রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭

বলা হয়নি ভালোবাসি

সময় সকাল ৯টা , বাসের জন্য
অপেক্ষা করছিলাম ধানমন্ডি ২৭
নাম্বার রোডে । গন্তব্য উত্তরা ,
সজল এর সাথে দেখা করতে যাবো ।
আমার অনেক ভালো ফ্রেন্ড ,
ভালোর থেকেও অধিক ভালো ।
অনেক দিন দেখা হয়না সজল এর
সাথে , আমি কখনো সজল এর সাথে
দেখা করতে এর আগে উত্তরা
আসিনি । সজলই সবসময় আমার
সাথে দেখা করতে ধানমন্ডিতে
আসতো । আমি ওকে বলেছি আমি
আজ ওর সাথে দেখা করতে উত্তরা
যাবো ।
আজ ওকে আমি একটা সারপ্রাইজ
দেবো , যা ওর সাথে পরিচয় এর ৩
বছরেও দেওয়া হয়নি । একটি রুমাল ,
আর রুমালে লেখা ''এই রূমালটি শুধু
আমাদের ভালোবাসার মাঝের ছোট
ছোট ভুল গুলো মুছে ফেলার জন্য ,
আমি যে তোমাকেই ভালোবাসি '' ।
আর রুমালের মধ্যে একটি তাজা লাল
গোলাপ মোড়ানো । যার প্রতিটা
পাপড়িতে লিখেছি '' তোমাকেই
ভালোবাসি '' ।
সজল উত্তরা তে একটি বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইন এ
পড়াশোনা করছে । অনেক ভালো
আবৃতি করতে পারে , আর ওর হাতের
আঁকা ছবি গুলো দেখলে মনে হয়
জীবন্ত প্রতিছবি । আর ও সবার
থেকে একটু অন্য রকম সব দিক
থেকে , কথা বার্তা , আচার-আচরন ,
পোশাক-আশাক , চলাফেরা । তবে
একটু বেশি লাজুক ।
প্রায় ২০ বিশ মিনিট অপেক্ষার পর
বাস আসলো , ভাগ্য ভাল ছিল তাই
একটি সিট ও পেয়ে গেলাম । উঠেই
সজলকে ফোন দিয়ে বললাম উত্তরা
হাউজ বিল্ডিং এর সামনে অপেক্ষা
করতে । রাস্তায় মোটামুটি ভালোই
জ্যাম আছে যেতে অনেক্ষন লেগে
যাবে , এই ফাকে ওর আর আমার
কিছু কথা বলি ,
আমি একটু ভিতু সবসময় , ঢাকাতে
চলাফেরা করার অনেক বড় একটি
সমস্যা রাস্তা পার হাওয়াতে । রোড
সিগন্যাল এ থাকলেও আমি রাস্তা
পার হতে ভয় পেতাম । এমনি আমি
একদিন ভার্সিটির সামনে দারিয়ে ,
রাস্তার ওপারে ভার্সিটি । জ্যাম নেই
কিন্তু কিছুক্ষণ পর পরই গাড়ি
যাচ্ছে , আমিও রাস্তা পারহতে
পারছিলাম না । এমন সময় উজ্জল
শ্যামবর্ণের , মাঝারি শরীর , আমার
থেকে ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা একটি ছেলে
এসে নামলো , কাধে ব্যাগ সাথে
আর্ট পেপার । চুল গুলো তার
ওগোছালো , চোখে সাদা চশমা ।
পঢ়নে জিন্স এবং সাদাকালো টি-
শার্ট । একবার আমার দিকে
তাকালো , আমিও তাকালাম
( চোখাচোখি ) । মুহূর্তেই ছেলেটি
রাস্তা ওপারে চলে গেল , আমি
তখনও দারিয়ে । এদিকে ক্লাস এর
সময় হয়ে যাচ্ছে , ১০ মিনিট পরেই
মেনেজমেন্ট টিউটোরিয়াল পরিক্ষা ।
বিষণ্ণ মনে দারিয়ে আছি , দেখলাম
ওই ছেলেটি ওপারে একটি ছেলের
সাথে কথা বলছে আর আমার দিকে
আড় চোখে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে ।
ছেলেটি কথা শেষ করে আবার রাস্তা
পার হয়ে এপারে চলে আসলো , মনে
হলো আমার দিকেই আসছে ।
ছেলেটি আমার কাছে এসেই
জিজ্ঞাসা করলো ,
ছেলেঃ- আপনাকে অনেক্ষন ধরে
খেয়াল করছি আপনি এখানে দারিয়ে
আছেন , কোন সমস্যা থাকলে বলেন

আমিঃ- না মানে তেমন কিছুই না ,
রাস্তা পার হতে পারছিনা ।
( ছেলেটি আমার কথা শুনে মনে হলো
অবাক )
ছেলেঃ- এই কথা ( হা হা করে হেসে )
,চলুন আমি আপনাকে সাহায্য করছি
আপনার কোন আপত্তি না থাকলে ।
আমিঃ- না আমি একাই পারবো ।
ছেলেঃ- পারবেন ? তাহলে আমি যাই ।
( মনে মনে ভাবলাম একাই পারবো
কথাটা বলে ভুলই করলাম )
আমিঃ- এই যে শুনুন , ঠিক আছে
আমাকে একটু হেল্প করুন ।
ছেলেঃ- ওকে চলুন । আর আর আপনি
এতো রাস্তা পার হতে ভয় পান
কেন ? ফিউচারে অনেক সমস্যায়
পরবেন । এখানে কোন সাব্জেক্ট এ
পড়ছেন ? ( জিজ্ঞাসা করলো )
আমি কিছুই বললাম না , রাস্তা পার
হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ক্লাস
এর আর ৩ মিনিট আছে । আমি
উনাকে বললাম , ক্লাস এর দেরি হয়ে
গেছে আমি যায় । এই বলে আমি
ভার্সিটিতে ঢুকে গেলাম । ( এর পরে
ছেলেটার রি-একশন কি ছিল জানিনা,
কারন থাঙ্কস ও বলিনি )
বাস বনানী চলে এসেছে , বনানী বাস
স্ট্যান্ড থেকে আমার এক ক্লাস
ফ্রেন্ড জিসান উঠলো । ওর সাথে
দেখা হয়ে ভালোই হলো , কারন
জিসান এরই বাল্য কালের বন্ধু
সজল । জিসান এর মাধ্যমেই সজল
এর সম্পর্কে জানা । জিসান আমাকে
বাসের মধ্যে দেখেই জিজ্ঞাসা
করলো -
জিসানঃ কিরে তুই বাসে , কোথায়
যাবি ?
আমিঃ আবার কোথায় !! সজলের
সাথে দেখা করতে ।
জিসানঃ (অবাক হয়ে) কিরে তুই
সজল এর সাথে দেখা করতে যাবি
মানে !! এর আগে এমন তো কখনো
শুনিনি ।
আমিঃ হুম , শুনিছনি ; আজ শুনলি ।
আর আজকেই প্রথম ওর সাথে দেখা
করতে আমি নিজ থেকে উত্তরা
যাচ্ছি ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার
জন্য । তুই কোথায় যাবি ?
জিসানঃ তাই নাকি কি সারপ্রাইজ ,
আর আমি উত্তরা ল্যাব এইড
হসপিটাল এ যাবো , একজন
রিলেটিভ ওখানে এডমিট হয়েছে । তুই
কোথায় নামবি ?
আমিঃ ওহ । আছে সারপ্রাইজ , এখন
বলা যাবে না । সজল কে বলেছি
হাউজ বিল্ডিং এর সামনে আসতে ,
ওখানেই নামবো ।
জিসানঃ ওহ ঠিক আছে এখন শুনবো
না । আমিও হাউজ বিল্ডিং এর
সামনে নামবো ।
আমিঃ ঠিক আছে তাহলে একসাথে
নামা যাবে ।
আমরা খুটিনাটি বলছি আর বাস বনানী
ফ্লাই ওভার পার হয়ে আবার
উত্তরার দিকে চলতে লাগলো ...
রাস্তা পারাপারের ওই ঘটনার ৪ দিন
পর ...
ওই দিন কোন রকম রাস্তা পার হয়ে
ক্লাস গেলাম , একটা ক্লাস করেই
লাইবেরি তে গিয়েছিলাম । লাইবেরিতে
ঢুকেই জিসান এর সাথে দেখা হলো -
আমিঃ কিরে জিসান , ক্লাস এ
দেখলাম না কেন ? কোথায় ছিলি ?
জিসানঃ হুম , প্রথম ক্লাস টা করতে
পারলাম না । বাইরের একটা ফ্রেন্ড
এসেছে ওকে ভার্সিটি ঘুরিয়ে
দেখাচ্ছিলাম , ও কিছু ছবি আঁকালো
আমাদের ভার্সিটির ।
আমিঃ ওহ ! পরের ক্লাস করবি ?
করলে চল ।
জিসানঃ না , আজ কে আর কোন
ক্লাস করবো না । তাছাড়া আজ আর
কোন ইম্পরট্যান্ট ক্লাস নেই ।
আমিঃ তা ঠিক বলেছিস । পরের
ক্লাসটা না করলেও চলবে ।
জিসানঃ হ্যাঁ ! তাহলে চল বাইরে যায়
। আমার ফ্রেন্ড বাইরে ছবি
আঁকাচ্ছে চল গিয়ে দেখি । তুই তো
ছবি আকানো অনেক পছন্দ করিস ।
আমিঃ তাহলে চল যায় , দেখি তোর
ফ্রেন্ড কেমন ছবি আঁকে ।
বাইরে এসে দেখলাম একটি ছেলে
ছবি আঁকাচ্ছে , কয়েকজন তাকে ভিড়
করে দারিয়ে আছে ।
জিসানঃ সজল এদিকে দেখ , আমার
ক্লাস ফ্রেন্ড সজনী । তোর ছবি
আঁকানো দেখার জন্য ক্লাস না করে
চলে এলো ।
( আমি ছেলেটাকে দেখে অবাক , মনে
হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি )
সজলঃ হাই ( আমার দিকে তাকিয়ে ) ।
আমিঃ হাই । আপনার ছবি আঁকানো
দেখতে এলাম , জিসান বলছিল
আপনি ভালো ছবি আকান ।
সজলঃ ধন্নবাদ । একটু ভালো
আকার চেষ্টা করি এই আরকি একটু ।
( হাসি মুখে )
আমিঃ আপনাকে পরিচিত মনে হচ্ছে ,
কোথায় যেন দেখেছি ।
সজলঃ হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন , আপনি
অনেক ভিতু , রাস্তা পার হতে পারেন
না । এবার বুঝুন কোথায় দেখেছেন ?
আমিঃ ওহ হ্যাঁ মনে পড়ছে , ওই দিন
জন্য অনেক ধন্নবাদ আপনাকে ।
আজ ধন্নবাদ দিচ্ছেন বলেই হা হা
করে হেসে দিল সজল , আর সেই দিন
থেকেই সজল আমার অনেক ভালো
বন্ধু , শুধু বন্ধু না আমার একটি
আত্তা । আর বন্ধুত্বের মাঝে নীবির
সম্পর্ক ভালোবাসা যা আজ
পর্যন্ত বলা হয়নি একজন
আরেকজন কে । কিন্তু আমরা
দুজনেই জানি আমরা একজন আরেক
জন কে অনেক ভালোবাসি ।
বাস হাউজ বিল্ডিং এ এসে থামলো ,
আমি আর জিসান বাস থেকে নেমেই
সজল কে ফোন দিলাম ।
আমিঃ কোথায় তুমি ? আমি হাউজ
বিল্ডিং এর সামনে এসে গেছি ।
সজলঃ হাউজ বিল্ডিং এর এর
অপজিট সাইট এ , তুমি এপারে চলে
আসো । পার হতে পারবে তো ?
( হাসতে হাসতে ) ।
আমিঃ কি যে বলো , আমি এখন
অনেক সাহসী , পারবো । ( জিসান
আছে আমার সাথে এটা ওকে বললাম
না )
এপার থেকেই ওকে দেখতে পেলাম ।
রীতিমত আমি অবাক সজল আজ
পাঞ্জাবি পরেছে জা কিনা ওর
সবচেয়ে বিরক্তিকর পোশাক । তবে
পাঞ্জাবি পড়ে যে ওকে এতো
ভালো লাগছিল ও হয়তো এটা
জানেনা । আমি রাস্তা পার হচ্ছি ,
আজ গাড়ি গুলো যেন একটু বেশিই
জোরে চালাচ্ছে । রাস্তার প্রথম
অর্ধেক পার হলাম । শেষ অর্ধেক
টুকু পার হচ্ছি ... কেমন যেন ভয় ভয়
কাল করছে মনের ভিতর । ও যদি
আমার ভালোবাসার রুমাল , গোলাপ
ফিরিয়ে দেয় । হটাত মাথা ঘুরে
উঠলো , রাস্তার মাঝ খানে দারিয়ে
পড়লাম । এটা দেখে সজল আমার
দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো । পিছন
দিকে দেখলাম একটি গাড়ি দ্রত
আমার দিকে আসছে ... .
.
.
.
যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন
আমাকে সবাই মিলে একটি গারিতে
তুলতে লাগলো হসপিটাল এ নেওয়ার
জন্য । আমি তখন চিৎকার করে
সজল কে ডাকতে থাকলাম । কিন্তু
ওই দিন আর সজল আমার ডাকে
সারা দেয়নি , আমাকে বাচাতে গিয়ে
ওর নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে ... :

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন