বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

তবুও ভালোবাসি♥

আজ প্রায় ৩মাস পর আন্টির বাসায় যাইতেছি, অনেক দিন যাব যাব বলে যাওয়ার সময় হয় না।
তাই আজ আর মানলাম না, নিজেই সময় করে নিলাম।
.
আন্টির বাসা ঢাকা মিরপুর ১ এ, সেখানে থাকবো ১৫ দিন।
আন্টি আমাকে অনেক ভালবাসে তার নিজের ছেলের মত, আন্টির নিজের কোনো ছেলে মেয়ে নাই সেই কারনেই হয়তো আমাকে এত ভালবাসে।
অনেক দিন ধরে ফোন করেই বলছে আমাকে সেখানে যাওয়ার কথা, আমার কলেজের কারনে যাওয়া হয় না, তাই পরিক্ষা শেষ করেই যাচ্ছি আন্টির বাসায়।
.
আমি সকাল ১০টায় নওগাঁ থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য হানিফ বাসের টিকিট করলাম, আমি বাসে উঠে সিট নিয়ে বসে পরলাম।
প্রায় ৫ঘন্টা পর আমি ঢাকা গাবতলিতে নামলাম, সেখান থেকে একটা লেগুনা করে ১০টাকা ভারা দিয়ে মিরপুর ১এ পৌছলাম।
.
বাসায় গিয়ে আন্টি আমাকে দেখেই বুকে জরিয়ে নিলো, আর আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলছে,
- ফ্রেশ হয়ে নাও আব্বু,
- হুম!
.
আন্টি আমাকে আব্বু বলেই ডাকে, আমার নাম ধরে ডাকে না, আমি আন্টিকে সে কথা বললে আন্টি বলে আমি নাকি তার আব্বুর মতই দেখতে, তার মানে আমি নাকি দেখতে আমার দাদার মত।
সেই জন্য আন্টি আমাকে আব্বু বলেই ডাকে...
.
আমি ফ্রেশ হয়ে সাদের উপর গেলাম, আন্টিদের বাসায় আরও অনেক লোক ভারা থাকে।
আমি সাদে গিয়ে একটা সিগারেট জালাবো ভাবছি, কিন্তু আন্টির জন্য অনেক ভয় করছে।
যদি আন্টি জানতে পায় যে আমি সিগারেট খেয়েছি, তাহলে আমাকে আর আস্থ রাখবে না।
কিছুক্ষণ সাদে থাকার পর নেমে আসলাম, প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে, শহরে আবার দিন রাত কিছু বোঝা যায় না।
গ্রামে সন্ধ্যা হলে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ কান ঝালাপালা করে দেয়।
আর হায়রে ঢাকা শহরের সন্ধ্যা, ঢাকা শহরের সন্ধ্যা নামে লাল নীল আলো, গাড়ীর পে পু, লোকজনের হই হই শব্দে।
.
আমি রাতে সব বন্ধুদের সাথে ফেসবুকে চ্যাট করতে প্রায় রাত ২টা বেজে গেছে,
ঘড়ি দেখে ঘুমিয়ে পরলাম...
.
.
পরের দিন সকালে আমার ঘুম ভাংলো ১০টায়, আন্টি আমার জন্য কপি নিয়ে আসছে, আমি ফ্রেশ হয়ে কপি খেয়ে বাহিরে যেতেই আন্টি বলছে,
- নাস্তা খেয়ে যাও আব্বু,
- আন্টি আরও কিছু পরে খাবো!
- না আব্বু অনেক বেলা হয়েছে, বেশীক্ষন না খেয়ে থাকলে শরির খারাপ করবে,
- হুম ঠিক আছে, তাহলে আমাকে তোমার নিজ হাতে তুলে খাওয়াতে হবে!
- ঠিক আছে আব্বু,
.
আমি আন্টির হাতে নাস্তা খেয়ে বাহিরে গেলাম।
বাহিরে গিয়ে সনি হলের দিকে গেলাম, কিছুক্ষন থাকার পর আমি বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় আসার পথে দেখছি একটা মেয়ে আন্টিদের বাসার নিচ তলা থেকে বাহিরে আসছে,
মেয়েটির হাতে বই ছিল।
আন্টিদের বাসার নিচ তলায় ১টা কোচিং সেন্টার আছে আর সেখান থেকেই মেয়েটি বের হয়ে গেল।
মেয়েটি দেখতে অনেক সুন্দর ছিল, মাথায় ওরনা দেয়া, তার সব কিছুই যেন পরি পাটি করা।
মেয়েটিকে প্রথম দেখেই আমার অনেক ভাল লেগেছে।
আমার এখন শুধু দুটি চোখে মেয়েটির ছবিই ভাসছে।
কি করব বুঝে পাচ্ছি না...
.
আমি আবার ২য় দিন মেয়েটিকে দেখার জন্যই বাসার সামনে দারিয়ে,
হঠাৎ দেখছি মেয়েটি বাহিরে আসছে, আমি একটু অন্য দিকে নজর দিলাম এবং মেয়েটির পিছু নিলাম।
দেখতে দেখতে তার পিছু নিলাম সামনে কিছু লোক দেখে আমি পিছন থেকে কেটে পরলাম।
মিরপুর ২নাম্বার এর দিকে যাচ্ছে মেয়েটি, আমি সনি সিনেমার সামনে দারিয়ে তার দিকে চেয়েই রইছি।
.
৩য় দিন আবার আমি মেয়েটির পিছু নিলাম কিন্তু এইবার মেয়েটি আমাকে তার পিছন পিছন যাওয়ার জন্য, মেয়েটি একটু ভয়ে ভয়ে অনেক জোরে জোরে ধাপ দিতেছে।
আমি ভাবলাম না আর পিছন পিছন যাবো না হয়তো মেয়েটি আমাকে বখাটে ভাবতে পারে,
তাই আর পিছন পিছন গেলাম না।
ফিরে এলাম বাসায়, বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে একটু ঘুম দিলাম।
ঘুম থেকে ওঠে আর কোথাও যাইনি,
আমি আর আমার ল্যাপটপ ২জন মিলে চলে গেলাম সাদে।
আসলে আমার একা থাকার একমাত্র বন্ধু আমার ল্যাপটপ।
যখন আমি একা থাকি আমার ল্যাপটপ এর সাথেই সময় কাটায়।
.
পরের দিন...
আমি মেয়েটির সামনে গিয়ে বললাম,
- হায়,
- (মেয়েটি ভয়ে ভয়ে) হ্যালো! কি চান আপনে?
- না মানে আপনার নামটা জানতে পারি?
- নাহ, আমি কয়েক দিন ধরেই দেখছি আপনে আমার পিছু নিয়েছেন কিন্তু কেন?
- আমি আপনাকে ভালোবাসি!
- আপনে কি বলছেন আপনে জানেন তো?
- হ্যা আমি জেনে বুঝেই বলেছি, আমি আপনাকে ভালোবাসি!!
- মেয়েটি চুপপ!
- কি হল কিছু বলছেন না যে?
আমাকে আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন, আমি আপনার পথ আগলে আর কোনো দিন সামনে আসবো না!
.
মেয়েটি কিছু না বলেই চলে গেল, আমিও চলে আসলাম বাসায়।
বাসায় এসে আমার মাথা কিছু কাজ করছে না।
কাল আবার যাবো তার সামনে, আবার বলবো আমার ভালোবাসার কথা।
আন্টি আমাকে একগ্লাস জুস দিয়ে বলল,
- খেয়ে নাও আব্বু,
- হুম!
আমি জুস খেয়ে রাতে ঘুমে গেলাম, আন্টি খাওয়ার জন্য ডাকছিল, আমি বললাম খিদে নেই আন্টি।
.
পরের দিন আমি আবার মেয়েটির সামনে গিয়ে বললাম,
- দারাও,
- হ্যা বলেন?
- আমি কিছু বলছিলাম আপনাকে!
- হ্যা সেঠা জানি, কিন্তু তার উত্তর আমার কাছে নেই।
- কেন?
- আমি জানি না,
- আমি আপনাকে ভালোবাসি!
- হ্যা আমি জানি, কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসতে পারব না।
- কেন?
- জানিনা!!
- আসলে আমাকে যদি আপনার ভালো না লাগে তাহলে বলতে পারেন!
-মেয়েটি চুপপ!!!
- কি হল কিছু তো একটা বলেন?
- আসলে আমি অনেক গরীব ঘরের একটা মেয়ে, আমি জনতা হাউজিং বস্তিতে থাকি, আমার বাবা একজন রিক্সা চালক, আর মা প্যানটেক্স অফিসের বাবুর্চি।
আর আমার বাবার অনেক স্বপ্ন আমাকে লেখা পড়া করানো, সেই জন্য হয় তো আমি আজ লেখা পড়া করছি।
আর সেই জন্য আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি।
- "তবুও ভালোবাসি" আমি তোমাকে।
তুমি যে কোচিং সেন্টার এ কোচিং কর সেঠা আমার আন্টির বাসা।
আর আমিই আন্টির জীবন আন্টি আমার জন্য সব করতে পারবে।
আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি।
- (মেয়েটি কাঁদছে)
.
আমি মেয়েটিকে বুকে জরিয়ে নিলাম,
- কেদো না প্লিজ!
- আপনার মত হয় তো কেউ আমাকে আর কোনো দিন ভালোবাসবে না, (কেঁদে কেঁদে)
আমিও আপনাকে ভালবাসি কিন্তু বলার সাহস পাইনি।
- হুম আপনে নয় তুমি বলো?
- হুম তোমাকেও আমি অনেক ভালোবাসি।
- এই বার তোমার নাম টা বলবে?
- হুম রেশমা!
- আমি রাজ!!
- হুম...
আমি রেশমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম,
- তুমি এখন যাও কাল আন্টির কাছে তোমাকে নিয়ে যাবো,
- হুম! ভাল থেকো বাই,
- বাই!!
.
রেশমাকে পেয়ে যেন আমি আমার পৃথিবী পেলাম...
আমি পরের দিন রেশমাকে আন্টির কাছে নিয়ে গেলাম, আন্টি রেশমাকে দেখে অনেক খুশি।
.
আন্টি রেশমার পরিবারকে ডেকে বিয়ের জন্য দিন করলো, সামনে মাসের ২০ তারিখে আমাদের বিয়ে।
আপনাদের সবার অগ্রিম দাওয়াত আমাদের বিয়েতে আসবেন কিন্তু...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন