বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

"সব গল্পের নাম হয় না"

আধুনিকতার এই যুগে প্রায় সবাই এখন আধুনিক। কি নারী, কি পুরুষ। পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিস এখন আধুনিক। এখনতো আবার কাউকে ভালোবাসতে গেলেও আধুনিক হতে হয়। হয়তো সেজন্যই আমাকে ভালোবাসার মতো কেউ আসেনি। কিন্তু আমার মতো তো অনেক আছে যারা আধুনিক না, তাই বলে কি তাদেরকে ভালোবাসার কেউ নাই। 
যাই হোক এখন গল্পে আসি....... 
... 
আমি ধ্রুব। আধুনিকতার যুগে আমি তার পুরোটাই বিপরীত। পোশাক-আশাক, কথা-বার্তা কোন কিছুতেই আধুনিকতার বিন্দু মাত্র ছাপ নেই। সারাদিন ঘুরে বেড়ানো আর বই নিয়ে বসে থাকায় ছিল আমার একমাত্র কাজ। আসলেই বই পড়তে খুব ভালোবাসতাম কিনা তাই। কলেজে আমার তেমন কোন বন্ধু ছিল না, আসলে আমি তো সবার মতো আধুনিক ছিলাম না। তাই কলেজে গেলে ক্যাম্পাসে একা একা বসে বই পড়তাম। 
এমনি একদিন ক্যাম্পাসে বসে বই পড়েছিলাম হঠাৎ...... 
.. 
-- এখানে একটু বসতে পারি??
-- হুমমম... (বইয়ের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলাম) 
-- আপনার সাথে কি একটু পরিচিত হতে পারি?? 
-- অবশ্যই.. কেননা....
-- ওই ভাবে বইয়ের মধ্যে চোখ গুজে রাখলে কি কথা বলা যায়?? 
-- ও.. সরি.. (বলতে বলতে সামনের দিকে তাকালাম, আমার পাশে একটা মেয়ে বসে আছে। লাল একটা ড্রেস পরে আছে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল) 
-- এই যে মিস্টার, ওইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?? 
(মেয়েটার ডাকে চেতনা ফিরে পেলাম, একটু লজ্জাও পেলাম) 
-- না কিছু না... 
-- আমি নীলা... আপনার ডিপার্টমেন্টেই পড়ি.. 
-- কই,, আপনাকে তো আগে কখনো দেখছি বলে তো মনে হচ্ছে না... 
-- কিভাবে দেখবেন? সবসময় তো বই নিয়ে পরে থাকেন। 
-- এটা ঠিক বলেছেন, আসলে বই পড়তে আমার অনেক ভালো লাগে।। আর আমি তো আপনাদের মতো আধুনিক না, তাই বইটাকেই সঙ্গী বানিয়ে নিয়েছি। 
-- ভালো করছেন। তা আমাকে কি আপনার বইটার মতো সঙ্গী বানিয়ে নেওয়া যায় না?? 
-- কি??? 
-- কিছু না, চলেন ফুচকা খায়?? 
-- আজকে না অন্য একদিন। 
-- কেন?? 
-- আসলে ফুচকা খেলে আমার কাছে বাসায় ফেরার টাকা থাকবে না। 
-- এই কথা, আচ্ছা আমি কি বলছি যে বিলটা আপনাকে দিতে হবে?? 
-- না,,, মানে... 
-- আরে মানে মানে না করে ... চলেন তো... 
.. 
বলেই হাতটা ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল। দুজন ফুচকা খেয়ে একটু হাঁটলাম রাস্তা দিয়ে। তারপর নীলাকে একটা রিক্সায় তুলে দিলাম। যাওয়ার সময় শুধু বলে গেল কাল যেন সকাল সকাল আসি রিক্সা নিয়ে ঘুরবে। আমিও বাসায় চলে আসলাম। 
রাত্রে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, এই আধুনিক যুগেও এমন মেয়ে আছে। সহজ সরল, মুখটাই কেমন জানি একটু মায়াবী মায়াবী। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছি টের পাইনি। সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। দেখি নীলা আগেই এসে বসে আছে..... 
... 
-- এতো দেরি করলা কেন?. 
-- রাস্তায় একটু দেরি হয়ে গেছে। আপনি কখন আসছেন??
-- ১০ মিনিট হলো। আর আমাকে এখন থেকে তুমি করে বলবা?? 
-- আচ্ছা... 
-- একটা রিক্সা ডাকো, দুজন রিক্সা নিয়ে ঘুরবো.. 
... 
একটা রিক্সা ডেকে দুজন বসলাম। কারো মুখে কোন কথা নেই। শুধু মাঝে মাঝে পাখিদের কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। নীরবতার রেশ কাটিয়ে বললাম আমি.... 
-- কোথায় যাচ্ছি আমরা?? 
-- গেলেই বুঝতে পারবা... 
আবার চুপ। নিস্তব্ধ পরিবেশ। অবশেষে রিক্সা থামলো। রিক্সা থেকে নেমে আমার হাতটা ধরলো নীলা... 
-- কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?? 
-- আরে আসো তো... 
চললাম ওর সাথে। কিছু দূর গিয়েই দাড়িয়ে গেল নীলা। সামনে কাশবন তার নিচেই একটা পুকুর, আর পুকুরটার পাশেই একটা কবর। দেখে মনে হলো বেশিদিন হয়নি কবরটা দেওয়া। জানতে ইচ্ছে করছিল কবরটা কার। আচ্ছা নীলা কবরটা কার, বলতে বলতে পাশে ঘুরলাম। কিন্তু নীলা কই গেল। চারদিকে অনেক খুঁজলাম, কিন্তু কোথাও নেই নীলা। বুঝতে বাকি রইলো না এটাই নীলার কবর। 
.. 
নীলার কবরটার সামনে গিয়ে বসে পরলাম। চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম, কিন্তু কোন সাড়া নেই.....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন