মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭

আবির আসবে

মি: এবং মিস: রহমান আজ পাবনায় যাবেন। তারা বাসস্টান্ডে দাড়িয়ে আছেন বাসের জন্য। বাস এসেছে তারা বাসে উঠে তাদের ছিটে গিয়ে বসলেন। আজ তারা তাদের এক মাত্র মেয়ে রিয়ার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। বাস এগিয়ে চলেছে শহুরে রাস্তা দিয়ে। মি: এবং মিস: দুইজন হাত ধরে চুপ করে বসে আছেন। পুরো রাস্তায় তারা একটিও কথা বলেননি। তারা পৌছেগেলেন পাবনায়, তারা একটা অটো ভাড়া করলেন। মিস: রহমান মি: রহমানের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছেন। তারা পৌঁছেগেলেন পাবনা মানুষিক হাঁসপাতালে। হ্যা আপনি ঠিকি দেখেছেন, আমি পাবনা মানুষিক হাঁসপাতাল লিখেছি। হ্যা তাদের একমাত্র আদরের মেয়ে আজ মানুষিক রোগী। তারা ডাক্তারের সাথে কথা বলছেন।
.
মি: রহমানঃ- কি অবস্তা দেখছেন?
ডাক্তারঃ- তেমন কোন পরিবর্তন দেখছিনা।
মি: রহমানঃ- তাহলে কি আমার মেয়ে কখনো ভালো হবেনা?
ডাক্তারঃ- সেটা বলতে পারছিনা, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি।
মিস: রহমানঃ- যে ভাবেই হক আমার মেয়েকে সুস্থ করুন। (কাঁদতে কাঁদতে)
ডাক্তারঃ- দেখুন, এখনি ভেঙ্গে পরেননা। এখনো অনেক আশা আছে ভালো হবার। 
মি: রহমানঃ- আমরা কি রিয়ার সাথে দেখা করতে পারি?
ডাক্তারঃ- হ্যা, অবশ্যই পারেন।
.
রিয়া বসে থেকে কি জেনো করছে। মায়ের ডাক শুনে দৌড়ে মায়ে কাছে গেলো। রিয়ার কথা শুনে মনেই হয়না সে মানুষিক রোগী। সে তার সব অভিযোগ বাবা-মা কে বলছে, কি খেতে চায় বলছে। 
মিস: রহমানঃ- কেমন আছিস মা?
রিয়াঃ- ভালো মা তোমরা কেমন আছো?
মিস: রহমানঃ- ...
রিয়াঃ- বাবা তুমি আমাকে এখানে কেনো রেখেছ? এখান কার মানুষরা খুব পচা। আমাকে বাহিরে যেতে দেয়না, কারো সাথে দেখা করতে দেয়না।
মি: রহমানঃ- আর কিছু দিন মা, তাপর তকে আমরা বাসায় নিয়ে যাবো।
রিয়াঃ- যানো বাবা এখানকার খাবার গুলা একদম ভালোনা। আমার ভালো লাগেনা এগুলা খাবার খেতে। আমি ওদের বলে ছিলাম আমাকে চকলেট এনেদিতে। কিন্তু ওরা আমাকে এনেদেয়নি, তুমি আমাকে চকলেট এনে দিবা?
মি: রহমানঃ- ঠিকাছে মা, এনে দেবো।
রিয়াঃ- আবির আসেনি মা? আমার আবির কৈ? বাবা আবির কৈ?
মি: রহমানঃ আবির আসেনি মা, এপর যখন আসবো তখন আবির কে নিয়ে আসবো।
রিয়াঃ আমি জানি আবির আমার উপরে রাগ করে আছে। আমি ওকে কতো কল দেই, এতো এতো ম্যাসেজ দেই। কিন্তু ও আমার ম্যাসেজের উত্তর দেয়না, কল ধরেনা। এত্তো রাগী, আমি জানি ও আমাকে নিতে আসবে। ও আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবেনা।
.
মিস: রহমান রিয়ার কথা গুলো শুনে কাঁদছেন। তিনি অনেক বার বোঝাতে চেয়েছেন আবির আর নেই, কিন্তু রিয়া কোনো কথাই শোনেনা। তিনি এখন আর কিছু বলেন না। কিছু বললে রিয়ার পগলামি বেড়ে যাবে। তারা কিছু খাবার, চকলেট কিনে রিয়াকে দিয়ে আসেন।
.
.
(কয়েক বছর আগে)
.
আবির এবং রিয়া এক কলেজে পড়ে, তারা বেষ্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু আবিরের কাছে রিয়া বন্ধুর থেকেও বড় কিছু। তারা ছোট বেলা থেকেই বন্ধু। তারা এক সময় একি বাসায় ভাড়া থাকতো। এখন আবির তার নিজের বাসায় থাকে আর রিয়া এখনো তার পড়াশোনার জন্য ভাড়া থাকে পরিবারের সাথে। তারা একি স্কুলে পড়েছে, আর এখন একি কলেজে পড়ে। আবির কে সবাই সেলফি বয় বলেও ডাকে। কারন তার সেলফি তোলার একটা নেশা আছে। এই জন্য সে রিয়ার কাছে অনেক বকাও খায়। আবির কখন যে রিয়া কে ভালোবেসে ফেলেছে সে জানেনা। আসলে আবির খুব ভালো, সান্ত, আর হাসি খুশি একটা ছেলে। আর রিয়া হলো শান্ত, খুবি বুদ্ধিমতী, সুন্দরী একটা মেয়ে। আবির রিয়াকে কখনো বলেনি সে রিয়াকে ভালোবাসে। সে ভয় করতো, যদি সে ভালোবাসা চাইতে গিয়ে বন্ধুটাকে হারায়। তাইসে কখনই তার মনের কথা রিয়াকে বলার সাহস পায়নি। আবিরের একটা বন্ধু ছিলো "সাব্বির"। আবির তার সব কথা সাব্বিরের সাথে শেয়ার করতো। একদিন বিকেলে আবির একা বসে আছে নদীর ধারে। তখনি সাব্বির আসলো।
সাব্বিরঃ- কিরে দোস্ত কি করিস?
আবিরঃ- এইতো বসে আছি।
সাব্বিরঃ- মন খারাপ ক্যান দোস্ত?
আবিরঃ- রিয়াকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারিনা, আবার থাকতেও পারছিনা।
সাব্বিরঃ- রিয়াকে ফোন দে!!!
আবিরঃ- ক্যান??!!
সাব্বিরঃ- আজ তুই রিয়া কে প্রপোজ করবি!!
আবিরঃ- আমি পারমুনা ভাই
সাব্বিরঃ- তাইলে আমি প্রপোজ করমু!!
আবিরঃ- এগুলা কথা বলিস না তো।
সাব্বিরঃ- দেখ মামা, তুই প্রপোজ না করলে রিয়ার মনের কথা জানবি কি ভাবে? আর তুই তো ভালোবাসা চাইতে যাবিনা। তুই শুধু ভালোবাসিস সেটা বলতে যাবি। একবার বলেই দেখ, ভয়ের আগে জিত আছে। রিয়া তোরে চড় দিলে তুই আমারে চড় দিস যাহ্‌, এর চাইতে বেশী আর কি কমু??
আবিরঃ- ফোন করে আসতে বলবো?
সব্বিরঃ- হ্যা ব্যাটা বল!!!
.
আবির রিয়াকে ফো দিলো। রিয়া ফোন ধরলো
রিয়াঃ- হ্যাল... বল!!
আবিরঃ- একটু নদীর ধারে আসতে পারবি?!!
রিয়াঃ- কেন?!!
আবিরঃ- দরকার আছে , আসবি কিনা বল?
রিয়াঃ- আসছি, এখন আবার তোর মাথায় কি ভুত চাপলো শুনতে আসছি। (ফন কেটে দিল)
.
আবিরঃ- আসছে।
সাব্বিরঃ- তাহলে আমি যাই।
আবিরঃ- যাবি মানে?!!
সাব্বিরঃ- ঐ ব্যাটা, প্রেম আমি করমু না তুই করবি??!!! আমি যাই, কিছু হলে ফোন দিস। বাই...
.
সাব্বির চলে গেলো। আবির বসে বসে ভাবছে "আজ কি হবে? সালা আমার বাঁশ খাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়ে গেল নাত।" এই সব ভাবতে ভাবতে রিয়া চলে এলো। এসে আবিরের পাশে বসে আবিরকে ডাক দিলো।
রিয়াঃ- কিরে কি ভাবিস?!!!!
আবিরঃ- কিছুনা!!!
রিয়াঃ- ভালো, কেন ডেকেছিস বল।
আবিরঃ- রিয়া, আজ আমি তোকে কিছু কথা বলব যা অনেক দিন থেকে বলতে চাই কিন্তু বলতে পারিনা।
রিয়াঃ- ঠিকাছে বল...
আবিরঃ- দেখ রিয়া, আমি এই কথা এতো দিন ভয়ে বলতে পারিনি যদি বন্ধুত্ত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু না বলে আর থাকতে পারছিনা। আমকে ভুল বুঝিস না প্লিজ।
রিয়াঃ- হুমমম... বল
আবিরঃ- আমি তোকে ভালোবাসি, আমি তোকে অনেক ভালোবাসি। সব সময় তোর কথা ভাবি। খেতে ভসে, ঘুমাতে গিয়ে, পড়তে বসে, এমন কি বাথরুমেও তর কথাই ভাবি। তোকে আমি কখন ভালোবেসে ফেলেছি জানিনা। এক বছর থেকে বলার চেষ্টা করছি কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি। আমি তোর কাছে ভালোবাসা চাইছি না। শুধু যানাতে চাই আমি তোকে ভালোবাসি। 
রিয়াঃ- হুমমম... বুঝলাম। তো এখন আমি কি করবো!!!!???
আবিরের মুখটা কালো হয়ে গেল। সে এই রকম কথা আশা করেনি। আবির চুপ করে মাথা নিছু করে আছে। হটাৎ সে তার কানে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো। রিয়া আবিরের কান টেনে ধরেছে।
রিয়াঃ- এতো দিন বলিস নি কেন?! ছেলে হয়ে এতো ভয় পাস কেন?! তোর কি মনে হয়, তুই যখনি ডাকিস আমি কেন ছুটে আসি!? কেন তর ভালো মন্দ দেখি?! সালা গাধা... এই সামান্য কথা বুঝিসনা আমিও তোকে ভালোবাসি।
আবিরঃ- আআআআআ... লাগছে!!! লাগছে!!! কান ছাড়!!!
রিয়াঃ- লাগুক, আমাকে এখনো "তুই" বলিস!!! "তুমি" বল, বল "তুমি"!!!
আবিরঃ- লাগছে রিয়া!!! আআআআ!!! ছেড়ে দাও রিয়া প্লিজ!!!
রিয়াঃ- হ্যা এবার ঠিক আছে, নে ছেড়ে দিলাম!!! ব্যাথা পেয়েছ?
আবিরঃ- পাবোনা আবার, ইসসস...
রিয়াঃ- ভালো হয়ে যাবে, দেখি দেখি। ইসস... লাল হয়ে গেছেরে।
.
শুরু হলো তাদের মিষ্টি ভালোবাসার সম্পর্ক। ছোট ছোট অভিমান, মিষ্টি মিষ্টি ঝগড়া, ছোট ছোট আবদার এই নিয়ে তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক। এই ভাবে পার হয়ে গেলো কয়েক মাস।
.
একদিন আবির আর রিয়া একসাথে বিকেলে ঘুরতে বের হয়। তারা মাঝে মাঝেই এইভাবে ঘুরতে বের হয়। তারা যখন বাসায় ফেরার জন্য আসছিলো, তখন রিয়া বলে সে আইসক্রিম খাবে। তাই আবির রাস্তা পার হয়ে রাস্তার ঐ পারে যায় আইসক্রিম কিনতে। সে অনেক গুলো আইসক্রিম কিনে রিয়াকে দেয়াখ। রিয়া খুব খুশি হয়, কিন্তু তার খুশি বেশি ক্ষণ থাকেনা!!! হটাৎ একটা বিকট শব্দ হয়, চারিদিক ধুঁয়ায় ঢেকে যায়!!! রিয়া বুঝতে পারেনা কি হয়েছে, সে আবির কে খুজতে থাকে!!! কিন্তু আব্বির কোথাও নেই, সবাই ছোটাছুটি করছে!!! রিয়া এক সময় ধোঁয়ার ভেতরে দেখতে পায় তার প্রিয় আবিরের ক্ষতবিক্ষত শরীল পড়ে আছে রাস্তায়। রিয়া আর সহ্য করতে না পেরে অঞ্জান হয়ে যায়। পরে যখন সে চোখ খলে তখন সে হাঁসপাতালে। রিয়ার মনে পড়ে আবিরের কথা, সে সবাইকে প্রশ্ন করে "আবির কোথায়?"। তখন রিয়ার মা তাকে জানায় আবির সেদিন জঙ্গি বোমা হামলায় মারা গিয়েছে। এই কথা শুনে রিয়া আর অঞ্জান হয়ে যায়। তাপর থেকে রিয়া আস্তে আস্তে সে মানুষিক ভারসাম্য হারাতে থাকে। এক সময় এমন অবস্তা হয় যে রিয়াকে মানুষিক হাঁসপাতালে ভর্তি করতে হয়। কারন তাকে আর সামলানো যাচ্ছিল না।
.
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো, কিন্তু হয়নি। আস্তে আস্তে রিয়া সুস্থ হয়ে ওঠে। কয়েক বছর পরে সে তার বাসায় ফিরে আসে। হয়তো সৃষ্টিকর্তা রিয়ার বাবা-মার কষ্ট দেখতে পারেনি তাই রিয়াকে সুস্থ করে দিয়েছেন। রিয়ার বাবা-মা রিয়ার জন্য বিয়ে ঠিক করে। কিন্তু রিয়া বিয়েতে রাজি হয়না, সে এখনো আবিরকে ভালোবাসে। কিন্তু বাবা-মার মুখের দিকে তাকিয়ে সে বিয়েতে রাজী হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ের আগে সে তার হবু স্বামীকে সব কিছু জানায়। তার হবু স্বামী সব কিছু হাশি মুখে শোনে এবং সে বলে এতে তার কোনো সমস্যা নেই। তাদের বিয়ে হয়ে যায়, শুরু হয় তাদের সংসার জীবন।
.
রিয়ার স্বামী ছেলেটা খুব ভালো, আর সহজ সরল। আস্তে আস্তে রিয়া তার স্বামীকে ভালোবেসে ফেলে। এত ভালো এখটা মানুষ রিয়া আবিরের পরে আর কাওকে দেখনি, ছেলেটা অনেকটা আবিরের মত। ভালো, শান্ত, হাশি খুশি আর সব থেকে বড় কথা সব কিছু খুব সহজ ভাবে নিতে পারে। একদিন রিয়া সপ্নে আবিরকে দেখতে পায়। আবির রিয়াকে বলে সে খুব খুশি হয়েছে যে রিয়া নতুন করে জীবন শুরু করেছে। রিয়া ভালো আছে তাই সেও খুব ভালো আছে। সব থেকে মজার ব্যাপার হলো রিয়ার স্বামীর নামও আবির। রিয়া এই আবিরের মাঝে তার নিজের আবিরকে খুজে পায়। অবশ্য রিয়া বিয়ের পরে জানতে পারে তার স্বামীর নাম আবির। কারন বিয়ের আগে তাদের শুধু একবার কথা হয়েছে। এখন তারা অনেক সুখী। তাদের একটা খুব কিউট এক বছরের মেয়ে আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন