বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭

ঘড়িতে সময় দুপুর ২টা বেজে ৩০মিনিট কাজ থেকে বের হইছি উদ্দেশ্য দুপুরের খানাপিনার কাজটা বাড়িতেই করবো। তাই বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটতে শুরু করলাম হাটার গতি অন্য দিনের তুলনায় অনেকটা বেশি। তার অবশ্য একটাই কারণ পেটের ভিতরের ছুচুটা দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছে যা আমার আয়েত্তের বাইরে।
সূর্য মামাটা হাটার মাঝে বড় ধরণের একটা বেঘাত ঘটাচ্ছে কারণ আজ ওনি কেনো যেনো প্রচন্ড রেগে আছে।তাই ওনার তাপটাও অন্য দিনের তুলনায় অনেকটা বেশি। মনে হচ্ছে সকাল সকাল ওনার গফের সাথে ওনার বড় ধরণের ঝগড়া হইছে,,,,,
আচ্ছা সূর্যেরও কি গফ আছে,,,???? কি জানি ভাই আমার জানা নাই তবে ওনার তাপের পরিমাণ দেখে এটাই মনে হচ্ছে। গায়ের টিশার্টা প্রায় ঘামে চুপসে গেছে তারপরেও বাজার থেকে বের হতে পারলাম না তার কারণ আজ হাটবার,,,,
,
আশে পাশের গ্রামের যত দোকান পাট আছে সব আজ আমাদের বাজারে এসে জমা হইছে। প্রতি সপ্তাহে সোমবার এখানে হাট হয় প্রচুর ভিড়। আমার চোখের সামনে শুধু মানুষের মাথা আর তরকারির ব্যাগ দেখতে পাচ্ছি তাছাড়া কিচ্ছু না। হঠাৎ পকেটে থাকা আলেকজেন্ডার ভাইয়ের তৈরি মহা মূল্যবান আবিষ্কার ফোনটা বাজতে শুরু করলো। পকেটের ফোনটা বের করে দেখলাম আম্মুর ফোন,,,,,,
,
হ্যাঁ মা বলও,,,,??
,
বাসায় আসবি না,,,??
,
হুম আসছি রাস্তায়,,,,
,
আচ্ছা। আসার সময় একটা লাউ নিয়া আসিস বাবা,,,,
,
আচ্ছা,,,,
,
আম্মুর ফোন কেটে দিয়ে পাশের তরকারির দোকান গুলোতে লাউ খোজতে শুরু করলাম। আশেপাশে কোনো লাউ দেখতে পেলাম না তাই আরেকটু সামনে চলে আসলাম। হাটের ভিতরে আসতেই দেখলাম পাশে এক বয়স্ক চাচা একটা পাথির মাঝে কয়েকটা লাউ নিয়ে বসে আছে।আমি জীবনে কখনও লাউ কিনি নাই এটাই জীবনে প্রথম বার লাউ কিনা অন্য সব বাজার আমি করতে পারি তাতে কোনো সমস্যা নাই।
চাচার সামনে কোমরে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে লাউ গুলার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি লাউ কি দেখে কিনে ওজন নাকি সাইজ,,,,??
ভাবনা বাদ দিয়া একটা মাঝারি সাইজের লাউ হাতে নিলাম আর চাচারে জিগাইলাম,,,,,
,
চাচা লাউটা কত টাকা,,,??(এমন একটা ভাব নিছি যে আমি লাউ কিনাতে পারদর্শি)
,
বাজান তোমার লাইগা ৪০টাকা রাখমু এইডা,,,,,
,
বাজান কিছু কম হয় না,,,,??
,
নাহ বাজান বিসমিল্লাহ করমু তুমিই প্রথম,,,,,
,
আইচ্ছা বাজান ৪০টাকাই দিমু তবে একটা কথা বাজান,,,,
,
কি কথা বাজান,,,,
,
আসলে বাজান আমি জীবনে লাউ কিনি নাই লাউ কি দেইখা কিনে একটু কইবেন,,,??
,
এইডা কি কও বাজান লাউ কিনো নাই জীবনে,,,?
এত বড় পোলা হইয়া এইডা সম্ভব,,,??
,
হু বাজান সবই সম্ভব ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে কথা বুঝেন না কেরে,,,,,
,
হু বুঝছি। তুমি এই লাউডা নেও একদম কচি হইবো,,,,
,
বাজান কেমনে বুঝলেন এইডা কচি লাউ,,,,??
,
তুমি লাউটার নিচে নখ দিয়া চিমটি দিবা যদি দেখো নখটা হালকা চাপে ঢুইকা গেছে তো বুঝবা এইডাই কচি লাউ,,,,(বলেই চাচা একটা চিমটি দিলো লাউটাতে সাথে আমিও)
,
আইচ্ছা বাজান নেন টাকাটা আমি যাই,,,,,
,
টাকাটা দিয়ে চাচার ওখান থেকে লাউটা হাতে নিয়ে হাটতে শুরু করলাম। লাউয়ে চিমটি দিয়া মজাই লাগছে মন চাইতাছে আরেকটা দেই তবে লাউটার নিচটায় নখের দাগ পরে যাবে তাই আর চিমটি দিলাম না। কেমন জানি মায়া লাগছে লাউটার জন্য।
লাউটা হাতে নিয়ে সোজা বাসার দিকে হাটছি। বাজার পার করে বাসার রাস্তায় আসতেই এক ভদ্র লোক ডাক দিলো,,,,,,
,
বাজান লাউটা কত হইছে,,,,??
,
চাচা মাও ৪০টাকা,,,,
,
লোকটা একটা ভূবন ভুলানো হাসি দিয়া চলে গেলো। ওনার হাসি দেখে আমিও একটা বেক্কলের মত হাসি দিলাম। যদিও হাসিটা কৃএিম ছিলো অন্তর থেকে আসে নাই ওনি দিছে তাই আমিও দিলাম এই আর কি,,,,
আরেকটু সামনে আসতেই আরো জন জিগ্গেস করলো,,,,
,
কিরে হিমু লাউটা কত নিছে,,,??
,
মাএ ৪০ টাকা,,,,
,
কচিনি লাউটা,,,,??
,
হু যার থেকে কিনছি সে তো কইছে কচি,,,,,,
,
হুম মনে হয় কচিই হবে,,,,,
,
হু বাসায় যাই তারপর কাইটা দেখমুনে কচি নাকি,,,??
,
আবারও হাটতে শুরু করলাম আরেকটু সামনে আসতেই পাশের বাসার এক আঙ্কেল বললেন,,,,
,
কিরে হিমু লাউটা দেখি,,,,??
,
নেন দেখেন,,,,
,
ওনি লাউটা হাতে নিয়ে দুইটা চিমটি দিলেন আর বললেন,,,,
,
লাউটা তো কচি না তেমন তুই কি দেইখা কিনলি,,,??
,
আরে নাহ আঙ্কেল কচি লাউ একদম,,,,,,,
,
আরে না বেটা তেমন কচি না,,,,,
,
না হইলে বাকিটা পেটে গিয়া হইবোনে,,,,,
,
বলেই লাউটা হাতে নিয়া বাসায় চলে আসলাম। বাসায় ঢুকার পথে পাশের বাড়ির আন্টি ডাক দিলেন,,,,
,
কিরে হিমু লাউ কিনছোস,,,???
,
হু আন্টি,,,,
,
কত নিছে,,,??
,
৪০ টাকা নিছে,,,,
,
দেখি লাউটা,,,,,
,
লাউটা হাতে নিয়ে ওনিও কয়েটা চিমটি দিলেন লাউটার পাছায়। মেজাজটা এমন ঠান্ডা হইছিলো মন চাইছিলো লাউটা আবার ফেরত দিয়া আসতে। শালার এক লাউ কিনলাম নাকি অন্য কিছু আল্লাহ জানে,,,,,
বাসায় ১০টা মুরগি ইয়া বড় মাছ নিয়া আইলেও কেউ রাস্তায় এতবার জিগায় না যে কত হইছে আর শালার ৪০ টাকার এক লাউ কিনলাম মনে হইতাছে তাজমহল কিনছি।
আমার মনে হয় না তাজমহল কিনলেও কেউ এতবার দাম জিগাইবো লাউ কিন্না যতবার জিগাইছে।
পাখার নিচে বসে বসে এটা ভাবতে লাগলাম "স্বাদের লাউ তুই আমারে ফেমাস বানায় দিলি "।
,
,
বি : দ্রি : লাউ ফ্রিজে রাখা আছে কালকা রান্না হবে লাউ প্লাস চিংড়ি।লাউ চিংড়ি কিন্তু হেব্বি টেষ্ট,,,,
ঐ মিয়া না চাইয়া থাইকা মন চাইলে আহেন লাউ চিংড়ি আর গরম গরম ভাত খাই কি কন,,,,??

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন