শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭

হিয়ার মাঝে তুমি

হিয়ার সাথে আমার পরিচয় হয় ফেসবুকেই। হিয়াই একমাত্র মেয়ে যার সাথে কথা বললে কখোনই বিরক্ত হতাম না। এর কারণও আছে। মেয়েরা সাধারণত ইগো বা ভাব নিয়ে থাকে। আর ফেসবুকে তার হাজার গুণ। হোক পেত্নী বা পরী। কিন্তু হিয়ার মধ্যে সেটা ছিলোনা। কথা বলেই বুঝতাম। সারাদিন ফোনের ডাটা চালু থাকতো শুধু হিয়ার সাথে কথা বলার জন্য। হিয়া খুব বেশী অনলাইনে থাকতোনা। যেটুকু থাকতো সেটুকুই কথা হতো। শেয়ারিং কেয়ারিং সবই হতো। আমার চৌদ্দ গোষ্টীর খবর হিয়া জানতো আর হিয়ারও অনেক কিছু।
মেয়েদের দেখলেই আমার গা জ্বলে কিন্তু হিয়াই একমাত্র মেয়ে ছিলো যে সারাদিন হিয়ার টাইমলাইনে ঘুরে বেড়াতাম। কখনোই খারাপ লাগতোনা।
.
আমি চরিত্রহীন মানুষ! তাই কথায় কথায় প্রপোজ করতাম। কিন্তু টানা দুই বছরেও মেয়েটাকে রাজি করাতে পারিনি। এমন না যে হিয়া আমার সাথে ঢং করেছে। হিয়ার একটাই কথা ছিলো কোনরকম সম্পর্কে কখনো জড়াবেনা। বারাক ওবামার ছেলে প্রপোজ করলেও না! আর সেখানে আমি কি! আমাকে বন্ধু + বড় ভাইয়ের মতো দেখতো আর আমি শুধু প্রপোজ করতাম। এমন কোন দিন ছিলোনা যে আমি দিনে কয়েকবার প্রপোজ না করেছি। এরও কারণ আছে। আমার ইচ্ছে ছিলো আমি কোনদিনও বিয়ে করবোনা। তা চুর হই আর ডাকাত হই। সেহেতু ফাইজলামুই করতাম। একটা অদ্ভুত বিষয় হলো হিয়া আমাকে কোনদিন ছবি দেয়নি। আমিও যে খুব পীড়াপীড়ি করেছিলাম তা'ও না।
.
কিন্তু হাত পা নাক কি? নখের ছবি দেয়নি । শুধু বলতো কথা বললে বলবেন নাহলে নাই কিন্তু পিক আমি দিবোনা। এ নিয়ে অনেক রাগারাগি হতো কিন্তু কথা ঠিকই চলতো। একদিন কথা নাহলে মনে হতো কিছু একটা নেই আমার মাঝে। সত্যি বলতে আমি আলসে একটা ছেলে। হিয়া আলসে ছেলেদের পছন্দ করেনা তাই বাবার কাজে হাত দিতাম মাঝে মাঝে। কিন্তু ঘটনা উল্টো ঘটলো। কিছু দিন বাবার সাথে থাকার পর বাবা ভাবলেন আমাকে বিয়ে করাবেন! আমি হাজারটা অজুহাত দেখালাম যে বিয়ে করা ভালনা। বাবা শুধু একটি কথাই বললেন, মানলাম তোর সব কথা কিন্তু দেখ যদি আমি তোর মাকে বিয়ে না করতাম তাহলে তুই আজ পৃথিবীতে আসতি না।
.
কে শুনে কার কথা? আমি একেরপর পর এক বিয়ে ভেঙ্গেই যাচ্ছি। সত্যি কথা হলো যে বিয়ে ভাঙ্গা খুবই সোজা। একটা ফাউল কথা কানে ঢুকিয়ে দিলেই হয়। এসব আমি হিয়াকে বলতাম আর হিয়া হাসতো আর বলতো, লাভ কি? একদিন ঠিকই বিয়ে করতে হবে আজ নাহয় কাল। আমিও হেসে উড়িয়ে দিতাম। হঠাৎ একদিন দেখি হিয়ার আইডি ডিয়েক্টিভ! একদিন দুদিন না পুরো এক মাস হয়ে গেলো আইডি আর এক্টিভ করছেনা! আমার কাছে ফোন নাম্বার, বাড়ির ঠিকানা ইত্যাদি কিছুই ছিলোনা। রাগে দুঃখে আমিও আইডি ডিয়েক্টিভ করে দিয়েছিলাম । সকাল বিকেল রাত সারাক্ষণই হিয়ার কথা মনে পরতো আর মন খারাপ হতো। আমি ভাবতেও পারিনি যে আমারো একদিন কোন মেয়ের জন্য মন খারাপ হবে! 
.
বারাক ওবামা বলেছিলেন, সবাইকে বিশ্বাস করা ভয়ংকর কিন্তু কাউকেই বিশ্বাস না করা আরো বেশী ভয়ংকর। সত্যি কথা বলতে আমার মেয়েদের প্রতি একদম বিশ্বাস হয়না। তবে মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে কারো কাছে নিজেকে আত্মসমার্পণ করি। কেউ আমার প্রতি একটু বেশি অধিকার দেখাক। আরো কত কি! বয়স দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিৎ। সব কিছু মিলিয়ে এবারে আর বিয়েতে না করতে পারলাম না। পাত্রী কে সেটা দেখার মর্জি আমার নেই। বাধ্যতামূলক তাই করছি এখন নাহলে করতাম না। এই করো সেই করো উফ অসহ্য। 

ফুলে ফুলে সারা খাট সহ রুমটাই সাজানো। লাইট জ্বলছে। আমি খাটের পাশের চেয়ারে বসে আছি। চেয়ারটা খুব ছোট। ঠিক আরাম করে বসতে পারছিনা। ইচ্ছে হচ্ছে খাটে গিয়ে ঘুমুতে না পারি একটু বসতে। আমার খুব লজ্জা হচ্ছে। মানুষ কেন যে বলে লজ্জা নারীর ভূষণ! লজ্জা ছেলেদেরও হয়। তা আজকে হারে হারে বুঝতে পারছি। খাটে একজন বিরাট ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। অনেক্ষণ হয়ে গেলো বসে আছি। ভাবছি কিছু একটা বলা দরকার। হিয়ার কথা দিয়েই কথোপকথন শুরু করলাম। নববধূ মিটমিটিয়ে হাসছে তা বুঝতে পারছি। কিন্তু কারণটা ঠিক মাথায় ঢুকছেনা। বোকার মতো কিছুক্ষণ বসে থাকলাম তারপর রুমের সোফায় শুলাম!
.
রুমে সাধারণত সোফা থাকেনা কিন্তু আমার রুমে রাখি। খাটের থেকে আমার সোফাতে ঘুমুতেই বেশী ভাল লাগে। আমি অনেক্ষণ বকবক করলাম কিন্তু নববধূ কিছুই বললোনা। যার জন্য এসে সোফায় শুলাম। পাঞ্জাবীতে ঠিক ভাল লাগছেনা আমার। আর ঘুমুতে পারবো কিনা কে জানে। পরক্ষণে মনে হলো নববধূরও নিশ্চয় এরকম লাগছে। ভাবছিলাম বলবো কিন্তু কেমন হবে ভেবে আর বললাম না। কিছুক্ষণ পর ঘোমটা তুলে হাসছে। ঠিক হাসছে বললে ভুল হবে। মনে মনে হাসি পেলে যেরকম হয় আরকি। হাত দিয়ে ইশারা করে বললো এদিকে আসেন। আমি কাছে গিয়ে বললাম কী? মুচকি হাসলো কিছু বললোনা। তারপর বাম হাত দেখাল। হাতে শুধু মেহেদী দেখতে পেলাম।
.
আমি বললাম কী? নববধূ ইশারা করে বললো আরো ভাল করে দেখতে। আমি তারপর ভাল করে খেয়াল করলাম। দেখলাম হাতে দুটো তিল। অবাক হলাম, অনেক অবাক হলাম। বলে বুঝানো যাবেনা! হিয়া বলেছিলো হিয়ার বাম হাতে দুটো তিল আছে। আমি বধূর চোখে তাকালাম। বধূ মাথা নাড়ালো। তারমানে বধূই আমার হিয়া। আমি প্রথমেই হিয়ার কথাটা বলে দিয়েছিলাম কারণ পরে যেন কোন প্রশ্নের মুখে না পরি। এখন আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা। হিয়াকে নিয়ে নাচবো না কি করবো! অতঃপর আমি কবি হয়ে গেলাম। মুখ দিয়ে ফুল ঝড়ছে। আমি গল্প বলছি সত্য মিথ্যা বানিয়ে আর হিয়া শুনছে। ভালই তো লাগছে খারাপ কি? এরপর কি হলো? সেটা তো বলা যাবেনা।
.
পিচ্চি বয়সের মেয়ে ছেলেরাও যখন প্রেম করে তখন তারাও মনের মধ্যে একটা ছোট্ট সংসার এঁকে রাখে। আর যাদের ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে গিয়েছে তারা কি করে একবার ভাবুন! হিয়ার সাথে থাকতে থাকতে একটা ব্যাপার খুব করে বুঝে গিয়েছি। সম্মান দিয়ে সম্মান অর্জন করতে হয়। সেটা যার সাথেই হোক। একটা সংসার সাজাতে সব কিছুরই প্রয়োজন হয় একটু একটু। স্বাদযুক্ত কোন রান্না করলে যেমন সব কিছুরই একটু একটু প্রয়োজন পরে তেমনি সংসারেও সব কিছু সহ টাকাও দরকার, হ্যাঁ টাকাও দরকার। তবে ইত্যাদি ইত্যাদির অভাব হলে হয়তো মানিয়ে নেয়া যায় তবে ভালবাসার অভাব পরলে কোনভাবেই মানিয়ে নেয়া যায়না। কোনভাবেই না।
.
সকাল সকাল ঘুম থেকে আগে হিয়া উঠে। তারপর আমাকে ডাকে। এরপরে খাটের পাশে ঘোরাঘুরি করবে। এটা এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। মুখে তো আর বলতে পারেনা আমি ঘুম থেকে উঠার পরে আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো। শত হোক মেয়ে মানুষ! আজও তাই। আমি মুচকি মুচকি হাসছি। এমন।ভান করছি যে আমি গভীর ঘুমে। তাই বারবার ডেকে বলছে, শুনো আমি কিন্তু বের হলাম। আমি আর হিয়াকে অপেক্ষা করাতে পারছিনা। উঠে জড়িয়ে ধরলাম। নাকমুখ বাঁকা করে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। আমি বললাম, কি ব্যাপার চোখে এত আগুণ দেখাচ্ছে কেন? জ্বর-টর এলো নাকি? ভেংচি দিয়ে বললো, এত দেরি কেন উঠো কেন? আবার পিরিত দেখাচ্ছো হুহ....... ! 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন