আমি মেহবুব রহমান কাব্য। সবাই আমাকে মেহবুব বলেই ডাকে। আজ আমার কলেজ জীবনের প্রথম দিন। তবুও ক্লাস নয়, আজ আমাদের কলেজে নবীন বরণ উৎসব। আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে এবার নতুন ছাত্র। আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে আরেকটু পর কলেজে রওনা হবো। আজকে কলেজে অনেক নতুন নতুন ছাত্র ছাত্রী আসবো, তাছাড়া নাচগান তো আছেই।
.
আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে কলেজের দিকে চললাম। আর কয়েক জন আগেই চলে গেছে।
কলেজে যেয়ে বুঝতে পারলাম আমি একটু পরেই এসে পড়েছি। কারণ ইতিমধ্যে সবাই এসে গেছে, আর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।
.
পরে এসে পরলাম আরেক ঝামেলায়। বসার চেয়ার নেই, সব আগেই যার যার মতে দখল করে নিয়েছে। তাই আর কি করব! নিরুপায় হয়ে এক জায়গায় দাড়িয়েই রইলাম। অনেক সুন্দর নাচ আর গান হচ্ছে, স্যারেরা বক্তৃতা দিচ্ছে। অনেক সময় দেখলাম শুনলাম। আসেপাশের দিকে আর তাকাইনি।
.
এখন একটু না নড়লেই নয়,, তাই ডানপাশে একটু কাত হলাম, আর তখনই কে যেন শার্টের কলার ধরে দিল এক টান।
- দেখছেন না এখানে দাড়িয়ে পারফরমেন্স দেখছি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন কেন?
- ( খাইছে,, আমারে টান দিয়ে আমারেই ঝাড়ি) এই আপনি আমাকে টান দিলেন কেন? তবুও কলার ধরে।
- বেশ করছি। সামনে দাঁড়ালেন কেন?
- আচ্ছা, সরি,,, এবার আপনি সরি বলুন।
- হোয়াট?
- সরি বলুন।
- কেন?
- আমাকে টান দিয়ে ফেলে দিছেন তাই।
- বলবো না।
- আপনি একটা!!!
- আমি কি??
- শয়তান মেয়ে।
- ভুল বলেননি,, যান এখান থেকে।
-( মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে) যত্তোসব পাগল!
- কিইইই, আমি পাগল?
- তা নয়তো কি? একটা মেয়ে হয়ে দাড়িয়ে আছেন কেন? বসতে পারেন না?
- চেয়ার কি আমার বাপের নাকি, যে আমার জন্য এখানে সবাই চেয়ার ছেড়ে দিব?
- ( কি গুন্ডী মেয়েরে? নিজের বাপ তুলে কথা বলে) আচ্ছা, বুঝতে পারছি। আপনার নাম টা বলবেন?
- আপনি কে? আপনার কাছে আমার নাম বলবেন কেন? যান বলছি।
- ওকে ওকে।
.
উফফফ এতখনে বাঁচলাম। ওই মাথার তার ছিঁড়া মেয়ে গুলো যে কোথা হইতে এই কলেজে উপদ্রব হয়েছে কপালে জানে। মেয়েটা বোধ নিশ্চিত গতকাল পাবনা পাগলা গারদ হতে পালিয়ে এখানে আসছে। নইলে কেউ এরকম ব্যবহার করে। আবার বলে কিনা হ্যাঁ আমি শয়তান। পাগল কোথাকার।
.
কিন্তু মেয়েটা খুব কিউট। যদি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকতো তাহলে হয়তো প্রেম করতে পারতাম। কিন্তু আফসোস মেয়েটা বোধ হয় অর্ধেক পাগল।
.
অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি আসলাম। বাড়ির আসার আগে আবার একটু আড্ডায় গেছিলাম তাই ফিরতে ফিরতে ১০টা বেজেছিল রাত। বাড়ি এসে খেয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল সকালে আবার কলেজে যেতে হবে। কাল থেকে কলেজে ক্লাস হবে।
.
সকালে ঘুম ভাঙলো পাখির কিচিরমিচির শব্দে। ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে কলেজে গেলাম।
কলেজ মাঠে যাওয়া মাত্রই, কার পায়ের মধ্যে যেন আমার পা লেগে ধপাস করে উপুড় হয়ে কার উপরে যেন পড়লাম।
.
উঠে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি, কালকের সেই কিউট তার ছিঁড়া মেয়েটা, আর আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। এর উপরই মনে হয় পরছি। পরিস্থিতি খারাপ,,
চোখ বুজে দিলাম এক দৌড়। ধরতে পারলে না জানি কি করে বসে!!!
এমনই তার ছিঁড়া মেয়ে, তার মাঝে আবার রেগে আছে।
.
সে সময়ের মতো বেচে গেলাম। তারপর আর সেদিন ওই মেয়ের সামনে যাইনি। তবে দূরে থেকে দেখেছি কিন্তু কাছে যায়নি কখনো। বুঝতে পারলাম, ও আমাদের গ্রুপেই পড়ে। আর আমার ক্লাসমেট।
.
আজকে বাসায় এসে যখন টিভি দেখতে লাগলাম। তখন সেই মেয়েটার কথা মাথায় আসলো। মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে কিনা জানি না, তবে রাগি লুকে ওকে অনেক সুন্দর লাগছিল। তাছাড়া ও এমনিতেই অনেক কিউট,,, মুখের গঠন টা বাচ্চা বাচ্চা টাইপের।
.
ভালই লাগে দেখতে। টিভি দেখতে বসছি, টিভির দিকে আর খেয়াল নেই, কখন যে মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ছি নিজেই জানি না। .
.
এরপর থেকে যখনই মেয়েটার দিকে তাকাতাম তখনই কেন যেন খুব ভালো লাগতো। তাই সুযোগ পেলেই এখন ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু এখনো ওর নামটাই জানি না।
.
এভাবে দেখতে দেখতে চলে গেল, ৪ মাস। এই চার মাসে আমি ওর অনেক কিছু খেয়াল করছি। নামটাও কোনো এক ভাবে জেনে নিয়েছি। নাম হলো আয়েশা রহমান।
.
ওর যে বিষয় গুলো আমারে খুব চিন্তায় ফেললো তা হলো,,
- কারো সাথে মিশে না, সবসময় চুপচাপ থাকে।
- প্রয়োজন ছাড়া কারও সাথে কথা বলে না।
- কাউকে নিজের বন্ধু বানায় না, এখনো ওর একটাও বন্ধু হয়নি।
- অনেক মেয়ে ওর সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে চাইছে কিন্তু ও করেনি।
- মেয়েদের ফ্রেন্ডশীপ ফিরিয়ে দিছে আর ছেলেদের তো কথাই নাই।
- যখনই সময় পেত তখনই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো আর কি যেন বিড়বিড় করতো।
- ছাএী হিসেবে কিন্তু খারাপ না,,, প্রয়োজনে শুধু স্যারদের সাথেই কথা বলতো কিন্তু কম।
.
আয়েশার এই সব বিষয় গুলো আমাকে খুব টেনশনে ফেললো। ও এমন কেন? অন্য সবার মতো স্বাভাবিক কেন নয়? সত্যিই কি ওর কোনো মানসিক সমস্যা আছে,, না অন্য কোনো কিছু?
.
ওর সাথে কথা বলে জানতে হবে ওর কি সমস্যা। তারপর থেকে আমি অনেকবার ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু ও আমার সাথে কথা বলেনি।
কিছু বললেই রাগ দেখিয়ে বা অন্য কোনো কিছুর ছুতো দিয়ে চলে যেত।
.
এভাবে কয়েক দিন চললো, আমার খুব রাগ হলো ওর পর,,, আমার সাথে এতো ভাব নেওয়ার কি আছে হ্যাঁ??? ও কি জানে না ওর অপেক্ষায় আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি। কিন্তু আমি ওর সাথে কথা বলার জন্য ওর পিছনে কতো ঘুরি কিন্তু ও আমার সাথে কথা বলতেই চায় না।
.
আজকে নিয়ে ২ মাস হলো ওর সাথে কথা বলার চেষ্টায় আছি,, কিন্তু আজকে আমি অনেক ডাকার পর,, শুধু চোখ তুলে তাকিয়ে ছিলো আর কিছু বলেনি, তারপর চলে গেল। ধ্যাত,, খুব রাগ হচ্ছে নিজের উপর ৬ মাস ধরে একটা মেয়ের পিছনে পরে আছি কিন্তু মেয়েটা আমাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। দরকার নাই আমার এমন মেয়ের। আর ডাকবো না কোনো দিন,, একা আছি একাই ভালো আর একাই থাকবো।
.
সেদিনের পর আজ ৭ দিন হয়ে গেল, ওর সাথে কথা তো দূরের কথা চোখ তুলে তাকাইয়নি। আজ শুক্রবার তাই ভাবছি বিকেলে, কলেজের ধারে বড় মাঠের সাথে ওই বাগানে একটু ঘুরতে যাব।
.
বিকেলে সেই বাগানে গেলাম। কতখন ঠান্ডা বাতাসে বসেছিলাম,, ভালই লাগলো। অনেক সময় হয়ে গেল এখন বাসায় যাই। পিছনে ঘুরে তাকাতেই আমার আত্মা যায় যায় অবস্থা,,, আয়েশা আমার খুব কাছে একদম মুখের সামনে মুখ এনে দাড়িয়ে আছে।
.
আমি স্বাভাবিক হয়ে। কিছু বললাম না উঠে আসতে লাগলাম। আর ওই বা এখানে আসলো কেন?
উঠে দাড়ালাম যাওয়ার জন্য,,,
.
- মাহবুব দাড়াও।
- কেন?
- এখানে এসে বসো, কথা আছে।
- কি কথা?
- আগে বসো।
( ঘাসের উপর বসে পড়লাম)
.
- মাহবুব তুমি ভাবছো আমি এখানে কি করে কেন আসলাম?
- তাই তো।
- আমি তোমার বাড়ি গেছিলাম। কিন্তু আন্টির কাছে জানতে পারলাম তুমি এখানে তাই এখানে আসলাম।
- কিইইইই,,, বাড়ি কেন গেছিলা?
- তোমাকে খুজতে।
- আমার আবার কি দরকার?
- আমাকে ভালবাসো?
- ( হটাৎ এমন কথা,, অবাক হলাম) একথা কেন বলছো?
- যেটা বলছি ওটার উওর দাও।
- হুম,,, বাসি। তাতে কি হইছে?
- আমার এই অপয়া জীবনে কেন জড়াতে চাইছো?
- মানে!!!
- শুনবা?
- বলো।
.
- আমি একা নই, আমার ছোট আরেক টা বোন ছিলো। যখন আমার জন্ম হয় তখন আমাকে সবাই ভালবাসতো। খুব আদর করতো সবাই। মা বাবার রাজকুমারী ছিলাম আমি। সবসময় মা বাবা আমাকে চোখে চোখে রাখতো যাতে আমি কখনো দূরে না যাই।
.
আমার যখন ৭ বছর বয়স তখন আমার ছোট বোনের জন্ম হয়। ভালই চলছে আমাদের পরিবার। মা বাবা আমি আর আমার বোন। ছোট বাচ্চাদের রাখতে সবারই আগ্রহ ছিলো তেমনি আমারও ছিলো।
কিন্তু আমিও তো তখন খুব ছোট মাত্র ৭ বছর বয়স। তবুও ছোট বোনটাকে রাখতে খুব ইচ্ছে হতো।
.
কিন্তু মা আমার কাছে বোন কে দিতো না, আমি ফেলে দিব বলে।
কিন্তু আমার মনে ইচ্ছে টা প্রবল ভাবে জন্ম নেয়। তাই আমি একদিন লুকিয়ে যখন মা বোন কে ঘুম পাড়িয়ে গোসল করতে যায় তখন, তখন আমি বোনকে কোলে নিয়ে, পাশের পুকুর পাড়ে ঘুরতে যাই।
.
বোনটাও আমার কোলে ঘুমিয়ে পরে সুন্দর ভাবে। তাই যখন মা ডাকাডাকি পারছিল তখন আমি খুব ভয় পাই,,, তাই ধীরে ধীরে বাড়িতে যাই। মা আমার কাছ থেকে বোনকে নিয়ে তারপর আমার গালে একটা চড় দেয়। আর বলে,,
- কই গেছিলি ওকে নিয়ে, এতো জ্বর আসলো কি করে ওর শরীরে? আগে তো ছিলো না।
.
একথা শুনে আমি খুব ভয় পাই। আমার কোলে এসে বোনের জ্বর হয়েছে।
এরপর থেকে বোনের জ্বর আরও বাড়তে থাকে। দশদিনের দিন আমাদের বাড়িতে কান্নার রোল পরে। কারণ আমার বোন প্রচন্ড জ্বরে মারা যায়। অনেক ডাক্তার দেখিয়ে ছিলো তবুও কাজ হয়নি।
.
এর কয়েক মাস পর আমি আর মা নদীর ধারে যাই কাপড় আর কম্বল ধুতে। সেখান বাড়ি এসে মা মাথা ঘুরে পরে যায়। কিন্তু তার কতখন পর সুস্থ হয়ে উঠে।
তার কয়েক দিন পর,, আবারাও পরে যায়, ঘরের মেঝেতে কিন্তু এবার আর উঠেনি,, না ফেরার দেশে চলে যায়।
.
( এই বলে আয়েশা কাদতেঁ লাগলো)
- তারপর কি হয়েছে?
- তারপর বাবাকে আকড়ে ধরে বড় হতো লাগলাম।
যখন আমি এইটে পড়ি,, তখন আমার একটা ছেলেকে ভালো লাগতো। তখন ভালবাসার অর্থ বুঝতাম না। কিন্তু টান টা বুঝতে পারতাম।
তাই আমি এইটে প্রথম টেস্ট পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সেই ছেলেটাকে প্রপোজ করি। আর ছেলেটা খুশিতে টগবগিয়ে উঠে।
কিন্তু ভালবাসা আমার কপালে ছিলো না। সেদিন প্রপোজ করার পর, স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার সময় একটা এক্সিডেন্টে ওই ছেলেটাও প্রাণ হারায়।
.
এই হলো আমার কপাল। নিজের ভালবাসা এক দিনই তৃপ্তি ভরে পেলাম না। তারপর থেকে সবার কাছ থেকে এই স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে চলে যাই।
.
এখন কেউ আমাকে ভালবাসে না। বাবাও ভালবাসে না। আর পরিবারের অন্যরা বলে কিনা আমি অপয়া। ( এই বলে আরও জোরে জোরে কাদতেঁ লাগলো আয়েশা)
.
- এই পাগলী কাঁদছো কেন?
- কি করবো বলো?
- আমাকে ভালবাসো।
- না,, এটা হয়না। তোমার জীবনে আমি যদি যাই তাইলে হয়তো তোমারও কিছু একটা হয়ে যাবে,, আমি এটা কখনো চাই না।
- কিচ্ছু হবে না। সব ভুল ধারণা কে বলছে তোমাকে তুমি ভালো না।
- সবাই বলে।
- আমি বলছি তুমি অনেক ভালো।
- আমি ভালো না তুমি আমাকে ভুলে যাও।
- সেটা তো কোনো দিন সম্ভব না।
তুমি অনেক আগেই আমার মন চুরি করে নিয়েছো। এখন তোমার মন না দিলে আমি এমনিতেই মরে যাব।
- না। ও কথা বলো না প্লিজ।
- তাহলে তোমার ভালবাসার রঙ্গে আমাকে রঙিয়ে দাও যতদিন বাচবো তোমার ভালবাসা নিয়েই বাঁচবো।
- এটা হয়না।
- তুমি ভালবাসবে কিনা বলো,, যদি বাসো তাইলে আজকের পর দেখতে পাবে আর যদি না বাসো তাইলে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাব।
বাচলে দুজন একসাথেই বাচবো।
.
- আর যদি না বাচি?
- না বাচলে নাই, একদিন না একদিন সবাইকে মরতে হবে,, একদিন আগে আর পরে।
.
( জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিছে)
- আবার কাঁদছো কেন?
- এতো ভালোবাসো কেন?
- মনটা যে আমার কাছে নাই তাই।
- কার কাছে গেছে?
- তোমার কাছে।
- ধ্যাত।
- চলো ফুচকা খেতে যাই।
- আচ্ছা।
.
.
.
আমি চলছি পাগলীটা কে নিয়ে ফুচকা খেতে। জানি না কতদিন এই পৃথিবীতে থাকবো কিন্তু যতদিন আছি ততদিন নিজের ভালবাসা নিজের করে পেয়েই বাচবো।
.
আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে কলেজের দিকে চললাম। আর কয়েক জন আগেই চলে গেছে।
কলেজে যেয়ে বুঝতে পারলাম আমি একটু পরেই এসে পড়েছি। কারণ ইতিমধ্যে সবাই এসে গেছে, আর অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।
.
পরে এসে পরলাম আরেক ঝামেলায়। বসার চেয়ার নেই, সব আগেই যার যার মতে দখল করে নিয়েছে। তাই আর কি করব! নিরুপায় হয়ে এক জায়গায় দাড়িয়েই রইলাম। অনেক সুন্দর নাচ আর গান হচ্ছে, স্যারেরা বক্তৃতা দিচ্ছে। অনেক সময় দেখলাম শুনলাম। আসেপাশের দিকে আর তাকাইনি।
.
এখন একটু না নড়লেই নয়,, তাই ডানপাশে একটু কাত হলাম, আর তখনই কে যেন শার্টের কলার ধরে দিল এক টান।
- দেখছেন না এখানে দাড়িয়ে পারফরমেন্স দেখছি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন কেন?
- ( খাইছে,, আমারে টান দিয়ে আমারেই ঝাড়ি) এই আপনি আমাকে টান দিলেন কেন? তবুও কলার ধরে।
- বেশ করছি। সামনে দাঁড়ালেন কেন?
- আচ্ছা, সরি,,, এবার আপনি সরি বলুন।
- হোয়াট?
- সরি বলুন।
- কেন?
- আমাকে টান দিয়ে ফেলে দিছেন তাই।
- বলবো না।
- আপনি একটা!!!
- আমি কি??
- শয়তান মেয়ে।
- ভুল বলেননি,, যান এখান থেকে।
-( মেয়ের মাথায় সমস্যা আছে) যত্তোসব পাগল!
- কিইইই, আমি পাগল?
- তা নয়তো কি? একটা মেয়ে হয়ে দাড়িয়ে আছেন কেন? বসতে পারেন না?
- চেয়ার কি আমার বাপের নাকি, যে আমার জন্য এখানে সবাই চেয়ার ছেড়ে দিব?
- ( কি গুন্ডী মেয়েরে? নিজের বাপ তুলে কথা বলে) আচ্ছা, বুঝতে পারছি। আপনার নাম টা বলবেন?
- আপনি কে? আপনার কাছে আমার নাম বলবেন কেন? যান বলছি।
- ওকে ওকে।
.
উফফফ এতখনে বাঁচলাম। ওই মাথার তার ছিঁড়া মেয়ে গুলো যে কোথা হইতে এই কলেজে উপদ্রব হয়েছে কপালে জানে। মেয়েটা বোধ নিশ্চিত গতকাল পাবনা পাগলা গারদ হতে পালিয়ে এখানে আসছে। নইলে কেউ এরকম ব্যবহার করে। আবার বলে কিনা হ্যাঁ আমি শয়তান। পাগল কোথাকার।
.
কিন্তু মেয়েটা খুব কিউট। যদি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকতো তাহলে হয়তো প্রেম করতে পারতাম। কিন্তু আফসোস মেয়েটা বোধ হয় অর্ধেক পাগল।
.
অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি আসলাম। বাড়ির আসার আগে আবার একটু আড্ডায় গেছিলাম তাই ফিরতে ফিরতে ১০টা বেজেছিল রাত। বাড়ি এসে খেয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল সকালে আবার কলেজে যেতে হবে। কাল থেকে কলেজে ক্লাস হবে।
.
সকালে ঘুম ভাঙলো পাখির কিচিরমিচির শব্দে। ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে কলেজে গেলাম।
কলেজ মাঠে যাওয়া মাত্রই, কার পায়ের মধ্যে যেন আমার পা লেগে ধপাস করে উপুড় হয়ে কার উপরে যেন পড়লাম।
.
উঠে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি, কালকের সেই কিউট তার ছিঁড়া মেয়েটা, আর আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। এর উপরই মনে হয় পরছি। পরিস্থিতি খারাপ,,
চোখ বুজে দিলাম এক দৌড়। ধরতে পারলে না জানি কি করে বসে!!!
এমনই তার ছিঁড়া মেয়ে, তার মাঝে আবার রেগে আছে।
.
সে সময়ের মতো বেচে গেলাম। তারপর আর সেদিন ওই মেয়ের সামনে যাইনি। তবে দূরে থেকে দেখেছি কিন্তু কাছে যায়নি কখনো। বুঝতে পারলাম, ও আমাদের গ্রুপেই পড়ে। আর আমার ক্লাসমেট।
.
আজকে বাসায় এসে যখন টিভি দেখতে লাগলাম। তখন সেই মেয়েটার কথা মাথায় আসলো। মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে কিনা জানি না, তবে রাগি লুকে ওকে অনেক সুন্দর লাগছিল। তাছাড়া ও এমনিতেই অনেক কিউট,,, মুখের গঠন টা বাচ্চা বাচ্চা টাইপের।
.
ভালই লাগে দেখতে। টিভি দেখতে বসছি, টিভির দিকে আর খেয়াল নেই, কখন যে মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ছি নিজেই জানি না। .
.
এরপর থেকে যখনই মেয়েটার দিকে তাকাতাম তখনই কেন যেন খুব ভালো লাগতো। তাই সুযোগ পেলেই এখন ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু এখনো ওর নামটাই জানি না।
.
এভাবে দেখতে দেখতে চলে গেল, ৪ মাস। এই চার মাসে আমি ওর অনেক কিছু খেয়াল করছি। নামটাও কোনো এক ভাবে জেনে নিয়েছি। নাম হলো আয়েশা রহমান।
.
ওর যে বিষয় গুলো আমারে খুব চিন্তায় ফেললো তা হলো,,
- কারো সাথে মিশে না, সবসময় চুপচাপ থাকে।
- প্রয়োজন ছাড়া কারও সাথে কথা বলে না।
- কাউকে নিজের বন্ধু বানায় না, এখনো ওর একটাও বন্ধু হয়নি।
- অনেক মেয়ে ওর সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে চাইছে কিন্তু ও করেনি।
- মেয়েদের ফ্রেন্ডশীপ ফিরিয়ে দিছে আর ছেলেদের তো কথাই নাই।
- যখনই সময় পেত তখনই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো আর কি যেন বিড়বিড় করতো।
- ছাএী হিসেবে কিন্তু খারাপ না,,, প্রয়োজনে শুধু স্যারদের সাথেই কথা বলতো কিন্তু কম।
.
আয়েশার এই সব বিষয় গুলো আমাকে খুব টেনশনে ফেললো। ও এমন কেন? অন্য সবার মতো স্বাভাবিক কেন নয়? সত্যিই কি ওর কোনো মানসিক সমস্যা আছে,, না অন্য কোনো কিছু?
.
ওর সাথে কথা বলে জানতে হবে ওর কি সমস্যা। তারপর থেকে আমি অনেকবার ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি কিন্তু ও আমার সাথে কথা বলেনি।
কিছু বললেই রাগ দেখিয়ে বা অন্য কোনো কিছুর ছুতো দিয়ে চলে যেত।
.
এভাবে কয়েক দিন চললো, আমার খুব রাগ হলো ওর পর,,, আমার সাথে এতো ভাব নেওয়ার কি আছে হ্যাঁ??? ও কি জানে না ওর অপেক্ষায় আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি। কিন্তু আমি ওর সাথে কথা বলার জন্য ওর পিছনে কতো ঘুরি কিন্তু ও আমার সাথে কথা বলতেই চায় না।
.
আজকে নিয়ে ২ মাস হলো ওর সাথে কথা বলার চেষ্টায় আছি,, কিন্তু আজকে আমি অনেক ডাকার পর,, শুধু চোখ তুলে তাকিয়ে ছিলো আর কিছু বলেনি, তারপর চলে গেল। ধ্যাত,, খুব রাগ হচ্ছে নিজের উপর ৬ মাস ধরে একটা মেয়ের পিছনে পরে আছি কিন্তু মেয়েটা আমাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। দরকার নাই আমার এমন মেয়ের। আর ডাকবো না কোনো দিন,, একা আছি একাই ভালো আর একাই থাকবো।
.
সেদিনের পর আজ ৭ দিন হয়ে গেল, ওর সাথে কথা তো দূরের কথা চোখ তুলে তাকাইয়নি। আজ শুক্রবার তাই ভাবছি বিকেলে, কলেজের ধারে বড় মাঠের সাথে ওই বাগানে একটু ঘুরতে যাব।
.
বিকেলে সেই বাগানে গেলাম। কতখন ঠান্ডা বাতাসে বসেছিলাম,, ভালই লাগলো। অনেক সময় হয়ে গেল এখন বাসায় যাই। পিছনে ঘুরে তাকাতেই আমার আত্মা যায় যায় অবস্থা,,, আয়েশা আমার খুব কাছে একদম মুখের সামনে মুখ এনে দাড়িয়ে আছে।
.
আমি স্বাভাবিক হয়ে। কিছু বললাম না উঠে আসতে লাগলাম। আর ওই বা এখানে আসলো কেন?
উঠে দাড়ালাম যাওয়ার জন্য,,,
.
- মাহবুব দাড়াও।
- কেন?
- এখানে এসে বসো, কথা আছে।
- কি কথা?
- আগে বসো।
( ঘাসের উপর বসে পড়লাম)
.
- মাহবুব তুমি ভাবছো আমি এখানে কি করে কেন আসলাম?
- তাই তো।
- আমি তোমার বাড়ি গেছিলাম। কিন্তু আন্টির কাছে জানতে পারলাম তুমি এখানে তাই এখানে আসলাম।
- কিইইইই,,, বাড়ি কেন গেছিলা?
- তোমাকে খুজতে।
- আমার আবার কি দরকার?
- আমাকে ভালবাসো?
- ( হটাৎ এমন কথা,, অবাক হলাম) একথা কেন বলছো?
- যেটা বলছি ওটার উওর দাও।
- হুম,,, বাসি। তাতে কি হইছে?
- আমার এই অপয়া জীবনে কেন জড়াতে চাইছো?
- মানে!!!
- শুনবা?
- বলো।
.
- আমি একা নই, আমার ছোট আরেক টা বোন ছিলো। যখন আমার জন্ম হয় তখন আমাকে সবাই ভালবাসতো। খুব আদর করতো সবাই। মা বাবার রাজকুমারী ছিলাম আমি। সবসময় মা বাবা আমাকে চোখে চোখে রাখতো যাতে আমি কখনো দূরে না যাই।
.
আমার যখন ৭ বছর বয়স তখন আমার ছোট বোনের জন্ম হয়। ভালই চলছে আমাদের পরিবার। মা বাবা আমি আর আমার বোন। ছোট বাচ্চাদের রাখতে সবারই আগ্রহ ছিলো তেমনি আমারও ছিলো।
কিন্তু আমিও তো তখন খুব ছোট মাত্র ৭ বছর বয়স। তবুও ছোট বোনটাকে রাখতে খুব ইচ্ছে হতো।
.
কিন্তু মা আমার কাছে বোন কে দিতো না, আমি ফেলে দিব বলে।
কিন্তু আমার মনে ইচ্ছে টা প্রবল ভাবে জন্ম নেয়। তাই আমি একদিন লুকিয়ে যখন মা বোন কে ঘুম পাড়িয়ে গোসল করতে যায় তখন, তখন আমি বোনকে কোলে নিয়ে, পাশের পুকুর পাড়ে ঘুরতে যাই।
.
বোনটাও আমার কোলে ঘুমিয়ে পরে সুন্দর ভাবে। তাই যখন মা ডাকাডাকি পারছিল তখন আমি খুব ভয় পাই,,, তাই ধীরে ধীরে বাড়িতে যাই। মা আমার কাছ থেকে বোনকে নিয়ে তারপর আমার গালে একটা চড় দেয়। আর বলে,,
- কই গেছিলি ওকে নিয়ে, এতো জ্বর আসলো কি করে ওর শরীরে? আগে তো ছিলো না।
.
একথা শুনে আমি খুব ভয় পাই। আমার কোলে এসে বোনের জ্বর হয়েছে।
এরপর থেকে বোনের জ্বর আরও বাড়তে থাকে। দশদিনের দিন আমাদের বাড়িতে কান্নার রোল পরে। কারণ আমার বোন প্রচন্ড জ্বরে মারা যায়। অনেক ডাক্তার দেখিয়ে ছিলো তবুও কাজ হয়নি।
.
এর কয়েক মাস পর আমি আর মা নদীর ধারে যাই কাপড় আর কম্বল ধুতে। সেখান বাড়ি এসে মা মাথা ঘুরে পরে যায়। কিন্তু তার কতখন পর সুস্থ হয়ে উঠে।
তার কয়েক দিন পর,, আবারাও পরে যায়, ঘরের মেঝেতে কিন্তু এবার আর উঠেনি,, না ফেরার দেশে চলে যায়।
.
( এই বলে আয়েশা কাদতেঁ লাগলো)
- তারপর কি হয়েছে?
- তারপর বাবাকে আকড়ে ধরে বড় হতো লাগলাম।
যখন আমি এইটে পড়ি,, তখন আমার একটা ছেলেকে ভালো লাগতো। তখন ভালবাসার অর্থ বুঝতাম না। কিন্তু টান টা বুঝতে পারতাম।
তাই আমি এইটে প্রথম টেস্ট পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সেই ছেলেটাকে প্রপোজ করি। আর ছেলেটা খুশিতে টগবগিয়ে উঠে।
কিন্তু ভালবাসা আমার কপালে ছিলো না। সেদিন প্রপোজ করার পর, স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার সময় একটা এক্সিডেন্টে ওই ছেলেটাও প্রাণ হারায়।
.
এই হলো আমার কপাল। নিজের ভালবাসা এক দিনই তৃপ্তি ভরে পেলাম না। তারপর থেকে সবার কাছ থেকে এই স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে চলে যাই।
.
এখন কেউ আমাকে ভালবাসে না। বাবাও ভালবাসে না। আর পরিবারের অন্যরা বলে কিনা আমি অপয়া। ( এই বলে আরও জোরে জোরে কাদতেঁ লাগলো আয়েশা)
.
- এই পাগলী কাঁদছো কেন?
- কি করবো বলো?
- আমাকে ভালবাসো।
- না,, এটা হয়না। তোমার জীবনে আমি যদি যাই তাইলে হয়তো তোমারও কিছু একটা হয়ে যাবে,, আমি এটা কখনো চাই না।
- কিচ্ছু হবে না। সব ভুল ধারণা কে বলছে তোমাকে তুমি ভালো না।
- সবাই বলে।
- আমি বলছি তুমি অনেক ভালো।
- আমি ভালো না তুমি আমাকে ভুলে যাও।
- সেটা তো কোনো দিন সম্ভব না।
তুমি অনেক আগেই আমার মন চুরি করে নিয়েছো। এখন তোমার মন না দিলে আমি এমনিতেই মরে যাব।
- না। ও কথা বলো না প্লিজ।
- তাহলে তোমার ভালবাসার রঙ্গে আমাকে রঙিয়ে দাও যতদিন বাচবো তোমার ভালবাসা নিয়েই বাঁচবো।
- এটা হয়না।
- তুমি ভালবাসবে কিনা বলো,, যদি বাসো তাইলে আজকের পর দেখতে পাবে আর যদি না বাসো তাইলে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাব।
বাচলে দুজন একসাথেই বাচবো।
.
- আর যদি না বাচি?
- না বাচলে নাই, একদিন না একদিন সবাইকে মরতে হবে,, একদিন আগে আর পরে।
.
( জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিছে)
- আবার কাঁদছো কেন?
- এতো ভালোবাসো কেন?
- মনটা যে আমার কাছে নাই তাই।
- কার কাছে গেছে?
- তোমার কাছে।
- ধ্যাত।
- চলো ফুচকা খেতে যাই।
- আচ্ছা।
.
.
.
আমি চলছি পাগলীটা কে নিয়ে ফুচকা খেতে। জানি না কতদিন এই পৃথিবীতে থাকবো কিন্তু যতদিন আছি ততদিন নিজের ভালবাসা নিজের করে পেয়েই বাচবো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন