আমি আর অনু ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড়
হয়েছি। একসাথে খেয়েছি, একসাথে খেলেছি,
এমনকি স্কুলেও একসাথে পড়েছি। আমি লেখাপড়ায়
তেমন ভালো ছিলাম না, কিন্তু অনু ছিলো আমাদের
ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। আমি
এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করি। তবে নিজের
মেধার জোরে না, অনুর মেধার জোরে। আমি
বরাবরই অনুর দেখে লিখতাম, আর ফলস্বরূপ ভালো
রেজাল্ট আমার কাম্যই ছিলো। আমি জানতাম যে অনু
আমার প্রতি দূর্বল, এই সুযোগ টাই আমি কাজে
লাগাতাম। আমি অনুর সাথে মিথ্যা প্রেমের নাটক
করতাম, কিন্তু অনু আমার এই নাটক টাকেই সিরিয়াস
ভাবতো।
.
অনুর চেহারা মোটেও আমাকে আকর্ষণ করতো
না। কিন্তু নিজের প্রয়োজনেই আমি অনুকে
ব্যবহার করতাম ,ভালবাসার মিথ্যা মায়াজাল বুনতাম অনুকে
ঘিরে। ইন্টারেও আমি আর অনু একই কলেজে
ভর্তি হলাম। কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়ার প্রতি
একটু সিরিয়াসও হলাম। আস্তে আস্তে অনুকে দূরে
সরিয়ে দিচ্ছিলাম। কিন্তু পারলাম না। কলেজের
একপর্যায়ে আমি অনুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক
পর্যন্ত করি। অনুকে নিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে
ছিলাম, বিনা কারনেই অনুর দেহটা নরপিশাচের মতো
ভোগ করতাম। দেখতে দেখতে এইচএসসি
পরীক্ষা চলে আসলো। পরীক্ষাহলে আগের
মত অনুর দেখে লেখার সুযোগ না পেলেও,
বেশ সহায়তা পেতাম অনুর কাছ থেকে। প্যাকটিক্যাল
থেকে শুরু করে সবই অনুকে দিয়ে করাতাম।
বেশ ভালোভাবেই পরীক্ষা শেষ হলো
আমাদের। আশানুরূপ ফলও পেলাম। রেজাল্ট পাওয়ার
পর পুরো ফ্যামিলিসহ ঢাকায় চলে আসি। সেদিন অনুর
চোখের জল আমাকে মোটেও আটকাতে
পারেনি। সব সম্পর্ক ছিন্ন করে সেদিন বাবামায়ের
সাথে ঢাকায় চলে আসি।
.
শহরে এসে অনুকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
শহরের নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধুবান্ধব পেয়ে
অনুকে একসময় প্যারা মনে হত। বেশ কয়েকটা
রিলেশনও করি শহরে এসে। শহরের ফ্যাশনেবল
মেয়ের সাথে ডেটিং করে আলাদা মজা পেতাম।
শহরের ফ্যাশনেবল মেয়েগুলোর মধ্যে লিমা
মেয়েটা বেশ আলাদা। লিমাকে দেখে আমার মন
ছুয়ে যেত। দিনদিন লিমার প্রতি আমি দূর্বল হতে
থাকি। অজানা কারনেই লিমাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে
থাকি। লিমার চিন্তা করতে বেশ ভালো লাগতো।
লিমার প্রতি আমার আলাদা ফিল কাজ করতো, কেন জানি
ওকে খুব মিস করতাম। আমার সাথে একসময়
রিলেশনও হয় মেয়েটার। কিন্তু রিলেশনের
ছয়মাসের মাথায় ব্রেকআপও হয়। শহরের
মেয়েতো আমার মতো হাফ গাইয়া হাফ শহুরে
ছেলেকে পাত্তা দিবে কেন?
.
লিমার সাথে ব্রেকআপ হবার পর খুব খারাপ লাগতো।
অনুর কথা মনে হতো, মনে হতো অনুর সাথে
আমার কাটানো প্রতিটি মুহূর্তর কথা। একটা মেয়ে
একটা ছেলেকে কী পরিমাণ ভালবাসতে পারে
অনুকে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। চাই না আমার
স্টাইলিশ, ফ্যাশনেবল মেয়ে, আমার শুধুই অনুকে
চাই। অনুই পারে আমার বাকিটা জীবন সাতরঙে
রাঙিয়ে দিতে। অনুর কাছে হাটু গেড়ে হাতজোড়
করে ক্ষমা চাইবো, আমি জানি অনু আমাকে
ফেরাতে পারবেনা। বাকিটা জীবন অনুকে নিয়ে
নিশ্চিন্তে কাটাবো।
.
আজ তিনবছর পর গ্রামে যাচ্ছি। আলাদা অনুভূতি হচ্ছে
মনের ভেতর। বাস যখন গ্রামে এসে পৌছালো
ততক্ষণে রাত ২ টা বেজে গেছে। ওহ! রিকশা,
ভ্যান কিছুই নেই, চার কিলোমিটার রাস্তা হেটে
যেতে হবে। হালকা বৃষ্টিপাতও শুরু হয়েছে, সাথে
বজ্রপাত তো আছেই। প্রথমে ভাবলাম
বাসস্ট্যান্ডেই রাতটা কাটিয়ে দেবো, পরক্ষণে
মনে হলো হেটেই যাই। পকেট থেকে
সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম। দেখি একটাই
সিগারেট অবশিষ্ট আছে, ওটাই ধরালাম। নিশ্চিন্তে
সিগারেটটা শেষ করে অনুর বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা
দিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর বিকট শব্দে একটা বজ্রপাত
হলো। বজ্রপাতের আলোয় মনে হলো ...
কে যেন আমার সাথে তাল মিলিয়ে হাটছে। পাশে
তাকাতেই দেখে অনু। অনুকে দেখে আমার খুশি
দেখে কে? আমিই অনুকে বললাম ....
-- তুমি এখানে? তাও আবার এত রাতে?
-- তোমার জন্য অপেক্ষা করি। আমি জানতাম তুমি
একদিন ঠিকই আসবে।
-- তোমার সাথে আমি অন্যায় করেছি। আমাকে
ক্ষমা করবে না।
-- ক্ষমা। হাহাহাহাহাহহাহ
-- অনুর এই হাসিটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগলো।
এইরকম ভাবে কখনো অনুকে হাসতে দেখিনি।
তারপরেও বললাম ... আমি কী ক্ষমার এতোটাই
অযোগ্য?
-- (অনু নিঃশব্দে হেটে যাচ্ছে।)
-- কী হলো? আমি কী ক্ষমার এতোটাই
অযোগ্য?
কোনো উত্তর না পেয়ে ভাবলাম অনুকে একটু
জড়ায়ে ধরি। অনুর হাতে আমার হাতটা রাখবো। কিন্তু
অনুর হাতটা আমি ধরতেই পারছিনা, ভাবলাম অন্ধকার তাই
হয়তো। আমি যতই অনুর কাছে যাচ্ছি অনু তত আমার
থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তবে দেখে
বোঝার উপায় নেই যে অনু দূরে সরে যাচ্ছে।
আমার আর অনুর মাঝে এক হাতের ব্যবধান,
তারপরেও আমি ওকে ধরতে পারছিনা। আমি যতই
অনুকে ছোয়ার জন্য বামপাশে যাচ্ছি, অনুও তত
বামপাশে সরে যাচ্ছে। অনু যে আমাকে থেকে
দূরে সরে যাচ্ছে ওর হাঁটার ধরন দেখে
মোটেও বোঝার উপায় নেই, অথচ আমার আর
অনুর মাঝের দূরত্বটাও আগের মতোই আছে।
হঠাৎ আবারো প্রচন্ড বিকট শব্দসহ বজ্রপাত হলো,
কিন্তু বজ্রপাতের আলোয় অনুকে কোথাও
দেখতে পেলাম না। ভাবলাম এটা আমার মনের ভূল,
তাই আরো দ্রুত পা চালিয়ে হাটতে লাগলাম। আবার
মনে হল, কেউ আমার সাথে তাল মিলিয়ে হাটছে।
ডানপাশে তাকাতেই দেখি অনু! বজ্রপাতের
আলোয় এবার অনুকে স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
.
তারপর আর কিছুই মনে নেই৷ চোখ মেলে
দেখি, আমি মসজিদে শুয়ে আছি। আমাকে ঘিরে
রয়েছে অনেকগুলো মুরুব্বি, তারমধ্যে একজন
আমার পাশে বসে বিড়বিড় করে কী যেন
আওড়াচ্ছেন। আমি উঠে বসলাম। আমাকে ঝাড়ফুঁক
করে আর পানিপড়া দিয়ে মুরুব্বি লোকটা আমায় বাসা
পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। অনুদের বাসায় এসে
সবাইকে দেখতে পেলাম কিন্তু অনুকে দেখতে
পেলাম না। আন্টিকে অনুর কথা বলতেই, আন্টি যা
বললেন তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত
ছিলাম না। আন্টি বললেন, আমি যাওয়ার ১৩ দিনের মাথায়
অনু আত্মহত্যা করে। অনুর কুকর্মের কারনে ওর
গর্ভে সন্তান জন্ম নেয়। অনেক চেষ্টা করেছি
কিন্তু মরার আগে মেয়েটা একবারের জন্যেও
ওই ছেলেটার নাম বলল না। কথাগুলো বলেই আন্টি
কাদতেঁ কাদতেঁ ঘরে চলে গেলেন। আমিও
জ্ঞানশূন্যের মতো ওখানেই পরে থাকলাম।
.
নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আরো দুইবছর
কাটিয়ে ফেলেছি। এই দুবছরে যে কী পরিমাণ
কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে, সেটা শুধু আমিই
জানি। আয়নায় নিজের চেহারার বদলে অনুর চেহারা
দেখতে পাই। পানি থেকে শুরু করে সব কিছুতেই
অনুকে দেখি। অনুর অট্টহাসি আমি সহ্য করতে
পারিনা। মনের মধ্যে আলাদা ভয়, আলাদা ভীতি কাজ
করে। অনেকবার মরার চেষ্টা করেছি পারিনি,
হয়তো অনুই আমাকে মরতে দেয়নি। অনু আমার
ভেতরটা কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। হ্যাঁ! এটাই আমার
পাপের শাস্তি। অনু আমার প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছে।
কিন্তু আমি এই প্রতিশোধ আর সহ্য করতে পারছিনা,
আমার যে মুক্তি চাই। মুক্তি....। বাকিটা জীবনের
প্রতিটি মূহুর্ত কাটে মুক্তির আশায়!!!
.
নিজ অপরাধের শাস্তি আমি ভুগছি দিবারাত্রি .....
তুমি নিচ্ছো প্রতিশোধ, কিন্তু আমি যে চাই
মুক্তি.....
হয়েছি। একসাথে খেয়েছি, একসাথে খেলেছি,
এমনকি স্কুলেও একসাথে পড়েছি। আমি লেখাপড়ায়
তেমন ভালো ছিলাম না, কিন্তু অনু ছিলো আমাদের
ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। আমি
এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করি। তবে নিজের
মেধার জোরে না, অনুর মেধার জোরে। আমি
বরাবরই অনুর দেখে লিখতাম, আর ফলস্বরূপ ভালো
রেজাল্ট আমার কাম্যই ছিলো। আমি জানতাম যে অনু
আমার প্রতি দূর্বল, এই সুযোগ টাই আমি কাজে
লাগাতাম। আমি অনুর সাথে মিথ্যা প্রেমের নাটক
করতাম, কিন্তু অনু আমার এই নাটক টাকেই সিরিয়াস
ভাবতো।
.
অনুর চেহারা মোটেও আমাকে আকর্ষণ করতো
না। কিন্তু নিজের প্রয়োজনেই আমি অনুকে
ব্যবহার করতাম ,ভালবাসার মিথ্যা মায়াজাল বুনতাম অনুকে
ঘিরে। ইন্টারেও আমি আর অনু একই কলেজে
ভর্তি হলাম। কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়ার প্রতি
একটু সিরিয়াসও হলাম। আস্তে আস্তে অনুকে দূরে
সরিয়ে দিচ্ছিলাম। কিন্তু পারলাম না। কলেজের
একপর্যায়ে আমি অনুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক
পর্যন্ত করি। অনুকে নিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে
ছিলাম, বিনা কারনেই অনুর দেহটা নরপিশাচের মতো
ভোগ করতাম। দেখতে দেখতে এইচএসসি
পরীক্ষা চলে আসলো। পরীক্ষাহলে আগের
মত অনুর দেখে লেখার সুযোগ না পেলেও,
বেশ সহায়তা পেতাম অনুর কাছ থেকে। প্যাকটিক্যাল
থেকে শুরু করে সবই অনুকে দিয়ে করাতাম।
বেশ ভালোভাবেই পরীক্ষা শেষ হলো
আমাদের। আশানুরূপ ফলও পেলাম। রেজাল্ট পাওয়ার
পর পুরো ফ্যামিলিসহ ঢাকায় চলে আসি। সেদিন অনুর
চোখের জল আমাকে মোটেও আটকাতে
পারেনি। সব সম্পর্ক ছিন্ন করে সেদিন বাবামায়ের
সাথে ঢাকায় চলে আসি।
.
শহরে এসে অনুকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
শহরের নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধুবান্ধব পেয়ে
অনুকে একসময় প্যারা মনে হত। বেশ কয়েকটা
রিলেশনও করি শহরে এসে। শহরের ফ্যাশনেবল
মেয়ের সাথে ডেটিং করে আলাদা মজা পেতাম।
শহরের ফ্যাশনেবল মেয়েগুলোর মধ্যে লিমা
মেয়েটা বেশ আলাদা। লিমাকে দেখে আমার মন
ছুয়ে যেত। দিনদিন লিমার প্রতি আমি দূর্বল হতে
থাকি। অজানা কারনেই লিমাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে
থাকি। লিমার চিন্তা করতে বেশ ভালো লাগতো।
লিমার প্রতি আমার আলাদা ফিল কাজ করতো, কেন জানি
ওকে খুব মিস করতাম। আমার সাথে একসময়
রিলেশনও হয় মেয়েটার। কিন্তু রিলেশনের
ছয়মাসের মাথায় ব্রেকআপও হয়। শহরের
মেয়েতো আমার মতো হাফ গাইয়া হাফ শহুরে
ছেলেকে পাত্তা দিবে কেন?
.
লিমার সাথে ব্রেকআপ হবার পর খুব খারাপ লাগতো।
অনুর কথা মনে হতো, মনে হতো অনুর সাথে
আমার কাটানো প্রতিটি মুহূর্তর কথা। একটা মেয়ে
একটা ছেলেকে কী পরিমাণ ভালবাসতে পারে
অনুকে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। চাই না আমার
স্টাইলিশ, ফ্যাশনেবল মেয়ে, আমার শুধুই অনুকে
চাই। অনুই পারে আমার বাকিটা জীবন সাতরঙে
রাঙিয়ে দিতে। অনুর কাছে হাটু গেড়ে হাতজোড়
করে ক্ষমা চাইবো, আমি জানি অনু আমাকে
ফেরাতে পারবেনা। বাকিটা জীবন অনুকে নিয়ে
নিশ্চিন্তে কাটাবো।
.
আজ তিনবছর পর গ্রামে যাচ্ছি। আলাদা অনুভূতি হচ্ছে
মনের ভেতর। বাস যখন গ্রামে এসে পৌছালো
ততক্ষণে রাত ২ টা বেজে গেছে। ওহ! রিকশা,
ভ্যান কিছুই নেই, চার কিলোমিটার রাস্তা হেটে
যেতে হবে। হালকা বৃষ্টিপাতও শুরু হয়েছে, সাথে
বজ্রপাত তো আছেই। প্রথমে ভাবলাম
বাসস্ট্যান্ডেই রাতটা কাটিয়ে দেবো, পরক্ষণে
মনে হলো হেটেই যাই। পকেট থেকে
সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম। দেখি একটাই
সিগারেট অবশিষ্ট আছে, ওটাই ধরালাম। নিশ্চিন্তে
সিগারেটটা শেষ করে অনুর বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা
দিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর বিকট শব্দে একটা বজ্রপাত
হলো। বজ্রপাতের আলোয় মনে হলো ...
কে যেন আমার সাথে তাল মিলিয়ে হাটছে। পাশে
তাকাতেই দেখে অনু। অনুকে দেখে আমার খুশি
দেখে কে? আমিই অনুকে বললাম ....
-- তুমি এখানে? তাও আবার এত রাতে?
-- তোমার জন্য অপেক্ষা করি। আমি জানতাম তুমি
একদিন ঠিকই আসবে।
-- তোমার সাথে আমি অন্যায় করেছি। আমাকে
ক্ষমা করবে না।
-- ক্ষমা। হাহাহাহাহাহহাহ
-- অনুর এই হাসিটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগলো।
এইরকম ভাবে কখনো অনুকে হাসতে দেখিনি।
তারপরেও বললাম ... আমি কী ক্ষমার এতোটাই
অযোগ্য?
-- (অনু নিঃশব্দে হেটে যাচ্ছে।)
-- কী হলো? আমি কী ক্ষমার এতোটাই
অযোগ্য?
কোনো উত্তর না পেয়ে ভাবলাম অনুকে একটু
জড়ায়ে ধরি। অনুর হাতে আমার হাতটা রাখবো। কিন্তু
অনুর হাতটা আমি ধরতেই পারছিনা, ভাবলাম অন্ধকার তাই
হয়তো। আমি যতই অনুর কাছে যাচ্ছি অনু তত আমার
থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তবে দেখে
বোঝার উপায় নেই যে অনু দূরে সরে যাচ্ছে।
আমার আর অনুর মাঝে এক হাতের ব্যবধান,
তারপরেও আমি ওকে ধরতে পারছিনা। আমি যতই
অনুকে ছোয়ার জন্য বামপাশে যাচ্ছি, অনুও তত
বামপাশে সরে যাচ্ছে। অনু যে আমাকে থেকে
দূরে সরে যাচ্ছে ওর হাঁটার ধরন দেখে
মোটেও বোঝার উপায় নেই, অথচ আমার আর
অনুর মাঝের দূরত্বটাও আগের মতোই আছে।
হঠাৎ আবারো প্রচন্ড বিকট শব্দসহ বজ্রপাত হলো,
কিন্তু বজ্রপাতের আলোয় অনুকে কোথাও
দেখতে পেলাম না। ভাবলাম এটা আমার মনের ভূল,
তাই আরো দ্রুত পা চালিয়ে হাটতে লাগলাম। আবার
মনে হল, কেউ আমার সাথে তাল মিলিয়ে হাটছে।
ডানপাশে তাকাতেই দেখি অনু! বজ্রপাতের
আলোয় এবার অনুকে স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
.
তারপর আর কিছুই মনে নেই৷ চোখ মেলে
দেখি, আমি মসজিদে শুয়ে আছি। আমাকে ঘিরে
রয়েছে অনেকগুলো মুরুব্বি, তারমধ্যে একজন
আমার পাশে বসে বিড়বিড় করে কী যেন
আওড়াচ্ছেন। আমি উঠে বসলাম। আমাকে ঝাড়ফুঁক
করে আর পানিপড়া দিয়ে মুরুব্বি লোকটা আমায় বাসা
পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। অনুদের বাসায় এসে
সবাইকে দেখতে পেলাম কিন্তু অনুকে দেখতে
পেলাম না। আন্টিকে অনুর কথা বলতেই, আন্টি যা
বললেন তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত
ছিলাম না। আন্টি বললেন, আমি যাওয়ার ১৩ দিনের মাথায়
অনু আত্মহত্যা করে। অনুর কুকর্মের কারনে ওর
গর্ভে সন্তান জন্ম নেয়। অনেক চেষ্টা করেছি
কিন্তু মরার আগে মেয়েটা একবারের জন্যেও
ওই ছেলেটার নাম বলল না। কথাগুলো বলেই আন্টি
কাদতেঁ কাদতেঁ ঘরে চলে গেলেন। আমিও
জ্ঞানশূন্যের মতো ওখানেই পরে থাকলাম।
.
নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আরো দুইবছর
কাটিয়ে ফেলেছি। এই দুবছরে যে কী পরিমাণ
কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে, সেটা শুধু আমিই
জানি। আয়নায় নিজের চেহারার বদলে অনুর চেহারা
দেখতে পাই। পানি থেকে শুরু করে সব কিছুতেই
অনুকে দেখি। অনুর অট্টহাসি আমি সহ্য করতে
পারিনা। মনের মধ্যে আলাদা ভয়, আলাদা ভীতি কাজ
করে। অনেকবার মরার চেষ্টা করেছি পারিনি,
হয়তো অনুই আমাকে মরতে দেয়নি। অনু আমার
ভেতরটা কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। হ্যাঁ! এটাই আমার
পাপের শাস্তি। অনু আমার প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছে।
কিন্তু আমি এই প্রতিশোধ আর সহ্য করতে পারছিনা,
আমার যে মুক্তি চাই। মুক্তি....। বাকিটা জীবনের
প্রতিটি মূহুর্ত কাটে মুক্তির আশায়!!!
.
নিজ অপরাধের শাস্তি আমি ভুগছি দিবারাত্রি .....
তুমি নিচ্ছো প্রতিশোধ, কিন্তু আমি যে চাই
মুক্তি.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন