বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭

মেয়েটি আমাকে দেখে মুসকি একটা হাঁসি দিল হাঁসিটার সাথে আমিও যেন অন্য ভুবনে হারিয়ে গেছি অথবা হারাইনি। তবে তার মায়াবী চেহারাটা আমার মনে ধরেছে কিন্ত তাৎক্ষণিক পাসে তাকিয়ে দেখি আমার বন্ধুটির ও একই অবস্থা সেও রোমাঞ্চিত হচ্ছে মানে সেও ভাবছে তার দিকে তাকিয়েছে। আসলে তার দিকেই তাকানোর কথা সে অনেক বড়লোক বাবার ছেলে আর আমি নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। মেয়েটি আবার তাকালো এবার অবশ্য আমি তাকাইনি কারণ আমি অই চোখের দিকে আবার তাকালে সত্যিই প্রেমে পড়ে যাবো। বন্ধুটি আমাকে খাওয়াতে চাইল তাই হোটেলে এসেছি আমি আবার কেউ খাওয়াতে চাইলে মানা করিনা। এখানে থাকলে হয়তো অই চোখের মায়া ছাড়তে পারবো না। বন্ধুটিকে বলে বেরিয়ে এলাম জরুরি কাজ আছে বলে আমি জানি বন্ধুটি ও তাই চাচ্ছিল।
পরেরদিন বন্ধুর সাথে দেখা দেখেই আন্দাজ করতে পারলাম তার অবস্থা সুবিধার না কাল নাকি সে চড় খেয়েছিল প্রপোজ করায়। অবাক চোখে বললো সে এ কেমন কথা আমার দিকে মুসকি হাঁসি দিল তাহলে কি বুঝে দিয়েছিল! বন্ধুটিকে সান্তনা দিলাম আরেহ এরকম হাজার মেয়ে আসবে যাবে ভাবিস না। বন্ধুটি হয়তো লজ্জা পাচ্ছে অথবা পাচ্ছে না। আমিতো হলাম ভবঘুরে আমার কোন কাজ নেই। মাঝেমাঝে টিউশনি খুজি পেলে পড়াই আবার অনেক সময়ে ছেড়েও দেই। এই বয়সে কোন কিছুর উপরে আসলে ধৈর্য থাকে না।
অবশেষে একটা টিউশনি জুটলো তাই গেলাম সেই বাড়িতে। তাদের প্ল্যাট পাঁচ তলায় উঠতে উঠতে হাফিয়ে গেছি। কলিংবেল চাপ দিলাম দরজাটা খুলে গেল আলাদা একটা ঘ্রাণ পেলাম এই ঘ্রান আগে কখনো পাইনি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করলেছিলাম না আবার হয়তো করছিলাম ও সেই মেয়েটি আবার মুসকি একটা হাঁসি দিল আমি তখনই প্রেমে পড়ে গেলাম তার হাসির এই হাঁসি সবাই দেখতে পায়না আর যারা পায় তারা ভাগ্যবান। আমি আস্তে করে মাথাটি নিচে নামিয়ে দেই লজ্জায় সে বুঝতে পারে আমি যে লজ্জা পাচ্ছি। ভিতরে ডুকে আমি থ খেয়ে গেলাম ঘরটা দারুণ সাজানো গুছানো চারিদিকে দামী জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আবার লজ্জা পেয়ে নিচে তাকিয়ে গেলাম। আমার মনে হচ্ছে মেয়েটি পাসে সোফায় বসা সেটা অবশ্য আন্দাজ তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। মেয়েটি কখন ভিতরে গেছে টেরই পাই নি।
কিছুক্ষণ পরে ফিরে এলো সে হাজারো রকমের খাওয়া নিয়ে আমি আবারো লজ্জা পেলাম। এবার রমনী মুখ খুললো
:-আপনিই তাহলে নিতাকে পড়াবেন?
:জি।
:-বেতন কত নিবেন?
:আপনারা যাই দেন তাই নিব।
:-তিন হাজার হলে চলবে?
:জি চলবে।
:-সপ্তাহে তিনদিন পড়াবেন শুধু গণিত শুনেছি আপনি গণিতে অনেক ভালো?
:জি কিছুটা।
:-কখন থেকে পড়াবেন?
:জি।
:-কিসের জি। বললাম কবে থেকে পড়াবেন?
:জি কাল থেকে।
:-কাল তো শুক্রবার!
:তাহলে পড়শু থেকে।
:-ওকে।
মেয়েদের সাথে কথা বলতে লজ্জা পাই তাই কখনো বলিনা কিন্ত আজ বলতে হলো। মাঝেমধ্যে আমি অবাক হই আজও হলাম তিন হাজার টাকা দিবে! আমি অবাক বনে গেলাম। রাজ্যের সকল চিন্তা আমার মাথায় ভর করলো যদি মেয়েটির মায়ায় পড়ে যাই। মেয়ে জাতি অনেক অদ্ভুত জাতি কৌশলে আপনাকে মায়ায় ফেলে দিবে।
নিতাকে পড়ানো আরম্ভ করলাম পুরো দমে। আমার ছাত্রীর মাথা অনেক সার্ফ। তাই বেশী বুঝাতে হয় না। আমার যত চিন্তা ওর বড়বোন কে নিয়ে। মেয়েটা প্রতিদিন দরজার পাসে দাঁড়িয়ে থাকে মনে হয় প্রহরা দেয় আমি সঠিকভাবে পড়াই কিনা। কখনো সেইদিকে তাকালে মুসকি একটা হাসি দিবে সেই প্রথম দিনের মত করে আমিও লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেলি। এভাবে চললো কয়েকমাস আমি আবার কোনখানে বেশিদিন থাকি না তাই টিউশনি ছেড়ে দিলাম। তো একদিন মেসে এসে অবাকই হলাম মেয়েটি আমার ম্যাচে এসেছে। আমি ডুকতেই সেই মুস্কি হাঁসিটা দিল আমিও লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। মেয়েটি আমার হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দিল। চিঠিটি হাতে নিয়ে আমি অবাক হলাম অনেক দামী কাগজ তার উপরে এতসব ডিজাইন। পড়তে আরম্ভ করলাম পুরোটাই এক নিমিষে শেষ করে ফেললাম এটা ছিল প্রেম পত্র মেয়েটি আমার প্রেমে পড়ে গেছে ভাবতেই আমি লজ্জা পেলাম।
রাস্তায় আবার দেখা সেই মেয়ের সাথে আমাকে দেখে মেয়েটি এগিয়ে এলো জানতাম আসবে তাইতো চিঠির উত্তর নিয়ে ঘুরছিলাম। দিয়ে দিলাম তার হাতে উত্তর। এরপর থেকে আর মেয়েটি আমার দিকে তাকাতোনা কারণ আমিযে চিঠিতে তাকে উত্তর দিয়ে দিয়েছি। বুঝিয়ে দিয়েছি বামুন হয়ে চাঁদ ধরা যায়না।
.
এখনো অনেক সময় মেয়েটাকে দেখি এখন আর আগেরমত হাঁসি দেয় না। কিন্ত তাকে দেখলে আমার চোখ কেন ঝাপসা হয়? হয়তো দূঃখে হয়তো লজ্জায়। অথবা নিজের মনের কথা না বলতে পারায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন