সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭

না_বলা_কথা ..

এই সেজুতি শোন,,,
সেজুতি : কি হল।কি বলবি তাড়াতাড়ি বল আমার আবার ক্লাস আছে।
আমি : না, এমনি।যা তোর তো আবার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
.
.
বলি বলি করে আজ ২ বছর হয়ে গেল। আজ ও বলা হল না যে আমি ওকে ভালবাসি। আমি মাহবুব।এবার ভার্সিটি ৩য় বর্ষের ছাত্র। আর সেজুতি ও ৩য় বর্ষের কিন্তু আমদের সাবজেক্ট ভিন্ন।ওর সাথে আমার পরিচয় বাসে।আমরা একই এলাকার বাসিন্দা।তারপর থেকেসবসময় একসাথে যাওয়া আসা করতাম।এভাবে চলতে চলতে কবে যে ওকে ভালবেসে ফেলেছি তা জানি না।কিন্তু কখন ও বলতে পারি নি শুধু মাত্র বন্ধুত্তের খাতিরে।এইরকম চিন্তা করতে করতে আমিও আমার ক্লাসে চলে আসলাম।ক্লাস শেষে আবার দেখা
.
.
সেজুতি : কিরে,। তুই না বললি, কি জানো বলবি বল?
আমি : না,তেমন কিছু না।চল ক্যান্টিনে যাই।
সেজুতি : কিন্তু তুই না বললে আজ আর যাচ্ছি না।
আমি : আহ!! ওকে চল।তারপর বলব।
সেজুতি : চল।
.
আমাদের ক্লাস থেকে একটু খানি দূরেই ক্যান্টিন। ভাবছি আজ ওকে বলবই বলব।যা আছে কপালে।(ভাবতে ভাবতে, হঠাৎ...)
.
সেজুতি : কিরে বসিয়ে রাখবি?
আমি : হ্যা।ও তাইতো। এই মামা ২টা কফি দিওতো। তুই কি আর কিছু খাবি?
সেজুতি : না।আগে বল কি বলতে চাইছিলি।নাহলে আমি খাব না।
আমি : ওহ কি মুশকিল। আচ্ছা খেতে খেতে বলি।
সেজুতি : হুম।
.
এর মধ্যে ২ কাপ কফি এসে পড়েছে। আমি চুমুক দিতেই চিন্তা করছি।না আজ ওকে বলা যাবে না।আর না হয় অন্য দিন বলব।
.
সেজুতি : তা,আজ কি ক্লাস হল।
আমি : হুম।(হঠাৎ প্রসংগ বদলে যাওয়ায় আমি আর এগুলাম না)
না।আজ তো ইংরেজি ক্লাস ছিল।তোর না আজ বিকেলে আর একটা ক্লাস আছে।
সেজুতি : না রে,আজ আর ক্লাস করব না।আমকে কিন্তু আজ বাড়ি পৌছে দিতে হবে।
আমি : আচ্ছা তা দিব।
.
.
বিকেল ৩ টায় ক্যাম্পাস হতে বাসে উঠলাম।ও আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।আর বাতাসে ওর মাথার চুলগুলা আমার মুখের ওপর এসে পরছিল।আমি মনে মনে বলছিলাম যদি ও এমনিভাবে আমার কাধে সারাজীবন শুয়ে থাকত।এমন সময় বাসের এক ঝাকিতে সেজুতির ঘুম ভেঙে গেল।
.
.
সেজুতি : কিরে আমার স্টেশন তো মিস করিয়ে দিলি।বলি ঘুমিয়ে কি ছিলাম আমি নাকি তুই।(মুচকি হেসে.)
আমি : তা তুই যাই মনে করিস।
সেজুতি : হয়েছে হয়েছে।এখন নাম।আমকে এখন এগিয়ে দিয়ে আসতে হবে।
আমি : জো হুকুম মহারাণী (মজা করে)
সেজুতি : কথা না বলে আপনার উপর বর্তিত দায়ীত্ত পালন করুন।(রিট্রান করে)
.
একসাথে হাত ধরে হাটতে হাটতে ওর বাড়ির সামনে এসে পড়লাম। ও আমকে বিদায় জানিয়ে এমন সময়।
.
সেজুতি : ওহ হ!!! তোর কথাটা তো শোনা হল না।
আমি : ওটা পরে বলা যাবে।এখন বাই বাই।
সেজুতি : ওকে বাই।সি ইউ টুমরো...
.
.
আমি এখন একলা একলা হাটছি।ওকে কি কখন ও আমার মনের কথা বলতে পারব না।হঠাৎ ক্রি ক্রি শব্দ।
রিকশাচালক : কি মিয়া দেইখা যাইতে পারো না।
আমি কিছু বললাম না।বাড়ি এসে পরেছি।বেল টিপেই ঘরে ঢুকে শুয়ে পরলাম সোফার উপর.....
.
.
সোফায় শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি নিজেও জানি না।ঘুম থেকে উঠে দেখি রাত ৮ টা বাজে।ওফ ফ,,,!আমার তো আবার আবিরের বাসায় যাবার কথা ছিল।আজ ভার্সিটির ম্যাম একটা নোট সংগ্রহ করতে বলেছে।সেদিন আর আবিরের বাড়ি যাওয়া হল না।পরদিন সকাল ৯ টায় ভার্সিটিরর উদ্দেশ্য রওনা হলাম।আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম আজ যদি ও কিছু জিজ্ঞেস করে বলেই ফেলব।এই ভাবনা করতে ভার্সিটি এসে পড়লাম।হঠাৎ...
.
.
ড্রাইভার : মামা, নামবেন না।ভার্সিটিত তো আইসা পরছি।
আমি : ও হ্যা।( ৫ টাকার একটা নোট দিয়ে নেমে পড়লাম)
.
.
প্রতিদিনই সেজুতির সাথে আমার গেটে দেখা হত।হয়ত আমি এসে দাঁড়িয়ে থাকতাম নয়তো ও এসে আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো। কিন্তু আজ ওকে কোথাও দেখতে পেলাম না।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে
.
.
আমি : নাহ,টাইম তো ঠিকই আছে।কিন্তু সেজুতি কই।আর এদিকে আমার ক্লাস শুরু হবার সময় হয়ে এল।
.
প্রায় ১ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলাম সেজুতির জন্য।কিন্তু ওর দেখা মিলল না।নাহ,ওত কখন এমন করে না।যেদিন না আসবে তার আগে তো আমাকে বলেই রাখে।আজ আবার কি হল।নাকি ও আমার মনের কথা বুঝতে পেরে গেছে। তাই আসে নি,,,একরকম আনমনা হয়ে ক্লাসে চলে এলাম।সারা ক্লাস শুধু ওর কথা চিন্তা করলাম।না,ওকে গিয়ে sorry বলে আসবো। ক্লাস শেষে ওর ডিপার্টমেন্ট এর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ওদের ক্লাস শেষ।কিন্তু সেজুতি বের হল না।সাথে সাথে দেখা হল রিতুরর সাথে।(রিতু সেজুতির friend)
আমি : এই রিতু??
রিতু : ও মাহবুব ভাইয়া।কেমন আছেন?
আমি : বেশি ভালো না।সেজুতি এসেছে??
রিতু : না, ওত আজ আসে নি।কেন কোনো সমস্যা মাহবুব ভাই।
আমি : না,এমনি,আচ্ছা তুমি যাও।
.
.
ওহ! বড্ড ভুল হয়ে গেছে ওকে এভাবে বলে।এখন কি মনে করবে।কিন্তু এছাড়া যে আমার কিছু করার নেই।ওর মোবাইল নাম্বার থাকলে ও কল করার সাহস পেলাম না। নাকি ওর বাড়ি গিয়ে মাফ চেয়ে আসব।আমাদের ২ বছরের friendship. শুধু এই কারনেই ওকে আজও বলা হয়নি।খুব একটা মন খারাপ হল না।কেননা দোষ টা আমারই ছিল।কেন যে বলতে গেলাম।আর আমিতো ওকে ডাইরেক্ট ভালবাসি বলি নি।বাসে করে বাড়ি এসে সোফায় বসে রইলাম।ফোন করব কিনা চিন্তা করছি।নাহ,করেই দেখি,
ফোন করেই দেখি মোবাইল বন্ধ।আমি আর কোন কিছুই করলাম না।এভাবে ২ দিন চলে গেল।হঠাৎ একদিন বিকেলে বাড়ির বাইরে বের হয়েছি ঘুরতে।বেরিয়ে দেখি সেজুতি আমার গেটের সামনে।আর ওর হাতে একটা লাকেস।আমি থ ম হয়ে।
.
.
আমি : কিরে তুই।তুই এখানে?
সেজুতি :(আমার হাত ধরে) চল যাই।
আমি : যাই মানে।কোথায়????
সেজুতি : কাজি অফিস।
(আমি ভড়কে গেলাম।এ দেখি হিতে বিপরীত)
আমি : দাড়া, দাড়া।তার আগে বল এ দুইদিন কোথায় ছিলি।
সেজুতি : বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
আমি : ভা ভালই তো। (বুকে কষ্ট চেপে)
সেজুতি : তুই চাস আমি অন্য কারো ঘর করি।
আমি : আমার চাওয়া না চাওয়ায় কি আসে যায়। (রাগের ভাব দেখিয়ে)
সেজুতি : ওকে তাই হবে।
.
.
ও আমার হাত ছেড়ে লাকেস টা নিয়ে রাস্তা বরাবর হাটা শুরু করল।হঠাৎ.....এক ট্রাক এসে ওর নরম দেহটাকে সজোরে ধাক্কা মেরে রাস্তার সাথে মিশিয়ে দিল।কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি হতভম্ভ হয়ে দারিয়ে রইলাম।আমার চোখ দিয়ে গড় গড় করে পানি গড়িয়ে পড়ল। আমি চিৎকার দিয়ে বললাম,,,
সেজুতি I love you...I love you.
কিন্তু এর কোনো পতিউত্তর আমি পেলাম না।শুধু ওর রক্তাক্ত মুখটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।যেন বলছে আমি তোমার এই কথাটাই একবার শুনতে চেয়েছিলাম।
.
.
হঠাৎ....আমার ড্রাইভারের গলা।
স্যার নামেন বাসায় আইসা পরছি।এতক্ষণ আমার জ্ঞান এল।আমি এখন ঢাকায় বিজনেস করি।আমার মা আমকে অনেক সাধাসাধি করেও আমাকে বিয়ে দিতে পারে নি।অতীতের সেই সৃতি মনে করতেই চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ল।......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন