বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

***বৈশাখের ভালবাসা***

মা ! মা ! ওমা ! মাগো ! কোই গ্যালা তুমি ? হাফাঁতে হফাঁতে দ্রুত পায়ে বাড়ির আঙিনায় এসে দাড়ায় রোকন।
মাথায় বাশেঁর তৈরি একটা ঝুড়ি।আর ঝুড়ি ভর্তি মাছ।ওর বাড়ির পিছন দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদী থেকে প্রতিদিন ও মাছ ধরে।অনেক দিন থেকে
রোকন মাছ তেমন একটা পাচ্ছিল না।
আজ ও অনেক মাছ পেয়েছে।তাই আনন্দে রোকন মাকে ডাকছে।
.
তাছাড়া কাল পহেলা বৈশাখ।ওর ভাল একটা জামা কাপড় কিছুই নেই।
ও ভাবছে মাছগুলো কাল খুব ভোড়ে বেচে সকাল হবার আগেই একটা জামা কিনবে আর ওর মায়ের জন্য একটা শাড়ী কিনবে।মা ছারা তো পৃথীবির
বুকে রোকনের আপন বলতে কেও নেই।
.
তাছাড়া মায়ের পায়ের নিচে যে সন্তানের বেহেশত, রোকন তা জানে।আর তাই সেবা করে মায়ের খুশী রাখা
মায়ের আনন্দটাই সবার আগে।
সেই মাকে রেখে কিভাবে নিজের জন্য
রোকন নতুন কাপড় কিনবে।
.
এই সব ভাবচ্ছে আর আনন্দেই বিভর হয়ে মাকে ডাকছে।
- আইলি বাজান ! রান্নাঘর থেকে রোকন মায়ের জোরালো কণ্ঠস্বর শোনে।
- মা দ্যেখো, কতগুলো মাছ পাইছি।
- আল্লায় আমাগো দিক মুখ তুইলা চাইছে।
মাছগুলান কাইল বিহানে বেইচা নতুন
একখান জামা কিনুম আর তোমার লাইগা শাড়ী।বলতে বলতে মাথা থেকে
মাছের ঝুড়িটা নামাই রোকন।
ওর মা রান্নাঘর ছেড়ে উঠানে আসে।
মাছগুলো দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় হাসিনা বেগমের।খুশিতে বলে ওঠে ও বাজান ! এতো দেহি বড় বড় ইলশ্যারে !
আল্লায় হাছায় হাছায় আমোগোরে মুখ তুইল্যা চাইছে !
.
ঝুড়িটা নিজের কাছে নিয়ে রোকনকে বলে ওঠে, ব্যালানি ডুইবা যায়রে।গোসল করে আয়।আমি মাছগুলান শিতলে রাইখা খাবার দিতাছি।গোসল শেষে রোকন বাড়ি ফেরে।ওর মা ওকে
বলে, কদ্দিন বড় ইলিশ পাস না।আজ পাইছোস।তোরে একখান ইলিশের ঝোল
কইরা আইনা দিই।তারপর ভাত খাইস? রোকন বলে না, না, একটাও খাওন যাইবো না, সব গুলা বেইচা নতুন জামা আর শাড়ী কিনুম।
.
কী অর করা ! ছেলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে না যেয়ে ছেলেকে ভাত খাওয়ায়।সারাদিনের ক্লান্তিতে দুচোখ বুজে আছে
রোকনের।স্বপ্নের এসে ভিড় জমায় ওর ছোট্ট দুটি চোখের পাতায়।
সকালে উঠে গোসল করে রোকন।তারপর নতুন জামা পড়ে।ওর মা ওকে সুন্দর দেখাচ্ছে বলে প্রশংসা করে।রোকন মাকে সালাম করে।মা রোকন কে 10 টাকার একটা চকচকে নোট দেয়।নতুন নোট পেয়ে রোকন খুবই খুশী হয়।
.
তারপর রোকন বাইরে বের হয়। ওর নতুন জামা দেখে সবাই ওর প্রশংসা করে।রোকনের বন্ধুরা মিলে সবাই দলবেধে ঘুরতে বেড় হয়।বৈশাখী মেলায় যায়।মুড়ি মুড়কি খায় আর কত কিছু।
.
হঠ্যাৎ ঘুম ভেঙে যায় রোকনের।
স্বপ্নের কথা ভেবে ও খুশি হয়।
সকালে মাকে ডাকে ও মা, ওমা,
মাছগুলান দেও বেইচা আসি।
ওর মা রান্নাঘরে প্রবেশ করে মাছ আনতে।কিন্তু হঠাৎই রোকন কে ডাক দেয় বাজান. , ও বাজান এদিকে আয়। মায়ের এমন ডাকে রোকন এক লাফে রান্নাঘরে যায়।বলে কি হইছে মা ? সর্বনাশ হইছে বাজান , মাছগুলান নাইরে বাপ. !! বলতে বলতে দুচোখ থেকে অশ্রু ঝড়ে পরে।
ধপ করে রান্না ঘরে মাটির উপর বসে পরে রোকন , ওর চোখ থেকেও অঝোরে ঝরে পরে অশ্রু।
.
সকাল হয় চারিদিকে পহেল বৈশাখের খুশী।কেবল রোকন এখনো মন মরা হয়ে বসে থাকে বাড়ির ভিতরে।ওর মা পাশে যেয়ে হাত রাখে মাথায়।মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে রোকন।মা মুচকি হেঁসে আঁচলের তলা থেকে একটা নতুন জামা বেড় করে ওর সামানে মেলে ধরে।
নিমিশেই কান্নাগুলো উধাও হয়ে যায়।
অব্যক্ত হাসিঁ ফুটে ওঠে রোকনের ঠোঁটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন