মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭

ফেসবুক প্রেম :অতঃপর প্রেমের অকাল মৃত্যু

হ্যালো ফ্রেন্ডস, তোমরা সবাই কেমন আছ? নিশ্চয় ভাল আছ? প্রতি সপ্তাহের মতই আজকেও" ভালবাসার গল্প"অনুষ্ঠানে তোমাদের সাথে রয়েছি আমি লাভগুরু মাসুদ রানা। আজকে এমন একজন অথিতি আমাদের সাথে রয়েছে যিনি আমাদেরকে তার ভালবাসার গল্প শোনাবেন। আপনারা শুনতে চাইলে টিউন করুন হ্যালো এফএম ৯৮.২ তে দেশের যে কোন জায়গা থেকে। তো কথা না বাড়িয়ে শুরু করি----
'
'
আমাদের পরিচয়টা ফেসবুকের মাধ্যমেই। ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের প্রতি কেন জানি ঘৃণা কাজ করত। তাই মেয়েদের সাথে তেমনটা মেশা হয়নি। এমনকি আমার ফেবু আইডিতেও কোন মেয়েকে এড কিংবা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করিনি। এভাবেই ভার্সিটি পর্যন্ত চলে আসলাম। কোন একসময় বুঝতে পারলাম মেয়েদের সাথে আমার মেশা উচিত। তাই ফেবুতে মেয়ে এড করা শুরু করলাম। প্রিন্সেস অফ ড্রীম নামে একটা আইডিতে রিকুয়েস্ট পাঠালাম, অপর পাশ থেকে মেয়েটি রিকুয়েস্ট কনফার্ম করলেন । তারপর প্রায় দু মাস পর আমি প্রথম নক করলাম...
আমি:হাই
প্রিন্সেস অব ড্রীম :হাই
আমি:কি করেন? কেমন আছেন?
প্রিন্সেস অব ড্রীম:কিছুনা, ভাল.....।
এভাবেই আমাদের কথোপকথন শুরু হল। প্রথম প্রথম মেয়েটা রিপ্লাই কম দিত। এর কারন পরে জানতে পারছি, উনি এফবি জগতে নতুন, তাই দেরিতে রিপ্লাই। তারপর অনেকদিন কথা হয়নি।ফেইক আইডি ভেবে আমি তাকে আনফ্রেন্ড করে দিলাম।তারপর হঠাৎ একদিন মেসেজ রিকুয়েস্ট চেক করতে গিয়ে দেখতে পারলাম উনি আমাকে মেসেজ করেছেন এবং আবার রিকুয়েস্ট দিয়েছেন। মেসেজটি ছিল এরকম "আপনি এত স্বার্থপর কেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করছি যে আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিলেন? "তারপর রিকুয়েস্ট গ্রহন করলাম। আমাদের নতুন করে আবার চ্যাটিং শুরু হল।এভাবে দেড় কিংবা দুই মাস চ্যাটিংয়ের পর আমি বুঝতে পারলাম ও আমার প্রতি দুর্বল। আমিও একটু একটু দুর্বল হয়ে পড়ছি ওর প্রতি। তারপর কোন এক চাঁদনী রাতে , আকাশে যেমন পূর্ণিমার চাঁদ তার সবটুকু আলো ঢেলে দিয়ে পুরো পৃথিবীকে রাঙায়িত করেছিল তেমনি আমার সবটুকু আবেগ ঢেলে তাকে প্রপোজ করছিলাম সেদিন। ও প্রপোজ গ্রহণ করল।দুই তিনটা ছোট ছোট খোকা খুকুমনির বাবা মা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই শুরু হল আমাদের একই আত্মার দুটি দেহের পথ চলা।
'
তারপর কেটে গেল আমাদের আরও একটি সুখের মাস। তখনো আমাদের ফোনে কথা হয়নি একদিনও। সেদিন ছিল ১৩ এপ্রিল ২০১৬,অচেনা নম্বর থেকে একটা ফোন আসল, সেটা আর কেউ নয় আমার স্বপ্নের রাণী। কিন্তু পরিচয় দিল আমি আফসানা অনুভবা। সেদিন সারা রাত ফোনে মেয়েটির সাথে মেসেজ চ্যাটিং হল। সে অন্য মেয়ে সেজে আমাকে পরীক্ষা করতেছিল। সে পরীক্ষায় পাশ করলাম। পরদিন ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ, রুম থেকে বের হইনি একটা বারের জন্য। রাত আটটার পর রুম থেকে বের হয়ে হাটতেছিলাম আর ফোনে কথা বলতেছিলাম ওর সাথে। ও সেদিন বলেছিল , তোমার হাত ধরে হাটতে আমার খুব ইচ্ছে করতেছে। আমি সেদিন কি খুশিটা না হয়েছিলাম, বলে প্রকাশ করতে পারবনা। আমি ভাল গান পারি, ও ও পারে।আমি ওকে গান শোনাতাম। ও বলত আমরা এক সাথে পুরো জীবনটা কেটে দিব। আমরা তখন সুখের নৌকায় সুখের সমুদ্র পারি দিচ্ছিলাম।মাঝপথে এসে যে ও নৌকা ছিদ্র করে দিয়ে অন্য নৌকায় চলে যাবে কে জানত?...
'
লাভগুরু :হ্যালো ফ্রেন্ডস, একটা ছোট্ট বিজ্ঞাপন বিরতি, ফিরে আসছি এক মিনিটের মধ্যেই। তোমাদের সাথে রয়েছি আমি লাভগুরু মাসুদ রানা.....
'
লাভগুরু :তারপর কি হল বলেন?
অতিথি: আমি রাবিতে পড়াশোনা করি আর ও এবার ভার্সিটি এডমিশন টেষ্ট দিবে। আমি ওকে বলতাম, তুমি যদি ঢাবিতে চান্স পাও তবে তো আমাকে ভুলেই যাবে। তখন ও বলত, তাহলে আমি ঢাবিতে পরীক্ষাই দিবনা। এসব কথা শুনে মনে হত ও আমাকে সত্যিকার ভাবেই লাভ করত। ২৩ শে মে, আমরা একটা পার্কে সাক্ষাৎ করছিলাম।এখানে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। ও আমার জন্য একটা অর্কিড সহ গোলাপ ফুলের তোড়া নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে বলছিল, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ (যদিও আমার সেদিন বার্থডে ছিলনা) আমি আবার ধন্যবাদ না দিয়ে হ্যান্ডশেক করেছিলাম। এএ নিয়ে দুজনেই অনেক্ষন হাসলাম। 
'
লাভগুরু : হা হা হা... অনেক মজা পাইলাম।
অতিথি :প্রায় দেড় ঘন্টার মত সময় কাটিয়ে আমি ক্যাম্পাসে চলে আসলাম। ওকে সেদিন বলছিলাম তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে, আমাকে কি তোমার পছন্দ হয়েছে? ওর উত্তর হ্যাঁ।ক্যাম্পাসে আসার পর ওর ফোন দুইদিন অফ পাই। আমি তখন পাগলের মত হয়ে গেছলাম, দুইদিন পর ওকে ফোনে পাইলাম।আমি সেদিন কেঁদে কেঁদে বলছিলাম তোমার কি হয়েছে? ফোন অফ কেন? ও বলল আম্মু অসুস্থ, সারাদিন বিজি থাকি তাই। তারপর আবার কথা চলতে থাকল। একটা বিষয় লক্ষ্য করছিলাম, ও এফবিতে থাকলে এখন আর আমাকে আগে থেকে নক করেনা। ফোন দিলে ঠিকমত ফোন রিসিভ করেনা। ২০/২৫ বার ফোন দিলে একবার রিসিভ করে। রিসিভ করলেও বলে আম্মু আছে সাথে, এখন কথা বলা যাবেনা, নানা অজুহাত।আমি ওকে বলতাম, তুমি যদি আমাকে পছন্দ না কর তবে আমাকে বল, আমি তোমায় আর ফোন দিবনা। ও বলত নাগো জানু , তুমি আমার সমস্যাটা একটু বোঝার চেষ্টা কর। আরও বলতাম, আমি যদি তোমাকে ছেড়ে চলে যাই তুমি কষ্ট পাবেনা? ও বলত তুমি আমাকে কখনই ছেড়ে চলে যাবেনা এবং আমিও যাবনা। আমি এমন বোকা ছিলাম, নির্দ্বিধায় ওর কথাগুলো বিশ্বাস করতাম। সময় গুলো খুব খারাপ যাচ্ছিল আমার। তাই বাসা গেলাম। ওর রিস্পন্স না পেয়ে বাসায় খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিলাম।বাসা থেকে ক্যাম্পাস আসার সময় মা আমি দুজনেই অনেক কেঁদেছি। চলে আসলাম ক্যাম্পাসে। ইতোমধ্যে, আমার থার্ড ইয়ার ফাইনাল এক্সাম চলে আসল।পরীক্ষার আগের রাত্রে ওকে ফোন দিলাম, দুই মিনিট কথ বলে কেটে দিল। প্রথম পরীক্ষাটা একটু ভাল হল। ১১ ই জুন রাত্রে তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল আমাদের মাঝেে।তো আমি....
.'
লাভগুরু : ওয়েট ওয়েট..।সেই তুচ্ছ বিষয়টা কি ছিল?
'
অতিথি:মানে ও একটা ওর নিজের পিক প্রোফাইল পিক হিসেবে আপলোড করেছিল।ওর নিজের পিক এফবিতে আপলোড করুক আমি তা পছন্দ করিনা।ঐ পিকটাতে কমেন্ট করেছিলাম, মেয়ে ডিজিটাল হয়ে গেছে। আর এই অজুহাত নিয়ে ও আমার সাথে ঝগড়া করেছিল। তারপর সন্ধ্যায় ও আমাকে এস এম এস করে জানিয়ে দিল, তোর সাথে রিলেশন ব্রেকআপ।তুই আমাকে ফোন কিংবা মেসেজ কিছুই দিবিনা। দিলে এই নম্বর চিরতরের জন্য অফ রাখব। সে সময় আমার চারপাশে পুরো পৃথিবী ঘুরতে ছিল। অনেক বোঝাইলাম তাকে সে কথা শুনলো না।আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের কাছে কোন দিন ছোট হইনি। কিন্তু ওর পা পর্যন্ত ধরেছিলাম সেদিন রিলেশনটা টিকে রাখার জন্য। কিন্তু না, ও কোন ভাবেই রিলেশন কন্টিনিউ করতে পারবেনা। শেষে ওকে বললাম তুৃমি আমার সাথে রিলেশন না কর নাই পরীক্ষা অবধি আমার সাথে এমনিতে কথা বল। ও রাজী হলনা।তারপর ফোন নম্বর ব্লাক লিস্টে, এফবিতে ব্লক। সেদিন রাত আটটা থেকে রাত বারেটা পর্যন্ত কান্না করছি। পরেরদিন ছিল প্রথম রোজা, সেহরী না খেয়ে রোজা রেখেছিলাম। এভাবে প্রায় পাচ দিন খুব করে কাঁদছিলাম। জানি ও আমার আর কোন দিন হবেনা। কিন্তু প্রথম ভালবাসা বলে কথা, সেটা কি আর কখনো ভোলা যায়?
'
লাভগুরু: ওকে কি এখনো ভালবাসেন?
'
অতিথি : হুম বাট ওকে আর আমি চাইনা।ও চলে যাওয়াতে আমার জীবনে বেশ কয়েকটা পরিবর্তন এসেছে।
এক. দিনে এক প্যাকেট সিগারেট খাওয়া, যদিও আমি এর আগে কখনো সিগারেট খাইতামনা।
দুই. পরীক্ষায় ইয়ার লস্। 
তিন. বন্ধুদের সাথে আড্ডা অনেকগুনে বেড়ে যাওয়া,ফেসবুকে সময় কাটানো।
চার. কোন মেয়েকেই আর বিশ্বাস না করা। এখনো মাঝরাতে মেয়েটার জন্য কাঁদি আমি, সে কান্না হৃদয়ের কান্না, যেখানে নেই কোন চোখেরজল, আছে শুধু তাজা রক্ত।আর এই কান্না শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তাই দেখতে পারে আর কেউ নয়! আর কেউ নয়!😖😖
'
লাভগুরু: ওফ্...,অনেক হৃদয় বিদারক একটা লাভ স্টোরি শুনলাম, যেখানে কোন একসময় শুধু ভালবাসা ছিল। মেয়েটি অবহেলার কারনে সুন্দর রিলেশনটির অকালমৃত্যু ঘটল।শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ভালবাসা অবহেলার ব্যাস্তানুপাতিক।তুমি যে হারে তোমার মনের মানুষকে অবহেলা করবে সে হারেই তোমার প্রতি তার ভালবাসা কমতে থাকবে। তাই সবার প্রতি আমার অনুরোধ, কেউ যদি কাউকে পছন্দ না কর তবে তাকে ডিরেক্ট বলে দাও। সে হয়তবা তখন কষ্ট পাবে কিন্তু সেটা সাময়িক। নতুবা অনেকদিন ভালবাসার সম্পর্ক করার পর এরকম কথা বললে সেই মানুষটি সারাজীবন কষ্ট পেয়ে যাবে। আর বর্তমানে ফেসবুকে অনেকেই রিলেশনশিপে জড়িয়ে পড়ে এবং সেগুলো খুব কমই টিকে। ফেবুতে রিলেশন করার শুরুতে আগে দুজনই দেখা করে নিবা।তারপর একে অপরকে পছন্দ করলে রিলেশন কন্টিনিউ করতে পার নতুবা সেখানেই ফুলস্টপ। আর আজকের অতিথি অর্থাৎ রিপনকে বলছি তোমাকে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। লেখাপড়া ভাল করে করতে হবে। তোমার পিতামাতার জন্য তোমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আর মনে রাখবে: Love does not need to be perfect, it just needs to be true.
'
সত্যিকাররের ভালবাসাগুলোকে কখন ও ভোলা যায়না।শুধুমাত্র ভুলে থাকার অভিনয় করতে হয়। অভিনয় করতে করতে কোন একসময় মনে হয় যেন তাকে ভুলেই গেছি। কিন্তু তা নয়। মাঝে মাঝে গভীর রাতে মনে হয় আমি কোন একজনকে এখনো খুব গভীরভাবে মিস্ করি। নম্বর নিশ্চিত ব্ল্যাক লিস্টে আছে জেনেও নিজের অজান্তেই ফোনের স্কীনে ভালবাসার মানুষটির নম্বর তোলা একটা অভ্যাস হয়ে গেছে।পৃথিবীতে হয়ত সত্যিকারের ভালবাসা গুলো কখনো সফল হয়না কিন্তু সে ভালবাসার রেশ অনেক বছর মস্তিষ্কে থাকে,ভালবাসার মানুষ গুলোও চলে যায় কোন একদিন পৃথিবী ছেড়ে কিন্তু বেঁচে থাকে তাদের অসফল ভালবাসাগুলো হাজার হাজার বছর ধরে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন