শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭

কুরিয়ে পাওয়া ডাইরি থেকে ভালবাসা

সকাল ৮ টা,
আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙল। আফিস যেতে হবে। আফিস শুরু হবে ১০ টায়। ঘুম থেকে ওঠে পরলাম। ফ্রেশ হয়ে সবাই একসঙ্গে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলাম। খাওয়ার সময় আম্মু তার নিত্য দিনের মতো মুখের মাইক বাজানো সুরু করলো। বিয়ে কর, বিয়ে কর, বিয়ে করে আমাকে একটু শান্তি দে ইত্যাদি ইত্যাদি। আব্বু তার মতো চুপ। আমি চুপ করে খেয়ে দেয়ে রেডি হয়ে আফিস এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম।

ওহো আমার পরিচয় তা তো দেয়া হলো না। আমি আসিফ। জব করি। আমি বাবা-মার একমাত্র সন্তান। আমাকে নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই। আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য মা ওঠে পরে লেগেছে। ভাবছিলাম কিছু দিন শান্তিতে থাকব। কিন্তু মায়ের জন্য সেটা সম্ভব হবে না বোধ হয়।
.
আফিস ছুটি হয় ৫ টায়। আফিস ছুটির পর বাড়ি ফিরে আমি নিয়মিত এলাকার একটি পার্কএ হাটতে বের হই। আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না। রোজকার মতো আজও পার্ক এ হাটতে লাগলাম। তারপর ক্লান্ত হয়ে আমার পছন্দের একটা ব্রেঞ্চ এ বসলাম। হটাৎ করে খেয়াল করলাম ব্রেঞ্চ এর পায়ের কাছে কি যেনো একটা পরে আছে। হাতে নিয়ে দেখলাম একটা ডাইরি। আশে-পাশে কাউকে দেখলাম না। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কেউ ডাইরি নিতে আসলো না। আগত্যা ডাইরিটা বাড়িতে নিয়ে আসলাম।
.
রাতে খেয়ে দেয়ে শুতে যাবো এমন সময় ডাইরিটার কথা মনে পরলো। য দিয়ো বিনা অনুমতিতে অন্য কারো ডাইরি পরা ঠিক নয়, তবু মনকে থামাতে পারলাম না। তাই ডাইরিটা নিয়ে বসলাম। ডাইরির কোনো নাম নাই। না না আছে তবে ছদ্মনাম। ডাইরিতে কিছু দিনলিপী, কিছু কবিতা, আর কিছু মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখা রয়েছে। কারো হাতের লেখা এতো সুন্দর হতে পারে বলে জানা ছিলো না। আর ছদ্মনাম নাম ছিলো 'ঘাস ফড়িং'। ডাইরির দিনলিপি দেখে বোঝা যাচ্ছে লেখক না লেখিকা অর্থাৎ ডাইরিটা একটি মেয়ের। ভাবছি মেয়ে তাকে খুজে বের করা দরকার।

সেদিন থেকে আফিস শেষে পার্ক এ ওই ব্রেঞ্চ এ বসে থাকতাম। মনে করেছিলাম মেয়েটি হয়তো তার ডাইরিটি খোজার জন্য এখানে আসবে। কিন্তু কোনো মেয়েকে ওখানে কিছু খুজতে দেখিনি।
.
এইদিকে মা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। একদিন সকালে খাবার সময়-
.
মা: আসিফ বাবা আমার এবার তো তুই বিয়ে কর প্লিজ। আর কতো দিন আমাকে খাটাবি।
.
আমি: প্লিজ মা আর কিছু দিন ওয়েট করো।
.
মা: আচ্ছা সত্যি করে বল তো তোর মনের কেউ আছে নাকি।

আসলে আমি ডাইরির হাতের লেখা পরে মেয়েটির প্রেমে পরে গিয়েছিলাম। আমি মাকে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু চিনিনা জানিনা এমন কারো কথা বলা ঠিক হবে না ভেবে বললাম-
.
আমি: না মা এমন কেউ নেই।
.
মা: তাইলে বিয়ে করতে তোর আপত্তি কথায়।
.
আমি: না মা, আমি আসলে কিছুদিন রেস্ট এ থাকতে চেয়েছিলাম।
.
মা: আমি কিছু শুনতে চাই না। এবার তোকে বিয়ে করতে হবে নয়তো আমার মরা মুখ দেখবি।
.
আগত্যা আমাকে আমার সব ভালবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে বিয়ে করতে রাজি হলাম।
.
আমি: ঠিক আছে। তুমি মেয়ে দেখ।
.
মা: খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন আমাদের মেয়ে দেখা হয়ে গেছে। এখন তুই গিয়ে দেখে আয়।
.
আমি: না মা আমার দেখার দরকার নাই।
.
মা: তা কি করে হয়। আচ্ছা তুই না দেখতে চাইলে নাই। তবে পাত্রী পক্ষ তোকে দেখতে চাচ্ছে।
.
আমি: ঠিক আছে মা সকালে গিয়ে দেখে আসবো।
.
পরের দিন সকালে গেলাম পাত্রীর বাড়ি। সঙ্গে নিয়ে গেলাম ২ কেজি মিস্টি। তাদের বাড়ির বৈঠক রুমের সোফায় বসলাম। তারা জানালো আমাকে তাদের পছন্দ হয়েছে। আমিও পাত্রীকে দেখলাম। সুন্দর ফর্শা আর খুব মায়াবী। মেয়েটির নামও ছিলো মায়া। কিন্তু এই মুহুর্তে আমার মনে অন্য কারও জন্য যায়গা রয়েছে। আমি পরে জানাবো বলে বাড়ি ফিরে এলাম।

বাড়ি ফিরে মিথ্যা বললাম আমার পাত্রী পছন্দ হয়েছে। মা বাবা তাদের ফোন করে বিয়ের ডেট ঠিক করে ফেলেছে। সামনের সপ্তাহে আমাদের বিয়ে। আমি তখনো ডাইরির মালিককে খুজে বেরাচ্ছি। কিন্তু যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার সাথে এখনো কথা বলি নি।
.
অবশেষে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। কিন্তু আমি তাকে মেনে নিতে পারি নি। তাই ঠিক করে ছিলাম বাসর রাতে মায়াকে সব বলে দিবো। বাসর ঘড়ে ঢুকে দেখি মায়া বিছানার মাঝখানে বসে আছে। আমাকে ঢুকতে দেখে বিছানা থেকে নেমে আমার পা ধরে সালাম করলো। আমি তাকে বিছানায় বসতে বললাম। 

আমি: আমি জানি না ব্যাপারটা তুমি কিভাবে নিবে, তবে তোমাকে জানতে হবে। এই কাহিনীটা শুনতে তোমার ভালো লাগবে না। অবস্য ভালো না লাগারই কথা। 
.
মায়া: হ্যা বলুন, আমি শুনছি।

আমি তখন ডাইরি পাওয়া থেকে এই পর্যন্ত সব ঘটনা শেয়ার করলাম। দেখলাম মায়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে অবাক হওয়ারই কথা বাসর রাতে স্বামির মুখে এইগুলো শুনলে যে কেউ অবাক হবে। আমি তার হাতে ডাইরিটা দিলাম পরার জন্য। দেখলাম মেঘা ডাইরিটা উল্টেপাল্টে দেখছে। তখন মায়া-
.
মায়া: আরে এই ডাইরিটা তো আমার।
.
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ঘটনাটা বেশি কাকতালীয় হয়ে যাচ্ছে না।
.
আমি: তা কি করে সম্ভব। তুমি মিথ্যা বলছ না তো আবার।
.
মায়া: আপনার বিস্বাস না হলে আমার আর ডাইরির হাতের লেখা দেখুন।
.
আমি দেখলাম মায়ার আর ডাইরির হাতের লেখা একই। আমার চোখে তখন আনন্দের অশ্রু। মায়া তখন তার ঘটনা বলল- সে নাকি এলাকায় বেরাতে এসেছিলো বাবা-মার সাথে। সেদিন পার্কএ বেরাতে আসে সেই আমার পছন্দের ব্রেঞ্চ এ বসে। তখন তার ব্যাগ থেকে কিভাবে যেনো পরে যায়। তারপরে ডাইরিটি আমি পাই। রাতে দেখে ব্যাগ এ ডাইরিটি নেই। তারপরের দিনে তারা চলে যায় তাই ডাইরিটি খুজতে আস্তে পারেনি।
.
আমি তখন খুশিতে তাকে জরিয়ে ধরে বলেছিলাম,
.
আমি: খুব ভালবাসি তোমাকে পাগলি।
.
মায়া: সারাজীবন এইভাবে জরিয়ে ধরে ভালোবাসতে পারবেন।
.
আমি: হুম পাগলি। তোমার জন্য সব করতে পারব। এবার বলতো আমি তোমাকে ভালবাসি। 
.
মায়া: আমিও আপনাকে ভালবাসি।
.
আমি: আপনি নয় তুমি।

মায়া: লজ্জা করে।
.
আমি: বলতে লজ্জা করে একটু পর কি করবা।
.
মায়া: যা দুষ্টু, কিছুই আটকায় না দেখছি। 
.
অতঃপর আমি আমার ভালবাসা ফিরে পেলাম। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যাতে সুখে শান্তিতে থাকতে পারি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন