আমি নীল। এখন বিকেল, ছাদে বসে আছি, আর হাতে একটা আজকের খবরের কাগজ। বসে বসে নিউজ পড়ছি। আমি আমার অফিস দেখাশোনা করি। তবে খুব কম যাই অফিসে। কারণ টা একটু পরেই জানতে পারবেন।
.
আমি অফিসে যাই সপ্তাহে দু একদিন, তবুও তিন চার ঘন্টার জন্য। শুধু একটু ফাইল গুলো নাড়াচাড়া করে এসে পড়ি। অফিসের সব দায়িত্ব ম্যানেজারের উপরে ছেড়ে দিছি । বিশ্বস্ত ম্যানেজার তাই কোনো সমস্যা নেই।
.
আর নিউজটা পড়তেছি, হটাৎ পেছন থেকে ঠান্ডা নরম দুটি হাত আমার চোখ ধরলো।
- কি হলো আম্মু? ঘুম শেষ?
- হুম,
- আসো বসো।
-আব্বু আমি আর বিকেলে ঘুমাবো না।
- তাহলে কি করবে?
- তোমার সাথে ঘুরতে যাব।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- আব্বু ( দুহাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো)
- বলো,
- আমার ডল চাই।
- কতবড় ডল?
- বড় বড়।
- তোমার থেকে বড় না ছোট?
- আমার থেকে বড় আনলে তো আমি ওদের নিয়ে খেলতে পারবো না, ওরা আমাকে নিয়ে খেলবে।
- হিহিহি, ওরা তো আর নাড়াচাড়া করতে পারে না, ওরা তোমাকে নিয়ে খেলবে কি করে?
- জানি না, তুমি কাল এনে দিবে।
- আচ্ছা আম্মু কাল বিকেলে এনে দিব।
- উমমমমা, লক্ষী আব্বু।
- দাড়িয়ে আছো কেন? বসো।
- কোলে বসি?
- বসো।
- আব্বু জানো, কালকে আমি অনেক সুন্দর দেশে গিয়েছিলাম, সপ্নে।
- কোন দেশে।
- যেখানে আম্মু গেছে, আমি আম্মুকেও দেখছি ওখানে। বাবা আমি ওখানে আম্মুর কাছে যাব।
- চুপ, একদম চুপ, আর ও দেশের কথা বলবে না।
- কেন আব্বু?
- ও দেশ খারাপ।
- তাহলে আম্মু গেছে কেন?
- জানি না।
- আম্মু কবে আসবে ওখান থেকে?
- জানি না।
- ওহ্, আব্বু চলো বল খেলি।
- আচ্ছা চলো।
.
তারপর ওকে নিয়ে বল খেলতে লাগলাম। এটা আমার মেয়ে রিধি। ওকে এবার ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করিয়ে দিছি। খুব ভালবাসি ওকে। এটা আমার কলিজার টুকরা। ওকে ছাড়া আমি এখন কিছু কল্পনা করতে পারি না।
.
রিধি চলে যাওয়ার পর আমি ওর নামও ওই একই ভাবে রাখি। যাতে ওর ভেতরেই আমি আমার হারিয়ে যাওয়া রিধি কে খোঁজে পাই। ওর আম্মুর নামও ছিলো রিধি। কিন্তু আজ আর সে রিধি নেই। আমাকে এই ছোট্ট রিধি উপহার দিয়ে সে চির নিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়ছে।
.
তাই ওর নাম অনুসারেই আমি আমার মেয়ের নাম রাখি। কখনো চোখের আড়াল হতে দেই না ওকে। রিধি যাওয়ার আগে আমাকে বলে ছিলো,, আমি যেন ওর সবসময় খেয়াল রাখি, দেখাশোনা করি। ওর ইচ্ছে গুলো পূর্ণ করি, সবসময় যেন ওকে যথেষ্ট সময় দেই। কোনো সময় যেন কান্না না করে সেভাবে যেন রাখি, ও কাঁদলে কিন্তু আমিও কাঁদবো। আর পারলে ওকে আরেক টা নতুন আম্মু এনে দিও।
.
তার জন্যই আমি এখন রিধিকে আমার চোখের আড়াল হতে দেই না, সবসময় আগলে রাখি। অফিসে কম সময় দেই, আমার রিধিকে অনেক সময় দেই। কারণ ওর আম্মুর অভাবটা যে আমাকেই পূর্ণ করতে হবে। যদিও আমি ওর আম্মুর অভাব টা পূর্ণ করতে পারবো না তবুও কিছুটা হলে পারবো।
.
কিন্তু রিধির আম্মুর শেষের কথাটা আমি কোনো ভাবেই রাখতে পারবো না, রাখা সম্ভব না। সবকথা রাখতে পারবো, কিন্তু ও কথা কিছুতেই রাখতে পারব না। কারণ আমি রিধির জায়গায় আর কাউকে বসাতে পারবো না। আজও ওকে খুব ভালবাসি, সেই আগের মতো।
.
রিধিকে যখন স্কুল থেকে আনতে যাই তখন ও বলে,, আব্বু আমার আম্মু আসেনি কেন? সবার আম্মু আসছে আমার আম্মু কেন আসেনি? সবার আম্মু ওদের কে কত আদর করে কিন্তু আমার আম্মু আসে না, আমাকে আদর করে না, আম্মু খুব পচা।
.
তখন আমি কিছু বলতে পারি না, কি বলে বোঝাবো ওকে, ওর আম্মু নেই। তখন শুধু চিৎকার করে কাদতেঁ ইচ্ছে করে আর বলতে ইচ্ছে করে, প্লিজ ফিরে আসো রিধি। আমার জন্য না হলেও এই ছোট্ট রিধির জন্য ফিরে আসো।
.
তারপর রিধির সাথে খেলা শেষ করে ওকে খাইয়ে নিয়ে আমি সেই পুরনো দিনের ডাইরিটা খুলে বসলাম। আমাদের সব কিছু লেখা আছে এটায়। ডাইরির সামনে আসলেই মনে পড়ে সেই দিন গুলোর কথা।
.
- নীল ৫০০০ হাজার টাকা দে।
- কেন?
- তুই আমারে প্রপোজ করছিস তাই।
- প্রপোজ তো সেই ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার থেকেই করে আসছি, এতদিন তো টাকা চাস নাই।
- আজকে পহেলা বৈশাখ আর বৈশাখী মেলা, তাই টাকা দে।
- দিব না, এমনিতেই তুই আজ আমারে ফকির করছস।
- গরু কোথাকার।
- হিহিহি, তুই আমার গাভী।
- কিইইইই???
- হুম, আমার জোড়া।
- ওই নীল খাড়া খাড়া, তরে আজ খাইছি রে,
.
ভাগ নীল ভাগ, নইলে আজকে তুই শেষ। চোখ বুইঝা কাঠ গাছের ভেতর দিয়ে দিলাম দৌড়।
এটা আমি আর রিধি। দুজনেই এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ার। আর আমি ওকে সেই ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার থেকে প্রপোজ করে আসছি, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।
.
আমি যখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে উঠি তখন ওর সাথে ফ্রেন্ডশীপ হয়। তার আগে দুজন দুই স্কুলে ছিলাম তাই কাউকে চিনতাম না, কলেজে এসে পরিচয় আর বন্ধুত্ব হয়।
.
তারপর কয়েক মাস পর বুঝতে পারলাম আমি রিধির প্রতি দূর্বল, আর তারপরই ওর জন্য আমার মনে ভালবাসার জন্ম নিছে।
.
কিন্তু আমি তখন ওকে প্রপোজ করতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। যদি আমার ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট করে দেয়।
তবুও যখন সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম তখন অনেক সাহস নিয়ে দুটি গোলাপ ফুল নিয়ে রিধি কে প্রপোজ করলাম। রিধি তার বদলে আমাকে দুটি থাপ্পড় দিল।
.
আমি দিলাম দুটি ফুল ও দিল দুটি থাপ্পড়। আমি ভাবছিলাম এর পর আর আমার সাথে কথাই বলবো না, কিন্তু ও সেই আগের মতোই আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ আচরণ করতে লাগলো।
.
তাই আমিও সাহস পেলাম, আমি তো আর হাল ছাড়ার পাত্র না। তারপর থেকে প্রতিদিন আমি ওকে প্রপোজ করতাম, একেক দিন ফুল দিয়ে, আবার ফুল ছাড়া। কিন্তু ও আমাকে প্রতিদিন কুত্তা বিলাই বলে গালি দিতো।
.
সেই তখন থেকে ঘুরতে ঘুরতে আজ পর্যন্ত অনার্সে উঠলাম কিন্তু ও আমার প্রপোজ এক্সেপ্ট করলো না।
.
আর আজ বৈশাখী মেলা, আমি ওকে এখানে নিয়ে আসছি, সারামেলা ঘুরে দেখার পর, আমার পকেটে খালি করার পর, আমি মেলার পাশে ওকে নিয়ে এক বাগানে যাই, সেখানে প্রপোজ করি, আর তার বদলে ও উল্টে টাকা চাইলো, শয়তান মেয়ে। আবার আমাকে এতদূর দৌড়ালো।
.
পেছনে তাকিয়ে দেখি পাগলী হাঁপিয়ে গেছে, বসে আছে গাছের গুড়ির উপর।
- নীল বাসায় দিয়ায়, বাসায় যাব।
- একা যেতে পারিস না।
- না।
- অনার্সে পড়িস তবুও একা যেতে পারিস না, ঢংগী।
- ওই চুপ, তাহলে এখানে নিয়ে আসলি কেন?
- তোকে প্রপোজ করতে।
- করা তো শেষ, এখন দিয়ায়।
- তুই তো এক্সেপ্ট করলি না।
- দিয়ে আসবি কিনা?
- আচ্ছা, চল।
.
এই হলো রিধি। ওকে যাই করি না কেন! ও আবার আমার কাছেই আসবো। এইতো এখন দৌড়াল আবার এখনই বলে, নীল আমাকে দিয়ায়। তবুও কখনো বলেনি, নীল আমি তোকে অনেক ভালবাসি।
.
এতদিন ধরে ওকে ভালবাসি তবুও ও কেন আমাকে ভালবাসে না? ও কি আমার কষ্ট টা বুঝে না? বুঝলে এমন করতো? ও আমাকে শুধুই বন্ধু ভাবে।
.
এভাবে চলে গেল অনেক দিন, প্রতিদিন আমি ওর কানের কাছে ভালবাসি বলে কত চিল্লাচিল্লি করি কিন্তু ও কথা রিধির কানেই যায় না। কি করি এখন?
.
আমাদের অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা এসে পড়ছে। পরীক্ষার পর বোধ আর ওর সাথে দেখা হবে না, কারণ, আমি আর পড়বো না, বাবার অফিসের দায়িত্ব দিছে। এখনই কিছু কিছু দিয়ে দিছে, পরীক্ষার পর তো পুরোটাই দিব। তাই আর হয়তো ওর সাথে আর দেখা হবে না। ভাবলাম, শেষ পরীক্ষার পর প্রপোজ করবো, শেষ বারের মতো।
.
পরীক্ষা শুরু হলো, তবুও আমি পরীক্ষা দেওয়া সময় ওর জন্য ফুল নিয়ে গেছি, শেষ পরীক্ষার দিন যখন আমি প্রপোজ করলাম সেদিন আবার একটা থাপ্পড় দিল।
.
তখন খুব রাগ হয়ে ছিলো। তাই মাথা নিচু করে চলে আসলাম। এত বছর ধরে একটা মেয়ের পেছনে ঘুরলাম তবুও আমার জন্য ওর মনে একটুও আলাদা ভালবাসার জন্ম হলো না। আমার ভালবাসার কোনো দামই দিল না।
.
পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। আর আমিও অফিসে গিয়ে বসলাম। তারপর আর রিধির খবর নেইনি।
.
অনেক দিন পর,,,
.
- নীল শুন।
- হ্যাঁ, বাবা বলো।
- অনেক তো হলো, এবার একটা বিয়ে কর।
- এখনই?
- হুম,
- আচ্ছা তোমরা যখন বলছো তাইলে করবো।
- তাহলে সামনের শুক্রবারে আমার বন্ধুর মেয়েকে দেখতে যাব।
- আমার দেখার দরকার নাই, তোমার পছন্দই আমার পছন্দ।
- বাঃ, ভালো তো।
- হুম।
.
তারপর রুমে চলে আসলাম, আজ রিধির কথা মনে পরছে, ওর বোধ হয় এতদিনে বিয়ে হয়ে গেছে। ও যদি বিয়ে করতে পারে আমি পারবো না কেন? আমিও পারবো।
.
তারপর কয়েক দিন পর .....
আমার আজ বাসর রাত,,, বিয়ে করে বউ বাড়িতে আনলাম, তবুও এখনো বউয়ের মুখ দেখিনি। ঘরের ভেতর গিয়েই দেখবো।
.
রাত ১২টায় ঘরে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি বউ আমার ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে খাটে বসে আছে,, মুখ দেখার উপায় নেই। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে, কাছে এসে সালাম করে আবার আগের জায়গায় ফিরে গেল।
.
আমি গিয়ে অপর পাশে বসে পড়লাম। আজ খুব মনে পড়ছে রিধির কথা। আজ ও যদি এখানে বউ সেজে বসে থাকতো তাহলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না। কিন্তু ওর বদলে এটা কে বসে আছে কপালে জানে!!!
.হটাৎ,
.
- এতো সময় কই ছিলি?
- মানে?
- বাংলা বুঝস না, হারামজাদা? এতো সময় কই ছিলি?
- একি আমার সাথে আপনি তুই করে বলছেন কেন?
- তাহলে কি আপনি করে বলুম?
- তাই।
- ওই তুই আমারে চিনোস? ( ঘোমটা সরালো)
- রিধি তুই?
- কারে আশা করছিলি?
- আমার বউ কই?
- আমি কি ভূত নাকি?
- তুই আমার বউ?
- হুম।
- এখানে আসলি কেমনে?
- তুই তো বিয়ে করে আনলি, আবার এখন বলে কেমনে আসলি?
- এখানে আমার বন্ধুর মেয়ে থাকার কথা।।
- আমি কি তোর বাবার শত্রুর মেয়ে নাকি?
- আমি কিচ্ছু জানি না,,,, তুই এখানে কেন?
- আচ্ছা বলছি,,,
আমি যখন ক্লাস টেনে পড়তাম, তখন অনেক ছেলে আমাকে প্রপোজ করতো কিন্তু আমি কাউকে এক্সেপ্ট করতাম না। কিন্তু একবার ভাবলাম এর পরে কেউ প্রপোজ করলে এক্সেপ্ট করবো, দেখি তারপর কি হয়?
.
কিন্তু বাবা জেনে যায়, আমাকে অনেক বাজে ছেলেরা প্রপোজ করতেছে তাই আমাকে ডেকে বলে,
রিধি তোর বিয়ে আমি আমার বন্ধুর মেয়ের সাথে ঠিক করে রাখছি, তাই বিয়ের আগে এসব প্রেম ভালবাসায় না গেলেই খুশি হবো।
.
তাই আমি এরপর আর কারও প্রপোজ এক্সেপ্ট করিনি। কয়েক দিন পর বাবা তোর ছবি দেখালো, সেদিন আমি খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। সবার সামনে ছবিটি দেখিয়ে ছিলো তাই। তারপর কলেজে এসে দেখা হয় তোর সাথে। দেখা হওয়ার পর থেকেই তোকে ভালবাসতে শুরু করি।
.
ফাইনাল ইয়ারে এসে তুই যখন আমাকে প্রপোজ করলি তখন আমি তোকে ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ হলো,, ভাবছিলাম প্রেম ভালবাসা বিয়ের পরই হবে, বিয়ের আগে করতে হবে না, কারণ আমাদের বিয়ে তো একদম নিশ্চিত হবেই,,, তো বিয়ের আগে প্রেম করে কি হবে??
.
আর তোকে তখন হারানোর ভয় ছিলো না,, কারণ তোকে আমার সবসময় চোখের সামনে রাখতাম। আর তোর উপর কখনো রাগও করতাম না। বিশ্বাস কর নিজের থেকেও বেশী ভালবাসি তোকে।
.
তোকে মারতাম বকতাম ঝগড়া করতাম,, এগুলো করলে তুইও হাসতি তখন আমার খুব ভালো লাগতো।
.
কিন্তু তুই অনার্সের পরীক্ষা শেষে তুই আমার একটু খবরও নিলিনা না,, কেন কষ্ট দিলি এভাবে বল? একটুও ভালোবাসিস না আমাকে। তাহলে এমন করতে পারতি না। ( এই বলে আমার বুকে এসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতেঁ লাগলো)
.
- ( আমি কি বলবো আর,, আমি সত্যিই খুব খারাপ,, পরীক্ষার পর একবারও ওর সাথে যোগাযোগ করিনি,, আমি ওর ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না,, একটা অপরাধী আমি)
তারপর আমিও আরও শক্ত করে, জড়িয়ে নিলাম।
.
( বিড়ালটা শেষ রাতে মারবো, বুঝছেন)
.
তারপর থেকে চলতে থাকে আমাদের দুজনের সুখের সংসার। কোনো কিছুর অভাব নেই আমাদের মাঝে। বিশেষ করে ভালবাসাটা একটু বেশীই আছে। একটু একটু ঝগড়া হতো,, সামান্য ভুল নিয়ে, তবুও কেউ কাউকে ছেড়ে দুই মিনিট থাকতে পারতাম না।
.
আমি রেগে গেলে আমি রিধির কাছে ঘেষতাম আর আমি রাগ করলে রিধি আমার কাছে ঘেষতো। তাই কখনো রাগ হতো না,,, দুজনে খুব সহজে আর তাড়াতাড়ি মিলে যেতাম।
.
দুই বছর পর,,,
.
আমার আজ খুব টেনশন হচ্ছে,,, কি হতে চলেছে। আজ আমার জানপাখি টা হাসপাতালে শুয়ে ব্যথায় ছটফট করছে,, আজ পাগলীটা আম্মু হতে চলছে।
.
আমি আজ শুধু একটা জিনিসই চাইছি ওর যেন কিছু না হয়।
কতখন পর ডাক্তার হাসি মুখে এসে বললো, আমার একটা মেয়ে হইছে,,, আমি ভেতর গিয়ে দেখি, পাগলীটার পাশেই ওই পুঁচকে মেয়েটা আছে।
.
আমি সেদিন খুশিতে কেঁদেই দিছিলাম।
.
তারপর আমরা সুস্থ ভাবেই বাসায় যাই। এর তিন মাস পর, হটাৎ একদিন রিধি মাথা ঘুরে পরে যায়,,
.
ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার বলে,, বাচ্চা প্রসবের সময় ওনার ব্রেনে খুব চাপ পড়ছিল,, যার ফলে, ব্রেইনের কিছু অংশ ব্লক হয়ে যায়। এখন অপারেশন করতে হবে, বাচার সম্ভবনা নাই,, অপারেশন না করলেও বাঁচবে না বেশী দিন।
.
তখন রিধি আমার কাছেই ছিলো ও এ কথা শুনে ওখানেই চিৎকার করে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতেঁ থাকে। আমাকে ছেড়ে ও কথাও যেতে চায় না।
সেদিন আমার চোখের জলও থামিয়ে রাখতে পারিনি।
.
রিধির মুখের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার কে অপারেশন করতে বললাম,, যত টাকা লাগে আমি দেব, তবুও আমার জানটার যেন কিছু না হয়।
.
অপারেশন থ্রিয়েটারে যাওয়ার আগে আমাকে আর ছোট্ট রিধি কে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করছিল,, আমিও সেদিন খুব কেঁদেছিলাম।
যাওয়ার সময় বলছিল,,,
নীল আমি জানি না এই অপারেশন রুম থেকে জ্যান্ত ফিরে আসতে পারবো কিনা? যদি না আসতে পারি তাহলে আমাদের রিধি কে দেখিস। সবসময় তোর কাছে রাখিস। কখনো কষ্ট দিস না। ওই তো এখন আমাদের ভালোবাসার শেষ স্মৃতি।
.
ওকে আগলে রাখিস। ওর মাঝেই আমাকে খোঁজে পাবি। সবসময় অফিসে দৌড়াদৌড়ি করিস না,, রিধি কে যথেষ্ট সময় দিস। নয়তো আমি কাঁদবো।
.
আর আমাকে নিয়ে কষ্ট পাস না,, জীবন সুন্দর করে গড়ে তুলিস। আর নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখিস, হেয়ালি করবি না একদম।
আর আমাদের মেয়েকে তোর নিজের মতো করে গড়ে তুলিস।
.
সারাজীবন তোকে ভালবাসতে পারলাম না রে,, পারলাম না আমার ভালবাসার আচলে তোকে বেধে রাখতে,, তার আগেই হয়তো আমাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। নিজের প্রতি আর রিধির প্রতি খেয়াল রাখিস।
.
পাগলীটা হয়তো সেদিন আরও কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই ডাক্তার এসে ওকে ভেতর নিয়ে যায়।
.
সেদিন রিধি ফিরে এসেছিল ও রুম থেকে ঠিকই কিন্তু সুস্থ হয়ে নয়, কাফনের কাপড়ে শুয়ে। সেদিন ওকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলাম,, কেউ তখন থামাতে পারে নি।
.
ছোট্ট রিধি টাও বোধ হয় এ কষ্টটা অনুভব করে ছিলো,, আম্মুর পাশে শুয়ে রিধিও তখন খুব কেদেছিলো।
.
তারপর থেকেই আমাদের দুজনের জীবন, আমি আর ছোট রিধি,,, বড় রিধি তো নেই, তাই ছোট রিধি কে নিয়েই আমার ছোট সাজানো সংসার।
.
রিধি আমাকে যা যা করতে বলছিল সবই করছি,, ওর সব কথা পালন করছি, শুধু একটা কথা রাখতে পারিনি। রিধি কে নতুন আম্মু দিতে পারিনি। হয়তো পারবোওনা। এর জন্য বোধ হয় পাগলীটা অনেক রাগ করবো,, কিন্তু কি করবো বল? তোর জায়গা যে কাউকে দিতে পারবো না,, সবটুকু ভালবাসা শুধু তোর জন্য।
.
এখন আমি আমার এই ছোট্ট রিধি কে আগলে ধরে বেচে আছি। আমাকে বাঁচতেই হবে,, নিজের জন্য নাহলেও এই রিধির জন্য আমি বাচবো।.
.
আমি অফিসে যাই সপ্তাহে দু একদিন, তবুও তিন চার ঘন্টার জন্য। শুধু একটু ফাইল গুলো নাড়াচাড়া করে এসে পড়ি। অফিসের সব দায়িত্ব ম্যানেজারের উপরে ছেড়ে দিছি । বিশ্বস্ত ম্যানেজার তাই কোনো সমস্যা নেই।
.
আর নিউজটা পড়তেছি, হটাৎ পেছন থেকে ঠান্ডা নরম দুটি হাত আমার চোখ ধরলো।
- কি হলো আম্মু? ঘুম শেষ?
- হুম,
- আসো বসো।
-আব্বু আমি আর বিকেলে ঘুমাবো না।
- তাহলে কি করবে?
- তোমার সাথে ঘুরতে যাব।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- আব্বু ( দুহাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো)
- বলো,
- আমার ডল চাই।
- কতবড় ডল?
- বড় বড়।
- তোমার থেকে বড় না ছোট?
- আমার থেকে বড় আনলে তো আমি ওদের নিয়ে খেলতে পারবো না, ওরা আমাকে নিয়ে খেলবে।
- হিহিহি, ওরা তো আর নাড়াচাড়া করতে পারে না, ওরা তোমাকে নিয়ে খেলবে কি করে?
- জানি না, তুমি কাল এনে দিবে।
- আচ্ছা আম্মু কাল বিকেলে এনে দিব।
- উমমমমা, লক্ষী আব্বু।
- দাড়িয়ে আছো কেন? বসো।
- কোলে বসি?
- বসো।
- আব্বু জানো, কালকে আমি অনেক সুন্দর দেশে গিয়েছিলাম, সপ্নে।
- কোন দেশে।
- যেখানে আম্মু গেছে, আমি আম্মুকেও দেখছি ওখানে। বাবা আমি ওখানে আম্মুর কাছে যাব।
- চুপ, একদম চুপ, আর ও দেশের কথা বলবে না।
- কেন আব্বু?
- ও দেশ খারাপ।
- তাহলে আম্মু গেছে কেন?
- জানি না।
- আম্মু কবে আসবে ওখান থেকে?
- জানি না।
- ওহ্, আব্বু চলো বল খেলি।
- আচ্ছা চলো।
.
তারপর ওকে নিয়ে বল খেলতে লাগলাম। এটা আমার মেয়ে রিধি। ওকে এবার ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করিয়ে দিছি। খুব ভালবাসি ওকে। এটা আমার কলিজার টুকরা। ওকে ছাড়া আমি এখন কিছু কল্পনা করতে পারি না।
.
রিধি চলে যাওয়ার পর আমি ওর নামও ওই একই ভাবে রাখি। যাতে ওর ভেতরেই আমি আমার হারিয়ে যাওয়া রিধি কে খোঁজে পাই। ওর আম্মুর নামও ছিলো রিধি। কিন্তু আজ আর সে রিধি নেই। আমাকে এই ছোট্ট রিধি উপহার দিয়ে সে চির নিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়ছে।
.
তাই ওর নাম অনুসারেই আমি আমার মেয়ের নাম রাখি। কখনো চোখের আড়াল হতে দেই না ওকে। রিধি যাওয়ার আগে আমাকে বলে ছিলো,, আমি যেন ওর সবসময় খেয়াল রাখি, দেখাশোনা করি। ওর ইচ্ছে গুলো পূর্ণ করি, সবসময় যেন ওকে যথেষ্ট সময় দেই। কোনো সময় যেন কান্না না করে সেভাবে যেন রাখি, ও কাঁদলে কিন্তু আমিও কাঁদবো। আর পারলে ওকে আরেক টা নতুন আম্মু এনে দিও।
.
তার জন্যই আমি এখন রিধিকে আমার চোখের আড়াল হতে দেই না, সবসময় আগলে রাখি। অফিসে কম সময় দেই, আমার রিধিকে অনেক সময় দেই। কারণ ওর আম্মুর অভাবটা যে আমাকেই পূর্ণ করতে হবে। যদিও আমি ওর আম্মুর অভাব টা পূর্ণ করতে পারবো না তবুও কিছুটা হলে পারবো।
.
কিন্তু রিধির আম্মুর শেষের কথাটা আমি কোনো ভাবেই রাখতে পারবো না, রাখা সম্ভব না। সবকথা রাখতে পারবো, কিন্তু ও কথা কিছুতেই রাখতে পারব না। কারণ আমি রিধির জায়গায় আর কাউকে বসাতে পারবো না। আজও ওকে খুব ভালবাসি, সেই আগের মতো।
.
রিধিকে যখন স্কুল থেকে আনতে যাই তখন ও বলে,, আব্বু আমার আম্মু আসেনি কেন? সবার আম্মু আসছে আমার আম্মু কেন আসেনি? সবার আম্মু ওদের কে কত আদর করে কিন্তু আমার আম্মু আসে না, আমাকে আদর করে না, আম্মু খুব পচা।
.
তখন আমি কিছু বলতে পারি না, কি বলে বোঝাবো ওকে, ওর আম্মু নেই। তখন শুধু চিৎকার করে কাদতেঁ ইচ্ছে করে আর বলতে ইচ্ছে করে, প্লিজ ফিরে আসো রিধি। আমার জন্য না হলেও এই ছোট্ট রিধির জন্য ফিরে আসো।
.
তারপর রিধির সাথে খেলা শেষ করে ওকে খাইয়ে নিয়ে আমি সেই পুরনো দিনের ডাইরিটা খুলে বসলাম। আমাদের সব কিছু লেখা আছে এটায়। ডাইরির সামনে আসলেই মনে পড়ে সেই দিন গুলোর কথা।
.
- নীল ৫০০০ হাজার টাকা দে।
- কেন?
- তুই আমারে প্রপোজ করছিস তাই।
- প্রপোজ তো সেই ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার থেকেই করে আসছি, এতদিন তো টাকা চাস নাই।
- আজকে পহেলা বৈশাখ আর বৈশাখী মেলা, তাই টাকা দে।
- দিব না, এমনিতেই তুই আজ আমারে ফকির করছস।
- গরু কোথাকার।
- হিহিহি, তুই আমার গাভী।
- কিইইইই???
- হুম, আমার জোড়া।
- ওই নীল খাড়া খাড়া, তরে আজ খাইছি রে,
.
ভাগ নীল ভাগ, নইলে আজকে তুই শেষ। চোখ বুইঝা কাঠ গাছের ভেতর দিয়ে দিলাম দৌড়।
এটা আমি আর রিধি। দুজনেই এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ার। আর আমি ওকে সেই ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার থেকে প্রপোজ করে আসছি, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।
.
আমি যখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে উঠি তখন ওর সাথে ফ্রেন্ডশীপ হয়। তার আগে দুজন দুই স্কুলে ছিলাম তাই কাউকে চিনতাম না, কলেজে এসে পরিচয় আর বন্ধুত্ব হয়।
.
তারপর কয়েক মাস পর বুঝতে পারলাম আমি রিধির প্রতি দূর্বল, আর তারপরই ওর জন্য আমার মনে ভালবাসার জন্ম নিছে।
.
কিন্তু আমি তখন ওকে প্রপোজ করতে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। যদি আমার ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট করে দেয়।
তবুও যখন সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম তখন অনেক সাহস নিয়ে দুটি গোলাপ ফুল নিয়ে রিধি কে প্রপোজ করলাম। রিধি তার বদলে আমাকে দুটি থাপ্পড় দিল।
.
আমি দিলাম দুটি ফুল ও দিল দুটি থাপ্পড়। আমি ভাবছিলাম এর পর আর আমার সাথে কথাই বলবো না, কিন্তু ও সেই আগের মতোই আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ আচরণ করতে লাগলো।
.
তাই আমিও সাহস পেলাম, আমি তো আর হাল ছাড়ার পাত্র না। তারপর থেকে প্রতিদিন আমি ওকে প্রপোজ করতাম, একেক দিন ফুল দিয়ে, আবার ফুল ছাড়া। কিন্তু ও আমাকে প্রতিদিন কুত্তা বিলাই বলে গালি দিতো।
.
সেই তখন থেকে ঘুরতে ঘুরতে আজ পর্যন্ত অনার্সে উঠলাম কিন্তু ও আমার প্রপোজ এক্সেপ্ট করলো না।
.
আর আজ বৈশাখী মেলা, আমি ওকে এখানে নিয়ে আসছি, সারামেলা ঘুরে দেখার পর, আমার পকেটে খালি করার পর, আমি মেলার পাশে ওকে নিয়ে এক বাগানে যাই, সেখানে প্রপোজ করি, আর তার বদলে ও উল্টে টাকা চাইলো, শয়তান মেয়ে। আবার আমাকে এতদূর দৌড়ালো।
.
পেছনে তাকিয়ে দেখি পাগলী হাঁপিয়ে গেছে, বসে আছে গাছের গুড়ির উপর।
- নীল বাসায় দিয়ায়, বাসায় যাব।
- একা যেতে পারিস না।
- না।
- অনার্সে পড়িস তবুও একা যেতে পারিস না, ঢংগী।
- ওই চুপ, তাহলে এখানে নিয়ে আসলি কেন?
- তোকে প্রপোজ করতে।
- করা তো শেষ, এখন দিয়ায়।
- তুই তো এক্সেপ্ট করলি না।
- দিয়ে আসবি কিনা?
- আচ্ছা, চল।
.
এই হলো রিধি। ওকে যাই করি না কেন! ও আবার আমার কাছেই আসবো। এইতো এখন দৌড়াল আবার এখনই বলে, নীল আমাকে দিয়ায়। তবুও কখনো বলেনি, নীল আমি তোকে অনেক ভালবাসি।
.
এতদিন ধরে ওকে ভালবাসি তবুও ও কেন আমাকে ভালবাসে না? ও কি আমার কষ্ট টা বুঝে না? বুঝলে এমন করতো? ও আমাকে শুধুই বন্ধু ভাবে।
.
এভাবে চলে গেল অনেক দিন, প্রতিদিন আমি ওর কানের কাছে ভালবাসি বলে কত চিল্লাচিল্লি করি কিন্তু ও কথা রিধির কানেই যায় না। কি করি এখন?
.
আমাদের অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা এসে পড়ছে। পরীক্ষার পর বোধ আর ওর সাথে দেখা হবে না, কারণ, আমি আর পড়বো না, বাবার অফিসের দায়িত্ব দিছে। এখনই কিছু কিছু দিয়ে দিছে, পরীক্ষার পর তো পুরোটাই দিব। তাই আর হয়তো ওর সাথে আর দেখা হবে না। ভাবলাম, শেষ পরীক্ষার পর প্রপোজ করবো, শেষ বারের মতো।
.
পরীক্ষা শুরু হলো, তবুও আমি পরীক্ষা দেওয়া সময় ওর জন্য ফুল নিয়ে গেছি, শেষ পরীক্ষার দিন যখন আমি প্রপোজ করলাম সেদিন আবার একটা থাপ্পড় দিল।
.
তখন খুব রাগ হয়ে ছিলো। তাই মাথা নিচু করে চলে আসলাম। এত বছর ধরে একটা মেয়ের পেছনে ঘুরলাম তবুও আমার জন্য ওর মনে একটুও আলাদা ভালবাসার জন্ম হলো না। আমার ভালবাসার কোনো দামই দিল না।
.
পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। আর আমিও অফিসে গিয়ে বসলাম। তারপর আর রিধির খবর নেইনি।
.
অনেক দিন পর,,,
.
- নীল শুন।
- হ্যাঁ, বাবা বলো।
- অনেক তো হলো, এবার একটা বিয়ে কর।
- এখনই?
- হুম,
- আচ্ছা তোমরা যখন বলছো তাইলে করবো।
- তাহলে সামনের শুক্রবারে আমার বন্ধুর মেয়েকে দেখতে যাব।
- আমার দেখার দরকার নাই, তোমার পছন্দই আমার পছন্দ।
- বাঃ, ভালো তো।
- হুম।
.
তারপর রুমে চলে আসলাম, আজ রিধির কথা মনে পরছে, ওর বোধ হয় এতদিনে বিয়ে হয়ে গেছে। ও যদি বিয়ে করতে পারে আমি পারবো না কেন? আমিও পারবো।
.
তারপর কয়েক দিন পর .....
আমার আজ বাসর রাত,,, বিয়ে করে বউ বাড়িতে আনলাম, তবুও এখনো বউয়ের মুখ দেখিনি। ঘরের ভেতর গিয়েই দেখবো।
.
রাত ১২টায় ঘরে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি বউ আমার ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে খাটে বসে আছে,, মুখ দেখার উপায় নেই। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে, কাছে এসে সালাম করে আবার আগের জায়গায় ফিরে গেল।
.
আমি গিয়ে অপর পাশে বসে পড়লাম। আজ খুব মনে পড়ছে রিধির কথা। আজ ও যদি এখানে বউ সেজে বসে থাকতো তাহলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না। কিন্তু ওর বদলে এটা কে বসে আছে কপালে জানে!!!
.হটাৎ,
.
- এতো সময় কই ছিলি?
- মানে?
- বাংলা বুঝস না, হারামজাদা? এতো সময় কই ছিলি?
- একি আমার সাথে আপনি তুই করে বলছেন কেন?
- তাহলে কি আপনি করে বলুম?
- তাই।
- ওই তুই আমারে চিনোস? ( ঘোমটা সরালো)
- রিধি তুই?
- কারে আশা করছিলি?
- আমার বউ কই?
- আমি কি ভূত নাকি?
- তুই আমার বউ?
- হুম।
- এখানে আসলি কেমনে?
- তুই তো বিয়ে করে আনলি, আবার এখন বলে কেমনে আসলি?
- এখানে আমার বন্ধুর মেয়ে থাকার কথা।।
- আমি কি তোর বাবার শত্রুর মেয়ে নাকি?
- আমি কিচ্ছু জানি না,,,, তুই এখানে কেন?
- আচ্ছা বলছি,,,
আমি যখন ক্লাস টেনে পড়তাম, তখন অনেক ছেলে আমাকে প্রপোজ করতো কিন্তু আমি কাউকে এক্সেপ্ট করতাম না। কিন্তু একবার ভাবলাম এর পরে কেউ প্রপোজ করলে এক্সেপ্ট করবো, দেখি তারপর কি হয়?
.
কিন্তু বাবা জেনে যায়, আমাকে অনেক বাজে ছেলেরা প্রপোজ করতেছে তাই আমাকে ডেকে বলে,
রিধি তোর বিয়ে আমি আমার বন্ধুর মেয়ের সাথে ঠিক করে রাখছি, তাই বিয়ের আগে এসব প্রেম ভালবাসায় না গেলেই খুশি হবো।
.
তাই আমি এরপর আর কারও প্রপোজ এক্সেপ্ট করিনি। কয়েক দিন পর বাবা তোর ছবি দেখালো, সেদিন আমি খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। সবার সামনে ছবিটি দেখিয়ে ছিলো তাই। তারপর কলেজে এসে দেখা হয় তোর সাথে। দেখা হওয়ার পর থেকেই তোকে ভালবাসতে শুরু করি।
.
ফাইনাল ইয়ারে এসে তুই যখন আমাকে প্রপোজ করলি তখন আমি তোকে ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ হলো,, ভাবছিলাম প্রেম ভালবাসা বিয়ের পরই হবে, বিয়ের আগে করতে হবে না, কারণ আমাদের বিয়ে তো একদম নিশ্চিত হবেই,,, তো বিয়ের আগে প্রেম করে কি হবে??
.
আর তোকে তখন হারানোর ভয় ছিলো না,, কারণ তোকে আমার সবসময় চোখের সামনে রাখতাম। আর তোর উপর কখনো রাগও করতাম না। বিশ্বাস কর নিজের থেকেও বেশী ভালবাসি তোকে।
.
তোকে মারতাম বকতাম ঝগড়া করতাম,, এগুলো করলে তুইও হাসতি তখন আমার খুব ভালো লাগতো।
.
কিন্তু তুই অনার্সের পরীক্ষা শেষে তুই আমার একটু খবরও নিলিনা না,, কেন কষ্ট দিলি এভাবে বল? একটুও ভালোবাসিস না আমাকে। তাহলে এমন করতে পারতি না। ( এই বলে আমার বুকে এসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতেঁ লাগলো)
.
- ( আমি কি বলবো আর,, আমি সত্যিই খুব খারাপ,, পরীক্ষার পর একবারও ওর সাথে যোগাযোগ করিনি,, আমি ওর ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না,, একটা অপরাধী আমি)
তারপর আমিও আরও শক্ত করে, জড়িয়ে নিলাম।
.
( বিড়ালটা শেষ রাতে মারবো, বুঝছেন)
.
তারপর থেকে চলতে থাকে আমাদের দুজনের সুখের সংসার। কোনো কিছুর অভাব নেই আমাদের মাঝে। বিশেষ করে ভালবাসাটা একটু বেশীই আছে। একটু একটু ঝগড়া হতো,, সামান্য ভুল নিয়ে, তবুও কেউ কাউকে ছেড়ে দুই মিনিট থাকতে পারতাম না।
.
আমি রেগে গেলে আমি রিধির কাছে ঘেষতাম আর আমি রাগ করলে রিধি আমার কাছে ঘেষতো। তাই কখনো রাগ হতো না,,, দুজনে খুব সহজে আর তাড়াতাড়ি মিলে যেতাম।
.
দুই বছর পর,,,
.
আমার আজ খুব টেনশন হচ্ছে,,, কি হতে চলেছে। আজ আমার জানপাখি টা হাসপাতালে শুয়ে ব্যথায় ছটফট করছে,, আজ পাগলীটা আম্মু হতে চলছে।
.
আমি আজ শুধু একটা জিনিসই চাইছি ওর যেন কিছু না হয়।
কতখন পর ডাক্তার হাসি মুখে এসে বললো, আমার একটা মেয়ে হইছে,,, আমি ভেতর গিয়ে দেখি, পাগলীটার পাশেই ওই পুঁচকে মেয়েটা আছে।
.
আমি সেদিন খুশিতে কেঁদেই দিছিলাম।
.
তারপর আমরা সুস্থ ভাবেই বাসায় যাই। এর তিন মাস পর, হটাৎ একদিন রিধি মাথা ঘুরে পরে যায়,,
.
ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার বলে,, বাচ্চা প্রসবের সময় ওনার ব্রেনে খুব চাপ পড়ছিল,, যার ফলে, ব্রেইনের কিছু অংশ ব্লক হয়ে যায়। এখন অপারেশন করতে হবে, বাচার সম্ভবনা নাই,, অপারেশন না করলেও বাঁচবে না বেশী দিন।
.
তখন রিধি আমার কাছেই ছিলো ও এ কথা শুনে ওখানেই চিৎকার করে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতেঁ থাকে। আমাকে ছেড়ে ও কথাও যেতে চায় না।
সেদিন আমার চোখের জলও থামিয়ে রাখতে পারিনি।
.
রিধির মুখের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার কে অপারেশন করতে বললাম,, যত টাকা লাগে আমি দেব, তবুও আমার জানটার যেন কিছু না হয়।
.
অপারেশন থ্রিয়েটারে যাওয়ার আগে আমাকে আর ছোট্ট রিধি কে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করছিল,, আমিও সেদিন খুব কেঁদেছিলাম।
যাওয়ার সময় বলছিল,,,
নীল আমি জানি না এই অপারেশন রুম থেকে জ্যান্ত ফিরে আসতে পারবো কিনা? যদি না আসতে পারি তাহলে আমাদের রিধি কে দেখিস। সবসময় তোর কাছে রাখিস। কখনো কষ্ট দিস না। ওই তো এখন আমাদের ভালোবাসার শেষ স্মৃতি।
.
ওকে আগলে রাখিস। ওর মাঝেই আমাকে খোঁজে পাবি। সবসময় অফিসে দৌড়াদৌড়ি করিস না,, রিধি কে যথেষ্ট সময় দিস। নয়তো আমি কাঁদবো।
.
আর আমাকে নিয়ে কষ্ট পাস না,, জীবন সুন্দর করে গড়ে তুলিস। আর নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখিস, হেয়ালি করবি না একদম।
আর আমাদের মেয়েকে তোর নিজের মতো করে গড়ে তুলিস।
.
সারাজীবন তোকে ভালবাসতে পারলাম না রে,, পারলাম না আমার ভালবাসার আচলে তোকে বেধে রাখতে,, তার আগেই হয়তো আমাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। নিজের প্রতি আর রিধির প্রতি খেয়াল রাখিস।
.
পাগলীটা হয়তো সেদিন আরও কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই ডাক্তার এসে ওকে ভেতর নিয়ে যায়।
.
সেদিন রিধি ফিরে এসেছিল ও রুম থেকে ঠিকই কিন্তু সুস্থ হয়ে নয়, কাফনের কাপড়ে শুয়ে। সেদিন ওকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলাম,, কেউ তখন থামাতে পারে নি।
.
ছোট্ট রিধি টাও বোধ হয় এ কষ্টটা অনুভব করে ছিলো,, আম্মুর পাশে শুয়ে রিধিও তখন খুব কেদেছিলো।
.
তারপর থেকেই আমাদের দুজনের জীবন, আমি আর ছোট রিধি,,, বড় রিধি তো নেই, তাই ছোট রিধি কে নিয়েই আমার ছোট সাজানো সংসার।
.
রিধি আমাকে যা যা করতে বলছিল সবই করছি,, ওর সব কথা পালন করছি, শুধু একটা কথা রাখতে পারিনি। রিধি কে নতুন আম্মু দিতে পারিনি। হয়তো পারবোওনা। এর জন্য বোধ হয় পাগলীটা অনেক রাগ করবো,, কিন্তু কি করবো বল? তোর জায়গা যে কাউকে দিতে পারবো না,, সবটুকু ভালবাসা শুধু তোর জন্য।
.
এখন আমি আমার এই ছোট্ট রিধি কে আগলে ধরে বেচে আছি। আমাকে বাঁচতেই হবে,, নিজের জন্য নাহলেও এই রিধির জন্য আমি বাচবো।.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন