মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭

চলতি পথে হঠাৎ দেখা

আমি ধ্রুব। অনার্স ৩য় বর্ষ পরীক্ষা দিচ্ছি। আমাদের কলেজটা আমার বাসা থেকে অনেক খানি দূরে তাই সব সময় বাসেই যাতায়াত করি। 
পরীক্ষার দুদিন আগে admit আনার জন্য কলেজে যাবো, সেজন্য রওনা হলাম। সাইকেলটা নিয়ে বাসা থেকে বের হতেই নিলয় ফোন দিল.... 

-- দোস্ত কই তুই...? 
-- এইতো বাসায় থেকে রওনা হলাম.. 
-- কখন আসবি বলতো, সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। 
-- আচ্ছা আর একটু থাক আসতেছি। 

বলেই ফোনটা পকেটে রেখে সাইকেল নিয়ে রওনা দিলাম। বাস স্ট্যান্ড অব্দি আমি সাইকেল নিয়েই যায়। 
বাস স্ট্যান্ডে গিয়েই জলদি একটা বাসে উঠে পরলাম। আজ একটু জোরেই সাইকেলটা চালাতে হইছে নিলয় অপেক্ষা করছে কি না তাই। 
বাসের মধ্যে ঢুকেই দেখি মাত্র একটা সীট খালি আছে, তাও আবার পাশের সীটে একটি মেয়ে বসা। যদিও আমি মেয়েদের পাশে বসি না। কিন্তু আজ কোন উপায় নেই। 

-- বসতে পারি? আসলে দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না, সাইকেল চালিয়ে আসছি তো.... 
-- মানা করছে কে? কিন্তু সাইকেল চালাতে যদি কষ্ট হয়, তাহলে গাড়ি করে আসলেই পারেন... 
(কথা বলতে বলতে বসে পরলাম) 
-- আমি তো আর আপনার মতো বড়লোক না, যে গাড়ি করে আসবো.. 
-- আমি বড়লোক আপনাকে কে বললো? 
-- দেখে বোঝা যাচ্ছে... 
(কোন কথা না শুনে পাশে ঘুরে তাকালাম। দেখলাম কিছু একটা ভাবছে) 
-- কি ভাবছেন?? 
-- এই কথাটা আমি আগেও শুনেছি। 
-- কোন কথা? 
-- এই যে বললেন দেখে বোঝা যাচ্ছে। 
-- কোথায় শুনছেন? 
-- মনে পড়ছে না। আচ্ছা আপনার নাম কি? 
-- ধ্রুব... 
-- আচ্ছা আপনার ফেসবুক আইডির নাম কি Rds DhRubo?? 
-- হুমম... কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন??
-- আমি নীলা। আমার আইডির নাম নীলাদ্রি নীলা। 
-- হুমম.. কিন্তু আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?? 
-- আপনার সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয়। 
-- বলেন কি..? 
-- হুমম... আপনি তো আমার পিক দেখছেন। 
-- কিন্তু আপনি তো ওই পিক এর চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা... 
-- কেন সুন্দর লাগছে না এখন? 
-- না আসলে পিকের চাইতে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে কি না তাই.. 
-- আচ্ছা থাক আর প্রশংসা করতে হবে না, আমি তো নেবে যাবো সামনে তা আপনার নাম্বারটা কি এখন দিবেন। ফেসবুকে তো দেন নাই কতো বার চেয়েছি... 
-- আচ্ছা এভাবে বলার কি আছে.. নেন তুলেন ০১৭৩১৫২৩৩......
-- ওকে বাই 
-- টাটা... 

বাস থেকে নেমে গেল নীলা। আমি ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। কি মায়াবী চেহারা... 
বাস ছেড়ে দিলো, চলে গেলাম কলেজে। কলেজ থেকে admit নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেল। বাসায় এসে খেয়ে শুয়ে পরলাম।হঠাৎ দেখি একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন... 

-- আস্সালামুআলাইকুম.... 
-- ওলাইকুমআস্সালাম। কেমন আছেন..?? 
-- ভালো ।কিন্তু আপনি কে বলছেন?? 
-- আমি নীলা... 
-- ও... আপনি.. 
-- হুম. চিনতে পারছেন তাহলে..? 
-- কেন চিনবো না.... 

অনেকক্ষণ কথা হলো নীলার সাথে। কথা বলে জানতে পারলাম ও টেবুনিয়া থাকে। আর ওখানেই একটা কলেজে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। 
মাঝে মাঝেই আমাদের কথা হতে থাকে। তবে ফেসবুকের চেয়ে ফোনে বেশি কথা হতো। 
কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম আমি নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু ভালোবাসার কথা বলতে পারছিলাম না কারন আমি জানতাম নীলা অনেক ধনী ফ্যামিলির মেয়ে। আর আমি তো ফহিন্নি। 
এভাবেই কেটে গেল আরো কিছু দিন.... 
একদিন নীলা ফোন দিয়ে বললো দেখা করার জন্য। আমিও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম। 
টেবুনিয়া কৃষি ফ্রাম গেটে দেখা করার কথা। যথা সময়ে পৌঁছে গেলাম। দেখি নীলা আমার আগেই চলে আসছে। একটা নীল শাড়ি পড়ে আসছে সে। একেবারে নীল পরীর মতো লাগছে। চোখ ফেরাতেই পারছি না। 
নীলার ডাকে চেতনা ফিরে পেলাম... 

-- ওই.. এতো দেরি করে আসছো কেন? 
-- কই দেরি.. তুমিই তো আগে আসছো... 
-- হুমমম... যাই হোক আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই.. 
-- বলো.. মানা করছে কে? 
-- আমি তোমাকে ভালোবাসি... 
(আমি এটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। যদিও আমি নীলাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি চাইনি আমার মতো একটা গরীব ছেলেকে ভালোবেসে কষ্ট পাক। তাই নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম) 
-- কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না... 
-- কেন? (কাঁদো কাঁদো ভাব) 
-- তুমি তো জানো আমি গরীব আর তুমি... 
-- আমি অতো কিছু জানি না তুমি আমাকে ভালোবাসবে কি না বলো..? 

আমি ওর দিকে তাকালাম। দেখি চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরে যাচ্ছে। না আর পারলাম না, সত্যি পাগলীটা আমায় খুব ভালোবাসে। আমিও কম ভালোবাসি তা না। 
নীলাকে জড়িয়ে ধরলাম..... 

-- এতো ভালোবাসো আমায়??? 
-- অনেক.... 
-- আমিও তোমায় অনেক ভালোবাসি পাগলী... 😍
-- তাহলে আমাকে কাঁদালে কেন? 😭😭
-- না কাঁদালে কি এভাবে জড়িয়ে ধরতে পারতাম.. 😍😍😍
-- শয়তান কোথাকার... (২-৩ টা কিল ঘুষি মেরে দিল) 

অতঃপর দুজন হাঁটতে থাকলাম নির্জন পথে..... 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন