বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

ভাগ্যবিড়ম্বিত প্রেমিক

বাবা-মা খুব ধরেছে বিয়ের জন্য।এবার আর বিয়ে না করে উপায় নেই।বিয়ের আয়োজন কতোটুকু এগিয়েছে জানি না।তবে ভিতরে ভিতরে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।আহা!আমার কতো স্বপ্ন ছিল প্রেম করে বিয়ে করবো।পহেলা বৈশাখের আগের রাতে প্রেমিকা খুব বায়না ধরবে পরদিন ওকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য।আমিও লক্ষী ছেলের মতো রাজি হয়ে যাবো।পরদিন ও খুব সেজে-গুজে আসবে।এটা-ওটা কেনার জন্য ফরমায়েশ করবে।ওর ফরমায়েশের লিষ্ট শুনে আমার মানিব্যাগের চাপাকাঁন্না ঢাকা পড়বে ওর অলক্ষ্যে কয়েকটা ঢোক গেলার আড়ালে।তারপর দু'জন রিক্সা চেপে ঘুরতে বেরোবো।ওকে বলবো,"জান্নু একটা গান করতো!"সেও একটা মেডিপ্লাস হাসি দিয়ে গাইতে শুরু করবে,"এই পথ যদি শেষ না হয় তবে কেমন হবে বলোতো?"তখন ওকে থামিয়ে আমি ছন্দ মেলাবো,"এতো রিক্সা ভাড়ার টাকা কি তোমার বাপ দিবে সেটা একবার ভাবোতো?"আমার কথা শুনে ও তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে ভাব দেখিয়ে রিক্সা থেকে নেমে যাবে।আমি মুখে স্যরি বললেও মনে মনে বলবো গেলেই বাঁচি।তারপর ও চলে গেলে আমার মানিব্যাগের সুসাস্থ্যের দীর্ঘায়ু কামনা করে বত্রিশ দাঁত বিকশিত করে বিপরীত দিকে হাঁটা ধরবো।নাহ্!যে করেই হোক বিয়েটা ঠেকাতেই হবে।বিয়ে করতে হলে প্রেম করেই করবো।সেদিন আম্মুকে একাই পেলাম।সুযোগটা আর হাতছাড়া করলাম না।আম্মুর পা জড়িয়ে ধরে সেকি কাঁন্না!"আম্মু আমি এখন বিয়ে করবো না।এখনো কি বিয়ের বয়স হয়েছে আমার?এভাবে আমাকে বাল্যবিবাহ দিবেন না প্লিজ!"
.
"আর এ কি হয়েছে তোর?এরকম কাঁদছিস কেনো?সব ঠিক হয়ে যাবে।"কথাটা শুনে কিছুটা শান্ত্বনা পেলাম।কিন্তু এ্যাঁ!কণ্ঠটাতো আম্মুর না।কোনো ছেলের!সম্ভিৎ ফিরে বুঝলাম,আসলে আমি এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম।বিয়ে-টিয়ে সব ফাঁকি।আর কণ্ঠটা আমার পাশের সিটের বড় ভাইয়ের।উহু!তারমানে আমার বিয়ে হচ্ছেনা।রিনকাজিকা,রিনকাজিকা!খুশিতে ডিগবাজী খাচ্ছি।দ্বিতীয়বারের মতো সম্ভিৎ ফিরে পেয়ে দেখি বড় ভাইটা আমার দিকে চোখগুলো হাঁসের ডিমের সাইজ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উফ! সকাল সকাল এতো বস্তা লজ্জা দিয়ে নাস্তা করতে হবে কে জানতো!হঠাৎ মনে পড়লো আজতো নতুন টিউশনিতে যাওয়ার কথা।স্টুডেন্ট ছাত্রী!কতো নাটক-মুভিতে দেখিছি টিউশনির ছাত্রীর সাথে টীচার এর প্রেম হতে।এবার যদি আমার কপালটা খোলে।পারফিউম,স্নো-পাউডারের কাছে নিজেকে নিশ্চিন্তে সঁপে দিয়ে রেডী হলাম।
.
কিন্তু হঠাৎ করেই রাস্তায় দেখা হয়ে গেলো আমার হাইস্কুলের বন্ধু অনয়ের সাথে।আমার লাইফের প্রথম প্রেমের ফুলটাকে ও ই নির্মমভাবে ঝরিয়ে দিয়েছিলো।সেকথা মনে পড়লে এখোনো হার্ট টা হুহু করে কেঁদে ওঠে।একদিন আমি ফেসবুকে সুন্দরী ললনাদের পিকচারে লাইক দিয়ে গণহারে আমার সেই ঐতিহাসিক "নাইস" কমেন্টস টা করছিলাম।এমন সময় একটা মেয়ে আমাকে ইনবক্স এ "Hi" লিখে নক করলো।খুশিতে আমার চোখ দিয়ে কয়েক মিলিলিটার অশ্রু বিসর্জিত হলো।আমি এক ন্যানোসেকেন্ড দেরি না করে রিপ্লে দিলাম।এরপর কিভাবে যে আমাদের খুশুর-খুশুর,পুশুর-পুশুর আলাপ বাকুম-বাকুম প্রেমে রুপ নিলো টের ই পেলাম না।এরপর একদিন চাইলাম বালিকার সাথে দেখা করতে।বালিকাও রাজী হলো।তিনঘন্টা যাবত সালমান,শাহরুখের স্টাইল এর উপর দীর্ঘ গবেষণা করে নিজকে প্রস্তুত করে কয়েকটা লাল গোলাপ হাতে কুমিল্লা ইকোপার্কে গিয়ে হাজির হলাম।গিয়ে দেখি আমার সেই না দেখা প্রেমিকাটি অনয় ছাড়া আর কেউ নয়।এভাবেই একটি ফেক আইডির দৌরাত্নায় পৃথিবীর বুক থেকে অনেক ব্যাথা নিয়ে অকালে হারিয়ে গেলো একটি সত্যিকারের ভালোবাসা।
.
অনয়কে সাইড কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে ও আমার আপাদমস্তক কয়েকবার গোয়েন্দা টাইপের দৃষ্টি দিয়ে নিরীক্ষণ করে বললো,"দোস্ত বিশ্বাস কর আমি আর কোনো ফেক আইডি থেকে তোর সাথে এ্যাড নেই।"ওর মুখে তাচ্ছ্যিলের হাসি লেপ্টে থাকতে দেখে পিত্তিটা জ্বলে উঠলো।ইচ্ছে হচ্ছিলো ওর কানের এক ইঞ্চি নিচ দিয়ে কয়টা মারি।কিন্তু শুভকাজের আগে ঝামেলা করা ভালো না।তাই ওর থেকে কোনো রকমে বিদায় নিয়ে সামনে পা বাড়ালাম।ছাত্রীর বাসার নিচে এসে কল দিলাম।প্রায় সাথে সাথে রিসিভ ও হলো ওপাশ থেকে,
~হ্যালো,তোমাদের গেইটের চাবিটা নিয়ে আসো।আমি বাসার নিচে আছি।
~একটু অপেক্ষা করুন স্যার আমি আসছি।
গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে ছাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছি।একসময় অপেক্ষার অবসান ঘটলো।ছাত্রী দেখতে খারাপ না ভালোই।ওকে প্রথম দেখাতেই মনে হলো,আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।তবে ছাত্রীর আদব-লেহাজ একটু কম এই যা।প্রথম দেখা,অথচ একটা সালাম ও দিলো না।বাট এসব ফ্যাক্ট না।আস্তে আস্তে শিখিয়ে নিবো।
~আপনার আসতে কোনো সমস্যা হয়নিতো স্যার?
~নাহ্!তেমন একটা হয়নি।আর আমাকে স্যার বলবে না।ভাইয়া বলবা।স্যার বললে নিজকে কেমন বুড়ো বুড়ো লাগে।
~ছাত্রী নিশ্চুপ!
~তো তোমার আম্মু আছেন বাসায়?আর হুম শুনো,তোমার ভয়েসটা কিন্তু দারুণ শোনায় মোবাইল এ।যেনো কেজি কেজি সুন্দরবনের খাঁটি মধু মেশানো তোমার কণ্ঠে।
~ছাত্রী এবার পুরোপুরি নীরব।
এরপর আমিও নীরব থেকে তিনতলা পর্যন্ত পৌঁছলাম।ভদ্রছেলের মতো সোফায় বসে আছি।কে জানতো একটুপর দেড়শ গ্রাম চক্ষুলজ্জার সাথে তিন চামচ কষ্ট মিশিয়ে এক গ্লাস ব্যর্থতার শরবত খেতে হবে!যাকে এতোক্ষণ ছাত্রী ভেবে এতো বকবক করেছি এখন দেখছি সে আমার ছাত্রী নয়।বরং ছাত্রীর আম্মু।একটু আগেও যাকে নিয়ে কল্পনায় ভালোবাসার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম,এখন তাকেই আন্টি ডাকতে হবে।ভাবতেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে।পাশের রুমে কে যেনো সাউন্ড বক্সে গান বাজাজচ্ছে,"কতো আশা ছিলো,ভালোবাসা ছিলো। /আজ আশা নেই,ভালোবাসা নেই।"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন