেকে চলে গেলো।
.
মান্নার সাথে জান্নাতের আর চ্যাটিং হয় নাই। কারণ মান্না ফেসবুকে আইসা একটা স্ট্যাটাস দিয়েই উধাও হয়ে যাইতো। জান্নাত অবশ্য একবার ম্যাসেজ দিছিলো কিন্তু তার রিপ্লাই আসছে তিনদিন পরে। এভাবেই তাদের মধ্যে চ্যাটিং শুরু হয়। একদিন, দুইদিন পরে পরে মান্না রিপ্লাই দিতো। দেখতে দেখতে তাদের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। ভার্সিটি এডমিশন নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সবাই কোচিং শুরু করে দেয় আবার ব্যস্ততা ভর করে। অন্যকিছু নিয়ে চিন্তা করার সময়ও তখন তাদের মধ্যে ছিলো না। তবে ফেসবুক এমন এক মায়াজালে সবাইকে আবদ্ধ করেছিলো যে দিনে একবার হলেও তারা ফেসবুকে এসে ঢু মারতো। মান্নার যখন যা ইচ্ছা হইতো তখন তা নিয়েই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিতো। এই স্ট্যাটাসের আবার নিয়মিত পাঠক ছিলো জান্নাত। মান্নার স্ট্যাটাসগুলো তার গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় জান্নাতের কাছে। ফেসবুকে এসে প্রথমেই মান্নার স্ট্যাটাস পড়া একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় জান্নাতের। যদিও এই কথা মান্নাকে বলে নাই কোন সময়। ধীরেধীরে তার এই অভ্যাস তার মস্তিষ্কের নিউরন দ্বারা পর্যালোচিত হয়ে হৃৎপিন্ডে জায়গা করে নেয়। এই কথা কিভাবে সে মান্নাকে বলবে এইটা নিয়ে সে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে। ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট শুরু হয়ে পড়ে দেখতে দেখতে।
.
হঠাৎ একদিন জল্পনাকল্পনা র অবসান ঘটিয়ে জান্নাত, মান্নাকে ম্যাসেজ দেয়।
- হাই। খবর কি তোমার?
-খবর টিভির পর্দায়। তোমার?
-এইতো। পরীক্ষার খবর কি? কোথায় কোথায় দিবা?
-এখনো জানি না। কারণ কিছুই তো পড়ি নাই। শুধু শুধু পরীক্ষা দিয়ে লাভ কি!! তুমি?
-দেখি কয় জায়গায় দিতে পারি। তাইলে কি করবা??
-কি করবো এখনো জানি না। প্রস্তুতি তো মনে হয় সেই লেভেলের নিচো।
-কি যে বলো!! টুকটাক কিছু পড়ছি আর কি?
-ভালো ছাত্রী হিসাবে এই টুকটাক পড়াই অনেক কিছু।
-আমি আবার ভালো ছাত্রী কবে হইলাম? যাইহোক, কি করতাছো এখন?
-আপাতত তো কিছুই করি না। তুমি?
-আমিও কিছু করি না।
-কিছু না করাটা কি সম্ভব?
-কেন?
-চ্যাটিং করতে হাত, মাথা,চোখ এই তিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাইলে কিছুই করো না কিভাবে??
-এইভাবে চিন্তা করলে তো করতেছিই। তাইলে কিন্তু তুমিও ভুল বলছো।
-হুম্ম,আমি তো সবসময়ই ভুল বলি।
-এত ভুল বলো কেন?
-তা তো জানি না।
-তুমি জানো কি?
-এইটা নিয়ে তুমি গবেষণা করো তাইলে নিশ্চিত নোবেল পাইবা।
-দরকার নাই। গবেষণা করা আমার কাজ না। আর,তুমি কে যে তোমাকে নিয়া গবেষণা করবো?
-তাও ঠিক।
-হুম্ম,একটা কথা বলবো?
-তাইলে এতক্ষণ এইগুলা কি করছো?
-এইগুলা কিছু না। যাও বলতাম না।
-না বল্লে নাই। আমি বিদায় নেই, ঘুমাবো।
-এখনই! মাত্র তো ১০.১৫ বাজে।
-তো কি হইছে!
মান্না, জান্নাতের ম্যাসেজের অপেক্ষা না করেই ফেসবুক থেকে চলে যায়। জান্নাত কিছুটা আশাহত হয় কারণ সে তার মনের কথাটা বলতে পারে নাই তাই।
.
দেশের মোটামুটি সব পাবলিক ভার্সিটির পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। জান্নাত একটা ভার্সিটিতে চান্স পায় কিন্তু মান্না চান্স পাইতে পারে নাই। চান্স পাওয়াতে জান্নাতের মনোবল অনেকাংশে বেড়ে যায়। সে মনে করে এইবার তার মনের কথাটা বল্লে নিশ্চয়ই মান্না তাকে ফিরিয়ে দিবে না। তাই সে তার মনের কথা বলার জন্য আবারো মান্নাকে নক দেয়।
-হাই, কেমন আছো?
-আছি! তুমি?
-ভালোই। কি করো?
-চিন্তা করতাছি। তুমি?
-কি চিন্তা করতাছো?
-বলা যাবে না।
-কেন?
-জানি না।
- জানতে হবে না। আচ্ছা, এগ্রিকালচার সাবজেক্ট সম্বন্ধে কিছু জানো?
-এইটা সম্বন্ধে জানার কি আছে!! পড়ালেখা কইরা পরে শিক্ষিত চাষী হয়। আর কি?
-শিক্ষিত চাষী!!! এভাবে বলো কেন?
-তাইলে কিভাবে বলতাম!!
-বলতে হবে না কিছু। আমি এই সাবজেক্টে চান্স পাইছি।
-ভালোই হইছে। তাইলে তুমি মাঝেমাঝে আইসা আমার ধানক্ষেত গুলো দেইখা যাইও। শতহোক,তুমিও তো একজন চাষীই।
-হইছে আমারে পাগলা কুত্তায় কামড়াইছে।
-তাইলে ফেসবুকে কি!! হাসপাতালে যাও।
-এতকথা বইলা লাভ নাই।
-আমি তো বলি নাই বলতে।
-হুম্ম,এখন যা বলবো তার উত্তর একটু চিন্তা কইরা দিবা।
-এত চিন্তা করা ভালো লাগে না।
-আচ্ছা, ধরো আমি যদি আজীবনের জন্য তোমার ক্ষেতের ধান নিয়ে কাজ করতে চাই তখন তুমি কি আমাকে এই কাজ দিবা?
-সম্ভব না। কারণ শিক্ষিত চাষীরা এক ক্ষেতে বেশিদিন কাজ করে না। তাছাড়া, আমার এখানে তুমি কাজ করতে আসবা কেন?
-আমার ইচ্ছা। তুমি দিবে কিনা তা বলো?
-তারআগে আমার কয়েকটা বিষয় ক্লিয়ার হওয়া দরকার। যেমন, আজীবন কি? আর,আমার ক্ষেত কেন?
-হুম্ম,বুঝছি। এত কথা বলো কেন!! তোমাকে আমার জীবনের অর্ধাঙ্গ করতে চাই।
-আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে? আমার সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। এইসব বলার কোন মানে আছে?
-কোন আবেগ নাই। এইটাই আমার সঠিক সিদ্ধান্ত।
-কিভাবে সঠিক? আমি একমত না। আমার দ্বারা এইসব সম্ভব না।
-কেন সম্ভব না।
-তুমি একটা পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্ট আর আমি কিছুই না।
-তো কি হইছে!!
-তুমি ভার্সিটিতে কতকিছু দেখবা। তোমার ফ্রেন্ড, সিনিয়র দের কাছ থাইকা কতকিছু শিখতে পারবা। তোমরা জ্ঞানের স্তর বৃদ্ধি পাবে। তখন আমার সাথে কথা বলতে আর ভালো লাগবে না।
-তোমাকে কে বলছে? আমাকে তোমার এইরকম মনে হয়!!
-দেখো, মানুষের একটা বৈশিষ্ট্য হলো তার চাহিদা কখনো শেষ হয় না। সে যখন সামান্য কিছু পায় তখন আরো বেশি চায়। তার থেকে যার কম তাকে সে সহ্য করতে পারে না। তাছাড়া, তোমার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে। তুমি উচ্চশিক্ষিতা হবে আর আমি?? তেল আর পানি কিন্তু মিলিত হয় না। তাই সম্ভব না।
-তারমানে, বলতাছো আমার পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাওয়াটা আমাদের মধ্যে অন্তরায়। তাইলে আমি পাবলিকে পড়বো না।
-এইটা তোমার ইচ্ছা কিন্তু আমার এইসব বিষয়ে কিঞ্চিৎ ও আগ্রহ নাই।
-তুমি এইরকম করতাছো কেন?
-যাইহোক, এইসব বলে লাভ নাই। আমার কাজ আছে, আমি যাই।
মান্না তাৎক্ষণিক জান্নাতকে ব্লক দিয়ে দিলো। সে এখন অনেক আনন্দিত কারণ একটা ঝামেলা শেষ হইছে।
.
কিছুক্ষণ পরে রাহাত তাকে কল দিলো এবং অনেক কিছু বল্লো। তবে কথার সারমর্ম একটাই সেইটা হলো, সে জান্নাতের সাথে এইরকম করলো? সে অনেক বুঝানোর চেস্টা করলো যে এইসব প্রেম ভালোবাসা তার জন্য উপযুক্ত না তবু কাজ হলো না। ব্লক দেওয়ার বিষয়টা নিয়ে তার সাথে রাহাত দ্বিমত পোষণ করলো। মান্না আর এইসব নিয়ে ভাবতে চায় না। জয় সাহেবও ম্যাসেজ দিলেন, সে জান্নাতকে ব্লক দিলো কেন? যাইহোক, এই বিষয়টা নিয়ে রাহাত এবং জয় তাকে অনেক বুঝানোর চেস্টা করলো কিন্তু তার কথা একটাই। আর সেইটা হইলো এইসব প্রেম ভালোবাসা করা যাবে না। কারণ যে মেয়ে এই কথা অন্যকে বলতে পারছে তার সাথে যাইহোক প্রেম ভালোবাসা হয় না।
মান্নার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে জান্নাত প্রায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছিলো। তার ফার্স্ট ইয়ারের রিজাল্ট খারাপ হলো। মান্নাকে নিয়েই তার সার্বক্ষণিক চিন্তাভাবনা ছিলো। কিন্তু মান্না তো তাকেই বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে। তখন সে মোটামুটি ভাবে শক্ত হলো এবং তার পড়ালেখা আবারো শুরু করলো। অন্যদিকে, মান্নার পড়ালেখা শেষ হলো এবং তার আব্বা-আম্মা তার বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজা শুরু করলো। কিছুদিন পরে একটা মেয়ের প্রস্তাব আসলো। সব কথাবার্তা ঠিকঠাক হয়ে গেলো। মান্নাকে বলা হলো মেয়েকে দেখে আসার জন্য কিন্তু তার কোন ইচ্ছা ছিলো না। সে বিয়ের ৯ দিন আগে জানতে পারে এই মেয়ে আর কেউ না সেই জান্নাত। তখন সে কি করবে বুঝতে পারতেছিলো না। কারণ সে জান্নাতকে বিয়ে করতে মোটেও আগ্রহী ছিলো না। তার দেশের বাইরে যাওয়ার কথা চলছিলো। এবং বিয়ের এক সপ্তাহ পরে তার দেশের বাইরে যাওয়ার কথা। এই সুযোগটাই সে গ্রহণ করলো। বিয়ের তিনদিন আগে তার প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো বাড়ি থেকে পলায়ন করলো। বাড়ি থেকে পলায়ন করে সে প্রথমে জয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে জান্নাতও নাছোড়বান্দা তাই খুঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেলো। জয়ের বাসা থেকে সে রাহাতের বাসায় গেলো। এই জায়গাও অনিরাপদ হয়ে গেলো তাই সে ছদ্মবেশ ধারণ করলো। বাকি কয়েকটা দিন সে বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকাগুলো ঘুরেই কাটিয়ে দিলো। এবং যথাসময়ে দেশের বাইরে চলে গেলো। অন্যদিকে তার কোন খোঁজখবর না পেয়ে সবাই যখন তার আশা ছেড়ে দিলো। তখন সে তার বাড়িতে ফোন দিলো এবং যখন জানতে পারলো জান্নাতের জন্য নতুন করে বর দেখা হইতেছে। তখন সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কোথায় কোথায় ছিলো এবং এখন কোথায় আছে সবই বল্লো। এই কথা জান্নাত কিভাবে জানি জানতে পারলো। সেও নাকি এখন দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করতাছে মান্নাকে খুঁজতে। তবে সে সবাইকে বলে দিলো মান্না যেন কোনভাবেই এই কথা জানতে না পারে।
-তোরা তো সেই লেভেলের পরীক্ষা দিসস? (মান্না)
-হো, একেবারে ডাবল প্লাস পামু। (রাহাত)
-হো, কততাই কইবি! আমার প্লাস নিয়া টানাটানি লাগছে। (জয়)
-তোর প্লাস নিয়া টানাটানি লাগলে আমার কি অবস্থা হইবো ক?? (মান্না)
-আর কইস না। তুই আইনস্টাইনের সাথে পদার্থ নিয়া আলাপ করস!! তুই তো সাইন্সের উপযুক্ত না। (রাহাত)
-আর কইস না। আমি তো ভুইল্লাই গেছিলাম আমাদের সাথে নতুন আইনস্টাইন জয় আছে। (মান্না)
তাদের এইসব কথাবার্তা চলাকালীন সময়ে তাদের মাঝে এক মেয়ের আগমন ঘটে। মেয়েটাকে মান্না যদিও চিনে না তবে রাহাত এবং জয় চিনে।
.
-কি খবর জয় ভাই? (মেয়ে)
-ভালোই। পরীক্ষা কেমন দিছো!! (জয়)
-হইছে ভালোই। রাহাত ভাই তো প্লাস পাবে। (মেয়ে)
-আমি প্লাস না পাইলে পাইবো কেলা? (রাহাত)
-হুম্ম,তুমি তো পাবেই। আজকের প্রশ্ন তো মনে হয় সহজ হইছে!! (মেয়ে)
প্রশ্ন সহজ হইছে শুইন্না মান্নার রাগত স্বরে বল্লো
-আপনি কি পদার্থের শিক্ষক?? (মান্না)
-ওমা, আমি পদার্থের শিক্ষক হতে যাবো কেন!! (মেয়ে)
-শিক্ষক তাইলে বুঝলেন কিভাবে প্রশ্ন সহজ হইছে? (মান্না)
-প্রশ্ন সহজ হইছে এইটা বুঝার জন্য কি শিক্ষক হইতে হয়!! (মেয়ে)
-তা হইতে হয় না। তবে যেভাবে বলতাছেন মনে হয় তো আপনি পদার্থে এম.ফিল করে ফেলছেন। (মান্না)
-ভাই, আমার কাছে সহজ মনে হইছে তাই কইলাম। আপনার কাছে যে সহজ মনে হবে তার তো কোন নিশ্চয়তা নাই। (মেয়ে)
-হুম্ম,ভালো কথা। আপনার সহজ নিয়ে আপনি বসে থাকলেই পারেন। এইটা এইভাবে বইল্লা বেড়াইতাছেন কেন? (মান্না)
-আরে ভাই,আপনার সমস্যা কি? আপনি কি আপনার সাথে কথা বলতাছি নাকি!! (মেয়ে)
-সরাসরি না বল্লেও বলা হয়। কারণ আমি এখানে উপস্থিত। আর কথাবার্তা শুইন্না তো মনে হইতাছে প্রশ্ন পাইয়া পরীক্ষা দিছেন। (মান্না)
-আপনি এইরকম ব্যবহার করতাছেন কেন? আপনি তো দেখি মহাঝামেলার মানুষ। (মেয়ে)
মান্না কিছু বলতে যাবে তখনই জয় এবং রাহাত তাকে ঐ জায়গা থেকে টেনে নিয়ে আসলো।
.
-কিরে ভাই, একটা অপিরিচিত মেয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে!! (জয়)
-কি করতাম কো দেহি?? প্রশ্ন সহজ হইছে এইডা এমনে বলার কি আছে!! (মান্না)
-আচ্ছা যা হইছে বাদ দে!! তার কাছে সহজ মনে হইছে তাই কইছে হয়তো। (রাহাত)
-হো মিয়া তোমরাও দেহি মাইয়ার পক্ষে। আমার পরীক্ষা তো গেছে। (মান্না)
-দুর বেডা, চিন্তা করিস না। পরীক্ষা তো ভালোই দিসস। (জয়)
-আমি কেমন দিছি এইডা আমি জানি। আগে পাশ কইরা লই। (মান্না)
-যাইহোক, এইরকম না করলেও পারতি। এখন কি ভাববো কো তো দেহি!! (রাহাত)
-তোর কি এই মেয়ের সাথে প্রেম-পীরিতি আছে নাকি? এত দরস দেহাইতাছস কেরে? (মান্না)
-আমার প্রেম থাকতো কেরে? এখানে প্রেমের প্রশ্ন না, মেয়েটা সাথে ভালোভাবেও তো কথা কইতে পারতি!! (রাহাত)
-আমার ইচ্ছা হইছে খারাপভাবে কইছি। তোরে তো আর এরজন্য জরিমানা দিতে হইবো না। জরিমানা দিতে হইলে জানাইস পরে দেইক্ষালমু সব। (মান্না)
-তোরসাথে কথা কইয়া লাভ নাই ভাই। এইসব বাদ দে এহন চলো বিদায় লই। (রাহাত)
তারা ঐদিনের মতো বিদায় নিয়ে যার যার বাসায় চলে গেলো।
.
রাতে মান্নার কথাগুলো নিয়ে জয়ের সাথে মেয়েটার কথা হলো। মেয়েটার নামই তো বলা হলো না!!! মেয়েটার নাম জান্নাত।
-hi, জয় ভাই। কি করো?? (জান্নাত)
-করি না কিছু। তবে যেহেতু পরীক্ষা তাই পড়তে বসার চিন্তাভাবনা চলতাছে। (জয়)
-তাই! ভালো। এখনোই তো পড়াশোনা করার সময়। ভালো কইরা পড়ালেখা করো। (জান্নাত)
-হুম,চেস্টায় আছি। তুমিও করো। (জয়)
-আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-করো।
-তোমাদের সাথে যে ছেলেটা আছিলো ঐটা কে?
-কার কথা বলতাছো?
-ঐযে তুমি আর রাহাত দাঁড়িয়ে আছিলা তখন আমার সাথে যে তর্ক করলো।
-ওহ, মান্নার কথা বলতাছো। আসলে ছেলেটা একটু এইরকমই।
-না, এইরকম ব্যবহার করলো কেন? আমি তো তাকে চিনি না তবুও গায়ে পড়ে ঝগড়া করে!
-আরে বাদ দেও। তার পরীক্ষা খারাপ হইছে তো তাই এইরকম করছে তবে ছেলেটা এমনিতে ভালো।
-ভালো না ঘোড়ার ডিম। একটা নিম্নমানের মানুষ।
-এইসব কি বলো? আসলেই ওহ ভালো কিন্তু তুমি চিনো না তাই এইরকম বলতাছো। তারসাথে কথা বল্লেই বুঝতে পারতা।
-ভাই, আমার কথা বলার ইচ্ছা নাই। আজকে যা দেখাইছে!! কথা বল্লে পরে হয়তো দেখা যাবে দুইতলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে।
-এইসব কি বলো? আমরা তো সেই স্কুল থাইকা একসাথে পড়তাছি। কই আমাদের তো ধাক্কা দিয়ে ফালায় নাই।
-তোমাদের হিসাব আলাদা। নাইলে কেও এমনে কথা বলে।
-আরে বাদ দেও। পদার্থ ২য় পত্র ভালো কইরা পড়। আর সামনের পরীক্ষার পরে তার সাথে কথা বলাইয়া দিবো।
-আচ্ছা আমি যাই এখন। তুমিও পড়তে থাকো।
.
পদার্থ ২য় পত্র পরীক্ষার পরে যথারীতি মান্না, জয় এবং রাহাত কথা বলতেছিলো। তখন আবারো তাদের মধ্যে জান্নাতের আগমন ঘটলো। এইবার অবশ্য জয় এবং রাহাত বলে দিছিলো যেন সে জান্নাতের সাথে কোনরূপ তর্ক না করে, তাই সে চুপ ছিলো।
-কি খবর জয় এবং রাহাত ভাই?(জান্নাত)
-ভালো তোমার। পরীক্ষা কেমন দিলা? (জয়)
-আরে কারে তুই কি জিগাস! জান্নাতের পরীক্ষা কি কোনদিন খারাপ হইছিলো নাকি? (রাহাত)
-তা তুই ঠিকই বলছস। (জয়)
-রসিকতা কইরো না।পরীক্ষা হইছে মোটামুটি তবে প্রশ্ন...। আচ্ছা এই বিষয় বাদ। (জান্নাত)
-প্রশ্ন কি হইছে? সম্পূর্ণ করো বাক্যটা। (রাহাত)
-না কিছু না। (জান্নাত)
-আরে আজকে সমস্যা নাই। মান্না কিছু কইবো না কারণ তার পরীক্ষা ভালো হইছে। (জয়)
-ও,তাইলেও সমস্যা। কারণ আজকের প্রশ্ন আমার কাছে কঠিন মনে হইছে। তা তোমাদের ফ্রেন্ড কি বৈজ্ঞানিক মানুষ নাকি?(জান্নাত)
-না, বৈজ্ঞানিক হইতে যাবে কেন? আচ্ছা যাইহোক তোমাদের দুইজনের পরিচয় তো এখনো হলো না। তার নাম মান্না আর কি বলবো! (রাহাত)
-আর বলতে হবে না কিছু। মান্না ভাই তো দেখি আজকে চুপচাপ। (জান্নাত)
-আমি তোমার ভাই আছিলাম কবে? চুপচাপ থাকলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কম নির্গত হয়। (মান্না)
-না এইটা তো কথার কথা। পরিবেশ নিয়া অনেক চিন্তা আপনার? (জান্নাত)
-হুম্ম, আমি না করলে কে করবে!! সবাই তো নিজেরে নিয়াই ব্যস্ত। কিন্তু এই যে পরিবেশে থাকতে হয় সেই পরিবেশ নিয়ে কারো কোন চিন্তাই নাই। (মান্না)
এনির কয়েকজন ফ্রেন্ড এসে পড়ে তাই সে বিদায় নিয়ে চলে আসে ঐদিনের মতো।
-নাম কিরে মেয়েটার? (মান্না)
-জান্নাত। কেন নাম দিয়া কি করবি? (রাহাত)
-জিগাইলে দোষ আছে কোন!! নাম ভিজাইয়া শরবত খাইয়াম। জানোস না পেটে অসুখ আমার। (মান্না)
.
যথারীতি তাদের পরীক্ষা চলছিলো। এবং মাঝেমধ্যে তাদের আলোচনার মধ্যে জান্নাত এসে যোগ দিতো। বর্তমান যুগ হলো তথ্যপ্রযুক্তি র যুগ। এখন আর কেউ আগের মতো প্রেমপত্র লিখে তা দেওয়ার জন্য কষ্ট করে না। এখন প্রেমপত্রটাকে হয় স্ট্যাটাস আকারে দেয় আর না হয় ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে রাহাত আবার একটু উচ্চমানের লেখক। উনি গবেষণাধর্মী অনেক লিখালিখি করেন ফেসবুকে। তার একটা স্ট্যাটাসে মান্না কমেন্ট করলো। এবং তাদের মধ্যে এই স্ট্যাটাস নিয়ে তারা কমেন্ট পাল্টা কমেন্ট করা শুরু করলো। তাদের কমেন্টের মধ্যেই তখন একটা আইডি এসে কমেন্ট করলো। মান্না তো রাগে আইডিটাকে অনেক কিছু বল্লো। সে কেন কমেন্ট করলো ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে ঐ আইডি থেকেও অনেক যুক্তিযুক্ত মত উঠে আসলো। তাই মান্না আর বেশিকিছু বলতে পারলো না। তারপর দিন ঐ আইডি থেকে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো। মান্না আইডিটা চেক করে দেখতে পারলো যে জয় এবং রাহাত মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। কিন্তু সে একসেপ্ট করলো না। দুইদিন পরে সে রিকুয়েস্ট টা একসেপ্ট করলো। রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার কিছুক্ষণ পর একটা ম্যাসেজ আসলো ঐ আইডি থেকে।
-hi, কেমন আছেন?
-ভালো থাকার চেস্টায় আছি। কিন্তু আপনি কে?
-আমাকে চিনবেন না আপনি?
-চিনবো না তাইলে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিছেন কেন?
-না, এমনিই দিলাম।
-এমনিই বলতে কোন শব্দ নাই। হয় পরিচয় দেন আর না হয় টুট টুট।
-টুট টুট কি?
-আরে ভাই এত কথা কইয়া লাভ নাই। আপনার পরিচয় দেন?
-আমি জান্নাত।এখন চিনছেন?
-হুম্ম, চিনছি। তা এইটা বলতে এত ভণিতা করতে হয়!
-ভণিতা কই করলাম?
-কি জানি!!
-ওহ, কি করতাছো?
-কিছু না। গণিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
-হুম্ম, নিবেই ভালো ছাত্র।
-ভালো কথা বলছো। যাই পড়তে বসি।
-হুম্ম,,ভালো করে পড়ো।
মান্না তার ম্যাসেজ সিন না করেই ফেসবুক থেকে চলে গেলো।
.
মান্নার সাথে জান্নাতের আর চ্যাটিং হয় নাই। কারণ মান্না ফেসবুকে আইসা একটা স্ট্যাটাস দিয়েই উধাও হয়ে যাইতো। জান্নাত অবশ্য একবার ম্যাসেজ দিছিলো কিন্তু তার রিপ্লাই আসছে তিনদিন পরে। এভাবেই তাদের মধ্যে চ্যাটিং শুরু হয়। একদিন, দুইদিন পরে পরে মান্না রিপ্লাই দিতো। দেখতে দেখতে তাদের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। ভার্সিটি এডমিশন নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সবাই কোচিং শুরু করে দেয় আবার ব্যস্ততা ভর করে। অন্যকিছু নিয়ে চিন্তা করার সময়ও তখন তাদের মধ্যে ছিলো না। তবে ফেসবুক এমন এক মায়াজালে সবাইকে আবদ্ধ করেছিলো যে দিনে একবার হলেও তারা ফেসবুকে এসে ঢু মারতো। মান্নার যখন যা ইচ্ছা হইতো তখন তা নিয়েই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিতো। এই স্ট্যাটাসের আবার নিয়মিত পাঠক ছিলো জান্নাত। মান্নার স্ট্যাটাসগুলো তার গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় জান্নাতের কাছে। ফেসবুকে এসে প্রথমেই মান্নার স্ট্যাটাস পড়া একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় জান্নাতের। যদিও এই কথা মান্নাকে বলে নাই কোন সময়। ধীরেধীরে তার এই অভ্যাস তার মস্তিষ্কের নিউরন দ্বারা পর্যালোচিত হয়ে হৃৎপিন্ডে জায়গা করে নেয়। এই কথা কিভাবে সে মান্নাকে বলবে এইটা নিয়ে সে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে। ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট শুরু হয়ে পড়ে দেখতে দেখতে।
.
হঠাৎ একদিন জল্পনাকল্পনা র অবসান ঘটিয়ে জান্নাত, মান্নাকে ম্যাসেজ দেয়।
- হাই। খবর কি তোমার?
-খবর টিভির পর্দায়। তোমার?
-এইতো। পরীক্ষার খবর কি? কোথায় কোথায় দিবা?
-এখনো জানি না। কারণ কিছুই তো পড়ি নাই। শুধু শুধু পরীক্ষা দিয়ে লাভ কি!! তুমি?
-দেখি কয় জায়গায় দিতে পারি। তাইলে কি করবা??
-কি করবো এখনো জানি না। প্রস্তুতি তো মনে হয় সেই লেভেলের নিচো।
-কি যে বলো!! টুকটাক কিছু পড়ছি আর কি?
-ভালো ছাত্রী হিসাবে এই টুকটাক পড়াই অনেক কিছু।
-আমি আবার ভালো ছাত্রী কবে হইলাম? যাইহোক, কি করতাছো এখন?
-আপাতত তো কিছুই করি না। তুমি?
-আমিও কিছু করি না।
-কিছু না করাটা কি সম্ভব?
-কেন?
-চ্যাটিং করতে হাত, মাথা,চোখ এই তিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাইলে কিছুই করো না কিভাবে??
-এইভাবে চিন্তা করলে তো করতেছিই। তাইলে কিন্তু তুমিও ভুল বলছো।
-হুম্ম,আমি তো সবসময়ই ভুল বলি।
-এত ভুল বলো কেন?
-তা তো জানি না।
-তুমি জানো কি?
-এইটা নিয়ে তুমি গবেষণা করো তাইলে নিশ্চিত নোবেল পাইবা।
-দরকার নাই। গবেষণা করা আমার কাজ না। আর,তুমি কে যে তোমাকে নিয়া গবেষণা করবো?
-তাও ঠিক।
-হুম্ম,একটা কথা বলবো?
-তাইলে এতক্ষণ এইগুলা কি করছো?
-এইগুলা কিছু না। যাও বলতাম না।
-না বল্লে নাই। আমি বিদায় নেই, ঘুমাবো।
-এখনই! মাত্র তো ১০.১৫ বাজে।
-তো কি হইছে!
মান্না, জান্নাতের ম্যাসেজের অপেক্ষা না করেই ফেসবুক থেকে চলে যায়। জান্নাত কিছুটা আশাহত হয় কারণ সে তার মনের কথাটা বলতে পারে নাই তাই।
.
দেশের মোটামুটি সব পাবলিক ভার্সিটির পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। জান্নাত একটা ভার্সিটিতে চান্স পায় কিন্তু মান্না চান্স পাইতে পারে নাই। চান্স পাওয়াতে জান্নাতের মনোবল অনেকাংশে বেড়ে যায়। সে মনে করে এইবার তার মনের কথাটা বল্লে নিশ্চয়ই মান্না তাকে ফিরিয়ে দিবে না। তাই সে তার মনের কথা বলার জন্য আবারো মান্নাকে নক দেয়।
-হাই, কেমন আছো?
-আছি! তুমি?
-ভালোই। কি করো?
-চিন্তা করতাছি। তুমি?
-কি চিন্তা করতাছো?
-বলা যাবে না।
-কেন?
-জানি না।
- জানতে হবে না। আচ্ছা, এগ্রিকালচার সাবজেক্ট সম্বন্ধে কিছু জানো?
-এইটা সম্বন্ধে জানার কি আছে!! পড়ালেখা কইরা পরে শিক্ষিত চাষী হয়। আর কি?
-শিক্ষিত চাষী!!! এভাবে বলো কেন?
-তাইলে কিভাবে বলতাম!!
-বলতে হবে না কিছু। আমি এই সাবজেক্টে চান্স পাইছি।
-ভালোই হইছে। তাইলে তুমি মাঝেমাঝে আইসা আমার ধানক্ষেত গুলো দেইখা যাইও। শতহোক,তুমিও তো একজন চাষীই।
-হইছে আমারে পাগলা কুত্তায় কামড়াইছে।
-তাইলে ফেসবুকে কি!! হাসপাতালে যাও।
-এতকথা বইলা লাভ নাই।
-আমি তো বলি নাই বলতে।
-হুম্ম,এখন যা বলবো তার উত্তর একটু চিন্তা কইরা দিবা।
-এত চিন্তা করা ভালো লাগে না।
-আচ্ছা, ধরো আমি যদি আজীবনের জন্য তোমার ক্ষেতের ধান নিয়ে কাজ করতে চাই তখন তুমি কি আমাকে এই কাজ দিবা?
-সম্ভব না। কারণ শিক্ষিত চাষীরা এক ক্ষেতে বেশিদিন কাজ করে না। তাছাড়া, আমার এখানে তুমি কাজ করতে আসবা কেন?
-আমার ইচ্ছা। তুমি দিবে কিনা তা বলো?
-তারআগে আমার কয়েকটা বিষয় ক্লিয়ার হওয়া দরকার। যেমন, আজীবন কি? আর,আমার ক্ষেত কেন?
-হুম্ম,বুঝছি। এত কথা বলো কেন!! তোমাকে আমার জীবনের অর্ধাঙ্গ করতে চাই।
-আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে? আমার সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। এইসব বলার কোন মানে আছে?
-কোন আবেগ নাই। এইটাই আমার সঠিক সিদ্ধান্ত।
-কিভাবে সঠিক? আমি একমত না। আমার দ্বারা এইসব সম্ভব না।
-কেন সম্ভব না।
-তুমি একটা পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্ট আর আমি কিছুই না।
-তো কি হইছে!!
-তুমি ভার্সিটিতে কতকিছু দেখবা। তোমার ফ্রেন্ড, সিনিয়র দের কাছ থাইকা কতকিছু শিখতে পারবা। তোমরা জ্ঞানের স্তর বৃদ্ধি পাবে। তখন আমার সাথে কথা বলতে আর ভালো লাগবে না।
-তোমাকে কে বলছে? আমাকে তোমার এইরকম মনে হয়!!
-দেখো, মানুষের একটা বৈশিষ্ট্য হলো তার চাহিদা কখনো শেষ হয় না। সে যখন সামান্য কিছু পায় তখন আরো বেশি চায়। তার থেকে যার কম তাকে সে সহ্য করতে পারে না। তাছাড়া, তোমার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে। তুমি উচ্চশিক্ষিতা হবে আর আমি?? তেল আর পানি কিন্তু মিলিত হয় না। তাই সম্ভব না।
-তারমানে, বলতাছো আমার পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাওয়াটা আমাদের মধ্যে অন্তরায়। তাইলে আমি পাবলিকে পড়বো না।
-এইটা তোমার ইচ্ছা কিন্তু আমার এইসব বিষয়ে কিঞ্চিৎ ও আগ্রহ নাই।
-তুমি এইরকম করতাছো কেন?
-যাইহোক, এইসব বলে লাভ নাই। আমার কাজ আছে, আমি যাই।
মান্না তাৎক্ষণিক জান্নাতকে ব্লক দিয়ে দিলো। সে এখন অনেক আনন্দিত কারণ একটা ঝামেলা শেষ হইছে।
.
কিছুক্ষণ পরে রাহাত তাকে কল দিলো এবং অনেক কিছু বল্লো। তবে কথার সারমর্ম একটাই সেইটা হলো, সে জান্নাতের সাথে এইরকম করলো? সে অনেক বুঝানোর চেস্টা করলো যে এইসব প্রেম ভালোবাসা তার জন্য উপযুক্ত না তবু কাজ হলো না। ব্লক দেওয়ার বিষয়টা নিয়ে তার সাথে রাহাত দ্বিমত পোষণ করলো। মান্না আর এইসব নিয়ে ভাবতে চায় না। জয় সাহেবও ম্যাসেজ দিলেন, সে জান্নাতকে ব্লক দিলো কেন? যাইহোক, এই বিষয়টা নিয়ে রাহাত এবং জয় তাকে অনেক বুঝানোর চেস্টা করলো কিন্তু তার কথা একটাই। আর সেইটা হইলো এইসব প্রেম ভালোবাসা করা যাবে না। কারণ যে মেয়ে এই কথা অন্যকে বলতে পারছে তার সাথে যাইহোক প্রেম ভালোবাসা হয় না।
মান্নার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে জান্নাত প্রায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছিলো। তার ফার্স্ট ইয়ারের রিজাল্ট খারাপ হলো। মান্নাকে নিয়েই তার সার্বক্ষণিক চিন্তাভাবনা ছিলো। কিন্তু মান্না তো তাকেই বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে। তখন সে মোটামুটি ভাবে শক্ত হলো এবং তার পড়ালেখা আবারো শুরু করলো। অন্যদিকে, মান্নার পড়ালেখা শেষ হলো এবং তার আব্বা-আম্মা তার বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজা শুরু করলো। কিছুদিন পরে একটা মেয়ের প্রস্তাব আসলো। সব কথাবার্তা ঠিকঠাক হয়ে গেলো। মান্নাকে বলা হলো মেয়েকে দেখে আসার জন্য কিন্তু তার কোন ইচ্ছা ছিলো না। সে বিয়ের ৯ দিন আগে জানতে পারে এই মেয়ে আর কেউ না সেই জান্নাত। তখন সে কি করবে বুঝতে পারতেছিলো না। কারণ সে জান্নাতকে বিয়ে করতে মোটেও আগ্রহী ছিলো না। তার দেশের বাইরে যাওয়ার কথা চলছিলো। এবং বিয়ের এক সপ্তাহ পরে তার দেশের বাইরে যাওয়ার কথা। এই সুযোগটাই সে গ্রহণ করলো। বিয়ের তিনদিন আগে তার প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো বাড়ি থেকে পলায়ন করলো। বাড়ি থেকে পলায়ন করে সে প্রথমে জয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে জান্নাতও নাছোড়বান্দা তাই খুঁজাখুঁজি শুরু হয়ে গেলো। জয়ের বাসা থেকে সে রাহাতের বাসায় গেলো। এই জায়গাও অনিরাপদ হয়ে গেলো তাই সে ছদ্মবেশ ধারণ করলো। বাকি কয়েকটা দিন সে বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকাগুলো ঘুরেই কাটিয়ে দিলো। এবং যথাসময়ে দেশের বাইরে চলে গেলো। অন্যদিকে তার কোন খোঁজখবর না পেয়ে সবাই যখন তার আশা ছেড়ে দিলো। তখন সে তার বাড়িতে ফোন দিলো এবং যখন জানতে পারলো জান্নাতের জন্য নতুন করে বর দেখা হইতেছে। তখন সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কোথায় কোথায় ছিলো এবং এখন কোথায় আছে সবই বল্লো। এই কথা জান্নাত কিভাবে জানি জানতে পারলো। সেও নাকি এখন দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করতাছে মান্নাকে খুঁজতে। তবে সে সবাইকে বলে দিলো মান্না যেন কোনভাবেই এই কথা জানতে না পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন