মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৭

নীলা

ধরো এমন একটা সন্ধ্যায় আমরা বারান্দায় বসেছি। আমাদের বেডরুমে রাখা গ্রামোফোন এ তোমার প্রিয় কোন রবীন্দ্র সংগীত বাজছে। তখনো কি তুমি নিশ্চুপ বসে থাকবে? একবারও জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হবে না?
.
ধরো আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর দিনে পূর্ণিমা হলো। দিনটার জন্যে তুমি ছুটি নিলে।আর আমি ভুলে যাওয়ার ভান করে কাজে চলে এলাম। তখন কি অভিমান হবে না?অভিমানগুলো জলাঞ্জলি দিয়ে আমার প্রিয় খাবার রান্না করে আমার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকলে আর আমি এসে তোমাকে টেনে বাইরে নিয়ে এলাম।তোমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কাছের কোন হাওড়ে নিয়ে গেলাম। নৌকার পাটাতনে তোমাকে বসিয়ে নিজে গলুইতে দাঁড় বাইতে লাগলাম। হাওড়ের মাঝাখানে গিয়ে যদি থামি আর সেই মুহূর্তে যদি ইয়া বড় চাঁদ দেখতে পাও তাহলে... কি তোমার অভিমান কমবে না?উবু হয়ে হাওড়ের বন্য জলে আমাকে ভেজাবে না?
.
ধরো কাজ করতে করতে আমার তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছে হলো। দৌড়ে তোমার চেম্বারে চলে এলাম।টিকিট কেটে রুমে ঢুকলাম।তখন কি রেগে যাবে?অসময়ে বিরক্ত করায়? না পেশাদার ডাক্তারের মত জিজ্ঞেস করবে আপনার সমস্যা কোথায়? যদি বলি বুকের বামপাশে..কাছে এসে....স্টেথোস্কোপ দিয়ে টিপে দেখবে না? অন্য রোগীর থেকে কয়েক মিনিট বেশি সময় পাবো না তোমাকে দেখার জন্যে?প্রেসক্রিপশন এ ঔষদের বদলে কি দুষ্টুমি করে লিখে দিবে না "প্রতিদিন সকাল-দুপুর-রাতে ১ টা করে বউকে চুমু খাবেন"?
.
ধরো বছরের একটা বিশেষ দিনে তুমি যখন ড্রেসিংটেবিল এর সামনে চুল আঁচড়াচ্ছো.. হঠাত দেখলে এক জোড়া কানের দুল রাখা.. বেশি দামি হবে না অবশ্যই।মধ্যবিত্ত স্বামীর যেটুকু সাধ্য ততটুকু দিয়েই। দুল দেখে কি অবাক হবে না?আমার কাছে গিয়ে আহ্লাদি স্বরে বলবে না "কি দরকার ছিলো এসবের?"
না হয় খুশিতে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলবে না?না দুল জোড়াকে নিজের অধিকার মনে করে নির্বিকার থাকবে?
.
ধরো ছুটির দিনে তুমি কোমরে আঁচল পেছিয়ে রান্না করছো।আমাদের বাবুটা অন্য ঘরে খেলা করছে। আমি আচমকা এসে তোমার কোমর জড়িয়ে ধরলাম। তখন কি কৃত্রিম রাগ করে বলবে "যাও সরো.. রান্না করছি তো।"? যদি বলো আর আমি রাগ দেখিয়ে চলে যাই,আমার পেছনে চুপিচুপি এসে আমার খোঁচা খোঁচা দাড়িযুক্ত গালে চুমু খেয়ে রাগ ভাঙাবে না?
.
ধরো অঝোরে বৃষ্টি ঝড়ছে। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো। তুমি মোমবাতি জ্বালিয়ে আমার পাশে বসলে। আমি যদি তখন অনেক ঝাল দিয়ে ঝালমুড়ি খেতে চাই.. তখন কি খুশি হয়ে বানিয়ে দেবে? না মুখের উপর বলে দেবে "তোমার ইচ্ছা হইছে তুমি বানিয়ে খাও"?
.
ধরো আমার অনেক জ্বর।আমি জ্বরের ঘোরে গোঙাচ্ছি।তুমি কি মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিবে?না ঔষধ খাইয়ে ঘুমিয়ে পড়বে?যদি জলপট্টি দাও... তাহলে কি আমার শিয়রে বসে ঠিক আমার মায়ের মতন রাত জাগবে?সারা রাত জেগে ভোরের দিকে আমার কপালে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়বে? যদি ঘুম ভাঙতেই দেখো আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি তখন কি লজ্জায় মাথাটা সরিয়ে নেবে?
.
ধরো আমি গোসল করে ভুল করে কাপড় না ধুয়ে রেখে এসেছি।এরপর যখন তুমি।গোসল এ গেলে তখন কি নিজের কাপড়ের সাথে আমার কাপড়গুলোও ধুয়ে দেবে?কাপড় থেকে বের হওয়া আমার গায়ের ঘামের গন্ধ তে কি তোমার নোংরা লাগবে? না আমাকে যেমন ভালোবাসবে তেমন আমার গায়ের গন্ধটাও ভালোবাসবে?
.
আচ্ছা ধরো একটা পুঁচকে বাবু আর যুবতী তোমাকে রেখে আমি মরে গেলাম। তখন কি আরেকটা বিয়ে করবে?আমি বলছি,আমার স্মৃতি নিয়ে বসে থেকো না।করে নিও।আমাদের সমাজে কমবয়সী বিধবা মেয়েদের জীবনটা অনেক কষ্টের। আচ্ছা বিয়ে করো কিংবা নাই করো হঠাত করে আনমনে কি আমার স্মৃতি তোমাকে কাঁদাবে? না তুমি তোমার আর আমাদের বাবুটার ভবিষ্যৎ নিয়ে এতই চিন্তামগ্ন থাকবে যে আমার স্মৃতি তোমার মনে কখনো দাগ কাটতে পারবে না?
.....
জানি না নীলা... প্রশ্নগুলোর উত্তর জানি না।জানতেও চাই না।সবসময় চাই তুমি আমার পাশে থাকো... সব সময়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন