হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে, খালি পায়ে প্রচন্ড রোদে
পিচঢালা রাস্তায় হাটছি। আপনারা ভাবছেন আমি হিমু হওয়ার
প্রয়াস করছি! মোটেও না হিমু হওয়ার কোনো
ইচ্ছাই আমার মধ্যে নেই। হিমুর পাঞ্জাবি
পকেটবিহীন, আমার পাঞ্জাবিতে পকেট
আছে। হ্যাঁ! দশমিনিট আগে আমার পায়ে জুতো
ছিলো, এখনও আছে তবে পায়ে না হাতে।
রাস্তায় হোচট খাওয়ার কারনে জুতোর ফিতা
ছিড়ে গেছে, তবে ফেলে দিতে পারছি না।
মাসে দুজোড়া জুতো কিনবো আমার সেই
সামর্থ্য নেই, তাই হাতে নিয়েই হাটছি। দশমিনিট খালি
পায়ে হেটেই পায়ের অবস্থা কাহিল। তাড়াহুড়ো
করে মোবাইলটাও মেসে ফেলে এসেছি।
পকেটে যে কয়টা টাকা আছে তা দিয়েই গোটা
মাস চলতে হবে। নতুন জুতো কেনার
কোনো প্রশ্নই আসেনা। জাতীয় সঙ্গীত
গাইতে গাইতে আনমনে হেটে যাচ্ছি।
আসলে জাতীয় সঙ্গীত ছাড়া আমি আর
কোনো সঙ্গীতই আমি গাইতে পারিনা।
.
কিছুদূর যেতেই দেখি একটা বড়সর জটলা। কাছে
যেতেই দেখি একজন ভিক্ষুক আহত অবস্থায়
রাস্তায় পড়ে আছে। আহত লোকটা বেশ
বয়স্ক। রাস্তা পার হতে গিয়ে বাইকের সাথে
এক্সিডেন্ট করেছে। যারা আহত লোকটাকে
নিয়ে জটলা পাকিয়ে রয়েছে, তারা
তিনশ্রেনিতে বিভক্ত। একপক্ষ বক্তা, এরা সুস্পষ্ট
ভাষায় দূর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে যাচ্ছেন। আরেক পক্ষ
শ্রোতা, এরা ধৈর্য্য সহকারে ঘটনার বিবরণ গলাধঃকরণ
করছেন। কিছু লোক ভিডিও ফুটেজ তুলতেই
ব্যস্ত। আমি মনে করি নানা বল সাবানের সাথে
মানুষের যথেষ্ঠ মিল আছে। নানা বল সাবানের
প্রচলিত বানী হচ্ছে, "নামে নয়, গুণে পরিচয়!"
আর মানুষের ক্ষেত্রে "নামে নয়, টাকায় পরিচয়!
"
আহত লোকটা যদি ভিক্ষুক না হয়ে বড় কোনো
ব্যবসায়ী কিংবা মন্ত্রী হতেন, তাহলে
এতক্ষণে হুলস্থূল কান্ড ঘটে যেত। খবরের
কাগজেও বড় করে হেডলাইন ছাপা হতো।
লোকগুলোর বিবেক দেখে মাঝেমধ্যে
অবাক হয়ে যাই! অবশেষে আমি আহত
লোকটাকে নিয়ে রিকশায় উঠলাম, গন্তব্য
হাসপাতাল। কিছু লোক উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে
চেয়ে আছে। ভাবখানা এমন, যেন আমি মানুষ না
এলিয়েন!
.
লোকটাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে, ওষুধ
আর কিছু খাবার কিনে দিলাম। বেশিক্ষণ হাসপাতালে
থাকলাম না, বের হয়ে আসলাম। হাসপাতালের এত
রোগী, আমি সহ্য করতে পারিনা। হাসপাতাল
থেকে বের হয়ে, ফুটপাতে হেটে
চলেছি। আহত লোকটার রক্ত, আমার হলুদ
পাঞ্জাবিটাকে লাল করে দিয়েছে। আমার
শরীরের কিছু অংশে এখনও রক্ত লেগে
আছে৷ সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি, রোদের কারনে
খুব দূর্বল লাগছে। হাঁটার শক্তিটুকুও নেই বললেই
চলে। মানিব্যাগটা বের করে দেখি, দশটাকা
অবশিষ্ট আছে। দশটাকা দিয়ে দুটো সিগারেট
কিনলাম। সিগারেটের ক্লান্তি ও চিন্তা দূর করবার এক
আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে। সিগারেটে টান
দিতেই ক্ষুধার কথা মন থেকে উধাও হয়ে
গেলো। এক অজানা সুখ নিয়ে রাস্তায় হেটে
যাচ্ছি। তবে লক্ষ্য করলাম, কিছু লোক আমার
দিকে যথেষ্ট কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে।
আমার দিকে বললে ভূল হবে, আমার পাঞ্জাবির
দিকে। আমার পাঞ্জাবিতে লেগে থাকা রক্তই
যে এর কারন বুঝতে দেরী হলোনা।
.
কলেজের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ
একটা জীপগাড়ি এসে আমার সামনে দাড়ালো। পাশ
কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখনি গাড়ি থেকে কিছু
পুলিশ নেমে এসে, আমাকে জোর করে
গাড়িতে তুললো। কিছু বলার সুযোগও দিলো না।
গাড়িটা সোজা থানায় এসে থামলো। পাতলা হাবিলদার
টাইপের একজন আমাকে গাড়ি থেকে বের
করে, সোজা হাজতের ভিতরে ঢুকালো। আমি
ব্যাপারটাকে বেশ মজা হিসেবেই নিলাম। আমি
ছাড়াও আরো চারজন হাজতে বন্দী রয়েছে।
সবাই আমার থেকে বয়সে বড়। একজনের
চেহারা অনেকটা পালোয়ানের মতো।
পালোয়ান টাইপের লোকটাই বললো, "পকেট
মারছিস? নাকি চুরি করছিস? "
একজন বললো, "দেখেন না ভাই, পাঞ্জাবিতে
রক্ত লেগে, মনে হয় খুন! খুন করছে! "
আমি কিছু বললাম না, শুধু রহস্যময় একটা হাসি দিলাম।
এরমধ্যে একজন কনস্টেবল ওসির কথা বলে
আমাকে বাইরে বের করলো। ওসির কাছে
যেতেই, ওসি বসার জন্য ইশারা করলো। ওসির
মুখোমুখি চেয়ারে বসলাম। ওসি আমার দিকে
ঝুকে, আমাকে বললেন,
-- নাম কী?
-- রাজ!
-- কী করিস?
-- লেখাপড়া!
-- শরীরে রক্ত কেন?
-- এক আহত লোককে হাসপাতালে ভর্তি
করতে গিয়ে, ওনার রক্ত আমার শরীরে
লেগেছে।
-- ফাজলামো করিস আমার সাথে? এই মিজান! এরে
কয়েকঘা দে! ভালো করে জামাই আদর কর।
বুঝুক পুলিশ কী!!! ঘুঘু দেখেছো, ঘুঘুর ফাদ
দেখোনি!!!
.
বলতে দেরী হলো, মারতে দেরী
হলোনা। প্রথমে ভেবেছিলাম, চুপ করে
থাকবো কিন্ত শেষে পারিনি। শেষে অবস্থা
এমন "ছেড়ে দে মা, কেদে বাচি!"
মিজান সেকেন্ড অফিসার! আমাকে ইচ্ছামতো
মেরে আবার হাজতে ভরে রাখলেন। আমি
ভেতরে যেতেই বাকি চারজন একসাথে জটলা
পাকালো। সবাই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে
চেয়ে আছে। পালোয়ানটারও যে
চোখেমুখে ভয়, বুঝতেই পারলাম। ওদের
দিকে তাকিয়ে বেশ হাসলাম। মনে হয় ওরা
আরো ভয় পেয়েছে।
.
হাসছি আর মনে মনে ভাবছি ... "বড় বিচিত্র এ
পৃথিবী। এখানে একদল মানুষ অপরাধ করেও
দাপিয়ে বেড়ায়। আর একদল বিনা অপরাধে সাজা
ভোগ করে। আমিও অনেকটা সেই দলে! এই
বিচিত্র পৃথিবীতে আর কত যে আজব
রঙ্গলীলা দেখতে হবে, এইটা একমাত্র তিনিই
জানেন। আমাদের তো শুধু সময়ের
অপেক্ষা!!!"
পিচঢালা রাস্তায় হাটছি। আপনারা ভাবছেন আমি হিমু হওয়ার
প্রয়াস করছি! মোটেও না হিমু হওয়ার কোনো
ইচ্ছাই আমার মধ্যে নেই। হিমুর পাঞ্জাবি
পকেটবিহীন, আমার পাঞ্জাবিতে পকেট
আছে। হ্যাঁ! দশমিনিট আগে আমার পায়ে জুতো
ছিলো, এখনও আছে তবে পায়ে না হাতে।
রাস্তায় হোচট খাওয়ার কারনে জুতোর ফিতা
ছিড়ে গেছে, তবে ফেলে দিতে পারছি না।
মাসে দুজোড়া জুতো কিনবো আমার সেই
সামর্থ্য নেই, তাই হাতে নিয়েই হাটছি। দশমিনিট খালি
পায়ে হেটেই পায়ের অবস্থা কাহিল। তাড়াহুড়ো
করে মোবাইলটাও মেসে ফেলে এসেছি।
পকেটে যে কয়টা টাকা আছে তা দিয়েই গোটা
মাস চলতে হবে। নতুন জুতো কেনার
কোনো প্রশ্নই আসেনা। জাতীয় সঙ্গীত
গাইতে গাইতে আনমনে হেটে যাচ্ছি।
আসলে জাতীয় সঙ্গীত ছাড়া আমি আর
কোনো সঙ্গীতই আমি গাইতে পারিনা।
.
কিছুদূর যেতেই দেখি একটা বড়সর জটলা। কাছে
যেতেই দেখি একজন ভিক্ষুক আহত অবস্থায়
রাস্তায় পড়ে আছে। আহত লোকটা বেশ
বয়স্ক। রাস্তা পার হতে গিয়ে বাইকের সাথে
এক্সিডেন্ট করেছে। যারা আহত লোকটাকে
নিয়ে জটলা পাকিয়ে রয়েছে, তারা
তিনশ্রেনিতে বিভক্ত। একপক্ষ বক্তা, এরা সুস্পষ্ট
ভাষায় দূর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে যাচ্ছেন। আরেক পক্ষ
শ্রোতা, এরা ধৈর্য্য সহকারে ঘটনার বিবরণ গলাধঃকরণ
করছেন। কিছু লোক ভিডিও ফুটেজ তুলতেই
ব্যস্ত। আমি মনে করি নানা বল সাবানের সাথে
মানুষের যথেষ্ঠ মিল আছে। নানা বল সাবানের
প্রচলিত বানী হচ্ছে, "নামে নয়, গুণে পরিচয়!"
আর মানুষের ক্ষেত্রে "নামে নয়, টাকায় পরিচয়!
"
আহত লোকটা যদি ভিক্ষুক না হয়ে বড় কোনো
ব্যবসায়ী কিংবা মন্ত্রী হতেন, তাহলে
এতক্ষণে হুলস্থূল কান্ড ঘটে যেত। খবরের
কাগজেও বড় করে হেডলাইন ছাপা হতো।
লোকগুলোর বিবেক দেখে মাঝেমধ্যে
অবাক হয়ে যাই! অবশেষে আমি আহত
লোকটাকে নিয়ে রিকশায় উঠলাম, গন্তব্য
হাসপাতাল। কিছু লোক উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে
চেয়ে আছে। ভাবখানা এমন, যেন আমি মানুষ না
এলিয়েন!
.
লোকটাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে, ওষুধ
আর কিছু খাবার কিনে দিলাম। বেশিক্ষণ হাসপাতালে
থাকলাম না, বের হয়ে আসলাম। হাসপাতালের এত
রোগী, আমি সহ্য করতে পারিনা। হাসপাতাল
থেকে বের হয়ে, ফুটপাতে হেটে
চলেছি। আহত লোকটার রক্ত, আমার হলুদ
পাঞ্জাবিটাকে লাল করে দিয়েছে। আমার
শরীরের কিছু অংশে এখনও রক্ত লেগে
আছে৷ সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি, রোদের কারনে
খুব দূর্বল লাগছে। হাঁটার শক্তিটুকুও নেই বললেই
চলে। মানিব্যাগটা বের করে দেখি, দশটাকা
অবশিষ্ট আছে। দশটাকা দিয়ে দুটো সিগারেট
কিনলাম। সিগারেটের ক্লান্তি ও চিন্তা দূর করবার এক
আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে। সিগারেটে টান
দিতেই ক্ষুধার কথা মন থেকে উধাও হয়ে
গেলো। এক অজানা সুখ নিয়ে রাস্তায় হেটে
যাচ্ছি। তবে লক্ষ্য করলাম, কিছু লোক আমার
দিকে যথেষ্ট কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে।
আমার দিকে বললে ভূল হবে, আমার পাঞ্জাবির
দিকে। আমার পাঞ্জাবিতে লেগে থাকা রক্তই
যে এর কারন বুঝতে দেরী হলোনা।
.
কলেজের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ
একটা জীপগাড়ি এসে আমার সামনে দাড়ালো। পাশ
কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখনি গাড়ি থেকে কিছু
পুলিশ নেমে এসে, আমাকে জোর করে
গাড়িতে তুললো। কিছু বলার সুযোগও দিলো না।
গাড়িটা সোজা থানায় এসে থামলো। পাতলা হাবিলদার
টাইপের একজন আমাকে গাড়ি থেকে বের
করে, সোজা হাজতের ভিতরে ঢুকালো। আমি
ব্যাপারটাকে বেশ মজা হিসেবেই নিলাম। আমি
ছাড়াও আরো চারজন হাজতে বন্দী রয়েছে।
সবাই আমার থেকে বয়সে বড়। একজনের
চেহারা অনেকটা পালোয়ানের মতো।
পালোয়ান টাইপের লোকটাই বললো, "পকেট
মারছিস? নাকি চুরি করছিস? "
একজন বললো, "দেখেন না ভাই, পাঞ্জাবিতে
রক্ত লেগে, মনে হয় খুন! খুন করছে! "
আমি কিছু বললাম না, শুধু রহস্যময় একটা হাসি দিলাম।
এরমধ্যে একজন কনস্টেবল ওসির কথা বলে
আমাকে বাইরে বের করলো। ওসির কাছে
যেতেই, ওসি বসার জন্য ইশারা করলো। ওসির
মুখোমুখি চেয়ারে বসলাম। ওসি আমার দিকে
ঝুকে, আমাকে বললেন,
-- নাম কী?
-- রাজ!
-- কী করিস?
-- লেখাপড়া!
-- শরীরে রক্ত কেন?
-- এক আহত লোককে হাসপাতালে ভর্তি
করতে গিয়ে, ওনার রক্ত আমার শরীরে
লেগেছে।
-- ফাজলামো করিস আমার সাথে? এই মিজান! এরে
কয়েকঘা দে! ভালো করে জামাই আদর কর।
বুঝুক পুলিশ কী!!! ঘুঘু দেখেছো, ঘুঘুর ফাদ
দেখোনি!!!
.
বলতে দেরী হলো, মারতে দেরী
হলোনা। প্রথমে ভেবেছিলাম, চুপ করে
থাকবো কিন্ত শেষে পারিনি। শেষে অবস্থা
এমন "ছেড়ে দে মা, কেদে বাচি!"
মিজান সেকেন্ড অফিসার! আমাকে ইচ্ছামতো
মেরে আবার হাজতে ভরে রাখলেন। আমি
ভেতরে যেতেই বাকি চারজন একসাথে জটলা
পাকালো। সবাই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে
চেয়ে আছে। পালোয়ানটারও যে
চোখেমুখে ভয়, বুঝতেই পারলাম। ওদের
দিকে তাকিয়ে বেশ হাসলাম। মনে হয় ওরা
আরো ভয় পেয়েছে।
.
হাসছি আর মনে মনে ভাবছি ... "বড় বিচিত্র এ
পৃথিবী। এখানে একদল মানুষ অপরাধ করেও
দাপিয়ে বেড়ায়। আর একদল বিনা অপরাধে সাজা
ভোগ করে। আমিও অনেকটা সেই দলে! এই
বিচিত্র পৃথিবীতে আর কত যে আজব
রঙ্গলীলা দেখতে হবে, এইটা একমাত্র তিনিই
জানেন। আমাদের তো শুধু সময়ের
অপেক্ষা!!!"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন