রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭

★ত্যাগ অতঃপর ফিরে পাওয়া★

ক্যাম্পাসে একা একা বসে আছি, আর আনমনে কি যেন ভাবছিলাম, কিন্তু কি ভাবছি সেটাও জানিনা।হঠাৎ ভার্সিটির গেইটে আমার দৃষ্টি গেল। আর দেখতে পেলাম সাদা এর্পোনের উপর অরেঞ্জ কালারের উড়না পরিহিতা একটা মেয়ে ভার্সিটিতেই প্রবেশ করছে আমি মেয়েটির দিকে একদৃষ্টিতে তাখিয়ে আছি। এত সুনাদর রমণী এর আগে কখনো আমি আমাদের ভার্সিটিতে দেখিনি।ওর মায়া মাখা ঠোঁট আর হরিণির মত চোখ দুটো যেন আমার হৃদয় ছুঁয়েছে।ভার্সিটিতে অনেক মেয়ে কিন্তু কখনো খাউকে তেমন নজরে পড়েনি।এক কথায় বলতে গেলে প্রথম দেখায় আমি তার প্রেমে পড়ে গেছি।
ইস আবির হারমীটা যদি থাকতো তাহলে মেয়েটিকে আজকেই প্রপোজ করে ফেলতাম।কিন্তু হারামীটা ব্যবসার কাজে ভারতে গেছে।একবার গেলে আর আসার নাম গন্ধ থাকেনা,কম হলেও তিন মাস। কি ভাবে যে অনার্সটা শেষ করল আল্লাই জানে।এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটি আমার দৃষ্টি রেখার বাইরে চলে গেল।অর্থাৎ ক্লাসে ড়ুকে পরল।
,
ঔ হ্যা বলায় হয়নি,বাই দ্যা ওয়ে আমি সাইমন, মার্ষ্টাস ১ম বর্ষে পড়ি,আর আবির আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড।আমরা এক সাথে লেখাপড়া করি।আমি আবিরকে খুব ভালোবাসি, আবিরও আমাকে খুব ভালোবাসে।আমরা অনেকটা ভাইয়ের মত।ছোট বেলায় আমি মাকে হারিয়েছি।আর যখন ইন্টারে পা রাখি তখনি বাবা মারা যান।আবিরের বাবা আর আমার বাবা খুব ভাল বন্ধুছিল বাবা মারা যাওয়ার সময় আবিরের বাবার হাতে আমাকে তুলে দিয়ে যায়।আমার বাবার মৃত্যুর ঠিক একবছরের মাতায় আবিরের বাবাও মারা যায়, আর তখন থেকেই ওর বাবার করা ব্যবসা ও ই আগলে ধরেছে।আমি আবিরের মাকে কখনো আন্টি ড়াকিনি, আম্মিজান বলে ড়েকেছি, ওনি আমাকে আবিরের মতই ভালোবাসেন,ঠিক যেন নিজ সন্তান।
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি আবিরদের বাসায় থাকি।
.
আজ ভার্সিটিতে গেলাম, ওপরে সিঁড়ি বেয়ে যখনি ক্লাসে যাব ঠিক তখনি দেখতে সেই মেয়েটা অনার্সের ক্লাস রুমে ড়ুকছে।আমি এক পা সিঁড়ির ধাপে রাখলাম, আর অন্য পা পেছনে দিয়ে মেয়েটিকে ওকি মেরে দেখছিলাম।ওকি মেরে দেখতে গিয়ে মেয়েটির চোখে চোখ পড়ে যায় আমার, আমি লজ্জায় আর কিছু না মাতা নিচু করে সোজা ক্লাসে চলে গেলাম।আঁড় চোখে খেয়াল করলাম মেয়টি মুচখি হাসছে, আমি মেয়েটির মায়া মাখা হাসি দেখে আবারো তার প্রেমে পড়ে গেলাম।ক্লাস শেষ করে নিচে নামতেই দেখতে পেলাম মেয়েটি তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে, তার বন্ধুদের মধ্যে আমি আমার বন্ধু হোসেনকে দেখলাম। ওরা চলে যাওয়ার পর আমি হোসেনকে ড়াক দিলাম...
আমি :-দোস্ত কিরে কেমন আছিস?
হোসেন:-ভাল তুই কেমন আছিস?
আমি:-ভাল,আচ্ছা তোরা যখন কথা বলতেছিলি, তখন তোদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি কে রে?
হোসেন:-হা হা হা, তুই ইসরাতের কথা বলছিস না!?
আমি:-নাম কি জানিনা,তবে আমি প্রথম দেখায় ওর ওপর ক্রাস খায়ছি দোস্ত।দোস্ত পারলে ওর নাম্বারটা আমারে মেনেজ কইরা দে।
হোসেন:-নারে দোস্ত ওর সাথে আমার তেমন কোন কথা হয় না, ওর বন্ধুদের সাথে হয়, তবে শুনছি ইসরাত না কি রবি সার্কেল ইউস করে।আইডিটা আমার বান্ধুদের কাছ থেকে নিয়ে দিতে পারি।আর সার্কেলা আইডি পেলে তো নাম্বার যোগাড় করা একদম ইজি।
আমি:-আচ্ছা তাহলে তাই কর।নাম্বার পরে আমি নিব।
রাতে পড়ার টেবিলে পড়তে বসলাম কিছুতেই পড়াতে মন বসছেনা।বারবার ইসরাতের কথা মনে পড়ছে, ওর চেহারাটা আমার চোখে বারাবার ভাসছে। আর ওর হাসিটাও আমার চোখে বারবার ভেসে উঠছে।হঠাৎ মনে পরল হোসেনের কথা।
আমি:-হ্যালো..কে হোসেন?
হোসেন:-হ্যা দোস আমি, বল।
আমি :-কেমন আছিস?
হোসেন :-ভাল,তুই?
আমি:-ভাল,আচ্ছা তোরে যে কাজটা দিয়েছিলাম ঐটা মেনেজ করতে পেরেছিস?
হোসেন:-ইস..দোস্ত আমি একদম ভুলে গেছিরে,দাঁড়া আমি তোরে দশ মিনিট পর ফোন করতেছি।
আমি:-আচ্ছা ঠিক আছে।
দশ মিনিট পর....
হোসেন:-হ্যালো দোস্ত তোর কাছে কি কিছু পয়েন্ট হবে?
আমি :-কেন?
হোসেন:-আরে ওর আইডিটা নেয়ার জন্য আমি আমার একবন্ধুর সাথে চেট করছিলাম।কিন্তু এখন পয়েন্ট নাই।
আমি:-আচ্ছা দিতাছি।এই বলে আমি হোসেনকে ৫০০পয়েন্ট দিয়েছি।
প্রায় ১৫মিনিট পর হোসেন আমাকে একটা সার্কেল আইডি দেয়।আমি তো আনন্দে আত্বহারা।
আইডিতে এড় হয়ে আমি প্রথমেই...
আমি:-হাই।
মেয়ে :-নো রিপ্লে।
আমি:-হাই আমি সাইমন, ভার্সিটির খোখাবাবু।
মেয়ে:-নো রিপ্লে।
আমি ভাবলাম মনেহয় পয়েন্ট নেই তাই রিপ্লে দিতে পারছে না।তাই আমি ঐ আইডিতে ৮০০পয়েন্ট শেয়ার করি।
তারপর অনেক মেসেজ দিয়েছি কিন্তু কোন রিপ্লে নেই।
পরদিন...
আমি:-ঐ হারামজাদা কার আইডি দিয়েছিস, কোন রিপ্ল দেয় না, ওল্টো আমার ৮০০পয়েন্ট লস।
হোসেন:-হি হি হি, দোস্ত তাইলে আমি আর জানিনা।আমার বন্ধু আমাকে এটাই দিছে।
তারপর মনে মনে বললাম যা করার নিজেকে করতে হবে।
তারপর আমি ইসরাতের পিছু নিতে থাকি। ওর দিকে সবসময় তাখিয়ে থাকি।ইসরাত ও বোঝতে পেরেছে যে আমি ওকে ফলো করছি।এইভাবে প্রায় একসপ্তাহ পর একদিন ইসরাত আমাকে দেখিয়ে মাঠের মধ্যে একটা চিরকুট ফেলে যায়।আমি চিরকুটটি হাতে নিলাম, এতে একটা সার্কেল আইডি লেখা।আমি মনে মনে অনেক খুসী হলাম, আর মনে মনে বললাম এতদিনে আসল ঠিকানা পাওয়া গেল।
বিকাল চারটার দিকে আমি ইসরাতকে নক করলাম,
আমি:-হাই।
ইসরাত:-হ্যালো,
আমি:-চিনতে পারছেন?
ইসরাত:-হুম।
আমি:-কেমন আছেন?
ইসরাত:-ভাল,আপনি?
আমি:-হুম,ভাল।
এইভাবেই আমার আর ইসরাতের মধ্যে কথা হয়।আমি ইসরাতে সাথে প্রতিদিন মেসেজ করি, কিন্তু ভার্সিটিতে ওর সাথে কথা বলি না,তবে ওকে ফলো করতাম।
প্রায় দুমাসপর...
একদিন আমি ইসরাতকে ফলো করছি..
ইসরাত:-এইযে মিস্টার এদিকে আসেন।(রাগি মুড়ে)
আমি:-জ্বী আমাকে বলছেন?
ইসরাত:-আশেপাশে তো আর কেউ নাই,তো আপনাকে না কাকে ড়াকবো।
আমি:-জ্বী বলেন।
ইসরাত:-ফলো করেন কেন?কি বলতে চান সোজাসোজি বলতে পারেন না?(কোমরে হাত দিয়ে রাগি মুড়ে)
আমি ওর দিকে তাখিয়ে রইলাম,আর মনেমনে বললাম,ইস রাগলে যে তোমাকে এত সুন্দর লাগে তা এখন না দেখলে হয়ত কখনো বোঝতে পারতাম না।
ইসরাত:-এই যে আমি আপনাকে কিছু বলছি..
আমি:-জ্বী, ইয়ে মানে।
ইসরাত:-কি ইয়ে মানে?মেসেজে তো অনেক বক বক করেন কিন্তু এখন দেখি ভিতুর ড়িম।আচ্ছা আপনি না ভার্সিটির খোখা বাবু?
আমি:-জ্বী..না মানে ফ্রেন্ডেরা বলে আর কি।
ইসরাত:-ফ্রেন্ডরা বলুক আর যেই বলুল।আপনি তো খোখা বাবু,তো খোখা বাবুর কি এই রকম ভয় পেলে চলে?
আমি:-না,আসলে কি ভাবে যে বলি..
ইসরাত:-আরে এত আমতা আমতা করছেন কেন?বলবেন না কি আমি চলে যাব?!
আমি:-না না আমি বলছি।
ইসরাত:-হ্যা বলেন।
আমি:-আসলে.. আসলে.. আসলে।
ইসরাত:-কি আসলে আসলে,বলবেন না কি চলে যাব?!(রাগ করে)
আমি:-আসলে আই লাভ ইউ,
ইসরাত লজ্জায় মাতাটা নিচের দিকে করে বলল, এত সময় লাগে এই সামান্য কথাটা বলতে।
আমি :-আমি তোমাকে প্রথম যে দিন দেখেছিলাম ঐদিন ই তোমাকে ভালোবেসে ফেলি।
ইসরাত:-হুম,বোঝলাম।
আমি:-কি বোঝলে? আর তুমি তো কিছু বলছ না।
ইসরাত:-কি বলব?
আমি:-কি বলব মানে!?হ্যা বা না।
ইসরাত:-এত তাড়া কিসের পরে বলব।এই বলে ইসরাত হাসতে হাসতে
চলে যাচ্ছিল, আমি ড়াক দিয়ে বললাম আমাকে কিন্তু টেনশনে রাখলা।, আমি মুখ গোমরা করে বসে আছি।কিছুক্ষণ পর ইসরাত আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল লাভ ইউ টু।
আমি:-তুমি যাওনি!?
ইসরাত:-না যায়নি,লুকিয়ে দেখছিলাম আমার পাগলটা কি করছে।হি হি হি
এইভাবে চলতে থাকে আমাদের মিষ্টি মধূর ভালোবাসা।ইসরাতের সাথে আমার প্রতিদিন ই ফোনে কথা হয়।ও আমার খুব টেক কেয়ার করে।আমি ইসরাতকে খুব ভালোবাসি।ইসরাতও আমাকে ভালোবাসে।আমার প্রতি ওর কেয়ারিং, আমার খুব ভালই লাগে।
৬মাস পর...
আজকে আবির ভারত থেকে ফিরল।
পরদিন আমি আর আবির, আবিরের খালার বাড়িতে যায়।এর আগেও অনেকবার গিয়েছি।আবিরের একটা খালাতো বোন আছে, নাম ইফতি ও আবিরকে খুব ভালোবাসে, কিন্তু কেন যেন আবির তা বোঝেও না বোঝার ভান করে, ইফতিকে ও দুচোখে দেখতে পারেনা।ইফতি আর আমি খুব ভালো বন্ধু ও সবকিছু আমার কাছে শেয়ার করে। আজ আমি ইসরাতের ব্যপারে ইফতিকে সবকিছুই শেয়ার করেছি।ইফতি আবিরকে সরাসরি কিছু না বললেও বিভিন্ন ভাবে বোঝাতে যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু আবিরটা কেমন যেন।..
.
আজ ভার্সিটিতে আমি আর আবির ক্যাম্পাসে বসে আছি,
আবির:-আবির দোস্ত মেয়েটা কে রে..?
তাখিয়ে দেখলাম ইসরাত।
আমি:-হি হি হি, কেন?
আবির:-দোস্ত আমি তো মেয়েটার ওপর ক্রাস খাইছি।দোস তুই যে করেই পারিস কোন একটা ব্যবস্থা করে দে।
আবিরের কথাটা শুনে আমার বুকের মধ্যে যেন মুচড় দিয়ে উঠল আমি আবিরকে সেটা দেখালাম না।
আমি আবিরকে হাসি মুখে বললাম আরে ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে। টেনশন নিসনা।
আবির:-যা করার তাড়তাড়ি কর।আচ্ছা তুই ঐদিন যেন তোর র্গালফ্রেন্ডের ব্যপারে কি একটা বলছিলি না!কই দেখাবি না তোর র্গালফ্রেন্ডেকে?
আমি:-হা হা হা কি যে বলিস, আজকালকার মেয়েদের কি সিংগেল পাওয়া যায়?আমারে রেখে আরেকজনের সাথে চলে গেছে,ভাগ্যিস ভালো করে প্রেম করিনি নয়তো বড় ধরনের একটা আগাত পেতাম।খুব সহজ ভাবে আবিরকে সব কিছু বানিয়ে বানিয়ে বলে দিছি,কিন্তু আমার মনের অবস্থা এখন কি রকম সেটা একমাত্র আমিই জানি।
.
রাতে বাসায় এসে আবিরের কথা আর ইসরাতের কথা ভাবছিলাম।ইসরাতের কথা ভাবতেই কেন যেন আমার চোখে জল আসল।আমি ভাবছি ইসরাতকে আবিরের কথাটা কি করে বলব।
.
পরদিন আবির আর ভার্সিটিতে যায়নি।
আমি ইসরাতকে ড়াকলাম।
আমি:-ইসরাত,
ইসরাত:-হুম বল।
আমি:-ইসরাত তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।
ইসরাত:-হুম বোঝছি,না না এখন বিয়ে টিয়ে করতে পারবোনা।
আমি:-না আসলে তা না(মুখ কালো করে)
ইসরাত:-তো!?(অভাক হয়ে)
আমি:-ইসরাত, তুমি আমাকে ভুলে যাও।
ইসরাত:-হোয়াট!?এসব কি বলছ তুমি!? মাতা ঠিক আছে তোমার!?
আমি:-হ্যা আমার মাতা পুরো পুরি ঠিক আছে।
ইসরাত:-কিন্তু কেন!?
আমি ইসরাতকে আবিরের ব্যপারে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম।
ইসরাত :-না এটা কখনো সম্ভব না,আমি তোমার জায়গা আর কাউকে দিতে পারবো না।
আমি:- ইসরাত তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসো তাহলে আমার এই অনুরুধটি রাখতে পারবানা?তুমিই তো বলেছিলে তুমি আমার জন্য সব করতে পারবে।
ইসরাত:-হ্যা বলেছিলাম আমি তোমার জন্য সব করতে পারবো, কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি তোমার জন্য তোমাকেই ভুলে যেতে হবে।ভুলতেই যদি হয় তাহলে তোমাকে ভালোবাসলাম কেন?(কান্না করে)
আমি ইসরাতের পায়ে ধরে বললাম আমি এতকিছু বুঝিনা, তুমি আবিরকে ভালোবাস, দেখবে তুমি অনেক সুখী হবে।কথা গুলো বলার সময় কখন যে কেঁদে ফেললাম নিজেও জানিনা।অবশেষে ইসরাতকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি।
,
ছোট বেলায় মা কে হারিয়েছি, আজ বন্ধুর জন্য ভালোবাসার মানুষটিকেও ত্যাগ করতে হচ্ছে,কথা গুলো ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। আজকে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।আজ যদি মা বেচেঁ থাকতেন তাহলে মায়ের কোলেই সব কষ্ট ঝাড়তাম।কিন্তু আমার পুড়া কপাল মা ও বেচেঁ নেই।
,
আবির:-কিরে কি করছিস?
আমি:-না তেমন কিছুই না,আচ্ছা আম্মিজানকে বল আমার মাতা ব্যথা করছে, কফি বানিয়ে দিতে।
আবির:-দাঁড়া বলতেছি।মা...
আমি:-ঔ হ্যা তোর জন্য সুখবর আছে, ঐ যে মেয়েটা! ওর নাম্বার নিয়ে আসছি।আর তোর ব্যপারে সবকিছু বলে দিছি।
আবির:-কি করে করলি এতসব এত তাড়াতাড়ি।
আমি:-হি হি হি দেখতে হবে না!?আমি কার বন্ধু।কষ্টের তিব্রতা আমার ক্রমস বাড়ছে,কিন্তু আবিরকে দেখানোর জন্য না চাইলেও হাসতে হচ্ছে।
আবির :-কই দেখি নাম্বার দে।
আমি:-ধর নে 018.......37।
আবির ইসরাতকে বার বার কল করছে কিন্তু ইসরাত ফোন রিসিভ করছে না।
আবির:-কিরে কার নাম্বার দিলি রিসিভতো করে না।
আমি:-আবার ট্রাই কর, রিসিভ করবে।
আমি ইসরাতকে মেসেজ দিয়ে বললাম যেন আবিরের ফোন রিসিভ করে, আর যেন কথা বলে।
এইবার ইসরাত ফোনটা রিসিভ করল।
ইসরাত:-হ্যালো।
আবির:-হ্যালো, ইসরাত নাকি?
ইসরাত:-জ্বী, কে বলছেন?
আবির:-আমি আবির, সাইমনের ফ্রেন্ড।
ইসরাত:-ঔ, কেমন আছেন?
আবির:-জ্বী ভালো...
আর এইভাবেই ইসরাত আর আবিরের কথা বলা শুরু হয়।
.
আবির:-দোস্ত আজ ইসরাতকে প্রোপজ করছি।কথাটা শুনতেই যেন আমার মনের মধ্যে এক হারানোর ভয় কাজ করছে, আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে আবিরকে বললাম....
আমি:-হি হি হি, এত তাড়তাড়ি প্রোপজ করে ফেললি!?তো কি বলল ও।
আবির:-পরে জানাবে বলছে।
.
বিকালের দিকে জামতলি পার্কে একা একা বসে পাখির কিচিরমিচির শব্দের ঝগড়া দেখছিলাম, হঠাৎ ইসরাতের ফোন....
আমি:-হ্যালো ইসরাত, বল।
ইসরাত:-কই তুমি?(কান্না জড়িত কণ্ঠে)
আমি:-এইতো জামতলি পার্কে বসে আছি, কেন কি হয়ছে?
ইসরাত:-তুমি ওখানেই থাক, আমি আসছি।
এই বলে ফোনটা কেটেদিল।
প্রায় আদঘন্টা পর ইসরাত আসল।
আমি:-কেমন আছো।
ইসরাত আমাকে কিছু না বলে জড়িয়ে ধরল কান্না করতে করতে বলল আমি তোমাকে ছাড়া বাচঁবোনা।আমি তোমার জায়গা অন্যকাউকে দিতে পারবোনা।
আমি:-আচ্ছা ছাড় লোকে দেখছে।আর কি হয়ছে সেটা বলবা তো!..
ইসরাত:-আবির আমাকে প্রোপজ করে ফেলছে।আমি কি বলব বোঝতে পারছি না।
আমি:-তুমি ওর প্রোপজ একসেপ্ট করে নাও।
ইসরাত:-না আমি পারবো না।
আমি :-যদি আমাকে একটু হলেও ভালোবাসো তাহলে ওকে একসেপ্ট করে নাও।বাকীটা তোমার ব্যপার।
ইসরাত আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।আমি ইসরাতের চলে যাওয়া দেখছিলাম, ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে, ইসরাত আমাকে ছেড়ে যেওনা।কিন্তু কি একটা জড়তা আমাকে বাঁধা দিচ্ছে।
.
আবির:-দোস্ত কাজ হইয়া গেছে, ইসরাত প্রোপজ একসেপ্ট করেছে।
আমি:-একসেপ্ট করতেই হবে দেখতে হবেনা তুই কার বন্ধু!?(মনে মনে আমার খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু সেটা আবিরকে দেখাতে পারছি না।)
আবির:-কিন্তু দোস, ইসরাত না!আমার সাথে তেমন কথা বলতে চাইনা,এই দেখ সেই কখন থেকে ফোন করছি কিন্তু রিসিভ করছে না।
আমি:-দাঁড়া পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর, দেখবি রিসিভ করবে।
আমি ইসরাতকে মেসেজ করে বলে দিলাম যেন ফোন রিসিভ করে।
এইবার আবির ইসরাতের সাথে কথা বলছে।কথা বলা শেষে আবির হঠাৎ বল উঠল আমি ঠিক বোঝতে পারিনা। ইসরাত কি তোকে ভালোবাসে না আমাকে।
আমি:-কেন বলতো!(একটু ইতস্ত হয়ে)
আবির:-তুই বলার সাথে সাথে দেখি ফোন রিসিভ করে।তুই কি জাদু বিদ্ধা জানিস নাকি?
আমি:-হা হা হা, জানি তো আর সেটা তোর কাজে লাগায়।
.
এরি মধ্যে আম্মিজানের ড়াক, কিরে কই তোরা খেতে আই।
খাবার টেবিলে হঠাৎ আম্মিজান বলে উঠল।
এত বড় বাড়িতে আমার আর একা একা সারাদিন ভাললাগেনা। কবে যে নাতি নাতনির মুখ দেখবো পুত্র বধূর মুখ দেখবো আল্লাই জানে(দির্ঘশ্বাস ফেলে)
আমি:-আম্মি জান আবিরের একটা মেয়েকে পছন্দ আছে তুমি যদি রায় দাও তা হলে আমি খুঁজ খবর নিতে পারি।
আবির:-ঐ শুধু শুধু আমার পেছনে কেন বাঁশ দিচ্ছিস, নিজেরটা নিজে চিন্তা কর,আমারে নিয়া তোরে ভাবতে হইবো না।
আম্মিজান:-হয়ছে হয়ছে, আর ঝগড়া করতে হবেনা।সাইমন তুই মেয়েটার খবর নে, আগামীকাল ই আমি মেয়েটাকে দেখতে যাব।
.
পরদিন ইসরাতকে দেখানোর জন্য আম্মিজানকে ওদের বাসায় নিয়ে যায়।
ইসরাতকে আম্মিজানের খুব পছন্দ হয়ছে।এদিকে ইসরাতের পরিবারও রাজি।আর একসাথে বিয়ের বিয়ের তারিখ ও ঠিক, আগামী ১৪তারিখ১লা বৈশাখ বিয়ের দিন ঠিক করা হল।
আমি:-বলে উঠলাম ভাবি আপনার তো কোন আপত্তি নেই আমার ভাইকে বিয়ে করতে।
ইসরাত কিছু না বলেই ভেতরে চলে গেল।জানি এখন মেয়েট ডুকরে ড়ুকরে কাঁদছে।কিন্তু এখন আমার কিছুই করার নেই।
বাসায় এসে আম্মিজান বলল আবিরের টাতো দেখলাম এবার তোরটা বল।
আবির:-মা,ছোট খালার মেয়ে ইফতির সাথে দেখি সাইমনের গলায় গলায় ভাব,ওদের দুজনকে কিন্তভাল মানাবে,তুমি কি বল মা?
আম্মিজান:-হ্যা ঠিক বলেছিস,আমারও ইফতিকে ভাল লাগে।
আমি তোর খালার সাথে আজ ই কথা বলব।
আমি:-আরে আমি ইফতিকে জাস্ট বন্ধু হিসেবে জানি,আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না।
আম্মিজান:-বন্ধু তো কি হয়ছে, বন্ধুকে কি বউ বানানো যায় না?দ্যাখ সাইমন আমি আমার দুই সন্তানের বউ এক সাথে ঘরে তুলতে চাই।আর আমার বিশ্বাস তুই আমার কথার বাইরে কিছু বলবি না।
আমি:-ঠিক আছে আম্মিজান তুমি যা ভাল মনে কর।
এইবলে আমি নিজের রুমে চলে গেলাম।
রুমে বসে বসে ড়াইরিতে নিজের অবক্ত কথা গুলো লিখছিলম।আর নিজের অজান্তে চোখের অশ্রু ফেলছিলাম।
হঠাৎ করেই আবিরের আগমন।
আবির :-কিরে কি করছিস?
আমি:-তেমন কিছুই ন
আবির:-একি তুই কাঁদছিস কেন?
আমি:-কই না তো
আবির:-আমি দেখছি তুই কাঁদছিস, আর তুই বলছিস না।
আমি:-ঔ হ্যা কিছুক্ষণ আগে চোখে একটা পোকা পড়েছিল এখনো ব্যথা করছে। তাই হয়ত চোখে পানি পড়ছে, দাঁড়া আমি একটু ওয়াস রুম থেকে আসি।
ওয়াস রুম থেকে এসে দেখি আবির চলে গেছে। আমি আবির কে খুঁজতে ওর রুমে গেলাম।না এখানেও নেই।ছাঁদে গিয়ে দেখি আবির মোবাইল হাতে নিয়ে একা একা বসে বসে কি যেন ভাবছে।
আমি:-কিরে এখানে একা একা কি করছিস,?তোর আবার কি হয়ছে? ঔ বুঝছি ইসরাত ফোন রিসিভ করছেনা না!?দাঁড়া পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর।
আবির:-তোকে কিছু করতে হবে না।আমি ইসরাতের সাথে কথা বলছি।
আমি:-তো তোর মন খারাপ কেন।
আবির:-তোর জন্য।
আমি:-ঠিক বুঝলাম না(অভাক হয়ে)
আবির:-তোকে বুঝতে হবে না,আগে বল তুই আমাকে এত ভালোবাসিস কেন?(আমাকে জড়িয়ে ধরে)
আমি:-আমি আবার কি করলাম?
আবির:-কিছুই করিসনি মানে, এইযে এত সহজে সব কিছু করে ফেললি।
আমি:-আমি ঠিক তোর কথার কিছুই বোঝতে পারছি না আবির, প্লিজ একটু ক্লিয়ার করে বলবি!?
আবির:-তোকে কিছু বুঝতে হবে না।শুধু আগে বিয়েটা হতে দে।হি হি হি।
.
এই বল আবির একটা অট্টহাসি দিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। আমি "থ" হয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম।
.
আজ ১৪তারিখ ১লা বৈশাখ, আজ আমাদের বিয়ে। মনের মধ্যে একটা বড় পাথর আমাকে চেপে ধরে আছে, কিন্তু সেটা আমি কিছুতেই সরাতে পারছিনা।
ইসরাত কে আজ খুব সুন্দর লাগছে, যেন একটা লাল পরি।আমি ইসরাতকে এই সাজেই দেখতে চেয়েছিলাম যখন ও আমার বউ সাজবে।কিন্তু নিয়তি আমার খুব খারাপ। আমি একটা জিনিস লক্ষ করলাম ইসরাতকে কেমন যেন খুসী খুসী দেখাচ্ছে।যেন বিয়েটা ওর ইচ্ছেতেই হচ্ছে।ওর ভেতর আমি একটুও কষ্ট দেখতে পেলাম না।
.
রাত ১১টার পর..
আবির রুমে ড়ুকল ইফতি আবিরকে পা ছুঁয়ে সালাম করল, ইফতি আবিরের দিকে একটু ও তাখালো না,
সালাম করার পর ইফতি বিছানায় গিয়ে বসে পরল, আর বলল....
ইফতি:-দেখ সাইমন তুমি তো ভালো করেই জান আমি আবির কে ভালোবাসি, আর আবিরের জায়গাটা আমি কাউকে দিতে পারবো না,সো প্লিজ আমাদের সর্ম্পকটা বাইরে থেকে স্বমী স্ত্রীর থাকবে কিন্তু আমি তোমাকে স্বামীর যে হক স্ত্রীর প্রতি আছে আমি তোমাকে তা দিতে পারবো না।তাই আমার কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করবে না।
আবির:-তাই না কি!? তা তো আমি আগে জানতাম না,আমি তো ভাবছি আমার বউয়ের সাথে জুটি বেধে একটা ফুটবল টিম তৈরি করব।
ইফতি:-তুমি!?তুমি এখানে কি করছ?(অভাক কন্ঠে)
আবির:-ওমা আমি আমার বউয়ের কাছে আসতে পারবো না।!?
ইফতি:-তুমি তো ইসরাত কে বিয়ে করেছো।
আবির:-না আমি তোমাকেই বিয়ে করেছি, আর এটাই তোমার সারপ্রাইজ।
ইফতি:-কিন্তু কিভাবে, তুমি তো ইসরাতকে ভালোবাসো।
আবির:-বাসতাম, কিন্তু যখন জানতে পারলাম সাইমন ইসরাতকে ভালোবাসে, তাও আমার আগে থেকে, তখনি ঠিক করলাম ওকে একটা সারপ্রাইজ দিব আর আমাকে যে সত্যিকারের ভালোবাসে তাকেও।
ইফতি আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি আসলে তোমার ভালোবাসাটা বোঝতে পারিনি।
ইফতি আবিরের বুকে মাতা রেখে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল, ক্ষমা করব তবে এক স্বর্থে,
আবির:-একটা কেন তোমার হাজারটা স্বর্থ মানতে আমি রাজি।বল কি সেটা।
ইফতি:-বেশি কিছু করতে হবে না, আমাকে বেশি করে ভালোবাসতে হবে,
আবির ইফতিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, আর বলল হা হা হা পাগলি ভালোবাসি অনেক অনেক।.
.
এদিকে আমি...
মনকে অনেক কষ্টে স্থির করে রুমে ড়ুকলাম,রুমে ড়ুকতেই ইসরাত আমাকে পা ছুঁয়ে সালাম করল।আমি ওর দিকে একটু তাখালাম না।কিছুক্ষণ পর আমি বললাম...
আমি:-দেখ ইফতি, তুমি তো ভাল করেই জান, আমি ইসরাতকেই ভালোবাসি, ওর জায়গা আমি আর কাউকে দিতে পারবো না। তাই তুমি আমার কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করো না।
ইসরাত:-হি হি হি তাই না কি!?
কন্ঠটা আমার কেন যেন চেনা চেনা লাগছে। তাই বউয়ের দিকে তাখালাম।
আমি:-এ কি তুমি!?(অভাক হয়ে)
ইসরাত:-হ্যা আমি, অভাক হচ্ছ কেন?
আমি :-অভাক হবনা মানে, তোমার সাথে তো আবিরের বিয়ে হয়ছে।
ইসরাত:-আরে হাদারাম কামিন নামায় সাইন করার সময় দেখনি পাত্রির নাম কি?
আমি:-আমি অনেক টেনশনে ছিলাম তাই অতশত খেয়াল করিনি।(মুখ কালো করে)
ইসরাত:-যাক না দেখে ভালই করেছো।নইলে সারপ্রাইজটা দিতে পারতাম না।
আমি:-সারপ্রাইজ মানে!?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ইসরাত:-আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি।তুমি ঐদিন ড়াইরিতে তোমার আমার আবিরের আর ইফতির কথা গুলো লিখছিলে, আর কাঁদছিলে।যখন আবির তোমাকে জিজ্ঞেসা করছিল তুমি কাঁদছো কেন, তুমি বলেছিলে তোমার চোখে পোকা পরেছে,এই বলে তুমি ওয়াসরুমে চলে গিয়েছিলে। আর তখনি আবির তোমার ড়াইরিটা পড়ে ফেলে, আর আমাকে ফোন করে সব বলে দেয়, আর বলে জোর করে কখনো ভালোবাসা আদায় করা যায় না,ভালো মন থেকে বাসতে হয়,।আমিও আবিরকে সব বলে দিই।আর দুজনে প্ল্যান করি তোমাকে আর ইফতিকে একটা বড় সারপ্রাইজ দিব,আর আমার পরিবারেও সব বলে দিই যেন তোমাকে কিছু না বলে, সাথে আম্মিজানকেও। হি হি হি, কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?
আমি ইসরাতের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাখিয়ে রইলাম,কি বলব বুঝতে পারছিনা,কিছুক্ষণ পর আমি ইসরাতকে জড়িয়ে ধরি আর বলি হা হা হা পাগলি.. ভালোবাসি তোমায়। তুমি কি দেবে তোমায় একটু ভালোবাসতে?তুমি কি দেবে তোমার রাঙ্গা পায়ে নিজ হাতে নুপুর পরিয়ে দিতে?তুমি কি দেবে তোমায় নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে?
ইসরাত:-হি হি হি, পাগল।আমিও তোমাকে ভালোবাসি,আমার সব কিছুই তো তোমার।
আমি ইসরাতের কপালে এক চিলতে চুমু আলতো করে এঁকে দিই।ইসরাত' লজ্জা মাখা মুখটা আমার বুকের ভেতর লুকিয়ে ফেলে।
শুরু হয় আমাদের নতুন জীবন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন