বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭

অতঃপর বিয়ে

-"আপনাকে বললাম না আমি আপনাকে আমি
স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না।তাও আপনি 
কেনো বার বার এক রকম কথা বলেন"।(তুষার)
-"কেনো আরও বিয়ে করার ইচ্ছে আছে নাকি।
তাহলে খুন করে ফেলবো।আমি ছাড়া আর কোন
মেয়ে আপনার জীবনে আসতে পারবে না"।(শিখা)
-"আপনার এই সব কথা শুনার ইচ্ছে নেই আমার।
আর আপনি আপনার কাজ করেন,আমাকে আমার
কাজ করতে দেন।আর আমার সামনে না আসলে 
আমি খুশি হবো"।(তুষার)
-"আমি আসবো,আপনি আমার স্বামী আপনার কাছে
আসার অধিকার আছে"।(শিখা)
-"দেখুন জোর করে কিছু পাওয়া যায় না।আর আমি
আগেই আপনাকে সব বলে দিয়েছি"।(তুষার)
-"বলছেন ভালো করছেন।আমি আমার অধিকার
আদায় করে নিবো।আর কিভাবে নিতে হবে তা
আমি ভালো করে জানি"।(শিখা)
-"আপনাকে আমি সহ্য করে পারতেছি আর।দয়া 
করে আপনি এখন এইখান থেকে চলে যান"।(তুষার)
-"না যাবো না।কি করবেন আপনি,মারবেন তাহলে 
মারেন আমাকে।তাও আমি যাবো না"।(শিখা)
..
"কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।ভালো লাগে না আর।বিয়ে করবো না আগেই বলে দিয়েছি।তাও বিয়ে করতে হয়েছে।আমার বিয়েটা অন্য রকম ভাবে হয়েছে"।
..
"এক দিন অফিস থেকে বাসায় এসে রাতে 
সবাই খেতে বসলাম।তখন নীলিমা আপু 
আমার বড় বোন বলতেছে যে আমাদের 
এক আত্মীয় বিয়ে আমাদের সবার যেতে 
হবে।আমি না করে দিলাম কারন আমার 
অফিসে কাজ আছে তাই।কিন্তু সবাই 
অনেক জোর করলো যেতেই হবে আমার।
আমি তাও না করে দেই।আমার এই সব 
ভালো না লাগে না।আমার একা থাকতে 
ভালো লাগে তাই আমি সব সময় একা থাকি"।
..
"বিয়ের দিন জোর করেই আমাকে নিয়ে যায়।
বিয়ে বাড়িতে যাবার পর দেখতে পেলাম 
আমাদের সব আত্মীয় উপস্থিত।আমি চমকে 
যায় সবাই আসার কথা না।মামা থেকে শুরু 
করে চাচা সবাই,এমনকি ভাই-বোন যারা আছে 
সবাই আসছে।আমি মনে মনে বলতেছি কিছু 
একটা আমার থেকে লুকানো হয়েছে"।
..
"বিয়ের কিছুক্ষন আগে নীলিমা আপু এসে 
বললো বিয়ে নাকি ভেঙ্গে গেছে তারা নাকি 
আর আসবে না।আমি বললাম তাহলে আমারা 
চলে যাই।এইখানে থেকে তো আর কিছু হবে না।
আপু বললো না আমারা কেউ যাবো না।আসলে 
যখন শুনলাম বিয়ে হবে না তখন আমারা বিয়ে 
ঠিক করেছি তোর সাথে বিয়ে হবে মেয়েটির।না 
করিস না দেখ মেয়েটি এমনি কষ্ট পেয়েছে বিয়ে 
না হবার কারনে।আর মেয়েটি যদি উল্টাপাল্টা 
কিছু করে তখন কি হবে।আর আমারা এমনিতেও 
তোর জন্য মেয়ে দেখছিলাম।আর মেয়েটা অনেক ভালো"।
..
"আমি বললাম আমি ছাড়া তো এইখানে অনেকে 
আছে তাদের বলো আমি পারবো না।আর আমি 
আগেই বলে দিয়েছি আমি বিয়ে করবো না।আপুর 
সাথে অনেক রাগারাগি হলো।এক প্রাকার জোর 
করেই শেষে আমার সাথে মেয়েটির বিয়ে দিলো।
আমার কথা কেউ শুনলো না"।
..
"সব শেষে বাসায় আসলাম সবাই।আমাকে আমার 
রুমে দিয়ে আসলো।রুমে গিয়ে তো আমি আবার 
চমকে গেলাম।রুমটা সাজানো,আমি যখন বিয়েতে 
যাই তখন সব ঠিক ছিলো"।
..
-"দেখুন আমি আপনাকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিতে 
পারবো না।কেনো এই প্রশ্ন করবেন না।আর আমি 
বিয়েও করতাম আমাকে জোর করে বিয়ে করানো 
হয়েছে।আর আপানর বিয়ে না ভাঙ্গলে তো আর
এমন হতো না"।(তুষার)
-"বিয়ে ভাঙ্গলে তো আর আপনার সাথে বিয়ে হতো
না।আপনার সাথে আগে থেকেই আমার বিয়ে ঠিক 
করা ছিলো।আপনি নাকি বিয়ে করবেন না তাই
সবাই মিলে বুদ্ধি করে আমাদের বিয়ে দিয়েছে"।(শিখা)
-"কি বললেন আপনি আপনারা সবাই নাটক করেছেন
আমার সাথে"।(তুষার)
-"আপনি রাজি থাকলে তো আর করতে হতো না"। 
(শিখা)
..
"আমি রুম থাকে বেড়িয়ে সবাইকে ডাকলাম।আমি বললাম তোমারা আমার সাথে এমন করতে পারলা।আমি না করার পরেও তোমার এই ভাবে অভিনয় করলে আমার সাথে।আরও অনেক কথা বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি।মোবাইলও বন্ধ করে রাখি।সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকি আর রাস্তায় আনমনে
হাটি"। 
..
"আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি।আগে পরিচয় দেই।
আমি তুষারএকটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি 
করছি।সবার যেমন বিয়ে অনেক সপ্ন থাকে আমার 
এক সময় সপ্ন ছিলো।কিন্তু কেউ এক জন সেই সপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে।এখন আর কেউ কে বিশ্বাস করতে 
পারি না"।
..
"আজ থেকে ৫ বছর আগের কথা।তখন 
আমি অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি।তখন 
তাসফিয়ার সাথে আমার পরিচয় হয়।
তাসফিয়া তখন অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে।
আমরা একি ভার্সিটিতে পড়তাম।
আমাদের সম্পর্ক ভালো চলছিলো।
দুজন দুজনের খেয়াল রাখতাম,সময় 
পেলেই ঘুরতে যেতাম।ঝগড়া হলে 
বেশিক্ষন কথা না বলে কেউ থাকতে 
পারতাম না।কিছুক্ষন পর আবার সব 
কিছু ঠিক হয়ে যেতো"।
..
"প্রথমে বুঝতে না পারলেও এক সময় বুঝতে পারি 
যে তাসফিয়া আমাকে এড়িয়ে চলছে।আমি কিছু 
বলে নাই কারন আমি জানতাম আমাদের সম্পর্ক 
খুব তারাতারি শেষ হয়ে যাবে।তাই শুধু দেখ ছিলাম তাসফিয়া কি করে। এক দিন তাসফিয়া আমাকে বললো দেখা করতে।আমি জানি তাসফিয়া কি 
বলবে।আমি সময় মতো দেখা করতে যাই"।
..
-"তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য আজ দেখা করতে
বলছি"।(তাসফিয়া)
-"তোমার যা বলার বলতে পারো"।(তুষার) 
-"আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,আগামি মাসে আমার
বিয়ে।তোমার তো চাকরি নেই তাই আমার বাসা
থেকে কেউ রাজি হয়নি।আমার কিছু করার নেই,
আমি চেষ্টা করেছি রাজি করার জন্য।তুমি আমাকে 
ভুলে যাও,আমার জন্য তোমার জীবন নষ্ট করবে না"।(তাসফিয়া)
-"তুমি তো খুব ভালো মিথ্যে কথা বলতে পার।আমি 
আগেই জানতাম এরকম কিছু হবে।কয়েক দিন
ধরে তোমাকে ফোন দিলেও ফোনে পেতাম না,
আগের মতো কথা বলতে না,আরও অনেক কিছু 
আছে।সম্পর্ক করার সময় এই কথাটা মনে ছিলো
না যে তুমি পরিবারের পছন্দে বিয়ে করবে,তোমার
পছন্দে বিয়ে করবে না।আর তুমি কি ভাবে ভাবলে
যে আমি একটা মেয়ের জন্য নিজের জীবন নষ্ট
করবো।আমি এই ধরনের ছেলে না যে একটা মেয়ের 
সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো তা শেষ হয়ে গেছে তাই 
নিজের জীবন নষ্ট করে দিবো।যাই হোক তোমার
নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা রইলো।আর অন্য 
কারো সাথেএই রকম অভিনয় করবে না।আমার
সাথে করছো ঠিক আছে"।(তুষার)
..
"কথা গুলি বলেই চলে আসলাম।আমার যে খারাপ লাগছে না এমন না,আমার অনেক খারাপ লাগছে।
কি না করছি যখন যা বলতো তাই করতাম।নিজেকে সামলে নিয়ে সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করলাম"।
..
"এই দিকে রাত তখন ৩ টা বাজে।বাসায় এসে নক 
করার সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো।আপু আমাকে অনেক বুঝাইতেছে যে সব কিছু আবার নতুন করে 
শুরু করতে।আসলে আমার সব ইচ্ছে শেষ হয়ে গেছে।মেয়েদের এখন আর দেখতে পারি না"।
..
"শিখা মেয়েটা অনেক ভাল।সব সময় আমার 
খেয়াল রাখে।আমার জন্য মেয়েটার জীবন নষ্ট 
হবে এইটা মানতে পারছি না।কারো সাথে কথা 
না বলে শুয়ে পড়ালাম।আর ভাবতেছি কি করবো।আমার জন্য শিখা কে কষ্ট পেতে দিবো না।কিছু 
একটা করতে হয়ে।যাই হোক শিখাকে সব খুলে 
বলবো ঠিক করলাম।তারপর যদি মনে হয় শিখা 
এমন কিছু করবে না তাহলে মানে নিবো।কারন 
এইটা ছুড়ে ফালিয়ে দেওয়ার মতো না,যে চাইলেই 
ছুড়ে ফেলে দিবো"।
..
-"আপনি তো সব শুনলেন এখন কি করবেন আপনি"।(তুষার)
-"আমি এখন যেমন আপানর পাশে আছি,সব সময়
এই ভাবেই আপনার পাশে থাকবো।আগে যা হয়েছে 
সব ভুলে জান"।(শিখা)
-"তাহলে আপনি করে বলছেন যে।তুমি করে বলবেন 
না"।(তুষার)
-"আচ্ছা তুমিও তুমি করে বলবে এখন থেকে কেমন"।
(শিখা)
..
"এই ভাবে শুরু হয় নতুন আরেক জীবন।শিখা সব 
সময় আমাকে আমার খেয়াল,আমি বাসায় থাকলে আমার কি লাগবে,কি দরকার তাই নিয়েই ব্যস্ত থাকে।শিখা কে নিয়ে অনেক ভালোই আছি এখন।শিখা আমাকে অনেক ভালোবাসে আর আমিও শিখাকে অনেক ভালোবাসি"।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন