একচল্লিশ বছর বয়সে গিয়ে আইনুদ্দিন মিয়া একটা বেআইনী কাজ করে বসলেন। বড় বউয়ের জন্য একটা সতীন নিয়ে এসে বললেন, তোমার বান্ধবী আনলাম গো বউ। বড় বউ সকালেও বুঝতে পারেনি আজ রাতেই তার বিছানা আলাদা হয়ে যাবে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে নতুন পান্জাবী পায়জামা আর আতর লাগানোর ধুম দেখে তার কিছু আঁচ করার দরকার ছিলো, কিন্তু তার মাথায় অত বুদ্ধি কই? সুখেরই তো সংসার , এক মাত্র ছেলে, বয়স মোটে সাত। তাদের বিয়ের বয়স দশ, আর শরিফার (বড় বউ) মাত্র ত্রিশ বছর। কি এমন বয়স! যাকে বউ করে আনছে সে তেইশ বছরের মোটা সোটা পালোয়ান টাইপ, তবে সুন্দর আছে। একবার যদি শরীফাকে পাকরায় ধরে তবে নড়ার গতি থাকবেনা চিকনা শরীফার। এই ভেবে হাসি পায় শরীফার । ওনার মোটা বউ পছন্দ, এই জন্যই বিয়ে করল নাকি আইনুদ্দিন! কখনো কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি শরীফার, আজও নয়।
- বড় বউ(একদিনেই বউ থেকে বড় বউ).. আলমারী থেকে তোমার কাপড় আর শাহাদতের কাপড় নিয়ে পাশের রুমে রাখো। তোমার ছোট বইনরে জায়গা করে দেও।
মুখ কালো করে শরীফা সব কাপড় অন্য রুমের আলমারীতে নিয়ে যায়।
আইনুদ্দিন বলে উঠেন,
-ছোট বউয়ের মুখ দেখে কি দিলা বড় বউ?
শরীফা কথা শুনে লজ্জা পেয়ে তুতলাতে থাকে, কিছু না ভেবেই তার হাতের বিয়ের আংটিটা বউয়ের কড়ে আঙুলে পরিয়ে দেয়। ঐ রুম থেকে চলে যাবার সময়,ছোট বউ ওরফে জমিলা ধীরে ধীরে বলে,
- মনে কষ্ট নিয়েন না বুবু। ছোট বোন মনে কইরা মাফ দিয়েন।
-না না মনে কষ্ট কেন নিব, (হাসি মুখ করে বলে শরিফা) তা তোমার নাম কি?
- জমিলা।
শরিফা মনে মনে ভাবে মেয়ে খারাপ হবেনা তেমন। আর কপালে খারাপী থাকলে ভালও খারাপ হয়ে যাবে। সব তকদ্বিরের খেলা।
রাতে শাহাদাতের কান্দন কে দেখে... ! 'বাপজানের লগে থাকুম, বাপজানের লগে...'
চিল্লাতেই আছে। ছোট মারে কয়,
-এই মুটি তুই সর..,এইটা আমার বিছানা। আইনুদ্দিন আর না পেরে থাপ্পর দিয়ে ছেলেকে রুম থেকে বের করে দেন। এক থাপ্পরে ছেলে চুপ। বাপের এমন রূপ সে দেখে নাই, হিংস্র বাঘও মনে হয় এতটা রাগেনা..। কিসের জন্য এত রাগ, সে তো বাপের সাথে থাকতে চাইছে, খারাপ কি করল? প্রতিদিনই তো থাকে। মাথায় ঢুকেনা ছোট্ট শাহদাতের।
আর শরিফার মনে হল সংসারে ভাঙন ধরছে, সতীন আনায় অত কষ্ট লাগে নাই, যতটা তার ছেলের গালে থাপ্পরটা দেয়ায় লাগছে। কেমন লাল হয়ে পাঁচ আঙ্গুল বসে আছে....। শরিফার কলিজায় যেন জোরে টান পড়ছে ছেলের গালে চড়টা যখন মারছিল। ছেলেকে কোলে নিয়ে শরীফা শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। ছেলে আর কাঁদে না কিন্তু যতক্ষণ ঘুম আসেনা, ফুঁপাতে থাকে। মাঝরাতে ঘুমের ঘোরেও। শরীফা আশা করতে থাকে, আইনুদ্দিন বাসর সেরে একবার রাতে এসে ছেলেকে দেখে যাবে, শরীফা নিরাশ হয়। হায়, দশ বছরের বউ আর সাত বছরের ছেলে মুহূর্তেই কেমনে পর হয়ে গেল! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রায় নির্ঘুম রাত কাটে শরীফার।
পরদিন পুরনো বউয়ের মত নতুন বউ ঘরের কাজে নেমে পড়ে । শরীফা বাধা দিলে শুনেনা।
- বুবু , ঘরটা এখন একলা তোমার না। আমারেও করতে দাও।
-ঠিক আছে , কর। হার মানে সে।
শরীফা সামনের দরজা দিয়ে জগ হাতে পানি আনতে যায়, কল থেকে। ঐ রুমে আইনুদ্দিন কোরান তেলোয়াত করে নীচে পাটি পেতে বসে।
পানি নিয়ে আসলে জমিলা বলে ,
-বুবু .. এরপর থেকে পেছনের দরজা দিয়ে পানি আনতে যায়েন, পুরুষ মানুষ বসা থাকে। দেখতে খারাপ লাগে...।
শরীফা কি উত্তর দিবে বুঝতে না পেরে হু বলে তাড়াতাড়ি পাশের রুমে ঝর্ণাধারায় আসা চোখের পানি মুচতে যায়। ওর নিজের স্বামী একদিনে পুরুষ মানুষ হয়ে গেল! বুকটা ভেঙে যেতে চায় তার। দশবছরে আইনুদ্দিন তো কখনো মানা করে নাই! শরীফা বুঝতে পারে, জমিলা চায়না সে স্বামীর আশে পাশে যাক।
শাহদাতের পড়ার টেবিলটা সামনের রুমেই। ছোট ছেলে , পাঁচ ছয়টা বই , দুই তিনটা খাতা , তাও ভালোভাবে গুছিয়ে রাখতে চায়না। জমিলা এসে বকা দেয়,
-এত্ত বড় ছেলে বই গুছাওনা কেন?
-তোমার দরকার হলে তুমি গোছাও..
-বেয়াদপ, গোছাতে না পারলে, তোদের খাটের নীচে নিয়ে রাখ। এই ঘরে এসব চলবেনা।
শরীফা দৌড়ে এসে বই গুছিয়ে ছেলেকে ধমক দেয়। ও ঘরে শান্তি চায়।
জমিলার নাইওরের সময় হয়। কিন্তু সে বুবু আর শাহদাত ছাড়া কিছুতেই বাপের বাড়ি যেতে রাজি হয়না। আইনুদ্দিন তো মহা খুশি। ভাবে কত্ত ভালবাসা বড় বউয়ের জন্য। কিন্তু জমিলা বুঝতে পারে শরীফা যাতে তার অবর্তমানে আইনুদ্দিনের ঘনিষ্ট না হয় তাই এতো পিরীত। এক সপ্তাহর জন্য পাশের ঘরের চাচী এসে রাঁধা বাড়া করে দেয় তাদের অনুপস্থিতিতে।
এরপর সামান্য ছোট খাট ব্যাপার নিয়েই জমিলা ঝগড়া বাধাতে চায়। সারাক্ষণ মা ছেলের দোষ খোঁজে। এবার ব্যপার আইনুদ্দিনের চোখেও পড়ে । সে ডেকচি আলাদা করে দেয়। মা ছেলের জন্য মাসিক একটা খরচ দিয়ে আলাদা চুলায় রেঁধে খেতে বলে।
একদিন কাল বৈশাখী ঝড় উঠে, সারা রাত বৃষ্টির চাইতে বাতাসের তেজ বেশী, কারেন্ট চলে যায়। ল্যাম্প জ্বালিয়ে সবাই বসে আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে। বড় বড় গাছের ঢাল পালা ভাঙার মরমর শব্দ , গাছ পড়ার ধরাম ধরাম আওয়াজ অন্ধকার পরিবেশ টাকে আরো ভয়াবহ করে তোলে।কেমন ভয় লাগে শাহদাতের। মাকে জড়িয়ে ধরে থাকে সে।
সকালে দেখে তাদের পুরনো কড়াই গাছ উপড়ে পড়ছে গোড়া সহ। শাহদাত গাছের উপর উঠে খেলতে থাকে। আইনুদ্দিন ভেবে নেয় ফার্নিচার বানাবে। তাই শুনে ও খুব খুশি। দেখবে কেমনে গাছ থেকে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানাবে।
-বাপজান, কি বানাবে?
-একটা শোকেস আর একটা খাট।
-আমি কোনটা নিব?
-তোমার যেটা ইচ্ছা।
-তাইলে বাবজান খাট নিব, মায়ের খাট বেশী পুরান।
-আইচ্ছা তোর যেটা ভাল লাগে।
কিন্তু শাহদাত কিছু দেখতে পায়না, ওর মন খারাপ। বাপজান ফার্নিচারের দোকানে ঠেলা করে গাছ পাঠায় দিছেন। তবে সে খাটের অপেক্ষা করে। নির্দিষ্ট দিন কি সুন্দর খাট আর বড় শোকেস আসে। দুইটাই ছোট মার ঘরে ঢুকে। শাহদাত চিল্লায় উঠে,
-বাপ বলছে খাট আমার মায়ের জন্য...।
-চুপ থাক, আমি বলে বানিয়েছি, আর সে বলে তার মায়ের জন্য..
তখনই তাদের ঘরে আসে জমিলার বড় ভাই বোনকে দেখতে। ঘটাঘটি শুনে কি হয়েছে জানতে চান তিনি। শাহদাত বিচার দেয়।
-দেখ মামা, বাপজান বলছে খাট আমার জন্য আর শোকেস ছোট মায়ের।
-তো সমস্যা কি?
-ছোটমা দুইটাই রেখে দিছে।
-কেন? কিরে জমিলা খাট শাহদাতরে দিয়ে দে।
-না ..উত্তর দেয় জমিলা। আমার কথায় সে বানায়ছে কেন দিব?
-দিবিনা?
-না।
বড় মামাটা রাগ করে চলে যাবার সময় শাহদাতকে বলে যায়..
-বিচার করতে পারলাম নারে ভাগনে। মাফ করে দিস। তোর বাপকে বলে নিতে পারিস কিনা দেখিস।
সে খাট কিংবা শোকেস কোনটা শাহদাত বা শরীফা পায়নি।
মাস শেষে ইলেক্ট্রিক বিল আসে দুই'শ টাকা। জমিলা শরীফার কাছে গিয়ে সত্তর টাকা বিল চায়।
-কিসের বিল?
-বারে, তোমরা মা ছেলে ফ্যান চালাও, বাতি জ্বালাও, বিল দিবানা? টাকা তো তোমাদের আলাদা দেয়। দেয়না?
শরীফা নিজের ঘরে এখন ভাড়াটিয়া। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে সত্তর টাকা বের করে দেয়।
.
-বহ্নি শিখা ।।
- বড় বউ(একদিনেই বউ থেকে বড় বউ).. আলমারী থেকে তোমার কাপড় আর শাহাদতের কাপড় নিয়ে পাশের রুমে রাখো। তোমার ছোট বইনরে জায়গা করে দেও।
মুখ কালো করে শরীফা সব কাপড় অন্য রুমের আলমারীতে নিয়ে যায়।
আইনুদ্দিন বলে উঠেন,
-ছোট বউয়ের মুখ দেখে কি দিলা বড় বউ?
শরীফা কথা শুনে লজ্জা পেয়ে তুতলাতে থাকে, কিছু না ভেবেই তার হাতের বিয়ের আংটিটা বউয়ের কড়ে আঙুলে পরিয়ে দেয়। ঐ রুম থেকে চলে যাবার সময়,ছোট বউ ওরফে জমিলা ধীরে ধীরে বলে,
- মনে কষ্ট নিয়েন না বুবু। ছোট বোন মনে কইরা মাফ দিয়েন।
-না না মনে কষ্ট কেন নিব, (হাসি মুখ করে বলে শরিফা) তা তোমার নাম কি?
- জমিলা।
শরিফা মনে মনে ভাবে মেয়ে খারাপ হবেনা তেমন। আর কপালে খারাপী থাকলে ভালও খারাপ হয়ে যাবে। সব তকদ্বিরের খেলা।
রাতে শাহাদাতের কান্দন কে দেখে... ! 'বাপজানের লগে থাকুম, বাপজানের লগে...'
চিল্লাতেই আছে। ছোট মারে কয়,
-এই মুটি তুই সর..,এইটা আমার বিছানা। আইনুদ্দিন আর না পেরে থাপ্পর দিয়ে ছেলেকে রুম থেকে বের করে দেন। এক থাপ্পরে ছেলে চুপ। বাপের এমন রূপ সে দেখে নাই, হিংস্র বাঘও মনে হয় এতটা রাগেনা..। কিসের জন্য এত রাগ, সে তো বাপের সাথে থাকতে চাইছে, খারাপ কি করল? প্রতিদিনই তো থাকে। মাথায় ঢুকেনা ছোট্ট শাহদাতের।
আর শরিফার মনে হল সংসারে ভাঙন ধরছে, সতীন আনায় অত কষ্ট লাগে নাই, যতটা তার ছেলের গালে থাপ্পরটা দেয়ায় লাগছে। কেমন লাল হয়ে পাঁচ আঙ্গুল বসে আছে....। শরিফার কলিজায় যেন জোরে টান পড়ছে ছেলের গালে চড়টা যখন মারছিল। ছেলেকে কোলে নিয়ে শরীফা শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। ছেলে আর কাঁদে না কিন্তু যতক্ষণ ঘুম আসেনা, ফুঁপাতে থাকে। মাঝরাতে ঘুমের ঘোরেও। শরীফা আশা করতে থাকে, আইনুদ্দিন বাসর সেরে একবার রাতে এসে ছেলেকে দেখে যাবে, শরীফা নিরাশ হয়। হায়, দশ বছরের বউ আর সাত বছরের ছেলে মুহূর্তেই কেমনে পর হয়ে গেল! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রায় নির্ঘুম রাত কাটে শরীফার।
পরদিন পুরনো বউয়ের মত নতুন বউ ঘরের কাজে নেমে পড়ে । শরীফা বাধা দিলে শুনেনা।
- বুবু , ঘরটা এখন একলা তোমার না। আমারেও করতে দাও।
-ঠিক আছে , কর। হার মানে সে।
শরীফা সামনের দরজা দিয়ে জগ হাতে পানি আনতে যায়, কল থেকে। ঐ রুমে আইনুদ্দিন কোরান তেলোয়াত করে নীচে পাটি পেতে বসে।
পানি নিয়ে আসলে জমিলা বলে ,
-বুবু .. এরপর থেকে পেছনের দরজা দিয়ে পানি আনতে যায়েন, পুরুষ মানুষ বসা থাকে। দেখতে খারাপ লাগে...।
শরীফা কি উত্তর দিবে বুঝতে না পেরে হু বলে তাড়াতাড়ি পাশের রুমে ঝর্ণাধারায় আসা চোখের পানি মুচতে যায়। ওর নিজের স্বামী একদিনে পুরুষ মানুষ হয়ে গেল! বুকটা ভেঙে যেতে চায় তার। দশবছরে আইনুদ্দিন তো কখনো মানা করে নাই! শরীফা বুঝতে পারে, জমিলা চায়না সে স্বামীর আশে পাশে যাক।
শাহদাতের পড়ার টেবিলটা সামনের রুমেই। ছোট ছেলে , পাঁচ ছয়টা বই , দুই তিনটা খাতা , তাও ভালোভাবে গুছিয়ে রাখতে চায়না। জমিলা এসে বকা দেয়,
-এত্ত বড় ছেলে বই গুছাওনা কেন?
-তোমার দরকার হলে তুমি গোছাও..
-বেয়াদপ, গোছাতে না পারলে, তোদের খাটের নীচে নিয়ে রাখ। এই ঘরে এসব চলবেনা।
শরীফা দৌড়ে এসে বই গুছিয়ে ছেলেকে ধমক দেয়। ও ঘরে শান্তি চায়।
জমিলার নাইওরের সময় হয়। কিন্তু সে বুবু আর শাহদাত ছাড়া কিছুতেই বাপের বাড়ি যেতে রাজি হয়না। আইনুদ্দিন তো মহা খুশি। ভাবে কত্ত ভালবাসা বড় বউয়ের জন্য। কিন্তু জমিলা বুঝতে পারে শরীফা যাতে তার অবর্তমানে আইনুদ্দিনের ঘনিষ্ট না হয় তাই এতো পিরীত। এক সপ্তাহর জন্য পাশের ঘরের চাচী এসে রাঁধা বাড়া করে দেয় তাদের অনুপস্থিতিতে।
এরপর সামান্য ছোট খাট ব্যাপার নিয়েই জমিলা ঝগড়া বাধাতে চায়। সারাক্ষণ মা ছেলের দোষ খোঁজে। এবার ব্যপার আইনুদ্দিনের চোখেও পড়ে । সে ডেকচি আলাদা করে দেয়। মা ছেলের জন্য মাসিক একটা খরচ দিয়ে আলাদা চুলায় রেঁধে খেতে বলে।
একদিন কাল বৈশাখী ঝড় উঠে, সারা রাত বৃষ্টির চাইতে বাতাসের তেজ বেশী, কারেন্ট চলে যায়। ল্যাম্প জ্বালিয়ে সবাই বসে আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে। বড় বড় গাছের ঢাল পালা ভাঙার মরমর শব্দ , গাছ পড়ার ধরাম ধরাম আওয়াজ অন্ধকার পরিবেশ টাকে আরো ভয়াবহ করে তোলে।কেমন ভয় লাগে শাহদাতের। মাকে জড়িয়ে ধরে থাকে সে।
সকালে দেখে তাদের পুরনো কড়াই গাছ উপড়ে পড়ছে গোড়া সহ। শাহদাত গাছের উপর উঠে খেলতে থাকে। আইনুদ্দিন ভেবে নেয় ফার্নিচার বানাবে। তাই শুনে ও খুব খুশি। দেখবে কেমনে গাছ থেকে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানাবে।
-বাপজান, কি বানাবে?
-একটা শোকেস আর একটা খাট।
-আমি কোনটা নিব?
-তোমার যেটা ইচ্ছা।
-তাইলে বাবজান খাট নিব, মায়ের খাট বেশী পুরান।
-আইচ্ছা তোর যেটা ভাল লাগে।
কিন্তু শাহদাত কিছু দেখতে পায়না, ওর মন খারাপ। বাপজান ফার্নিচারের দোকানে ঠেলা করে গাছ পাঠায় দিছেন। তবে সে খাটের অপেক্ষা করে। নির্দিষ্ট দিন কি সুন্দর খাট আর বড় শোকেস আসে। দুইটাই ছোট মার ঘরে ঢুকে। শাহদাত চিল্লায় উঠে,
-বাপ বলছে খাট আমার মায়ের জন্য...।
-চুপ থাক, আমি বলে বানিয়েছি, আর সে বলে তার মায়ের জন্য..
তখনই তাদের ঘরে আসে জমিলার বড় ভাই বোনকে দেখতে। ঘটাঘটি শুনে কি হয়েছে জানতে চান তিনি। শাহদাত বিচার দেয়।
-দেখ মামা, বাপজান বলছে খাট আমার জন্য আর শোকেস ছোট মায়ের।
-তো সমস্যা কি?
-ছোটমা দুইটাই রেখে দিছে।
-কেন? কিরে জমিলা খাট শাহদাতরে দিয়ে দে।
-না ..উত্তর দেয় জমিলা। আমার কথায় সে বানায়ছে কেন দিব?
-দিবিনা?
-না।
বড় মামাটা রাগ করে চলে যাবার সময় শাহদাতকে বলে যায়..
-বিচার করতে পারলাম নারে ভাগনে। মাফ করে দিস। তোর বাপকে বলে নিতে পারিস কিনা দেখিস।
সে খাট কিংবা শোকেস কোনটা শাহদাত বা শরীফা পায়নি।
মাস শেষে ইলেক্ট্রিক বিল আসে দুই'শ টাকা। জমিলা শরীফার কাছে গিয়ে সত্তর টাকা বিল চায়।
-কিসের বিল?
-বারে, তোমরা মা ছেলে ফ্যান চালাও, বাতি জ্বালাও, বিল দিবানা? টাকা তো তোমাদের আলাদা দেয়। দেয়না?
শরীফা নিজের ঘরে এখন ভাড়াটিয়া। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে সত্তর টাকা বের করে দেয়।
.
-বহ্নি শিখা ।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন