বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

আমার অহন

ভালবাসা কি কোন বাঁধা মানে?মানে কি কোন নিষেধাজ্ঞা?আপনা
র উত্তরটা হয়তো আমারই মত "না"।হুম আর তাই আজ হরতাল সত্বেও অহনার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।কাল মেয়েটার জন্মদিন, জানি মেয়েটা প্রতি মুহুর্তে চাই আমি ওর পাশে থাকি কিন্তু তা অনেকদিন ধরেই আর সম্ভব হয়নি।
.
আমি হাসান।ঢাকায় একটা জব করছি।বাবা,,মা,,আর বড় বোন রোকসানাকে নিয়েই আমার পরিবার।সুখের কমতি ছিলনা আমাদের কোন কালেই।অহনার সাথে পরিচয়টা প্রায় সাতমাস আগে থেকে।পরিচয়টা হয়েছিল অবশ্য অন্যরকম ভাবেই।
.
.
.
:এই যে ললিপপ ওয়ালা শুনছেন?(অহনা)
.
:(আশে পাশে তাকিয়ে ব্যাপার কি ঘটল বুঝার চেষ্টা করছি।ও হ্যা আমার হাতে প্রায় শ খানেক ললিপপ বড় বোন রোকসানার আবদার রক্ষার্থে।)
.
:এই যে ললিপপ ওয়ালা আপনাকেই বলছি।
.
:হাউ ফানি!কারো হাতে ললিপপ থাকলেই সে ললিপপ ওয়ালা!!(নীচের দিকে তাকিয়ে খুব জোরেই বললাম কথাগুলো তারপর উপরে তাকিয়ে দেখি চার তলা বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় এক সাদা পরী বারান্দা দিয়ে হাত বাড়িয়ে কথা বলেছে।চাঁদের আলোয় যেন ঠিকরে পড়ছিল মেয়েটির রূপ।কিছুক্ষনের জন্য নিজেকে অচল মনে হতে লাগল)
.
:আসলে জানেন তো আমার ললিপপ খেতে খুব মন চাচ্ছিল কিন্তু এখন তো দোকানে যেতে দিবেনা,,আর আমি এলাকা তেমন চিনিওনা।আপনার কাছে তো অনেক গুলো তাই আপনার থেকে কটা কিনতে বা ধার নিতে পারি?প্লিজ না করবেন না।
.
:আচ্ছা আসুন আর নিয়ে যান।
মেয়েটির চেহারাই খুশির আভাটা কিছুটা বুঝতে পারলাম চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে।
.
:এসেছি।কটা দিবেন আর দাম কত নিবেন বলেন।
.
:হা হা হা আমি কোন ললিপপ বিক্রেতা না যে আপনার সাথে ললিপপ কেনাবেচা করব।কটা নিবেন বলুন দিয়ে দিচ্ছি।
.
:ফ্রি নিবনা।
.
:আচ্ছা ললিপপ প্রতি ১০০ টাকা দেন তাহলে।
.
:বেশি হয়ে যাচ্ছেনা?
.
:তাই তো বলছি ফ্রি নিয়ে নিন।
.
:আচ্ছা দিন যে কটা দিবেন।
.
:নিন দশটা।
.
মেয়েটার হাতে দশটা ললিপপ ধরিয়ে দিয়ে বাসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।আপু আবার ওর আব্দারের থেকে কম পাওয়াই রাগ না করে বসে।যাক গে আপু আমাকে যত্ত ভালবাসে ম্যানেজ দেয়া যাবে।সাদা পরীর রূপটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে হাটছি আর কিছুক্ষন পূর্বে ঘটে যাওয়া কাহিনী নিয়ে নিজে নিজে হাসছি।
.
.
ইদানিং আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই মেয়েটাকে দেখছি।মেয়েটাও যেন বুঝে গেছে আমি কোন সময় এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসা করি।মেয়ের কেসে খুব বেশি চিন্তিত আমি কোনকালেই ছিলাম না কিন্তু মনটার দেখছি পাখা গজিয়েছে।উড়াল দিয়ে ওর কাছে যেতে চাই আর আমি সেটাকে ধরে এনে লোহার পিঞ্জিরায় বন্দী করে রাখি।কিন্তু এভাবে আর কদিন!
.
:হাই(অহনা)
.
:হ্যালো।(রাস্তা দিয়ে আসছিলাম হঠাৎই ওর হাই শুনে দাড়ালাম।
.
:একটু দাড়ান তো আসছি।
.
:আচ্ছা।(আজ আবার আসছে কেন কে জানে)
.
:আচ্ছা আপনার ফোন নম্বরটা পেতে পারি যদি কোন প্রব্লেম না থাকে।
.
:(পুরাই তাজ্জব আমি মেয়ে বলে কি রে)আচ্ছা নম্বর দিয়ে কি করবেন বলুন তো..?
.
:আহা চেয়েছি কিছু,,প্রশ্ন করতে বলিনি।
.
:০১৭৩২৯৯৯০২২।(কিছুক্ষন কি ভেবে যেন নম্বরটা দিয়ে দিলাম)
.
:আচ্ছা বাই বাই।
.
এই বলে অহনা আবার বাসার পথ ধরল।মেয়েটার আজকের কাহিনীটার কোন কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।অত ভেবে কাজ নেই।ধরলাম আমিও বাসার পথ।
.
.
বেশ কদিন ধরে একটা নম্বর থেকে মেসেজে রাতের বেলা ঘুমুতে যাওয়ার সময় 'শুভ রাত্রি' আবার পাখি ডাকা ভোরে ফজরের সময় মেসেজ আসছে 'সুপ্রভাত'।আমার জীবনে এমন দুষ্টুমি করার মানুষ কোন কালে না থাকাই আঁচ করতে পারছিলাম কাজটা কার।তবু চুপচাপ দেখে যাচ্ছিলাম।হাতেনাতে ধরার অপেক্ষায় ছিলাম অপেক্ষমান।
.
.
:'এই যে ললিপপ ওয়ালা বুঝলেন না তো কেন প্রতি রাতে প্রতি সকালে আপনাকে স্মরণ করি।আর আপনাকে বিরক্ত করব না।আজ বাসায় ফিরে যাচ্ছি।দাদু বাড়িতে অনেকদিন থাকলাম।কখনো তো আমার সম্পর্কে কিছু জানার কৌতুহল ই ছিল না আপনার।আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।বাসা দিনাজপুরে।এমন একজনকে প্রতি রাতে স্বপ্ন পেতে চাই যে আমায় ললিপপ দেবে আর সাথে অনেক ভালবাসা।এমন একজনকেই পাশে চাই আজীবন।আবার কবে আপনাকে দেখতে পাব জানিনা।আপনি না খুব নিষ্ঠুর অথবা ফাজিল।আড়ি আপনার সাথে।হুহ'
.
কতবড় মেসেজ দিয়েছে মেয়ে বাব্বাহ।আজকালকার কাউকে বিশ্বাস করা সত্যি দারুণ কষ্টের।'তুমি দূরে দূরে' নামক ভিডিও গানে দেখেছিলাম নায়িকা বাজি ধরে নায়কের ভালবাসা আদায় করে।নায়িকার বাজি ধরা ভালবাসার কাছে নায়কের খাদহীন ভালবাসা হারবে এটা কখনই নায়ক মানতে পারবে না বিধায় পগারপাড়।(বাস্তব
েও এমন অনেক হয়)।কে জানে মেয়েটাও ফাইজলামি করছে কি না।
.
.
মেয়েটা দুদিন ধরে আর মেসেজ দিচ্ছেনা।ও কি বুঝতে পারছেনা আমিও একটু একটু করে ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছি।অবশ্য ওর দোষটাই বা কি।দুদিন আগে কি ভাবলাম আর এখন কি ভাবছি।সবাইকে এক পাল্লায় মাপা ঠিক ও না।হতে পারে সত্যিই ভালবাসে।
.
.
:জানিনা কখন তোমার প্রতি দূর্বল হয়ে তোমায় ভালবেসে ফেলেছি।ভালবাসি।(আমি)
.
আচমকা আমি অহনার সামনে এসে এটা বলাই ও যেন স্টাচু অব লিবার্টি হয়ে গেল।আমার এখানে আসাটা সত্যি বেমানান।কি করব ওকে ছাড়া আর কিছুতেই মন বসাতে পারছিলাম না।তাই ছুটি শেষে ঢাকাতে ফিরে এসে কাজে মন দিতে না পারাই অহনার চাচাত ভাইয়ের থেকে ওদের ঠিকানা নিয়ে সোজা হাজির।ওর বাসায় যাইনি।ও যখন কলেজে যাচ্ছিল তখনই পথ রোধ করে আমার উপরোক্ত কথা গুলো বলা।আশ্চর্য হলেও আমার হাতে গোলাপের বদলে আছে দশটা ললিপপ।প্রথম দিনের মত ওর দিকে এগিয়ে ধরা।তবে ললিপপ দেয়ার কারণটা বিশাল পরিবর্তিত।
.
:হু ললিপপ ওয়ালাকে ভালবাসা যায়।আর কিছু না পেলেও ললিপপ তো পাব।(চোখের অশ্রুগুলো লুকিয়ে হাসার ব্যর্থ চেষ্টারত অবস্থায় বলল অহনা)
.
সেদিন অহনার সাথে সারাদিন ঘুরে মজা করে আবার রাতের বাসে ঢাকা ফিরলাম।শুরু হল আমার আর আমার প্রাণ পাখি অহনের (আদর করে অহন ডাকি) প্রেম গল্প।আম্মুর সাথে খুব ফ্রি হওয়াই আম্মুকে তার হবু বউমার কথা বলে দিয়েছিলাম।আম্মুর থেকে এটাও জেনেছিলাম ওদের পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্ক নাকি খুব ভালো।বিয়ে নিয়ে নো প্রব্লেম।
.
.
.
আর খুব বেশি দূরে না দিনাজপুর।ইশ কতদিন পর অহনকে দেখব কাছ থেকে।দারুণ আনন্দ অনুভূত হচ্ছে।হঠাৎই বাসের সামনে পেট্রল বোমা পড়ল আর তা থেকে গাড়ির যাত্রীদের বাঁচাতে ড্রাইভার হার্ড লেফট নিল।বাসটা পাশের খাদে উলটে গেল।আর কিছুই মনে নেই।
.
.
দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার পর আজ বাসায় ফিরলাম।আচ্ছা এরা কারা আমার আম্মুর পাশে?আম্মু বলছে এটা আমার আব্বু,,ওটা আমার এত এত ভালবাসার রোক্স আপু।আচ্ছা জানালার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখছি।চোখের নীচে কালি পড়ে আছে মেয়েটার।গালের উপর প্রবাহিত অশ্রু ধারা জানান দিচ্ছে মেয়েটা এখন ও কাঁদছে।আচ্ছা এই মেয়েটা কে?হাসপাতালেও বেশ কয়েবার দেখেছি মেয়েটা দূর থেকে আমাকে দেখে।আমি আমার আম্মু ছাড়া কাউকেই চিনতে পারছিনা।
.
:আম্মু ওই মেয়েটা কে?(আমি)
.
:ওকে চিনতে পারছিস না?(আম্মু)
.
:না তো আম্মু।উনি কে?
.
:তোর খাওয়ার সময় হয়ে গেছে চল খেয়ে নিবি।(এই বলে আম্মু চলে গেল)
.
.
আমিও অতশত চিন্তা না করে খেতে গেলাম।রাত্রি বেলায় স্বপ্নে দেখলাম একজন বলছে 'ভালবাসি'।ধড়ফড়িয়ে উঠে গেলাম।স্বপ্নের মেয়েটা তো আমায় দূর থেকে দেখা মেয়েটা।বারবার মন বলছে ও আমার অর্ধাঙ্গিনী,,আমার স্বপ্নের ভালবাসার সাথী।কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে সবই ভুল।মনে হচ্ছে অনেকদিনের পরিচয় ওর সাথে আমার।
.
.
আজকে হঠাৎই মেয়েটা এসে বলল আমার সাথে একটু বাইরে ঘুরতে যাবেন প্লিজ?মেয়েটার করুণ চাহনীটা দেখে সত্যি মায়া লাগছিল আবার ভাবছিলাম আমি এক অপরিচিতার সাথে বাইরে ঘুরতে যাব কেন!কেমন দেখায়!যদিও বা শেষে আপুর জোরাজোরিতে যেতে রাজী হলাম।মেয়েটা নীল শাড়ী পরেছে।আচ্ছা আমার যে নীল রঙ খুব পছন্দ এটা জেনে ও নীল শাড়ি পরেছে নাকি এমনিই পরেছে?কি জানি!
.
.
:হাসান যদি তুমি এই মুহুর্তে আমায় চিনতে না পারো তাহলে আমি বিদায় নিতে চাই।প্রিয় মানুষটির সামনে অপরিচিতা হয়ে থাকা আর আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা।তুমি কি সত্যিই সব ভুলে গেছ না আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছ?
.
আমি যেন অতীত হাতড়িয়ে ফিরছি।
.
:অহন তুমি এটা কি করছ?(ও আমার পাশ থেকে সরতে সরতে রাস্তার অনেকটা ভিতরে চলে গেছে।)
.
.
আরে ওর নাম তো অহনা তাহলে অহন কেন বললাম!!হ্যা অহন!আমার ভালবাসা।অহন তখনও আমার থেকে বেশ খানিক দূরে।ও পুরনো ভালবাসার কাছে এখন পরিচিতা।সে খুশিতে ও কাঁদছে আর..................
দৌড়ে ওর কাছে যাচ্ছি তার মাঝেই হঠাৎ আমার সামনে দিয়ে একটা বাস হাই স্পিডে চলে গেল।সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছে।অহন!বাসটা পুরোপুরি আমার সামনে থেকে বেরিয়ে গেল বুঝতে পারলাম।আমি পিছু ফিরে দাঁড়িয়ে।অহনা আর নেই এটা দেখার ক্ষমতা আমার নেই।
.
.
হঠাৎই কারো জড়িয়ে ধরাই চমকে উঠলাম।তার মানে আমার অহনার কিছুই হয়নি!!কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে পুরনো ভালবাসাটাকে বুকের মাঝে আবার ফিরে পেয়ে।
.
.
আমি অহনার পড়াশুনো শেষ হওয়া পর্যন্ত বিয়েটা পেছাতে চাচ্ছি কিন্তু পরিবার তা মানতে নারাজ।
.
.
এগিয়ে যাচ্ছি ঘরের দিকে যে ঘর থেকে শুরু হবে আমাদের নতুন জীবন।দুয়া করবেন আর হু বিয়েতে দাওয়াত দেয়ার সুযোগ হয়নি। পরবর্তী গল্পে বিয়ে করলে দাওয়াত পেয়ে যাবেন।নো টেনশন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন