রবিবার, ৭ মে, ২০১৭

সমবয়সী রিলেশনশিপ : অতঃপর বেদনা

রাত ১২ টা ২৩ মিনিট
.
হলের ছাদের উপর মৃদু বাতাস বইছে,আকাশে পূর্ণ চাঁদটা যেন সমস্ত পৃথিবীকে দিনের মত আলোকিত করে ফেলেছে।
আজকের আবহাওয়াটা রোমান্টিক হওয়ার জন্য খুবই অনুকুল। কিন্তু রাকীন ভাইয়ার মাঝে মোটেও রোমান্টিকতা দেখতে পাচ্ছি না। উনি মাঝে মাঝে রাতের বেলায় রুমে থাকেনা, ছাদে গিয়ে গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে ফোনে। কিন্তু সেদিন অনেক সময় গড়িয়ে গেলেও ছাদ থেকে না আসায় আমি উনার খোঁজ করতে গেলাম। গিয়ে দেখলাম উনার চোখে জল, চাঁদের আলোতে চিকচিক করছে জল গুলো। আমাকে দেখে চোখের জল লুকানোর বৃথা চেষ্টা করল। কিন্তু বেচারা পারলনা। রাকীন ভাইয়া আমার রুমমেট, তিন বছরের সিনিয়র। সিনিয়র হলে কি হবে, আমার সাথে উনি বন্ধুর মতই আচরণ করে। তাই উনি কি করে না করে প্রায় সবকিছুই জানি আমি। ভাবলাম হয়ত উনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে, কিন্তু তা না।
.
উনার জিএফ নীরা আপু , আজকে উনাকে ফোন করে বলল, বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করছে এবং আমি তাকে বিয়ে করব সামনের মাসে। রাকীন ভাইয়া কোন কথা বলছেনা, অবশ্য কথা বলার কোন স্কোপ নেই। নীরা আপু রাকীনকে ২ বছর সময় দিয়েছিল,যাতে উনি এর মধ্যে একটা জব ম্যানেজ করে নীরার বাসায় প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এমবিএ শেষ হওয়ার দেড় বছর পরেও একটা জব ম্যানেজ করতে পারেনি তিনি। এখন তিনি বেকার। বেকারদের বিয়ে করার কোন অধিকার নেই।
.
রাকীন ভাইয়া আর নীরা আপু ছিল ক্লাসমেট। ভার্সিটির প্রথম দিনে নীরাকে অনেক ভাল লাগে উনার। তাই মেয়েটাকে ডাক দেয় উনি। মেয়েটি তো ভয়ে অস্থির, র্যাগ দেয় বুঝি তাকে।হুম, রাকীন ভাইয়া সেদিন মেয়েটিকে র্যাগ দেয়, পরে ক্যাফেটেরিয়ায় নিয়ে নাস্তা করায়ে নিজের পরিচয় দেয়, আমি রাকীন, তোমার ক্লাসমেট। তখন থেকেই তাদের মাঝে ভাল একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। একসাথে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, আড্ডা দেওয়া তাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে উঠল। এর মাঝেই দুজন দুজনার প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ল। তারপর সেকেন্ড ইয়ারে উঠে দুজনেই রিলেশনশিপ শুরু করে। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সেরা জুটির তালিকায় ওদের নাম চলে আসে।
.এভাবেই ভালবাসা বাসি, খুনসুটির মধ্যদিয়ে অনার্স কম্প্লিট করল তারা। ইতোমধ্যে নীরা আপুর বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ আসল। তিনি পরিবারের কাছে এমবিএ পর্যন্ত সময়টুকু চেয়ে নিলেন। এদিকে ভাইয়া ৩য় শ্রেণীর জব থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর জবের পরীক্ষা দিয়েই যাচ্ছেন। জব আর পাচ্ছেননা। দিন যতই বাড়তে থাকল, নীরাকে না পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বেড়েই গেল। বাংলাদেশে চাকুরী তো আর হাতের মোয়া না যে চাইলেই পাওয়া যায়। অবশেষে নীরা আজকে রাকীন ভাইয়াকে ত্যাগ করল সারাজীবনের জন্য

.
২৫ দিন পর....
.
আজকে নীরার বিয়ে । রাকীন ভাইয়াকে মেয়ের ভাল বন্ধু হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তিনি আসতেননা কিন্তু তিনি যে নীরাকে বিয়ের সাঁজে দেখতে চেয়েছিলেন, তাই সেটা তিনি কোনভাবেই মিস করতে চাননি। 
নীরাকে আজকে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে। সবকিছুই ঠিকঠাক, রাকীন ভাইয়ার কাছে শুধু বর টাই ঠিকঠাক না। যেখানে বর হিসেবে রাকীন ভাইয়া থাকার কথা ছিল সেখানে এক সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্র বসে আছে। হয়তবা সেই সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্রটিও জব পাওয়ার জন্য তার ভালবাসার মানুষটিকে বিসর্জন দিয়েছে। বিয়ের কার্যক্রম শেষ করে নীরা আপু তার নতুন বাসায় চলে গেল। এদিকে রাকীন ভাইয়া সারারাত সিগারেট খেয়ে, চোখের জল ফেলে পার করে দিলেন।
. তিনি সেদিন আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আচ্ছা মাসুদ বলতো, শতশত স্মৃতি থাকার পরও মেয়েটি কেমন করে অন্যের সাথে ঘর বাঁধবে?
.
আমি : মেয়েটি ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত তার বাবা মায়ের সাথে বেড়ে উঠল। তাদের সাথে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে নিশ্চয় তা আপনার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। সেই সম্পর্কের স্মৃতি যদি তিনি ফেলে রেখে অন্যের সাথে ঘর বাধতে পারেন তবে আপনার সম্পর্কের স্মৃতি তো মামুলি ব্যাপার । আসলে কি ভাইয়া, মেয়েরা সবকিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। এটা ইশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা।যা আমি আপনি পারিনা
.
রাকীন ভাইয়া : হুম,, হয়তবা তুই সঠিক বলছিস। তোকে একটা কথা বলি, ভার্সিটিতে রিলেশন করলে সেইম এজের মেয়ের সাথে কখনো করবিনা। কারন তুই যখন জব খু্ঁজবি, মেয়ের পরিবার তখন মেয়ের জন্য বর খু্ঁজবে। তাই এট লিস্ট দুই বছরের জুনিয়র মেয়ে দেখে প্রেম করিস।
..
ভাইয়া চলে যাওয়ার প্রায় ১ বছর ৫ মাস হল। অবশ্য নীরার বিয়ে হওয়ার তিন মাস পর সোনালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। সেদিন ভাইয়া আমাকে ফোন দিছলো, বললো জীবনে নীরাকে পাইলামনারে কিন্তু জবটাকে পাইলাম। এই জবটা তিনমাস আগে পাইলে হয়ত নীরাকে হারাতাম না কখনো।কি এমন ক্ষতি হত যদি ওপরওয়ালা আমাদের মিল করিয়ে দিত?
আমি বললাম, ভাই, আসলে কিছু কিছু বিষয় আছে যা মানুষের বোঝার কোন ক্ষমতা নেই। হয়তবা এতে আপনার মঙ্গল নেই তাই ওনাকে পাননি।
আমি জানি, আপনি নীরাকে এখনো লাভ করেন অনেক, চোখের জলও ফেলেন। অপরদিকে নীরা আপুও হয়তবা সুখে আছে। কিন্তু আমি হল্ফ করে বলতে পারি, মাঝরাতে যখন তার ঘুৃম ভেঙে যাবে তখন সে হয়তবা অন্ধকারে আপনাকেই হাতড়িয়ে খুঁজবে। অতীতের কথা মনে করে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঘটাবে। কিন্তু ঐ অন্তরীক্ষের মালিক ছাড়া এসব কিছু কেউই দেখবেনা, কোনদিন জানতেও পারবেনা। আর আপনি এটাই বিশ্বাস করবেন, " love does not need to be perfect, it just needs to be true ".
তাহলে কিছুটা হলেও কষ্ট কম পাবেন।
..
ভাল থাকুক এসব মানুষগুলো, হৃদয়ের গভীরে বেঁচে থাকুক তাদের এই অমলিন ভালবাসা💜💜💜

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন