মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭

এখনের আমি

এক টা গল্প বলি..
আমি নীল। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি..
গল্প টা আমার আর আমার মঝের কারো.
অদ্ভুদ রকমের শরু ছিলো গল্প টার.সাইন্স ফেয়ার ছিলো সে দিন স্কুলে.ময়লা এক টা স্কুল ড্রেস পরা ছিলো মেয়ে টির.কিন্তু অগোছালো ভাবে থাকলে ও কেন যেন মনে হলো আকাশ থেকে কোন পরী নেমে এসেছে আমার সামনে.মেয়েটি স্কুল থেকে বের হওয়ার পরে টানা দুই ঘন্টা ফলো করেছিলাম তাকে.দুই ঘন্টা!!শেষে বের করতে পেরেছিলাম তার বাসা কোথায় আর কয়টায় স্কুলে আসে. পর পর টানা তিন দিন ওয়েট করেছিলাম তার জন্যা বখাটে ছেলের মত স্কুলের সামনে.এক দিন খুব সাহস করে বলেছিলাম খুব বেশি পছন্দ করি.পাত্তা ই দিলো না.হাল ছেড়ে দেইনি.টানা তিন মাস অপেহ্মা করেছি।S.S.C পরিহ্মা শেষ হলো.তার কিছু ফ্রেন্ডের সাথে আমার ফ্রেন্ডশীপ ছিলো.পরে জানতে পারলাম কোন কলেজে ভর্তি হয়েছে.আবার ও সেই কলেজে হামলা. ছয় টা মাস কেটে গেলো.পরে ওই পাগলী এক দিন আমায় শর্ত দিলো সর্বচ্চ ফ্রেন্ডশীপ করতে পারে.
আরে বাবা নাই মামা থেকে তো কানা মামা ভালো.রাজি হয়ে গেলাম.প্রতিদিন ফোনে কথা বলতাম ফেসবুকে ও কথা হতো.এ ভাবে কথা বলতে বলতে আস্তে আস্তে হয়ে গেলো ভালোবাসা।H.S.C কম্পিলিট করার পরে এক টা প্রাইবেট ইউনিভার্সিটি তে এ্যাডমিশন নেই দুই জন.এ্যাডমিশন নেওয়ার কিছু দিন পরে জানতে পারি যে ওরা ফুল ফ্যামেলী চলে যাচ্ছে ঢাকার বাইরে চিটাগাং.ও আমাকে কিছু জানাতে পারে নি.দু দিন পরে ফোন দিয়েছিলো আমাকে.
:ফোন দিয়ে আমাকে বল্লো আগামী সপ্তাহে নাকি ওদের ফ্লাইট.পুরো ফ্যামেলী চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে.
:অবাক হয়ে রইলাম!!!!পুরো ফ্যামেলী যাচ্ছো এটা তো এক দিনের কিছু না.এটা তে সময় লাগে প্রোসেস করতে.রাইট??
:চুপ থেকে বল্লো হ্যা
:বলো নি কেন?
:ফ্যামেলীর বারন ছিলো.
:আমি তো আর তোমাদের শত্রু নই.বা আমি তো কোন কিছু করতাম না যে যার জন্য তোমাদের যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতো.বা কোন বিপদের সম্মুখীন হও..!
:আমি জানি না বাবা-মা নিষেদ করেছিল
কি করবো!! ঝগড়া করলে তো আর ও ফিরে ফিরে আসবে না.কিন্তু কষ্টে বুক টা ফেটে যাচ্ছিলো.
:প্রশ্ন করলাম..আচ্ছা কবে আসবা??
:বল্লো নেক্সট থ্রি ইয়ারস.আমরা তো আবার ব্যাক করবো..
হাসি দিয়ে চিন্তা করলাম আরে এই পাগলী কে তো পটাতেই এমনিতে আমার এক বছর চলে গেছে.সারা জীবন পাওয়ার জন্য তিন টি মাস ওয়েট করতে পারবো না!!নাহ আমি পারবো.
পরের সপ্তাহে ওরা চলে গেলো দেশের বাইরে.প্রথম দুই মাস বার বার আমায় ফোন দিতো.একা ফিল করছে ও এখানে পরিচিত কেউ নেই.এমন করে ছয় মাস কেটে গেল.ও এ্যাডমিশন নিলো এক টা ভার্সিটিতে.কিছু দিন পরে নাকি এক টি রেস্টুডেন্ট এ পার্ট টাইম জব
পেয়েছে.ইউনিভার্সিটি শেষ করে কাজ করে আমাকে সময় দিতে পারতো না.অদ্ভুদ টাইম ছিল.অপেহ্মা করতাম!! এক বার না দুই বার না বার বার টেক্সট করতাম -
ফ্রি!?এখন ফ্রি!?একটু কথা বলা যাবে??কোন রিপ্লে পেতাম না...
এক বছর কেটে যায়.দেড় বছর!!!
দুই তিন দিন পরে হয় তো দু চার মিনিটের জন্য কথা বলতে পারতাম.ওর সাথে কথা বলার সময় রেকোড করে রাখতাম.ফোন টা রাখার পরে বার বার শুনতাম. বার বার!! পুরানো সেই ছবি গুলো বের করে বার বার দেখতাম..কথা বলতাম আর অপেহ্মায় দিন গুনতাম.দুই বছরের মাথায় গিয়ে ওর মাঝে অদ্ভুদ এক ধরনের চেন্জ আমি দেখতে পাই.ঠিক ভাবে আমার সাথে কথা বলে না.আগে যেমন দুই তিন দিন পরে হলে ও এক বার আমার সাথে কথা বলতো এখন তা ও বলে না.ওর ড্রেস এর মাঝে কিছু টা চেন্জ চলে আসে.যে ছবি গুলো ও ফেসবুকে দিত.নিজেকে মানাতাম এক টা ওয়ের্স্টান কান্ট্রিতে থাকে চেন্জ হওয়া টা অস্ভাবিক কিছু না.এ গুলো নিয়ে কথা বলতে যখন ই যেতাম বার বার শুনতাম আমি আনকালচার আমি নাকি হ্ম্যাত.আমি সমাজ বুঝি না..
খুব কষ্ট পেতাম জানেন.বার বার বলতে ইচ্ছে করতো আজ সেই তুমি কত অচেনা!!গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছা করতো আমার সেই তুমি কি একটি ফিরিয়ে দেবে প্লীজ???আবার নিজে কে বুঝাতাম থাক আর কিছু দিন পরে তো ফিরে আসবে.তখন বাঙ্গালী মেয়ে হয়েই থাকবে.
তিন বছর কেটে যায়.চার বছর কেটে গেল.!!
কবে আসবা এই প্রশ্ন যদি করতাম..
বিরক্তি ভাব নিয়ে বলতো বার বার একি ঘেনর ঘেনর কেন করো!!?ভাল্লাগে না.থাকলে থাকো না থাকলে চলে যাও.কবে আসবো জানি না.
ওই খানে নাকি ওর কিছু ভালো ছেলে ফ্রেন্ড আছে.কষ্ট হতো ছেলে গুলোর সাথে যখন খুব ক্লোজ পিক দেখতাম ফেসবুকে.তার পর ও মুখ বুজে সহ্য করতাম. ও যে দেশে থাকতো ওই দেশ থেকে এক দিন এক টা ফোন আসে.ওই দেশের এক টা নাম্বার থেকে.খুব এক্সাইটেড হয়ে যাই মনে করি ও ফোন দিয়েছে.ফোন টা পিক করি.ও পাশ থেকে এক টা মেয়ের কন্ঠ.ওর খুব কাছের বান্ধবী.আমাকে বল্লো ভাইয়া কিছু কথা বলি!! আপনি প্লীজ ওকে বলবেন না..
:হ্যা আপু বলো
:ভাইয়া আপনি যার আশায় আছেন ও আসলে এখানে কারো এক জনের সাথে আছে.
:আরে পাগল কি বলো এই গুলা!!?
:জ্বী ভাইয়া আপনি এক মিথ্যা আশায় অপেক্ষা করছেন.প্রতিটা মূহুর্ত আমার খারাপ লাগতো যে আপনার মতো এক টা মানুষ ওখানে বসে মিথ্যা এক আশা নিয়ে আছে.অনেক বুঝিয়েছিলাম আমি ওকে.আমাকে বলে আমি নাকি সহজ জিনিস বুঝি না.!ও নাকি দেশে গিয়ে ওই পরিবেশে থাকতে পারবে না.ওর সাথে কিছু হবে না (আমার সাথে).আপনার কথা ওকে আমি অনেক বুঝিয়েছি ভাইয়া.ফোন টা কেটে দিলাম.
চোখ দিয়ে পানি টলম করছিলো.বিশ্বাস করুন এক টি বার আমি অবাক হইনি.কেন জানেন?কারন সত্যি ভালোবেসেছি তো মনের সাথে মনের একটা কানেশন ছিলো.বুঝতাম ও আর আমার নেই.কিন্তু বিশ্বাস করুন বার বার ওপরআলার কাছে প্রার্থনা করতাম এই নিউজ টা যেন আমার কোন দিন শুনতে না হয়.বিধাতার নিষ্ঠুর নিয়মে পেয়ে গেলাম আজ এই খবর.
ভালোবাসার মানুষ অন্যের কান দিয়ে তো শোনা যায় না!!ফোন করলাম ওর নাম্বারে.কেটে দিলো.টেক্সট করলাম..(৫ মিনিট সময় দাও.কোন দিন বলবো না ৫ সেকেন্ডের জন্য সময় দিতে.এক টি বারের জন্য ফোন দাও.)কিছু সময় পরে ও ফোন দিলো..
কথা গুলো শেয়ার করারর সাথে সাথে চুপ থাকলো.কিছুক্ষন পরে আমাকে বল্লো..
:যেহেতু জেনেই গিয়েছো সেহেতু কিছু করার নেই.
শুরু করতে চেয়ে ছিলো ওর নতুন ভালোবাসার গল্প.থামিয়ে দিলাম! এক টা কথাই বল্লাম.
:রাতে না ঘুমালে খুব সহজে তোমার চোখের নিচেয় দাগ পড়ে যায়.রাতে কিছু টা ঘুমিয়ে নিও মেয়ে.ভালোবেসে আবার রাত জেগো না.সারা জীবনের জন্য ভালো থেকো.তোমার সাথে এটা আমার শেষ কথা..ফোন টা এই বলে রেখে দেই.
আজ দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর!! ওর সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই! কোন পরিচয় নেই! তবু ও আজ ও ভালোবাসি সেই আমার আগের ওকে.
কিছু দিন আগে জানতে পারলাম ও নাকি বাংলাদেশে.আমাকে নাকি খুঁজছে!! এক টা সিম ছিলো যে সিমের নাম্বার টা ও জানতো.মানিব্যাগে রাখতাম.যখন জানতে পারলাম ও আমায় খুঁজছে এক টা হাসি দিয়ে মানিব্যাগ থেকে সিম টা বের করলাম.ওর নাম টা মুখে নিয়ে সিম টা ভেঙ্গে ফেল্লাম.রাস্তায় ফেলে দিয়ে বল্লাম সাড়ে তিন বছর আগে আমাকে মেরে ফেলেছো.গলা টিপে শেষ করেছো আমার ভালোবাসা!!
.
[আর এই নিয়েই এখনের আমি]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন