শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭

"পহেলা বৈশাখ এবং মেয়েটি"

মেয়েটি আজ ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! আজকের এই দিনটি মেয়েটির জীবনের একটি কালো অধ্যায়। মন থেকে চাইলেও দিনটির কথা সে মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। আজ যেন খুব বেশিই মনে পড়ছে সেই দিনটির কথা। 
.
মেয়েটির জন্ম হয়েছিল একটি আধুনিক পরিবারে। তাই ছোট থেকেই সে একটু বেশিই আধুনিক। নিজের সৌন্দর্য্যও আল্লাহ তায়ালা তাকে কম দেননি। মেয়েটি নিজের সৌন্দর্য্যকে প্রকাশ করতে সর্বদা মশগুল থাকতো।
.
মেয়েটি নিজেকে সাজিয়ে রাখতে খুবই পছন্দ করতো। সাজুগুজু করে যখন বাইরে বের হতো, যুবক ছেলেদের লোলুপ দৃষ্টি সে ইনজয় করতো বেশ। এটাকে সে তার একটা ক্রেডিট মনে করতো। মেয়েটির একটি বয়ফ্রেন্ডও ছিলো। দুজন দুজনকে খুবই ভালবাসতো।
.
দিনটি ছিলো পহেলা বৈশাখ। বাঙ্গালী রমনীরা যে দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। বৈশাখী পোশাক কিনে দিন গুনতে থাকে। কখন তারা দিজেদেরকে বৈশাখী পোশাকে সাজিয়ে উৎসবে মেতে উঠবে..! আমি যে মেয়েটির কথা বলছি, সেই মেয়েটিও তার ব্যতিক্রম ছিলোনা। 
.
সেদিনও মেয়েটি নিজেকে সাজিয়েছিলো বেশ। বাসন্তী রঙের শাড়ি, কপালে টিপ, খোপায় ফুল.., আর গালে আলপনাও এঁকেছিলো! মেয়েটিকে সত্যিই চমৎকার লাগছিলো সেদিন।
.
মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড দেখে বলেছিলো... "নতুন করে তোমার প্রেমে পড়তে মন চাচ্ছে! এত সুন্দর তুমি..!" মেয়েটি মুচকি হেসে বলেছিলো... "পড়তে কে নিষেধ করেছে..!?" দুজনে মিলে সারাদিন ঘুরাঘুরি, ফুচকা খাওয়া, মেলায় গিয়ে এটা ওটা কেন, সবই চলছিলো ভালই।
.
বিকেল হয়ে এলো, প্রায় সন্ধ্যা সন্ধ্যা ভাব। মেয়েটি এবং মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড তখন একটি ওপেন কনসার্টের দর্শক। গান ও বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে সব দর্শকরাই যেন মাতোয়ারা। মেয়েদের মধ্যে ছেলেরা, ছেলেদের মধ্যে মেয়েরা। ঠিক তখনই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়..!
.
হ্যাঁ মেয়েটির শরীরের প্রায় অর্ধেক শাড়ি খুলে গেছে..! কে যেন মেয়েটির শড়ির আচঁল ধরে টান দিলো! কে করলো এমন যঘন্য কাজটি..!? নিশ্চয়ই সে মানুষ নামের জানোয়ার, পশু! মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড দ্রুত তাকে যতটুকু সম্ভব হেফাজত করে বাসায় পৌছে দিলো।
.
মেয়েটি সেদিন সারারাত কেঁদেছিলো। তারপরের দিন একটি এসএমএস তাকে আত্মহত্যার প্রায় কাছাকাছি নিয়ে গেল..! তার এক বান্ধবী এসএমএস করেছিলো... "তোর গতকালকের ঘটনাটা একটা পত্রিকায় ছবিসহ ফলাও করে প্রচার করেছে।"
.
মেয়েটি অনলাইনে পত্রিকাটির খবর দেখতেই সারা শরীর যেন হীম হয়ে গেল। যদিও মেয়েটিকে চেনা যাচ্ছেনা! আমাদের দেশের মিডিয়া কেমন সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এবার মেয়েটি ভাবতে থাকে... "আমি সবাইকে এই মুখ দেখাবো কি করে..!? সজিব (বয়ফ্রেন্ড) ও তো এখন আমাকে ঘৃনা করবে..! আমি তো নষ্ট একটি মেয়ে..! এই মুখ দেখানোর আগে নিজেকে শেষ করে দিবো..!"
.
ঠিক এমন সময় মেয়েটির বয়ফ্রেন্ডের ফোন। মেয়েটি রিসিভ করেই কাঁদতে লাগলো। তারপর বললো... "আমি তো নষ্ট হয়ে গেছি সজিব! আমাকে আর ফোন দিওনা।"
উত্তরে মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড বললো... "শোনো, তোমার কিচ্ছু হয়নি। গতকাল যা হয়ে গেছে একদম ভুলে যাও। মনে করো এটা একটা এক্সিডেন্ট! আমি দেখেছি পত্রিকাটি। এখন থেকেই নিজেকে শুধরে নাও। এখনতো বুঝতে পেরেছো তোমাকে আমি কেন বলতাম, পর্দা করে চলতে!? তুমি তো আমার কথা কানেই তুলতেনা। এখন যা হবার হয়ে গেছে। মনে করো এটা তোমার জন্য একটি শিক্ষা। জানি ভুলতে কষ্ট হবে। তারপরও ভুলে যেতে হবে। আমি তোমাকে ভালবাসি। আর ভালবেসে যাবো সারাজীবন।"
.
মেয়েটি তার ভুল বুঝতে পেরেছিলো। তারপর থেকে মেয়েটি নিজেকে একদম বদলে ফেললো। নতুন ভাবে চলতে শুরু করে সে। এখন সে পরহেজগার একটি মেয়ে। পর্দা ছাড়া কোথাও বের হয়না। আল্লাহ হয়তো তাকে সঠিক বুঝ দান করেছেন। 
.
আজ সেই পহেলা বৈশাখ। গতবছরই ঘটেছিলো ঘটনাটি। তাই আজ সেই দিনটির কথা মনে পড়ছে খুব। তাই সে বসে বসে কাঁদছে। মেয়েটি প্রতিজ্ঞা করেছে, সে আর কোনোদিন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবেনা।
...
মনে রাখবেন... ভুল একজনের, শিক্ষা সবার। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন